নতুন দিল্লি, ৩০ জানুয়ারি, ২০২১
নমস্কার,
সবার আগে প্রফেসার ক্লস শ্বাব আর ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের পুরো টিমকে অভিনন্দন জানাই। বিশ্ব অর্থনীতির এই গুরুত্বপূর্ণ মঞ্চকে আপনারা এই কঠিন সময়েও সজীব রেখেছেন। এই সময়ে যখন সব থেকে বড় প্রশ্ন হলো বিশ্ব অর্থনীতি কিভাবে এগোবে, সকলের নজর এই ফোরামের দিকে থাকা অত্যন্ত স্বাভাবিক।
বন্ধুগণ,
সমস্ত আকাঙ্খার মাঝে আজ আমি আপনাদের সকলের সামনে ১৩০ কোটি থেকেও বেশি ভারতবাসীর পক্ষ থেকে বিশ্বের জন্য বিশ্বাস, ইতিবাচকতা আর আশার বার্তা নিয়ে এসেছি। যখন করোনা এসেছিল, তখন ভারতের সামনে সমস্যার পাহাড় ছিল। আমার মনে পড়ে, গত বছর ফেব্রুয়ারি, মার্চ, এপ্রিলে বিশ্বের অনেক বিখ্যাত অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞ এবং বড় বড় সংস্থাগুলি ভারত সম্পর্কে কী বলেছিল। তাঁরা ভবিষ্যদ্বানী করেছিলেন, গোটা বিশ্বে সবচাইতে বেশি করোনা সংক্রমণ হবে ভারতে। ভারতে করোনার সুনামি আসবে। কেউ বললেন ৭০/৮০ কোটি ভারতীবাসীর করোনা হবে, আবার কেউ বলেন ২ মিলিয়ন মানুষের মৃত্যু হতে পারে।
বিশ্বের বড় বড় এবং আধুনিক স্বাস্থ্য পরিকাঠামো সম্পন্ন দেশের সেই সময়ে যে অবস্থা ছিল তা দেখে ভারতের মতো উন্নয়নশীল দেশের জন্য বিশ্ববাসীর দুশ্চিন্তা অত্যন্ত স্বাভাবিক ছিল। আপনারা আন্দাজ করতে পারেন তখন আমাদের মনের অবস্থা কেমন ছিল। কিন্তু ভারত তার জনগণের মনে নিরাশা ছেয়ে যেতে দেয়নি। ভারত সক্রিয়ভাবে গণ অংশীদারিত্বের দৃষ্টিকোণ নিয়ে এগিয়ে গেছে।
আমরা নির্দিষ্টভাবে কোভিড প্রতিরোধী স্বাস্থ্য পরিকাঠামো গড়ে তোলার ওপর জোর দিই। আমরা আমাদের মানব সম্পদকে করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য প্রশিক্ষিত করি। টেস্টিং এবং ট্র্যাকিং-এর জন্য অত্যাধুনিক প্রযুক্তি কাজে লাগাই।
এই লড়াইয়ে ভারতের প্রত্যেক ব্যক্তি ধৈর্য সহকারে কর্তব্য পালন করেছেন। করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে একটি গণ আন্দোলনের রূপ দিয়েছে। আজ ভারত বিশ্বের সেই দেশগুলির অন্যতম যে দেশে অধিকাংশ নাগরিকের জীবন রক্ষায় সাফল্য এসেছে আর করোনা সংক্রমিত মানুষের সংখ্যাও নিয়ন্ত্রণের বাইরে যায়নি। যেভাবে প্রভূ স্যার বলেছেন, এখন সংক্রমিত মানুষের সংখ্যা দ্রুত গতিতে হ্রাস পাচ্ছে।
বন্ধুগণ,
ভারতের সাফল্যকে অন্য কোনো দেশের সাফল্যের তুলনায় পরিমাপ করা উচিত হবে না। যে দেশে বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ১৮ শতাংশ বসবাস করেন, সে দেশ করোনাকে কার্যকরভাবে নিয়ন্ত্রণ করে গোটা বিশ্বকে, সমগ্র মানবতাকে বড় বিপর্যয় থেকে বাঁচিয়েছে।
