Search

পিএমইন্ডিয়াপিএমইন্ডিয়া

সাম্প্রতিক সংবাদ

বিষয়টিকে সরাসরি পিআইবি থেকে নেওয়া হয়েছে

ইটি নাও গ্লোবাল বিজনেস সামিটে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ

ইটি নাও গ্লোবাল বিজনেস সামিটে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ


নতুন দিল্লি, ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫

শ্রী বিনীত জৈনজি, শিল্পপতিগণ, সিইওগণ, অন্য সকল বিশিষ্টজন, ভদ্রমহোদয়া এবং ভদ্রমহোদয়গণ! আপনাদের সকলকে শুভেচ্ছা।

গতবার যখন আমি ইটি নাও সামিটে যোগ দিই, তখন নির্বাচন ছিল আসন্ন। সেই সময়ে আমি বিনয়ের সঙ্গে বলেছিলাম আমাদের তৃতীয় দফায় ভারত নতুন গতি নিয়ে কাজ করবে। আমি সন্তুষ্ট যে এই গতি এখন চোখে পড়ছে এবং দেশও তাকে সাহায্য করছে। নতুন সরকার গঠনের পরে বিজেপি-এনডিএ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে রাজ্যের মানুষের কাছ থেকে আশীর্বাদ পাচ্ছে! জুন নাসে ওড়িশার মানুষ ‘বিকশিত ভারত’-এর সংকল্পকে গতি দিয়েছে, তার পর হরিয়ানার মানুষ সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে এবং এবার দিল্লির মানুষ বিপুল সমর্থন জানিয়েছে আমাদের। বিকশিত ভারতের লক্ষ্য পূরণে দেশের মানুষ কিভাবে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সমর্থন জানাচ্ছেন এটা তারই প্রমাণ।

বন্ধুগণ,

আপনারা বললেন, আমি মাত্র গত রাতেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ফ্রান্স সফর সেরে ফিরেছি। বিশ্বের বড় বড় দেশগুলিই হোক অথবা আন্তর্জাতিক মঞ্চগুলি, ভারতের উপর তাদের আস্থার যে মাত্রা তা অভূতপূর্ব। এটা প্রতিফলিত হয়েছে, প্যারিসে এআই অ্যাকশন সামিটে আলোচনায়। বর্তমানে ভারত ভবিষ্যৎ নিয়ে আন্তর্জাতিক আলোচনার কেন্দ্র। কয়েকটি ক্ষেত্রে এমনকি এগিয়েও আছে। অনেক সময়ে আমি ভাবি যদি ২০১৪-য় দেশের মানুষ আমাদের আশীর্বাদ না দিতেন, একবার ভাবুন দেখি, যদি ভারতে সংস্কারের নতুন তরঙ্গ না উঠতো, আমরা কি এই রূপান্তর দেখতে পেতাম? আমি মনে করি, না, কিছুতেই না এবং আমি নিশ্চিত আপনারাও অন্য কিছু মনে করছেন না। এত পরিবর্তন হতো? আপনারা যাঁরা হিন্দি বোঝেন, তাঁরা অবশ্যই আমার কথা বুঝতে পারছেন। আগেও দেশে কাজ হতো, কিন্তু তখন ভারত দুটি জিনিসের সাক্ষী থেকেছে। উন্নয়নে কংগ্রেসী গতি এবং দুর্নীতিতে কংগ্রেসী গতি, যদি তাই চলতে থাকতো তাহলে কি হতো? দেশের জন্য একটা গুরুত্বপূর্ণ সময় নষ্ট হতো। ২০১৪-য় কংগ্রেস সরকার একটা লক্ষ্য স্থির করে যে, ২০৪৪-এর মধ্যে তারা ভারতকে তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি করে তুলবে অর্থাৎ তারা ৩০ বছরের পরিকল্পনা নিয়ে ভাবছিলো। এটাই উন্নয়নে কংগ্রেসী গতি। এবং এখন আপনারা বিকশিত ভারতের উন্নয়নের গতি দেখতেই পারছেন। মাত্র এক দশকে ভারত বিশ্বের শীর্ষ পাঁচটি অর্থনীতির মধ্যে স্থান করে নিয়েছে এবং বন্ধুগণ, আমি পুরো দায়িত্ব নিয়ে বলছি, আগামী কয়েক বছরের মধ্যে ভারত বিশ্বে তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি হয়ে উঠবে। শুধু অঙ্কটা করুন – ২০৪৪ বনাম আজকের গতি। আমাদের মতো একটি তরুণ দেশের এই দ্রুত গতি দরকার এবং আজ ভারত এগোচ্ছে ঠিক সেই গতিতেই!

