প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদীর পৌরোহিত্যে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠকে আজ ন্যাশনাল প্রোগ্রাম ফর সিভিল সার্ভিসেস ক্যাপাসিটি বিল্ডিং (এনপিসিএসসিবি) চালুর কর্মসূচি অনুমোদন করা হয়েছে। এই কর্মসূচির প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো নিম্নরূপ :
(i) প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে সরকারি মানবসম্পদ পরিষদ,
.(ii) দক্ষতা বৃদ্ধি কমিশন
(ii) ডিজিটাল সম্পদের পরিচালনা এবং অনলাইন প্রশিক্ষণের জন্য প্রযুক্তিগত প্ল্যাটফর্মের জন্য স্পেশাল পারপাস ভেহিকেল বা বিশেষ কার্যকর উদ্যোগ
(iv ক্যাবিনেট সচিবের নেতৃত্বে সমন্বয়সাধনকারী ইউনিট
উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য
সিভিল সার্ভেন্টদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য এই কর্মসূচির নকশা এমনভাবে প্রণয়ন করা হয়েছে যাতে তাঁরা ভারতীয় সংস্কৃতি ও সংবেদনশীলতার প্রতি সর্বদা সচেতন থাকেন। সেইসঙ্গে, প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানগুলিতে প্রশিক্ষণের সময় যাতে তাঁদের মূল উদ্দেশ্য অক্ষুণ্ন থাকে এবং বিশ্বের সেরা পন্থাপদ্ধতিগুলি সম্পর্কে অবহিত হতে পারেন। এক সুসংবদ্ধ সরকারি অনলাইন প্রশিক্ষণ – ‘আইগট–কর্মযোগী‘ প্ল্যাটফর্ম স্থাপনের মধ্য দিয়ে সমগ্র কর্মসূচিটি রূপায়িত হবে। এই কর্মসূচির মূল বিষয়গুলি হল :
১) শাসন–ভিত্তিক ব্যবস্থা থেকে ভূমিকা পালনকারীর ব্যবস্থায় পরিবর্তন। সিভিল সার্ভিসেসের কাজকর্মের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে দক্ষতার ভিত্তিতে উপযুক্ত পদে নিয়োগ।
২) অফ–সাইট শিক্ষণের পরিপূরক হিসেবে অন–সাইট শিক্ষা ব্যবস্থার ওপর অগ্রাধিকার।
৩) অভিন্ন প্রশিক্ষণ পরিকাঠামো গড়ে তোলার জন্য এক অনুকূল বাতাবরণ যেখানে শিক্ষণের সবরকম সুযোগ–সুবিধা, প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা ও দক্ষ কর্মী থাকবেন।
৪) কর্তব্য পালন, কাজকর্ম ও দক্ষতার ভিত্তিতে কাঠামোগত প্রয়াসের ফলে সিভিল সার্ভিসদের অবস্থান নির্ণয় এবং প্রতিটি সরকারি সংস্থায় প্রাসঙ্গিক প্রশিক্ষণের বিষয়বস্তু সরবরাহ করা যা ওই কাঠামোর উপযুক্ত।
৫) সিভিল সার্ভেন্টদের আচার–আচরণগত ও কর্তব্য পালনের ক্ষেত্রে নিরবচ্ছিন্নভাবে এমন সুবিধা প্রদান করা যাতে তাঁরা নিজেদের দক্ষতা প্রমাণের ক্ষেত্রে স্বয়ংসম্পূর্ণ এবং প্রশিক্ষণের সময় শিক্ষণীয় পথ অনুসরণ করতে পারেন।