করোনা শুরু হওয়ার সময় মাস্ক পিপিই কিট, টেস্ট কিট আমরা বিদেশ থেকে আমদানি করতাম। আজ আমরা নিজেদের দেশে এগুলি উৎপাদনের মাধ্যমে নিজেদের প্রয়োজন পুরো করে বিদেশেও রপ্তানি করার মাধ্যমে মানবতার সেবাও করছি। আর আজ ভারতেই বিশ্বে সর্ববৃহৎ করোনার টিকাকরণ কর্মসূচী শুরু হয়েছে।
প্রথম পর্যায়ে আমরা আমাদের ৩ কোটি স্বাস্থ্য এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে অগ্রণী কোভিড যোদ্ধাদের টিকাকরণ করাচ্ছি। ভারতে কী হারে টিকাকরণ হচ্ছে তা পরিসংখ্যান দিলেই বুঝতে পারবেন। মাত্র ১২ দিনে ভারত ২.৩ মিলিয়ন থেকেও বেশি স্বাস্থ্যকর্মী ও অন্যান্য ক্ষেত্রে অগ্রণী কোভিড যোদ্ধাদের টিকাকরণ সম্পূর্ণ করেছে। আগামী কয়েক মাসে আমরা আমাদের প্রায় ৩০ কোটি সিনিয়র সিটিজেন এবং কোমর্বিডিটি রোগীদের টিকাকরণের লক্ষ্য বাস্তবায়িত করবো।
বন্ধুগণ,
সর্বে সন্তু নিরাময়া – গোটা বিশ্ব সুস্থ থাকুক; ভারতের এই কয়েক হাজার বছরের পুরোনো প্রার্থনা, এই দর্শন মেনে এই সঙ্কটকালে ভারত গোড়া থেকেই তার আন্তর্জাতিক দায়িত্ব পালন করছে। যখন বিশ্বের অনেক দেশে আকাশ পথে যাত্রা বন্ধ ছিল, তখন ১ লক্ষেরও বেশি বিদেশী নাগরিককে তাঁদের দেশে পৌঁছে দেওয়ার পাশাপাশি ভারত ১৫০টিরও বেশি দেশে প্রয়োজনীয় ঔষধ ও স্বাস্থ্য সরঞ্জাম পাঠিয়েছে। অনেক দেশের স্বাস্থ্যকর্মীদের ভারতে অনলাইন প্রশিক্ষণ দিয়েছে। ভারতের পরম্পরাগত চিকিৎসা পদ্ধতি – আয়ুর্বেদ কিভাবে রোগ প্রতিরোধ ক্ষেত্রে সহায়ক হয়ে উঠতে পারে সে বিষয়ে আমরা বিশ্ববাসীকে পথ দেখিয়েছি।
আজ ভারত কোভিডের টিকা পৃথিবীর অনেক দেশে পাঠিয়ে, সেসব দেশের টিকাকরণের পরিকাঠামো গড়ার কাজে সাহায্য করে অন্যান্য দেশেরও মানুষদেরও জীবন বাঁচাচ্ছি। আর এটা শুনে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের সমস্ত সদস্যরা খুশি হবেন এখন বিশ্বে কেবলমাত্র দুটি ভারতে তৈরি করোনা টিকা দেওয়া হচ্ছে। আগামী দিনে আরও অনেক টিকা ভারতেই তৈরি হতে চলেছে। এই টিকাগুলি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আরও বেশি পরিমাণে দ্রুত গতিতে সাহায্য করতে সফল হবে।
ভারতের সাফল্যের এই চিত্র, ভারতের সামর্থের এই চিত্র তুলে ধরে অর্থনৈতিক বিশ্বকে আমি আশ্বস্ত করছি, অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেও পরিস্থিতি দ্রুত গতিতে উন্নত হবে। করোনার সময়েও ভারত পরিকাঠামো ক্ষেত্রে লক্ষ কোটি টাকার প্রকল্প শুরু করে কর্মসংস্থানের জন্য বিশেষ প্রকল্প শুরু করে অর্থনৈতিক গতিবিধি জারি রেখেছে। তখন আমরা একেক জনের জীবন বাঁচানোর দিকে জোর দিয়েছিলাম। এখন ভারতের প্রত্যেক মানুষের জীবন দেশের উন্নয়নের জন্য উৎসর্গীকৃত।
এখন ভারত আত্মনির্ভর হয়ে ওঠার সংকল্প নিয়ে এগিয়ে চলেছে। ভারতের আত্মনির্ভরতার এই আকাঙ্খা বিশ্বায়নকে নতুনভাবে শক্তিশালী করবে। আর আমি স্থিরনিশ্চিত, এই অভিযান ‘ইন্ডাস্ট্রি ফোর পয়েন্ট জিরো’ থেকেও অনেক বড় সহায়তা পাবে। এর পেছনে যেমন কারণ রয়েছে, এই ভরসার ভিত্তিও রয়েছে।
