Search

পিএমইন্ডিয়াপিএমইন্ডিয়া

সাম্প্রতিক সংবাদ

বিষয়টিকে সরাসরি পিআইবি থেকে নেওয়া হয়েছে

কনফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ান ইন্ডাস্ট্রির বার্ষিক অধিবেশন উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ


নমস্কার,

 

কনফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ান ইন্ডাস্ট্রির ১২৫ বছর পূর্তি উদযাপন সফলভাবে পালনের জন্য আপনাদের সবাইকে অনেক অনেক অভিনন্দন জানাই। কনগ্র্যাচুলেশনস। এই ১২৫ বছরের যাত্রা অত্যন্ত দীর্ঘযাত্রা। অনেক পর্যায় পেরিয়ে,  অনেক উত্থান-পতন সামলে একশ পঞ্চাশ বছর ধরে এমন একটি সংস্থা পরিচালনা করাটাই অনেক বড় ব্যাপার। এতে সময়ানুকুল পরিবর্তন এসেছে, ব্যবস্থা বদলেছে। প্রথমেই আমি যাঁরা এই ১২৫ বছরে কনফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ান ইন্ডাস্ট্রিকে শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে অবদান রেখেছেন, অতীতের সেই সমস্ত গণ্যমান্য ব্যক্তিকে অভিনন্দন জানাতে চাই। তাঁদের মধ্যে যাঁরা আজ আমাদের মধ্যে নেই, তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাই এবং ভবিষ্যতে যাঁরা সামলাবেন, তাঁদের অনেক শুভেচ্ছা জানাই।

করোনা সংক্রমণের এই সময়কালে, এই জাতীয় অনলাইন ইভেন্টগুলিই ক্রমেই নতুন বাস্তবে পরিণত হয়ে উঠছে। তবে এটা মানুষের সব থেকে বড়ো শক্তি হল যে সে প্রতিটি অসুবিধা থেকে মুক্তির পথ গড়ে তোলে। আজও, আমাদের যেমন একদিকে এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে, অন্যদিকে আমাদের দেশের অর্থনীতিকেও স্থিতিশীল করতে হবে, গতিশীল করতে হবে। একদিকে আমাদের দেশবাসীর জীবন বাঁচাতে হবে এবং অন্যদিকে আমাদের দেশের অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করতে হবে, গতি বাড়িয়ে তুলতে হবে। এই পরিস্থিতিতে, আপনারা অর্থনৈতিক বৃদ্ধি ফিরে পাওয়া নিয়ে কথা বলতে শুরু করেছেন। সেজন্যে নিশ্চিতভাবেই আপনারা সবাই, ভারতীয় শিল্পজগতের মানুষেরা এর জন্য অভিনন্দনযোগ্য। উন্নয়ন বৃদ্ধি ফিরে পাওয়া থেকে এগিয়ে আমি এও বলব যে, হ্যাঁ, আমরা অবশ্যই আমাদের অর্থনৈতিক বৃদ্ধি ফিরে পাব। আপনারা কেউ কেউ ভাবতে পারেন, এই সঙ্কটের সময়ে আমি কীভাবে এত আত্মবিশ্বাসের সাথে একথা বলতে পারি?

আমার এই আত্মবিশ্বাসের অনেক কারণ রয়েছে। আমার ভারতের সামর্থ্য ও সঙ্কট ব্যবস্থাপনায় আস্থা আছে। আমার ভারতের প্রতিভা এবং প্রযুক্তিতে ভরসা আছে। আমার ভারতের উদ্ভাবন এবং বুদ্ধিমত্তায় ইন্টেলিকেশন অফ ইন্ডিয়াকে বিশ্বাস আছে। আমার ভারতের কৃষক, অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোগীদের বিশ্বাস আছে। এবং আমার শিল্পজগতের সমস্ত নেতাদের উপর ভরসা আছে। এই কারণেই আমি বলছি- হ্যাঁ! আমরা আমাদের বৃদ্ধি ফিরে পাবোই। ভারত তার অর্থনৈতিক বৃদ্ধি ফিরে পাবে।

