Search

পিএমইন্ডিয়াপিএমইন্ডিয়া

সাম্প্রতিক সংবাদ

বিষয়টিকে সরাসরি পিআইবি থেকে নেওয়া হয়েছে

ওড়িশায় অষ্টাদশ প্রবাসী ভারতীয় দিবস সম্মেলনের উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী


নয়াদিল্লি, ৯ জানুয়ারি, ২০২৫

 

প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী আজ ওড়িশার ভুবনেশ্বরে অষ্টাদশ প্রবাসী ভারতীয় দিবস সম্মেলনের উদ্বোধন করলেন। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা প্রতিনিধিদের স্বাগত জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী এই প্রত্যয় ব্যক্ত করেন যে এই অনুষ্ঠানের উদ্বোধনী সঙ্গীত ভবিষ্যতে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে প্রবাসী ভারতীয়দের নানান অনুষ্ঠানে বেজে উঠবে। এই সঙ্গীতের জন্য গ্র্যামি পুরস্কারে সম্মানিত শিল্পী রিকি কেজ এবং তাঁর সহযোগীদের ভূয়সী প্রশংসা করেন প্রধানমন্ত্রী।

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি, ত্রিনিদাদ ও টোবাগোর মাননীয় প্রেসিডেন্ট ক্রিস্টাইন কার্লা কাঙ্গালুকে তাঁর আবেগপূর্ণ ভিডিও বার্তার জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারতের বিকাশের ছবি তিনি যে ভাষায় তুলে ধরেছেন, তা মুগ্ধ করেছে উপস্থিত সকলকে। শ্রী মোদী আরও বলেন, কয়েকদিনের মধ্যেই প্রয়াগরাজ-এ মহাকুম্ভ শুরু হবে। মকর সংক্রান্তি, লোহরি, পোঙ্গল এবং মাঘ বিহু সমাগতপ্রায়। ১৯১৫-র এই দিনেই মহাত্মা গান্ধী দীর্ঘ প্রবাসের পর ভারতে ফিরেছিলেন বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। এই প্রবাসী ভারতীয় দিবস আরও একটি কারণে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ বলে প্রধানমন্ত্রী জানান। এ প্রসঙ্গে তিনি কয়েকদিন পরেই প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ীর জন্ম শতবর্ষের কথা বলেন – যাঁর দৃষ্টিভঙ্গী প্রবাসী ভারতীয় দিবসের ক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। ভারত, ভারতীয়ত্ব, সংস্কৃতি এবং বিকাশের উদযাপনের পাশাপাশি নিজের মূলের সঙ্গে সংযোগ রক্ষায় এই উদযাপন এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে বলে প্রধানমন্ত্রী মনে করেন।

যে ওড়িশায় এই আয়োজন হয়েছে, সেখানে রয়েছে ভারতের সমৃদ্ধ ঐতিহ্যের প্রতিফলন – এই মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী উদয়গিরি ও খণ্ডগিরির ঐতিহাসিক গুহা, কোনারকের বিখ্যাত সূর্য মন্দিরের পাশাপাশি প্রাচীন বন্দর তাম্রলিপ্তি, মাণিকপাটনা এবং পালুর-এর কথা বলেন। তিনি আরও বলেন, বহু আগে ওড়িশার বণিকরা সমুদ্র পাড়ি দিয়ে পৌঁছে যেতেন বালি, সুমাত্রা কিংবা জাভায়। ওড়িশার ঐতিহাসিক স্থান ধৌলি শান্তির বার্তা দেয়। সারা বিশ্ব যেখানে অস্ত্রবলে শক্তি প্রদর্শন করে, সেখানে সম্রাট অশোক শান্তির পথ বেছে নিয়েছিলেন বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। এই ভাবধারার সুবাদেই ভারত বিশ্বকে এই বার্তা দেয় যে ভবিষ্যতের প্রাণভোমরা রয়েছে বুদ্ধের শিক্ষায়, যুদ্ধে নয়।

প্রধানমন্ত্রী আবারও বলেন যে প্রবাসী ভারতীয়দের তিনি বরাবরই ভারতের দূত হিসেবে ভেবে থাকেন। তাঁদের কাছ থেকে যে ভালোবাসা তিনি পেয়েছেন, তা কখনও ভোলার নয়। বিগত এক দশকে তাঁর সঙ্গে বৈঠক হয়েছে অনেক বিশ্বনেতার এবং তাঁরা প্রবাসী ভারতীয়দের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন বলে প্রধানমন্ত্রী জানান।

ভারত শুধুমাত্র গণতন্ত্রের ধাত্রীভূমি নয়, ভারতীয় জীবনের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত গণতন্ত্রের চেতনা – আবারও এই মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রবাসী ভারতীয়রা নিজের নিজের কর্মস্থলে সেখানকার বিকাশে অবদান রাখার পাশাপাশি, নিজের দেশের প্রতিও দায়িত্ব পালন করেছেন একনিষ্ঠভাবে।

একবিংশ শতকের ভারতে বিকাশের অতুলনীয় গতির উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই সময়ে ২৫ কোটি মানুষকে দারিদ্র্যসীমার ওপরে নিয়ে আসা সম্ভব হয়েছে এবং বড় অর্থনীতির দেশগুলির তালিকায় ভারতের স্থান উঠে এসেছে দশম থেকে পঞ্চম স্থানে। শীঘ্রই ভারত বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি হয়ে উঠবে বলে প্রধানমন্ত্রী প্রত্যয়ী।

