Search

পিএমইন্ডিয়াপিএমইন্ডিয়া

সাম্প্রতিক সংবাদ

বিষয়টিকে সরাসরি পিআইবি থেকে নেওয়া হয়েছে

কলকাতার চারটি ঐতিহ্যশালী ভবনের সংস্কারের পর জাতির উদ্দেশে উৎসর্গ করলেন প্রধানমন্ত্রী


প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী আজ কলকাতায় চারটি ঐতিহ্যশালী ভবন সংস্কারের পর সেগুলি জাতির উদ্দেশে উৎসর্গ করেন। এই ভবনগুলি হ’ল – ওল্ড কারেন্সি বিল্ডিং, বেলভেডিয়ার হাউস, মেটকাফে হাউস এবং ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল হল।

 

এই উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকের এই দিনটি বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। দেশের শিল্প, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে রক্ষা করার জন্য দেশ জুড়ে যে প্রচারাভিযান শুরু হ’ল, তার মাধ্যমে সেগুলিকে নতুনভাবে সংস্কার করতে হবে।

 

বিশ্বের জন্য ঐতিহ্যশালী পর্যটন কেন্দ্র

 

শ্রী মোদী বলেন, ভারত তার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও স্থাপত্যগুলিকে রক্ষা করতে সদা তৎপর। এই লক্ষ্যে কেন্দ্র সারা বিশ্বের কাছে ভারতকে ঐতিহ্যশালী পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত করার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।

 

তিনি বলেন, দেশের পাঁচটি ঐতিহ্যশালী সংগ্রহশালাকে আন্তর্জাতিক মানের করে তোলা হবে। বিশ্বের সবথেকে পুরনো মিউজিয়াম কলকাতার ভারতীয় সংগ্রহশালা দিয়ে এই উদ্যোগ শুরু হয়েছে।

 

শ্রী মোদী বলেন, এগুলির ব্যবস্থাপনার জন্য আরও সম্পদের প্রয়োজন। সেই লক্ষ্যে ‘ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ এইডেড কনজারভেশন’ গঠন করা হয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানটিকে একটি ডিম্‌ড ইউনিভার্সিটিতে পরিণত করার ব্যাপারে চিন্তাভাবনা চলছে।

 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, কলকাতার চার ঐতিহ্যশালী গ্যালারি, ওল্ড কারেন্সি বিল্ডিং, বেলভেডিয়ার হাউজ, ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল, মেটকাফে হাউজ-এর সংস্কারের কাজ সম্পূর্ণ হয়েছে। বেলভেডিয়ারকে ‘মিউজিয়াম অফ দ্য ওয়ার্ল্ড’ বানানো নিয়ে চিন্তাভাবনা চলছে। আমরা এখন সেই লক্ষ্যে ব্রতী হয়েছি।

 

এখানে ভারত সরকারের টাঁকশাল ছিল। সেটিকে ‘মিউজিয়াম অফ কয়েনেজ অ্যান্ড কমার্স’ হিসেবে গড়ে তোলার চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে।

বিপ্লবী ভারত

 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের পাঁচটি গ্যালারির মধ্যে দুটি গ্যালারি দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ ছিল যা মোটেই ঠিক নয়। এগুলিকে দ্রুত সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আমি চাই তৃতীয় গ্যালারিটিতে স্বাধীনতা আন্দোলনে বাংলার অংশগ্রহণের বিষয়টি স্থান পাক। ‘বিপ্লবী ভারত’ নামে একটি সংগ্রহশালা তৈরি হোক যেখানে নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু, অরবিন্দ ঘোষ, রাসবিহারী বসু, ক্ষুদিরাম বসু, দেশবন্ধু, বাঘাযতীন, বিনয়-বাদল-দীনেশের মতো মহান স্বাধীনতা সংগ্রামীদের জায়গা হবে”।

 

তিনি বলেন, স্বাধীনতা-পরবর্তী দশকগুলিতে নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুকে নিয়ে যে সমস্ত ঘটনা ঘটেছে, সে বিষয়ে আমরা সকলেই অবগত। দেশের সকলের চিন্তাভাবনাকে সম্মান করে নেতাজির নামে লালকেল্লায় সংগ্রহশালা গড়ে তোলা হয়েছে। আন্দামান-নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে একটি দ্বীপের নাম তাঁর নামে করা হয়েছে।

 

বাংলার শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দের প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য

 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, নতুন যুগে এইসব শীর্ষ নেতৃবৃন্দ এবং পশ্চিমবঙ্গের ভূমিপুত্র, যাঁরা স্বাধীনতা আন্দোলনে তাঁদের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন, এদের প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শনের প্রয়োজন।

 

“আমরা এখন সবাই ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ২০০তম জন্মজয়ন্তী উদযাপন করছি। ২০২২ সালে দেশের স্বাধীনতার ৭৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে আরেকটি সুবর্ণ সুযোগ আমাদের সামনে আসবে। ২০২২ সালে মহান সমাজ সংস্কারক এবং শিক্ষাবিদ রাজা রামমোহন রায়ের ২৫০তম জন্মজয়ন্তী এগিয়ে আসছে। দেশের আত্মবিশ্বাস পুনর্জাগরণে সমাজে কন্যা, ভগিনী ও যুবসম্প্রদায়ের মর্যাদা প্রদানের জন্য তাঁর যে প্রচেষ্টা সেই ঐতিহ্যকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া অত্যন্ত প্রয়োজন। তাঁর ২৫০তম জন্ম জয়ন্তী বর্ষকে আমরা একটি উৎসব রূপে পালন করি, এটা আমাদের সকলের কর্তব্য”।

