Search

পিএমইন্ডিয়াপিএমইন্ডিয়া

সাম্প্রতিক সংবাদ

বিষয়টিকে সরাসরি পিআইবি থেকে নেওয়া হয়েছে

আইআইটি ভুবনেশ্বর-এর উদ্বোধন এবং ওড়িশায় আইআইএসইআর এবং অন্যান্য উন্নয়ন প্রকল্প শিলান্যাস অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ

আইআইটি ভুবনেশ্বর-এর উদ্বোধন এবং ওড়িশায় আইআইএসইআর এবং অন্যান্য উন্নয়ন প্রকল্প শিলান্যাস অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ

আইআইটি ভুবনেশ্বর-এর উদ্বোধন এবং ওড়িশায় আইআইএসইআর এবং অন্যান্য উন্নয়ন প্রকল্প শিলান্যাস অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ

আইআইটি ভুবনেশ্বর-এর উদ্বোধন এবং ওড়িশায় আইআইএসইআর এবং অন্যান্য উন্নয়ন প্রকল্প শিলান্যাস অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ


এখানে উপস্থিত ভাই ও বোনেরা এবং নবীন প্রজন্মের বন্ধুগণ,

ওড়িশার উন্নয়নকল্পে সমর্পিতপ্রাণ আমাদের কাজ করার সঙ্কল্প আজ আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে পৌঁছেছে। একটু আগেই ১৪ হাজার কোটি টাকারও অধিক বিনিয়োগে নির্মিত কিংবা নির্মীয়মান বেশ কিছু প্রকল্পের উদ্বোধন কিংবা ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়েছে। এই প্রকল্পগুলির মধ্যে উচ্চশিক্ষা, স্বাস্থ্য, গ্যাস, সড়কপথ এবং সাংস্কৃতিক গুরুত্বসম্পন্ন প্রকল্প রয়েছে। এই সকল প্রকল্প ওড়িশার উন্নয়ন এবং এখানকার প্রত্যেক মানুষের জীবনকে সহজ এবং সুগম করে তুলতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। সেজন্য আমি ওড়িশার প্রত্যেক নাগরিককে অনেক শুভেচ্ছা জানাই।

বন্ধুগণ, দেশের ইতিহাসে এই প্রথমবার কোনও কেন্দ্রীয় সরকার ওড়িশা সহ পূর্ব ভারতের উন্নয়নে এত গুরুত্ব দিচ্ছে। দেশের ভারসাম্যযুক্ত উন্নয়নকে অগ্রাধিকার দিয়ে বিগত চার বছর ধরে নিরন্তর এই অঞ্চলের পরিকাঠামোর সঙ্গে যুক্ত, জরুরি পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত অনেক প্রকল্পের সম্প্রসারণ হয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকার পূর্ব ভারতকে পূর্ব এশিয়া এবং দক্ষিণ এশিয়ার ‘গেটওয়ে’ হিসেবে বিকশিত করার দিকে এগোচ্ছে। ‘সবকা সাথ, সবকা বিকাশ’-এর মন্ত্র নিয়ে ওড়িশার প্রত্যেক নাগরিক, ওড়িশার প্রত্যেক প্রান্তে উন্নয়ন – এই সঙ্কল্প নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার এগিয়ে চলেছে।

বন্ধুগণ, আজ আমার আইআইটি ভুবনেশ্বরকে ওড়িশার প্রতিভাবান ছাত্রছাত্রীদের উদ্দেশে সমর্পণ করার সৌভাগ্য হয়েছে। ১,২৬০ কোটি টাকা খরচ করে এটি গড়ে তোলা হয়েছে। এই সুন্দর আধুনিক ক্যাম্পাস আগামীদিনে ওড়িশার নবীন প্রজন্মের যুবক-যুবতীদের স্বপ্নপূরণের কেন্দ্র হয়ে উঠবে, কর্মসংস্থানের নতুন মাধ্যম হয়ে উঠবে। আইআইটি-র এই ক্যাম্পাসে ওড়িশার স্থানীয় শিল্পোদ্যোগ, এখানকার অরণ্যসম্পদ সম্পর্কিত গবেষণা হবে। এ রাজ্যের জনজাতি ভাই-বোনদেরজীবন উন্নয়নের জন্য নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার নিয়ে গবেষণা হবে। এই প্রতিষ্ঠান দেশ ও বিদেশের জন্য উঁচুমানের ইঞ্জিনিয়ার এবং শিল্পোদ্যোগী গড়ে তোলার পাশাপাশি ওড়িশাকে উন্নত প্রযুক্তির শিল্পোন্নয়নের পথে নিয়ে যেতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। তাছাড়া, আগামীদিনে বেরহামপুরে প্রায় ১,৬০০ কোটি টাকা বিনিয়োগে ‘ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ’ও কাজ করতে শুরু করবে।

