Search

পিএমইন্ডিয়াপিএমইন্ডিয়া

সাম্প্রতিক সংবাদ

বিষয়টিকে সরাসরি পিআইবি থেকে নেওয়া হয়েছে

উৎপাদন ভিত্তিক উৎসাহ ব্যবস্থা সম্পর্কিত ওয়েবিনারে প্রধানমন্ত্রীর মূল ভাষণের অনুবাদ

উৎপাদন ভিত্তিক উৎসাহ ব্যবস্থা সম্পর্কিত ওয়েবিনারে প্রধানমন্ত্রীর মূল ভাষণের অনুবাদ


নতুন দিল্লি, ০৫.০২.২০২১

নমস্কার!

এই গুরুত্বপূর্ণ ওয়েবিনারে ভারতের বিভিন্ন কোণ থেকে এত বিপুল সংখ্যায় আপনাদের অংশগ্রহণ থেকেই বোঝা যায় যে এই অনুষ্ঠান কতটা গুরুত্বপূর্ণ। আমি আন্তরিকভাবে আপনাদের স্বাগত জানাই। আপনারা জানেন যে এই বাজেটে বিভিন্ন খাতে বরাদ্দ অর্থের বাস্তবায়ন সম্পর্কে আমরা এবার চিন্তাভাবনা করে এক নতুন পরীক্ষা শুরু করেছি এবং তা সফল হলে ভবিষ্যতেও অনেক উপকার হতে পারে। এখনও পর্যন্ত এরকম বেশ কয়েকটি ওয়েবিনার করা হয়েছে। এই ওয়েবিনারগুলির মাধ্যমে আমি এই বিষয়ে বহু গণমান্য ব্যক্তির সঙ্গে আলোচনা করার সুযোগ পেয়েছি।

সারাদিন ধরে ওয়েবিনার হয়েছে এবং বাজেটে বিভিন্ন খাতে বরাদ্দ অর্থের যথাযথ বাস্তবায়নে পরিকল্পনা খসড়া তৈরি করতে আপনারা সকলে প্রচুর পরামর্শ দিয়েছেন। এসব দেখে এরকম মনে হচ্ছে যে আপনারা সরকারের থেকে ‘আরো দু-পা’ এগিয়ে যাওয়ার মানসিকতায় রয়েছেন। এটা আমার জন্য খুবই আনন্দের খবর এবং আমার বিশ্বাস যে আজকের এই আলোচনাতেও আমাদের এটাই চেষ্টা থাকবে যে দেশের বাজেট এবং নীতিমালা যেন কেবল একটি সরকারি প্রক্রিয়ায় পরিণত না হয়, দেশের উন্নয়নের সঙ্গে যুক্ত প্রত্যেক অংশীদারদের যেন এতে কার্যকরী ভূমিকা থাকে। সেই ধারা বজায় রেখেই আজ আপনাদের মতো গুরুত্বপূর্ণ বন্ধুরা, যাঁরা উৎপাদন খাতে- মেক ইন ইন্ডিয়াকে বাস্তবায়িত করেছেন তাঁদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। আমি আগেও বলেছি, গত কয়েক সপ্তাহে বিভিন্ন খাতের ব্যক্তিদের সঙ্গে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে, অনেক গুরুত্বপূর্ণ উদ্ভাবনী পরামর্শও পাওয়া গেছে। আজকের এই ওয়েবিনারে আমরা বিশেষভাবে উৎপাদন ভিত্তিক উৎসাহ ব্যবস্থা সম্পর্কে আলোচনা করব।

বন্ধুরা,
গত ৬-৭ বছরে বিভিন্ন পর্যায়ে ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’কে উদ্বুদ্ধ করতে অনেক সফল প্রচেষ্টা করা হয়েছে। তাতে আপনারা সকলে প্রসংশনীয় অবদান রেখেছেন। এবার এই প্রচেষ্টাকে পরবর্তী পর্যায়ে নিয়ে যেতে আরও বড় পদক্ষেপ নিতে হবে, নিজেদের গতি এবং কাজের মান আরও অনেক বাড়াতে হবে। এবং করোনাকালে গত এক বছরের অভিজ্ঞতার পর আমি নিশ্চিত যে এটা ভারতের জন্য কেবল একটি সুযোগই নয়, এটা বিশ্বের প্রতি ভারতের দায়িত্ব। আর সেজন্যই আমাদের দ্রুতগতিতে এই দিকে এগিয়ে যেতে হবে। আপনারা এটা খুব ভালো করে জানেন যে উৎপাদন কীভাবে অর্থনীতির প্রতিটি ক্ষেত্রকে রূপান্তরিত করতে পারে, কীভাবে তার প্রভাব তৈরি হয় এবং কীভাবে পণ্যের সঙ্গে যুক্ত পরিবেশতন্ত্র তৈরি হয়। আমাদের সামনে বিশ্বজুড়ে এমন অনেক উদাহরণ রয়েছে যেখানে বিভিন্ন দেশ নিজেদের উৎপাদন ক্ষমতা বাড়িয়ে উন্নয়নে গতি এনেছে। উৎপাদন ক্ষমতা বাড়লে দেশে  কর্মসংস্থানের সুযোগও বেড়ে যায়।

