Search

পিএমইন্ডিয়াপিএমইন্ডিয়া

সাম্প্রতিক সংবাদ

বিষয়টিকে সরাসরি পিআইবি থেকে নেওয়া হয়েছে

এন ডি এ সরকারের দ্বিতীয় বর্ষ পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত ‘এক নয়ী সুবহ’ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদীর ভাষণ

এন ডি এ সরকারের দ্বিতীয় বর্ষ পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত ‘এক নয়ী সুবহ’ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদীর ভাষণ


দেশবাসীদের আমার নমস্কার,

দু’বছর আগে আপনারা আমাদের একটি নতুন দায়িত্ব দিয়েছেন। গণতন্ত্রের এটাই মাহাত্ম্য, জনগণের দ্বারা নির্বাচিত সরকারের নিরন্তর পর্যালোচনা হওয়া উচিৎ। ত্রুটি-বিচ্যুতি হোক, ভালো কাজ হোক, সব কিছু নিয়েই আলোচনা-সমালোচনা হওয়া উচিৎ। আমাদের এই দু’বছরের শাসনকালের দিকে তাকিয়ে ভাবি, যেখানে পৌঁছতে চেয়েছিলাম, সেখানে কি পৌঁছতে পেরেছি? যেপথে পা বাড়িয়েছিলাম, যে উদ্দেশ্য নিয়ে পা বাড়িয়েছিলাম, তা কি পূরণ করতে পেরেছি?

আমি মনে করি, গত দু’বছরে কেবল সরকার নয়, দেশের মানুষের মনেও একটি নতুন আত্মবিশ্বাস জন্ম নিয়েছে। বিগত প্রায় ১৫ দিন ধরে সারা দেশে বিশিষ্টজনেরা কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিটি কাজকে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বিচার-বিশ্লেষণ করছেন। এই বিচার-বিশ্লেষণ থেকে আমরা যা জানতে পেরেছি, তা অত্যন্ত আনন্দের। দেশের জনসাধারণ যে প্রত্যাশা নিয়ে আমাদের দায়িত্ব দিয়েছিলেন প্রতিদিন তাঁদের উৎসাহ এবং আশীর্বাদ আমাদের আরও সমৃদ্ধ করে তুলছে। যাঁরা রাজনৈতিক কারণে বিরোধিতা করতে বাধ্য হন, তাঁদেরকে আমার কিছু বলার নেই, গণতন্ত্রে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু গত ১৫ দিনে দেশে দুটো চিন্তাধারা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে – একদিকে উন্নয়ন আর অন্যদিকে বিরোধিতা। এর মাঝে সাধারণ মানুষ দুধ আর জল আলাদা করে সত্যকে জেনে নিতে পারছেন।

যেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে আমি এখানে সে সমস্ত কিছু আবার বলতে চাই না। কিন্তু, গণতন্ত্রে মূল্যায়নের ক্ষেত্রে বাস্তবের ভিত্তিতে তথ্য নির্ভর মূল্যায়ন হওয়া উচিৎ। আমরা যদি ভুল কিছু করি, তা হলে অকারণে দেশের মানুষকে হতাশার গহ্বরে ঠেলে দেব। যে কোনও সরকারের মূল্যায়ন পূর্ববর্তী সরকারের কাজের তুলনায় নির্ধারিত হয়। আগে কী ছিল, আর এখন কত কাজ হয়েছে, তার তুলনামূলক বিশ্লেষণ চলছে। পূর্ববর্তী সরকারের সাফল্যকে অস্বীকার করে আমরা যদি সব কৃতিত্ব নিজেরাই নিতে চাই, তা হলে সেটা সঠিক মূল্যায়ন বলে বিবেচিত হবে না। আপনারা ভাবতে পারেন, আমরা দায়িত্ব নেওয়ার পরই হঠাৎ সুপ্রিম কোর্ট সমস্ত কয়লা খনির লাইসেন্স বাতিল করে দিয়েছিল, আর বিদ্যুৎ প্রকল্পগুলিতে কয়লার সঙ্কট একটি ভয়ানক পরিস্থিতি গড়ে তুলেছিল। কয়লা খনি দুর্নীতি দেশের সরকারেরসুনাম নষ্ট করেছিল।