বন্ধুগণ,
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ‘ইন্ডাস্ট্রি ফোর পয়েন্ট জিরো’-র চারটি মুখ্য উপাদান থাকবে। উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা, অটোমেশন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা মেশিন লার্নিং এবং রিয়েলটাইম ডেটা। আজ ভারত বিশ্বের সেই দেশগুলির অন্যতম যেখানে সব চাইতে কম দামে ডেটা পাওয়া যায়, যেখানে দূর দূরান্তের প্রতিটি অঞ্চলে মোবাইল ফোন সংযোগ পাওয়া যায়, স্মার্ট ফোন রয়েছে। ভারতের অটোমেশন, নকশার বিশেষজ্ঞদের সংখ্যাও অনেক বড় আর অধিকাংশ আন্তর্জাতিক কোম্পানিগুলির ইঞ্জিনিয়ারিং সেন্টারগুলি ভারতেই রয়েছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা মেশিন লার্নিং-এর ক্ষেত্রে ভারতের সফটওয়ার ইঞ্জিনিয়াররা অনেক বছর ধরেই নিজেদের সামর্থের মাধ্যমে বিশ্ববাসী তথা মানবতার সেবা করে আসছেন।
বন্ধুগণ,
বিগত ৬ বছরে ভারতে যেভাবে ডিজিটাল পরিকাঠামো গড়ে তোলার কাজ হয়েছে তা ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের বিশেষজ্ঞদের জন্যও একটি গবেষণার বিষয়। এই পরিকাঠামো ডিজিটাল সলিউশনগুলিকে ভারতের জনগণের দৈনন্দিন জীবনের অংশ করে তুলেছে। আজ ভারতে ১৩০ কোটিরও বেশি মানুষের কাছে ইউনিভার্সাল আইডি বা আধার কার্ড রয়েছে। জনগণের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট এবং ইউনিভার্সাল আইডি তাদের মোবাইল ফোনের সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়েছে। কেবলমাত্র গত ডিসেম্বর মাসেই ভারতে চার ট্রিলিয়ন টাকা লেনদেন ইউপিআই-এর মাধ্যমে হয়েছে। দেশের ব্যাঙ্কিং সেক্টরে যাঁরা রয়েছেন তাঁরা জানেন, কিভাবে বিশ্বের বড় বড় দেশ ভারতের প্রযুক্তিবিদদের দ্বারা তৈরি ইউপিআই ব্যবস্থাকে নিজেদের দেশে চালু করার চেষ্টা করছে।
বন্ধুগণ,
আমরা এটাও দেখেছি, যে করোনা সঙ্কটের সময় অনেক দেশ দুশ্চিন্তায় ছিল – কিভাবে তাদের নাগরিকদের কাছে আর্থিক সাহায্য পৌঁছে দেবে? আপনারা শুনে চমকে যাবেন, সেই সময় ভারত ৭৬ কোটিরও বেশি নাগরিকের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ১.৮ ট্রিলিয়ন থেকেও বেশি টাকা সরাসরি জমা করেছে। এটি ভারতের শক্তিশালী ডিজিটাল পরিকাঠামো শক্তির উদাহরণ। আমাদের ডিজিটাল পরিকাঠামো গণ সরবরাহ ব্যবস্থাকেও দক্ষ করে তুলেছে। আর স্বচ্ছতাও বাড়িয়েছে। এখন ভারত তার ১৩০ কোটি নাগরিকের স্বাস্থ্য পরিষেবা আরও সহজ করে তুলতে ইউনিক হেল্থ আইডি দেওয়ার অভিযানও শুরু করছে।
বন্ধুগণ,
