Search

পিএমইন্ডিয়াপিএমইন্ডিয়া

সাম্প্রতিক সংবাদ

বিষয়টিকে সরাসরি পিআইবি থেকে নেওয়া হয়েছে

গবীর কল্যাণ রোজগার অভিযান কর্মসূচী উদ্বোধনের পর প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ


বন্ধুগণ,

 

এই আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের আগে আমি আমার  খাগাড়িয়া গ্রামের ভাই-বোনেদের সঙ্গে কথা বলছিলাম। আজ ওই গ্রামের সকলের সঙ্গে কথা বলে আমি খুব স্বস্তি পেয়েছি এবং ভালো লেগেছে। করোনা অতিমারীর সঙ্কট যখন দ্রুত গতিতে বাড়তে শুরু করেছিল, তখন আমরা সবাই অর্থাৎ কেন্দ্রীয় সরকার এবং সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকার উভয়ের জন্যই সেটি চিন্তার হয়ে কারণ হয়ে উঠেছিল। সেই সময়ে আপনারে যে যেখানে ছিলেন সেখানে সাহায্য পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। তারপর আমরা আমাদের শ্রমিক ভাই-বোনেদের জন্য স্পেশাল শ্রমিক ট্রেনগুলি চালিয়েছি।

 

সত্যি সত্যিই আপনাদের সঙ্গে কথা বলার সময়  আজ আপনাদের বক্তব্যে  প্রাণশক্তির স্বতস্ফূর্ত প্রকাশ, আর একটি সম্মানের ভাব এবং বিশ্বাস – এই সব কিছু আমি অনুভব করছি। করোনার এত বড় সঙ্কট যার সামনে গোটা বিশ্ব কম্পমান, ভয়ে থরো থরো, কিন্তু আপনারা বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন। ভারতের গ্রামে গ্রামে যেভাবে করোনার মোকাবিলা করা হয়েছে তা শহরগুলিকেও অনেক বড় শিক্ষা দিয়েছে।

 

ভাবুন, ছ’লক্ষেরও বেশি গ্রাম রয়েছে আমাদের দেশে। আর সেই গ্রামগুলিতে ভারতের মোট জনসংখ্যার দুই তৃতীয়াংশের বেশি মানুষ থাকেন। প্রায় ৮০-৮৫ কোটি মানুষ যে গ্রামগুলিতে থাকেন সেই গ্রামীণ ভারত করোনা সংক্রমণকে অত্যন্ত কঠোর সংযমের মাধ্যমে আটকেছে। আর আমাদের এই যে গ্রামীণ জনসংখ্যা, এই জনসংখ্যা সমগ্র ইউরোপের সবকটি দেশের জনসংখ্যার থেকে অনেক বেশি। এই জনসংখ্যা গোটা আমেরিকা, রাশিয়া এবং অস্ট্রেলিয়ার মিলিত জনসংখ্যা থেকেও বেশি। এত বড় জনসংখ্যার গ্রামীণ ভারত করোনাকে এত সাহস নিয়ে মোকাবিলা করা, এত সাফল্য সহকারে মোকাবিলা করা অনেক বড় ব্যাপার। প্রত্যেক ভারতবাসী এজন্য গর্ব করতে পারে। এই সাফল্যের পেছনে আমাদের গ্রামীণ ভারতের সচেতনতা কাজ করেছে। পঞ্চায়েত স্তর অবধি আমাদের  গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাগুলি, আমাদের স্বাস্থ্য পরিষেবা, আমাদের চিকিৎসা কেন্দ্র – ওয়েলনেস সেন্টার, আমাদের ‘স্বচ্ছতা অভিযান’-এর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে।

 

কিন্তু এর মধ্যেও আমার যে বন্ধুরা তৃণমূল স্তরে কাজ করেন, গ্রামপ্রধান, অঙ্গনওয়ারি কর্মী, আশা  দিদিরা সবাই খুব ভালো কাজ করেছেন। তাঁরা সবাই অত্যন্ত প্রশংসার পাত্র।

 

 

বন্ধুগণ,

 