ভারতও এখন এই দৃষ্টিভঙ্গি নিয়েই দ্রুতগতিতে কাজ করতে চায়, এগিয়ে যেতে চায়। আমাদের সরকার এই খাতে উৎপাদনকে উৎসাহ দিতে একাধিক সংস্কার করেছে। আমাদের নীতি এবং কৌশল সবদিক থেকে স্পষ্ট। আমাদের উদ্দেশ্য হলো সরকারের প্রভাব নূন্যতম, প্রশাসনের সর্বোচ্চ এবং আমাদের আকাঙ্খা ‘শূন্য প্রভাব, শূন্য ত্রুটি’। বিশ্ববাজারে ভারতের সংস্থা এবং ভারতে উৎপাদিত পণ্যগুলিকে প্রতিযোগিতামূলক করে তুলতে আমাদের কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। বিশ্ববাজারে আমাদের পণ্যের মূল্য, পণ্যের গুণমান এবং তার কার্যকরীতার পরিচিতি তৈরি করতে একজোট হয়ে কাজ করতে হবে। আমাদের পণ্য উৎপাদনের সময় মাথায় রাখতে হবে তা যেন ব্যবহারকারী-বান্ধব, আধুনিক প্রযুক্তি সম্পন্ন, সাশ্রয়ী এবং টেকসই হয়। মূল পারদর্শিতার সঙ্গে যুক্ত খাতে বেশি করে উচ্চ পর্যায়ের প্রযুক্তি এবং বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে হবে। এবং এক্ষেত্রে নিশ্চিতভাবে আপনাদের সকলের সক্রিয় অংশগ্রহণের প্রয়োজন রয়েছে। সরকার এই লক্ষ্য নিয়েই আপনাদের সকলকে সঙ্গে নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে।  সেজন্যে বিভিন্ন স্তরে কাজ করা হচ্ছে, তা সে ব্যবসা-বাণিজ্যের স্বাচ্ছন্দ্যে জোর দেওয়া হোক, অনুবর্তিতার বোঝা কমানো হোক, পণ্য সরবরাহের ব্যয় কম করতে বহু স্তরের পরিকাঠামো তৈরির কথাআমাদের সরকার বিশ্বাস করে যে সবকিছুতেই সরকারী হস্তক্ষেপ সমাধানের চেয়ে বেশি সমস্যা তৈরি করে। আর সেজন্যেই আমরা স্ব-নিয়ন্ত্রণ, স্ব-প্রত্যয়ন, স্ব-স্বীকৃতির ওপর, অর্থাৎ একরকমভাবে দেশের নাগরিকদের ওপর ভরসা করে এগিয়ে যাওয়ার ওপর জোর দিয়েছি। আমরা এ বছর কেন্দ্রীয় ও রাজ্য পর্যায়ে ৬ হাজারেরও বেশি অনুবর্তিতা কম করার চেষ্টা করছি। এ সম্পর্কে, আপনার মতামত, আপনার পরামর্শ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই ওয়েবিনারে খুব বেশি সময় নাও পাওয়া যেতে পারে, আপনারা আমায় আপনাদের মতামত লিখেও পাঠাতে পারেন। আমরা এই বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করব কারন অনুবর্তিতার বোঝা কমানো উচিত। আধুনিক প্রযুক্তি এসে গেছে, তার মাধ্যমে প্রত্যেক জিনিসের জন্য বারবার বিভিন্ন ফর্ম পূরণের প্রক্রিয়া থেকে মুক্ত করতে হবে। একইভাবে, স্থানীয় পর্যায়ে রপ্তানির প্রচারের জন্য, রপ্তানিকারক এবং উৎপাদকদের একটি বিশ্ব বাজার পাইয়ে দিতে সরকার বিভিন্ন ক্ষেত্রে কাজ করছে। এর থেকে এমএসএমই হোক, কৃষক হোক, ছোট হস্তশিল্পী হোক, সকলেই রপ্তানির ক্ষেত্রে সাহায্য পাবে।