বন্ধুগণ! বিগত সাড়ে চার বছরে কেন্দ্রীয় সরকার সারা দেশে এমনই অনেক শিক্ষা, বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তি সংক্রান্ত প্রতিষ্ঠানের প্রকল্প মঞ্জুর করেছে। এগুলির মাধ্যমে সরকার নতুন ভারতকে আধুনিক প্রযুক্তি এবং ‘স্টার্ট-আপ’-এর হাব করে গড়ে তোলার প্রচেষ্টা জারি রেখেছে। আশা করি, ওড়িশার এই নতুন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জ্ঞান এবং উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে ওড়িশার পুরনো পরিচয়কে আরও শক্তিশালী করে তুলবে। বন্ধুগণ, শিক্ষার পাশাপাশি কেন্দ্রীয় সরকার জনগণের সুস্বাস্থ্যকেও অগ্রাধিকার দিচ্ছে। এই ভাবনা থেকেই খুরদা, ভুবনেশ্বরে নির্মিত ইএসআইসি হাসপাতালের সম্প্রসারণের কাজও সম্পূর্ণ করা হয়েছে। আজ আগের তুলনায় দ্বিগুণ ক্ষমতাসম্পন্ন আধুনিক পরিষেবাযুক্ত এই হাসপাতালটিও জনগণের প্রতি সমর্পণ করা হয়েছে। এখন এটি ১০০ শয্যাবিশিষ্ট বড় হাসপাতালে পরিণত হয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকারের লক্ষ্য হল দূর-দূরান্তের বিভিন্ন গ্রাম এবং অরণ্যে বসবাসকারী আমার জনজাতি ভাই-বোনদের চিকিৎসার সুব্যবস্থা করা। সেই লক্ষ্য মাথায় রেখে ‘আয়ুষ্মান ভারত’ প্রকল্পের মাধ্যমে ‘হেল্‌থ অ্যান্ড ওয়েলনেস সেন্টার’ নির্মাণ কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে। আগামী কয়েক বছরে যখন প্রতিটি কেন্দ্র নির্মিত হয়ে যাবে তখন ওড়িশা তথা গোটা দেশে স্বাস্থ্য পরিষেবা ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে।

বন্ধুগণ, ওড়িশায় স্বাস্থ্য পরিষেবা বৃদ্ধির পাশাপাশি কেন্দ্রীয় সরকার সড়ক যোগাযোগ বৃদ্ধির কাজও ত্বরান্বিত করছে। রাজ্যের সমস্ত দুর্গম অঞ্চলকে সড়ক পথে যুক্ত করার প্রকল্পগুলির গতি বৃদ্ধি করা হয়েছে। গ্রামে গ্রামে এবং শহরগুলির মধ্যে সড়ক পথের সম্প্রসারণ ঘটানো হচ্ছে। কেন্দ্রীয় সরকার ওড়িশায় জাতীয় সড়কের দৈর্ঘ্য ১০ হাজার কিলোমিটার বিস্তৃত করার লক্ষ্যে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। সেই লক্ষ্যেই আজ এখানে সড়ক ও মহাসড়কের চারটি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়েছে। চান্দীখোল থেকে ভদ্রক এবং টাঙ্গী থেকে পাইটোলা মহাসড়ক ছয় লেনের করা, কটক থেকে আঙ্গুল পর্যন্ত সড়ক পথ প্রশস্তীকরণ, খণ্ডগিরি উড়ালপথের নির্মাণ, প্রায় সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা ব্যয় নির্মীয়মান এই সকল প্রকল্প ওড়িশার উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। জনগণের যাতায়াত এবং ব্যবসা-বাণিজ্য অনেক সহজ হবে।

বন্ধুগণ, ওড়িশায় পরিকাঠামো নির্মাণে যত উন্নতি হবে, স্থানীয় শিল্পপতিদের জন্য ব্যবসা-বাণিজ্যের পথ ততই সহজ হবে।বিশেষত, তেল এবং গ্যাসের ক্ষেত্রে ওড়িশার ভবিষ্যৎ অত্যন্ত উজ্জ্বল। পারাদ্বীপ-হায়দরাবাদ পাইপলাইন ওড়িশাকে নতুন পরিচয় প্রদান করবে। এখানকার যুবক-যুবতীদের কর্মসংস্থানের নতুন নতুন পথ খুলবে। প্রায় ১,২০০ কিলোমিটার দীর্ঘ এই পাইপলাইন ওড়িশার পাশাপাশি অন্ধ্রপ্রদেশ এবং তেলেঙ্গানার পেট্রোলিয়ামজাত পদার্থসমূহের প্রয়োজন মেটাবে। পারাদ্বীপ তৈল শোধনাগার থেকে নির্গত পেট্রোল, ডিজেল, কেরোসিন এবং বিমানের জ্বালানি অনেক শহর এবং গ্রামের প্রয়োজন মেটাবে। প্রায় চার হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগে নির্মিত এই প্রকল্পের মাধ্যমে বেরহামপুর, বিশাখাপত্তনম, রাজামুন্দ্রি এবং বিজয়ওয়াড়াতে ‘ডেলিভারি কাম পাম্পিং স্টেশন’ গড়ার মাধ্যমে এই পাইপলাইন ওড়িশাকে এক প্রকার পূর্ব ভারতের পেট্রোলিয়াম হাব-এ পরিণত করবে।

