Search

পিএমইন্ডিয়াপিএমইন্ডিয়া

সাম্প্রতিক সংবাদ

বিষয়টিকে সরাসরি পিআইবি থেকে নেওয়া হয়েছে

কর্ণাটকের হুব্বালিতে ২৬তম জাতীয় যুব উৎসবের উদ্বোধন প্রধানমন্ত্রীর

কর্ণাটকের হুব্বালিতে ২৬তম জাতীয় যুব উৎসবের উদ্বোধন প্রধানমন্ত্রীর


নয়াদিল্লি, ১২ জানুয়ারি, ২০২৩

প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী কর্ণাটকের হুব্বালিতে আজ ২৬তম যুব উৎসবের উদ্বোধন করেছেন। স্বামী বিবেকানন্দের জন্ম দিবস উপলক্ষে উদযাপিত ‘জাতীয় যুব দিবস’ তাঁর আদর্শ, শিক্ষা ও অবদানকে স্মরণ করায়। উৎসবের আলোচ্য বিষয় – ‘বিকশিত যুব – বিকশিত ভারত’। এর মধ্য দিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের বিবিধ সংস্কৃতিকে একই মঞ্চে নিয়ে আসা যায় এবং সমস্ত অংশগ্রহণকারীকে সঙ্ঘবদ্ধ করে ‘এক ভারত শ্রেষ্ঠ ভারত’-এর আদর্শে অনুপ্রাণিত হওয়ার।

সমাবেশে ভাষণ দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কর্ণাটকের হুব্বালি অঞ্চল প্রথা, সংস্কৃতি এবং জ্ঞানভাণ্ডারের জন্য বিশেষ সমাদৃত। এখানকার অনেক বরেণ্য ব্যক্তি ‘জ্ঞানপীঠ’ পুরস্কারে সম্মানিত হয়েছেন। তিনি আরও জানান, এই এলাকা পণ্ডিত কুমার গৌরব, বাসবরাজ রাজগুরু, মল্লিকার্জুন মনসুর, গাঙ্গুবাঈ হাঙ্গল এবং ভারতরত্ন ভীমসেন যোশী-র মতো প্রথিতযশা সঙ্গীতজ্ঞের জন্ম দিয়েছে। তিনি তাঁদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

২০২৩-এ জাতীয় যুব দিবসের গুরুত্বের ওপর আলোকপাত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একদিকে যেমন উদ্দীপনাময় জাতীয় যুব উৎসব উদযাপিত হচ্ছে, অন্যদিকে রয়েছে আজাদি কা অমৃত মহোৎসব। “ওঠো, জাগো এবং লক্ষ্যে পৌঁছনো না পর্যন্ত থেমো না” – স্বামী বিবেকানন্দের উক্তিকে উদ্ধৃত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন যে ভারতের তরুণদের এটাই হল জীবনের মন্ত্র। অমৃতকালে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে আমরা আমাদের উচিৎ দায়িত্ব ও কর্তব্যকে প্রকৃত অনুধাবন ও অনুসরণ করা। যুব সম্প্রদায় স্বামী বিবেকানন্দের কাজের মধ্য দিয়ে যেভাবে অনুপ্রাণিত হয়েছিল তার ওপর আলোকপাত করে শ্রী মোদী বলেন, “এই বিশেষ অনুষ্ঠানে আমি আমার মাথা স্বামী বিবেকানন্দের পদতলে আনত করছি।” প্রধানমন্ত্রী সম্প্রতি প্রয়াত সিদ্ধেশ্বর স্বামীর প্রতিও শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

