Search

পিএমইন্ডিয়াপিএমইন্ডিয়া

সাম্প্রতিক সংবাদ

বিষয়টিকে সরাসরি পিআইবি থেকে নেওয়া হয়েছে

কেনিয়া সফরকালে সংবাদমাধ্যমের কাছে প্রধানমন্ত্রীর বিবৃতি (১১ জুলাই, ২০১৬)

কেনিয়া সফরকালে সংবাদমাধ্যমের কাছে প্রধানমন্ত্রীর বিবৃতি (১১ জুলাই, ২০১৬)


মাননীয় প্রেসিডেন্ট উহুরু কেনিয়াট্টা,

ডেপুটি প্রেসিডেন্ট উইলিয়াম রুটো,

ভদ্রমহিলা ও ভদ্রমহোদয়গণ,

মাননীয় প্রেসিডেন্ট, আপনার সুন্দর বক্তব্যের জন্য ধন্যবাদ জানাই।

নাইরোবিতে উপস্থিত হতে পেরে আমি খুবই আনন্দিত। প্রেসিডেন্ট কেনিয়াট্টা আমাকে এবং আমার প্রতিনিধিদলকে যেভাবে সাদর অভ্যর্থনা ও আতিথেয়তা জানিয়েছেন, সেজন্য আমি তাঁকে বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানাই। আমি শুনেছি যে মাননীয় প্রেসিডেন্টের ‘উহুরু’ নামের অর্থ হল ‘স্বাধীনতা’। জীবনে আপনার চলার পথ ছিল বরাবরই কেনিয়াকে স্বাধীন করে তোলার লক্ষ্যে এক বিশেষ যাত্রাপথ। আপনার সঙ্গে এখানে আজ এইভাবে উপস্থিত থাকতে পেরে আমি নিজেকে সম্মানিত বোধ করছি।

বন্ধুগণ,

কেনিয়া হল ভারতের এক বিশেষ বন্ধু ও বিশ্বস্ত সহযোগী। আমাদের দু’দেশের মধ্যে রয়েছে এক স্থায়ী ও সমৃদ্ধ মৈত্রী বন্ধন। ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে সংগ্রামের ক্ষেত্রে আমাদের দুটি দেশেরই রয়েছে এক সাধারণ ঐতিহ্য ও উত্তরাধিকার।

আমাদের দু’দেশের জনসাধারণের মধ্যে যে ঐতিহাসিক সম্পর্ক রয়েছে তা বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমাদের অংশীদারিত্বের সম্পর্ককে প্রসারিত করে তুলেছে। আমাদের দু’দেশের সম্পর্কের মধ্যে রয়েছে :

· কৃষি ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থা থেকে উন্নয়ন সংক্রান্ত সহযোগিতা;

· শিল্প ও বাণিজ্য থেকে বিনিয়োগ;

· দু’দেশের জনসাধারণের মধ্যে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ থেকে ক্ষমতায়ন ও দক্ষতা বৃদ্ধি; এবং

· নিয়মিতভাবে রাজনৈতিক আলাপ-আলোচনা থেকে প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা ক্ষেত্রে সহযোগিতা।

আমাদের দু’দেশের সম্পর্কের পুরো বিষয়টি নিয়ে আজ আমি পর্যালোচনায় মিলিত হয়েছিলাম মাননীয় প্রেসিডেন্টের সঙ্গে।

বন্ধুগণ,

বিশ্ব অর্থনীতিতে যেক’টি উজ্জ্বল আলোকবিন্দু রয়েছে ভারত হল তার অন্যতম। অন্যদিকে, কেনিয়ায় রয়েছে অফুরন্ত সুযোগ ও সম্ভাবনা। ভারত শুধুমাত্র কেনিয়ার বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদারই নয়, এদেশে দ্বিতীয় বৃহত্তম বিনিয়োগকারী দেশও বটে। কিন্তু এখনও আরও অনেক কিছুই করার জন্য আমাদের দু’দেশের সামনে রয়েছে এক অনন্ত সম্ভাবনা।

আমাদের দু’দেশের অর্থনীতি যে আরও নানা দিক থেকে লাভবান হতে পারে সে ব্যাপারে আমি সহমত মাননীয় প্রেসিডেন্টের সঙ্গে। এই কাজে আমরা সফল হতে পারি যদি :

· আমাদের বাণিজ্যিক সম্পর্ককে আমরা আরও গভীর করে তুলি;