বন্ধুরা, করোনা আমাদের গতি যতই কম করুক না কেন, আজ দেশের সবচেয়ে বড় সত্য হল, ভারত লকডাউনকে পেছনে ফেলে আনলক প্রথম পর্বে প্রবেশ করেছে। আনলক প্রথম পর্বে দেশের অর্থনীতির একটি বড় অংশ ইতিমধ্যেই উন্মুক্ত হয়েছে। আরও অনেকটা অংশ ৮ই জুনের পরে উন্মুক্ত হতে চলেছে। অর্থাৎ, ইতিমধ্যেই অর্থনৈতিক বিকাশ ফিরে পাওয়ার প্রক্রিয়ার সূত্রপাত হয়েছে।

আজ আমরা এই সমস্ত কিছুই করতে সক্ষম হচ্ছি, কারণ যখন করোনা ভাইরাস বিশ্বে দ্রুত ছড়াচ্ছিল তখন ভারত সঠিক সময়ে, সঠিক পদক্ষেপ নিয়েছিল। বিশ্বের সমস্ত দেশের সঙ্গে তুলনা করলে  আজ আমরা বুঝতে পারি ভারতে লকডাউনের প্রভাব কতটা ব্যাপক ও বিস্তৃত হয়েছে। এই লকডাউনে, ভারত করোনার বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য কেবল মৌলিক উপাদান ও সরঞ্জামের ব্যবস্থাই করেনি, নিজের মানবসম্পদও সংরক্ষণ করেছে। এমন পরিস্থিতিতে এখন প্রশ্ন এরপর কী?  শিল্পোদ্যোগের নেতা হিসাবে এই প্রশ্নটি অবশ্যই আপনাদের মনে আসবে যে, সরকার এখন কী করবে? আত্মনির্ভর ভারত অভিযান সম্পর্কেও আপনাদের মনে কিছু প্রশ্ন থাকবে। এটি অত্যন্ত স্বাভাবিক, বোধগম্য জিজ্ঞাসা।

বন্ধুগণ, করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে দুর্বল হয়ে পড়া অর্থনীতিকে আবার শক্তিশালী করে তোলা, আমাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারগুলির অন্যতম। সেজন্যে দ্রুত যে সিদ্ধান্তগুলি নেওয়া প্রয়োজন, সরকার এখন সেই সিদ্ধান্তগুলি নিচ্ছে। পাশাপাশি, এমন কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে যা দেশের উন্নয়নে সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলবে।

বন্ধুগণ, প্রধানমন্ত্রী গরিব কল্যাণ যোজনা দ্রুততার সঙ্গে গরিবদের পাশে দাঁড়িয়েছে, উপকারে লেগেছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে প্রায় ৭৪ কোটি সুবিধাভোগীদের রেশন পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। প্রবাসী শ্রমিকদেরকেও বিনামূল্যে রেশন পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা হয়েছে। তাছাড়া, এখন পর্যন্ত তিপ্পান্ন হাজার কোটি টাকারও বেশি অর্থসাহায্য প্রদান করা হয়েছে। মহিলা হোক, দিব্যাংগ হোক, বৃদ্ধ-বৃদ্ধা হোক, শ্রমিক হোক; প্রত্যেকেই এর দ্বারা লাভবান হয়েছেন। লকডাউনের সময় সরকার গরিবদের বিনামূল্যে ৮কোটিরও বেশি রান্নার গ্যাস সিলিন্ডার সরবরাহ করেছে। শুধু তাই নয়, বেসরকারি ক্ষেত্রের প্রায় ৫০ লক্ষ কর্মচারির ইপিএফ অ্যাকাউন্টে ২৪ শতাংশ কিস্তির টাকাও সরকার দিয়েছে। ইতিমধ্যেই, তাঁদের ইপিএফ অ্যাকাউন্টে প্রায় ৮০০ কোটি টাকা জমা করেছে।

