নতুন দিল্লি, ১৩ই ডিসেম্বর, ২০২১
হর হর মহাদেব। হর হর মহাদেব, নমঃ পার্বতী পতয়ে, হর হর মহাদেব।। মা অন্নপূর্ণার জয়। গঙ্গা মাঈয়ার জয়। এই ঐতিহাসিক আয়োজনে উপস্থিত উত্তরপ্রদেশের রাজ্যপাল শ্রীমতী আনন্দিবেন প্যাটেলজি, উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী কর্মযোগী শ্রী যোগী আদিত্যনাথজি, ভারতীয় জনতা পার্টির জাতীয় অধ্যক্ষ আমাদের সকলের পথপ্রদর্শক শ্রী জে পি নাড্ডাজি, উত্তরপ্রদেশের উপমুখ্যমন্ত্রী ভাই কেশব প্রসাদ মৌর্যজি, শ্রী দীনেশ শর্মাজি, কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় আমার সঙ্গী শ্রী মহেন্দ্রনাথ পান্ডেজি, উত্তরপ্রদেশ ভারতীয় জনতা পার্টির অধ্যক্ষ শ্রী স্বতন্ত্রদেব সিংজি, রাজ্যের মন্ত্রী শ্রী নীলকন্ঠ তিওয়ারীজি, দেশের প্রত্যেক প্রান্ত থেকে আসা পূজনীয় সন্ন্যাসীগণ আর আমার প্রিয় কাশীবাসী জনগণ, দেশ – বিদেশ থেকে এই অনুষ্ঠানের সাক্ষী হওয়ার জন্যে সমাগত সমস্ত শ্রদ্ধাবান বন্ধুরা! কাশীর সমস্ত বন্ধুদের সঙ্গে বাবা বিশ্বনাথের চরণে আমি মাথা ঠেকাচ্ছি। মা অন্নপূর্ণার চরণে বার বার বন্দনা করছি। এখন আমি বাবার পাশাপাশি নগর-কোতোয়াল কালভৈরবজির দর্শণ করেই এখানে এসেছি। দেশবাসীর জন্যে তাঁর আর্শীবাদ নিয়ে এসেছি। কাশীতে বিশেষ যা কিছু হবে, নতুন করে বিশেষ যা কিছু হবে, তা সবার আগে তাঁর অনুমতি অবশ্যই নিতে হয়। আমি কাশীর কোতোয়ালের চরণেও প্রণাম জানাই।
গঙ্গা তরঙ্গ রমণীয় জটা – কলাপম্,
গৌরি নিরন্তর বিভূষিত বাম – ভাগম্নারায়ণ
প্রিয় – মনংঙ্গ- মদাপ – হারম
বারাণসী পুর – পতিম্ ভজ বিশ্বনাথম্।
আমি বাবা বিশ্বনাথের দরবার থেকে দেশ তথা বিশ্বের সেই সমস্ত শ্রদ্ধাবান ব্যক্তিদের প্রণাম জানাই, যাঁরা নিজের নিজের জায়গা থেকে এই মহাযজ্ঞের সাক্ষী হয়ে উঠছেন। আমি আপনাদের সবাইকে আর যাঁদের অকুন্ঠ সহযোগিতায় আজকের এই শুভ মুহুর্তটি উপস্থিত হয়েছে, সেই কাশীবাসী মানুষদের প্রণাম জানাই। সবার হৃদয় আজ উচ্ছ্বসিত, সব্বার মন আজ আল্লাদিত। আপনাদের সবাইকে অনেক অনেক শুভকামনা জানাই।
বন্ধুগণ,
আমাদের পুরাণে বলা হয়েছে যে, যখনই কেউ কাশীতে প্রবেশ করেন, সমস্ত বন্ধন থেকে মুক্ত হয়ে যান, ভগবান বিশ্বেশ্বরের আর্শীবাদ এক আলৌকিক প্রাণশক্তি। এখানে আসতেই আমাদের অন্তরাত্মাকে জাগ্রত করে তোলে। আর আজ তো এই চির চৈতন্য কাশীর চেতনায় একটি ভিন্ন স্পন্দন অনুভব করছি। আজ আদি কাশীর অলৌকিকতাতেও একটি ভিন্ন আভা অনুভব করছি। আজ শাশ্বত বেনারসের সংকল্পেও একটি ভিন্ন সামর্থ দেখা যাচ্ছে, আমাদের শাস্ত্রগুলি থেকে পাঠ হতে শুনেছি, যখনই কোনো পুণ্য অবসর আসে, তখন সমস্ত তীর্থ, সমস্ত অলৌকিক শক্তি বেনারসে বাবার কাছে এসে উপস্থিত হয়। আজ এমনই কিছু অভিজ্ঞতা আমি বাবার দরবারে এসে অনুভব করছি। এরকম মনে হচ্ছে যে আমাদের সম্পূর্ণ চেতনব্রহ্মান্ড আমাদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। এমনিতে তো আমাদের মায়ার বিস্তার সম্পর্কে বাবাই জানেন। কিন্তু যতদূর পর্যন্ত আমাদের মানুষের দৃষ্টি প্রসারিত হয়, ‘বিশ্বনাথ ধাম’ –এর এই পবিত্র আয়োজননের সঙ্গে এই সময় গোটা বিশ্ব যুক্ত হয়েছে।
বন্ধুগণ,
আজ ভগবান শিবের প্রিয় দিন সোমবার। আজ বিক্রম সম্বত ২০১৮, মার্গশিষ্য শুক্লপক্ষ দশমী তিথিতে আজ একটি নতুন ইতিহাস রচিত হচ্ছে। আর আমাদের সৌভাগ্য হল যে, আমরা আজ এই তিথির সাক্ষী হয়ে উঠছি। আজ বিশ্বনাথ ধাম অকল্পনীয় – অনন্ত প্রাণশক্তিতে পরিপূর্ণ। এর বৈভব ক্রমে বিস্তারিত হচ্ছে। এর বৈশিষ্ট্য আকাশ স্পর্শ করছে। এর আশেপাশে যত প্রাচীন মন্দির লুপ্ত হয়ে গিয়েছিল, সেগুলিকেও পুনরুদ্ধার করা হয়েছে। বাবা নিজের ভক্তদের অনেক শতাব্দীর সেবায় প্রসন্ন হয়েছেন। সেজন্যে তিনি আজকের দিনেই আমাদের আশীর্বাদ দিয়েছেন। বিশ্বনাথ ধামের এই সম্পূর্ণ নতুন পরিসর নিছকই একটি অনিন্দ্যসুন্দর ভবন নয়, এই প্রতীক আমাদের ভারতের সনাতন সংস্কৃতির। এই প্রতীক আমাদের আধ্যাত্মিক আত্মার, এই প্রতীক ভারতের প্রাচীনতার, এই প্রতীক ভারতের নানা পরম্পরার, ভারতের প্রাণশক্তির ও গতিশীলতার। আপনারা যখন এখানে আসবেন, তখন শুধুই আস্থার সঙ্গে দর্শন হবে, তা নয়, আপনাদের এখানে এলে নিজের অতীত গৌরবের অনুভব হবে। কেমন প্রাচীনতা এবং নবীনতা একসঙ্গে সজীব হয়ে উঠছে। কিভাবে পুরাতনের প্রেরণাগুলি ভবিষ্যৎকে পথ দেখাচ্ছে, এর সাক্ষাৎ দর্শন আমরা বিশ্বনাথ ধামে করছি।