আমি আজ এই প্রতিষ্ঠিত ফোরামে সবাইকে আশ্বস্ত করতে চাই, ভারতের প্রতিটি সাফল্য, গোটা বিশ্বের সাফল্যের সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। আজ আমরা যে আত্মনির্ভর ভারত অভিযান চালু করেছি এতেও আন্তর্জাতিক পণ্য পরিবহণ এবং আন্তর্জাতিক সরবরাহ শৃঙ্খলের প্রতি সম্পূর্ণ দায়বদ্ধতা রয়েছে। ভারতের আন্তর্জাতিক সরবরাহ শৃঙ্খলকে শক্তিশালী করার সামর্থ রয়েছে, ক্ষমতাও রয়েছে; আর সব চাইতে বড় কথা হলো বিশ্বস্ততাও রয়েছে। আজ ভারতে অনেক বড় উপভোক্তা ভিত্তি রয়েছে। আর এটি যত বিস্তারিত হবে, বিশ্ব অর্থনীতি ততই লাভবান হবে।
বন্ধুগণ,
প্রফেসর ক্লজ শ্বাব কখনো বলেছিলেন, ভারত সম্ভাবনাপূর্ণ আন্তর্জাতিক খেলোয়াড়। আমি আজ তাঁর সঙ্গে জুড়বো, ভারত অনেক সম্ভাবনার পাশাপাশি আত্মবিশ্বাসে পরিপূর্ণ, নতুন প্রাণশক্তিতে ভরপুর। বিগত বছরগুলিতে ভারত সংস্কার এবং ‘ইনসেনটিভস বেসড স্টিমুলাস’ গঠনে অনেক জোর দিয়েছে।
করোনা এই সময়েও ভারত প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে গঠনগত সংস্কারের গতি দ্রুত করেছে। এই সংস্কারগুলিকে ‘প্রোডাকশন লিঙ্কড ইনসেনটিভস’ এর মাধ্যমে সাহায্য করা হচ্ছে। এখন ভারতে কর ব্যবস্থা থেকে শুরু করে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ নিয়মাবলী পর্যন্ত সবই অনুমেয় এবং পরিবেশবান্ধব।
ভারতে ‘ইজ অফ্ ডুইং বিজনেস’-এর পরিস্থিতি দ্রুত উন্নয়নের লক্ষ্যেও অনেক কাজ চলছে। আরেকটি বিশেষ বিষয় হল ভারত তার উন্নয়নকে আবহাওয়া পরিবর্তন রোধের লক্ষ্যের সঙ্গে দ্রুত গতিতে সমানতালে মেলাতে পারছে।
বন্ধুগণ,
‘ইন্ডাস্ট্রি ফোর পয়েন্ট জিরো’ নিয়ে শুরু হওয়া এই আলোচনার মাঝে আমাদের আরেকটা কথা মনে রাখতে হবে, করোনা সঙ্কট আমাদের মানবিকতার মূল্যবোধগুলিকে আরেকবার মনে করিয়ে দিয়েছে। আমাদের মনে রাখতে হবে ‘ইন্ডাস্ট্রি ফোর পয়েন্ট জিরো’-ও রোবটের জন্য নয়, মানুষের জন্য। আমাদের এটা সুনিশ্চিত করতে হবে যে প্রযুক্তি যেন কোনো ফাঁদ না হয়ে ওঠে, ইজ অফ্ লিভিং -এর সরঞ্জাম হয়ে ওঠে। এক্ষেত্রে আমাদের সবাইকে মিলেমিশে কাজ করতে হবে। আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস, আমরা এক্ষেত্রে সফল হবো।
এই বিশ্বাস নিয়ে আমি এই প্রশ্নোত্তর পর্বের দিকে এগিয়ে যেতে চাইবো। চলুন এগোই….
ধন্যবাদ!
***
CG/SB/SKD
Speaking at the @wef’s #DavosAgenda. https://t.co/p6Qc9P0QNL
— Narendra Modi (@narendramodi) January 28, 2021
We are fighting the pandemic in India and strengthening the global efforts against COVID-19. #DavosAgenda pic.twitter.com/DTTQOACJVT
— Narendra Modi (@narendramodi) January 28, 2021
Solving major problems through technological solutions. #DavosAgenda pic.twitter.com/TGGacLmQz3
— Narendra Modi (@narendramodi) January 28, 2021