বন্ধুরা,
উৎপাদন-ভিত্তিক উৎসাহ ব্যবস্থা প্রকল্পের ক্ষেত্রেও আমাদের মূল উদ্দেশ্য উৎপাদন এবং রপ্তানির বিস্তার করা। বিশ্বের সমস্ত উৎপাদনকারী সংস্থাগুলি যাতে ভারতকে তাদের কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করতে পারে এবং আমাদের স্থানীয় শিল্প, আমাদের এমএসএমইগুলি যাতে সংখ্যায় এবং সামর্থ্যের বৃদ্ধি করতে পারে, এই চিন্তাভাবনা নিয়েই যদি আমরা এই ওয়েবিনারে দৃঢ় প্রকল্প তৈরি করতে পারি, তবেই যে দর্শনের ভিত্তিতে এবারের বাজেট আনা হয়েছে তা কার্যকর হবে। এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য হ’ল বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভারতীয় শিল্পের মূল দক্ষতা এবং রপ্তানির ক্ষেত্রে বিশ্বজুড়ে উপস্থিতির পরিধি বাড়ানো। এই পরিস্থিতি সীমিত স্থানে, সীমিত দেশে, সীমিত জিনিস এবং ভারতের কেবল দু-চার জায়গা থেকেই রপ্তানি, এই পরিস্থিতির পরিবর্তন করতে হবে। ভারতের প্রতিটি জেলা থেকে রপ্তানির সুযোগ তৈরি হলে কেমন হয়? বিশ্বের প্রতিটি দেশ ভারতের থেকে আমদানি করলে কেমন হয়, বিশ্বের প্রতিটি দেশ, প্রতিটি অঞ্চল ভারতের থেকে আমদানি শুরু করলে কেমন হয়? প্রতিটি জিনিসের রপ্তানি করলে কেমন হয়? আপনারা আগের প্রকল্প এবং বর্তমান প্রকল্পের মধ্যে একটি স্পষ্ট পার্থক্য নিশ্চয় লক্ষ্য করেছেন। আগে শিল্প উৎসাহে ওপেন-এন্ড ইনপুট ভিত্তিক ভর্তুকির বিধান ছিল। এখন তা প্রতিযোগিতামূলক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে লক্ষ্যভিত্তিক, কর্মক্ষমতা ভিত্তিক করা হয়েছে। প্রথমবার ১৩টি ক্ষেত্রকে এইধরনের প্রকল্পের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে যা আমাদের প্রতিশ্রুতির পরিচায়ক।

বন্ধুরা,
এই পিএলআই যেই খাতের জন্য তৈরি করা হয়েছে, তারা তো উপকৃত হচ্ছেই, এরফলে সেই ক্ষেত্রের সঙ্গে যুক্ত পুরো পরিবেশতন্ত্রকে ব্যাপকভাবে উপকৃত করবে। অটো এবং ফার্মায় পিএলআইয়ের ফলে অটোমোবাইল সরঞ্জাম, চিকিৎসা সরঞ্জাম এবং ওষুধগুলির কাঁচামালের জন্য বিদেশী নির্ভরতা অনেকটা কমে যাবে। অ্যাডভান্সড সেল ব্যাটারি, সৌর ফটোভল্টিক মডিউল এবং ইস্পাতের সাহায্যে দেশের উর্জা ক্ষেত্রের আধুনিকীকরণ হবে। আমাদের নিজস্ব কাঁচামাল, আমাদের নিজস্ব শ্রম, আমাদের নিজস্ব দক্ষতা, আমাদের নিজস্ব প্রতিভা, আমরা কতটা অগ্রগতি করতে পারি। একইভাবে বস্ত্র এবং খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ খাতে দেওয়া পিএলআই থেকে আমাদের পুরো কৃষি খাত উপকৃত হবে। আমাদের কৃষক, পশুপালক, মৎস্যজীবী, অর্থাৎ সমগ্র গ্রামীণ অর্থনীতিতে এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে, আয় বৃদ্ধি করতে সাহায্য করবে।