বন্ধুগণ,
যে মা গঙ্গা উত্তরবাহিনী হয়ে প্রতিনিয়ত বাবার পা ধুয়ে দেওয়ার জন্য কাশীতে আসেন, সেই মা গঙ্গাও আজ অত্যন্ত প্রসন্ন হবেন। এখন যখন আমরা ভগবান বিশ্বনাথের চরণে প্রণাম করবো, ধ্যান করবো, তখন মা গঙ্গাকে ছুঁয়ে যাওয়া বাতাস আমাদের আদর করবে, আর্শীবাদ দেবে। আর যখন মা গঙ্গা উন্মুক্ত হবেন, প্রসন্ন হবেন, তখন বাবার ধ্যানে আমরা গঙ্গা তরঙ্গে কলকল ধ্বনি শুনতে পাবো। এক ঈশ্বরিক অনুভূতিও অনুভব করতে পারবো। বাবা বিশ্বনাথ সকলের, মা গঙ্গা সকলের। তাঁর আর্শীবাদ সকলের জন্য। কিন্তু সময় এবং পরিস্থিতি অনুসারে বাবা ও মা গঙ্গাকে সহজে সেবা করা যাচ্ছিল না। এখানে প্রত্যেকেই আসতে চাইতেন। কিন্তু পথ এবং স্থানসঙ্কুলান হচ্ছিল না। বয়স্কদের জন্য, দিব্যাঙ্গদের জন্য এখানে আসা অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়ছিল। কিন্তু এখন, ‘বিশ্বনাথ ধাম পরিযোজনা’ সম্পূর্ণ হওয়ার ফলে এখানে প্রত্যেকের আসার পথ সুগম হয়েছে। আমাদের দিব্যাঙ্গ ভাই – বোনেরা, বয়স্ক বাবা – মা-রা সরাসরি নৌকার মাধ্যমে জেটি পর্যন্ত আসবেন। জেটি থেকে ঘাট পর্যন্ত আসার জন্যেও এস্কেলেটর লাগানো হয়েছে। ওখান থেকে সরাসরি মন্দির পর্যন্ত আসতে পারবেন। আগে সরু গলিগুলির কারণে দর্শনের জন্যে ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করতে হতো। কত সমস্যা হতো, তা এখন হয়তো অনেক কমে যাবে। আগে এখানে যে মন্দির পরিসর মাত্র ৩০০০ বর্গফুট ছিল, সেটিকে এখন প্রায় ৫ লক্ষ বর্গফুট করে দেওয়া হয়েছে। এখন মন্দির, আর মন্দির পরিসরে ৫০, ৬০, ৭০ হাজার ভক্ত একসঙ্গে আসতে পারেন। অর্থাৎ আগে মা গঙ্গার দর্শন – স্নান আর তারপর সেখান থেকে সরাসরি বিশ্বনাথ ধাম। এই আদি ব্যবস্থাই আবার সুচারু রূপে বাস্তবায়িত হল। হর হর মহাদেব!
বন্ধুগণ,
যখন আমি বেনারস আসতাম, তখন একটি বিশ্বাস নিয়ে আসতাম। আমার নিজের থেকেও বেশি বিশ্বাস ছিল বেনারসের মানুষের উপর, আপনাদের উপর। আজ হিসেব-নিকেশের সময় নয়। কিন্তু আমার মনে আছে, তখন এমন কিছু মানুষও ছিলেন, যারা বেনারসের জনগণের ক্ষমতা সম্পর্কে সন্দেহ প্রকাশ করতান।‘কিভাবে হবে…’, ‘সম্ভব নয়…’, এখানে এভাবেই সব কিছু চলতো! ওরা বলতেন, ‘এই মোদীজি যেন নিজেকে খুব বড় কিছু ভাবছেন!’ আমার আশ্চর্য হয় যে তাঁদের মনে বেনারসের জন্য এমন সব ধারণা কিভাবে তৈরি হয়েছিল। এমন সব যুক্তি দেওয়া হত যে, ঠিক কী বলবো! এই জড়তা আসলে বেনারসের ছিল না, হতেও পারে না! এগুলির পেছনে ছিল রাজনীতি। কিছু মানুষের ব্যক্তিগত স্বার্থ। সেজন্য বেনারসের উপর আরোপ লাগানো হতো। কিন্তু কাশী তো কাশী? কাশী তো অবিনাশী। কাশীতে একটাই সরকার আছে, যাঁর হাতে ডমরু আছে, তাঁর সরকার। যেখানে গঙ্গা তার ধারাকে বদলে দিয়ে প্রবাহিত হন, সেই কাশীর উন্নতি কে আটকাতে পারবে ? কাশীখন্ডে দাঁড়িয়ে ভগবান শঙ্কর নিজে বলেছিলেন,
“বিনা মম প্রসাদম ভৈ, কঃ কাশী প্রতি – প্রদ্যতে”
অর্থাৎ, আমার প্রসন্নতা ছাড়া কাশীতে কে আসতে পারে ? কে একে সেবা করতে পারে। কাশীতে মহাদেবের ইচ্ছা ছাড়া কেউই আসতে পারে না। আর তাঁর ইচ্ছা ছাড়া এখানে কিছুই হতে পারে না। এখানে যা কিছু হয়েছে স্বয়ং মহাদেবই করেছে। এই বিশ্বনাথ ধামের যে নতুন রূপ, এটিও বাবার আর্শীবাদে সম্পন্ন হয়েছে। তাঁর ইচ্ছা ছাড়া কি একটি পাতাও নড়তে পারে। যে যতই বড় হন না কেন, তিনি নিজের বাড়িতে হবেন, যাঁকে ডাকা হয়েছে, তিনিই শুধু এখানে আসতে পেরেছেন, কিছু করতে পেরেছেন।
বন্ধুগণ,
বাবার সঙ্গে আর যদি কারো অবদান থাকে তা হল বাবার গণের মানুষদের। বাবার গণের মানুষ আমাদের সমস্ত কাশীবাসী। তাঁরা প্রত্যেকেই মহাদেবেরই রূপ। যখনই বাবা তাঁর শক্তি অনুভব করাতে চান, তখন কাশীবাসীর মাধ্যমেই তিনি সেটা প্রকাশ করেন। আর কাশী যা করে বিশ্ব তা দেখে।
“ইদম সেবাও, ইদম ন মম্ ”
ভাই ও বোনেরা,