এই ব্যাপারটা যদি কোনও পাশ্চাত্য দেশে হতো, তাহলে বিশ্বে আন্তর্জাতিক স্তরে এর সাফল্য নিয়ে কতই না আলোচনা হতো, কত না প্রশংসা হতো। কিন্তু আমরা জানি অনেকেই নিজেদের সাফল্যের কথা বলতেও সংকোচ বোধ করেন। অনেকেই মনে করেন ভারতের গ্রামীণ জীবনের সাফল্য যদি এত প্রশংসিত হয় তাহলে তাঁরা বিশ্বের কাছে কী জবাব দেবে! আপনারা এই প্রশংসার  দাবীদার , আপনারা এই পরাক্রমের  দাবীদার , এত বড় জীবন এবং মৃত্যুর লড়াইয়ে জয়লাভের  দাবীদার , এই ভাইরাস থেকে গ্রামবাসীদের রক্ষা করার জন্য প্রশংসার  দাবীদার । অবশ্য বিশ্বে এই ধরণের প্রক্রিয়া চালু রয়েছে, এমনকি আমাদের দেশেও কিছু মানুষ রয়েছেন যাঁরা কখনই আপনাদের পিঠ চাপড়ে প্রশংসা করবেন না। যাই হোক, কেউ পিঠ চাপড়াক আর না চাপড়াক আমি আপনাদের জয় জয়কার করতে থাকব, আমি আপনাদের এই পরাক্রমের কথা বিশ্ববাসীর কাছে ঢাক-ঢোল পিটিয়ে বলতে থাকব আপনারা গ্রামীণ ভারতের হাজার হাজার লক্ষ লক্ষ মানুষকে করোনা থেকে বাঁচানোর মাধ্যমে পুন্য লাভ করেছেন।

 

আজ আমি এই অনুষ্ঠান শুরুর আগে থেকেই ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে গ্রামীণ মানুষেরা যে কাজ করেছেন, প্রত্যেক গ্রাম যে কাজ করেছে, প্রত্যেক রাজ্য যে কাজ করেছে, আমি এমনি প্রতিটি গ্রাম, প্রত্যেক গ্রামবাসীকে সযত্নে সামলানোর জন্য আপনাদের আন্তরিক প্রণাম জানাই।

 

দেশের গরীব, মজুর, শ্রমিকদের এই শক্তিকে প্রণাম, শত শত প্রণাম। এমনিতে আমাকে বলা হয়েছে, আগামী পরশু থেকে পাটনায় করোনা টেস্টিং-এর জন্য একটি বড় আধুনিক টেস্টিং মেশিন কাজ শুরু করবে। এই মেশিনে একদিনে প্রায় দেড় হাজার টেস্ট করা সম্ভব হবে। এই টেস্টিং মেশনের জন্য আমি বিহারের জনগণকে শুভেচ্ছা জানাই।

 

এই অনুষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত আমার কেন্দ্রীয় মন্ত্রীমন্ডলের সহকর্মীগণ, ভিন্ন ভিন্ন রাজ্যের সম্মানিত মুখ্যমন্ত্রীগণ, শ্রদ্ধেয় নিতীশবাবু, শ্রদ্ধেয় অশোক গহলোটজী, শ্রদ্ধেয় শিবরাজজী, প্রিয় যোগী আদিত্যনাথজী, উপস্থিত সাংসদ এবং বিধায়কবৃন্দ সংশ্লিষ্ট সকল আধিকারিক বৃন্দ, পঞ্চায়েত প্রতিনিধিগণ এবং প্রযুক্তির মাধ্যমে দেশের হাজার হাজার গ্রামে বসে থেকে যে কর্মঠ শ্রমিক বন্ধুরা এই অনুষ্ঠান দেখছেন তাঁদের সবাইকে আবার আমার নমস্কার জানাই।

 