বন্ধুগণ, ভারতকে পুনর্বার দ্রুত উন্নয়নের পথে ফিরিয়ে আনতে, আত্মনির্ভর ভারত গড়ে তুলতে পাঁচটি বিষয় অত্যন্ত জরুরি। সেগুলি হলঃ ইচ্ছাশক্তি, অন্তর্ভুক্তিকরণ, বিনিয়োগ, পরিকাঠামো এবং উদ্ভাবন। সম্প্রতি যে সাহসী পদক্ষেপগুলি নেওয়া হয়েছে, সেগুলিতে আপনারা এই সব কটি বিষয় পাবেন। এই সিদ্ধান্তগুলির পাশাপাশি আমরা সমস্ত ক্ষেত্রের ভবিষ্যৎ প্রস্তুত করেছি। সেজন্যে আজ ভারত একটি নতুন উন্নয়ন-নির্ভর ভবিষ্যতের লক্ষ্যে বড়ো উড়ানের জন্য প্রস্তুত। বন্ধুগণ, আমাদের জন্যে সংস্কার কোনও ‘র‍্যান্ডাম’ বা বিক্ষিপ্ত সিদ্ধান্তমালা নয়। আমাদের জন্যে সংস্কার নিয়মানুগ, সুপরিকল্পিত, সংহত, ইন্টার-কানেক্টেড এবং ভবিষ্যৎদর্শী পদ্ধতি।

আমাদের জন্য সংস্কারের অর্থ হল সিদ্ধান্ত নেওয়ার সাহস করা, আর সেই সিদ্ধান্তগুলিকে যুক্তিসম্মত পরিণতির দিকে নিয়ে যাওয়া। আইবিসি হোক, ব্যাঙ্ক সংযুক্তিকরণ হোক, জিএসটি হোক, ফেসলেস ইনকাম ট্যাক্স অ্যাসেসমেন্টের ব্যবস্থা হোক, আমরা সর্বদা ব্যবস্থাগুলিতে সরকারের দখল কম করা, প্রাইভেট এন্টারপ্রাইজগুলির জন্যে উৎসাহব্যঞ্জক বাস্তু-ব্যবস্থা গড়ে তোলার উপর জোর দিয়েছি। এর ফলে সরকার আজ এমন সব নীতিগত সংস্কারও করছে, যেগুলির আশা দেশ ছেড়ে দিয়েছিল। যদি আমি কৃষি ক্ষেত্রের কথা বলি তাহলে আমাদের দেশে স্বাধীনতার পর যেসব নিয়ম-কানুন তৈরি হয়েছে, সেগুলির সাহায্যে কৃষকদের দালালদের হাতে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। কৃষক কোথায় ফসল বেচতে পারে, আর কোথায় পারে না, নিয়মগুলি অনেক কঠিন ও জটিল ছিল। কৃষকদের সঙ্গে দশকের পর দশক ধরে হওয়া এই  অন্যায় থেকে তাঁদের মুক্তি দেওয়ার ইচ্ছাশক্তি আমাদের সরকার দেখিয়েছে।

এপিএমসি আইনে পরিবর্তনের পরে এখন কৃষকরাও তাঁদের অধিকার পাবেন। কৃষকরা এখন যাকে ইচ্ছে যখন ইচ্ছে ফসল বেচতে পারবেন। এখন কোনও কৃষক তাঁর পছন্দমতো দেশের যে কোনও রাজ্যে নিয়ে গিয়ে ফসল বিক্রি করতে পারবেন। পাশাপাশি অয়্যারহাউসগুলিতে রাখা ফসল কিম্বা কৃষিপণ্য এখন ইলেক্ট্রনিক ট্রেডিং-এর মাধ্যমেও বিক্রি করতে পারেন। আপনারা কল্পনা করতে পারেন, এর ফলে কৃষি- ব্যবসার ক্ষেত্রে কত নতুন রাস্তা খুলতে চলেছে! বন্ধুগণ, এভাবেই আমাদের শ্রমিকদের কল্যাণের কথা মাথায় রেখে, তাঁদের রোজগারের সুযোগ বৃদ্ধির জন্যে শ্রম আইনে সংস্কারও করা হচ্ছে।