আপনারা গতকালই দেখেছেন যে ভারত প্রস্তাব করার পর, রাষ্ট্রসংঘ ২০২৩ সালকে, অর্থাৎ দু বছর পর ‘আন্তর্জাতিক বাজরার বছর’ ঘোষণা করেছে। ভারতের এই প্রস্তাবকে ৭০টিরও বেশি দেশ সমর্থন জানিয়েছিল। এবং তারপরে রাষ্ট্রসংঘের সাধারণ সভায় এই প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়। এটি দেশের জন্য গৌরব বৃদ্ধির বিষয়। এটি আমাদের কৃষকদের জন্য এবং বিশেষত ক্ষুদ্র কৃষকদের জন্য একটি বড় সুযোগ তৈরি করেছে, যেখানে সেচের সুবিধাও অপর্যাপ্ত এবং যেখানে আস্ত শস্যদানার উৎপাদন হয়, সেখানে এই গোটা শস্যের মাহাত্ম্য বিশ্বের দরবারে পৌঁছে দেওয়ার কাজ, যার জন্য আমরা প্রস্তাব দিয়েছিলাম, রাষ্ট্রসংঘ তা ২০২৩ সালের জন্য অনুমোদিত করেছে। ভারতের ক্ষুদ্র কৃষকদের জন্য, যেখানে সেচের সুবিধাও অপর্যাপ্ত, এমন দুর্গম ক্ষেত্রের চাষ, আমাদের দরিদ্র কৃষকের কাছে এই গোটা শস্য দানার শক্তি কতটা, পুষ্টিগুণ কতটা, এর কতগুলি প্রকার রয়েছে, কীভাবে তা বিশ্বের জন্য সাশ্রয়ী মূল্যে সরবরাহ হতে পারে, আমাদের সামনে এর বড় সুযোগ রয়েছে। আমরা যেমন বিশ্বে যোগের প্রচার, প্রসার ও প্রতিষ্ঠা করেছি, সেভাবেই আমরা সবাই মিলে, বিশেষত কৃষি-প্রক্রিয়াকরণকারীরা মিলে বাজরা অর্থাৎ গোটা শস্যদানার মাধ্যমে বিশ্বের দরবারে পৌঁছে যেতে পারি।

২০২৩ সালের আগে আমাদের কাছে এখনও সময় আছে, আমরা সম্পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়ে বিশ্বব্যাপী অভিযান শুরু করতে পারি। জনসাধারণকে করোনার হাত থেকে রক্ষা করার জন্য যেমন ‘মেড ইন ইন্ডিয়া’ টিকা রয়েছে, সেরকমই ভারতে উৎপাদিত বাজরাও, আস্ত দানার শস্যও এর পুষ্টিগুণ সমানভাবে কার্যকর হবে। আমরা সবাই বাজরা বা আস্ত শস্যদানার পুষ্টির সঙ্গে পরিচিত। একসময়ে হেঁটেছে গোটা শস্যদানার খুব চল ছিল। এখন এই প্রবণতা আবার ফিরে আসছে। ভারতের উদ্যোগের ফলে, ২০২৩-সালে রাষ্ট্রসংঘ আন্তর্জাতিক বাজরা বর্ষ ঘোষণা করার ফলে দেশ-বিদেশে বাজরার চাহিদা দ্রুত বাড়বে। এরফলে আমাদের কৃষক এবং বিশেষত দেশের ক্ষুদ্র কৃষকরা ব্যাপকভাবে উপকৃত হবে। তাই আমি কৃষি ও খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ খাতকে এই সুযোগটির পুরোপুরি সদ্ব্যবহার করার আহ্বান জানাচ্ছি। আমি আজও আপনাদের ওয়েবিনার থেকে যে পরামর্শ পাব – সরকারী-বেসরকারী অংশীদারিত্বের মডেলেএকটি ছোট টাস্ক ফোর্স তৈরি করা উচিত  এবং আমরা কীভাবে এই বাজরা অভিযানকে বিশ্বে কীভাবে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি, সে বিষয়ে চিন্তা ভাবনা করতে পারি। এর এমন কোন কোন প্রকার তৈরি করা যেতে পারে যা বিশ্বের বিভিন্ন দেশের স্বাদের জন্যও উপযুক্ত এবং স্বাস্থ্যের জন্যও খুব শক্তিশালী।