বন্ধুগণ,

পূর্বেকার সরকারগুলি সংস্কার এড়িয়ে গেছে এবং সেটা আমাদের ভুললে চলবে না। ইটি-র মানুষরা ভুলতে পারেন কিন্তু সেটা আমি তাঁদের মনে করিয়েই দেবো। শেষপর্যন্ত যে সংস্কার অতীতে হয়েছে তা বিশ্বাস থেকে নয়, বাধ্যতা থেকে। বর্তমানে ভারতে যে সংস্কার হচ্ছে তা হচ্ছে বিশ্বাসের সঙ্গে। আগেকার মানসিকতা ছিল – এত খেটে কি হবে? সংস্কার নিয়ে ভেবে কি হবে? আমরা জিতেছি, এসো আনন্দ করি। ৫ বছর পূর্ণ করি এবং নির্বাচন আসলে সেই নিয়ে চিন্তা করি। আপনারা সকলে বাণিজ্য জগতের, আপনারা শুধুমাত্র সংখ্যা নিয়ে কাজ করেন না, আপনারা আপনাদের রণকৌশল পর্যালোচনা করেন, পুরনো পদ্ধতি বাতিল করে দেন। যদিও এক সময়ে তা লাভজনক ছিল। কোনো শিল্পই তামাদি পদ্ধতি নিয়ে এগোতে পারে না। দুর্ভাগ্যজনকভাবে পূর্বেকার সরকারগুলি ঔপনিবেশিক শাসনের ভার বহন করে চলেছিল। সেইজন্য স্বাধীনতার পরেও ব্রিটিশ যুগের নীতি ও ব্যবস্থা কোনো কিছু না ভেবেই চালিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। আমরা একটা কথা প্রায়ই শুনে থাকি, বিচার পেতে দেরি হওয়া মানে বিচার থেকে বঞ্চিত হওয়া, এটা একটা পবিত্র মন্ত্রের মতো বলা হয়ে থাকে। আমরা অনেক বছর ধরে এটা শুনে আসছি। কিন্তু কেউ কি গুরুত্ব দিয়ে এটা নিয়ে ভেবেছেন? না। বছরের পর বছর ধরে এই অদক্ষতার সঙ্গে আমরা মানিয়ে নিয়েছি, ফলে আমরা পরিবর্তন যে প্রয়োজন সেটা বোঝাই বন্ধ করে দিয়েছি এবং তারপর এমন একটা পরিমণ্ডল তাদের মধ্যে কেউ কেউ হয়তো এখানে আজও উপস্থিত আছেন – যেখানে ইতিবাচক উন্নয়ন নিয়ে আলোচনা সক্রিয়ভাবেই বন্ধ করে দেওয়া হতো। অগ্রগতি রুখতেই তাঁদের সমস্ত ক্ষমতা ব্যয়িত হতো। কিন্তু গণতন্ত্রে নেতিবাচক বিষয়ে সমালোচনার পাশাপাশি ভালো জিনিস নিয়ে আলোচনা করাটাও জরুরি। তথাপি এমন একটা মানসিকতা তৈরি হয়েছে যেখানে নেতিবাচকতা প্রচার করাকেই বলা হয় গণতন্ত্র এবং যদি ইতিবাচক উন্নয়নকে তুলে ধরা হয় তাহলে সেই গণতন্ত্রকে দুর্বল বলে দাগিয়ে দেওয়া হয়। এই মানসিকতা থেকে মুক্ত হওয়া জরুরি। কয়েকটি উদাহরণ দিই। 

