Search

পিএমইন্ডিয়াপিএমইন্ডিয়া

সাম্প্রতিক সংবাদ

বিষয়টিকে সরাসরি পিআইবি থেকে নেওয়া হয়েছে

কোচির সমুদ্র উপকূলে ‘আই এন এস বিক্রমাদিত্য’-এ কমান্ডারদের যুক্ত সম্মেলনে ভাষণ দিলেন প্রধানমন্ত্রী

কোচির সমুদ্র উপকূলে ‘আই এন এস বিক্রমাদিত্য’-এ কমান্ডারদের যুক্ত সম্মেলনে ভাষণ দিলেন প্রধানমন্ত্রী

কোচির সমুদ্র উপকূলে ‘আই এন এস বিক্রমাদিত্য’-এ কমান্ডারদের যুক্ত সম্মেলনে ভাষণ দিলেন প্রধানমন্ত্রী

কোচির সমুদ্র উপকূলে ‘আই এন এস বিক্রমাদিত্য’-এ কমান্ডারদের যুক্ত সম্মেলনে ভাষণ দিলেন প্রধানমন্ত্রী

কোচির সমুদ্র উপকূলে ‘আই এন এস বিক্রমাদিত্য’-এ কমান্ডারদের যুক্ত সম্মেলনে ভাষণ দিলেন প্রধানমন্ত্রী

কোচির সমুদ্র উপকূলে ‘আই এন এস বিক্রমাদিত্য’-এ কমান্ডারদের যুক্ত সম্মেলনে ভাষণ দিলেন প্রধানমন্ত্রী


ভারতের ইতিহাসে সমুদ্রের প্রভাব অপরিসীম। এই মহাসাগরকে ঘিরেই আবর্তিত হয়েছে আমাদের ভবিষ্যৎ সমৃদ্ধি ও নিরাপত্তার চিন্তাভাবনা। বিশ্বের অদৃষ্ট নির্ধারণেও রয়েছে সমুদ্র ও মহাসাগরের এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।

আজ কোচির সমুদ্র উপকূলে ‘আই এন এস বিক্রমাদিত্য’ জাহাজে কমান্ডারদের এক যুক্ত সম্মেলনে ভাষণদানকালে এই মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী। তিনি বলেন, বিমানবাহী এই পোতটি আমাদের নৌ-শক্তি ও সমুদ্র এলাকায় আমাদের দায়িত্বশীলতার প্রতীক।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনী শুধুমাত্র তাদের শক্তি ও ক্ষমতার জন্যই খ্যাতি অর্জন করেনি, কৌশলগত দক্ষতা ও দায়িত্বশীলতার কারণেও সশস্ত্র বাহিনীর সুনাম আজ সুবিদিত। এই বাহিনীত্রয় আমাদের সীমান্ত ও সমুদ্রকে রক্ষা করে চলেছে। জাতিকে সুরক্ষিত রাখতে এবং নাগরিকদের অস্তিত্ব নিরাপদ করে তুলতে তারা কর্তব্য করে চলেছে। প্রাকৃতিক বিপর্যয় এবং সংঘাত ও সংঘর্ষের সময় শুধুমাত্র মানুষের মনে তারা আশার সঞ্চারই করে না, সেইসঙ্গে তাদের ত্রাণে এবং মনোবল বৃদ্ধিতে এগিয়ে আসে তারা। আর এইভাবেই বিশ্বের আস্থা অর্জন করেছে আমাদের সশস্ত্র বাহিনী।