 

ভারতের ইতিহাস সংরক্ষণ

 

প্রধানমন্ত্রী বলেন যে, দেশের ঐতিহ্যের সংরক্ষণ, আমাদের মহাপুরুষদের, আমাদের ইতিহাসকে স্মরণ করা রাষ্ট্র নির্মাণের প্রধান অঙ্গ।

 

“এটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক যে ব্রিটিশ শাসনকালে এবং স্বাধীনতার পরও দেশের যে ইতিহাস লেখা হয়েছে সেই ইতিহাসে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে তেমনভাবে দেখানো হয়নি। গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৯০৩ সালে তাঁর একটি নিবন্ধে যা লিখেছেন আমি সেটি এখানে উল্লেখ করতে চাই। তিনি লিখেছেন, ভারতের ইতিহাস এটা নয় যা আমরা পরীক্ষার জন্য পড়ি এবং মুখস্থ করি। কিছু মানুষ বাইরে থেকে এসে এদেশ জয়ের চেষ্টা করেছে, কিভাবে ছেলেমেয়েরা তাদের বাবাদের হত্যা করার চেষ্টা করেছে এবং ভাইরা সিংহাসনের জন্য নিজেদের মধ্যে লড়াই করেছে। ইতিহাসের এই বর্ণনায় এর উল্লেখ নেই যে তখন ভারতের মানুষ কিভাবেবসবাস করছিলেন। তাঁদের কি কোন অস্তিত্বই ছিল নাএই বর্ণনায় তাদের কোনও গুরুত্বই দেওয়া হয়নি”।

“গুরুদেব আরও বলেছেন, ‘যত তুফানই আসুক না কেন, তার থেকেও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হল সেই সঙ্কটকালে সেখানকার মানুষ কিভাবে সেই তুফানের মোকাবিলা করেছেন’।

 

“বন্ধুগণ, গুরুদেব একথাও বলেছেন যে, ঐতিহাসিকরা সেই তুফানকে ঘরের বাইরে থেকেই দেখেছেন। যাঁরা সেই ঝড়-তুফানের মোকাবিলা করছিলেন, ঐ ইতিহাসকারেরা তাঁদের বাড়িতে যাননি। এখন যিনি বাইরে থেকে দেখবেন তিনি তো শুধুই ঝড়-তুফান দেখতে পাবেন”।

 

“তখন সেখানকার সমাজ, সেখানকার সাধারণ মানুষ কিভাবে সেই তুফানের মোকাবিলা করেছেন সেদিকে ইতিহাসবিদদের চোখ পড়েনি” বলে তিনি মন্তব্য করেন।

 

“সেই অস্থিরতার সময়কালে, হিংসার পরিবেশে তাঁদের মোকাবিলা করা, দেশের চেতনাকে জাগ্রত রাখা, সামলে রাখা, তাঁদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দেওয়াও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল”।

 

“আমাদের শিল্প, সাহিত্য, সঙ্গীত, সাধু-সন্তরা এই কাজটিই করে এসেছেন”।

 

ভারতের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে তুলে ধরা

 

“দেশের প্রতিটি প্রান্তে বিভিন্ন শিল্প ও সঙ্গীতের ঘরানার বিশেষ ঐতিহ্য আমরা দেখতে পাই। একইভাবে, ভারতের প্রতিটি অংশে বুদ্ধিজীবী এবং সাধু-সন্ন্যাসীদের প্রভাব আমাদের নজরে আসে। এই ব্যক্তি-বিশেষের ধারণা শিল্প ও সংস্কৃতির সঙ্গে সম্পৃক্ত আমাদের ইতিহাসের বিভিন্ন আঙ্গিককে সমৃদ্ধ করেছে। এই মণীষীরা দেশের অনেক বড় বড় সামাজিক সংস্কারকে বাস্তবায়িত করেছেন। তাঁরা যে পথ আমাকে দেখিয়েছেন, তা আজও সকলকে অনুপ্রাণিত করে”।

 

“বিভিন্ন সামাজিক সংস্কারের সঙ্গে সম্পৃক্ত গান ও ভাবনা ভক্তি আন্দোলনকে সমৃদ্ধ করেছে। সন্তকবীর, তুলসী দাস এবং আরও অনেকে সমাজের চেতনা জাগ্রত করার লক্ষ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন”।

 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমাদের সবাইকে স্বামী বিবেকানন্দের সেই উক্তি সর্বদা মনে রাখতে হবে যা তিনি মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ে কয়েকজনের সঙ্গে বার্তালাপের সময় বলেছিলেন -বর্তমান শতাব্দী যতই আপনাদের হোক, কিন্তু একবিংশ শতাব্দী ভারতের হবে। স্বামী বিবেকানন্দের সেই বিশ্বাস, সেই সংকল্পকে সিদ্ধ করতে আমদের সবাইকে, প্রত্যেক দেশবাসীকে সম্পূর্ণ শক্তি দিয়ে নিরন্তর কাজ করে যেতে হবে”।

 

 

 

CG/CB/SB