আরব সাগরের রানি কোচিতে এসে আমি আনন্দিত।নীল সমুদ্র, ব্যাক ওয়াটার, অসাধারণ পেরিয়ার নদী, চারিপাশে সবুজ এবং কোচির প্রগতিশীল মানুষজন কোচিকে যথার্থই একটি অন্য মাত্রা দিয়েছে।
এখান থেকে ঋষি আদিশঙ্কর তাঁর ভারতব্যাপী সফর শুরু করেছিলেন একটাই কারণে, সেটি হল ভারতীয় সভ্যতাকে সুরক্ষিত করা এবং দেশকে ঐক্যবদ্ধ করার জন্য।
আজ একটি ঐতিহাসিক দিন যেদিন কেরলের বৃহত্তম শিল্প সংস্থা তার পরবর্তী উন্নয়নের পর্যায়ে পা দিল।এই রাজ্যের এটি একটি গর্ব করার মুহূর্তই কেবল নয়, সারা দেশেরই গর্বের করার মতো মুহূর্ত এটি।
পরিচ্ছন্ন জ্বালানি এবং এলপিজি কেরল এবং আশপাশের রাজ্যগুলির জনসাধারণের কাছে জনপ্রিয় করে তুলতে বিগত ৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে ভারত পেট্রোলিয়ামের কোচি শোধনাগারটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
আমার মনে পড়ছে আমার কৈশোর এবং যৌবন অবস্থার কথা যখন আমি দেখেছি বহু মা রান্নাঘরে কাঠের জ্বালানির সামনে হিমসীম খাচ্ছেন।সেই থেকেই আমি চিন্তাভাবনা করতাম কি করে এই অবস্থার উন্নতি করা যায়, কি করে ভারতবর্ষের মা-বোনেদের স্বাস্থ্যকর রান্নাঘর উপহার দেওয়া যায়।
কেন্দ্রীয় সরকারের উজ্জ্বলা প্রকল্প এই স্বপ্ন চরিতার্থ করার একটি উপায়।আমি সত্যিই আনন্দিত যে ২০১৬-র মে থেকে উজ্জ্বলা যোজনার আওতায় দেশের গরিব থেকে গরিবতর পরিবারকে প্রায় ৬ কোটি এলপিজি সংযোগ দেওয়া হয়েছে।
বন্ধুগণ,
‘পহল’প্রকল্পে ৩০ কোটিরও বেশি এলপিজি গ্রাহক যোগ দিয়েছেন।এই প্রকল্পটি ভুতুড়ে অ্যাকাউন্ট এবং যে সব অ্যাকাউন্ট সক্রিয় নয় সেগুলিকে চিহ্নিত করতে সাহায্য করেছে।এই ‘পহল’প্রকল্পটি গিনিজ বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডেও সংযোজিত হয়েছে বৃহত্তম সরাসরি সুবিধা হস্তান্তর প্রকল্প হিসেবে।প্রসঙ্গত, ‘গিভ ইট আপ’ব্যবস্থার আওতায় ১ কোটিরও বেশি গ্রাহক তাঁদের এলপিজি ভর্তুকি ছেড়ে দিয়েছেন।সাম্প্রতিক সম্প্রসারণের ফলে এলপিজি উৎপাদন দ্বিগুণ হওয়ায় কোচি শোধনাগারটি ‘উজ্জ্বলা’যোজনায় যথেষ্ট অবদান রেখেছে।
পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণ করতে কেন্দ্রীয় সরকার পরিবেশ সহায়ক পরিবহণ জ্বালানির ব্যবহার বাড়ানোর ব্যাপারে সক্রিয় হয়েছে।এর ফলে, সারা দেশে সিটি গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন (সিজিডি) নেটওয়ার্কের পরিধিও বাড়ানো সম্ভব হয়েছে।
সিজিডি নিলামের দশম রাউন্ড সম্পূর্ণ হওয়ার পর দেশের ৪০০-টিরও বেশি জেলা পাইপ সংযুক্ত গ্যাস সরবরাহ ব্যবস্থার সঙ্গে সংযুক্ত হতে পারবে।
