Search

পিএমইন্ডিয়াপিএমইন্ডিয়া

সাম্প্রতিক সংবাদ

বিষয়টিকে সরাসরি পিআইবি থেকে নেওয়া হয়েছে

উত্তরাখন্ডের মানা গ্রামে বিবিধ উন্নয়নমূলক প্রকল্পের শিলান্যাস উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ

উত্তরাখন্ডের মানা গ্রামে বিবিধ উন্নয়নমূলক প্রকল্পের শিলান্যাস উপলক্ষে  প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ


নয়াদিল্লি,  ২১  অক্টোবর, ২০২২

 

জয় বদ্রী বিশাল!

জয় বদ্রী বিশাল!

জয় বদ্রী বিশাল!

জয় বাবা কেদার!

জয় বাবা কেদার!

জয় বাবা কেদার!

উত্তরাখন্ডের রাজ্যপাল গুরমিত সিংজি, এই রাজ্যের জনপ্রিয় ও মৃদুভাষী, সব সময় হাসিমুখে থাকা মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামিজি, সংসদে আমার সহযোগী শ্রী তীরথ সিং রাওয়াতজি, ভাই ধন সিং রাওয়াতজি, মহেন্দ্রভাই ভট্টজি, উপস্থিত অন্যান্য গণ্যমান্য ব্যক্তিগণ আর আমার প্রিয় ভাই ও বোনেরা,

আজ বাবা কেদার এবং বদ্রী বিশালজির দর্শন করে তাঁদের আশীর্বাদ পেয়ে জীবন ধন্য হয়ে গেছে। আমার মন আনন্দে ভরে গেছে। আর এই মুহুর্তগুলি আমার জন্য চিরঞ্জীবি হয়ে থাকবে। বাবার সান্নিধ্যে, বাবার আদেশে, বাবার কৃপায় গতবার যখন এসেছিলাম তখন আমার মুখ থেকে কিছু শব্দ বেড়িয়েছিল সেই শব্দগুলো আমার ছিল না। না জানি কোথা থেকে এসেছিল, কেন এসেছিল, কে দিয়েছিল জানিনা। কিন্তু বলে ফেলেছিলাম যে এই দশক উত্তরাখন্ডের দশক হবে। আর আমার দৃঢ় বিশ্বাস যে এই শব্দগুলিতে বাবা বদ্রী বিশাল ও মা গঙ্গার নিরন্তর আশীর্বাদের শক্তি বজায় থাকবে। এটা আমার অন্তর মন বলে। এটা আমার সৌভাগ্য যে আজ আমি আপনাদের মধ্যে এই নতুন প্রকল্পগুলি নিয়ে আর একবার সেই সংকল্পকে পুনরুচ্চারণ করতে এসেছি। আর আমার সৌভাগ্য যে আজ আপনাদের সঙ্গে সাক্ষাতেরও সুযোগ পেলাম। 

মানা গ্রামকে ভারতের সর্বশেষ গ্রাম বলে মনে করা হয়। কিন্তু যেভাবে আমাদের মুখ্যমন্ত্রীজি তাঁর ইচ্ছার কথা বলেছেন তেমনি আমার জন্য দেশের প্রতিটি সীমান্তবর্তী গ্রামই দেশের প্রথম গ্রাম। সীমান্তে আপনাদের মতো আমার প্রিয় সাথী দেশের শক্তিশালী প্রহরীরা যে রয়েছেন আর আমি আজ মানা গ্রামের পুরনো স্মৃতিকথা উল্লেখ করতে চাই। হয়তো এখানে কিছু পুরনো মানুষ রয়েছেন যাঁরা আমাকে মনে রেখেছেন। তারপর তো আমি মুখ্যমন্ত্রী হয়েছি, প্রধানমন্ত্রী হয়েছি, সেজন্যই যে শুধু এই সীমান্তবর্তী প্রহরী গ্রামের কথা স্মরণ করছি তা নয়, আজ থেকে ২৫ বছর আগে যখন আমি উত্তরাখন্ডে ভারতীয় জনতা পার্টির একজন কার্যকর্তা রূপে কাজ করতাম তখন খুব বেশি মানুষ আমাকে জানতেন না। আমার তেমন কোনো পাবলিক লাইফও ছিল না। আমি সংগঠনের সঙ্গীদের মধ্যেই আমার জীবন কাটাতাম, কাজ করতাম। আর সেই সময় আমি এই মানা গ্রামে উত্তরাখন্ড ভারতীয় জনতা পার্টির মিটিং আহ্বান করেছিলাম। এই আহ্বান শুনে আমার উত্তরাখন্ডের অধিকাংশ কর্মকর্তা কিছুটা অখুশি হয়েছিলেন। তাঁদের প্রশ্ন ছিল এতো দুরে কেনে ডেকেছি? কতো কষ্ট করে এতদুর যেতে হবে, কতো সময় নষ্ট হবে। আমি জবাব দিই, আরে ভাই যেদিন উত্তরাখন্ড ভারতীয় জনতা পার্টির হৃদয়ে মানার গুরুত্ব স্পষ্ট হবে সেদিন দেখবেন উত্তরাখন্ডের জনগণের হৃদয়ে ভারতীয় জনতা পার্টির গুরুত্ব বৃদ্ধি পাবে। আর তাই হয়েছে। মানা গ্রামের মাটির শক্তি দেখুন! আমার এই মানা গ্রামের ভাই-বোনেদের আদেশে ও আশীর্বাদ বজায় থাকার ফলেই আজ আপনারা ক্রমাগত উত্তরাখন্ডবাসীর আশীর্বাদ পেয়ে চলেছেন। উত্তরাখন্ডে নতুন সরকার গড়ে ওঠার পর আমি এই প্রথমবার কোনো সার্বজনিক কর্মসূচিতে বক্তব্য রাখছি। আর সেজন্যই মানার ভূমিতে দাঁড়িয়ে আজ আমি সমগ্র উত্তরাখন্ডের ভাই-বোনেদের ধন্যবাদ জানাতে চাই আমাদের সবাইকে দ্বিতীয়বার এই রাজ্য পরিচালনার সুযোগ দিয়েছেন সেজন্য হৃদয় থেকে কৃতজ্ঞতা জানাই। 