আমি আজ আমার সেই শ্রমিক ভাই বোনের প্রতিও কৃতজ্ঞতা জানাতে চাই, যাঁদের ঘাম এই অনিন্দ্যসুন্দর মন্দির চত্বর নির্মাণে ঝরেছে, যারা ঘাম ঝরিয়েছেন; করোনার এই সঙ্কটকালে তাঁরা এখানকার কাজ থামাতে দেন নি। একটু আগেই আমি এই শ্রমিক বন্ধুদের সঙ্গে সাক্ষাৎ-এর সুযোগ পেয়েছি। তাঁদের আর্শীবাদ নেওয়ার সৌভাগ্য হয়েছে। আমাদের কারিগর, আমাদের সিভিল ইঞ্জিনিয়ার বা বাস্তুপ্রকৌশলীদের সঙ্গে যুক্ত সবাইকে, প্রশাসনের সঙ্গে যাঁরা জড়িত তাঁদেরকে, আর এখানে যে পরিবারগুলির বাড়ি ছিল, তাঁদের সকলকে আমি অভিনন্দন জানাই। আর এসব কিছুর পাশাপাশি আমি উত্তরপ্রদেশ সরকার, আমাদের কর্মযোগী মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথজি ও তার গোটা টিমকেও অভিনন্দন জানাই, যাঁরা কাশী বিশ্বনাথ ধাম প্রকল্পকে বাস্তবায়িত করতে দিন – রাত কাজ করে গেছেন।
বন্ধুগণ,
আমাদের এই বারাণসী অনেক যুগ অতিক্রম করেছে, ইতিহাসের অনেক উত্থান – পতনকে দেখেছে। কত না কালখণ্ড এসেছে ও গেছে! কত না রাজত্ব গড়ে উঠেছে, আর একদিন মাটিতে মিশে গেছে। কিন্তু বেনারস তেমনি রয়েছে, নিজের রস চারিদিকে ছড়িয়ে দিচ্ছে। বাবার এই ধাম তাই শুধু শাশ্বত নয়, এর সৌন্দর্য সর্বদাই বিশ্বকে আশ্চর্যচকিত ও আকর্ষিত করেছে। আমাদের পুরাণে প্রাকৃতিক আভাবেষ্টিত এমনি কাশীর অলৌকিক স্বরূপ বর্ণনা করা হয়েছে, আমরা যদি প্রাচীন গ্রন্থগুলি দেখি, শাস্ত্রগুলি পড়ি, তাহলে দেখতে পাবো ঐতিহাসিকরাও এই শহরের গাছপালা, সরোবর ও পুকুরগুলি দ্বারা বেষ্টিত কাশীর অদ্ভুত স্বরূপ ব্যাখ্যা করেছে। কিন্তু সময় সবসময় একরকম থাকে না। হানাদার আততায়ীরা এই নগরে আক্রমণ করেছে, একে ধ্বংস করার চেষ্টা করেছে। ঔরঙ্গজেবের অত্যাচার আর তাঁর সন্ত্রাসের সাক্ষী রয়েছে ইতিহাস। যিনি সভ্যতাকে তলোয়ারের জোরে পরিবর্তনের চেষ্টা করেছেন। যিনি সংস্কৃতিকে কঠোরতা দিয়ে পদদলিত করা চেষ্টা করেছেন। কিন্তু এই দেশের মাটি অবশিষ্ট বিশ্ব থেকে কিছুটা আলাদা। এখানে যখন ঔরঙ্গজেবেরা আসে, তখন শিবাজিরাও উঠে দাঁড়ান। যদি কোনো সালার মাসুদ এখানে আক্রমণ করেন, তখন রাজা সুহেল দেবের মতো বীর যোদ্ধা তাকে আমাদের ঐক্যের শক্তি অনুভব করান। আর ইংরেজ আমলে কাশীর মানুষ ওয়ারেন্ট হেস্টিংএর কী অবস্থা করেছিল, তা তো কাশীর মানুষের আলোচনায় তাদের মুখেই বার বার শুনেছি। ঘোড়ার হাওদা আর হাতির জিন, জান বাঁচিয়ে পালান ওয়ারেন্ট হেস্টিং।
বন্ধুগণ,
আজ সময়ের চক্রকে দেখুন, সন্ত্রাসের সেই পর্যায় ইতিহাসের কালো পাতাগুলিতেই বন্দি হয়ে রয়েছে। আর আমার কাশীবাসী এগিয়ে গেছেন; নিজেদের গৌরবকে আরেকবার নতুন সৌন্দর্য প্রদান করেছেন।
বন্ধুগণ,
কাশী সম্পর্কে আমি যত বলবো, ততই ডুবতে থাকবো, ততই আবেগ আপ্লুত হতে থাকবো। কাশী শব্দের বিষয় নয়, কাশী সংবেদনার সৃষ্টি। কাশী একটি এমন শহর যেখানে জাগৃতি-ই জীবন, যেখানে মৃত্যুই মঙ্গল, যেখানেই শর্তই সংস্কার, আর যেখানে প্রেমই পরম্পরা।
ভাই ও বোনেরা,
আমাদের শাস্ত্রগুলিতেও কাশীর মহিমা কীর্তন রয়েছে, আর এই কীর্তন গাইতে গাইতে অবশেষে ‘নেতি – নেতি’ ই বলা হয়েছে। অর্থাৎ যতটা বলা হয়েছে, শুধু ততটাই নয়, তার থেকেই বেশি অনেকটা আমাদের শাস্ত্রগুলিতে বলা হয়েছে,
‘শিবম জ্ঞানম ইতি ব্র্যূ,
শিব শব্দার্থ চিন্তকাঃ’
অর্থাৎ শিবকে নিয়ে যাঁরা চিন্তা করেন, তাঁরা শিব সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করেন। সেজন্য এই কাশী শিবময়ী এই কাশী জ্ঞানময়ী। আর সেজন্যে জ্ঞান, গবেষণা অনুসন্ধান, এসবই কাশী তথা ভারতের জন্য স্বাভাবিক নিষ্ঠার বিষয়। ভগবান শিব স্বয়ং বলেছেন,
‘সর্ব ক্ষেত্রেসু ভূ পৃষ্ঠে, কাশী ক্ষেত্রম চ মে বপুঃ’
অর্থাৎ, পৃথিবীর সকল ক্ষেত্রের মধ্যে কাশী সাক্ষাৎ আমারই শরীর। সেজন্য এখানকার পাথর, এখানকার প্রতিটি মাটির কণাতেই শঙ্কর বিরাজমান। সেজন্য আমরা আমাদের কাশীকে সজীব মানি। আর এই ভাবনা থেকে আমাদের নিজের দেশের প্রতিটি মাটির কণায় মাতৃভাব জেগে ওঠে। আমাদের শাস্ত্রে বলা হয়েছে,
“দৃশ্যতে সবর্গ সর্বেঃ, কাশ্যাম্ বিশ্বেশ্বরঃ তথা”
অর্থাৎ কাশীতে সর্বত্র প্রত্যেক জীবনের মধ্যে ভগবান বিশ্বেশরের সঙ্গে দর্শন হয়। সেজন্য কাশী জীবত্বকে সরাসরি শিবত্বের সঙ্গে যুক্ত করে। আমাদের ঋষিরা এটাও বলেছেন,
“বিশ্বেশং শরণং, জায়াং, সমে বৃদ্ধিং প্রদাস্যতি”
অর্থাৎ ভগবান বিশ্বেশ্বরের চরণে এলে সমবুদ্ধি ব্যাপ্ত হয়ে পড়ে। বেনারস সেই নগরী, যেখান থেকে জগৎগুরু শঙ্করাচার্য শ্রী ডোম রাজার পবিত্রতা থেকে প্রেরণা পেয়েছেন। তিনি দেশকে একতার সূত্রে বাধার সঙ্কল্প নিয়েছিলেন। এটাই সেই স্থান যেখানে ভগবান শঙ্করের প্রেরণাই গোস্বামী তুলসি দাসজির রামচরিত মানসের মতো অলৌকিক রচনা সম্পন্ন করেছেন।