চেন্নাইতে সশস্ত্র বাহিনী বৃষ্টি ও বন্যার তাণ্ডব থেকে মানুষের জীবন রক্ষা করেছে। নেপালে সাহস ও সহমর্মিতার সঙ্গে তারা কাজ করে গেছে। নেপালের মতো ইয়েমেন-এও শুধুমাত্র সেখানকার নাগরিকদেরই নয়, বিপদগ্রস্ত সকল মানুষের কাছেই সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে আমাদের বাহিনী। আজ আমি সমগ্র জাতির হয়ে সেনাবাহিনীকে জানাই আমার কৃতজ্ঞতা। একইসঙ্গে আমি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করি তাঁদের যাঁরা নীরবে সেবার মধ্য দিয়ে নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছেন। তাঁদের লক্ষ্য ছিল একটাই – ভারতের অগ্রগতি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বের দুর্গম সীমান্ত এলাকায় অতন্দ্র প্রহরায় মোতায়েন সেনাকর্মীরা রয়েছেন আমাদের চিন্তাভাবনায়। আমরা রয়েছি তাঁদের পরিবার-পরিজনদের পাশেই যাঁরা তাঁদের কর্তব্যের খাতিরে বিদায় জানিয়েছেন পরিবারের প্রিয় মানুষটিকে। এমনকি আমরা রয়েছি তাঁদের সেই সমস্ত প্রিয়জনদের পাশেও যাঁদের হয়তো কোন না কোন সময় একদিন কফিন বহন করে আনতে হবে মৃত সেনাকর্মীদের। একজন তরুণ সেনাকর্মী যখন চাকরি জীবনে পরবর্তী গ্রেডে পৌঁছনোর সুযোগ পান না তখন তাঁর যে হতাশাবোধ তা আমরা অনুভব করেছি। সকল রকম দক্ষতা বা যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও শুধুমাত্র সীমিত ব্যবস্থাগত কারণে তিনি পরবর্তী গ্রেডে উন্নীত হতে পারেন না। কিন্তু তাঁদের সেবা ও কল্যাণকে তুলে ধরাই আমাদের কর্তব্য বলে আমরা মনে করি। এই লক্ষ্যেই ‘এক পদ এক পেনশন’ নীতি রূপায়ণের অঙ্গীকার আমরা গ্রহণ করেছি যাতে বহু দশকের অপ্রাপ্তি ও অপূর্ণতার যন্ত্রণা দূর করা যায়। জাতীয় যুদ্ধ স্মারক ও সংগ্রহশালা গড়ে তোলার সঙ্কল্পও গ্রহণ করেছি আমরা। প্রাক্তন সেনাকর্মীদের দক্ষতা উন্নয়নে এবং সুযোগসুবিধা প্রসারে আমরা ব্রতী হয়েছি যাতে বাহিনীর কাজ থেকে অবসর গ্রহণের পরও তাঁরা গর্ব ও মর্যাদার সঙ্গে জাতির সেবা করে যেতে পারেন।

দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বাহিনীর প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্মান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁদের সাহসিকতা ও নিষ্ঠা জম্মু ও কাশ্মীরে সন্ত্রাসবাদকে পরাস্ত করেছে। চরম বামপন্থী হিংসার মতবাদে বিশ্বাসীদের নিরস্ত করেছে এবং দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে শান্তিপূর্ণ এলাকা করে তুলেছে। বহুদিনের নাগা সমস্যার সমাধানে নতুন আশার জন্ম দেওয়ায় যাঁরা এই সমস্যা নিরসনের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন তাঁদের ভূমিকার আমি বিশেষ প্রশংসা করি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারত বর্তমানে পরিবর্তনের এক বিশেষ মুহূর্তে দাঁড়িয়ে। সারা দেশে এখন আশা ও সম্ভাবনার পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। ভারত সম্পর্কে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে গড়ে উঠেছে নতুন আশা ও বিশ্বাসের এক বাতাবরণ। বর্তমানে বিশ্বের দ্রুত বেড়ে ওঠা প্রধান অর্থনীতিগুলির অন্যতম হল ভারত। আমাদের অর্থনীতি এখন অনেকটাই স্থিতাবস্থায়। আমাদের কল-কারখানায় এখন কাজ চলছে পুরোদমে। ভবিষ্যতের দিকে লক্ষ্য রেখে পরবর্তী প্রজন্মের উপযোগী পরিকাঠামো গড়ে তোলায় সচেষ্ট রয়েছি আমরা। বিদেশি বিনিয়োগের পরিমাণও উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে। ভবিষ্যতে যে অফুরন্ত সুযোগ ও সম্ভাবনার সৃষ্টি হতে চলেছে তা প্রত্যক্ষ করছেন দেশের প্রত্যেক নাগরিক। ভারতের সমৃদ্ধি ও নিরাপত্তার স্বার্থে এই বিষয়গুলি একান্তই জরুরি। বিশ্বের প্রতিটি দেশ পরস্পরের ওপর নির্ভরশীল। তাই, ভারতের রূপান্তর ঘটে চলেছে বিশ্বের অন্যান্য দেশের ঘনিষ্ঠ সহযোগিতায়। এইভাবেই ক্রমশ জোরদার হয়ে উঠছে আমাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। আমাদের বিদেশ নীতির ক্ষেত্রেও নতুন করে যুক্ত হচ্ছে আশা ও সম্ভাবনা। প্রাচ্যে জাপান, কোরিয়া এবং আসিয়ানভুক্ত দেশগুলির সঙ্গে আমাদের ঐতিহ্যবাহী সম্পর্ককে আমরা আরও জোরদার করে তুলেছি। সেইসঙ্গে, অস্ট্রেলিয়া, মঙ্গোলিয়া এবং প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপরাষ্ট্রগুলির সঙ্গে আমরা গড়ে তুলছি নতুন অংশীদারিত্বের সম্পর্ক। ভারত মহাসাগর অঞ্চলে পারস্পরিক সহযোগিতার ক্ষেত্রকে আমরা আরও প্রসারিত করেছি। আমাদের সমুদ্র অঞ্চলের জন্য গড়ে তুলেছি এক সুস্পষ্ট কৌশলসূত্র। আফ্রিকার সঙ্গে সহযোগিতার সম্পর্ককে আমরা উন্নীত করেছি এক নতুন মাত্রায়। মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে আমাদের প্রাচীন সংযোগের পথও আমরা খুঁজে পেয়েছি। পশ্চিম এশিয়া এবং উপসাগর অঞ্চলে আমরা গড়ে তুলেছি ঘনিষ্ঠ অংশীদারিত্ব ও নিরাপত্তা সহযোগিতার সম্পর্ক। এমনকি, ইরানের সঙ্গেও আমাদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক এখন পুনর্প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে। রাশিয়া বরাবরই রয়েছে আমাদের সঙ্গে। আমাদের ভবিষ্যতের চলার পথে রাশিয়ার অংশীদারিত্বও সমান গুরুত্বপূর্ণ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে প্রতিরক্ষাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমাদের সহযোগিতার সম্পর্ককে আরও এগিয়ে নিয়ে গিয়েছি আমরা। ইউরোপের সঙ্গে আমাদের কৌশলগত অংশীদারিত্বের সম্পর্ক গভীরতর হয়ে উঠেছে। তাই, বিশ্বের কাছে ভারত শুধুমাত্র বিশ্ব অর্থনীতির একটি উজ্জ্বল স্থানবিন্দুই হয়ে ওঠেনি, ভারত হয়ে উঠেছে আঞ্চলিক তথা বিশ্ব শান্তি, নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার ক্ষেত্রে অন্যতম এক চালিকাশক্তি। সন্ত্রাসবাদ ও উগ্রপন্থার হুমকির মোকাবিলায় বিশ্বের সমস্ত দেশ এখন ভারতের সঙ্গে সহযোগিতা স্থাপনে আগ্রহী। ইসলাম রাষ্ট্রগুলিও এর ব্যতিক্রম নয়। সর্বোপরি, আমাদের প্রতিবেশী দেশগুলি ভবিষ্যতে চলার পথে হয়ে উঠেছে আমাদের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। যদিও এই অঞ্চল এখন নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়ে পড়েছে।