৬) সমস্ত কেন্দ্রীয় মন্ত্রক ও দপ্তর তথা তাদের অধীনস্থ প্রতিষ্ঠানগুলির জন্য প্রত্যেক কর্মচারীর শিক্ষণের ক্ষেত্রে এমন এক অভিন্ন বাতাবরণ গড়ে তোলা যাতে তাঁরা সরাসরি সেখানে তাঁদের সম্পদ বিনিয়োগ করতে পারেন।
৭) সরকারি প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান, বিশ্ববিদ্যালয় এবং অভিজ্ঞ ব্যক্তিবিশেষ সহ আধুনিক ও সর্বোত্তম শিক্ষণ পদ্ধতি গ্রহণে উৎসাহ দেওয়া।
৮) দক্ষতা বৃদ্ধি, প্রশিক্ষণের বিষয়বস্তু নিরূপণ, ব্যবহারকারীদের মতামত সংগ্রহ এবং নীতি সংস্কারের ক্ষেত্রগুলিকে চিহ্নিতকরণের জন্য ‘আইগট–কর্মযোগী‘ কর্মসূচির আওতায় তথ্যের সংরক্ষণ ও সংগ্রহের জন্য ডেটা অ্যানালিটিক্স বা তথ্য বিশ্লেষণের কাজ গ্রহণ করা।
উদ্দেশ্য
সমন্বয়মূলক ও পারস্পরিক আদান–প্রদানের ভিত্তিতে দক্ষতা বৃদ্ধির উদ্যোগে নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখা ও সমগ্র প্রক্রিয়া সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য এক অভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণের বিষয়টিকে বিবেচনায় রেখেই দক্ষতা বৃদ্ধি কমিশন গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে।
কমিশনের ভূমিকা নিম্নরূপ :
. বার্ষিক দক্ষতা বৃদ্ধি পরিকল্পনা অনুমোদনের ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি মানবসম্পদ কাউন্সিলকে সাহায্য করা।
. সিভিল সার্ভেন্টদের দক্ষতা বৃদ্ধির সঙ্গে যুক্ত সমস্ত কেন্দ্রীয় সরকারি প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানগুলির কাজকর্মের ওপর তত্ত্বাবধায়ক ভূমিকা পালন করা।
. অভিন্ন শিক্ষামূলক সম্পদ তৈরি করা।
. সংশ্লিষ্ট সব দপ্তরগুলির সঙ্গে দক্ষতা বৃদ্ধি, পরিকল্পনা রূপায়ণের কাজে সমন্বয়সাধন ও তত্ত্বাবধান।
. প্রশিক্ষণের আদর্শ মান, দক্ষতা বৃদ্ধি, শিক্ষাদান ও শিক্ষণ পদ্ধতির ব্যাপারে প্রয়োজনীয় সুপারিশ প্রদান করা।
. সব শ্রেণীর সিভিল সার্ভেন্টদের মধ্যে কর্মজীবনের মধ্যবর্তী সময়ে অভিন্ন প্রশিক্ষণ কর্মসূচির বিধি চালু করা।
. সরকারি পর্যায়ে মানবসম্পদ পরিচালনা ও দক্ষতা বৃদ্ধির মতো ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় নীতি–পরামর্শ প্রদান।
‘আইগট–কর্মযোগী‘
অনলাইন–ভিত্তিক এই প্ল্যাটফর্ম এমন অত্যাধুনিক ব্যবস্থায় সুসজ্জিত যেটি দেশে ২ কোটির বেশি আধিকারিকের দক্ষতা বৃদ্ধির উপযোগী। এই প্ল্যাটফর্ম এমন এক বিশ্বমানের দক্ষতা বৃদ্ধির পন্থা উদ্ভাবন করতে সক্ষম হবে যেখানে ই–লার্নিং বা ই–শিক্ষণ ব্যবস্থার প্রয়োজনীয় সমস্ত উপাদানের সুবিধা মিলবে। দক্ষতা বৃদ্ধির পাশাপাশি, কোন একজন সিভিল সার্ভেন্টের চাকুরি সংক্রান্ত বিষয় যেমন প্রবেশন পিরিয়ড বা শিক্ষানবিশ পর্যায়ের পর কনফারমেশন বা স্থায়ীভাবে নিযুক্তি, কর্মস্থলে যোগদান, কর্মস্থলে কাজের ধরন এবং শূণ্যপদ সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তির মতো বিষয়গুলিও এই প্ল্যাটফর্মের সঙ্গে যুক্ত করার প্রস্তাব রয়েছে।