কর্ণাটকের সঙ্গে স্বামী বিবেকানন্দের নিগূঢ় সম্পর্কের উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বামীজি বহুবার কর্ণাটকে এসেছেন এবং মহীশূরের মহারাজ তাঁর চিকাগো সফরের অন্যতম পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। শ্রী মোদী বলেন, স্বামীজির ভারত ভ্রমণ জাতীয় চেতনাকে সম্মিলিত করতে অগ্রবর্তী ভূমিকা নেয় এবং ‘এক ভারত শ্রেষ্ঠ ভারত’ – এই ভাবধারার তা এক জাগ্রত উদাহরণ হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে। চিত্তুর-এর মহারানি চিন্নাম্মা এবং সাঙ্গোলি রায়ানা ব্রিটিশ শৌর্যের দম্ভকে কার্যত পর্যদস্তু করেছিল এবং নারায়ণ মহাদেব দোনির উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নাবালক অবস্থাতেই ১৪ বছর বয়সে তিনি তাঁর জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। ল্যান্স নায়েক হনুমানথাপ্পা কোপ্পাড়ের সিয়াচেনের -৫৫ ডিগ্রি তাপমাত্রাতেও বেঁচে থাকার উল্লেখ করেন শ্রী মোদী। কর্ণাটক এরকম অজস্র বরেণ্য নেতৃত্বের জন্ম দিয়েছে যাঁরা দেশের স্বার্থকে তাঁদের জীবনের সর্বাগ্রে জায়গা দিয়েছেন। যুবশক্তির বহুধা বিস্তৃত প্রতিভার উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারতের এই যুবশক্তি প্রত্যেকটি ক্ষেত্রেই নতুন নতুন পদক্ষেপ নিয়ে চলেছে।

পরিবর্তিত সময়ের আলোকে জাতীয় লক্ষ্যও পরিবর্তিত হচ্ছে – একথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একবিংশ শতাব্দী ভারতের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ তার কারণ ভারতের জনসংখ্যার এক বৃহদাংশ জুড়ে রয়েছে যুব সম্প্রদায়। ভারতের যাত্রাপথে যুবশক্তিই হল আমাদের চালিকাশক্তি। দেশ গঠনের কাজে আগামী ২৫ বছর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আখ্যা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যুবশক্তির স্বপ্ন এবং সদিচ্ছা ভারতের যাত্রাপথের চালিকাশক্তি হয়ে উঠবে এবং যুবশক্তির উদ্যমই ভারতের পথকে নির্ণয় করবে। যুবশক্তির প্রতিভা অন্বেষণের ক্ষেত্রে আমাদের চিন্তা এবং প্রচেষ্টাও নবীন হতে হবে। এই নবীন হয়ে ওঠাটাই বাস্তবসম্মত কারণ, এই অমৃত প্রজন্মের আত্মনিয়োগের জন্যই সারা বিশ্ব আমাদের দিকে সমাধানসূত্রের জন্য তাকিয়ে রয়েছে বলে তিনি জানান।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারত আজ পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ এবং আমাদের লক্ষ্য হল তাকে তৃতীয় স্থানে উন্নীত করা। কৃষি, ক্রীড়াক্ষেত্র সহ সমস্ত ক্ষেত্রে উদ্ভূত সম্ভাবনার প্রতি আলোকপাত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই বিপ্লব সাধিত হচ্ছে যুবশক্তির কর্মনিষ্ঠার কারণেই। অর্থনীতি, শিক্ষা, ক্রীড়া এবং স্টার্ট-আপ ক্ষেত্রের শক্ত ভিত্তির উল্লেখ করে শ্রী মোদী বলেন, “রানওয়ে প্রস্তুত। এখন শুধু আপনাদের ডানা মেলার প্রয়োজন। বিশ্বজুড়ে যুব সম্প্রদায়ের সামনে অমিত সম্ভাবনার দ্বার উন্মুক্ত রয়েছে। এই সম্ভাবনা আপনাদের জন্যই এবং আপনারাই এই আশাবাদের কারণ। বিশ্বজুড়ে এটাই প্রতিধ্বনিত হচ্ছে যে এই শতাব্দী হল ভারতের শতাব্দী। এই শতাব্দী আপনাদের শতাব্দী, ভারতের যুবশক্তির শতাব্দী। এ এক ঐতিহাসিক ক্ষণ যেখানে আশাবাদ এবং সম্ভাবনা একত্রে সংযোজিত হয়েছে।”