বন্ধুগণ,

একবিংশ শতাব্দীর উন্নত ভারত নির্মাণের দুটি প্রধান স্তম্ভ রয়েছে। প্রথমটি হল নিজের ঐতিহ্য নিয়ে গর্ব, আর দ্বিতীয়টি হল উন্নয়নের জন্য যথা সম্ভব চেষ্টা। আজ আমাদের উত্তরাখন্ড এই উভয় স্তম্ভকেই শক্তিশালী করে তুলছে। আজ সকালেই আমি বাবা কেদারনাথ ও তারপর বাবা বদ্রীনাথ বিশালের চরণে গিয়ে প্রার্থনা করেছি আর পাশাপাশি কিছু কাজ করেছি, কারন ঈশ্বর আমাকে সে কাজ করার দায়িত্ব দিয়েছেন। আমাকে সে কাজ করতে হয়। আর আমার জন্য দেশের ১৩০ কোটি জনগণই ঈশ্বরের রূপ। সেজন্য আমি আমাদের সমস্ত উন্নয়ন কর্মের সমীক্ষা করি। আর এখন আপনাদের মধ্যে এসে দুটি রোপওয়ে প্রকল্পের শিলান্যাস করার সৌভাগ্য হয়েছে। এই দুটির মাধ্যমে কেদারনাথজি এবং গুরুদ্বার হেমকুন্ড সাহেব-এর দর্শন করা আরো সহজ হবে। আমাদের ওপর গুরু গ্রন্থ সাহেব এবং সমস্ত পুজনীয় গুরুদেবের আশীর্বাদ যেন বজায় থাকে সেরকম পবিত্র কাজ করার সুযোগ আমরা গুরুদেবের আশীর্বাদে পেয়েছি। তেমনি বাবা কেদারনাথের আশীর্বাদও আমাদের ওপর বর্ষিত হতে থাকবে। আপনারা কল্পনা করতে পারেন এই রোপওয়ে তৈরি হওয়ার পর কত দ্রুত গতিতে আপনারা বাবার কাছে যেতে পারবেন। শুধু তাই নয় এই কঠিন কাজ যাঁরা করবেন খুঁটি পোতা, তার বাঁধা, উড়ন খাটোলাগুলিকে যথাযথভাবে যাতায়াতের ব্যবস্থা যাঁরা করবেন সেই কর্মীদের ওপর আমাদের দেশের ১৩০ কোটি দেশবাসীর আশীর্বাদও বর্ষিত হবে। সারা পৃথিবীতে যতো মানুষ গুরু গ্রন্থ সাহেব-এর পবিত্র পুজা করেন তাঁরা প্রত্যেকেই হয়তো আজ আমাদের আশীর্বাদ করছেন কারন আমরা আজ হেমকুন্ড সাহেব পর্যন্ত রোপওয়ে তৈরি করতে চলেছি। আপনারা কল্পনা করতে পারবেন না এই আশীর্বাদের শক্তি কতটা! আপনারা দেখবে আজ ইউকে, জার্মানী, কানাডা এ রকম অনেক দেশে উৎসব পালন করা হবে। এতে ভক্তদের অনেক সময় ও অর্থ সাশ্রয় হবে, ভক্তি আরো নিবিড় হবে।

উন্নয়নের এই সকল প্রকল্পের জন্য আমি সমস্ত উত্তরাখন্ডবাসী জনগণকে এবং দেশ-বিদেশের প্রত্যেক ভক্তকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানাই। আর আমাদের ওপর গুরুদের কৃপা বজায় থাকলে, বাবা কেদারনাথ ও বদ্রী বিশালের কৃপা বজায় থাকলে এখানে কর্মরত সমস্ত শ্রমিক বন্ধুরা সম্পূর্ণ শক্তি দিয়ে নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যেই এ কাজ সম্পূর্ণ করবে। আসুন আমরা সবাই তাঁদের জন্য প্রার্থনা করি, কারন এটা অনেক দুর্গম এলাকা। এখানে কাজ করা খুব কঠিন। জোরে হাওয়া বই। আর এতো উঁচুতে গিয়ে কাজ করতে হয় যা হাত-পা প্রায় শূন্য হয়ে যায়। ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করুন এই কাজ করতে গিয়ে যেনো কোনো দুর্ঘটনা না হয়, কোনো কর্মী বন্ধুর যেনো কোনো ক্ষতি না হয়। আপনারা সবাই তাঁদের জন্য প্রার্থনা করবেন। তাঁরা যখন যে গ্রামের কাছে কাজ করবেন আপনারা তাঁদের খেয়াল রাখবেন। তাঁদেরকে মজুর বলে ভাববেন না। এটা ভাববেন না যে তাঁরা টাকা পাচ্ছে বলে কাজ করছেন। তাঁরা আসলে ঈশ্বরের সেবা করছেন। তাঁরা আপনাদের গ্রামের অতিথি। কঠিন কাজ করতে এসেছেন। আপনারা তাঁদের যতো যত্নআত্তি করবেন এই কাজ তত দ্রুত গতিতে সম্পন্ন হবে। করবেন তো? নিজেদের ভাই-বোন বা সন্তানের মতো তাঁদের যত্নআত্তি করবেন তো?