বন্ধুগণ, দেশের দরিদ্র থেকে দরিদ্রতর পরিবারগুলির রান্নাঘরে নির্মল ধোঁয়ামুক্ত রান্নার গ্যাস ও সরঞ্জাম পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের সরকার সমর্পিতপ্রাণ। দেশের প্রত্যেক বাড়িতে রান্নার গ্যাস সিলিন্ডার পৌঁছে দেওয়ার অভিযানে আমরা পূর্ণ সাফল্যের কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছি। এখন পাইপলাইনের মাধ্যমে বাড়িতে বাড়িতে রান্নার গ্যাস পৌঁছনোর জন্য ‘প্রধানমন্ত্রী উর্জা গঙ্গা যোজনা’ দ্রুতগতিতে কাজ করছে। এর অংশ হিসেবে আজ জগদীশপুর, হলদিয়া, বোকারো, ধামরা পাইপলাইন প্রকল্পের ‘বোকারো-আঙ্গুল সেকশন’-এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হল। প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগে এই প্রকল্প সম্পূর্ণ হলে এর মাধ্যমে ওড়িশার পাঁচটি জেলার পাশাপাশি ঝাড়খণ্ডের ছ’টি জেলাতেও পাইপলাইনের মাধ্যমে বাড়িতে বাড়িতে রান্নার গ্যাস পৌঁছে যাবে।

বন্ধুগণ, সম্পদ এবং পরিবহণ ব্যবস্থার উন্নয়নের সঙ্গে যতক্ষণ সাংস্কৃতিক বিকাশের মাত্রা সংযোজন না হয়, ততক্ষণ উন্নয়ন অসম্পূর্ণ থাকে। দেশের প্রথম স্বাধীনতা সংগ্রামে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনকারী পায়কা বিদ্রোহের ২০০ বছর পূর্তি উপলক্ষে আজ একটি বিশেষ ডাকটিকিট এবং মুদ্রা প্রকাশ করা হল। তাছাড়া, সরকার পায়কা বিদ্রোহের নায়ক বক্সি জগবন্ধুর নামে উৎকল বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি চেয়ারের সূচনা করল। এই চেয়ার পাইকা এবং জনজাতি আন্দোলন সহ যাবতীয় জাতীয়তাবাদী আন্দোলন সংশ্লিষ্ট বিষয়ের গবেষণা কেন্দ্র হয়ে ওঠার পাশাপাশি ওড়িশার জনজাতি সমাজে আসা সামাজিক এবং আর্থিক পরিবর্তনগুলি বুঝতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

বন্ধুগণ, পাইকার নায়কদের সম্মান প্রদর্শনের পাশাপাশি আমরা ওড়িশার সমৃদ্ধ আধ্যাত্মিক ঐতিহ্যকে বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরার ওপর জোর দিয়েছি। আজ আমার কটক জেলার ললিতগিরিতে প্রত্নতাত্ত্বিক সংগ্রহশালা উদ্বোধনের সৌভাগ্য হয়েছে। এতে বৌদ্ধযুগের গোড়ার দিকের অনেক গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন সংগৃহীত এবং প্রদর্শিত হয়েছে। এই সংগ্রহশালা সারা পৃথিবীর বৌদ্ধদের, গবেষকদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠার পাশাপাশি জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যটকদের আকর্ষণ করবে। এর ফলে ওড়িশার পর্যটন শিল্প শক্তিশালী হবে। অনেক নবীন যুবক-যুবতীর কর্মসংস্থানও সুনিশ্চিত হবে।

বন্ধুগণ, কেন্দ্রীয় সরকার ওড়িশার সম্পূর্ণ উন্নয়নে সমর্পিতপ্রাণ। পরিকাঠামো উন্নয়ন থেকে শুরু করে এ রাজ্যের প্রত্যেক নাগরিকের উন্নয়নে অনেক পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। আমি আপনাদের আশ্বস্ত করছি যে এই সক্রিয়তা নিরন্তর জারি থাকবে। আমরা চাই যে ওড়িশা নতুন ভারতের উন্নয়নে একটি গুরুত্বপূর্ণ চালিকাশক্তি হয়ে উঠুক। সেজন্য আমরা সবাই মিলে চেষ্টা করবো, এগিয়ে যাব। এই কামনা নিয়ে আরেকবার এই সমস্ত প্রকল্পের উদ্বোধন এবং শিলান্যাসের জন্য সমস্ত ওড়িশাবাসীকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানিয়ে জগন্নাথকে প্রণাম জানাই।

আপনাদের সকলকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।

CG/SB/DM