বন্ধুগণ,

এই সাম্প্রতিককাল পর্যন্তও ভারতের দণ্ডবিধিগুলি ছিল ১৮৬০-এর। হ্যাঁ, ১৮৬০! দেশ স্বাধীন হয়েছে, কিন্তু আমরা সেগুলি পরিবর্তনের কথা ভাবিনি। আমরা সেই ঔপনিবেশিক যুগের মানসিকতা নিয়ে থাকা অভ্যাস করে ফেলেছি। এই ১৮৬০-এর আইনগুলির কি কাজ? তাদের লক্ষ্য ছিল ভারতে ব্রিটিশ শাসনকে শক্তিশালী করা এবং ভারতীয় নাগরিকদের শাস্তি দেওয়া। যখন কোনো পদ্ধতি গড়ে ওঠে শান্তি দেওয়ার মানসিকতা নিয়ে, তখন ন্যায় বিচার হওয়া কিভাবে সম্ভব? সেই কারণে সেই ব্যবস্থায় বছরের পর বছর লাগতো বিচার করতে। আমরা একটা বড় পরিবর্তন করেছি। এটা এতো সহজ ছিল না। অনেক চেষ্টা করতে হয়েছে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা কেটেছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আমরা ভারতীয় ন্যায় সংহিতা এনেছি। সংসদ তা অনুমোদন করেছে এবং এখন যদিও মাত্র ৭-৮ মাস হলো রূপায়নের পর থেকে কিন্তু পরিবর্তনটা চোখে পড়ছে। খবরের কাগজে এটা আপনারা দেখতে পাবেন না, কিন্তু আপনারা মানুষের মধ্যে যান আপনারা বুঝতে পারবেন। ন্যায় সংহিতা চালু হওয়ার পর বিচার ব্যবস্থা কিভাবে রূপান্তরিত হয়েছে তার কয়েকটি নমুনা দিই। মাত্র ১৪ দিনে তিনটি খুনের একটি মামলার নিষ্পত্তি হয়েছে – এফআইআর থেকে চূড়ান্ত রায়দান পর্যন্ত! দোষীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এই রকমই আরেকটি মামলায় নাবালক খুনের ঘটনার নিষ্পত্তি হয়েছে ২০ দিনের মধ্যে। গুজরাটে গণধর্ষণের ঘটনায় ৯ অক্টোবর এফআইআর করা হয়েছিল, চার্জশিট দেওয়া হয় ২৬ অক্টোবর, আজ ১৫ ফেব্রুয়ারি আদালত অভিযুক্তকে দোষী সাব্যস্ত করেছে। অন্ধ্রপ্রদেশে ৫ মাসের এক শিশুর উপর অপরাধে আদালত অভিযুক্তকে ২৫ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে। এই মামলায় ডিজিটাল সাক্ষ্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে। অন্য একটি ধর্ষণ ও খুনের মামলায় সন্দেহভাজনের অনুসন্ধ্যান করা হয় ই-প্রিজন মডিউলের মাধ্যমে। একইরকমভাবে একটি রাজ্যে ধর্ষণ ও খুনের মামলা রুজু করা হয়েছে যাতে দেখা যায় অভিযুক্ত অন্য একটি অপরাধে অন্য রাজ্যে কারাবন্দী। দেরি না করে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরকম অগুন্তি মামলা আছে, যেখানে বিচার হচ্ছে দ্রুত।