জাতীয় শক্তিকে জাগ্রত রাখতে নারীশক্তির ভূমিকার উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সশস্ত্র বাহিনী, মহাকাশ প্রযুক্তি, মহাকাশ এবং ক্রীড়াক্ষেত্রে মহিলারা উজ্জ্বল ভূমিকা পালন করছেন।

একবিংশ শতাব্দীকে ভারতের শতাব্দী হিসেবে গড়ে তোলার পথে ভবিষ্যৎদর্শী চিন্তা এবং অগ্রবর্তী পদক্ষেপের গুরুত্বের কথা উল্লেখ করে শ্রী মোদী বলেন, যুবশক্তির চাহিদাকে সম্পূর্ণতা দিতে সদর্থক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে উন্নত দেশগুলির থেকে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ক্ষেত্রের উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রধান পেশা হিসেবে যে সমস্ত ক্ষেত্রগুলি এখনও নেই, আগামীদিনে সেগুলিই হয়তো প্রধান হয়ে দেখা দেবে। ফলে, ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে আমাদের যুবশক্তিকে দক্ষ হয়ে উঠতে হবে। নতুন শিক্ষানীতির উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই নীতি বাস্তবসম্মত এবং শিক্ষাক্ষেত্রের দূরদর্শিতা এতে উন্মোচিত হবে।

স্বামী বিবেকানন্দের দ্বৈত বার্তা – প্রতিষ্ঠান এবং উদ্ভাবন আজ পরিবর্তিত বিশ্বে প্রত্যেক যুব জীবনের অঙ্গ হওয়া উচিৎ। আমরা যখন আমাদের চিন্তাশক্তিকে মেলে ধরতে পারি ও সদিচ্ছার সঙ্গে কাজ করি, তখনই কোনও প্রতিষ্ঠান জন্ম নেয়। ফলে, যুবশক্তিকে তিনি তাঁদের ব্যক্তিগত সাফল্যকে দলগত সাফল্যে পরিবর্তনের জন্য আহ্বান জানান। শ্রী মোদী বলেন যে এই দলগত ইচ্ছাশক্তিই ভারতকে ‘টিম ইন্ডিয়া’র পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করবে।

স্বামী বিবেকানন্দের উদ্ভাবনী চিন্তার ওপর আলোকপাত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রত্যেকটি কাজকে তিনটি পর্যায়ের মধ্য দিয়ে যেতে হয়। সেগুলি হল – উপহাস, প্রতিবাদ এবং গ্রহণযোগ্যতা। তিনি ডিজিটাল পেমেন্ট, স্বচ্ছ ভারত অভিযান, জন ধন যোজনা এবং স্বদেশে তৈরি কোভিড টিকার উল্লেখ করে বলেন, প্রথমে যখন এগুলি চালু করা হল তখন তাকে ঘিরে উপহাস করা হয়েছে। শ্রী মোদী বলেন যে ডিজিটাল পেমেন্টে ভারত এখন বিশ্বকে নেতৃত্ব দিচ্ছে। আমাদের অর্থনীতির মূল শক্তি হয়ে দাঁড়িয়েছে জন ধন অ্যাকাউন্ট এবং টিকার ক্ষেত্রে ভারতের সাফল্য সারা বিশ্বজুড়ে এখন আলোচিত বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিনি মন্তব্য করেন, “আপনি যদি নতুন ধারণার উদ্ভব ঘটান, তাহলে মনে রাখবেন আপনাকে উপহাসের পাত্র হতে হবে অথবা তার বিরুদ্ধাচরণের মুখোমুখি হতে হবে। কিন্তু, আপনার এই নতুন ধারণার প্রতি যদি আপনার প্রকৃত বিশ্বাস থেকে থাকে, তাহলে সেই পথ থেকে আপনি সরে যাবেন না এবং এর ওপর বিশ্বাস ন্যস্ত করুন।”

