Search

পিএমইন্ডিয়াপিএমইন্ডিয়া

সাম্প্রতিক সংবাদ

বিষয়টিকে সরাসরি পিআইবি থেকে নেওয়া হয়েছে

অর্থনৈতিক কর্মপ্রচেষ্টার প্রতিটি ক্ষেত্রেই ভারত ক্রমশ স্বনির্ভর হয়ে উঠছে

অর্থনৈতিক কর্মপ্রচেষ্টার প্রতিটি ক্ষেত্রেই ভারত ক্রমশ স্বনির্ভর হয়ে উঠছে


নয়াদিল্লি, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২২

বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ হল ভারত। এখানে পরিস্থিতি বর্তমানে সতত পরিবর্তনশীল। কর্মপ্রচেষ্টার প্রতিটি ক্ষেত্রেই ভারত ক্রমশ স্বনির্ভর হয়ে উঠছে। একদিকে এক বড় ধরনের রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা পূরণে ভারত যেমন সাফল্য দেখিয়েছে, অন্যদিকে তেমনই একটি নির্মাণ তথা উৎপাদন কেন্দ্র রূপে নিজের অবস্থানকে বিশ্বের কাছে আরও শক্তিশালীও করে তুলেছে। এই পরিস্থিতিতে জাতীয় লজিস্টিক্স নীতি প্রতিটি ক্ষেত্রকেই আরও বেশি মাত্রায় উৎসাহিত করে তুলবে। নীতি রচনা ও তার বাস্তবায়ন প্রচেষ্টা যেমন একটি সূচনামাত্র, তেমনই নীতি গ্রহণের পরবর্তী পর্যায়ে কর্মপ্রচেষ্টা ও কর্মতৎপরতা অগ্রগতিকে ক্রমশ সম্ভব করে তোলে। যে কোনো নীতি গ্রহণের আগে ভারত নিজেকে সেই নীতি বাস্তবায়নের উপযোগী করে গড়ে তোলে। ফলে, নীতির রূপায়ণ তথা বাস্তবায়ন প্রকৃত অর্থেই সফল হয়ে ওঠে। ঠিক তেমনই জাতীয় লজিস্টিক্স নীতি হঠাৎ শূন্য থেকে ভেসে আসা কোনও একটি নীতি মাত্র নয়, এর পেছনে রয়েছে আট বছরের কঠোর পরিশ্রম ও প্রস্তুতি। নীতিগত পরিবর্তন, বড় বড় সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং বহু বছরের প্রশাসন পরিচালনের অভিজ্ঞতা রয়েছে এর পেছনে।
আজ রাজধানীর বিজ্ঞান ভবনে জাতীয় লজিস্টিক্স নীতির আনুষ্ঠানিক সূচনা অনুষ্ঠানে ভাষণদানকালে একথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী। তাঁর মতে, জাতীয় লজিস্টিক্স নীতি হল একটি উন্নত দেশ হিসেবে ভারতের প্রাণ প্রতিষ্ঠার পথে এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। দেশের সুদূরতম এলাকায় দ্রুত যোগান পৌঁছে দেওয়া, পরিবহণ সম্পর্কিত বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা, উৎপাদকদের ব্যয় ও সময় সাশ্রয়ের পরিকল্পনা, কৃষিজাত পণ্যের অপব্যবহার রোধ এবং সম্মিলিত প্রচেষ্টা – এ সমস্ত অর্থনৈতিক কর্মপ্রচেষ্টার মিলিত ফসল হল জাতীয় লজিস্টিক্স পলিসি।
পণ্য পরিবহণের ক্ষেত্রে সরকার গৃহীত বিভিন্ন কর্মসূচি ও প্রকল্পের উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন যে ‘সাগরমালা’ ও ‘ভারতমালা’র মতো কর্মসূচি হল সঠিক সময়ে পণ্যের যোগান নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এক নিশ্চিত পদক্ষেপ। ভারতীয় বন্দরগুলির পণ্য পরিবহণ ক্ষমতা বর্তমানে বেশ উল্লেখযোগ্যভাবেই বৃদ্ধি পেয়েছে। কন্টেনার ভেসেলগুলির যাতায়াতের সময়সীমাও এখন ৪৪ ঘন্টা থেকে কমে এসেছে ২৬ ঘন্টায়। রপ্তানি বাণিজ্যের উন্নয়ন ও প্রসারে ৪০টি এয়ার কার্গো টার্মিনাল নির্মাণ করা হয়েছে। ৩০টি বিমানবন্দরে রয়েছে কোল্ড স্টোরেজের সুযোগ-সুবিধা। ৩৫টি বহু উদ্দেশ্যসাধক কেন্দ্র গড়ে তোলা হচ্ছে দেশজুড়ে। জলপথের মাধ্যমে আমরা এখন পরিবেশ-বান্ধব ও ব্যয়সাশ্রয়ী পণ্য পরিবহণে যথেষ্ট দক্ষতা ও অভিজ্ঞতাও অর্জন করতে পেরেছি। এছাড়াও, আরও বহু নতুন নতুন জলপথ গড়ে উঠছে সারা দেশজুড়ে। এমনকি করোনা পরিস্থিতিকালেও আকাশপথে ভারতের পণ্য পরিবহণ কোনো অবস্থাতেই ব্যহত হয়নি। দেশের ৬০টি বিমানবন্দরে বর্তমানে রয়েছে ‘কৃষি উড়ান’-এর সুযোগ-সুবিধা।