দু’বছর আগে দেশের প্রতিটি সংবাদপত্র, টিভি চ্যানেল এবং নেতাদের ভাষণে প্রত্যেকদিন এই দুর্নীতি নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা হতো। আমরা দায়িত্ব নিয়েই দ্রুত নিলামের ব্যবস্থা করি, স্বচ্ছ পদ্ধতিতে কাজ করি, ফলস্বরূপ দেশের রাজকোষে লক্ষ-কোটি টাকা নিয়মিত আসতে শুরু করে, সংশ্লিষ্ট রাজ্যগুলির রাজকোষও সমৃদ্ধ হয়ে ওঠে। কিন্তু, এই প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে কেউই আঙুল তুলতে পারেননি। শুধু তাই নয়, এই কয়লা খনিগুলি যেহেতু অধিকাংশই আমাদের দেশের অরণ্য ও পার্বত্য অঞ্চলে রয়েছে, এই কয়লা খনিগুলি থেকে প্রাপ্ত টাকা ঐ অঞ্চলগুলিতে বসবাসকারী আদিবাসী মানুষদের কল্যাণে ব্যয় করা হচ্ছে।

একথা কেউ অস্বীকার করতে পারেন না যে, দুর্নীতি আমাদের দেশকে ভেতর থেকে কুরে কুরে খেয়েছে, সর্বনাশ করে দিয়েছে। আমাদের সকল স্বপ্নকে ভেঙে চুরমার করে দেওয়ার শক্তি রাখে যে ঘুণ পোকাটি তার নাম দুর্নীতি। আমরা এর বিরুদ্ধে লড়াই করতে গিয়ে দেখেছি, অদ্ভুত সব ব্যাপার। যে মেয়ের কখনও জন্মই হয়নি, দেশের সরকারের ফাইলে সেই মেয়ে বিধবা হয়ে যায়, আর সে বছরের পর বছর ধরে পেনশনও পায়। আমরা যখন ‘প্রত্যক্ষ নগদ হস্তান্তর প্রকল্প’-এর মাধ্যমে আমার ডাকে সাড়া দিয়ে যাঁরা গ্যাস সিলিন্ডারে ভর্তুকি ছেড়ে দিয়েছেন, তাঁদের ছেড়ে দেওয়া ভর্তুকি গরিবদের হস্তান্তর করার জন্য আধার কার্ড এবং জন ধন অ্যাকাউন্ট’কে সংযুক্ত করেছি, তখনই এরকম অসংখ্য ভুতুড়ে পেনশন প্রাপকের নাম খুঁজে পাই। এভাবে আপনাদের রক্তজল করা পয়সা থেকে দেওয়া কর নিয়ে গড়ে ওঠা রাজকোষের প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা আমরা বাঁচাতে পেরেছি।

কারও বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে ৫০ কোটি টাকা পেয়ে গেলে আমাদের দেশে খবরের কাগজে শিরোনাম হয়ে যায়। আমরা কোনও রকম তল্লাশি না চালিয়ে ১৫ হাজার কোটি টাকা বাঁচিয়েছি।

আপনারা শুনলে অবাক হবেন, যে রেশন কার্ডের মাধ্যমে গরিব মানুষ সস্তায় খাদ্যসামগ্রী ও কেরোসিন পান, ৩ টাকা, ২ টাকা, ১ টাকা কেজি দরে চাল পান, তার পেছনে ভারত সরকার প্রতি কেজিতে ২৭ টাকা ভর্তুকি দেয়। আমরা দায়িত্ব নেওয়ার পর সারা দেশে কোনও রকম তল্লাশি না চালিয়ে এখনও পর্যন্ত ১ কোটি ৬২ লক্ষেরও বেশি ভুতুড়ে রেশন কার্ড খুঁজে বের করেছি। সেই রেশন কার্ডগুলির মাধ্যমে ভর্তুকিপ্রাপ্ত খাদ্যসামগ্রী ও তেল গরিব মানুষের ঘরে না গিয়ে বেইমানদের ঘরে যেত।