বন্ধুগণ,

আজ যখন আমি বাবা কেদারধামে গিয়েছিলাম তখন সেখানে কর্মরত শ্রমিক ভাই-বোনদের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ হয়েছে। যে ইঞ্জিনিয়াররা তাঁদের কাজ পরিচালনা করছেন তাঁদের সঙ্গেও কথা বলার সুযোগ হয়েছে। আমার খুব ভালো লেগেছে যখন তাঁরা বলছিলেন, যে আমরা কোনো সাধারণ সড়কপথ কিংবা ভবন তৈরির কাজ করছি না, আমরা তো বাবা কেদারনাথের পুজো করছি। আর এটাই আমাদের পুজো করার পদ্ধতি। 

বন্ধুগণ,

দেশের স্বাধীনতার ৭৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে আমি লালকেল্লার প্রাকার থেকে দেশবাসীর প্রতি একটি আহ্বান জানিয়েছিলাম। সেই আহ্বান হল দাসত্বের মানসিকতা থেকে সম্পূর্ণ রূপে মুক্তির। স্বাধীনতার এতো বছর পর আমাকে এই আহ্বান কেন জানাতে হয়েছে? কারন আমাদের দেশকে দাসত্বের মানসিকতা এমনভাবে আষ্টেপৃষ্টে ধরে রেখেছে যে উন্নয়নের প্রত্যেক কাজকেই কিছু মানুষের কাছে অপরাধ বলে মনে হয়। আজও আমাদের দেশে উন্নয়নে কাজকে দাসত্বের দাঁড়িপাল্লায় মাপা হয়। সেজন্য দীর্ঘ সময় ধরে আমাদের দেশে নিজেদের আধ্যাত্মিক স্থানগুলির উন্নয়ন নিয়ে একটি ঘৃণাভাব ছিল। বিদেশে সেখানকার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য মন্ডিত স্থানগুলির প্রশংসায় সেসব দেশবাসী পঞ্চমুখ থাকেন। কিন্তু আমাদের দেশে এই ধরনের কাজকে হেয় দৃষ্টিতে দেখা হতো। নিজেদের সংস্কৃতি নিয়ে হীন ভাবনা ক্রমে নিজেদের আধ্যাত্মিক স্থানগুলির ওপর অবিশ্বাস আর নিজেদের ঐতিহ্যের প্রতি বিদ্বেষ। এই বিদ্বেষ যে আমাদের সমাজে আজ বেড়েছে তা নয়, স্বাধীনতার পর সোমনাথ মন্দির নির্মাণের সময় কী হয়েছিল তা আমরা সবাই জানি। এরপর রাম মন্দির নির্মাণের সময়ের ইতিহাসও আমরা ভালোভাবে জানি। দাসত্বের এই মানসিকতাই আমাদের পূজনীয়, পবিত্র আধ্যাত্মিক স্থানগুলিকে জর্জর করে তুলেছে। কয়েকশো বছর ধরে আবহাওয়ার অভিঘাতে পাথর, মন্দির ও পূজাস্থলে যাওয়ার পথ নষ্ট হয়ে গেছে। মন্দিরের জল সরবরাহ ব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে গেছে। আপনারা মনে করুন বন্ধুগণ, অনেক দশক ধরে আমাদের আধ্যাত্মিক কেন্দ্রগুলির পরিস্থিতি এমন ছিল যে সেখানে যাওয়ার যাত্রাপথ ক্রমে কঠিনতর হয়ে উঠছিল। যে আধ্যাত্মিক স্থলগুলির প্রতি কয়েক হাজার বছর ধরে কোটি কোটি মানুষের শ্রদ্ধা রয়েছে সারা জীবন ধরে মানুষ স্বপ্ন দেখেন যে অমুক ধামে গিয়ে একবার কপাল ঠেকিয়ে আসবো। কিন্তু দেশে এমন সব সরকার এসেছিল যারা নিজেদের নাগরিকদের সেখানে যাওয়ার পরিষেবা প্রদান করা প্রয়োজনীয় বলে মনে করেনি। না জানি কোন দাসত্বের মানসিকতা তাদের আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে রেখেছিল। এটা অন্যায় কি না বলুন ভাই ও বোনেরা? এটা অন্যায় কি না বলুন? এই জবাব আপনাদের নয়, এই জবাব ১৩০ কোটি ভারতবাসীর। আর আপনাদের এইসব প্রশ্নের জবাব দেওয়ার জন্য ঈশ্বর আমাকে এই কাজ দিয়েছেন। 