বন্ধুগণ,

সম্পত্তির অধিকার ক্ষেত্রে একটি বড় সংস্কার করা হয়েছে। রাষ্ট্রসঙ্ঘের সমীক্ষায় দেখা গেছে অনেক দেশে সম্পত্তির অধিকার না থাকাটাই মানুষের জন্য বড় সমস্যা। সারা বিশ্বে লক্ষ লক্ষ মানুষের সম্পত্তির আইনি নথি নেই। তবে সম্পত্তির অধিকার পেলে দারিদ্র কমে। পূর্বেকার সরকারগুলি এটা ভাবেনি পর্যন্ত। আর যদিও তারা ভেবে থাকে কে এই মাথাব্যথা ভোগ করবে, কে এই চেষ্টা করবে? যাই হোক না কেন এই ধরনের কাজ তো ইটি-র হেডলাইন হয় না, তাহলে ভেবে লাভকি? এভাবে দেশ চলে না বা দেশ গঠন করা যায় না। এই কারণেই আমরা স্বামিত্ব যোজনার সূচনা করেছি। ৩ লক্ষের বেশি গ্রামে ড্রোন সমীক্ষা চালানো হয়েছে, ২.২৫ কোটির বেশি মানুষ প্রপার্টি কার্ড পেয়েছেন এবং আজ আমি ইটি-কে একটা হেড লাইন দিচ্ছি। আমি জানি স্বামিত্ব নিয়ে লেখা ইটি-র পক্ষে সহজ নয়। তবে, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অভ্যাসও তো বদলায়!

এই যোজনার কারণে দেশের গ্রামাঞ্চলে ১০০ লক্ষ কোটি টাকা সম্পত্তি মুক্ত হয়েছে। এর অর্থ গ্রামে গ্রামে এই ১০০ লক্ষ কোটি টাকার সম্পত্তি ছিলই এবং তা ছিল গরিবদের। কিন্তু তা অর্থনৈতিক উন্নয়নে ব্যবহার করা যাচ্ছিল না। যেহেতু গ্রামের মানুষের সম্পত্তির অধিকার ছিল না, তারা ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ পাচ্ছিল না। তবে, এই বিষয়টির স্থায়ী সমাধান করা হয়েছে। আজ সারা দেশ থেকে যে রিপোর্ট পাওয়া যাচ্ছে, তাতে এই যোজনার প্রপার্টি কার্ড মানুষের উপকার করছে। এই তো কয়েকদিন আগে রাজস্থানের এক বোনের সঙ্গে কথা বললাম যে এই কর্মসূচিতে প্রপার্টি কার্ড পেয়েছে। তার পরিবার ২০ বছর ধরে বাস করছে একটি ছোট বাড়িতে। তারা যেই প্রপার্টি কার্ড পেয়েছে, তারা ব্যাঙ্ক থেকে ৮ লক্ষ টাকা ঋণ পেতে সক্ষম হয়। সেই টাকা দিয়ে সে একটি দোকান খুলেছে এবং সেখান থেকে হওয়া উপার্জনে তার পরিবার, ছেলেমেয়েদের উচ্চ শিক্ষা চালাতে পারছে। এইভাবেই পরিবর্তন ঘটেছে। অন্য একটি রাজ্যে গ্রামের একজন তার প্রপার্টি কার্ড ব্যবহার করে ব্যাঙ্ক থেকে ৪.৫ লক্ষ টাকা ঋণ পেয়েছেন। সেই টাকা নিয়ে সে একটি গাড়ি কিনেছে এবং শুরু করেছে পরিবহণের ব্যবসা। আরেকটি গ্রামে প্রপার্টি কার্ড দেখিয়ে ঋণ পেয়েছে এবং ক্ষেতে আধুনিক সেচের ব্যবস্থা করেছে। এরকম অনেক উদাহরণ আছে। যেখানে গ্রামবাসী এবং দরিদ্র মানুষের জন্য নতুন উপার্জনের সুযোগ তৈরি হচ্ছে। এটাই রিফর্ম, পারফর্ম এবং ট্রান্সফর্মের প্রকৃত কাহিনী – যে কাহিনী কোনো খবরের কাগজ বা টিভি চ্যানেলে হেড লাইন হয় না।