হরিয়ানা সরকার জন ধন যোজনার সঙ্গে মোবাইল ফোন সংযোগ চালু করে প্রায় ৬ লক্ষ ভুতুড়ে কেরোসিন কার্ড খুঁজে পেয়েছে, যারা নিয়মিত কেরোসিন তুলতো, আর সেই কেরোসিন ঘুরপথে ডিজেলে মিশিয়ে গাড়ির মালিকদের ঠকাতো। সাধারণ মানুষ দূষণের শিকার হতেন। তাছাড়া, এই ভর্তুকিপ্রাপ্ত তেল ঘুরপথে বিভিন্ন রাসায়নিক কারখানায় চলে যেত। এই দুর্নীতির মোকাবিলা করে কেবল একটি রাজ্য প্রায় ৫৪০ কোটি টাকা বাঁচাতে পেরেছে। এরকমই দেশের বিভিন্ন রাজ্যে ভুতুড়ে শিক্ষকরা প্রতি মাসে বেতন পান, ভূতুড়ে ছাত্রছাত্রীরা স্কুলের পোশাক ও মধ্যাহ্নকালীন আহার পায়। আমরা এই ভূতদের হাত থেকেও দেশের অর্থনীতিকে রক্ষা করার চেষ্টা করছি। ইতিমধ্যেই প্রায় ৩৬ হাজার কোটি টাকা দুর্নীতির কবল থেকে উদ্ধার করতে পেরেছি। এই টাকাটা এক বছরের প্রচেষ্টায় বাঁচানো গেছে, প্রতি বছর এর থেকেও বেশি টাকা বাঁচবে, এখন তো সবে শুরু মাত্র; এক নতুন প্রভাতের সূচনা।

কেউ কেউ বলেন, “মোদীজী আপনি এতো পরিশ্রম করেন, এতো কাজ করেন, তবু লোকে এতো বিরোধিতা করেন কেন? আপনি নিজের কৌশলঠিক করুন, সংবাদ-মাধ্যমের সঙ্গে কথা বলুন”। আমি বলি, ভাই, যাঁদের পকেটে বছরে কমপক্ষে ৩৬ হাজার কোটি টাকা যেত, যে মোদী তাঁদের এই উপার্জন বন্ধ করে দিয়েছে, তাকে তাঁরা গালি দেবে না তো কী করবে? আমার কারণে এই লুন্ঠনকারীদের কত অসুবিধা হচ্ছে সেটা আমি ভালোভাবেই বুঝতে পারি। গত দু’বছরে আমরা এমন কিছু যথাযথ উদ্যোগ নিয়েছি, যার সুফল আজ পাওয়া যাচ্ছে।