ভারতের সাফল্যের প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী চন্দ্রযান অভিযান কিংবা ডিজিটাল ইন্ডিয়ার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির কথা তুলে ধরেন। পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি, উড়ান, বৈদ্যুতিন যানের প্রসার, মেট্রো রেলপথ কিংবা বুলেট ট্রেন প্রকল্প নতুন ভারতের ছবি তুলে ধরে বলে তিনি মনে করেন। শ্রী মোদী আরও বলেন, ভারত এখন “মেড ইন ইন্ডিয়া” যুদ্ধবিমান ও পরিবহণ বিমান তৈরি করছে। আগামীদিনে প্রবাসী ভারতীয় দিবসের অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিতরা আসবেন এই “মেড ইন ইন্ডিয়া” বিমানে চেপে।

একের পর এক সাফল্যের শিখর স্পর্শ করা ভারত শুধু নিজের নয়, বিশ্বের দরিদ্র দেশগুলির অর্থাৎ, গ্লোবাল সাউথ-এর স্বরকেও বিশ্বের আঙিনায় তুলে ধরতে উদ্যোগী বলে আবারও মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, জি-২০-তে আফ্রিকান ইউনিয়নকে অন্তর্ভুক্ত করায় ভারতের উদ্যোগ মানবতাকে অগ্রাধিকার দেওয়ার নীতিকে তুলে ধরে।

সারা বিশ্বে ভারতীয়দের পেশাদারি দক্ষতা স্বীকৃত বলে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী প্রবাসী ভারতীয় সম্মান প্রাপকদের অভিনন্দন জানান। তিনি আরও বলেন, প্রবাসী ভারতীয়দের নিরাপত্তা এবং কল্যাণের প্রশ্নে নতুন দিল্লি দায়বদ্ধ। বিভিন্ন দেশে ভারতীয় দূতাবাস সেই লক্ষ্যে কাজ করে চলেছে। আগে ভারতীয় দূতাবাসের পরিষেবা পেতে বহুদিন অপেক্ষা করতে হত এবং বহুদূর যেতে হত। কিন্তু এখন ছবিটা পালটে যাচ্ছে। বিগত দু’বছরে ১৪টি নতুন ভারতীয় দূতাবাস ও বাণিজ্য দূতাবাস খোলা হয়েছে। মরিশাসের সপ্তম প্রজন্ম এবং সুরিনাম, মার্তিনিক ও গুয়াদেলুপ-এর ষষ্ঠ প্রজন্মের ভারতীয় বংশোদ্ভূতরা ওসিআই কার্ডের সুবিধা পাচ্ছেন।

বহুদিন আগে ভিনদেশে চলে যাওয়া ভারতীয়দের প্রসঙ্গ তাঁর ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানে উঠে এসেছে বলে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী এ সংক্রান্ত দলিল রক্ষা করার আহ্বান জানান।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আধুনিক ভারত বিকাশ ও ঐতিহ্য রক্ষার মন্ত্র নিয়ে চলেছে। জি-২০-র সভাপতিত্বের সময় এ দেশে এ সংক্রান্ত নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ভারতের সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী কাশী তামিল সঙ্গমম, কাশী তেলুগু সঙ্গমম কিংবা সৌরাষ্ট্র তামিল সঙ্গমম-এর কথা তুলে ধরেন।

ভারতের বিভিন্ন ঐতিহ্যপূর্ণ অঞ্চলকে সংযুক্ত করায় বিভিন্ন উদ্যোগের প্রসঙ্গ উঠে আসে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণে। এ প্রসঙ্গে তিনি রামায়ণ এক্সপ্রেস, ভারত গৌরব ট্রেন ও বন্দে ভারত ট্রেনের কথা বলেন। বিশেষ প্রবাসী ভারতীয় এক্সপ্রেস ট্রেনের প্রায় ১৫০ আরোহী ১৭টি জায়গায় পৌঁছে যেতে পারবেন বলে প্রধানমন্ত্রী জানান।

স্বাধীনতালাভের ক্ষেত্রে প্রবাসী ভারতীয়দের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী জানান, ২০৪৭ নাগাদ ভারতকে উন্নত দেশ করে তোলার লক্ষ্যে কাজ চলছে জোরকদমে। এ প্রসঙ্গে তিনি গিফট সিটি পরিমণ্ডল সহ আরও নানা প্রকল্পের কথা বলেন।

তরুণ প্রবাসী ভারতীয়দের “ভারত কো জানিয়ে” ক্যুইজ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। “স্টাডি ইন ইন্ডিয়া” কিংবা আইসিসিআর বৃত্তি প্রকল্পের কথাও বলেন তিনি। ভারতের প্রকৃত ইতিহাস সারা বিশ্বের সামনে আরও তুলে ধরতে প্রবাসী ভারতীয়দের অনুরোধ জানিয়েছেন নরেন্দ্র মোদী।

পরিবেশ রক্ষায় ভারত সরকারের উদ্যোগ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী “মায়ের সম্মানে একটি গাছ” কর্মসূচির কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, এই কর্মসূচির তিনি সূচনা করেছিলেন গায়ানার প্রেসিডেন্টের সঙ্গে যৌথভাবে।

ভাষণের শেষে প্রধানমন্ত্রী সকলকে নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানান।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ওড়িশার রাজ্যপাল ডঃ হরি বাবু কাম্ভামপতি, মুখ্যমন্ত্রী শ্রী মোহন চরণ মানঝি, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শ্রী এস জয়শঙ্কর, শ্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব প্রমুখ।

অষ্টম প্রবাসী ভারতীয় সম্মেলন আয়োজিত হচ্ছে ওড়িশার ভুবনেশ্বরে ৮-১০ জানুয়ারি। এ বছরের থিম “বিকশিত ভারতের লক্ষ্যে প্রবাসী ভারতীয়দের অবদান”। ৫০টি দেশের প্রতিনিধিরা যোগ দিয়েছেন এই সম্মেলনে।

 

SC/AC/DM