আজ একটি ঐতিহাসিক দিন, আজ গরীব কল্যাণের জন্য, তাঁদের কর্মসংস্থানের জন্য একটি খুব বড় অভিযান শুরু হল। এই অভিযান আমি আমার শ্রমিক ভাই-বোনদের, আমাদের গ্রামে বসবাসকারী নবীন প্রজন্মের বোন ও কন্যাদের সমর্পণ করছি। এর মধ্যে অধিকাংশ শ্রমিকরা হলেন তাঁরা,  যাঁরা লকডাউনের সময় নিজের বাড়িতে ফিরেছেন। তাঁরা নিজেদের পরিশ্রম এবং দক্ষতার মাধ্যমে নিজের গ্রামের উন্নয়নের জন্য কিছু করতে চান! তাঁরা যতদিন নিজের গ্রামে থাকবেন, নিজের গ্রামকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চান।

 

আমার শ্রমিক বন্ধুগণ, দেশ আপনাদের ভাবনাকে বুঝতে পারে এবং আপনাদের প্রয়োজনগুলিকেও অনুভব করে। আজ খাগাড়িয়া থেকে শুরু হওয়া গরীব কল্যাণ রোজগার অভিযানের এই ভাবনা, এই প্রয়োজনগুলি মেটানোর জন্য একটি বড় উপায় হয়ে উঠতে চলেছে।

 

বিহার, উত্তরপ্রদেশ, ঝাড়খণ্ড, ওড়িশা, মধ্যপ্রদেশ এবং রাজস্থান এই ছ’টি রাজ্যের ১১৬টি জেলায় এই অভিযান পূর্ণোদ্যোমে চালানো হবে। আমরা চেষ্টা করব যাতে এই অভিযানের মাধ্যমে শ্রমিক এবং পেশাদারদের তাদের বাড়ির কাছেই কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দেওয়া সম্ভব হয়। এতদিন পর্যন্ত আপনারা নিজেদের দক্ষতা এবং পরিশ্রমের মাধ্যমে শহরগুলিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন, এখন নিজেদের গ্রামকে, নিজেদের এলাকাকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন। আর বন্ধুগণ, আপনারা এটা জেনে অবাক  হবেন যে আমি এই কর্মসূচী চালু করার প্রেরণা কয়েকজন শ্রমিক বন্ধুর কাছ থেকেই পেয়েছি।

 

বন্ধুগণ, আমি সংবাদমাধ্যমে একটি খবর দেখেছিলাম, এই খবরটি ছিল উত্তরপ্রদেশের উন্নাও অঞ্চলের। সেখানে একটি সরকারি স্কুলকে কোয়ারেন্টাইন সেন্টার বানানো হয়েছিল। যে শ্রমিকেরা শহর থেকে গ্রামে ফিরেছেন তাদেরকে সেখানে রাখা হয়েছিল। সেই কেন্দ্রে হায়দ্রাবাদ থেকে আসা কয়েকজন শ্রমিককে রাখা হয়েছিল। এই শ্রমিকেরা বাড়ি রং করা এবং বাড়ি-ঘর মেরামতি কাজে দক্ষ ছিলেন। ওই বিদ্যালয়ে গ্রামবাসীর আতিথেওতায় খুশি হয়ে তাঁরা ওই গ্রামের জন্য কিছু করতে চাইছিলেন। তাঁরা চুপচাপ সেখানে সময় কাটানোর বদলে নিজেদের দক্ষতা প্রয়োগ করতে চাইছিলেন। আর যেমন ভাবা তেমন কাজ! তাঁরা ওই সরকারি স্কুলে বসবাসের সময়ে নিজেদের দক্ষতার মাধ্যমে স্কুল গৃহটির ভোল পাল্টে দেন।

 

যখন আমি এই শ্রমিক ভাই-বোনদের কাজের কথা জানলাম, তাঁদের দেশভক্তি, তাঁদের দক্ষতা আমার মনকে প্রেরণা যোগায় – তা থেকেই মনে হয় যে এই মানুষেরা অনেক কিছুই করতে পারেন! আর তা থেকেই এই প্রকল্প জন্ম নিয়েছে। আপনারা ভাবুন কত প্রতিভাবান মানুষ এই দিনগুলিতে নিজের গ্রামে ফিরে এসেছেন। দেশের প্রতিটি শহরের গতি ও উন্নয়ন সুনিশ্চিত করা এই মানুষদের শ্রম এবং দক্ষতা যখন খগড়িয়ার মতন গ্রামাঞ্চলে প্রয়োগ করা হবে, তখন এর মাধ্যমে বিহারের উন্নয়ন কতটা গতি পাবে!

