Search

পিএমইন্ডিয়াপিএমইন্ডিয়া

সাম্প্রতিক সংবাদ

বিষয়টিকে সরাসরি পিআইবি থেকে নেওয়া হয়েছে

আন্তর্জাতিক সমবায় জোট বিশ্ব সমবায় সম্মেলন ২০২৪-এর উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী

আন্তর্জাতিক সমবায় জোট বিশ্ব সমবায় সম্মেলন ২০২৪-এর উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী


নতুন দিল্লি ২৫ নভেম্বর ২০২৪

প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী নতুন দিল্লির ভারত মন্ডপমে আজ আন্তর্জাতিক সমবায় জোট (ICA) বিশ্ব সমবায় সম্মেলন ২০২৪-এর উদ্বোধন করেন। ভুটানের প্রধানমন্ত্রী মাননীয় দাশো শেরিং তোবগে, ফিজির উপ-প্রধানমন্ত্রী মাননীয় মানোয়া কামিকামিকা, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী শ্রী অমিত শাহ, ভারতে রাষ্ট্রসংঘের আবাসিক সমণ্বায়ক শ্রী শম্বি শার্প, আন্তর্জাতিক সমবায় জোটের প্রেসিডেন্ট শ্রী এরিয়েল গুরাকো এবং বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিদের প্রধানমন্ত্রী স্বাগত জানান এই সম্মেলনে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি এই স্বাগত ভাষণে হাজার হাজার কৃষক, গবাদি পশুপালক, মৎস্যজীবী, ৮ লক্ষের বেশি সমবায় সমিতি, স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলির সঙ্গে জড়িত ১০ কোটি মহিলা এবং সমবায় ক্ষেত্রে প্রযুক্তির দূত হিসেবে কর্মরত তরুণ কর্মীদের প্রতিনিধিত্ব করছেন। ভারতে সমবায় আন্দোলনের প্রসারের লগ্নে প্রথমবার আন্তর্জাতিক সমবায় জোটের বিশ্ব সমবায় সম্মেলনের আয়োজন বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ বলে ইঙ্গিত করেন প্রধানমন্ত্রী। এই আলাপচারিতা সমবায় ক্ষেত্রে ভারতের আগামী যাত্রাকে সমৃদ্ধ করবে বলে তিনি মনে করেন। পাশাপাশি সমবায় ক্ষেত্রে ভারতের অভিজ্ঞতা ২১ শতকের চাহিদা পূরণে আন্তর্জাতিক মহলকে উপকৃত করবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। ২০২৫ সালটিকে আন্তর্জাতিক সমবায় বর্ষ হিসেবে ঘোষণা করার জন্য রাষ্ট্রসংঘকে ধন্যবাদ জানান শ্রী মোদী। 
ভাষণে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, সারা বিশ্বের কাছে সমবায় হল একটি প্রণালীগত ব্যবস্থাপনা বা নিদর্শ। কিন্তু, ভারতের কাছে তা হল এক সাংস্কৃতিক ভিত্তি ও জীবনশৈলী। বেদ ও উপনিষদে সমবায়ের ধারণার কথা রয়েছে। 
ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামেও সমবায় ভিত্তিক উদ্যোগের প্রতিফলন রয়েছে বলে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শুধুমাত্র আর্থিক ক্ষমতায়ন নয়, দেশপ্রেমিকদের সামাজিক মঞ্চ তৈরি করে দিতেও এই উদ্যোগ কার্যকর ভূমিকা নিয়েছে। মহাত্মা গান্ধীর গ্রাম স্বরাজ আন্দোলন গোষ্ঠীগত উদ্যোগের ওপর আধারিত এবং এক্ষেত্রে খাদি সমবায় ও গ্রামীন শিল্প গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সর্দার প্যাটেল দুগ্ধ সমবায়গুলিকে এক ছাতার তলায় এনে স্বাধীনতা সংগ্রামে নতুন মাত্রা জুড়েছিলেন। এই লড়াই-এর সঙ্গে জড়িত “আমূল” বর্তমানে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় খাদ্য উৎপাদক সংস্থা। ভারতে সমবায়ের গতিপথ ধারণা থেকে আন্দোলন, আন্দোলন থেকে বিপ্লব এবং বিপ্লব থেকে ক্ষমতায়নের লক্ষ্যবিন্দু পর্যন্ত বিস্তৃত। 