এটাই সেই মাটি, এই মাটিতেই সারনাথে ভগবান বুদ্ধের বোধ বিশ্বের জন্যে প্রকাশিত হয়েছিল, এই মাটিতেই সমাজ সংস্কারের জন্য কবীরদাসের মতো মহামানবেরা জন্ম নিয়েছেন। সমাজকে যুক্ত করার প্রয়োজন দেখা দিলে সন্ত রবিদাসজির ভক্তির শক্তির কেন্দ্রও ছিল এই কাশী। এই কাশী অহিংসার আর তপস্যার প্রতিমূর্তি, চারজন জৈন তীর্থঙ্করের মাটি। রাজা হরিশচন্দ্রের সত্যনিষ্ঠা থেকে শুরু করে বল্লভাচার্য আর রামানন্দজির জ্ঞান চৈতন্য মহাপ্রভূ আর সমর্থগুরু রামদাসের থেকে শুরু করে স্বামী বিবেকানন্দ এবং মদনমোহন মালব্য পর্যন্ত কত না ঋষি, গুরু এবং আচার্যের সঙ্গে কাশীর এই পবিত্র মাটির নিবিড় সম্পর্ক ছিল। ছত্রপতি শিবাজী মহারাজ এখান থেকে প্রেরণা পেয়েছেন। রাণী লক্ষ্মীবাঈ থেকে শুরু করে চন্দ্রশেখর আজাদ পর্যন্ত কতনা সেনানীর কর্মভূমি – জন্মভূমি ছিল এই কাশী। ভারতেন্দু হরিশচন্দ্র, জয়শঙ্কর প্রসাদ, মুন্সি প্রেমচন্দ্র, পণ্ডিত রবিশঙ্কর, আর বিসমিল্লা খানের মতো প্রতিভাদের জন্মভূমি এই নগরী – আমি এই স্মরণকে কত দূর নিয়ে যাবো, আর কত বলবো, ভান্ডার ভরা রয়েছে! যেভাবে কাশী অনন্ত, তেমনি কাশীর অবদানও অনন্ত। কাশীর উন্নয়নে এই অনন্ত পুন্যাত্মাদের প্রাণশক্তিও সামিল রয়েছে। এই উন্নয়নে ভারতের অনন্ত পরম্পরাগুলির ঐতিহ্য সামিল রয়েছে। সেজন্য প্রত্যেক মত – মতান্তরের মানুষ, প্রত্যেক ভাষা বর্গের মানুষ এখানে আসেন এবং এখানকার সঙ্গে নিজেদের আত্মিক নিবিড়তা অনুভব করেন।
বন্ধুগণ,
কাশী আমাদের ভারতের সাংস্কৃতিক, আধ্যাত্মিক, রাজধানী তো বটেই। এটি ভারতাত্মার একটি জীবন্ত অবতারও। আপনারা দেখুন, পূর্ব এবং উত্তরকে যুক্ত করা উত্তরপ্রদেশে অবস্থিত এই কাশী, এই বিশ্বনাথ মন্দিরকে ভেঙ্গে পুনর্নিমাণ করেছিলেন। মাতা ওহিল্যাবাঈ হোলকর, যাঁর জন্মভূমি ছিল মহারাষ্ট্র, কিন্তু কর্মভূমি ছিল ইন্দোর – মাহেশ্বর এবং অনেক এলাকায়। সেই মাতা ওহিল্যবাঈ হোলকরকে আজ এই উপলক্ষ্যে প্রণাম জানাই। আজ থেকে দুই – আড়াইশো বছর আগে তিনি কাশীর জন্য কত কিছু করেছেন। তার পর থেকে কাশীর জন্য এতো কাজ আবার এখনই হলো।
বন্ধুগণ,
বাবা বিশ্বনাথ মন্দিরের আভা বৃদ্ধির জন্য পাঞ্জাব থেকে মহারাজা রঞ্জিত সিং ২৩ মণ সোনা উৎসর্গ করেছিলেন, এই মন্দিরের শিখরকে সোনা দিয়ে মুড়েছিলেন। তার অনেক আগে পাঞ্জাব থেকে পূজনীয় গুরু নানক দেবজিও কাশী এসেছিলেন। এখানে সৎসঙ্গ করেছিলেন। অন্যান্য শিখ গুরুদের সঙ্গেও কাশীর বিশেষ সম্পর্ক ছিল। পাঞ্জাবের মানুষ কাশীর পুননির্মাণের জন্য মুক্তহস্তে দান করেছিলেন। পূর্বে বাংলার রাণী ভবানী বেনারসের উন্নয়নের জন্যে তার সব কিছু অর্পণ করেছিলেন। মাইসোরের রাজা এবং অন্যান্য দক্ষিণ ভারতীয় রাজারাও বেনারসের উন্নয়নের জন্য অনেক অবদান রেখেছেন। এটা এমন একটা শহর, যেখানে আপনারা উত্তর, দক্ষিণ নেপালি – প্রায় সব ধরণের শৈলিতে নির্মিত মন্দির দেখতে পাবেন। বিশ্বনাথ মন্দির এমনই আধ্যাত্মিক চেতনার কেন্দ্র ছিল, আর এখন এই বিশ্বনাথ ধাম পরিসর তার অনিন্দ্যসুন্দর রূপে এই চেতনাকে আরো প্রাণশক্তি জোগাবে।
বন্ধুগণ,
দক্ষিণ ভারতের জনগণের কাশীর প্রতি আস্থা, কাশীর উপর দক্ষিণ ভারতের প্রভাব, আর দক্ষিণ ভারতের উপর কাশীর প্রভাব আমরা সবাই খুব ভালোভাবে জানি। একটি গ্রন্থে লেখা ছিল,
“তেনো – পয়াথেন কদা – চলাত, বারাণসিম পাপ – নিবারণন।
আবাদি বাণী বলিনাহ, স্বশিষ্যন, বিলোক্য লীলা-বাসরে, বলিপ্তান”
– এই কথা কন্নর ভাষায় বলা হয়েছে। অর্থাৎ যখন জগৎগুরু মাধবাচার্যজি তার শিষ্যদের নিয়ে সফরে ছিলেন, তখন তিনি বলেছিলেন, যে কাশীর বিশ্বনাথ পাপ নিবারণ করেন। তিনি নিজের শিষ্যদের কাশীর বৈভব আর তার তার মহিমা সম্পর্কে বোঝান।
বন্ধুগণ,
কয়েক শতাব্দী ধরে এই ভাবনামালা ক্রমাগত প্রবহমান, তামিল ভাষার মহাকবি সুব্রহমণ্য ভারতি, কাশী প্রবাস যাঁর জীবনের পথ পরিবর্তন করে দিয়েছিল। তিনি এক জায়গায় তামিলে লিখেছিলেন,
‘কাশী নগরও পুলভর পেসুম উরঈ দান, কাঞ্জিইল –কে পদর্কৌর, খরুভি সেভোম’
অর্থাৎ কাশী নগরীর সন্ন্যাসী কবির ভাষণ কাঞ্চিপুরে শোনার ব্যবস্থা করবো। কাশী থেকে সঞ্চারিত প্রতিটি বার্তা এতটাই ব্যাপক যে, দেশের গতি পরিবর্তন করে দেয়। এমনিতেই আর একটি কথা বলতে চাইবো, আমার পুরোনো অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, আমাদের ঘাটগুলিতে বসবাসকারী, নৌকা চালানো মাঝিদের মতো অনেক বেনারসবাসী তো রাতে কখনো অনুভব করেছেন যে, তামিল, তেলেগু, কন্নড়, মালয়ালম এতটাই নিখুঁত বলেন, যে মনে হবে তারা বুঝি কেরালা, তামিলনাড়ু কিংবা কর্ণাটক থেকে চলে এসেছেন। এতো ভালো ওরা বলতে পারেন।