· বাণিজ্যিক বৈচিত্র্যকরণের লক্ষ্যে আমাদের প্রচেষ্টা নিয়োজিত করি; এবং

· আমাদের বিনিয়োগ সম্পর্ককে আরও প্রসারিত করে তুলি।

আমাদের এই প্রচেষ্টা আঞ্চলিক পর্যায়েও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির এক বলিষ্ঠ বাতাবরণ গড়ে তুলতে পারে। এই কাজে সরকারি ভূমিকা ও প্রচেষ্টার পাশাপাশি দু’দেশেরই উচিত বাণিজ্যিক অংশীদারিত্বের সম্পর্ককে আরও গভীরে নিয়ে যাওয়া। আজ কিছুক্ষণ বাদেই ভারত-কেনিয়া বাণিজ্য ফোরাম অনুষ্ঠিত হতে চলেছে। এই উদ্যোগকে আমি স্বাগত জানাই। ভারত ও কেনিয়া হল দুটি বিকাশশীল দেশ। শুধু তাই নয়, উদ্ভাবনের কাজকেও উৎসাহদান করি আমরা উভয়েই। প্রক্রিয়া, উৎপাদন অথবা প্রযুক্তি – যাই হোক না কেন, আমাদের উদ্ভাবনী প্রচেষ্টা কিন্তু খুবই প্রাসঙ্গিক। শুধুমাত্র দু’দেশের সমাজ ব্যবস্থার ক্ষেত্রেই নয়, অন্যান্য বিকাশশীল দেশের জনসাধারণের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নেও আমাদের এই প্রচেষ্টা সফল বলে প্রমাণিত হবে। এম-পেসা-র সাফল্য হল এই উদ্ভাবন প্রচেষ্টারই এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত যা সমগ্র বিশ্বের কোটি কোটি মানুষকে ক্ষমতায়নের স্বাদ এনে দিয়েছে। আমাদের দুই দেশই উদ্ভাবনী প্রযুক্তির বাণিজ্যিকীকরণের লক্ষ্যে কাজ করে চলেছে। এর কিছু কিছু ঘটনা আমরা প্রত্যক্ষ করব আজ বাণিজ্য ফোরামের বৈঠকে।

বন্ধুগণ,

বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নয়নের কাজে আমাদের অংশীদারিত্ব দু’দেশের সম্পর্কের উন্নয়নের একটি মূল স্তম্ভ। দু’দেশের উন্নয়নের ক্ষেত্রে যে অগ্রাধিকারের বিষয়গুলি আমরা চিহ্নিত করেছি, তা পরস্পরের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ। ভারত তার অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞান বিনিময়ে প্রস্তুত।কেনিয়ার উন্নয়নসংক্রান্ত লক্ষ্য পূরণে সুবিধাজনক শর্তে ঋণ সহায়তার প্রসারে এবং দক্ষতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে সহযোগিতা করতেও সম্মতি জানিয়েছে ভারত। কৃষি সরঞ্জাম ও যন্ত্রপাতি, বস্ত্র এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের উন্নয়ন প্রকল্পগুলিতে ভারতের ঋণ সহায়তা কর্মসূচির দ্রুত রূপায়ণে আমরা আগ্রহী। ৬০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ সহায়তায়কেনিয়ায় যে বিদ্যুৎ সংবহন প্রকল্পটি রূপায়িত হচ্ছে, তার অগ্রগতিতে আমরা উৎসাহিত বোধ করছি। কেনিয়ার অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত ক্ষেত্রগুলির মধ্যে রয়েছে বিশেষভাবে সফল ভূ-তাপ সম্পর্কিত কর্মসূচি এবং জ্বালানি সাশ্রয়কারী প্রকল্পগুলি। এলইডি-র মাধ্যমে রাস্তাঘাটকে আলোকিত করে তোলা এরই এক বিশেষ দৃষ্টান্ত। এ সমস্ত ক্ষেত্রেই আমরা সহযোগিতা করতে পারি কেনিয়াকে। স্বাস্থ্য ব্যবস্থার দিকে প্রেসিডেন্ট উহুরু বিশেষভাবে দৃষ্টি দিচ্ছেন, একথাও আমার অজানা নয়। কেনিয়ায় সুলভ অথচ দক্ষ স্বাস্থ্য ব্যবস্থা গড়ে তুলতে ভারত অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে কাজ করতে পারে এ দেশে। বিশেষত, ওষুধ উৎপাদনের ক্ষেত্রে ভারত যথেষ্ট অভিজ্ঞ ও শক্তিশালী। এই সহযোগিতার ফলে শুধুমাত্র আপনাদের সমাজের চাহিদা পূরণই সম্ভব হবে না, এর সুবাদে কেনিয়া হয়ে উঠবে আঞ্চলিক স্তরের এক বিশেষ চিকিৎসাকেন্দ্র। এই প্রসঙ্গে একথা জানতে পেরে আমি খুশি যে কেনিয়াট্টা ন্যাশনাল হসপিটালে অচিরেই বসতে চলেছে ভারতে নির্মিত ক্যান্সার চিকিৎসার যন্ত্র ‘ভাবাট্রন’। কেনিয়ার জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থায় অত্যবশ্যকীয় ওষুধপত্র এবং চিকিৎসার সাজসরঞ্জামও আমরা দান করছি কেনিয়াকে। এড্‌স চিকিৎসার ওষুধ ও সহায়ক সাজসরঞ্জামও এর অন্তর্ভুক্ত।