ভাই ও বোনেরা,

এই উপেক্ষার মধ্যে লক্ষ কোটি জন ভাবনার অপমান লুকিয়ে ছিল। এর পিছনে বিগত সরকারগুলির নিহিত স্বার্থ ছিল। কিন্তু ভাই ও বোনেরা, এরা আসলে আমাদের কয়েক হাজার বছর পুরনো সংস্কৃতির শক্তিকে বুঝতে পারেন নি। তারা ভুলে গেছিলেন যে এই আধ্যাত্মিক কেন্দ্রগুলি নেহাতই কিছু কাঠামো নয়, এগুলি আমাদের জন্য প্রাণশক্তি। এগুলি আমাদের জন্য এমন শক্তিপুঞ্জ যা অনেক কঠিন পরিস্থিতিতেও আমাদের সজীব ও প্রাণবন্ত রাখে। তাদের এতো উপেক্ষা সত্ত্বেও আমাদের এই আধ্যাত্মিক কেন্দ্রগুলির গুরুত্ব কমেনি। আর এগুলি সম্পর্কে মানুষের মনে সমর্পণভাবও হ্রাস পায়নি। আর আজ আপনাদের আশীর্বাদে আমরা কাশী, উজ্জয়িনী ও অযোধ্যার মতো অসংখ্য শ্রদ্ধার কেন্দ্রগুলির গৌরব ফিরিয়ে আনছি। কেদারনাথ, বদ্রীনাথ ও হেমকুন্ড সাহেব-এর প্রতি মানুষের শ্রদ্ধাকে লালনের পাশাপাশি নানা আধুনিক পরিষেবা যুক্ত করছে। অযোধ্যায় অনিন্দ সুন্দর রাম মন্দির গড়ে উঠছে, গুজরাটের পাওয়াগড়ে মা কালিকা মন্দির থেকে শুরু করে দেবী বিন্ধাচলের করিডর পর্যন্ত ভারত তার সাংস্কৃতিক উত্থানকে আহ্বান জানাচ্ছে। এই আধ্যাত্মিক কেন্দ্রগুলিতে আরো অনেক সহজভাবে পৌঁছানো যাচ্ছে। এতে আমাদের বয়স্কদের যেমন সুবিধা হচ্ছে তেমনি আমার দৃঢ় বিশ্বাস আমাদের দেশের নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের জন্যও এগুলি শ্রদ্ধার আকর্ষণ কেন্দ্র হয়ে উঠবে। এটাই আমাদের নীতি। এখন আমাদের দিবাঙ্গ বন্ধুরাও সহজে এই আধ্যাত্মিক কেন্দ্রগুলি দর্শন করতে পারছেন। আমার মনে আছে যখন গিরনার-এ রোপওয়ে তৈরি করেছিলাম ৮০ বছর বয়সী বৃদ্ধ-বৃদ্ধারা সেখান থেকে ফিরে যাওয়ার পর আমাকে চিঠি লিখে আশীর্বাদ জানিয়েছিলেন। তাঁরা লিখেছিলেন যে কখনও ভাবিনি এতো সহজে গিরনার পর্বতে গিয়ে পুজো দিতে পারবো আর এতো জায়গা ঘুরে দেখতে পারবো। আজো তাঁরা আমাকে আশীর্বাদ জানাচ্ছেন।

বন্ধুগণ,

আমাদের আগের সরকারগুলি এই শক্তিকে চিনতে পারেনি। আজ গোটা দেশ এই আধ্যাত্মিক কেন্দ্রগুলি নিয়ে গর্ব করছে। উত্তরাখন্ডের এই দেবভূমি স্বয়ং এই পরিবর্তনের সাক্ষী। আমাদের ডবল ইঞ্জিনের সরকার তৈরি হওয়ার আগে কেদারনাথে এক সিজনে খুব বেশি হলে ৫ লক্ষ ভক্ত আসতেন। আর এখন আমাকে বলা হয়েছে যে এ বছর ৪৫ লক্ষ মানুষ এসেছেন। এখন দেখুন!