বন্ধুগণ,
ভারতের হাজার হাজার বছরের প্রাণশক্তি এভাবেই তো সুরক্ষিত থেকেছে, সংরক্ষিত থেকেছে। যখন ভিন্ন ভিন্ন স্থানের ভিন্ন ভাষার মানুষ এক সূত্রে যুক্ত হন, তখন ভারত ‘এক ভারত, শ্রেষ্ঠ ভারত’ রূপে জাগ্রত হয়ে ওঠে। সেজন্য আমাদের ‘সৌরাষ্ট্রে সোমনাথম’ থেকে শুরু করে, ‘অযোধ্যা, মথুরা, মায়া, কাশী, কাঞ্চি, অবন্তিকা’ নগরগুলিকে প্রতিদিন স্মরণ করার কথা শেখানো হয়। আমাদের দেশে তো দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গকে স্মরণ করার সুফলকে এভাবে বলা হয়েছে – ‘তস্য তস্য ফলপ্রাপ্তিকঃ, ভবিষ্যতি নসংশয়াকঃ।।’ অর্থাৎ সোমনাথ থেকে শুরু করে বিশ্বনাথ পর্যন্ত দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গকে স্মরণ করার মাধ্যমে প্রতিটি সংকল্প যে সিদ্ধ হয়, এতে কোনো সংশয় নেই। এই সংশয় এজন্য নেই, কারণ এই স্মরণের সূত্রে আমাদের মনে গোটা ভারতের ঐক্যভাব ফুটে ওঠে। আর যখন ভারতের ঐক্যভাব মনের মধ্যে জেগে ওঠে, তখন কোনো সংশয় আর বাকি থাকে না, অসম্ভব বলে আর কিছু থাকে না ?
বন্ধুগণ,
এটা নিছকই সংযোগের বিষয় নয়, কাশী যখনই আড়মোড়া ভেঙ্গেছে, তখনই নতুন কিছু হয়েছে, দেশের ভাগ্য বদলেছে। বিগত ৭ বছরে কাশীতে যে উন্নয়নের মহাযজ্ঞ চলছে, তা আজ একটি নতুন প্রাণশক্তিতে উজ্জ্বীবিত হয়ে উঠেছে। কাশী – বিশ্বনাথ ধামের এই “লোকার্পণ সমারোহ” ভারতকে একটি নির্ণায়ক দিশা প্রদান করবে। একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যতের দিকে নিয়ে যাবে। এই পরিসর আমাদের সামর্থ এবং আমাদের কর্তব্যের সাক্ষী। যদি আমরা ভেবে নিই যে করবো, আমরা যদি দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হই, তাহলে কোনো কিছুই অসম্ভব নয়। প্রত্যেক ভারতবাসীর ভূজায় যে বল রয়েছে, তা অকল্পনীয়কে মূর্ত করে তোলে। আমরা জপ জানি, তপস্যা জানি, দেশের জন্য দিন – রাত পরিশ্রম করতে জানি। প্রতিকূলতা যতই বড় হোক না কেন, আমরা সমস্ত ভারতবাসী মিলে মিশে তাকে পরাস্ত করতে পারি। বিনাশকারী শক্তি কখনও ভারতের শক্তি, আর ভারতের ভক্তি থেকে বড় হতে পারে না। মনে রাখবেন, যে দৃষ্টি দিয়ে আমরা নিজেদেরকে দেখবো, সেই দৃষ্টি দিয়ে বিশ্ব আমাদেরকে দেখবে। আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে অনেক শতাব্দীর দাসত্ব আমাদের উপর যে প্রভাব ফেলেছিল, ভারতবাসীর মনকে যে হীনভাবনা আকীর্ণ করে তুলেছিল, আজ ভারত সেই হীনভাব থেকে বেরিয়ে আসছে। আজকের ভারত শুধুই সোমনাথ মন্দিরের সৌন্দর্যায়ন করে না। সমুদ্রতলে হাজার হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ অপটিক্যাল ফাইবারও বিছিয়ে দিতে পারে। আজকের ভারত শুধুই বাবা কেদারনাথ মন্দিরের পুনর্নির্মাণ করে না, নিজেদের শক্তিতে অন্তরীক্ষ্যে ভারতীয়দের পাঠানোর প্রস্তুতি চালিয়ে যেতে পারে। আজকের ভারত শুধুই অযোধ্যায় প্রভূ শ্রীরামের মন্দির নির্মাণ করেছে না, দেশের প্রত্যেক জেলায় মেডিকেল কলেজও খুলছে। আজকের ভারত শুধুই বাবা বিশ্বনাথ ধামকে পুনর্নির্মাণ করে অনিন্দ্যসুন্দর করে তুলছে না, দেশের অসংখ্য দরিদ্র মানুষের জন্যে পাতা বাড়িও তৈরি করে দিচ্ছে।
বন্ধুগণ,
নতুন ভারতে আমাদের সংস্কৃতি নিয়ে গর্বও রয়েছে। আর আমাদের সামর্থ নিয়ে ততটাই ভরসাও রয়েছে। নতুন ভারতে ঐতিহ্যও রয়েছে। আর উন্নয়নও রয়েছে। আপনারা দেখুন, অযোধ্যা থেকে জনকপুর যাতায়াত সহজ করে তোলার জন্য ‘রাম – জানকি মার্গ’ নির্মিত হচ্ছে। আজ ভগবান রামের সঙ্গে জড়িত স্থানগুলিকে রামায়ণ সার্কিটের মাধ্যমে যুক্ত করা হচ্ছে। আর পাশাপাশি রামায়ণ ট্রেনও চালানো হচ্ছে। বুদ্ধ সার্কিট নিয়ে যেমন কাজ হচ্ছে, তেমনি কুশীনগরে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরও তৈরি করা হয়েছে। একদিকে যেমন কর্তারপুর সাহিব করিডর নির্মাণ করা হয়েছে, তেমনি অন্যদিকে হেমকুণ্ড সাহিবজির দর্শন সহজ করে তোলার জন্য রোপওয়ে নির্মাণের প্রস্তুতি চলছে। উত্তরাখণ্ডে ‘চার ধাম সড়ক মহাপরিযোজনা’ নিয়ে দ্রুত গতিতে কাজ চলছে। ভগবান ভিঠ্ঠলের কোটি কোটি ভক্তদের আর্শীবাদে ‘শ্রী সন্ত জ্ঞানেশ্বর মহারাজ পালখী মার্গ’ এবং ‘সন্ত তুকারাম মহারাজ পালখী মার্গ’ নির্মাণের কাজও এই কয়েক সপ্তাহ আগেই শুরু হয়ে গেছে।