সন্ত্রাসবাদ ও গুলিবর্ষণ চুক্তি লঙ্ঘনের ঘটনা আমরা প্রত্যক্ষ করেছি। নির্বিচারে পরমাণু শক্তির আস্ফালন ও হুমকিরও আমরা শিকার হয়েছি। সীমান্ত অঞলে আগ্রাসনের কদর্য রূপ আমরা লক্ষ্য করেছি। সেইসঙ্গে, রণসজ্জার প্রসার ও আধুনিকীকরণের তৎপরতাও আমাদের দৃষ্টি এড়িয়ে যায়নি। পশ্চিম এশিয়ার স্থিতিশীলতার অভাব ক্রমশই তার ছায়া বিস্তার করে চলেছে। আমাদের এই অঞ্চলে রাজনৈতিক অনশ্চিয়তা, দুর্বল প্রশাসন এবং অভ্যন্তরীণ বিবাদ ও সংঘাতের ঘটনা নিয়তই ঘটে চলেছে। আমাদের প্রতিবেশী দেশগুলিতে প্রধান প্রধান শক্তিগুলি ইতিমধ্যেই স্থল ও নৌ-পথে তাদের প্রভাব বিস্তার করে চলেছে। এই অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে মালদ্বীপ থেকে শ্রীলঙ্কা, নেপাল থেকে ভুটান – সর্বত্রই আমরা আমাদের পারস্পরিক স্বার্থ ও সম্পর্ককে রক্ষা করার জন্য জোরদার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। স্থল সীমান্ত চুক্তি বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক ও নিরাপত্তা সহযোগিতাকে আরও জোরদার করে তুলেছে। ইতিহাসের গতিপথ পরিবর্তনে, সন্ত্রাসবাদ নির্মূল করার কাজে, শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক গঠনে, সহযোগিতার প্রসারে এবং সমৃদ্ধি ও স্থিতিশীলতার উন্নয়নে পাকিস্তানের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ককেও আমরা আন্তরিক ও ঘনিষ্ঠ করে তোলার কাজে সচেষ্ট রয়েছি। আমরা জানি আমাদের চলার পথে বহু চ্যালেঞ্জ ও বাধা-বিপত্তি আমাদের অতিক্রম করে যেতে হবে। কিন্তু চেষ্টা আমরা চালিয়ে যাবই। কারণ, শান্তির প্রয়োজন আমাদের শিশুদের নিরাপদ ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার স্বার্থে। এই কারণে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা পর্যায়ে আলাপ-আলোচনার সূত্রপাতও ঘটিয়েছি আমরা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আফগানিস্তানের জনসাধারণের জন্য এক শান্তিপূর্ণ, সমৃদ্ধ ও ঐক্যবদ্ধ গণতন্ত্র গড়ে তোলার কাজে সহযোগিতা প্রসারেও আমরা অঙ্গীকারবদ্ধ। চিনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ অর্থনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তোলার ক্ষেত্রেও আমরা উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। বহুদিনের বিতর্কের অবসানে, সীমান্তে স্থিতাবস্থা রক্ষায় এবং পারস্পরিক আস্থার মনোভাবের প্রসারে আমরা আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। দুটি স্বনির্ভর ও আত্মবিশ্বাসী জাতি হিসেবে ভারত ও চিন পরস্পরের সঙ্গে গঠনমূলক সম্পর্কের প্রসারে জোরদার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবে বলেই আমার বিশ্বাস। কারণ, এই দুটি দেশ তাদের পারস্পরিক স্বার্থ ও দায়িত্ব সম্পর্কে যথেষ্ট মাত্রায় সচেতন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, দ্রুত পরিবর্তনশীল এই বিশ্বে ভারত প্রতিনিয়ত নতুন নতুন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। আমাদের এই চ্যালেঞ্জ রয়েছে স্থল, সমুদ্র এমনকি বিমানপথেও। সন্ত্রাসবাদ থেকে শুরু করে পরমাণু