 

 

 

বন্ধুগণ,

 

গরীব কল্যাণ রোজগারের মাধ্যমে আপনাদের গ্রামের উন্নয়নের জন্য, আপনাদের কর্মসংস্থান সুনিশ্চিত করার জন্য ৫০ হাজার কোটি টাকা খরচ করা হবে। এই অর্থের মাধ্যমে গ্রামগুলিতে কর্মসংস্থানের জন্য, উন্নয়নের কাজ ত্বরান্বিত করতে প্রায় ২৫টি ক্ষেত্রকে চিহ্নিত করা হয়েছে। এই ২৫টি ক্ষেত্র বা প্রকল্প এমন যেগুলি গ্রামের মৌলিক পরিষেবাগুলির সঙ্গে জড়িত, যেগুলি গ্রামের মানুষের জীবনকে উন্নত করার জন্য শুরু হয়েছে। এই কাজগুলি নিজেদের গ্রামে থেকে, নিজের পরিবারের সঙ্গে থেকে আপনাদের রোজগারের সুযোগ দেবে।

 

এখন যেমন, খাগাড়িয়ার তেলিহার গ্রামে আজ থেকে অঙ্গনওয়ারি ভবন, সর্বজনীন শৌচালয়, গ্রামীণ বাজার এবং কুয়ো খননের কাজ শুরু করা হচ্ছে। এভাবে প্রত্যেক গ্রামের নিজস্ব প্রয়োজন রয়েছে, সে রকম  প্রয়োজনগুলিকে এখন গরীব কল্যাণ রোজগার অভিযানের মাধ্যমে বাস্তবায়িত করা হবে। এর মাধ্যমে ভিন্ন ভিন্ন গ্রামে গরীবদের জন্য পাকা বাড়ি নির্মিত হবে, কোথাও বৃক্ষ রোপণ হবে, কোথাও গৃহ পালিত পশুদের রাখার জন্য ছাউনি তৈরি করা হবে। পানীয় জলের জন্য গ্রামসভাগুলির সহযোগিতায় ‘জল জীবন মিশন’কেও এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে। তাছাড়া যেখানে প্রয়োজন, সেখানে সড়ক নির্মাণে জোর দেওয়া হবে। আর হ্যাঁ, যে গ্রামগুলিতে পঞ্চায়েত ভবন নেই সেখানে পঞ্চায়েত ভবনও নির্মাণ করা হবে।

 

 

 

বন্ধুগণ,

 

এই কাজগুলি এমনই যা প্রত্যেক গ্রামে হওয়া উচিত। কিন্তু তার পাশাপাশি এই অভিযানের মাধ্যমে গ্রামগুলিকে আধুনিক পরিষেবার সঙ্গেও যুক্ত করা হবে। এখন  শহরগুলির মতো গ্রামগুলিতেও প্রত্যেক বাড়িতে সুলভ এবং দ্রুতগতির ইন্টারনেট পরিষেবা থাকা প্রয়োজন হয়ে উঠেছে। এই জন্যই এগুলির প্রয়োজন, যাতে আমাদের গ্রামের ছেলে-মেয়েরাও ভালোভাবে পড়াশুনা করতে পারে। গ্রামের এই প্রয়োজনকেও আমরা এই গরীব কল্যাণ রোজগার অভিযানের সঙ্গে যুক্ত করেছি। দেশের ইতিহাসে প্রথমবার এমন হচ্ছে, যখন গ্রামগুলিতে শহরগুলি থেকে বেশি ইন্টারনেট ব্যবহার হচ্ছে। গ্রামগুলিতে ইন্টারনেটের গতি বৃদ্ধির জন্য অপটিক্যাল ফাইবার কেবল্ পৌঁছে দেওয়ার কাজও এই অভিযানে যুক্ত করা হয়েছে।

 

 

 

বন্ধুগণ,

 