বন্ধুগণ,
কেরালায় গুরু ভায়ুর মন্দির থেকে শুরু করে তামিলনাড়়ুতে কাঞ্চিপুরম – ভেলনকানী, তেলেঙ্গানায় জোবুলাম্বা দেবী মন্দির থেকে শুরু করে পশ্চিমবঙ্গে বেলুড়মঠ, গুজরাটের দ্বারকাজি থেকে শুরু করে অরুণাচলপ্রদেশের পরশুরামকুন্ড দেশের ভিন্ন ভিন্ন রাজ্যে আমাদের আধ্যাত্মিকতা এবং সংস্কৃতির সঙ্গে যুক্ত এরকম অনেক স্থানে সম্পূর্ণ ভক্তিভাব নিয়ে কাজ করা হয়েছে, অথবা কাজ চলছে।
ভাই ও বোনেরা,
আজকের ভারত তার হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্যকে আবার সঞ্জীবিত করে তুলছে, পুনরুজ্জীবিত করে তুলছে। এখানে কাশীতে তো মা অন্নপূর্ণা স্বয়ং বিরাজমান। আমি অত্যন্ত আনন্দিত, কাশী থেকে চুরি করে নিয়ে যাওয়া মা অন্নপূর্ণার মূর্তি এক শতাব্দী অপেক্ষার পর, একশো বছর পর আরেকবার কাশীতে স্থাপন করা হয়েছে। মা অন্নপূর্ণার কৃপায় করোনার কঠিন সময়ে দেশ নিজের অন্ন ভান্ডার খুলে দিয়েছে, যাতে দেশের কোনো দরিদ্র মানুষকে খালিপেটে না ঘুমাতে হয়, সেদিকে লক্ষ্য রাখা হয়েছে, বিনামূল্যে রেশনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
বন্ধুগণ,
যখনই আমরা ভগবানের দর্শন করতে আসি, মন্দিরে আসি, অনেকবার ঈশ্বরের কাছে কিছু চাই, কিছু সংকল্প নিয়ে আসি, আমার জন্যে তো জনগণেশই ঈশ্বরের রূপ। আমার জন্যে প্রত্যেক ভারতবাসী ঈশ্বরেরই অংশ। সমস্ত মানুষ যেমন ভগবানের কাছে এসে কিছু চায়, তেমনি আমিও আপনাদের ভগবান বলে মনে করি। জনগণেশকে ঈশ্বরের রূপ বলে মানি। তখন আজ আপনাদের কাছে কিছু প্রার্থনা জানাতে চাই। আপনাদের থেকে কিছু ভিক্ষা চাই। আমি নিজের জন্যে, আমার দেশের জন্যে তিনটি সংকল্প গ্রহণের অনুরোধ জানাই। একথা ভুলবেন না, তিনটি সংকল্প। আর এই অনুরোধ আমি বাবার পবিত্র মাটি থেকে করছি। প্রথমটি হল, পরিচ্ছন্নতা, দ্বিতীয়টি সৃষ্টিশীলতা, আর তৃতীয়টি আত্মনির্ভর ভারত গঠনের জন্য ক্রমাগত চেষ্টা। পরিচ্ছন্নতা একটি জীবনশৈলী, পরিচ্ছন্নতা আমাদের জীবনকে অনুশাসনে রাখে। আমাদের জীবনে কর্তব্যের একটি বড় শৃঙ্খলা নিয়ে আসে। ভারত যতই উন্নয়ন করুক না কেন, পরিচ্ছন্ন না থাকলে আমাদের জন্য এগিয়ে যাওয়া কঠিন হবে। এই লক্ষ্যে আমরা অনেক কিছু করেছি। কিন্তু আমাদের নিজেদের চেষ্টাকে আরো বাড়াতে হবে। কর্তব্যের ভাবনায় উজ্জীবিত আপনাদের একটি ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা দেশকে অনেক সাহায্য করবে। এখানে বেনারসেও শহরের অলিগলিতে, ঘাটগুলিতে পরিচ্ছন্নতাকে আমাদের একটি নতুন স্তরে নিয়ে যেতে হবে। গঙ্গাজির পরিচ্ছন্নতার জন্য উত্তরাখণ্ড থেকে শুরু করে পশ্চিমবঙ্গ পর্যন্ত কত না প্রচেষ্টা চলছে! ‘নমামি গঙ্গে অভিযান’ যেন সফল হয়, সেদিকে সজাগ থেকে আমাদের কাজ করে যেতে হবে।
বন্ধুগণ,
দাসত্বের দীর্ঘ কালখণ্ড আমাদের আত্মবিশ্বাসকে এমনভাবে ভেঙেছিল যে ভারতবাসী নিজের সৃষ্টির উপর, সৃজনশীলতার উপর বিশ্বাস হারিয়েছিল। আজ হাজার হাজার বছর পুরোনো এই কাশী থেকে প্রত্যেক ভারতবাসীর প্রতি আমি একটি আহ্বান জানাতে চাই, সম্পূর্ণ আত্মবিশ্বাস নিয়ে সৃষ্টির পথে এগিয়ে যান, উদ্বাবন করুন, উদ্ভাবক পদ্ধতিতে করুন। যখন ভারতের যুব সম্প্রদায় করোনার এই কঠিন সময়ে হাজার হাজার স্টার্টআপ গড়ে তুলতে পারে, এতো প্রতিকূলতার মধ্যে ৪০টিরও বেশি ইউনিকর্ন গড়ে তুলতে পারে, এ থেকে বোঝা যায় যে, ভারতবাসী যা খুশি করতে পারে। আপনারা ভাবুন, এক একটি ইউনিকর্ন এমন স্টার্টআপ যেগুলি প্রায় ৭০০০ কোটি টাকারও বেশি, আর যা মাত্র গত দেড় বছরের মধ্যে গড়ে উঠেছে। এটা অভূতপূর্ব। প্রত্যেক ভারতবাসী, যে যেখানে আছে, যে ক্ষেত্রের কাজ করেন, তাঁরা দেশের জন্য নতুন কিছু করার চেষ্টা করবেন। তবেই আমরা নতুন পথ খুঁজে পাবো। নতুন পথ তৈরি হবে, আর আমরা প্রত্যেক নতুন গন্তব্যে অবশ্যই পৌঁছবো।
ভাই ও বোনেরা,
