Search

পিএমইন্ডিয়াপিএমইন্ডিয়া

সাম্প্রতিক সংবাদ

বিষয়টিকে সরাসরি পিআইবি থেকে নেওয়া হয়েছে

আমেদাবাদে সবরমতী নদী তীরে খাদি উৎসবে অংশগ্রহণ প্রধানমন্ত্রীর

আমেদাবাদে সবরমতী নদী তীরে খাদি উৎসবে অংশগ্রহণ প্রধানমন্ত্রীর


নয়াদিল্লি, ২৭ অগাস্ট, ২০২২

 

প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী আজ আহমেদাবাদে সবরমতী নদীর তীরে খাদি উৎসবে যোগ দেন। গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী শ্রী ভূপেন্দ্র প্যাটেল, সাংসদ শ্রী পি আর পাটিল, রাজ্য মন্ত্রিসভার সদস্য শ্রী হর্ষ সাংভি, শ্রী জগদীশ পাঞ্চাল, আহমেদাবাদের মেয়র শ্রী কীরিটভাই ফরমার, কেভিআইসি’র চেয়ারম্যান শ্রী মনোজ কুমার অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে চরকার সঙ্গে তাঁর ব্যক্তিগত যোগাযোগের কথা এবং তাঁর ছোটবেলায় যখন তাঁর মা চরকায় কাজ করতেন, সেকথা স্মরণ করেন। তিনি বলেন, “সবরমতী নদীর তীর স্বাধীনতার ৭৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে আজ বিশেষভাবে আশীর্বাদধন্য। ৭ হাজার ৫০০ জন বোন ও কন্যারা একযোগে চরকা চালিয়ে ইতিহাস রচনা করেছেন”। শ্রী মোদী বলেন, চরকা চালানো এক ধরনের পুজো।

প্রধানমন্ত্রী আজ উদ্বোধন হওয়া ‘অটল সেতু’র অভূতপূর্ব প্রযুক্তি ও নক্‌শার উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, এই সেতুটি ভারতের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ীর প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য। গুজরাটের মানুষের জন্য তাঁর বিশেষ অনুভূতি ও ভালোবাসা ছিল। এই সেতু কেবলমাত্র সবরমতীর দু’তীরের মধ্যে যোগসূত্র স্থাপন করবে, তা নয়। এর নক্‌শা ও উদ্ভাবনমূলক কাজও অভূতপূর্ব। গুজরাটের বিশেষ ঘুড়ি উৎসবের কথা এই নক্‌শায় রয়েছে বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ভারতে যে উৎসাহের সঙ্গে ‘হর ঘর তিরঙ্গা’ কর্মসূচি পালন করা হয়েছে, তা বিশেষ প্রশংসার দাবি রাখে। তিনি বলেন, উৎসব উদযাপন কেবলমাত্র দেশাত্মবোধ প্রতিফলিত করে, তা নয়, আধুনিক ও উন্নত ভারতের প্রতিচ্ছবিও তুলে ধরে। “আপনাদের হাত যখন চরকায় ঘুরছিল, তখন দেশের বস্ত্রবয়ন হচ্ছিল”, মন্তব্য করেন শ্রী নরেন্দ্র মোদী।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে এই খাদি শিল্পের বিশেষ ভূমিকা ও ইতিহাস রয়েছে। এটি দাসত্বের শৃঙ্খল ছিন্ন করেছিল”। তিনি আরও বলেন, এই খাদির সুতো বর্তমানে উন্নত ভারত ও আত্মনির্ভর ভারত গড়ে তোলার ক্ষেত্রেও বিশেষ ভূমিকা নিতে পারবে। খাদির মতো ঐতিহ্যবাহী বস্ত্র শিল্প আমাদের নতুন উচ্চতায় পৌঁছে দিতে পারে। ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে যে উৎসাহ ও উদ্দীপনা ছিল, নতুন ভারতের স্বপ্ন পূরণের জন্য তা পুনর্জাগরিত করতেই এই খাদি উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী লালকেল্লার প্রাকার থেকে ১৫ অগাস্টে তাঁর ভাষণের সময় যে ৫টি প্রাণ বা প্রতিজ্ঞার কথা বলেছিলেন, সেগুলি পুনরায় স্মরণ করেন। তিনি বলেন, “সবরমতীর তীরে এই পবিত্র স্থানে আমি আরও একবার ঐ ৫টি প্রাণ বা প্রতিজ্ঞার কথা স্মরণ করাতে চাই। প্রথমত, দেশের সামনে এক বিশাল লক্ষ্য রয়েছে, তা হল – উন্নত ভারত গড়ে তোলা। দ্বিতীয়ত, দাসত্বের মানসিকতা থেকে সম্পূর্ণ মুক্তি। তৃতীয়ত, আমাদের ঐতিহ্যের প্রতি গর্ববোধ করা। চতুর্থত, দেশের একতা বাড়ানোর জন্য কঠোর পরিশ্রম এবং পঞ্চমত, যথাযথ নাগরিক দায়িত্ব পালন। তিনি বলেন, আজকের এই খাদি উৎসব এই ৫টি প্রাণ বা প্রতিজ্ঞার এক অনন্য প্রতিফলন”।