বন্ধুরা,
এ বছরের বাজেটে পিএলআই ব্যবস্থার আওতায় এধরনের প্রকল্পের জন্য প্রায় দুই লক্ষ কোটি টাকার সংস্থান করা হয়েছে। উৎপাদনের গড়ে ৫ শতাংশ ইনসেন্টিভ হিসেবে দেওয়া হয়। অর্থাৎ, কেবলমাত্র পিএলআই ব্যবস্থার মাধ্যমেই আগামী ৫ বছরে ভারতে প্রায় ৫২০ বিলিয়ন ডলার মূল্যের উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে । এটিও অনুমান করা হয়েছে যে পিএলআইয়ের যে খাতগুলির জন্য প্রকল্প তৈরি করা হয়েছে, সেই খাতে এখন যত কর্মরত শ্রমিক রয়েছে, তাদের সংখ্যাও প্রায় দ্বিগুণ হয়ে যাবে। পিএলআই প্রকল্প কর্মসংস্থান সৃষ্টির ক্ষেত্রেও ব্যাপক প্রভাব ফেলতে চলেছে। শিল্পক্ষেত্রে উৎপাদন ও রপ্তানিতে লাভ তো হবেই, দেশে আয় বৃদ্ধির পাশাপাশি যে চাহিদা বাড়বে তার থেকেও লাভ পাওয়া যাবে, অর্থাৎ দ্বিগুণ লাভ।

বন্ধুরা,
পিএলআই সম্পর্কিত ঘোষণাগুলি দ্রুত কার্যকর করা হচ্ছে। তথ্য প্রযুক্তি হার্ডওয়্যার এবং টেলিকমে ব্যবহৃত সরঞ্জাম উৎপাদন সম্পর্কিত দুটি পিএলআই প্রকল্পও মন্ত্রিসভায়ও অনুমোদিত হয়েছে। আমি বিশ্বাস করি যে এই ক্ষেত্রগুলির সঙ্গে যুক্ত বন্ধুরা তাদের মূল্যায়ন করে ফেলেছেন। তথ্য প্রযুক্তি হার্ডওয়্যারের ক্ষেত্রে, আগামী ৪ বছরে প্রায় ১.২৫ লক্ষ কোটি টাকার উৎপাদনের অনুমান করা হয়েছে। এই পরিকল্পনার মাধ্যমে, তথ্য প্রযুক্তি হার্ডওয়্যারের অভ্যন্তরীণ মূল্য সংযোজন ৫ বছরের মধ্যে এখনকার ৫-১০ শতাংশ থেকে বেড়ে ২০-২৫ শতাংশ হয়ে যাবে। একইভাবে টেলিকম সরঞ্জামের উৎপাদনের ক্ষেত্রেও আগামী ৫ বছরে প্রায় আড়াই লক্ষ কোটি টাকা বাড়বে। এরফলে আমরা প্রায় ২ লক্ষ কোটি টাকা রপ্তানির অবস্থানে থাকব। ফার্মা সেক্টরেও, আগামী ৫-৬ বছরে, আমরা পিএলআইয়ের আওতায় কয়েক লক্ষ কোটি টাকার বিনিয়োগের সম্ভাবনা উড়িয়ে দিতে পারি না, আমরা বড় লক্ষ্য নিয়ে
এগোতে পারি। এরফলে ফার্মা  ক্ষেত্রে প্রায় তিন লক্ষ কোটি টাকা এবং রপ্তানিতে প্রায় দুই লক্ষ কোটি টাকা বাড়বে বলে অনুমান করা হচ্ছে।