তৃতীয় একটি সংকল্প যা আমাদের নিতে হবে, সেটি হল আত্মনির্ভর ভারতের জন্যে আমাদের চেষ্টা বাড়ানো। এখন স্বাধীনতার অমৃতকাল চলছে। আমরা স্বাধীনতার ৭৫তম বর্ষ পালন করছি। যখন ভারত স্বাধীনতার শতবর্ষ সমারোহ পালন করবে, তখনকার ভারত কেমন হবে, তার জন্য আমাদের এখন থেকে কাজ করতে হবে। আর সেই জন্য আমাদের আত্মনির্ভর হয়ে ওঠা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। যখন আমরা দেশের তৈরি জিনিসগুলির জন্য গর্ব অনুভব করবো, যখন ‘লোকালের জন্য ভোকাল’ হবো, যখন আমরা এমন জিনিসগুলি শুধুই কিনবো, যেগুলি তৈরি করতে কোনো ভারতবাসীর কোনো ঘাম ঝরেছে, তখন আমরা এই অভিযানকে সাহায্য করবো। অমৃতকালে ভারত ১৩০ কোটি দেশবাসীর প্রচেষ্টায় এগিয়ে চলেছে, মহাদেবের কৃপায়, প্রত্যেক ভারতবাসীর প্রচেষ্টায় আমরা আত্মনির্ভর ভারতের স্বপ্ন বাস্তবায়িত করে দেখাবো। এই বিশ্বাস নিয়ে আমি বাবা বিশ্বনাথের, মা অন্নপূর্ণার, কাশী কোতোয়ালের, আর সমস্ত দেবদেবীর চরণে আরেক বার প্রণাম জানাই। এতো বিপুল সংখ্যক মানুষ দেশের নানা প্রান্ত থেকে এসে জুটেছেন, এতো পূজনীয় সন্ন্যাসী ও মহাত্মা পুরুষ এসেছেন, এটা আমাদের জন্য, আমার মতো সাধারণ নাগরিকদের জন্য একটি সৌভাগ্যের মুহুর্ত। আমি সমস্ত সন্ন্যাসীদের, সমস্ত পূজনীয় মহাত্মাদের মাথা নত করে হৃদয় থেকে অভিনন্দন জানাই, প্রণাম জানাই। আমি আজ সমস্ত কাশীবাসীকে, সমস্ত দেশবাসীকে আরেকবার শুভেচ্ছা জানাই, অনেক অনেক শুভ কামনা, অনেক অনেক শুভ কামনা। হর হর মহাদেব।
CG/SB/SFS
Special day for us all. Inauguration of Shri Kashi Vishwanath Dham. https://t.co/Kcih2dI0FG
— Narendra Modi (@narendramodi) December 13, 2021
अभी मैं बाबा के साथ साथ नगर कोतवाल कालभैरव जी के दर्शन करके भी आ रहा हूँ, देशवासियों के लिए उनका आशीर्वाद लेकर आ रहा हूँ।
— PMO India (@PMOIndia) December 13, 2021
काशी में कुछ भी खास हो, कुछ भी नया हो, उनसे पूछना आवश्यक है।
मैं काशी के कोतवाल के चरणों में भी प्रणाम करता हूँ: PM @narendramodi
हमारे पुराणों में कहा गया है कि जैसे ही कोई काशी में प्रवेश करता है, सारे बंधनों से मुक्त हो जाता है।
— PMO India (@PMOIndia) December 13, 2021
भगवान विश्वेश्वर का आशीर्वाद, एक अलौकिक ऊर्जा यहाँ आते ही हमारी अंतर-आत्मा को जागृत कर देती है: PM @narendramodi
विश्वनाथ धाम का ये पूरा नया परिसर एक भव्य भवन भर नहीं है,
— PMO India (@PMOIndia) December 13, 2021
ये प्रतीक है, हमारे भारत की सनातन संस्कृति का!
ये प्रतीक है, हमारी आध्यात्मिक आत्मा का!
ये प्रतीक है, भारत की प्राचीनता का, परम्पराओं का!
भारत की ऊर्जा का, गतिशीलता का: PM @narendramodi
आप यहाँ जब आएंगे तो केवल आस्था के दर्शन नहीं करेंगे।
— PMO India (@PMOIndia) December 13, 2021
आपको यहाँ अपने अतीत के गौरव का अहसास भी होगा।
कैसे प्राचीनता और नवीनता एक साथ सजीव हो रही हैं,
कैसे पुरातन की प्रेरणाएं भविष्य को दिशा दे रही हैं,
इसके साक्षात दर्शन विश्वनाथ धाम परिसर में हम कर रहे हैं: PM @narendramodi
पहले यहाँ जो मंदिर क्षेत्र केवल तीन हजार वर्ग फीट में था, वो अब करीब 5 लाख वर्ग फीट का हो गया है।
— PMO India (@PMOIndia) December 13, 2021
अब मंदिर और मंदिर परिसर में 50 से 75 हजार श्रद्धालु आ सकते हैं।
यानि पहले माँ गंगा का दर्शन-स्नान, और वहाँ से सीधे विश्वनाथ धाम: PM @narendramodi
काशी तो काशी है! काशी तो अविनाशी है।
— PMO India (@PMOIndia) December 13, 2021
काशी में एक ही सरकार है, जिनके हाथों में डमरू है, उनकी सरकार है।
जहां गंगा अपनी धारा बदलकर बहती हों, उस काशी को भला कौन रोक सकता है? - PM @narendramodi
मैं आज अपने हर उस श्रमिक भाई-बहन का भी आभार व्यक्त करना चाहता हूं जिसका पसीना इस भव्य परिसर के निर्माण में बहा है।
— PMO India (@PMOIndia) December 13, 2021
कोरोना के विपरीत काल में भी, उन्होंने यहां पर काम रुकने नहीं दिया।
मुझे अभी अपने इन श्रमिक साथियों से मिलने का, उनका आशीर्वाद लेने का सौभाग्य मिला है: PM
हमारे कारीगर, हमारे सिविल इंजीनयरिंग से जुड़े लोग, प्रशासन के लोग, वो परिवार जिनके यहां घर थे सभी का मैं अभिनंदन करता हूं।
— PMO India (@PMOIndia) December 13, 2021
इन सबके साथ यूपी सरकार, मुख्यमंत्री योगी आदित्यनाथ जी का भी अभिनंदन करता हूं जिन्होंने काशी विश्वनाथ धाम परियोजना को पूरा करने के लिए दिन-रात एक कर दिया: PM
आतातायियों ने इस नगरी पर आक्रमण किए, इसे ध्वस्त करने के प्रयास किए!