এতসব কাজ কে করবে? গ্রামের মানুষই করবেন! আমার যে দক্ষ শ্রমিক বন্ধুরা শহর থেকে এসেছেন তাঁরাই করবেন। শহরে তাঁরা ছিলেন মজুর, মিস্ত্রি, বিভিন্ন যন্ত্রাংশ বিক্রিকারী ছোট দোকানদার, ড্রাইভার, প্লাম্বার, ইলেস্ট্রিশিয়ান, মেকানিক, সমস্ত পেশার মানুষরই এখন গ্রামে কর্মসংস্থান হবে। আমাদের বোনেদেরও স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলির মাধ্যমে যুক্ত করা হবে, যাতে তাঁরা নিজের নিজের পরিবারের জন্য অতিরিক্ত রোজগার করতে পারেন।

 

 

 

বন্ধুগণ,

 

শুধু তাই নয়, সমস্ত শ্রমিকদের দক্ষতার ম্যাপিংও শুরু হয়ে গেছে। অর্থাৎ গ্রামের মধ্যেই আপনাদের দক্ষতা চিহ্নিত করা হবে, যাতে নিজেদের দক্ষতা অনুযায়ী আপনারা কাজ পেতে পারেন! আপনারা  যে কাজ জানেন সেই পরিষেবা যাঁদের প্রয়োজন তারা নিজেরাই আপনার কাছে  পৌঁছে যাবেন।

 

 

 

বন্ধুগণ,

 

সরকার পূর্ণোদ্যোমে চেষ্টা করছে যাতে করোনা অতিমারীর সময়ে আপনারা গ্রামে থাকলেও কারো কাজ থেকে ঋণ না নিতে হয়, কারো সামনে হাত না পেতে দাঁড়াতে হয়, আমরা গরীবের আত্মাভিমানকে বুঝি। আপনারা ‘শ্রমেব জয়তে’- শ্রমের পূজারী, আপনাদের কাজ চাই, রোজগার চাই। এই ভাবনাকে অগ্রাধিকার দিয়ে সরকার এই প্রকল্প গড়ে তুলেছে, এই প্রকল্পকে এত কম সময়ে চালু করেছে। এর আগে আপনাদের এবং দেশের কোটি কোটি গরীব মানুষের তাৎক্ষণিক প্রয়োজনগুলি মেটানোর জন্যও সরকার লকডাউনের গোড়ার দিকে অনেক পদক্ষেপ নিয়েছিল।

 

আত্মনির্ভর ভারত অভিযানের সূচনাই প্রধানমন্ত্রী গরীব কল্যাণ যোজনার মাধ্যমে হয়েছে। আর আমার মনে আছে যখন শুরুতে আমরা গরীবদের জন্য প্রকল্প চালু করেছি তখন চার দিক থেকে চেঁচামেচি শুরু হয়েছিল – শিল্পোদ্যোগগুলির কী হবে, ব্যবসা বাণিজ্যের কী হবে, অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোগের কী হবে, সবার আগে এই কাজগুলি করুন। অনেকেই আমাদের সমালোচনা করেছেন, কিন্তু আমি জানি যে এই সঙ্কটে আমার অগ্রাধিকার হলো গরীবদের হাত ধরা।

 

এই প্রকল্পে কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই প্রায় ১ লক্ষ ৭৫ হাজার কোটি টাকা খরচ করা হয়েছে। বিগত তিন মাসে ৮০ কোটি গরীব মানুষের থালায় চাল-ডাল পৌঁছে দেওয়া কাজ হয়েছে। রেশনের পাশাপাশি তাঁদের বিনামূল্যে রান্নার গ্যাস সিলিন্ডার দেওয়া হয়েছে। এভাবে, ২০ কোটি গরীব মা ও বোনেদের জনধন অ্যাকাউন্টে ১০ হাজার কোটি টাকারও বেশি সরাসরি জমা করা হয়েছে। গরীব, বৃদ্ধ, মা, বোন এবং দিব্যাঙ্গ বন্ধুদের জন্য ১ হাজার কোটি টাকার সহায়তাও সরাকরি তাঁদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে জমা করা হয়েছে।