যে নন- স্ট্র্যাটেজিক সেক্টরগুলিতে বেসরকারি ক্ষেত্রের অনুমতিই ছিল না, সেগুলিকেও উন্মুক্ত করা হয়েছে। আপনারা হয়তো এটাও লক্ষ্য করেছেন যে ‘সবকা সাথ – সবকা বিকাশ – সবকা বিশওয়াস’ এর পথে এগিয়ে আমরা একের পর এক সিদ্ধান্ত নিচ্ছি, দীর্ঘকাল ধরে এমন সব সিদ্ধান্ত গ্রহণেরই দাবি ছিল। বন্ধুগণ, বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম দেশ, যার কাছে কয়লার ভাণ্ডার রয়েছে- কোল রিজার্ভ রয়েছে, যার কাছে সাহসী আর উদ্যমী বাণিজ্য জগতের নেতারা রয়েছেন, কিন্তু তারপরও সে দেশে বিদেশ থেকে কয়লা আমদানি করতে হলে, এর কারণ কী ছিল? কখনও সরকার প্রতিবন্ধক ছিল, কখনও নীতি প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে। কিন্তু এখন কয়লা ক্ষেত্রকে এসব বন্ধন থেকে মুক্ত করার কাজ শুরু করে দেওয়া হয়েছে। এখন কয়লা ক্ষেত্রে বাণিজ্যিকভাবে খননের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। পারশিয়ালি এক্সপ্লোরড ব্লক্সগুলির অ্যালটমেন্টের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এভাবে অন্যান্য খনিজ খননেও এখন কোম্পানিগুলি এক্সপ্লোরেশনের পাশাপাশি একসঙ্গে খননের কাজও করতে পারবে। এই সিদ্ধান্তগুলি কত সুদূর প্রসারী পরিণাম নিয়ে আসবে তা এই ক্ষেত্র সম্পর্কে অবহিত সকলেই খুব ভালোভাবে বুঝতে পারছেন।

বন্ধুগণ, সরকার যে লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছে, এতে আমাদের খনন ক্ষেত্র থেকে শুরু করে শক্তি উৎপাদন ক্ষেত্র কিংবা গবেষণা ও প্রযুক্তি – প্রত্যেক ক্ষেত্রে শিল্পোদ্যোগও কাজ করার সুযোগ পাবে, আর নবীন প্রজন্মের জন্যও নতুন নতুন শিল্পোদ্যোগ ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। এসব কিছু থেকে এগিয়ে গিয়ে এখন দেশের কৌশলগত ক্ষেত্রগুলিতেও বেসরকারি বিনিয়োগকারীদের অংশিদারিত্ব একটি বাস্তবতায় পরিণত হচ্ছে। আপনারা যদি মহাকাশ গবেষণা ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করতে চান, পারমানবিক শক্তি ক্ষেত্রে নতুন নতুন সুযোগ অন্বেষণ করতে চান – সমস্তরকম সম্ভাবনা আপনাদের জন্য উন্মুক্ত হয়েছে।

বন্ধুগণ, আপনারা এটা খুব ভালোভাবেই জানেন অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের লক্ষ লক্ষ ইউনিট আমাদের দেশের জন্য অর্থনৈতিক ইঞ্জিনের মতো হয়ে উঠেছে। দেশের জিডিপি-তে এদের অনেক বড় অবদান রয়েছে, এই অবদান প্রায় ৩০ শতাংশ। অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোগের সংজ্ঞা স্পষ্ট করার যে দাবি দীর্ঘকাল ধরে শিল্পজগৎ থেকে উঠে আসছিল – তা বাস্তবায়িত হয়েছে। এর ফলে, অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোগগুলি কোনো দুশ্চিন্তা ছাড়াই উন্নতি করতে পারবে, আর তাদের অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের স্টেটাস বজায় রাখার জন্য অন্য কোনো পথে চলার প্রয়োজন চলবে না। দেশের অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোগগুলিতে কর্মরত কোটি কোটি ভাই ও বোনেরা যাতে লাভবান হন সেজন্য ২০০ কোটি টাকা পর্যন্ত সরকারি ক্রয়ের ক্ষেত্রে গ্লাবাল টেন্ডারের প্রচলন সমাপ্ত করে দেওয়া হয়েছে। এর ফলে আমাদের ক্ষুদ্র শিল্পগুলি সব থেকে বেশি সুযাগ পাবে। একভাবে, আত্মনির্ভর ভারত প্যাকেজ অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোগ ক্ষেত্রের ইঞ্জিনের জন্য জ্বালানির মতো কাজ করবে।