বন্ধুগণ,

স্বাধীনতার পরে আমাদের দেশে অনেক জেলা ছিল যেখানে সরকার উন্নয়ন আনতে ব্যর্থ। এটা প্রশাসনের ব্যর্থতা – বাজেটের অভাব নয়। তহবিল বরাদ্দ করা হতো, ঘোষণা করা হতো, শেয়ার মার্কেটে রিপোর্টও বেরতো সূচকের ওঠানামা নিয়ে। কিন্তু এইসব জেলাগুলিতে একটা লক্ষ্য নিয়ে কাজ করা উচিত ছিল, বদলে এই জেলাগুলিকে অনগ্রসর জেলা বলে চিহ্নিত করা হয়েছিল এবং তাদের ভাগ্য তাদের হাতেই ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। কেউ তাদের জন্য কাজ করতে ইচ্ছুক ছিল না। এমনকি যেসমস্ত সরকারি আধিকারিক সেখানে বদলি হতেন, তাঁরাও সেটাকে ভাবতেন শাস্তিমূলক বদলি।

বন্ধুগণ,

এইসব নেতিবাচকতার মধ্যে আমি এই সমস্যাগুলির সরাসরি মুখোমুখি হই এবং সম্পূর্ণ বদলে দিই মনোভাব। আমরা সারা দেশে ১০০টির বেশি জেলাকে চিহ্নিত করেছি, যাদের এক সময়ে বলা হতো অনগ্রসর জেলা। কিন্তু আমি তাদের বলি প্রত্যাশী জেলা – অনগ্রসর নয়। আমরা এইসব জেলায় তরুণ আধিকারিকদের পাঠানো শুরু করি এবং তৃণমূল স্তরে প্রশাসনের উন্নতিতে কাজ করি। আমরা সেইসব বিষয়ে নজর দিই যেসব বিষয়ে এই জেলাগুলি পিছিয়ে। তারপর আমরা সেইসব এলাকায় বিশেষ শিবির বসিয়ে সরকারের ফ্ল্যাগশিপ কর্মসূচিগুলি রূপায়ণ করি। আজ এইসব প্রত্যাশী জেলাগুলির অনেকগুলিই প্রেরণাদায়ী জেলা হয়ে উঠেছে। 

আমি আসামের কয়েকটি প্রত্যাশী জেলা নিয়ে বলতে চাই – সেগুলি যেগুলিকে অনগ্রসর আখ্যা দিয়েছিল পূর্বেকার সরকারগুলি – আমি তাদের রূপান্তর তুলে ধরতে চাই। উদাহরণস্বরূপ আসামের বরপেটা জেলাই ধরুন। ২০১৮-য় প্রাথমিক স্কুলের ২৬ শতাংশতেই মাত্র ঠিকঠাক শিক্ষক-ছাত্র অনুপাত ছিল। মাত্র ২৬ শতাংশ। আজ ওই জেলায় সংখ্যাটা পৌঁছেছে ১০০ শতাংশে। প্রতিটি স্কুলেই প্রত্যাশিত শিক্ষক-ছাত্র অনুপাত রয়েছে। একইরকমভাবে বিহারের বেগুসরাইতে বাজেট এবং অন্যান্য সুবিধা থাকা সত্ত্বেও মাত্র ২১ শতাংশ গর্ভবতী মহিলা অতিরিক্ত পুষ্টি পাচ্ছিলেন। উত্তরপ্রদেশের চন্দাউলিতে ওই সংখ্যা এমনকি ১৪ শতাংশেরও কম। কিন্তু ওই দুটি জেলাতেই এখন সংখ্যাটি পৌঁছেছে ১০০ শতাংশে। আমরা শিশুদের টিকাকরণে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি ঘটিয়েছি। উত্তরপ্রদেশের শ্রাবস্তিতে টিকাকরণ ৪৯ শতাংশ থেকে বেড়ে হয়েছে ৮৬ শতাংশ। তামিলনাড়ুর রামনাথাপুরমে ৬৭ শতাংশ থেকে বেড়ে হয়েছে ৯৩ শতাংশ। এইসব সাফল্য দেখে আমরা বুঝেছি যে তৃণমূল স্তরে রূপান্তরের এই মডেল সবচেয়ে বেশি কার্যকরী। তাই ১০০টি প্রত্যাশী জেলাকে চিহ্নিত করে এবং তাদের নিয়ে কাজ করে আমরা পরবর্তী স্তরে এই কাজ শুরু করেছি। আমরা ৫০০টি প্রত্যাশী ব্লককে চিহ্নিত করেছি, যেখানে আমরা দ্রুত উন্নয়নে জোর দিচ্ছি। একবার ভাবুন তো – যখন এই ৫০০টি ব্লকের মৌলিক উন্নতি হবে, তখন সারা দেশের উন্নয়নের সূচকও বদলাবে। 

