শ্রী ইন্দ্র কুমার গুজরাল ১৯৯৭ সালের ২১ এপ্রিল,- সোমবার ভারতের দ্বাদশ প্রধানমন্ত্রী হিসাবে শপথ গ্রহণ করেন। প্রয়াত অবতার নারায়ণ গুজরাল এবং প্রয়াত পুষ্পা গুজরালের সন্তান ইন্দ্র কুমার এম.এ.; বি.কম.; পি.এইচ.ডি. এবং ডি. লিট। ১৯১৯ সালের ৪ ডিসেম্বর অবিভক্ত পাঞ্জাবের ঝিলামে তাঁর জন্ম হয়। ১৯৪৫ সালের ২৬ মে তাঁর সঙ্গে শ্রীমতী শীলা গুজরালের বিবাহ হয়।
শ্রী গুজরাল পাঞ্জাবের এক স্বাধীনতা সংগ্রামী পরিবারের সন্তান। তাঁর পিতামাতা উভয়েই স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশগ্রহণ করেছিলেন। মাত্র ১১ বছর বয়সে ১৯৩১ সালে তিনি নিজেও স্বাধীনতা সংগ্রামে জড়িয়ে পড়েন , গ্রেপ্তার হন এবং ঝিলাম শহরে কিশোরদের নিয়ে আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য পুলিশের হাতে প্রহৃত হন। ১৯৪২ সালে ‘ভারত ছাড়ো’ আন্দোলনের সময়ে তিনি জেলবন্দী হন।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী পদে আসীন হওয়ার আগে শ্রী গুজরাল ১৯৯৬ সালের ১ জুন থেকে (১ জুন) দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রী হন। এছাড়া, ১৯৯৬ সালের ২৮ জুন থেকে তাঁকে জলসম্পদ মন্ত্রকের অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হয়। ১৯৮৯ – ১৯৯০ সালেও তিনি ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৬ – ১৯৮০ সাল পর্যন্ত তিনি পূর্বতন সোভিয়েত ইউনিয়নে ভারতের রাষ্ট্রদূতের
(ক্যাবিনেট মর্যাদার) দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬৭ – ১৯৭৬ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে তিনি কেন্দ্রীয় সরকারের নিম্নলিখিত মন্ত্রকের দায়িত্ব পালন করেন।
১) যোগাযোগ এবং সংসদীয় দপ্তরের মন্ত্রী
২) তথ্য-সম্প্রচার এবং যোগাযোগ দপ্তরের মন্ত্রী
৩) কর্মসংস্থান এবং আবাসন মন্ত্রী
৪) তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী
৫) পরিকল্পনা মন্ত্রী
যে সব সংসদীয় পদে তিনি ছিলেন :
১৯৯৬ সালের জুন মাস থেকে তিনি রাজ্যসভার নেতা ছিলেন; ১৯৯৩ – ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত বাণিজ্য এবং বস্ত্রবয়ন (বস্ত্র) মন্ত্রকের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন; ১৯৯৬ – এর এপ্রিল মাস পর্যন্ত পররাষ্ট্র মন্ত্রকের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন; ১৯৬৪ – ১৯৭৬ এবং ১৯৮৯ – ১৯৯১ সাল পর্যন্ত তিনি সংসদ সদস্য ছিলেন; ১৯৯২ সালে বিহার থেকে তিনি রাজ্যসভায় তিনি পুনর্নিবাচিত হন। এছাড়া, বিভিন্ন সময়ে তিনি পিটিশন কমিটি, পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটি, সংসদীয় নিয়ম-কানুন সংক্রান্ত কমিটি (রাজ্যসভার), সাব-অর্ডিনেট লেজিশলেশন কমিটি (রাজ্যসভা), জেনারেল পার্পাস কমিটি (রাজ্যসভা) এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রকের স্থায়ী কমিটির সদস্য ছিলেন।
অন্যান্য যে সব গুরুত্বপূর্ণ পদে তিনি ছিলেন