বন্ধুগণ, এই যে সিদ্ধান্তগুলি, এগুলির প্রাসঙ্গিকতা বোঝার জন্য আজকের আন্তর্জাতিক পরিস্থিতিকে নিবিড়ভাবে দেখা ও বোঝা অত্যন্ত জরুরি। তাহলে অনুভব করবেন, আজ বিশ্বের সকল দেশ, আগের তুলনায় অনেক বেশি পরস্পরের সঙ্গ চায়। দেশগুলির মধ্যে পরস্পরের প্রতি সহযোগের প্রয়োজন আগের থেকে অনেক বেশি সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু এর পাশাপাশি এই ভাবনাও চলছে যে পুরনো ভাবনা, পুরনো রীতিনীতি, পুরনো নীতিগুলি কতটা কার্যকর হবে! স্বাভাবিকভাবেই এই সময়ে নতুনভাবে অনেক চিন্তাভাবনা চলছে। আর এই সময়ে ভারতের প্রতি বিশ্ববাসীর প্রত্যাশা অনেক বেশি বেড়ে গেছে। আজ বিশ্বে ভারতের প্রতি বিশ্বাস আরও বেড়েছে এবং নতুন আশার সঞ্চার হয়েছে। এখন আপনারাও লক্ষ্য করেছেন, করোনার এই সঙ্কটে যখন কোনো দেশের অন্য দেশের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া মুশকিল হয়ে উঠেছিল, তখন ভারত ১৫০টিরও বেশি দেশে ওষুধ ও চিকিৎসা সরঞ্জাম পাঠিয়ে তাদের সাহায্য করেছে। বন্ধুগণ, বিশ্ব এখন বিশ্বস্ত এবং নির্ভরযোগ্য অংশিদারিত্বের খোঁজে আছে। ভারতের কাছে সেই সম্ভাবনা, শক্তি ও সামর্থ্য আছে।

আজ গোটা বিশ্বে ভারতের প্রতি যে আস্থা গড়ে উঠেছে আপনাদের সকলের উচিত, ভারতের শিল্পজগতের উচিত এর সম্পূর্ণ সদ্ব্যবহার করা। এটা আপনাদের সকলের দায়িত্ব, কনফেডারেশন অফ্ ইন্ডিয়ান ইন্ডাস্ট্রির মত সংগঠনগুলির দায়িত্ব হল ‘ম্যানুফ্যাকচার্ড ইন ইন্ডিয়া’-এর পাশাপাশি আস্থা, উৎকর্ষ এবং প্রতিযোগিতামূলক পণ্য উৎপাদনের ভাবনাকে যুক্ত করতে হবে। আপনারা দু কদম এগিয়ে গেলে সরকার চার কদম এগিয়ে আপনাদের সঙ্গ দেবে। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আমি আপনাদের আশ্বস্ত করছি যে, আমি আপনাদের পাশে আছি। ভারতীয় শিল্পজগতের জন্য এটি ‘রাইজ টু দ্য অকেশন’-এর মত। বিশ্বাস করুন উন্নয়ন প্রক্রিয়া ফিরিয়ে আনা এত কঠিন কাজও নয়। আর সব থেকে বড় কথা হল এখন আপনাদের সামনে, ভারতীয় শিল্পোদ্যোগের সামনে একটি স্পষ্ট ও পরিস্কার রাস্তা রয়েছে।