আপনারা ভাবুন, আগে এলইডি বাল্ব কত টাকায় বিক্রি হতো? যে বাল্বগুলি আগে ২০০, ২৫০, ৩০০ টাকায় বিক্রি হতো, সেগুলি এখন সারা দেশে ৬০, ৭০, ৮০ টাকায় পাওয়া যায়। কিভাবে সেটা সম্ভব হল? আমরা যদি দেশের কোথাও ২ লক্ষ কোটি টাকা খরচ করে বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র গড়ে তোলার কথা ঘোষণা করতাম, তা হলে দেশের অর্থনীতি বিষয়ক সংবাদপত্রগুলিতে সমালোচনার শিরোনাম হতো ‘মোদীর অলীক কল্পনা’ বা ‘মোদীর অবাস্তব কল্পনা’। কিন্তু আমরা এল ই ডি বাল্ব সংক্রান্ত প্রচারাভিযান চালিয়ে দেশের ৫০০টি শহরে সম্পূর্ণ রূপে এল ই ডি বাল্ব পৌঁছে দিতে পেরেছি। কয়েকটি শহরে এখনও কিছু কাজ বাকি আছে। এই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হলে সারা দেশে প্রায় ২০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সাশ্রয় হবে। এই সাশ্রয় একটি ১ লক্ষ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে বিদ্যুৎ কারখানা গড়ে তোলার সমার্থক বিবেচিত হবে। কই এটা নিয়ে তো কেউ লেখেন না! ৬০-৭০ টাকা দামের এল ই ডি বাল্ব কী সংবাদের শিরোনাম হতে পারে? আগে নির্বাচনের বিষয় হতো বছরে পরিবার পিছু ৯টি গ্যাস সিলিন্ডার দেওয়া হবে নাকি ১২টি দেওয়া হবে। ৯টির জায়গায় ১২টি সিলিন্ডার দেওয়ার কথা ঘোষণা করে ভোট চাওয়া হতো। সেদিনের কথা ভাবুন, যখন দেশের প্রত্যেকে সংসদ সদস্য ২৫টি রান্নার গ্যাস সিলিন্ডারের কুপন পেতেন, সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর মাননীয় সদস্যরা তাঁদের সঙ্গীসাথী-সমর্থকদের গ্যাস সিলিন্ডার উপহার দিতে পারতেন। আমার মনে আছে, আমেদাবাদ বিমানবন্দরে একজন আধিকারিক আমাকেও অনুরোধ করেছিলেন, কোনও সাংসদের মাধ্যমে তাঁর সদ্যবিবাহিত ছেলের আলাদা সংসারের জন্য একটি রান্নার গ্যাস সিলিন্ডারের কুপন জোগাড় করে দিতে। তিনি এক বছর ধরে অনেক সাংসদকে অনুরোধ করেও সাফল্য পাননি। আমি ৫-১০ বছর আগের কথাই বলছি। কিন্তু আমরা দায়িত্ব গ্রহণ করার পর, এমনই কথায় কথায় দেশের সম্পন্ন মানুষদের অনুরোধ করেছিলাম যাতে রান্নার গ্যাসে ভর্তুকি ছেড়ে দেন। আর আমি ১ কোটি ১৩ লক্ষ দেশবাসীকে বিনম্রচিত্তে শ্রদ্ধা জানাই যে, তাঁরা আমার আহ্বানে সাড়া দিয়েছেন। এটাকে কী পরিবর্তন বলবেন না? সাধারণ মানুষের মনে কত পরিবর্তন এসেছে। দেশের উন্নয়নের জন্য সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণের এর থেকে বড় উদাহরণ আর কি হতে পারে? আমরা ইতিমধ্যেই তাঁদের ছেড়ে দেওয়া ভর্তুকি প্রাপ্ত সিলিন্ডারগুলি দেশের গরিব মানুষদের কাছে পৌঁছে দিয়েছি। আমরা জানি, যে গরিব মা কাঠের উনুনে রান্না করেন, একদিনে ৪০০টি সিগারেটের ধোঁয়ার বিষ তাঁর শরীরে যায়। আমরা ইতিমধ্যেই ৩ কোটিরও বেশি দরিদ্র পরিবারকে ভর্তুকিপ্রাপ্ত গ্যাস সিলিন্ডার পৌঁছে দিয়েছি। স্বাধীন ভারতে এক বছরে এত সিলিন্ডার কোনও দিনই জনগণের কাছে পৌঁছয়নি। কিন্তু সরকার যদি সত্যি সত্যিই দেশের মানুষের জন্য কাজ করতে চায়, তা হলে কেমন দ্রুতগতিতে কত বড় মাত্রায় কাজ করতে পারে, তার উদাহরণ এই ঘটনা।