প্রধানমন্ত্রী দেশজুড়ে সমস্ত নতুন পরীক্ষানিরীক্ষা, নতুন প্রচেষ্টা যুবশক্তিকে সঙ্গে নিয়ে করা হচ্ছে। প্রতিযোগিতামূলক এবং সহযোগিতামূলক যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর তুলনা টেনে তিনি বলেন যে জাতীয় যুব উৎসবের বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় দেশের বিভিন্ন রাজ্য থেকে যুবরা অংশ নিচ্ছেন। কে জিতল সেটা বড় কথা নয়, বরং মনে রাখতে হবে যে ভারত জয়ী হবে। যুবরা একে অন্যের সঙ্গে প্রতিযোগিতা নয়, বরং সহযোগিতার পথ গ্রহণ করুন। ‘প্রতিযোগিতা থেকে সহযোগিতা’ – এই পথে অগ্রসর হওয়ার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নতুন চিন্তার যে জন্মের সাফল্য তখনই বিবেচিত হয় যখন দেশ তাতে উপকৃত হতে পারে।

ভাষণের শেষে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের সামনে আজ লক্ষ্য হল – ‘বিকশিত ভারত, স্বশক্ত ভারত’! অর্থাৎ, উন্নত ভারত, শক্তিশালী ভারত। তিনি বলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত উন্নত ভারতের স্বপ্ন পূরণ না হচ্ছে, আমরা থামব না। দেশের যুব সম্প্রদায়ের প্রতি প্রধানমন্ত্রী তাঁর বিশ্বাস ন্যস্ত করে বলেন, প্রত্যেক যুব তাঁদের স্বপ্নকে সঙ্গে নিয়ে এগোবেন এবং তাঁরা তাঁদের কাঁধে তুলে নেবেন দেশের দায়িত্বভার।

কর্ণাটকের রাজ্যপাল শ্রী থাওয়ারচাঁদ গেহলোট, মুখ্যমন্ত্রী শ্রী বাসবরাজ বোম্মাই, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শ্রী অনুরাগ সিং ঠাকুর, শ্রী নিশীথ প্রামাণিক এবং রাজ্যের মন্ত্রীরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, জাতীয় যুব দিবস প্রতি বছরই উদযাপন করা হয় জাতীয় স্তরে যুব প্রতিভাকে তুলে ধরতে। কর্ণাটকের হুব্বালি-ধারওয়াড়ে ১২ থেকে ১৬ জানুয়ারি পর্যন্ত এই উৎসব উদযাপিত হচ্ছে। এবারের যুব উৎসবের বিষয় হল – ‘বিকশিত যুব – বিকশিত ভারত’।

এবারের এই উৎসবে যুব শিখর সম্মেলন আয়োজন করা হবে যেখানে জি-২০ এবং ওয়াই-২০ থেকে মূল পাঁচটি বিষয় – ভবিষ্যতের কাজ, শিল্প, উদ্ভাবন এবং একুশ শতকের দক্ষতা; জলবায়ু পরিবর্তন ও বিপর্যয়ের ঝুঁকি কমানো; শান্তি প্রতিষ্ঠা ও সমন্বয়; গণতন্ত্র এবং পরিচালনায় ভবিষ্যৎ যুব ভাবনার আদান-প্রধান এবং স্বাস্থ্য ও সুস্থতা – এর ওপর প্লেনারি সেশনে আলোচনা হবে। ৬০ জন বিশেষজ্ঞ এতে অংশ নেবেন। এছাড়াও, যোগাথন অনুষ্ঠিত হবে যেখানে ১০ লক্ষ মানুষকে যোগচর্চায় উদ্বুদ্ধ করা হবে এবং বিভিন্ন ক্রীড়ানুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে। এগুলি ছাড়াও, ফুড ফেস্টিভ্যাল, যুব চিত্রকরদের ক্যাম্প, অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টর্স এবং সেনাবাহিনী, নৌ-বাহিনী ও বিমানবাহিনীর ক্যাম্প প্রভৃতিও থাকবে।

PG/AB/DM