অস্ত্রের ব্যবহার – নানা ধরনের হুমকির প্রতিনিয়তই সম্মুখীন হচ্ছি আমরা। তাই আমাদের দায়িত্বশীলতা শুধুমাত্র স্থলসীমা বা উপকূলরেখা বরাবরই আবদ্ধ নয়। তার প্রসার এখন সর্বত্র। দেশের নাগরিকদের স্বার্থ থেকে শুরু করে বিশ্বের নানা ঘটনার মধ্য দিয়ে আবর্তিত হয়ে চলছে আমাদের এই দায়িত্বশীলতাবোধ। বিশ্ব যখন সতত রূপান্তরশীল প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে চলেছে, নতুন নতুন অর্থনীতি ও প্রযুক্তি সম্ভাবনার আশা আজ ক্রমশ উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। তাই, বিবাদ, সংঘাত ও সংঘর্ষের প্রকৃতি এবং যুদ্ধের উদ্দেশ্যের অভিমুখও ক্রমশ বদলে যাচ্ছে। বহুদিনের শত্রুতার সম্পর্ক মহাকাশ এবং সাইবার জগতে নতুন নতুন আশঙ্কার জন্ম দিচ্ছে। কিন্তু, নতুন নতুন প্রযুক্তির উদ্ভাবন নতুন এবং পুরনো যেকোন ধরনের হুমকির মোকাবিলা করার কাজে আমাদের আরও সাহস যুগিয়ে চলছে। তাই, ভারতকে শুধুমাত্র বর্তমানের জন্য প্রস্তুত থাকলেই চলবে না, ভবিষ্যতের জন্যও প্রস্তুতি নিতে হবে আমাদের।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারত তার প্রতিরক্ষা বাহিনীর শক্তি ও ক্ষমতা সম্পর্কে খুবই আত্মবিশ্বাসী। যেকোন আক্রমণ প্রতিহত করার ক্ষমতা যে বাহিনীর রয়েছে এ কথা আজ সুপ্রতিষ্ঠিত। আমাদের পরমাণু গবেষণা ও রাজনৈতিক সদিচ্ছা প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে করে তুলেছে নির্ভরযোগ্য। প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত সাজসরঞ্জাম উৎপাদন ও সংগ্রহের বিষয়টিকে আমরা অগ্রাধিকার দিয়েছি। সীমান্ত পরিকাঠামোর প্রসারে এবং আমাদের প্রতিরক্ষা বাহিনী ও সাজসরঞ্জামকে গতিশীল করে তুলতে আমরা আরও বেশি মাত্রায় সচেষ্ট হয়েছি। সীমান্ত অঞ্চলে রেলের প্রসার আমাদের এই প্রকৌশলেরই একটি অঙ্গ। নতুন নতুন নীতি বা উদ্যোগের মাধ্যমে দেশে প্রতিরক্ষা উৎপাদনের বিষয়টিকেও আমরা নতুন রূপ দিতে চলেছি। সরকারি সংস্থাগুলি বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের মোকাবিলায় নিজেদের ক্রমশ শক্তিশালী করে তুলছে। বেসরকারি ক্ষেত্রগুলি থেকে আমরা সাড়া পেয়েছি উৎসাহজনকভাবে। বিদেশের প্রতিরক্ষা সংস্থাগুলি ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের জন্য বিভিন্ন উচ্চাকাঙ্খামূলক নতুন নতুন প্রস্তাব পেশ করে চলেছে। ফাইটার জেট ও হেলিকপ্টার থেকে শুরু করে বিমান পরিবহণ ও ইউ এ ভি সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সক্রিয় সহযোগিতা প্রসারে তারা এখন আগ্রহী।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশে আমাদের শক্তি ও ক্ষমতার প্রসার তথা বৃদ্ধি যদি আমরা না ঘটাতে পারি তাহলে কখনই আমরা নিজেদের এক সুরক্ষিত জাতি কিংবা এক জোরদার সামরিক শক্তি হিসেবে তুলে ধরতে পারব না। এই দুটি বিষয় সম্ভব করে তোলার সঙ্গে সঙ্গে মূলধন ও উদ্ভাবন খাতে আমাদের ব্যয়সাশ্রয়ও সুনিশ্চিত হবে। সেইসঙ্গে, প্রসার ঘটবে শিল্প, কর্মসংস্থান ও অর্থনৈতিক কর্মপ্রচেষ্টার। আমাদের সংগ্রহ নীতি ও প্রক্রিয়াকেও আমরা অচিরেই সংশোধন করতে চলেছি। প্রতিরক্ষা প্রযুক্তির ক্ষেত্রেও আমাদের সামর্থ্য ও দক্ষতাকে বাড়িয়ে তোলার নীতি আমরা গ্রহণ করছি। প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি এখন আমাদের জাতীয় কর্মপ্রচেষ্টাগুলিরই অন্যতম প্রধান একটি অঙ্গ। ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ কর্মসূচির সাফল্যে আমাদের সশস্ত্র বাহিনী পালন করবে এক সক্রিয় ভূমিকা। আমাদের লক্ষ্য ও লক্ষ্যমাত্রা খুবই স্বচ্ছ ও সুস্পষ্ট। প্রতিরক্ষা সাজসরঞ্জামের উদ্ভাবন, নকশা তৈরি ও উন্নয়ন – সমস্ত ক্ষেত্রেই আমাদের সশস্ত্র বাহিনী উত্তরোত্তর সক্রিয় ভূমিকা পালন করে চলেছে। ভবিষ্যতের লক্ষ্যে প্রস্তুতও রয়েছে তারা। গত এক বছরে এই কাজে প্রভূত অগ্রগতির সাক্ষী থেকেছি আমরা। কিন্তু আমি বিশ্বাস করি যে আমাদের মত ও বিশ্বাস, উদ্দেশ্য ও প্রকৌশল – সমস্ত ক্ষেত্রেই আমাদের অনেক কাজ করাই এখনও বাকি থেকে গেছে। পরিবর্তনশীল বিশ্বের উপযোগী করে আমরা স্থির করব আমাদের লক্ষ্য, নিশ্চিত করব আমাদের গতিপথ।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বের শক্তিধর রাষ্ট্রগুলি ক্রমশ প্রযুক্তি নির্ভর হয়ে উঠছে। সেইসঙ্গে, তাদের সশস্ত্র বাহিনীর আকার আয়তনকে তারা ক্রমশ সঙ্কুচিত করে তুলছে। কিন্তু আমরা আমাদের বাহিনীগুলির আকার ও আয়তন বাড়ানোর কাজে এখনও সচেষ্ট রয়েছি। একইসঙ্গে, সশস্ত্র বাহিনীর আধুনিকীকরণ ও সম্প্রসারণও আমাদের কঠিন চ্যালেঞ্জগুলির অন্যতম। শুধুমাত্র মানবিক সাহসিকতা বা বীরত্বই নয়, আমরা চাই গতিময়তা এবং প্রযুক্তির মধ্য দিয়ে আমাদের বাহিনী হয়ে উঠুক আরও শক্তিশালী।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের শক্তি ও ক্ষমতার সঙ্গে আমরা যুক্ত করতে চলেছি ডিজিটাল নেটওয়ার্ক ও মহাকাশ সম্পদের শক্তি ও সম্ভাবনাকে। একইসঙ্গে, সেগুলি সুরক্ষিত রাখার দায়িত্বও আমাদেরই। কারণ, লক্ষ্যবস্তুর দিক থেকে হামলাকারীদের এগুলিই হয়ে উঠবে প্রধান আকর্ষণ। আমাদের তিন বাহিনীতে প্রবীণ যে সেনা আধিকারিকরা রয়েছেন তাঁদের অবশ্যই বাহিনী পরিচালনা, প্রযুক্তিচালিত গতিশীলতা এবং নতুন নতুন চ্যালেঞ্জের মোকাবিলার উপযুক্ত করে গড়ে তুলতে হবে। এই কাজে অন্যদের থেকে আমাদের অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করতে হবে। কিন্তু, তার সঙ্গে যুক্ত করতে হবে আমাদের নিজস্ব মেধা ও ব্যবস্থাকে। উচ্চপর্যায়ের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রেও আমরা সংস্কারের পক্ষপাতী। পরিতাপের বিষয়, অতীতে প্রতিরক্ষা সংস্কারের যে প্রস্তাবগুলি গ্রহণ করা হয়েছিল তা কোনদিনই রূপায়িত হয়নি। তাই, প্রতিরক্ষা সংস্কার রয়েছে আমাদের অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত ক্ষেত্রগুলির তালিকায়। রাষ্ট্রসঙ্ঘের সঙ্গে শান্তি ও স্থিতিশীলতা নিয়েও আমরা মত বিনিময় করেছি। আমাদের বাহিনীর সেনাকর্মীরা হয়ে উঠতে পারেন শান্তির দূত। প্রত্যন্ত দ্বীপ রাষ্ট্রগুলিতে চিকিৎসার সাজসরঞ্জাম নিয়ে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে পারে আমাদের সশস্ত্র বাহিনী। বিশ্বের অন্যান্য সামরিক শক্তিগুলির সঙ্গেও তারা গড়ে তুলতে পারে সহযোগিতার সম্পর্ক।