প্রধানমন্ত্রী স্বাধীনতার সময় খাদি সামগ্রীকে যে অবহেলা করা হ’ত, সেকথা স্মরণ করেন। তিনি বলেন, “স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় এই খাদি সামগ্রীকে গান্ধীজী দেশের আত্মসম্মানের প্রতীক করে তুলেছিলেন। কিন্তু, স্বাধীনোত্তরকালে এই খাদি সামগ্রীকে অবহেলার চোখে দেখা হ’ত। এর ফলস্বরূপ, গ্রামীণ খাদি শিল্প সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। খাদি শিল্পের অবস্থা, বিশেষ করে গুজরাটে ছিল খুবই করুণ”। গুজরাটে পুনরায় খাদি শিল্পকে উন্নত করার লক্ষ্যে কাজ শুরু হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেন শ্রী মোদী। ‘দেশের জন্য খাদি, ফ্যাশনের জন্য খাদি’ – সরকারের এই প্রতিশ্রুতির উপর বিশেষ জোর দেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, “আমরা গুজরাটের সাফল্যের কাহিনী সারা দেশের সঙ্গে ভাগ করে নিচ্ছি”। খাদি শিল্পের সঙ্গে জড়িত সমস্যাগুলির সমাধান করা সম্ভব হয়েছে। আমরা দেশবাসীকে খাদি বস্ত্র ক্রয় করতে উৎসাহ দিচ্ছি। আমাদের বোন ও কন্যারা বিশেষভাবে এই শিল্পের প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছেন। ভারতে খাদি শিল্পকে মজবুত করতে নারী শক্তির বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। গত ৮ বছরে খাদি বস্ত্রের বিক্রি বেড়েছে প্রায় চার গুণ এবং প্রথমবারের মতো খাদি ও গ্রামোদ্যোগ ক্ষেত্রে বিক্রির পরিমাণ ১ লক্ষ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। এই ক্ষেত্রে ১ কোটি ৭৫ লক্ষ নতুন কর্মসংস্থানও হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, মুদ্রা যোজনার মতো প্রকল্পগুলি শিল্পপতিদের উৎসাহ দিচ্ছে।

খাদি সামগ্রীর উপকারিতার উপর আলোকপাত করে শ্রী মোদী বলেন, এই বস্ত্র আরামদায়ক, পরিবেশ-বান্ধব ও এর থেকে খুব কম পরিমাণ কার্বন নিঃসরণ হয়। এমন অনেক দেশ রয়েছে, যেখানে তাপমাত্রা অত্যন্ত বেশি। সেইসব দেশে স্বাস্থ্যগত দিক থেকে খাদি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্ব বাজারেও খাদি ব্যাপক ভূমিকা পালন করতে পারে।

প্রধানমন্ত্রী দেশের জনগণকে আসন্ন উৎসবের মরশুমে কেবলমাত্র খাদি ও গ্রামীণ শিল্পের তৈরি উপহার দিতে বলেন। “আপনাদের বিভিন্ন ধরনের কাপড়ের তৈরি পোশাক থাকতে পারে, কিন্তু আপনারা যদি তার জায়গায় খাদি বস্ত্র পরিধান করেন, তা হলে ‘ভোকাল ফর লোকাল’ প্রচারাভিযানে গতিসঞ্চার হবে”।

শ্রী মোদী গত দশকের কথা স্মরণ করে বলেন, বিদেশি খেলনা শিল্পের চাপে পড়ে, ভারতের নিজের খেলনা শিল্পটির উন্নতি রুদ্ধ হচ্ছিল। এই খেলনা শিল্পের উন্নতিতে এর সঙ্গে যুক্ত ভাই ও বোনেদের এবং সরকারের কঠোর পরিশ্রমের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে পরিস্থিতি বদলাচ্ছে। এর ফলস্বরূপ, খেলনা আমদানী ব্যাপক পরিমাণ হ্রাস পেয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী দেশের জনগণকে দূরদর্শনের ‘স্বরাজ’ ধারাবাহিকটি অবশ্যই দেখার কথা বলেন। এই ধারাবাহিকে দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামীদের কাহিনী বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হয়েছে। তিনি বলেন, আমাদের পূর্ববর্তী প্রজন্ম দেশের স্বাধীনতার জন্য কিভাবে আত্মবলিদান দিয়েছেন, তা বোঝার জন্য এই ধারাবাহিকটি অবশ্যই দেখা উচিৎ।

খাদি উৎসব:

দেশের তরুণদের মধ্যে খাদি শিল্পের জনপ্রিয়তা বাড়াতে ও এ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধিতে অবিরাম চেষ্টা চালাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী। ২০১৪ সাল থেকে প্রধানমন্ত্রীর এই প্রয়াসের ফলে দেশে খাদি সামগ্রীর বিক্রি বেড়েছে প্রায় চার গুণ এবং গুজরাটে তা বেড়েছে আট গুণ।

আজাদি কা অমৃত মহোৎসবের অঙ্গ হিসাবে স্বাধীনতা সংগ্রামে খাদির গুরুত্ব তুলে ধরতে এই খাদি উৎসবের আয়োজন করা হয়। এখানে চরকা বিপ্লব তুলে ধরতে একটি প্রদর্শনীরও আয়োজন করা হয়েছে। এতে ১৯২০ সাল থেকে বিভিন্ন সময়ে ব্যবহৃত ২২টি চরকা প্রদর্শিত হচ্ছে। এই অনুষ্ঠানের পাশাপাশি, প্রধানমন্ত্রী গুজরাট রাজ্য খাদি গ্রামোদ্যোগ পর্ষদের নতুন অফিস ভবনেরও উদ্বোধন করেন এবং অটল সেতু জনগণের উদ্দেশে উৎসর্গ করেন।

 

PG/PM/SB