প্রশাসনিক কাজে সমবায়ের ধারণাকে সংযুক্ত করে ভারত উন্নত দেশ হয়ে ওঠার লক্ষ্যে এগোচ্ছে বলে প্রধানমন্ত্রী জানান। তিনি বলেন, আজ ভারতে ৮ লক্ষ সমবায় সমিতি রয়েছে, অর্থাৎ বিশ্বের প্রতি ৪টি সমবায় সমিতির মধ্যে একটি রয়েছে ভারতে। এদের কাজকর্ম বিস্তৃত ও বৈচিত্রপূর্ণ। গ্রামীন ভারতের ৯৮ শতাংশ অঞ্চলে সমবায়ের উপস্থিতি রয়েছে এবং এরসঙ্গে যুক্ত প্রায় ৩০ কোটি মানুষ- অর্থাৎ প্রতি ৫ জন ভারতীয়ের একজন কোনো না কোনোভাবে সমবায় উদ্যোগের সঙ্গে জড়িত। শহরাঞ্চলে এবং আবাসন ক্ষেত্রেও সমবায় উদ্যোগের প্রসার ঘটেছে অনেকখানি। চিনি, সার, মৎস্যচাষ এবং দুগ্ধ উৎপাদন শিল্পের মতো ক্ষেত্রে সমবায়ের বড় ভূমিকা রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী জানান, এদেশে আবাসন সমবায় সমিতির সংখ্যা প্রায় ২ লক্ষ। ব্যাঙ্কিং ক্ষেত্রেও সমবায় উদ্যোগ কাজ করে চলেছে। সারা দেশে বিভিন্ন সমবায় ব্যাঙ্কে গচ্ছিত আমানতের মোট পরিমাণ ১২ লক্ষ কোটি টাকা- যা এইসব প্রতিষ্ঠানের প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থার প্রতিফলন। সরকার সমবায় ব্যাঙ্কিং-এর প্রসারে উদ্যোগী বলে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী জানান, এই ব্যাঙ্কগুলিকে ভারতের রিজার্ভ ব্যাঙ্কের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে এবং প্রতি আমানতকারীর বীমার পরিমাণ ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। 
আগামীদিনে বিকাশের ক্ষেত্রে সমবায়ের বড় ভূমিকা রয়েছে বলে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিগত ১০ বছরে সমবায় পরিমণ্ডলের উন্নয়নে বেশকিছু সংস্কারের কাজে হাত দেওয়া হয়েছে। সমবায় সমিতিগুলিকে বহু উদ্দেশ্যসাধক করে তুলতে চায় সরকার। তৈরি হয়েছে পৃথক সমবায় মন্ত্রক। তথ্যপ্রযুক্তি চালিত ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সমবায় সমিতিগুলিকে সংযুক্ত করা হয়েছে- যার মাধ্যমে সমবায় ব্যাঙ্কিং প্রতিষ্ঠানগুলি জেলা ও রাজ্য স্তরে যুক্ত। বর্তমানে পেট্রোল-ডিজেলের বিক্রয়, সোলার প্যানেল বসানো কিম্বা জল সরবরাহ ব্যবস্থাপনার কাজেও সমবায় উদ্যোগ চোখে পড়ছে। গোবরধন প্রকল্পের আওতায় সমবায় উদ্যোগের মাধ্যমে বর্জ্য থেকে শক্তি উৎপাদনের কাজ হচ্ছে। গ্রামে গ্রামে সাধারণ পরিষেবা কেন্দ্রে ডিজিটাল পরিষেবার সংস্থানও হচ্ছে সমবায়ের মাধ্যমে। সমবায় পরিমণ্ডলের বিকাশের মাধ্যমে তাদের সদস্যদের আয় বৃদ্ধি সরকারের অগ্রাধিকারের বিষয়।
প্রধানমন্ত্রী জানান, আগে সমবায়ের অস্তিত্ব ছিল না এমন ২ লক্ষ গ্রামে আজ তৈরি হয়েছে বহু উদ্দেশ্যসাধক সমবায় সমিতি। শুধুমাত্র উৎপাদন নয়, পরিষেবা ক্ষেত্রেও সমবায় উদ্যোগের প্রসার ঘটছে। বিশ্বের বৃহত্তম শস্য মজুত প্রকল্পের কাজ হচ্ছে সমবায়ের মাধ্যমে। এরফলে, বিশেষভাবে উপকৃত হবেন ক্ষুদ্র কৃষকরা। 