কোনও বছর ভালো ফসল না হলে, আমরা কত সহজে বলে দিই যে, এই বছর ভালো বৃষ্টি হয়নি। কিন্তু, একথা কেউ বলেন না, আমরা ইতিমধ্যেই ধরিত্রী মায়ের কতটা সর্বনাশ করে রেখেছি। আমরা এই সমস্যা সমাধানের জন্য ‘মৃত্তিকা স্বাস্থ্য কার্ড’ প্রচলনের আন্দোলন শুরু করেছি। মাটির স্বাস্থ্য কেমন, কী ত্রুটি রয়েছে, কী গুণ রয়েছে, কোন মাটি কোন ফসলের অনুকূল, কোন ওষুধ ও সার দিতে হবে – এই সবকিছু লেখা থাকবে মৃত্তিকা স্বাস্থ্য কার্ডে। চিকিৎসকরা যেমন রক্ত ও প্রস্রাব পরীক্ষার মাধ্যমে রোগ নির্ণয় করে চিকিৎসা শুরু করেন, একইভাবে মৃত্তিকা স্বাস্থ্য কার্ড-এর মাধ্যমে কৃষকরা বুঝতে পারবেন, কোন ফসল উৎপাদনে তাঁরা লাভবান হবেন।

এগুলি বলার তাৎপর্য হল, দেশের সাধারণ মানুষের জীবনে পরিবর্তন আনতে আমার সরকার এমনই অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ শুরু করেছে। গণতন্ত্রের প্রথম শর্ত হল, শাসকের হৃদয়ে সাধারণ মানুষের প্রতি অপ্রতিম বিশ্বাস ও ভরসা থাকা চাই। এটাই সবচেয়ে বড় পুঁজি। কিন্তু, আমাদের দেশে সরকার কেন যে সাধারণ মানুষকে অবিশ্বাস করে! আমি একদিন আয়কর বিভাগের আধিকারিকদের মিটিং-এ বলেছিলাম যে, আপনারা ব্যবসায়ীদের চোর ভেবে কাজ শুরু করলে কেমন করে চলবে? এই পদ্ধতি ভুল, এই ভাবনাটাই ভুল। আমরা এসব ক্ষেত্রেও পরিবর্তন আনতে সক্ষম হয়েছি।

এতদিন আমাদের দেশে চাকরি বা অন্যান্য ক্ষেত্রে সরকারি দপ্তরে দরখাস্ত জমা দিতে হলে যুবক-যুবতীদের মার্কশিট, শংসাপত্রের ফটোকপি ও অন্যান্য সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র কোনও গেজেটেড অফিসার, বিধায়ক কিংবা সাংসদের দ্বারা প্রত্যয়িত করে জমা দেওয়া আবশ্যক ছিল। আমরা এই অবিশ্বাসের ক্ষেত্রে পরিবর্তন আনতে পেরেছি। এখন দরখাস্তকারী নিজেই নিজের শংসাপত্র ইত্যাদি প্রত্যয়িত করে দরখাস্ত জমা দিতে পারেন। নির্বাচিত হলে কাজে যোগ দেওয়ার সময় একবার আসল শংসাপত্র দেখিয়ে দিলেই হল। আমরা দেশের মানুষকে বিশ্বাস করি।

এই বিশ্বাস থেকেই দেশে পরিবর্তন এসেছে। আমি সেদিন রেল মন্ত্রী সুরেশ প্রভু’কে বলছিলাম যে, ঘোষণা করুন, অমুক দিন অমুক পথে রেলগাড়িতে একজনও টিকিট চেকার থাকবেন না। দেশের মানুষকে বিশ্বাস করে দেখুন! এভাবে আমরা চেষ্টা চালাচ্ছি, আমলাতন্ত্রের কবল থেকে দেশের মানুষকে কতটা মুক্ত রাখা যায়।