 

ভাবুন, যদি বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে আপনাদের জনধন অ্যাকাউন্ট না খোলানো হতো, আপনাদের মোবাইল ফোনের সঙ্গে এই ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টগুলি এবং আধার কার্ড যুক্ত না করা হতো তাহলে এত সহজে আপনাদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে সরাসরি এই টাকা পৌঁছে দেওয়া কেমন করে সম্ভব হতো? আগে দেশ কিভাবে চলতো তা তো আপনাদের নিশ্চই মনে আছে! সরকার থেকে নানা অনুদান এবং ভর্তুকি অবশ্যই দেওয়া হতো, আপনাদের নামেই দেওয়া হতো কিন্তু আপনাদের কাছে পৌঁছতো না। এখন সেই দিন বদলে গেছে। সরকারি ন্যায্য মূল্যের দোকান থেকে আপনাদের রেশন তুলতে যাতে কোনো জটিলতার সম্মুখীন হতে না হয়, সেজন্য ‘এক দেশ এক রেশন কার্ড যোজনা’ও চালু করা হয়েছে। অর্থাৎ, এখন আমাদের গরীব ভাই-বোনেরা একটাই রেশন কার্ড নিয়ে দেশের যে কোনো রাজ্যে, যে কোনো শহরে রেশন তুলতে পারবেন।

 

 

 

বন্ধুগণ,

 

আত্মনির্ভর ভারতের জন্য আত্মনির্ভর কৃষকও অত্যন্ত প্রয়োজন। কিন্তু এত বছর ধরে আমাদের দেশে কৃষি এবং কৃষকদের বিনা কারণে নানা নিয়মকানুন দিয়ে বেধে রাখা হয়েছিল। আপনারা সবাই, আমার কৃষক বন্ধুরা যাঁরা আমার সামনে বসে আছেন তাঁরা তো নিজেরাই এত বছরের এই অসহায়তাকে অনুভব করেছেন।

 

কৃষক নিজের ফসল কোথায় বিক্রি করবেন, কোথায় গুদামজাত করবেন সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকারও এতদিন কৃষকদের দেওয়া হয়নি। এই ধরণের বৈষম্যমূলক আইনগুলিকে আমরা দু’সপ্তাহ আগে বাতিল করে দিয়েছি। এখন আপনারা কোথায় ফসল বিক্রি করবেন সেটা সরকার ঠিক করবে না, আধিকারিকরা ঠিক করবেন না, কৃষকরা নিজেরাই ঠিক করবেন।

 

এখন কৃষক নিজের রাজ্যের বাইরেও উৎপাদিত ফসল বিক্রি করতে পারবেন এবং যে কোনো বাজারে বিক্রি করতে পারবেন। এখন আপনারা নিজেদের উৎপাদিত ফসলের মূল্য যে ব্যবসায়ী বেশি দেবে বা যে কোম্পানী বেশি দেবে তাঁদের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত হতে পারেন, এবং তাদেরকে সরাসরি বিক্রি করতে পারেন। আগে যে আইন ফসল গুদামজাত করণে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করত এখন সেই আইনও পরিবর্তন করা হয়েছে।

 

 

 

বন্ধুগণ,

 

আত্মনির্ভর ভারত প্যাকেজে কৃষকদের ফসল গুদামজাত করণের জন্য শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত গুদাম নির্মাণ এবং কৃষকদের সরাসরি বাজারের সঙ্গে যুক্ত করার জন্যও ১ লক্ষ কোটি টাকা বিনিয়োগ ঘোষণা করা হয়েছে। যখন কৃষক বাজারের সঙ্গে যুক্ত হবে, তখন নিজেদের ফসল বেশি দামে বিক্রি করার পথও খুলবে।

 