আত্মনির্ভর ভারতের মানে হল আমরা আরও বেশি শক্তিশালী হয়ে বিশ্বকে আলিঙ্গন করব। আত্মনির্ভর ভারত বিশ্ব অর্থনীতির সঙ্গে সম্পূর্ণরূপে সমন্বিত হবে এবং সহায়কও হবে। কিন্তু মনে রাখবেন আত্মনির্ভর ভারতের অর্থ এটাও যে আমরা কৌশলগত ক্ষেত্রগুলিতেও কারো ওপর নির্ভর করব না। আমরা ভারতে শক্তিশালী শিল্পোদ্যোগ গড়ে তুলব, যে শিল্পোদ্যোগগুলি হয়ে উঠতে পারে আন্তর্জাতিক শক্তি। এই শিল্পোদ্যোগগুলি প্রভূত কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে। এগুলি আমাদের জনগণের ক্ষমতায়ন বাড়িয়ে আমাদের দেশের ভবিষ্যৎকে সঙ্গায়িত করতে নতুন নতুন সমাধান খুঁজে বের করবে। আমাদের এখন এমন একটি শক্তিশালী স্থানীয় সরবরাহ সৃঙ্খল গড়ে তোলার জন্য বিনিয়োগ করতে হবে, যা আন্তর্জাতিক সরবরাহ সৃঙ্খলে ভারতের অংশিদারিত্বকে শক্তিশালী করবে। এই অভিযানে আমি কনফেডারেশন অফ্ ইন্ডিয়ান ইন্ডাস্ট্রির মত প্রবুদ্ধ সংস্থাগুলিকেও নতুন ভূমিকা পালন করতে হবে। এখন আপনাদের ‘চ্যাম্পিয়ন্স অফ্ ইন্ডিজিনিয়াস ইন্সপিরেশন্স’ হিসেবে এগিয়ে আসতে হবে। আপনাদের দেশীয় শিল্পোদ্যোগগুলির পুনর্জাগরণকে বাস্তবায়িত করতে হবে। পরবর্তী পর্যায়ের উন্নয়নকে সহায়তা করতে হবে, সমর্থন জানাতে হবে, আপনাদের শিল্পজগতকে, আমাদের বাজারের আন্তর্জাতিক প্রসারে সাহায্য করতে হবে।

বন্ধুগণ, এখন প্রয়োজন হল দেশে এমন সব পণ্য উৎপাদিত হোক যেগুলিকে ‘মেড ইন ইন্ডিয়া’ বলা যাবে, যেগুলিকে ‘মেড ফর দ্য ওয়ার্ল্ড’ বলা যাবে। কিভাবে আমরা দেশে আমদানি ন্যূনতম করব এই বিষয় নিয়ে কি নতুন লক্ষ্য স্থির করা যেতে পারে? আমাদের সমস্ত ক্ষেত্রে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির জন্য নিজস্ব লক্ষ্য স্থির করতেই হবে। এই বার্তা আমি আজ শিল্পজগতকে দিতে চাই, আর দেশবাসীও আপনাদের কাছ থেকে এটাই প্রত্যাশা করে।

বন্ধুগণ, দেশে নির্মাণ শিল্পকে, ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’কে কর্মসংস্থানের বড় মাধ্যম করে তোলার জন্য আপনাদের মতো সমস্ত শিল্পোদ্যোগীদের সংগঠনগুলির সঙ্গে আলাপ আলোচনা করে বেশ কিছু অগ্রাধিকার ক্ষেত্র চিহ্নিত করা হয়েছে। এগুলির মধ্যে আসবাবপত্র, এয়ার কন্ডিশনার, চামড়া ও জুতো, এই তিন ক্ষেত্রে কাজও শুরু হয়েছে। শুধু এয়ার কন্ডিশনরের ক্ষেত্রেই আমরা আমাদের চাহিদার ৩০ শতাংশেরও বেশি আমদানি করি। যত দ্রুত সম্ভব আমাদের এই আমদানির পরিমাণ কম করতে হবে। এভাবে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম চামড়া উৎপাদনকারী হওয়া সত্ত্বেও আন্তর্জাতিক রপ্তানির ক্ষেত্রে আমাদের অংশিদারিত্ব খুব কম।