জাতীয় গ্যাস গ্রিড বা প্রধানমন্ত্রী উর্জা গঙ্গা প্রকল্পটি সৃষ্টি করা হয়েছে যাতে সারা দেশে গ্যাস-ভিত্তিক অর্থনীতি গড়ে তোলা যায়।সরকার এছাড়াও অতিরিক্ত ১৫ হাজার কিলোমিটার গ্যাস পাইপলাইন গড়ে তোলার ব্যাপারে চিন্তাভাবনা করছে।
অশোধিত তেলের আমদানি কমাতে সরকার কিছু ব্যবস্থা নিয়েছে যাতে আমদানি ১০ শতাংশ কমানো যায় এবং এর ফলে দেশে বিদেশি মুদ্রা সঞ্চয় করা সম্ভব হয়।
তেল উৎপাদনকারী রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলি ১১টি রাজ্যে ১২টি দ্বিতীয় প্রজন্মের ইথানল প্ল্যান্ট স্থাপনের জন্য পদক্ষেপ করছে।
এর জন্য ছ’টি সমঝোতাপত্র ইতিমধ্যেই স্বাক্ষরিত হয়েছে।
ভারত এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম তেল শোধনাগার হাব হিসেবে উঠে আসছে।
প্রসঙ্গত, দেশের শোধনাগার ক্ষমতা বর্তমানে ২৪৭ এমএমটিপিএ-রও বেশি।এই প্রসঙ্গে আইআরইপি সময়মতো গড়ে তোলার জন্য আমি প্রত্যেককে অভিনন্দন জানাচ্ছি।
পরিশেষে, আমি যে সব শ্রমিক অক্লান্ত পরিশ্রম করে এই শোধনাগারটির সম্প্রসারণ সম্ভব করতে পেরেছেন, তাঁদের সাধুবাদ জানাই।আমাকে জানানো হয়েছে, প্রকল্পটির চূড়ান্ত পর্যায়ে ২০ হাজারেরও বেশি শ্রমিক সেখানে কাজ করেছেন।
এঁরাই এই প্রকল্পের আসল নায়ক।জ্বালানি বহির্ভূত ক্ষেত্রে বৈচিত্র্যকরণের যে কৌশল ভারত পেট্রোলিয়াম নিয়েছে সেটিও সুসংহত এই শোধনাগারটি সম্প্রসারণ প্রকল্পেরই অঙ্গ।
আমার বন্ধুরা,
পেট্রো-রসায়ন ক্ষেত্র সম্পর্কে খুবই কম বলা হয়।কিন্তু এটি দৈনন্দিন জীবনের বহু ক্ষেত্রকে ছুঁয়ে যায়।এর মধ্যে রয়েছে নির্মাণ সামগ্রী, প্লাস্টিক ও রং, জুতো, জামা-কাপড় এবং অন্যান্য সামগ্রী যেমন প্রশাধনী শিল্প এবং ওষুধপত্র।তবে, বেশিরভাগ পেট্রো-রসায়নই অন্যান্য দেশ থেকে আমদানি করা হয়।এই পেট্রো-রসায়ন যাতে ভারতেই উৎপাদন করা যায় আমাদের তা দেখতে হবে।
কোচি শোধনাগারের ক্ষমতা ব্যবহার করে প্রপিলিন উৎপাদন সম্ভব হবে আইআরইপি সম্পূর্ণভাবে নির্মাণের পরে।‘মেক ইন ইন্ডিয়া’উদ্যোগের আওতায় বিপিসিএল তিনটি অত্যাধুনিক অ্যাক্রিলিক অ্যাসিড অ্যাক্রিলেট কারখানা গড়ে তুলে অনেকটা দূর এগিয়ে গেছে।
এই ধরণের পেট্রো-রসায়ন রং, কালি, গুড়ো সাবান এবং অন্যান্য অনেক পণ্যে ব্যবহার করা যাবে।বর্তমানে বিপিসিএল একটি পেট্রো-রসায়ন কমপ্লেক্স নির্মাণ শুরু করেছে যেখানে পলিয়ল উৎপাদন সম্ভব হবে এবং এটি ফাইবার, জুতো, প্রশাধনী সামগ্রী এবং ওষুধপত্রে ব্যবহার করা যাবে।
আমি আশাবাদী, কোচি শহরে বহু অনুসারী শিল্প গড়ে উঠবে।