বন্ধুগণ,

এখানে আমাদের মধ্যে অনেক শিল্পপতি আছেন। আপনারা কয়েক দশকের সাক্ষী থেকেছেন এবং আপনারা দীর্ঘ সময় ধরে ব্যবসা বাণিজ্য করছেন। আপনারা অনেক দিন ধরেই ভারতে একটা পছন্দের বাণিজ্য পরিবেশ চেয়েছেন। এখন ভাবুন আমরা ১০ বছর আগে কোথায় ছিলাম, আর এখন কোথায় আছি। এক দশক আগে ভারতের ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থা ছিল সঙ্কটে। এটি ছিল ভঙ্গুর। লক্ষ লক্ষ ভারতীয় প্রথাগত ব্যাঙ্কিং নেটওয়ার্কের বাইরে ছিল। এই তো জন ধন অ্যাকাউন্ট নিয়ে বিনীতজি যা বললেন, ভারত অন্যতম দেশ যেখানে ঋণ পাওয়া দূরুহ ছিল।

বন্ধুগণ,

আমরা ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে একসঙ্গে বিবিধ স্তরে কাজ করেছি। আমাদের রণকৌশল : যারা ব্যাঙ্কের সঙ্গে যুক্ত নয়, তাদের ব্যাঙ্কের সঙ্গে যুক্ত করা, অনিশ্চিতকে নিশ্চিত করা এবং যাদের অর্থ নেই তাদের অর্থ দেওয়া। ১০ বছর আগে বক্তব্য ছিল আর্থিক অন্তর্ভুক্তি অসম্ভব। কারণ ব্যাঙ্কের যথেষ্ট শাখা নেই। কিন্তু আজ ভারতের প্রত্যেকটি গ্রামে ৫ কিলোমিটারের মধ্যে ব্যাঙ্কের একটি শাখা বা ব্যাঙ্কিং দূত আছে। কিভাবে ঋণ পাওয়ার সুবিধার উন্নতি হয়েছে তার একটি উদাহরণ মুদ্রা যোজনা। এতে ৩২ লক্ষ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে তাদেরকে যারা পুরনো ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থায় ঋণ পাওয়ার যোগ্য ছিল না। এটা একটা বড় পরিবর্তন। এমএসএমই ক্ষেত্রেও ঋণ পাওয়া এখন আরও সহজ হয়েছে। বর্তমানে স্ট্রিট ভেন্ডাররাও কোনো কিছু গচ্ছিত না রেখে ঋণ পাচ্ছেন। কৃষি ঋণ দ্বিগুণ হয়েছে। আমরা যে শুধুমাত্র বড় বড় অঙ্কের বেশি করে ঋণ দিচ্ছি তাই নয়, এটাও নিশ্চিত করছি যাতে ব্যাঙ্কগুলি লাভজনক থাকে। এক দশক আগে ইকনোমিক টাইমস ব্যাঙ্ক দুর্নীতিকে হেড লাইন করতো। অনুৎপাদক সম্পত্তির হিসেব করতো। সম্পাদকীয়তে আমাদের ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থার ভঙ্গুরতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হতো। আর এখন কি প্রকাশিত হচ্ছে এপ্রিল থেকে ডিসেম্বরে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলি ১.২৫ লক্ষ কোটি টাকার বেশি মুনাফা করেছে! বন্ধুগণ, এটা শুধু হেড লাইনের পরিবর্তন নয়, এটা একটি ব্যবস্থার পরিবর্তন, ব্যাঙ্কিং সংস্কারের মাধ্যমে। এতে প্রমাণ হয় আমাদের অর্থনীতির স্তম্ভগুলি আগের থেকে অনেক শক্ত হচ্ছে। 