বন্ধুগণ,

আস্থা এবং আধ্যাত্মিকতার কেন্দ্রগুলি এই পুনর্নিমাণ ও পুনরুজ্জীবনের আর একটি দিক নিয়ে তেমন আলাপ-আলোচনা হয় না। সেই দিকটি হল, পাহাড়ের জনগণের ‘ইজ অফ লিভিং’-এর, পাহাড়ের নবীন প্রজন্মের কর্মসংস্থানের। যখন পাহাড়ে সড়কপথ, রেলপথ এবং রোপওয়ে পৌঁছায় তখন তার সঙ্গে কর্মসংস্থানও নিয়ে আসে। পাহাড়ের জীবন আরো সহজ ও সুন্দর হয়ে ওঠে। এই পরিষেবাগুলি পাহাড়ে পর্যটন বৃদ্ধির পাশাপাশি যাতায়াত ব্যবস্থা ও পণ্য পরিবহণকেও সহজ করে তোলে। এখন তো আমাদের সরকার ড্রোনকেও পাহাড়ে পণ্য পরিবহণের অন্যতম উপায় করে তোলার কাজ করছে। কারন আজকাল ড্রোনের মাধ্যমে ২০-২৫-৫০ কেজি পণ্য উঠিয়ে দ্রুত গতিতে অন্য জায়গায় পৌঁছে দেওয়া যাচ্ছে। আমরা আপনাদের এইসব এলাকায় ড্রোনের ব্যবহার বাড়াতে চাই যাতে আপনাদের এলাকায় উৎপাদিত তাজা ফল ও সব্জি দ্রুত বড় বড় শহরে বাজারগুলিতে পৌঁছায় আর আপনাদের রোজগার বাড়ে। আমি আজ ভারতের এই সীমান্তবর্তী এলাকার গ্রামবাসীদের মধ্যে এসেছি তখন এখানকার মা ও বোনেদের একটা কথা বলতে চাই। আপনারা বিভিন্ন স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মাধ্যমে যতো মশলা, পাহাড়ী লবন ইত্যাদি প্যাকেজিং করে মূল্য সংযোজন করছেন তা আমাকে খুব আনন্দ দিয়েছে। এই উদ্যোগের জন্য আমি আপনাদের প্রনাম জানাই। কিন্তু আমি এখান থেকে সমস্ত পর্বতারোহন ও অ্যাডভেঞ্চারের জন্য যাঁরা আসেন আর যাঁরা ঈশ্বরের প্রতি শ্রদ্ধা নিয়ে আসেন তাদেরকে আহ্বান জানাই যে আপনারা এই সফরের পিছনে যতো খরচ করেন খাওয়া-দাওয়া, বড় হোটেলে থাকা, আপনাদের প্রতি ১৩০ কোটি ভারতবাসীর পক্ষ থেকে আমার অনুরোধ, চীন সীমান্তে অবস্থিত ভারতের এই গ্রাম থেকে এখানকার গ্রামবাসীর পক্ষ থেকেও আমি এই অনুরোধ রাখছি। আপনারা যেখানেই যান না কেন কন্যাকুমারী থেকে শুরু করে সোমনাথ, আপনারা সেখানকার স্থানীয় জিনিস কিনবেন। এটা আমি আদেশ দিচ্ছি না, প্রার্থনা করছি। আপনারা প্রতিটি শহরে যতো খরচ করেন তার ন্যূনতম ৫ শতাংশ যে এলাকায় যাচ্ছেন সেখানে উৎপাদিত পণ্য কিনুন। আপনাদের বাড়িতে একটা থাকলে আর একটি কিনুন। নিয়ে গিয়ে কাউকে উপহার দিন। কিন্তু অবশ্যই কিনবেন। মনে রাখবেন আপনাদের এই ছোট উদ্যোগ অনেক মানুষের অন্ন সংস্থান করবে। একটু আগেই এখানকার স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মা ও বোনেরা আমাকে বলছিলেন যে, এবার এতো বেশি তীর্থযাত্রীরা এসেছিল যে তাঁদের হাতে তৈরি অনেক জিনিস বিক্রি হয়েছে। আমি জিগ্যেস করলাম কতো? তাঁরা অনেক সংকোচে জবাব দেন যে এবার আড়াই লক্ষ টাকার জিনিসে বিক্রি হয়েছে। এতে তাঁরা খুব খুশি। যদি সমস্ত তীর্থযাত্রী ও অন্যান্য অভিযাত্রীরা স্থানীয় পণ্য কেনেন তাহলে দেখবেন যে তাঁদের মুখে হাসি ফুটেছে। তাঁদের এই হাসি আপনাদের বাড়িতে আনন্দ বয়ে নিয়ে যাবে। বাচ্চাদের বলতে পারবেন যে অমুক বছর যখন উত্তরাখন্ডে গিয়েছিলাম তখন সেখানকার এক শিল্পীর আঁকা এই ছবিটা আমি কিনে এনেছি মাত্র ২০ টাকাতে। আর এই ছবিটা যিনি এঁকেছিলেন তিনি ছিলেন এক বৃদ্ধা মা। তিনি আমাকে অনেক আশীর্বাদ করেছিলেন। দেখবেন কতো আনন্দ হয়। সেজন্যই আমি আজ এখান থেকে সমস্ত দেশবাসীকে অনুরোধ জানাচ্ছি,

আমার প্রিয় ভাই ও বোনেরা,

পাহাড়ের জনগণের প্রথম পরিচয় হল- তাঁরা খুব পরিশ্রমী, সাহসী এবং লড়াকু প্রকৃতির হন। তাঁরা প্রকৃতির কোনো প্রতিকূলতা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন না। প্রাকৃতিকভাবেই তাঁরা সংকটের মধ্যে বেঁচে থাকা অভ্যাস করে নেন। কিন্তু পূর্ববর্তী সরকারগুলির সময়ে পাহাডে়র জনগণের এই সামর্থকে তাঁদের বিরুদ্ধেই ব্যবহার করা হয়েছে। দশকের পর দশক ধরে সরকার একথা ভেবে পাহাড়ের মানুষকে উপেক্ষা করে গেছে যে এরা এতো পরিশ্রমী ও শক্তিশালী যে এঁদের আর কিছু পরিষেবার প্রয়োজন নেই। এরা চালিয়ে নিতে পারবেন। এটা তাদেঁর ক্ষমতার প্রতি অন্যায় ছিল। তাঁদের ক্ষমতা রয়েছে তার মানে এই নয় যে তাঁদেরকে এ রকম অসুবিধার মধ্যেই রেখে দিতে হবে। তাঁদেরও তো পরিষেবা চাই! কঠিন পরিস্থিতিতে পাহাড়ের জনগণ যেন দ্রুত সাহায্য পেতে পারেন তা সুনিশ্চিত করতে হবে। সরকারি প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে পাহাড়ের জনগণকে সবার পরে সুযোগ দেওয়া হতো। এই ভাবনা নিয়ে দেশ কিভাবে এগোবে? পাহাড়ের জনগণের প্রতি এই অন্যায়কে আমার থামাতেই হতো। সেজন্য আগে যে এলাকাগুলিকে দেশের সীমান্তবর্তী মনে করে অবহেলা করা হতো, আমরা সেখান থেকেই সমৃদ্ধির শুরু মনে করে কাজ শুরু করেছি। সবার আগে দেশের সীমান্তবর্তী উপেক্ষিত গ্রামগুলির মানুষের প্রত্যাশা পূরণের চেষ্টা করেছি।