পণ্য পরিবহণের ক্ষেত্রে নতুন নতুন প্রযুক্তি প্রয়োগের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ই-সঞ্চিত’-এর মাধ্যমে কাগজপত্র ছাড়াই আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের প্রক্রিয়াকরণের লক্ষ্যে সরকার কাজ করে চলেছে। এছাড়াও, ই-ওয়ে বিল, ফাস্টট্যাগ ইত্যাদিও চালু হয়েছে। এই ব্যবস্থায় পণ্য পরিবহণ শিল্পে এক বিশেষ দক্ষতা অর্জিত হয়েছে। জিএসটি-র মতো এক অভিন্ন কর ব্যবস্থার গুরুত্বের কথা উল্লেখ করে শ্রী মোদী বলেন, এর ফলে পণ্যের যোগান ও পরিবহণ যথেষ্ট মসৃণ ও শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। পরিবর্তন আনা হয়েছে ড্রোন নীতির ক্ষেত্রেও। এত কিছুর মধ্য দিয়েই ক্ষেত্র প্রস্তুত করা হয়েছে জাতীয় লজিস্টিক্স নীতির।
শ্রী মোদী বলেন, ‘ইউনিফায়েড লজিস্টিক্স ইন্টারফেস প্ল্যাটফর্ম’ অর্থাৎ, ইউলিপ-এর মাধ্যমে পরিবহণ ক্ষেত্রে ডিজিটাল পরিষেবার প্রয়োগ ও ব্যবহার জোরদার করে তোলা হচ্ছে। একটি নতুন ডিজিটাল মঞ্চ ‘ইজ অফ লজিস্টিক্স সার্ভিসেস’ অর্থাৎ, ই-লগস চালু হয়েছে। কাজকর্মের ক্ষেত্রে যে কোনো সমস্যার সমাধানে দেশের শিল্প সংস্থাগুলি এই পোর্টালটিকে ব্যবহার করতে পারে। এই সমস্যা নিরসনে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের লক্ষ্যে একটি পদ্ধতিগত ব্যবস্থাও পুরো মাত্রায় চালু হয়েছে।
‘প্রধানমন্ত্রী গতি শক্তি জাতীয় মাস্টার প্ল্যান’টি যে জাতীয় লজিস্টিক্স নীতিকে সহযোগিতা যুগিয়ে যাবে, একথারও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, বিভিন্ন রাজ্যের নানা ধরনের পরিকাঠামো প্রকল্প সম্পর্কে তথ্য ও পরিসংখ্যানের বিশদ বিবরণও প্রস্তুত করা হয়েছে। কেন্দ্র ও রাজ্যস্তরের এই সমস্ত তথ্য ও পরিসংখ্যান তুলে ধরা হয়েছে ‘প্রধানমন্ত্রী গতি শক্তি পোর্টাল’টির মধ্যে। গতি শক্তি এবং জাতীয় লজিস্টিক্স নীতি একযোগে ভারতকে যে এক নতুন কর্মসংস্কৃতির জগতে পৌঁছে দিতে চলেছে, একথার উল্লেখ করে শ্রী মোদী বলেন, সম্প্রতি অনুমোদিত ‘গতি শক্তি বিশ্ববিদ্যালয়’-এর মেধাকে এর সঙ্গে যুক্ত করা হলে এক নতুন ধরনের কর্মসংস্কৃতি গড়ে উঠবে বলে তিনি মনে করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্ব এখন ভারতকে গণতান্ত্রিক দিক থেকে এক বৃহৎ শক্তিধর রাষ্ট্র রূপে মেনে নিয়েছে। ভারতে মেধাশক্তি বিকাশের যে এক অসাধারণ পরিবেশ রয়েছে সেকথা আজ বিশ্ব স্বীকৃত। তাই, ভারতের প্রতি সমগ্র বিশ্বের দৃষ্টিভঙ্গি এখন ক্রমান্বয়ে পরিবর্তিত হচ্ছে। ভারতের কাছে বিশ্বের প্রত্যাশা এখন অনেক। তাই, ভারত সম্পর্কে আন্তর্জাতিক মূল্যায়ন এখন বেশ ইতিবাচক।
শ্রী মোদী বলেন, ভারত এখন একটি উন্নত রাষ্ট্র হয়ে উঠতে বদ্ধপরিকর। তাই, উন্নত দেশগুলির সঙ্গে প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রেও ভারতকে এখন মুখোমুখি হতে হবে। প্রতিটি ক্ষেত্রই এখন প্রতিযোগিতা-কেন্দ্রিক ও প্রতিযোগিতামুখী হয়ে উঠতে চলেছে। ভারতে উৎপাদিত পণ্য যে এখন বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে সে প্রসঙ্গের অবতারণা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারতের কৃষিপণ্য, ব্রাহ্মস ক্ষেপণাস্ত্র ইত্যাদি সম্পর্কে বিশ্ব পর্যায়ে এখন নানাভাবে আলাপ-আলোচনা চলছে। এমনকি, ভারতে তৈরি কোভিড ভ্যাক্সিন ও ওষুধপত্র বিশ্বের বহু দেশের লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবনদান করেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতীয় লজিস্টিক্স নীতি ভারতের এই শিল্পোদ্যোগ ও পণ্য পরিবহণ ব্যবস্থাকে আরও উন্নত ও আধুনিক করে তুলতে নানাভাবে সহায়তা যুগিয়ে যাবে। এরই এক অবশ্যম্ভাবী পরিণতিতে ভারতের সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা হয়ে উঠবে আরও মসৃণ ও সহজতর। সেইসঙ্গে, মর্যাদা বৃদ্ধি ঘটবে দেশের শ্রমিক-কর্মীদের।

PG/SKD/DM