ক্ষুদ্র কৃষকদের স্বার্থ রক্ষায় সরকারের উদ্যোগের প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কৃষক উৎপাদক সংগঠনের মাধ্যমে এঁদের এক ছাতার তলায় এনে প্রয়োজনীয় আর্থিক সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। এরই মধ্যে এধরণের ৯,০০০ সংগঠন তৈরি হয়ে গেছে। এই ব্যবস্থাপনার সুবাদে খামার থেকে বাজারে দ্রুত পৌঁছে যাচ্ছে উৎপাদিত ফসল। কৃষিজ পণ্যের সরবরাহ শৃঙ্খল আরও জোরদার করতে আধুনিক প্রযুক্তির সহায়তা নিচ্ছে সরকার। কাজ করে চলেছে একাধিক ই-বাণিজ্য মঞ্চ। সরকারের বৈদ্যুতিন ক্রয়-বিক্রয় কেন্দ্র GeM কৃষকদের পণ্য বিক্রয়ে বিশেষভাব সহায়ক হয়ে উঠেছে। 
বর্তমান শতকে বিশ্বের বিকাশে মহিলাদের ভূমিকা বড় হয়ে উঠতে চলেছে বলে প্রধানমন্ত্রী আবারও জানিয়ে দেন। ভারতে সমবায় ক্ষেত্রে মহিলারা নেতৃস্থানীয় ভূমিকা পালন করে চলেছেন বলে তিনি উল্লেখ করেন। এজন্যই সরকার বহু প্রাদেশিক সমবায় সমিতি আইনে পরিবর্তন এনে বড় সমবায় সমিতিগুলির পরিচালন পর্ষদে মহিলাদের গুরুত্বপূর্ণ উপস্থিতি নিশ্চিত করতে চেয়েছে। 
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, বর্তমানে সারা দেশে স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলিতে সদস্য হিসেবে রয়েছেন ১০ কোটি মহিলা। বিগত দশকে এই স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলিকে ৯ লক্ষ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে সরকার।
সমবায়ের অর্থায়নে গতি আনতে সহযোগিতামূলক আর্থিক তহবিল মডেল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারে বলে প্রধানমন্ত্রী মনে করেন। যৌথ ভিত্তিতে গড়ে তোলা এই তহবিলের মাধ্যমে বড়সড় প্রকল্পের কাজ ছাড়াও সমবায় সমিতিগুলিকে ঋণ দেওয়ার কাজও সহজ হবে। 
প্রধানমন্ত্রী বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে কাজ করে চলা সমবায় সমিতিগুলির অর্থায়নে আন্তর্জাতিক স্তরে আর্থিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলের পক্ষে সওয়াল করেন। বৃত্তীয় অর্থনীতিতে সমবায়ের উদ্যোগ পরিবেশ রক্ষার বিষয়টিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে বলে তিনি মনে করেন। 
প্রধানমন্ত্রী দৃঢ়ভাবে জানান, আন্তর্জাতিক সহযোগিতার প্রশ্নে সমবায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারে, বিশেষভাবে সহায়ক হয়ে উঠতে পারে দক্ষিণ বিশ্বের দেশগুলির কাছে। এই বিষয়টি নিয়ে সম্মেলনে আলোচনা কাম্য বলে প্রধানমন্ত্রী মন্তব্য করেন। 
দরিদ্র এবং প্রান্তিক মানুষের কাছে বিকাশের সুফল যাতে পৌঁছয়, তা নিশ্চিত করা সরকারের লক্ষ্য বলে আবারও জানান প্রধানমন্ত্রী। মানবতাকেন্দ্রিক উদ্যোগ সব কর্মকাণ্ডের মূল চালিকা শক্তি হওয়া উচিত বলে তিনি মনে করেন। কোভিড অতিমারির সময় ভারত সারা বিশ্বের পাশে দাঁড়িয়েছে এবং দক্ষিণ বিশ্বের বহু দেশে ওষুধ ও প্রতিষেধক পৌঁছে দিয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, নিছক অর্থনৈতিক যুক্তির উদ্দেশ্য হল সুযোগের সদ্ব্যবহার করা। কিন্তু, ভারতের মানুষের কাছে সেবা ও নীতির পথই অনুসরণীয়। আন্তর্জাতিক সমবায় বর্ষে বিশ্ব জুড়ে সহযোগিতা ও সমন্বয়ের পথ বেছে নিলে মানব সভ্যতা বিশেষভাবে উপকৃত হবে বলে তিনি আশাবাদী। 

 

PG/AC/CS