বন্ধুগণ, এমন অনেক ক্ষেত্র রয়েছে যেগুলিতে আমরা খুব ভালো কাজ করতে পারি। বিগত বছরগুলিতে আপনাদের মতো সমস্ত সাথীদের সহযোগিতায় দেশেই বন্দে ভারত-এর মত আধুনিক ট্রেনগুলি নির্মিত হয়েছে। আমাদের দেশ এখন মেট্রো রেলের কোচ রপ্তানি করছে। এভাবে মোবাইল ফোন নির্মাণের ক্ষেত্রে, প্রতিরক্ষা নির্মাণের মতো অনেক ক্ষেত্রে আমদানির উপর আমাদের নির্ভরতা কম করার চেষ্টা চলছে। আর আমি অত্যন্ত গর্বের সঙ্গে বলব, মাত্র তিন মাসের মধ্যেই আপনারা ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম-পিপিই-র হাজার হাজার কোটি টাকার শিল্পোদ্যোগ গড়ে তুলেছেন। তিন মাস আগে পর্যন্ত ভারতে একটিও ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম উৎপাদন হতো না। আজ ভারতে একদিনে ৩ লক্ষ পিপিই কিট নির্মিত হচ্ছে। এটাই হল আমাদের শিল্পজগতের সামর্থ। এই সামর্থকে ব্যবহার করে আপনাদের প্রত্যেক ক্ষেত্রে এগিয়ে যেতে হবে। আমার কনফেডারেশন অফ্ ইন্ডিয়ান ইন্ডাস্ট্রি-র সকল সদস্য বন্ধুদের প্রতি অনুরোধ, দেশের গ্রামীণ অর্থনীতিতে বিনিয়োগের পাশাপাশি কৃষকদের সঙ্গে অংশিদারিত্বের পথ যেভাবে খুলেছে, আপনারা তারও সদ্ব্যবহার করুন। এখন তো গ্রামগুলিতেও স্থানীয় কৃষি উৎপাদনের ক্লাস্টারগুলি উন্নত করার জন্য প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো গড়ে তোলা হচ্ছে। এক্ষেত্রে কনফেডারেশন অফ্ ইন্ডিয়া ইন্ডাস্ট্রি-র সকল সদস্যের জন্য অনেক সুযোগ রয়েছে।

বন্ধুগণ, খামার, মৎস্যচাষ, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ, জুতো নির্মাণ শিল্প, ওষুধ প্রস্তুতিকরণ এরকম অনেক ক্ষেত্রে নতুন নতুন সুযোগের দরজা আপনাদের সামনে খোলা রয়েছে। সম্প্রতি, সরকার শহরে পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য আবাসন সুনিশ্চিত করার জন্য যে ‘রেন্টাল স্কিম’ ঘোষণা করেছে, এতেও আপনাদের সকলের সক্রিয় অংশিদারিত্ব আহ্বান করি।

বন্ধুগণ, আমাদের সরকার বেসরকারি ক্ষেত্রকে দেশের উন্নয়ন যাত্রার অংশীদার বলে মনে করে। আত্মনির্ভর ভারত অভিযানের সঙ্গে যুক্ত আপনাদের সকল প্রয়োজনীয়তাকে গুরুত্ব দেওয়া হবে। আপনাদের, সংশ্লিষ্ট সকলের সঙ্গে আমি নিয়মিত কথাবার্তা বলি এবং এই প্রক্রিয়া ভবিষ্যতেও জারি থাকবে। আমি আপনাদের সকলকে অনুরোধ জানাই, প্রতিটি ক্ষেত্রে বিস্তারিত অধ্যয়ন করুন। নিজেদের মধ্যে সহমত গড়ে তুলুন। নতুন নতুন ভাবনাকে এগিয়ে আনুন – বড় করে ভাবুন। আমরা সকলে মিলে আরও বেশি গঠনগত সংস্কারের পথে যাবো এবং আমাদের দেশে উন্নয়নের গতি পরিবর্তন করব।

আমরা সকলে মিলে আত্মনির্ভর করে তুলব। বন্ধুগণ, আসুন, আমরা সবাই দেশকে আত্মনির্ভর করে তোলার সংকল্প নিই। এই সংকল্প বাস্তবায়িত করার জন্য নিজেদের সমস্ত শক্তি প্রয়োগ করি। সরকার আপনাদের পাশে আছে, আপনারা দেশের লক্ষ্য পূরণে সর্বদা পাশে থাকুন। আপনারা সফল হবেন, আমরা সফল হবো, তাহলেই দেশ নতুন উচ্চতায় পৌঁছবে, আত্মনির্ভর হবে। আরেকবার কনফেডারেশন অফ্ ইন্ডিয়ান ইন্ডাস্ট্রির ১২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে আপনাদের সবাইকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানাই।

অনেক অনেক ধন্যবাদ।

CG/SB/SKD