এটা গণতন্ত্র, এখানে সাধারণ মানুষেরই হওয়া উচিৎ সবচেয়ে ক্ষমতাবান। এই বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য আমরা একের পর এক পদক্ষেপ নিচ্ছি। আমরা একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছি, যে সিদ্ধান্ত দেশের নবীন প্রজন্মের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তা হল – চাকরির জন্য লিখিত পরীক্ষার পর যে ইন্টারভিউ দিতে হয় সেটা বাতিল করে দেব। কারণ, আমরা দেখেছি, এই সামান্য সময়ে ইন্টারভিউ নিয়ে কোনও ব্যক্তি সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় না। তা হলে চাকরির লিখিত পরীক্ষায় যিনি সফল হয়েছেন, সেই চাকরিপ্রার্থী ইন্টারভিউ নিয়ে এত কেন দুশ্চিন্তায় থাকবেন? তাঁকে কেন দালালদের সাহায্য নিতে হবে, তাঁকে কেন টেবিলের নীচ দিয়ে ঘুষ দিতে হবে? আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে, কেন্দ্রীয় সরকারের তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর শূন্য পদগুলিতে কর্মচারী নিয়োগের সময় আর কোনও ইন্টারভিউ হবে না। কম্পিউটারের মাধ্যমে মেধা তালিকা চূড়ান্ত করে চাকরিতে যোগদানের ব্যবস্থা করা হবে। এই সিদ্ধান্ত যদি ভুলও হয়, তবু ইন্টারভিউ’র নামে দেশে যে দুর্নীতি চলছে তা থেকে নবীন প্রজন্মের যুবক-যুবতীরা মুক্তি পাবে।

এটাই সবচেয়ে বড় পরিবর্তন যে, সরকার দেশে একটি বিশ্বাসের পরিবেশ গড়ে তুলতে পেরেছে। সাধারণ মানুষের আশা-আকাঙ্খা পূরণের সংকল্প নিয়ে নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছে। সরকারের দু’বছরের কাজ নিয়ে যদি আমাকে ভালো করে বলতে হয়, তা হলে সপ্তাহব্যাপী সারাদিন ধরে আমাকে দূরদর্শনে বক্তৃতা দিতে হবে। এত সাফল্য! কিন্তু এখানে আমি সাফল্যের কথা বলতে আসিনি, আমি আপনাদের আশ্বস্ত করতে চাই যে, দেশবাসী যে ভরসা নিয়ে আমাদের দায়িত্ব দিয়েছেন, আমরা তা সর্বান্তকরণে পালন করার চেষ্টা চালাচ্ছি। নিরন্তর পরিশ্রম করে যাচ্ছি। আর রাষ্ট্রহিতকে সবার উপরে রেখে, সাধারণ মানুষের স্বার্থকে সর্বোপরি প্রাধান্য দিয়ে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।

আমরা ‘টিম ইন্ডিয়া’র কল্পনাকে বাস্তবায়িত করতে চাই। রাজ্যগুলির সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করে যেতে চাই। কিন্তু, এটাও সত্যি, যারা এতদিন বেইমানির পয়সা খেয়ে এসেছেন, তাদের খুবই কষ্ট হচ্ছে। কারা খেয়েছেন, কবে খেয়েছেন, সেটা আমার আলোচনার বিষয় নয়। কিন্তু দেশের টাকা, গরিবের টাকা আমরা বেইমানদের হাতে চলে যেতে দেব না। এতে যারা কষ্ট পাবেন, তারা কষ্ট পাক, আমরা দেশের জন্য কাজ করে যাব। দেশের মানুষ আমাদের আশীর্বাদ দিতে থাকবেন। আমি আরেকবার এই অবকাশে আপনাদের সবার মাঝে আসার ও আমাকে কথা বলার সুযোগ দেওয়ার জন্য আপনাদের অনেক অনেক কৃতজ্ঞতা জানাই।

ধন্যবাদ।

PG/SB/SB/S