বন্ধুগণ,

একথা আমাদের স্বীকার করতে হবে যে যুবসমাজকে সফল হওয়ার সুযোগ না দিলে আমাদের সমাজ কখনই এগিয়ে যেতে পারে না। তাই শিক্ষা, বৃত্তিগত শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ এবং দক্ষতা বিকাশের ক্ষেত্রে কেনিয়ার সঙ্গে একযোগে কাজ করতে আমরা আগ্রহী।

বন্ধুগণ,

উন্নয়ন সংক্রান্ত চ্যালেঞ্জগুলি সম্পর্কে আমরা যেমন সজাগ ও সতর্ক, প্রেসিডেন্ট ও আমি সমানভাবেই উদ্বিগ্ন নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা প্রসঙ্গেও। ভারত মহাসাগর যুক্ত করেছে ভারত ও কেনিয়াকে। আমাদের দুটি জাতিরই রয়েছে এক শক্তিশালী নৌ-ঐতিহ্য। এই কারণে নৌ-নিরাপত্তা ক্ষেত্রে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা আমাদের সার্বিক প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা সহযোগিতার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান অধিকার করে রয়েছে। মাত্র কিছুক্ষণ আগেই প্রতিরক্ষা সহযোগিতা সম্পর্কিত যে চুক্তিটি দু’দেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত হল তা আমাদের প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে প্রাতিষ্ঠানিক সহযোগিতাকে আরও জোরদার করে তুলবে। সহযোগিতার ক্ষেত্রগুলির মধ্যে রয়েছে আরও বেশি সংখ্যক কর্মী বিনিময়, জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা বিনিময়, প্রশিক্ষণ ও প্রতিষ্ঠান স্থাপন, জল-বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতার প্রসার এবং বিভিন্ন সরঞ্জাম ও যন্ত্রপাতির যোগান। সন্ত্রাসবাদ এবং চরমপন্থী মতাদর্শের প্রচার ও প্রসার যে আমাদের দেশ, জনসাধারণ, সংশ্লিষ্ট অঞ্চল তথা সমগ্র বিশ্বের কাছেই একটি সাধারণ চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে একথা স্বীকার করে নিয়েছি প্রেসিডেন্ট ও আমি উভয়েই। তাই, সাইবার নিরাপত্তা, মাদক ও নেশাদ্রব্যের চোরাচালান এবং মানুষ পাচারের বিরুদ্ধে আমাদের নিরাপত্তা সংক্রান্ত সহযোগিতাকে আরও জোরদার করে তোলার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি আমরা।

বন্ধুগণ,

গতকাল প্রেসিডেন্ট এবং আমি এক অবিস্মরণীয় মুহূর্তের সাক্ষী ছিলাম কেনিয়ায় বসবাসকারী ভারতীয় বংশোদ্ভূতদের এক অনুষ্ঠানে। প্রেসিডেন্ট উহুরু যথার্থই বলেছেন যে এই ভারতীয় সম্প্রদায়ের মানুষরা হলেন কেনিয়ার গর্বিত অধিবাসী, যদিও তাঁদের মূল শিকড় প্রোথিত ছিল ভারতে। সমাজ ও অর্থনীতির ক্ষেত্রে আমাদের দু’দেশের সংযোগ ও যোগাযোগ যত গভীরতর হয়ে উঠছে, এই সম্প্রদায়ের মানুষ ক্রমশ হয়ে উঠছেন দু’দেশের মধ্যে মৈত্রী বন্ধনের এক মজবুত সংযোগ সেতু। একথা ঘোষণা করতে পেরে আমি আনন্দিত, যে উজ্জ্বল ভারতীয় সংস্কৃতি হয়ে উঠেছে কেনিয়ার সমৃদ্ধ সমাজ ব্যবস্থার একটি বিশেষ অঙ্গ, তা বিশেষভাবে প্রত্যক্ষ করা যাবে এ বছরের শেষের দিকে কেনিয়ায় আয়োজিত ভারতোৎসবে।

মাননীয় প্রেসিডেন্ট উহুরু,

পরিশেষে আপনাকে এবং কেনিয়ার সরকার ও জনগণকে আমি আরও একবার ধন্যবাদ জানাই আমাকে সাদর ও অন্তরিক অভ্যর্থনা জানানোর জন্য।

ভারতে আপনাকে স্বাগত জানানোর অপেক্ষায় রয়েছি আমি এবং ভারতের জনসাধারণ।

ধন্যবাদ।

আপনাদের সকলকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।

PG/SKD/DM/S….12thJuly, 2016