বন্ধুগণ,

গত দশকে আমরা ব্যবসা করার আতঙ্ককে ব্যবসা করার সুবিধায় পরিণত করেছি। জিএসটি নিয়ে ভারত এখন এককভাবে বৃহৎ বাজার, যা শিল্পকে উল্লেখযোগ্যভাবে সাহায্য করেছে। আমাদের অভূতপূর্ব পরিকাঠামো উন্নয়ন লজিস্টিক খরচ কমিয়েছে, বাড়িয়েছে কার্যকারিতা। আমরা অনেক অপ্রয়োজনীয় বাধ্যবাধকতা দূর করেছি এবং এখন জনবিশ্বাস ২.০-এর মাধ্যমে আরও কিছু কমাচ্ছি। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে, সরকারের হস্তক্ষেপ কমানো উচিত। এটা পাওয়ার জন্য আমরা বিধিগুলিকে আরও সহজ করতে ডি রেগুলেশন কমিশনও গঠন করছি। 

বন্ধুগণ,

বর্তমানে ভারত আরও একটি বড় রূপান্তরের সাক্ষী থাকছে। যা আমাদের ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত করছে। যখন প্রথম শিল্প বিপ্লব শুরু হয়, ভারত তখন ঔপনিবেশিক শাসনের গভীরে ডুবছিল। দ্বিতীয় শিল্প বিপ্লবের সময়ে যখন বিশ্ব নতুন নতুন উদ্ভাবন ও কারখানার সাক্ষী থাকছিল তখন ভারতের স্থানীয় শিল্পকে ধ্বংস করা হচ্ছিল। কাঁচা মাল ভারতের বাইরে রপ্তানি করা হচ্ছিল। এমনকি স্বাধীনতার পরেও পরিস্থিতির তেমন পরিবর্তন হয়নি। যখন বিশ্ব কম্পিউটার বিপ্লবের দিকে এগোচ্ছিল, তখন ভারতীয়দের একটি কম্পিউটার কিনতে লাইসেন্সের প্রয়োজন হতো। ভারত প্রথম তিনটি শিল্প বিপ্লবের সুযোগ নিতে পারেনি। কিন্তু চতুর্থ শিল্প বিপ্লবে আমরা বিশ্বের পাশাপাশি এগিয়ে যেতে প্রস্তুত!

বন্ধুগণ,

‘বিকশিত ভারত’ হয়ে ওঠার যাত্রা পথে, বেসরকারি ক্ষেত্রকে গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসেবে মনে করে আমাদের সরকার। বেসরকারি অংশগ্রহণের জন্য অনেকগুলি নতুন ক্ষেত্রকে উন্মুক্ত করেছে সরকার। যেমন মহাকাশ ক্ষেত্র। বর্তমানে অনেক তরুণ উদ্যোগপতি এবং স্টার্টআপ এই মহাকাশ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। একইরকমভাবে ড্রোন ক্ষেত্রে যা একসময়ে সাধারণ মানুষের জন্য বন্ধ ছিল, এখন তরুণদের কাছে অনেক সুযোগ এনে দিয়েছে। আমরা বেসরকারি সংস্থার জন্য বাণিজ্যিকভাবে কয়লা উত্তোলনের সুযোগ দিচ্ছি, যাতে নিলাম আরও সর্বজনীন হয়। পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি ক্ষেত্রে দেশের সাফল্যে বড় ভূমিকা নিয়েছে বেসরকারি ক্ষেত্র এবং এখন কার্যকারিতা বাড়াতে বিদ্যুৎ বিতরণ ক্ষেত্রে বেসরকারি অংশগ্রহণের সুযোগ বৃদ্ধি করা হচ্ছে। এবছরের বাজেটে সবচেয়ে বড় সংস্কারটি হলো এই, যা আগে কেউ কখনো করেনি। আমরা পরমাণু ক্ষেত্রটিকেও বেসরকারি অংশগ্রহণকারীদের জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছি।