আগে দেশের উন্নয়নে যাদের অবদানকে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি আমরা তাদেরকেই সঙ্গে নিয়ে উন্নয়নের মহান লক্ষ্যগুলি পূরণের পথে এগিয়ে যাওয়ার সংকল্প নিয়েছি। আমরা প্রত্যেক গ্রামে বিদ্যুৎ সরবরাহ পৌঁছে দেওয়ার অভিযান চালিয়েছি, ফলে আমার পাহাড়ের ভাই ও বোনেরা লাভবান হয়েছেন। আমি এখানকার গ্রামের এক গ্রামপ্রধান ভগিনীর সঙ্গে কথা বলেছি। আমি জিগ্যেস করছিলাম যে, এখানে শৌচালয় তৈরি হয়েছে কি না। তিনি বললেন, হয়েছে। আমি জিগ্যেস করলাম যে, পানীয় জলের ব্যবস্থা হয়েছে কি না। তিনি বললেন, বাড়িতে বাড়িতে নলের মাধ্যমে জল পৌঁছে দেওয়ার কাজ চলছে। তাঁর চেহারায় এতো আনন্দ ছিল, আর তিনি এতো গর্বের সঙ্গে কথাগুলো বলছিলেন যে আমার খুব ভালো লেগেছে। আমরা প্রত্যেক বাড়িতে নলের মাধ্যমে জল পৌঁছে দেওয়ার যে অভিযান শুরু করেছি, তার ফলে আজ উত্তরাখন্ডের ৬৫ শতাংশেরও বেশি বাড়িতে ইতিমধ্যেই নলের মাধ্যমে জল পৌঁছে গেছে। আমরা প্রত্যেক পঞ্চায়েতকে অপটিক্যাল ফাইবারের মাধ্যমে যুক্ত করার যে অভিযান চালিয়েছি, তার ফলে আজ উত্তরাখন্ডের কোনায় কোনায় ডিজিটাল যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে। আজ আমি দেখছিলাম অনলাইন যোগাযোগ ব্যবস্থা কতটা বেড়েছে- ডিজিটাল এবং ফিনটেক! আমাদের সংসদে কিছু বুদ্ধিমান জনপ্রতিনিধি রয়েছেন, তাঁদেরকে আমি এই মানাতে আমন্ত্রণ জানাতে চাই। আপনারা আসুন, আমার মানাকে দেখুন। দেখে যান এখানে অষ্টম শ্রেণী উত্তীর্ণা বৃদ্ধ মা ও আমার বোনেরাও ডিজিটাল লেনদেনে কতটা দক্ষ! পেটিএম-এর মাধ্যমে লেনদেন হচ্ছে, কিউআর কোড দিয়ে লেনদেন হচ্ছে। এটাই আমার দেশের এই সীমামন্তবর্তী মানার জনগণকে করতে দেখে আমি গর্বিত।

আমরা গ্রামগুলিতে হেল্থ অ্যান্ড ওয়েলনেস সেন্টার খোলার যে অভিযান চালিয়েছি তার ফলে আজ গ্রামে গ্রামে চিকিৎসা পৌঁছাচ্ছে। এই অভিযানে সবচেয়ে বেশি লাভবান হয়েছেন আমাদের মা-বোন ও মেয়েরা। একটি সংবেদনশীল সরকার গরিবদের দুঃখ দুর্দশা অনুভব করে কিভাবে কাজ করছে এটা আজ দেশের প্রত্যেক মানুষ অনুভব করছেন। করোনার সংকটকালে টিকাকরণ নিয়েও মানুষ এটা অনুভব করেছেন যদি আগের সরকারগুলি থাকতো তাহলে হয়তো এখনও পর্যন্ত এখানে টিকাকরণ হতো না। কিন্তু এটা মোদী। আমি বলেছি করোনা প্রতিরোধে দ্রুত গতিতে আমাদের পাহাড়ে পাহাড়ে টিকা পৌঁছে দিতে হবে। আমি উত্তরাখন্ড এবং হিমাচল প্রদেশের সরকারকে অভিনন্দন জানাই যে, তারা সবার আগে এই টিকাকরণের কাজ সম্পূর্ণ করেছে। এই বিশ্বব্যাপী মহামারীর কারনে সাধারণ মানুষকে যেন দুর্ভিক্ষের শিকার না হতে হয়, শিশুদের যেন অপুষ্টির শিকার না হতে হয় তা সুনিশ্চিত করতে আমরা প্রধানমন্ত্রী গরিব কল্যাণ অন্ন যোজনা শুরু করেছি। এই প্রকল্পের ফলে আমাদের উত্তরাখন্ডেও লক্ষ লক্ষ মানুষ বিনামূল্যে রেশন পেয়েছেন। আমরা নিশ্চিত করেছি যাতে কোনো গরিবের বাড়িতে উনুন জ্বলা বন্ধ না হয়, যাতে কোনো শিশুকে অভুক্ত না থাকতে হয়, আর আমরা এটা সাফল্যের সঙ্গে করতে পেরেছি ভাই ও বোনেরা।

কিছুদিন আগেই আমাদের সরকার এই প্রকল্পের মেয়াদ তিন মাস বাড়িয়ে দিয়েছে, যাতে এই উৎসবের দিনগুলিতে আমাদের গরিব পরিবারগুলির কোনো সমস্যা না হয়। আমাদের ডবল ইঞ্জিন সরকারের প্রচেষ্টা এখন উত্তরাখন্ডে উন্নয়ন প্রকল্পগুলি আরো দ্রুত গতিতে সম্পন্ন হচ্ছে। যাঁরা কাজের খোঁজে নিজের বাড়ি ও গ্রাম ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন তাঁরা এখন আবার নিজের বাড়ি ও গ্রামে ফিরে আসছেন। গ্রামে গ্রামে হোম-স্টে, গেস্ট হাউস, ধাবা ছোট ছোট দোকানের পসরা আবার জমে উঠেছে। আর এই যে নতুন পরিষেবাগুলি আমরা চালু করছি এতে উত্তরাখন্ডের পর্যটন শিল্প আরো উন্নত হবে। আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে ডবল ইঞ্জিন সরকার এখানকার নবীন প্রজন্মের মানুষদের দক্ষতা উন্নয়নের মাধ্যমে হোম-স্টে পরিষেবাকে আরো উন্নত করছে। সীমান্তবর্তী এলাকার ছাত্রছাত্রীদের এনসিসি-র সঙ্গে যুক্ত করার মাধ্যমে তাদের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত করছে। গোটা দেখে সীমান্তবর্তী এলাকাগুলিতে যতো স্কুল রয়েছে এখন আমরা সেগুলিতে এনসিসি চালু করছি। আমেদাবাদ, মুম্বাই, চেন্নাই এ রকম বড় বড় জায়গায় এনসিসি ৭৫ বছর ধরে চলেছে। এখন এই গ্রামগুলিতে এই এনসিসি চলবে। আমার গ্রামের ছেলেমেয়েরা লাভবান হবে।