আমি এও আশা করি, রাজ্য সরকার যে পেট্রো-রসায়ন পার্ক গড়ে তোলার ব্যাপারে উদ্যোগী হয়েছে, সেটি কার্যকর করা হলে বাণিজ্যিক সুযোগ-সুবিধা যথেষ্ট বাড়বে।
আমি আনন্দিত যে, বিপিসিএল এবং অন্যান্য রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা দক্ষতা উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছে যাতে যুবসম্প্রদায়ের দক্ষতা উন্নয়ন সম্ভব করে কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দেওয়া যায়।
আমি এট্টুমানুরে মহাদেব মন্দিরের কাছাকাছি দ্বিতীয় ক্যাম্পাসটির শিলান্যাস করতে পেরে আনন্দিত।
কোচিতে যে ইন্ডিয়ান অয়েল কর্পোরেশন ৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে বটলিং প্ল্যান্টের ভেতরেই একটি সঞ্চয় ব্যবস্থা গড়ে তুলছে সেটি জেনেও আমি খুশি।এর ফলে, এলপিজি সঞ্চয় ক্ষমতা অনেকাংশে বাড়বে এবং এলপিজি ট্যাঙ্কারগুলির যাতায়াতও কমবে।
গত বছর আগস্ট মাসে বিগত ১০০ বছরের মধ্যে যখন ভয়াবহতম বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল কেরলে, তখন বিপিসিএল-এর কোচি শোধনাগারটি সমস্তরকম প্রতিকূলতা দূর করতে উদ্যোগী হয়েছিল।আমার মনে হয়, বহু কর্মী শোধনাগারে থেকে ক্রমান্বয়ে পেট্রল, ডিজেল এবং এলপিজি উৎপাদন অব্যাহত রাখার চেষ্টা চালিয়েছে।এর ফলে, ত্রাণে ব্যবহৃত যান এবং হেলিকপ্টার স্বচ্ছ্বন্দে ত্রাণকার্য চালাতে পেরেছিল।
আমি বিপিসিএল কোচি শোধনাগারটিকে উৎপাদনের জন্য কঠোর পরিশ্রম চালিয়ে যাওয়ার অনুরোধ জানাচ্ছি যাতে সামাজিক দায়বদ্ধতা এবং উন্নয়নের পরবর্তী ধাপে পৌঁছনোর জন্য উদ্ভাবনা অব্যাহত রাখা যায়।দেশ নির্মাণে কোচি শোধনাগারের অবদানে আমরা গর্বিত।
তবে, আমাদের আরও আশা রয়েছে।কোচি শোধনাগারটি দক্ষিণ ভারতে পেট্রো-রসায়ন আন্দোলনে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা যাতে পালন করতে পারে এবং একইসঙ্গে নতুন ভারতের চাহিদাগুলি মেটাতে পারে সে ব্যাপারেও আমি যথেষ্ট আশাবাদী।
জয় হিন্দ!
***
CG/SC/DM/…
Today, various projects were initiated at the Kochi Refinery.
— Narendra Modi (@narendramodi) January 27, 2019
These will go a long way in strengthening the petroleum and energy sector in India. pic.twitter.com/rQAcYl7usH
Our endeavour is to make India a hub for the petrochemicals sector.
— Narendra Modi (@narendramodi) January 27, 2019
‘Make in India’ offers many opportunities in this regard. pic.twitter.com/da6tsXU2wD