বন্ধুগণ,

আজ আমাদের রাজনীতিও কাজের ভিত্তিতে হচ্ছে। ভারতের মানুষ স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে যারা মাটির সঙ্গে যুক্ত এবং প্রকৃত ফল দেবে তারাই থাকবে। মানুষের সমস্যা নিয়ে ভাবতে হবে একটি সরকারকে। সেটাই সুপ্রশাসনের প্রথম শর্ত। দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমাদের আগে যারা নীতি তৈরি করতো তাদের প্রকৃত পরিবর্তন আনার মতো মানসিকতা এবং ইচ্ছা ছিল না। তবে আমাদের সরকার সহানুভূতির সঙ্গে মানুষের সমস্যা শুনেছে এবং দৃঢ় পদক্ষেপ নিয়েছে দায়বদ্ধতার সঙ্গে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সমীক্ষায় দেখা গেছে গত দশকে নাগরিকদের ক্ষমতায়ন এবং তাদের মৌলিক সুযোগ সুবিধা দেওয়ার কারণে ২৫ কোটি ভারতীয় দারিদ্র সীমার উপরে উঠে এসেছেন। এই বড় পরিবর্তন একটি নব্য মধ্যবিত্ত শ্রেণী সৃষ্টি করেছে। যারা এখন তাদের প্রথম দ্বিচক্রযানটি, প্রথম গাড়িটি এবং প্রথম বাড়িটি কিনতে চায়। এই মধ্যবিত্ত শ্রেণীকে সাহায্য করতে আমরা এবছরের বাজেটে একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন করেছি। আমরা কর রেহাইয়ের ঊধ্বসীমা বাড়িয়ে ৭ লক্ষ টাকা থেকে ১২ লক্ষ টাকা করেছি। এই সিদ্ধান্তে মধ্যবিত্ত শ্রেণী শক্তিশালী হবে এবং দেশজুড়ে অর্থনৈতিক কার্যকলাপ বৃদ্ধি করবে। এটা তখনই সম্ভব যখন সরকার মানুষের প্রয়োজন মেটাতে অতিসক্রিয় এবং সংবেদনশীল হয়।

বন্ধুগণ,

‘বিকশিত ভারত’ গঠিত হবে আস্থার ভিত্তিতে – নাগরিকদের আস্থার ভিত্তিতে – নাগরিকদের সরকারের এবং ব্যবসায়ীদের মধ্যে আস্থা। আস্থার এই উপাদানটি এগিয়ে যাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয়। আমাদের সরকার মানুষের মধ্যে এই আস্থা জোরদার করতে নিরলসভাবে কাজ করছে। আমরা উদ্ভাবকদের জন্য এমন একটি আস্থাবর্ধক পরিবেশ তৈরি করছি যেখানে তারা তাদের ভাবনাকে খোলাখুলিভাবে প্রয়োগ করতে পারবে। আমরা নিশ্চিত করছি যাতে ব্যবসাবাণিজ্য সুস্থায়ী এবং উন্নয়নের জন্য নির্দিষ্ট সহায়ক নীতির উপর বিশ্বাস করতে পারে। আমার আশা, এই ইটি নাও সামিট এই আস্থা আরও বাড়াবে। এই কথাগুলি বলে আমি আমার বক্তব্য শেষ করছি। আপনাদের সকলকে অনেক শুভেচ্ছা। অনেক অনেক ধন্যবাদ।

প্রধানমন্ত্রীর মূল ভাষণটি হিন্দিতে।

 

 

SC/AP/SKD