বন্ধুগণ,
    
আমাদের পাহাড়ের জনগণের সবচাইতে বড় সমস্যা হল যোগাযোগ ব্যবস্থার অভাব। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো না হলে পাহাড়ের জীবন প্রকৃতই পাহাড়ের মতো হয়ে পরে। আমাদের ডবল ইঞ্জিন সরকার এই সমস্যারও সমাধান করছে। আজ উত্তরাখন্ডকে মাল্টিমডেল কানেক্টিভিটি প্রদান করার জন্য যথা সম্ভব চেষ্টা করা হচ্ছে। হিমালয়ের সবুজ পাহাড়গুলিতে রেল গাড়ির শব্দ ও তার গুঞ্জরন উত্তরাখন্ডের উন্নয়নের এক নতুন গাথা লিখবে। দেরাদুন এয়ারপোর্টও এখন নতুনভাবে পরিষেবা দিচ্ছে। সম্প্রতি আমি হিমাচল প্রদেশে গিয়েছিলাম। সেখানে আমি বন্দে ভারত ট্রেন চালু করে এসেছি। অনেকেই আমাকে বলেছেন যে আমাদের এখানে অনেক বয়স্ক মানুষ রয়েছেন যে তাঁরা কখনও রেলগাড়ি দেখেননি। আর আপনি আমাদের হিমাচল প্রদেশে বন্দে ভারত ট্রেন নিয়ে এসেছেন! আমি বলতে চাই এটা সূত্রপাত মাত্র। সেদিন দূরে নেই, যখন হিমাচল প্রদেশ কিংবা উত্তরাখন্ড থেকে দিল্লি এবং উত্তর প্রদেশে যাতায়াতে বেশি সময় লাগবে না। চার লেনের মহাসড়ক এবং এক্সপ্রেসওয়ে দ্রুত আপনাদের কাছে পৌঁছাতে চলেছে। “চার ধাম অল ওয়েদার রোড” উত্তরাখন্ডের জনগণের পাশাপাশি পর্যটক ও তীর্থযাত্রীদের জন্য একটি নতুন অনুভব এনে দিচ্ছে। এখন প্রত্যেকেই এখান থেকে নতুন নতুন অভিজ্ঞতা নিয়ে ফিরছেন। দিল্লি, দেরাদুন ইকোনমিক করিডরের মাধ্যমে দিল্লি ও দেরাদুনের মাধ্যমে দূরত্ব তো কমবেই, এর ফলে উত্তরাখন্ডের শিল্পোদ্যোগেও জোয়ার আসবে।

ভাই ও বোনেরা,

আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থা দেশ রক্ষারও গ্যারান্টি দেয়। সেজন্য বিগত ৮ বছরে আমরা এই লক্ষ্যে একের পর এক পদক্ষেপ নিয়েছি। কয়েক বছর আগে আমরা ভারতমালা এবং সাগরমালা নামক দুটি বড় প্রকল্পের কাজ শুরু করেছিলাম। ভারতমালার মাধ্যমে দেশের সীমান্তবর্তী এলাকাগুলি উন্নত এবং প্রশস্ত সড়ক পথের মাধ্যমে যুক্ত করছি। আর সাগরমালার মাধ্যমে আমাদের সুবিস্তৃত সমুদ্রতটীও এলাকাগুলির যোগাযোগ ব্যবস্থাকে আরো শক্তিশালী করে তোলা হচ্ছে। বিগত ৮ বছর ধরে জম্মু-কাশ্মীর থেকে শুরু করে অরুণাচলপ্রদেশ পর্যন্ত বর্ডার কানেক্টিভিটির অভূতপূর্ব উন্নতি হয়েছে। ২০১৪র পর থেকে বর্ডার রোড অর্গানাইজেশন প্রায় ৭ হাজার কিলোমিটার নতুন সড়কপথ নির্মাণ করেছে ও কয়েকশো নতুন সেতু নির্মাণ করেছে। বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সুরঙ্গ পথেরও কাজ সম্পূর্ণ হয়েছে। একটা সময় ছিল যখন সীমান্তবর্তী এলাকায় সড়ক নির্মাণের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের অনুমতি নিতে হতো। আমরা এই বাধ্যবাধকতাকে সমাপ্ত করেছি, আর সীমান্তবর্তী এলাকায় দ্রুত সড়ক নির্মাণে জোর দিয়েছি। এখন পাহাড়ি রাজ্যগুলির যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করার জন্য আমরা সাগরমালা ও ভারতমালার মতোই পর্বতমালা অভিযান শুরু করতে চলেছি। এর ফলে উত্তরাখন্ড এবং হিমাচল প্রদেশে রোপওয়ের একটি অনেক বড় নেটওয়ার্ক তৈরি করা শুরু করেছি। আমাদের দেশে সীমান্ত বলতে অনেকেই মনে করে যে সেখানে শুধু সৈনিকরাই থাকেন। এই ধারণা বদলাতে হবে। আমাদের সীমান্তবর্তী গ্রামগুলিতে উন্নয়নের কাজ এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। উন্নয়নকে উৎসবে পরিণত করতে হবে। যারা গ্রাম থেকে কখনও চলে গেছিলেন তাদের আবার গ্রামে ফিরিয়ে আনার মতো পরিস্থিতি তৈরি করতে হবে। আমি গুজরাটে এক্ষেত্রে ভালো সাফল্য পেয়েছি। গুজরাটে পাকিস্তান সীমান্তে কচ্ছের মরুভূমিতে শেষ গ্রামের নাম হল ধোরড়ো। আজ ধোরড়ো অনেক বড় ট্যুরিস্ট সেন্টার হয়ে উঠেছে। প্রত্যেক বছর লক্ষ লক্ষ মানুষ সেখানে বেড়াতে যান। কোটি কোটি টাকার ব্যবসা হয়। এভাবে কচ্ছের শেষ গ্রামটিকে আমরা পুনরুজ্জীবিত করে দিয়েছি। আর তার ফলে গোটা এলাকা সজীব হয়ে উঠেছে।