— PMO India (@PMOIndia) December 13, 2021
औरंगजेब के अत्याचार, उसके आतंक का इतिहास साक्षी है।
जिसने सभ्यता को तलवार के बल पर बदलने की कोशिश की,
जिसने संस्कृति को कट्टरता से कुचलने की कोशिश की!
लेकिन इस देश की मिट्टी बाकी दुनिया से कुछ अलग है: PM
यहाँ अगर औरंगजेब आता है तो शिवाजी भी उठ खड़े होते हैं!
— PMO India (@PMOIndia) December 13, 2021
अगर कोई सालार मसूद इधर बढ़ता है तो राजा सुहेलदेव जैसे वीर योद्धा उसे हमारी एकता की ताकत का अहसास करा देते हैं।
और अंग्रेजों के दौर में भी, हेस्टिंग का क्या हश्र काशी के लोगों ने किया था, ये तो काशी के लोग जानते ही हैं: PM
यहाँ अगर औरंगजेब आता है तो शिवाजी भी उठ खड़े होते हैं!
— PMO India (@PMOIndia) December 13, 2021
अगर कोई सालार मसूद इधर बढ़ता है तो राजा सुहेलदेव जैसे वीर योद्धा उसे हमारी एकता की ताकत का अहसास करा देते हैं।
और अंग्रेजों के दौर में भी, हेस्टिंग का क्या हश्र काशी के लोगों ने किया था, ये तो काशी के लोग जानते ही हैं: PM
काशी शब्दों का विषय नहीं है, संवेदनाओं की सृष्टि है।
— PMO India (@PMOIndia) December 13, 2021
काशी वो है- जहां जागृति ही जीवन है!
काशी वो है- जहां मृत्यु भी मंगल है!
काशी वो है- जहां सत्य ही संस्कार है!
काशी वो है- जहां प्रेम ही परंपरा है: PM @narendramodi
बनारस वो नगर है जहां से जगद्गुरू शंकराचार्य को श्रीडोम राजा की पवित्रता से प्रेरणा मिली, उन्होंने देश को एकता के सूत्र में बांधने का संकल्प लिया।
— PMO India (@PMOIndia) December 13, 2021
ये वो जगह है जहां भगवान शंकर की प्रेरणा से गोस्वामी तुलसीदास जी ने रामचरित मानस जैसी अलौकिक रचना की: PM @narendramodi
यहीं की धरती सारनाथ में भगवान बुद्ध का बोध संसार के लिए प्रकट हुआ।
— PMO India (@PMOIndia) December 13, 2021
समाजसुधार के लिए कबीरदास जैसे मनीषी यहाँ प्रकट हुये।
समाज को जोड़ने की जरूरत थी तो संत रैदास जी की भक्ति की शक्ति का केंद्र भी ये काशी बनी: PM @narendramodi
काशी अहिंसा,तप की प्रतिमूर्ति चार जैन तीर्थंकरों की धरती है।
— PMO India (@PMOIndia) December 13, 2021
राजा हरिश्चंद्र की सत्यनिष्ठा से लेकर वल्लभाचार्य,रमानन्द जी के ज्ञान तक
चैतन्य महाप्रभु,समर्थगुरु रामदास से लेकर स्वामी विवेकानंद,मदनमोहन मालवीय तक
कितने ही ऋषियों,आचार्यों का संबंध काशी की पवित्र धरती से रहा है: PM
छत्रपति शिवाजी महाराज के चरण यहाँ पड़े थे।
— PMO India (@PMOIndia) December 13, 2021
रानीलक्ष्मी बाई से लेकर चंद्रशेखर आज़ाद तक, कितने ही सेनानियों की कर्मभूमि-जन्मभूमि काशी रही है।
भारतेन्दु हरिश्चंद्र, जयशंकर प्रसाद, मुंशी प्रेमचंद,पंडित रविशंकर, और बिस्मिल्लाह खान जैसी प्रतिभाएं
इस स्मरण को कहाँ तक ले जाया जाये: PM
काशी विश्वनाथ धाम का लोकार्पण, भारत को एक निर्णायक दिशा देगा, एक उज्जवल भविष्य की तरफ ले जाएगा।
— PMO India (@PMOIndia) December 13, 2021
ये परिसर, साक्षी है हमारे सामर्थ्य का, हमारे कर्तव्य का।
अगर सोच लिया जाए, ठान लिया जाए, तो असंभव कुछ भी नहीं: PM @narendramodi
हर भारतवासी की भुजाओं में वो बल है, जो अकल्पनीय को साकार कर देता है।
— PMO India (@PMOIndia) December 13, 2021
हम तप जानते हैं, तपस्या जानते हैं, देश के लिए दिन रात खपना जानते हैं।
चुनौती कितनी ही बड़ी क्यों ना हो, हम भारतीय मिलकर उसे परास्त कर सकते हैं: PM @narendramodi
आज का भारत अपनी खोई हुई विरासत को फिर से संजो रहा है।
— PMO India (@PMOIndia) December 13, 2021
यहां काशी में तो माता अन्नपूर्णा खुद विराजती हैं।
मुझे खुशी है कि काशी से चुराई गई मां अन्नपूर्णा की प्रतिमा, एक शताब्दी के इंतजार के बाद अब फिर से काशी में स्थापित की जा चुकी है: PM @narendramodi
मेरे लिए जनता जनार्दन ईश्वर का ही रूप है, हर भारतवासी ईश्वर का ही अंश है, इसलिए मैं कुछ मांगना चाहता हूं।
— PMO India (@PMOIndia) December 13, 2021
मैं आपसे अपने लिए नहीं, हमारे देश के लिए तीन संकल्प चाहता हूं- स्वच्छता, सृजन और आत्मनिर्भर भारत के लिए निरंतर प्रयास: PM @narendramodi
गुलामी के लंबे कालखंड ने हम भारतीयों का आत्मविश्वास ऐसा तोड़ा कि हम अपने ही सृजन पर विश्वास खो बैठे।
— PMO India (@PMOIndia) December 13, 2021
आज हजारों वर्ष पुरानी इस काशी से, मैं हर देशवासी का आह्वान करता हूं- पूरे आत्मविश्वास से सृजन करिए, Innovate करिए, Innovative तरीके से करिए: PM @narendramodi
तीसरा एक संकल्प जो आज हमें लेना है, वो है आत्मनिर्भर भारत के लिए अपने प्रयास बढ़ाने का।
— PMO India (@PMOIndia) December 13, 2021
ये आजादी का अमृतकाल है। हम आजादी के 75वें साल में हैं।
जब भारत सौ साल की आजादी का समारोह बनाएगा, तब का भारत कैसा होगा, इसके लिए हमें अभी से काम करना होगा: PM @narendramodi