মাননীয় প্রেসিডেন্ট উহুরু কেনিয়াট্টা,
ডেপুটি প্রেসিডেন্ট মাননীয় উইলিয়াম রুটো,
মন্ত্রিসভার সদস্যবৃন্দ,
বিশিষ্ট অতিথিবৃন্দ,
জাম্বো, নমস্কার,
আমাকে সাদর অভ্যর্থনা জানানোর জন্য আপনাদের সকলকে ধন্যবাদ।
১২৫ কোটি ভারতবাসীর শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন বার্তা আমি বহন করে এনেছি আপনাদের জন্য। দুই সহস্রাব্দেরও আগে বিশাল ভারত মহাসাগরের জলরাশি সংযুক্ত করেছেআমাদের দু’দেশের জনসাধারণকে। নৌ-সম্পর্কের দিক থেকে আমরা পরস্পরের প্রতিবেশী।
ভারতের পশ্চিম উপকূলের বিভিন্ন জনগোষ্ঠী যাঁদের মধ্যে বিশেষ করে রয়েছেন আমার রাজ্য গুজরাটের বহু মানুষ, এসে বসবাস করতে শুরু করেন এই দেশে। অন্যদিকে, আফ্রিকার পূর্ব উপকূল থেকে বহু মানুষ পাড়ি দেয় ভারতে বসতি স্থাপনের উদ্দেশ্যে। উনবিংশ শতাব্দীর শেষ দিকে বিখ্যাত মোম্বাসা উগান্ডা রেলপথ নির্মাণের কাজে ভারতীয়রা আসতে শুরু করে কেনিয়ায়। এখানে তখন ঔপনিবেশিক শাসনের রাজত্বকাল। আগত ভারতীয়দের অনেকেই এদেশে স্থায়ীভাবে বসবাস করতে শুরু করেন। কেনিয়ার অর্থনৈতিক বিকাশে তাঁদের অবদানও ছিল যথেষ্ট। তাঁদের মধ্যে আবার অনেকেই যোগ দেন এদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে। এই আন্দোলনে কেনিয়ার প্রতিষ্ঠাতা প্রেসিডেন্ট এমজি জোমো কেনিয়াট্টার পাশে এসে দাঁড়িয়েছিলেন তাঁরা। তাঁদের মধ্যে অনেকেরই নাম আমি এখনও স্মরণ করতে পারি। বিশেষত, মাখন সিং, পিও গামা পিন্টো, চমন লাল, এম এ দেশাই এবং আরও অনেকে। দুটি দেশের সমাজ ব্যবস্থার সুপ্রাচীন সম্পর্ক আমাদের সংস্কৃতিকে আরও সমৃদ্ধ করে তুলেছে। স্বাহিলির মতো একটি সমৃদ্ধ ভাষাতেও স্থান পেয়েছে বহু হিন্দি শব্দ।
ভারতীয় রন্ধন শিল্পের বিভিন্ন পদ এখন কেনিয়ার রান্নাঘরের এক গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছে। মাননীয় প্রেসিডেন্ট, এদেশে বসবাসকারী ভারতীয়রা কেনিয়া’কে কতটা আপন করে নিয়েছেন তা আপনি ও আমি উপস্থিত থেকে প্রত্যক্ষ করেছি গত সন্ধ্যায়। অফুরন্ত ভালোবাসা ও টান রয়েছে তাঁদের এদেশের প্রতি। দু’দেশের মধ্যে এক অটুট সেতুবন্ধন গড়ে তুলেছেন তাঁরা। এই মিলিত ঐতিহ্যকে আমরা মূল্যবান বলেই মনে করি। আপনাদের দেশ আমি প্রথম সফরে আমি প্রথম এসেছিলাম ২০০৮ সালে। সুন্দর এই দেশে আবার আসার সুযোগ পেয়ে আমি খুবই আনন্দিত। এখানে আমার সফরসূচি হয়তো সংক্ষিপ্ত, কিন্তু এর ফলাফল কিন্তু যথেষ্ট উৎসাহব্যঞ্জক। ২০১৫’র অক্টোবরে ব্যক্তিগত স্তরে মৈত্রী সম্পর্ক স্থাপনের যে শুভসূচনা হয়েছিল, আমার এই সফর তাকে আরও একবার উদ্দীপ্ত করে তুলল। গত কয়েক ঘন্টার মধ্যে আমাদের দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্কে নতুন উৎসাহ, উদ্দীপনা ও উদ্যম আমরা যোগ করতে পেরেছি। আমাদের রাজনৈতিক বোঝাপড়া ও অঙ্গীকার হয়েছে গভীরতর।