বন্ধুরা,
আজ ভারত থেকে যে বিমানগুলি কয়েক লক্ষ টিকার ডোজ বিশ্বজুড়ে পৌঁছে দিচ্ছে, তারা খালি হাতে ফিরে আসছে না। তারা নিজেদের সঙ্গে ভারতের প্রতি বর্ধিত আস্থা, ভারতের প্রতি আত্মীয়তা, সেসব দেশের মানুষের স্নেহ এবং অসুস্থ বয়স্কদের আশীর্বাদ, আবেগ নিয়ে আমাদের বিমানগুলি ফিরছে। এবং সঙ্কটের মধ্যে যে বিশ্বাসের সৃষ্টি হয়, তা কেবল প্রভাবই তৈরি করে না, এই আস্থা চিরন্তন, অমর, অনুপ্রেরণামূলক হয়ে ওঠে। ভারত যেভাবে আজ মানবতার সেবা করছে এবং বিনয়ের সঙ্গে করছে… আমরা অহংকারের সঙ্গে কিছু করছি না … আমরা দায়িত্বশীলভাবে করছি। ‘সেবা পরম ধর্ম’ আমাদের সংস্কৃতি। এর সাহায্যে, বিশ্বজুড়ে ভারত একটি খুব বড় ব্র্যান্ডে পরিণত হয়েছে। ভারতের বিশ্বাসযোগ্যতা, ভারতের পরিচয় ক্রমাগত নতুন উচ্চতায় পৌঁছে যাচ্ছে। এবং এই বিশ্বাস কেবল টিকা সম্পর্কে নয়। এটি কেবলমাত্র ফার্মা ক্ষেত্রের সামগ্রী নিয়ে নয়। একটি দেশ যখন ব্র্যান্ডে পরিণত হয়, তখন সেই দেশের প্রত্যেকটি সামগ্রীর প্রতি বিশ্বের সবার শ্রদ্ধা বাড়ে, তাদের আবেগ বৃদ্ধি পায় এবং তা তাদের প্রথম পছন্দ হয়ে ওঠে।

আমাদের ওষুধ, আমাদের চিকিৎসা কর্মীদের , ভারতে তৈরি চিকিৎসা সরঞ্জামগুলি, এই সব কিছুর প্রতি আজ তাদের সকলের ভরসা বেড়েছে। এই আস্থাকে সম্মান জানাতে, আমাদের দীর্ঘমেয়াদী কৌশল কী হবে, সে বিষয়ে ফার্মা সেক্টরকে এই সময়েই কাজ করতে হবে। এবং বন্ধুরা, আমি আপনাদের বলছি, ভারতের ওপর তৈরি এই ভরসা, প্রতি ক্ষেত্রে এর সাহায্যে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ হাতছাড়া করা উচিত নয়। সুতরাং এই ইতিবাচক অবস্থায় প্রতিটি সেক্টরের তাদের কৌশল নিয়ে আলোচনা-চর্চা শুরু করা উচিত। এই সময় হারালে চলবে না, এই সময় ব্যবহার করার, দেশের জন্য অর্জন করার, আপনাদের নিজের সংস্থার জন্য সুযোগ। এবং বন্ধুরা, আমি যা বলছি তা করা মোটেই কঠিন নয়। পিএলআই প্রকল্পের সাফল্যের গল্পও স্পষ্ট করে যে হ্যাঁ এটি সত্য, এটি সম্ভব। এরকম একটি সাফল্যের গল্প বৈদ্যুতিন উৎপাদন ক্ষেত্রে রয়েছে। গত বছর, আমরা মোবাইল ফোন এবং ইলেকট্রনিক্স উপাদান তৈরির জন্য পিএলআই প্রকল্প চালু করেছি। এমনকি অতিমারী চলাকালীনও এই খাতটি গত বছর ৩৫ হাজার কোটি টাকার উৎপাদন করেছে। শুধু তাই নয়, করোনার এই সময়ে এই খাতে প্রায় ১৩০০ কোটি টাকার নতুন বিনিয়োগ এসেছে। এর সাহায্যে এই সেক্টরে হাজার হাজার নতুন কর্মসংস্থান তৈরি হয়েছে।

বন্ধুরা,
পিএলআই প্রকল্প দেশের এমএসএমই পরিবেশতন্ত্রের ওপর একটি বড় প্রভাব ফেলতে চলেছে। আমি এটা বলছি কারণ প্রতিটি সেক্টরে যে অ্যাঙ্কর ইউনিটগুলি তৈরি করা হবে, তাদের পুরো মান শৃঙ্খলে একটি নতুন সরবরাহকারী কেন্দ্রের প্রয়োজন হবে। এই যে আনুষঙ্গিক এককগুলি রয়েছে, এদের বেশিরভাগই এমএসএমই খাতেই তৈরি হবে। এমএসএমইগুলিকে এধরনের সুযোগের জন্য প্রস্তুত করতে ইতিমধ্যেই কাজ শুরু করা হয়েছে। এমএসএমইগুলির সংজ্ঞা পরিবর্তন থেকে শুরু করে বিনিয়োগের সীমা বাড়ানো পর্যন্ত, এই সমস্ত সিদ্ধান্ত থেকে খাতটি প্রচুর সুবিধা পাচ্ছে। আজ, যখন আমরা এখানে বসে আছি, আমরা আপনাদের সক্রিয় অংশগ্রহণ আশা করছি। পিএলআইতে যুক্ত হতে যদি অসুবিধার সম্মুখীন হন, যদি এতে আরও কিছু উন্নতির সম্ভাবনা থাকে, আপনাদের যা প্রয়োজনীয় মনে হচ্ছে, আপনারা সামনে রাখুন, আমাকেও জানান।