পরিশেষে, দেশের রূপান্তর সম্ভব করে তুলতে প্রতিটি সংস্থা, প্রতিষ্ঠান ও ব্যবস্থার সংস্কারের ওপর জোর দেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, যদি আমরা সংস্কারের পথে একটি একটি করে পদক্ষেপ নিতে শুরু করি, আমাদের দেশও তখন সমানতালে অগ্রগতির পথে এগিয়ে যাবে। আর এই সংস্কারের মধ্য দিয়েই বাহিনীর চাহিদা ও প্রয়োজন যেমন আমরা মেটাতে পারব, একইভাবে প্রস্তুতির দিক থেকেও আমাদের বাহিনী হয়ে উঠবে আরও তৎপর ও শক্তিশালী। আমাদের অর্থনীতি তার গতিশীলতার মধ্য দিয়ে আমাদের ভবিষ্যতকে আরও নিশ্চিত করে তুলবে। বর্তমান বছরটিতে দুটি বিশ্বযুদ্ধ এবং আমাদের ১৯৬৫ সালের যুদ্ধের সমাপ্তির কথা আমরা স্মরণ করছি। আবার, এই বছরটি হল এমনই এক সন্ধিক্ষণ যখন দারিদ্র্য ও জলবায়ু পরিবর্তনের মোকাবিলায় রাষ্ট্রসঙ্ঘে সমস্ত দেশই একজোট হয়ে সাড়া দিয়েছে বিশ্ব মানবতার স্বার্থে। অতীতের করুণ ও বিয়োগান্তক পরিস্থিতির স্মরণে এবং উন্নততর এক বিশ্ব সংসার গড়ে তোলার এক প্রচেষ্টায় আমরা ভুলতে পারি না মানুষের সমৃদ্ধি ও বিপদসঙ্কুল দিনগুলির কথা। আমার দৃঢ় বিশ্বাস আমাদের বাহিনীত্রয় ভারতকে তার অঙ্গীকার পালনে সফল করে তুলে বিশ্বে দেশের মাথা আরও উন্নত করে তুলবে।

PG/SKD/DM/……15th December, 2015