সম্প্রতি আমরা গুজরাটের মরুভূমিতেই আর একটি এলাকাকে তেমনি উন্নত করেছি সেটি এক মায়ের স্মৃতি বিজড়িত তীর্থস্থল। সম্প্রতি উত্তরাখন্ডের আধিকারিকদের আমি সেখানে পাঠিয়েছিলাম। যান গিয়ে দেখে আসুন, এই মানা গ্রামের চারপাশে কি আমার এমন কিছু করতে পারি? আমি ভাবছি সীমান্তবর্তী গ্রামগুলিতে আর কী কী করা যায়। এই গ্রামগুলিকে আমরা আরো সূক্ষাতিসূক্ষভাবে বুঝতে চাই। এখানে মানা গ্রাম অবধি যে সড়কপথ তৈরি হবে, আমার দৃঢ় বিশ্বাস এই পথ দিয়েও অনেক পর্যটক এখানে আসবেন। পর্যটকরা শুধু এখন বদ্রী বিশাল দেখে ফিরে যাবেন না। যতক্ষণ পর্যন্ত মানা গ্রাম ঘুরে না দেখবেন তার আগে তাঁরা যেন ফিরে না যান সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে হবে। তেমনি যোশী মঠ থেকে মালারী সড়কপথের প্রশস্তিকরণ সাধারণ মানুষের পাশাপাশি সৈনিকদেরও দ্রুত সীমান্তে পৌঁছাতে সাহায্য করবে। 

ভাই ও বোনেরা,

আমাদের পাহাড়ি রাজ্যগুলির সমস্যা প্রায় একই রকম। উন্নয়নের আকাঙ্খাও অত্যন্ত প্রবল। বিশেষ করে উত্তরাখন্ড এবং হিমাচল প্রদেশ ভূগোল ও পরম্পরার হিসেবে পরস্পরের সঙ্গে নানা ভাবে যুক্ত। এই গারোওয়াল প্রদেশ, উত্তর কাশী, দেরাদুন আর ওদিকে সিমলা, জৌনসার আর সিরমৌরার প্রাকৃতিক পরিবেশ প্রায় একই রকম। আমি সম্প্রতি হিমাচল প্রদেশ গিয়েছিলাম। সেখানকার মানুষের মুখে শুনেছি যেভাবে উত্তরাখন্ডের দ্রুত উন্নয়নের জন্য, ঐতিহ্য ও আস্থার আধ্যাত্মিকতার স্থানগুলি উন্নয়নের জন্য, সীমান্তবর্তী এবং পাহাড়ি এলাকাগুলির পরিষেবা বৃদ্ধির জন্য ডবল ইঞ্জিন সরকারকে দ্বিতীয়বার আনা হয়েছে, এই মন্ত্র হিমাচল প্রদেশকেও প্রেরণা যোগাচ্ছে। আমি বাবা কেদার এবং বদ্রী বিশালের এই এলাকার জনগণের বিশ্বাস রক্ষা করার প্রতিশ্রুতি দিতে আর আপনাদের আশীর্বাদ চাইতে এখানে এসেছি। আর একবার সমস্ত উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য আপনাদের সবাইকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানাই, আর এতো বিপুল সংখ্যায় আপনারা আমাদের আশীর্বাদ দিতে এসেছেন, এতো মা-বোনেরা এসেছে, সমস্ত বাড়ি খালি করে এসেছেন, ছোটো মানা গ্রামে আজ এতো বিপুল জনসমাগম! আমি কত ভাগ্যবান, এত মা ও বোনেরা আমাকে আশীর্বাদ দিচ্ছেন। প্রকৃতই আজ আমার জীবন ধন্য হয়ে গেছে। আমি আপনাদের সবাইকে দীপাবলির অগ্রিম শুভেচ্ছা জানাই। আপনাদের উন্নত স্বাস্থ্যের জন্য আর আপনাদের সন্তানদের উন্নতির জন্য বদ্রী বিশালের চরণে প্রার্থনা জানিয়ে আমার বক্তব্য সম্পূর্ণ করছি। আমার সঙ্গে সম্পূর্ণ শক্তি দিয়ে জোরে বলুন, 

ভারত মাতা কি জয়,

ভারত মাতা কি জয়,

ভারত মাতা কি জয়,

জয় বদ্রী বিশাল,

জয় বদ্রী বিশাল,

জয় বদ্রী বিশাল,

জয় বাবা কেদার,

জয় বাবা কেদার,

জয় বাবা কেদার।

 

PG/SB/ NS