বন্ধুরা,
কঠিন সময়ে, আমরা দেখিয়ে দিয়েছি যে সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে আমরা বড় লক্ষ্যেও পৌঁছতে পারি। সহযোগিতার এই দৃষ্টিভঙ্গি আত্মনির্ভর ভারত নির্মাণ করবে। এখন শিল্প ক্ষেত্রের সকল বন্ধুদের এগিয়ে আসতে হবে এবং নতুন সম্ভাবনার ওপর কাজ করতে হবে। শিল্প ক্ষেত্রকে এখন দেশ ও বিশ্বের জন্য সেরা মানের পণ্য তৈরিতে মনোনিবেশ বাড়াতে হবে। শিল্পকে দ্রুত চলমান, দ্রুত পরিবর্তনশীল বিশ্বের প্রয়োজন অনুসারে উদ্ভাবন করতে হবে, গবেষণা ও উন্নয়নে অংশগ্রহণ বাড়াতে হবে। ভারতের কর্মীদের কৌশলগত দক্ষতার উন্নয়ন এবং নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারে দেশের শিল্প ক্ষেত্রকে এগিয়ে এসে কাজ করতে হবে, তবেই আমরা বিশ্বের মানে পরিণত হতে সক্ষম হব। আমি আত্মবিশ্বাসী যে আজকের এই আলোচনার থেকে ‘মেক ইন ইন্ডিয়া, মেক ফর দ্য ওয়ার্ল্ড’ অভিযান আপনাদের সকলের চিন্তাভাবনা, পরামর্শ থেকে এটি নতুন শক্তি, নতুন গতি, নতুন উর্জা পাবে।

আমি আবারও অনুরোধ করব যে আপনি যেই সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন, সংস্কারের জন্য আপনার যা কিছু পরামর্শ রয়েছে, আমাকে জানান, মুক্ত মনে আমাকে জানান। সরকার আপনাদের প্রতিটি পরামর্শ, প্রতিটি সমস্যার সমাধান করতে প্রস্তুত। আমি আরও একটি কথা বলব, সরকারের ‘ইনসেন্টিভে’ যে ব্যবস্থাই থাকুক না কেন, আপনাদের কি কখনও মনে হয়েছে যে বিশ্ব বাজারে যে জিনিসপত্র আছে, আমাদের কাছে তার থেকে সস্তায় সরঞ্জাম থাকলে আমরা সেগুলি বিক্রি করতে পারতাম? সেটা হয়তো ঠিক।এক্ষেত্রে সামগ্রীর মানই তার সবচেয়ে বড় শক্তি, এটা ধরেই এগিয়ে যেতে হবে। আমাদের পণ্যের মান প্রতিযোগিতার বাজারে উৎরে গেলে সারা বিশ্ব দু টাকা বেশি দিয়েও তা কিনতে প্রস্তুত হবে। আজ ভারত একটি ব্র্যান্ডে পরিণত হয়েছে। এখন আপনাদের পণ্যের পরিচিতি তৈরি করতে হবে। আপনাদের খুব বেশি পরিশ্রম করতে হবে না। যদি আপনাকে কঠোর পরিশ্রম করতেই হয় তবে পণ্যের উৎপাদনের মানে তা করতে হবে। পিএলআইয়ের লাভ, পিএলআই এবং তার সুবিধাগুলির মধ্যে নেই।  উৎপাদন মানের উপর জোর দিলে পিএলআইয়ের বৃহত্তর সুবিধা পাওয়া যাবে। এই নিয়েও আজকের আলোচনায়ও বিবেচনায় করা হবে, অনেক উপকার হবে।

আপনারা এত বৃহৎ সংখ্যায় যোগ দিচ্ছেন, আপনারা সারাদিন বসে থাকবেন, আমি আপনার জন্য বেশি সময় নেব না। আপনাদের জন্য শুভকামনা। এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের জন্য আমি  আপনাদের আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানাই।

ধন্যবাদ!

***

 

CG/JD