উন্নয়নের ক্ষেত্রে আপনাদের অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে কেনিয়ার সঙ্গে সর্বতোভাবে সহযোগিতা করতে আমরা প্রস্তুত :
· আপনাদের পছন্দ ও চাহিদা মতো বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমাদের সহযোগিতা প্রসারিত হবে;
· যে গতিতে কাজ করলে আপনাদের লক্ষ্য পূরণ সম্ভবহবে, সেই গতিতেই কাজ করে যাব আমরা;
· তা সে কৃষি বা স্বাস্থ্য পরিচর্যা;
· শিক্ষা, পেশাগত শিক্ষা বা প্রশিক্ষণ;
· ক্ষুদ্র শিল্প ও বাণিজ্য ক্ষেত্রের বিকাশ;
· পুনর্নবীকরণযোগ্য জ্বালানি শক্তি কিংবা বিদ্যুৎ সংবহন; এবং
· প্রাতিষ্ঠানিক শক্তি বৃদ্ধি, যাই হোক না কেন
অতীতের মতোই আমাদের অভিজ্ঞতা ও দক্ষতাকে আমরা কাজে লাগাব কেনিয়ার প্রয়োজন ও কল্যাণে।
মাননীয় প্রেসিডেন্ট, আমাদের দু’দেশের মধ্যে রয়েছে ক্রমপ্রসারমান এক অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক। আমাদের এই বন্ধন অস্থায়ী নয়, কিংবা শুধুমাত্র লেনদেনের মধ্যেই তা সীমাবদ্ধ নয়, আমাদের এই সম্পর্ক আজকালের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ। মিলিত মূল্যবোধ এবং অভিজ্ঞতা বিনিময়ের মধ্য দিয়েই গড়ে উঠেছে আমাদের পারস্পরিক সম্পর্কের গভীরতা।
বন্ধুগণ,
ভারত ও কেনিয়া দুটি দেশেরই রয়েছে তরুণ জনগোষ্ঠী। দুটি দেশই শিক্ষাকে সম্মান জানায়। তাই, এখন আমাদের সামনে সময় উপস্থিত দক্ষতা বিকাশের। স্বাহিলি ভাষায় একটি প্রবাদ রয়েছে, যার অর্থ করলে দাঁড়ায় – “জ্ঞান যদি প্রযুক্ত না হয়, তা হলে তা মধু ছাড়া মৌচাকেরই সামিল”। বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বরাবর কাজ করে এসেছে ভারত ও কেনিয়া। অন্যান্য বিকাশশীল দেশগুলিকে সঙ্গে নিয়েও আমরা এই কাজে আরও ঐক্যবদ্ধ হয়ে উঠতে পারি। শুধুমাত্র দুর্বল ও দরিদ্র মানুষের কল্যাণেই নয়, মা বসুন্ধরাকে রক্ষা করার স্বার্থেও আমাদের উচিৎ ঐক্যবদ্ধ হওয়া।
প্রাকৃতিক সম্পদগুলির সুরক্ষা ও সংরক্ষণে আমরা একে অপরের কাছ থেকে শিক্ষালাভ করতে পারি। এমজি জোমো কেনিয়াট্টা বলেছিলেন, “অতীতের বীর নায়কদের সম্পর্কে অনেক কিছুই শেখে আমাদের ছেলেমেয়েরা। তাই, আমাদের দায়িত্ব হল, ভবিষ্যৎ’কে ভালোভাবে তৈরি করে যাওয়া”।
প্রেসিডেন্ট উহুরু কেনিয়াট্টা এবং বিশিষ্ট অতিথিবৃন্দ,
আপনাদের সকলের সঙ্গে মিলিতভাবে আমি সুখ ও সুস্বাস্থ্য কামনা করি কেনিয়ার মাননীয় প্রেসিডেন্ট কেনিয়াট্টার।
আমাদের প্রতিবেশী কেনিয়ার অগ্রগতি ও সমৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রার্থনা জানাই
প্রার্থনা জানাই, ভারত ও কেনিয়ার জনসাধারণের মৈত্রী সম্পর্ক দীর্ঘস্থায়ী হোক।
PG/SKD/SB/S……12_July_2016