‘মিশন কর্মযোগী‘ ভারতীয় সিভিল সার্ভেন্টদের ভবিষ্যতের জন্য এমন উপযোগী সরকারি কৃত্যক হিসেবে গড়ে তুলবে যাঁদের মধ্যে সৃজনশীলতা, বিচক্ষণতা, উদ্ভাবনশীলতা, সক্রিয়তা, পেশাদারিত্ব, উদারতা, কর্মোদ্যোমী, স্বচ্ছতা ও প্রযুক্তি সম্পর্কে সম্যক অবগত করে তুলবে।
আর্থিক ব্যয়বরাদ্দ
‘মিশন কর্মযোগী‘ কর্মসূচি রূপায়েণের জন্য ২০২০–২১ থেকে ২০২৪–২৫ পর্যন্ত পাঁচ বছরে প্রায় ৪৬ লক্ষ কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীর জন্য ৫১০ কোটি ৮৬ লক্ষ টাকা খরচ করা হবে। এই অর্থের মধ্যে ৫ কোটি টাকা বহুপাক্ষিক সহায়তা হিসেবে পাওয়া যাবে। ২০১৩–র কোম্পানি আইনের ৮ নং ধারার আওতায় এনপিসিএসসিবি–র জন্য একটি স্পেশাল পারপাস ভেহিকেল বা বিশেষ কার্যকরী উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। এই স্পেশাল পারপাস ভেহিকেল একটি অলাভজনক সংস্থা হিসেবে গড়ে উঠবে যেটি ‘আইগট–কর্মযোগী‘ প্ল্যাটফর্ম পরিচালনার দায়িত্বে থাকবে। এছাড়াও, ‘আইগট–কর্মযোগী‘ প্ল্যাটফর্ম ব্যবহারকারীদের কাজকর্মের মূল্যায়নের জন্য একটি উপযুক্ত নজরদারি ও নিরূপণ কাঠামো গড়ে তোলা হবে যাতে গুরুত্বপূর্ণ কাজকর্মের অগ্রগতির ক্ষেত্রে ড্যাশবোর্ড প্রণয়ন করা যায়।
প্রেক্ষাপট
সিভিল সার্ভেন্টরা কল্যাণমূলক কর্মসূচি রূপায়ণ থেকে গুরুত্বপূর্ণ সরকারি কাজকর্ম পরিচালনার ক্ষেত্রে সর্বদাই উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে আসছেন। কিন্তু বর্তমান সময়ের চাহিদার বিষয়টি বিবেচনায় রেখে সমগ্র কর্মসংস্কৃতিতে বিবর্তন নিয়ে আসতে এবং সিভিল সার্ভেন্টদের আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারে উপযোগী করে তুলতে সংস্কারের প্রস্তাব দেওয়া হয়। উদ্দেশ্য, নাগরিকদের কাছে আরও দ্রুততার সঙ্গে বিভিন্ন সরকারি কর্মসূচি ও প্রকল্পের সুযোগ দ্রুত পৌঁছে দেওয়া।
সিভিল সার্ভিস ক্ষেত্রে সংস্কার এবং সিভিল সার্ভেন্টদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় কৌশলগত দিশা নির্দেশ করতে প্রধানমন্ত্রীর পৌরোহিত্যে যে সরকারি মানবসম্পদ পরিষদ গঠন করার প্রস্তাব রয়েছে, সেখানে নির্দিষ্ট কয়েকজন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রী, বিশিষ্ট মানবসম্পদ বিষয়ক বিশেষজ্ঞ, চিন্তনবিদ প্রভৃতি ক্ষেত্রের প্রতিনিধিরা থাকবেন।
CG/BD/DM