আপনারা হয়তো আত্মনির্ভর ভারত অভিযানের লক্ষ্যে নেওয়া আরেকটি সিদ্ধান্তের কথা শুনেছেন! আপনাদের গ্রামের কাছে ছোট ছোট জনপদ এবং শহরগুলিতে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত ফসল বা অন্যান্য জিনিস থেকে যেন আলাদা আলাদা পণ্য উৎপাদিত হয়, প্যাকিং-এর সরঞ্জাম তৈরি হয়, তার জন্য ছোট ছোট শিল্পোদ্যোগের সমূহ গড়ে তোলা হবে। এর মাধ্যমে কৃষকরা আরো লাভবান হতে চলেছেন।

 

এখন যেমন, খাগাড়িয়াতে ভালো ভুট্টার ফলন হয় কিন্তু এই ভুট্টা উৎপাদন করে কৃষকরা যদি সরাসরি এই শিল্পোদ্যোগ সমূহের সঙ্গে যুক্ত হন, খাগাড়িয়ার ভুট্টা থেকে স্থানীয় পণ্য উৎপাদিত হয়, তাহলে কত লাভ হবে! এভাবে বিহারে মখানা, লিচু, কলা, উত্তরপ্রদেশে উৎপন্ন হয় আমলকি, আম, রাজস্থানে লঙ্কা, মধ্যপ্রদেশে বিভিন্ন ধরণের ডাল, ওড়িশা ও ঝাড়খণ্ডে উৎপাদিত বনজ সম্পদ প্রত্যেক জেলায় এমনি অনেক স্থানীয় ফসল রয়েছে, যেগুলির সঙ্গে যুক্ত শিল্পোদ্যোগ আপনাদের অঞ্চলেই চালু করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

 

 

 

বন্ধুগণ,

 

বিগত ছ’বছর ধরে লাগাতার এধরণের সকল প্রচেষ্টার একটাই উদ্দেশ্য, আমাদের গ্রাম, আমাদের গরীবরা যাতে নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে; তাঁদের ক্ষমতায়ন। আমাদের যে কোনো গরীব, মজুর, কৃষকের যাতে কারো সাহায্যের প্রয়োজন না পরে! আসলে আমরা সেই গোত্রের মানুষ যাঁরা কারো সাহায্য নিয়ে নয়, শ্রমের সম্মান নিয়ে বেচে থাকি!

 

গরীব কল্যাণ রোজগার অভিযান-এর মাধ্যমে আপনাদের এই আত্মসম্মানও অটুট থাকবে, আর আপনাদের শ্রমের মাধ্যমে আপনাদের গ্রামের উন্নয়নও হবে। আজ আপনাদের এই সেবক, এবং গোটা দেশ, এই ভাবনা নিয়ে, এই সংকল্প নিয়ে আপনাদের মান ও সম্মান বৃদ্ধির জন্য কাজ করে চলেছে।

 

আপনারা যখন কাজ করতে বাড়ি থেকে বের হবেন, তখন আমার এই অনুরোধও মনে রাখবেন যে সতর্ক থাকবে হবে, মাস্ক পরতে হবে, অথবা গামছা কিংবা কাপড় দিয়ে নাম-মুখ ঢাকতে হবে। পরিচ্ছন্নতা এবং দুই গজ দূরত্বের নিয়ম নেমে চলতে ভুলবেন না। আপনারা সতর্ক থাকলে আপনাদের গ্রাম, আপনাদের বাড়ির মানুষজন এই সংক্রমণ থেকে রক্ষা পাবে। এটি আমাদের জীবন এবং আমাদের জীবিকা উভয়ের জন্যই অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।

 

আপনারা সবাই সুস্থ থাকুন, এগিয়ে যান, আপনাদের সঙ্গে দেশও এগিয়ে যাবে, এই শুভেচ্ছা নিয়ে আপনাদের সবাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ!

 

আমি সমস্ত সম্মানিত মুখ্যমন্ত্রীদের কাছে কৃতজ্ঞ, বিশেষ করে বিহার সরকারের কাছে কৃতজ্ঞ, এই অত্যন্ত গুরুত্বপূ্র্ণ উদ্যোগের প্রকল্প গড়ে তুলতে আর তাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে আপনাদের এই সহযোগিতা এবং সমর্থনের জন্য আমি আপনাদের সকলকে কৃতজ্ঞতা জানাই। আপনাদের সবাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।

 

CG/SB/SKD