দক্ষিণ এশীয় সহযোগিতা সংক্রান্ত ভারতীয় পরিষদের চেয়ারম্যান; ক্যাপিটাল প্ল্যান মনিটরিং কমিটির সদস্য; ইন্সটিটিউট অফ ডিফেন্স স্টাডিজ অ্যান্ড অ্যানালিসিসের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট; উর্দু ভাষা উৎসাহদান বিষয়ক সরকারি কমিটির চেয়ারম্যান (গুজরাল কমিটি); ১৯৫৯ – ১৯৬৪ সাল পর্যন্ত নয়াদিল্লি মিউনিসিপ্যাল কাউন্সিলের ভাইস-প্রেসিডেন্ট; লাহোর স্টুডেন্টস ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট; পাঞ্জাব স্টুডেন্টস ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক; কলকাতা, শ্রীনগর এবং দিল্লি’তে আয়োজিত বিরোধী দলগুলির সংযুক্ত ফ্রন্টের কনক্লেভের আহ্বায়ক এবং মুখপাত্র।
আন্তর্জাতিক প্রতিনিধিদল
১৯৯৬ সালে রাষ্ট্রসঙ্ঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে ভারতীয় প্রতিনিধিদলের নেতা; ১৯৯৫ সালে জেনিভায় রাষ্ট্রসঙ্ঘের মানবাধিকার সংক্রান্ত অধিবেশনে ভারতীয় প্রতিনিধিদলের নেতা; ১৯৯০ সালে রাষ্ট্রসঙ্ঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে ভারতীয় দলের নেতা; ১৯৯০ সালে অর্থনৈতিক উন্নয়ন সংক্রান্ত রাষ্ট্রসঙ্ঘের বিশেষ অধিবেশনে ভারতীয় দলের নেতা; ১৯৯৪ এবং ১৯৯৫ সালে রাষ্ট্রসঙ্ঘ সংগঠন (ইউ.এন.ও.) – এ ভারতীয় প্রতিনিধিদলের সদস্য; ১৯৭৭ সালে শিক্ষা এবং পরিবেশ সংক্রান্ত ইউনেস্কো সম্মেলনে ভারতীয় প্রতিনিধিদলের নেতা; ১৯৭০, ১৯৭২ এবং ১৯৭৪ সালে ইউনেস্কো অধিবেশনে ভারতীয় প্রতিনিধিদলের বিকল্প নেতা; প্যারিসে ১৯৭৩ সালে আয়োজিত মানুষ এবং নতুন যোগাযোগ ব্যবস্থা সংক্রান্ত সেমিনারের চেয়ারম্যান; ১৯৯৫ সালে বুখারেস্টে আন্তঃসংসদীয় ইউনিয়নের সম্মেলনে প্রতিনিধি; ১৯৯৪ সালে কানাডায় কমনওয়েলথ সংসদীয় সংগঠন সম্মেলনের প্রতিনিধি; ১৯৬৭ সালে অস্ট্রেলিয়ার ক্যানবেরায় আন্তঃসংসদীয় ইউনিয়ন বৈঠকের প্রতিনিধি; ১৯৭৪ সালে স্টকহোমে পরিবেশ সংক্রান্ত রাষ্ট্রসঙ্ঘ অধিবেশনে ভারতীয় প্রতিনিধিদলের বিকল্প নেতা; ১৯৭৫ সালে আফ্রিকার গ্যাবোন, ক্যামেরুন, কঙ্গো, চাদ এবং মধ্য-আফ্রিকীয় প্রজাতন্ত্রের ভারতের বিশেষ দূত; ১৯৬৬ সালে মালাওয়ি প্রজাতন্ত্রের উদ্বোধনে ভারতের বিশেষ দূত; ১৯৬১ সালে বুলগেরিয়ার ভারতের বিশেষ দূত; ভারতের রাষ্ট্রপতির শ্রীলঙ্কা, ভুটান, মিশর এবং সুদান সফরকালে তাঁর সঙ্গী কেন্দ্রীয় মন্ত্রী; ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ সাউথ এশিয়ান কো-অপারেশনের চেয়ারম্যান এবং ১৯৬১ সালে এশিয়ান রোটারি সম্মেলনের কো-চেয়ারম্যান।
যে সমস্ত সামাজিক সংগঠনের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ ছিল
পাঞ্জাবের জলন্ধরে নারী নিকেতন ট্রাস্ট এবং এ.এন. গুজরাল মেমোরিয়াল স্কুলের সভাপতি; ভারত – পাক মৈত্রী সোসাইটির সভাপতি; দিল্লি আর্ট থিয়েটারের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি; লোক কল্যাণ সমিতির সহ-সভাপতি; ১৯৬০ সালে দিল্লি রোটারি ক্লাবের সহ-সভাপতি এবং ১৯৬১ সালে এশীয় রোটারি সম্মেলনের কো-চেয়ারম্যান।
বিশেষ গুণাবলী
শ্রী গুজরাল জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক বিষয়ে একজন বিশিষ্ট ভাষ্যকার ও লেখক ছিলেন। এছাড়া, থিয়েটারের সঙ্গেও তাঁর যোগাযোগ ছিল।