Search

পিএমইন্ডিয়াপিএমইন্ডিয়া

সাম্প্রতিক সংবাদ

বিষয়টিকে সরাসরি পিআইবি থেকে নেওয়া হয়েছে

শ্রীমদ্ভগবত গীতা’র শ্লোকের পান্ডুলিপি প্রকাশ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর মূল বক্তব্যের অনুবাদ

শ্রীমদ্ভগবত গীতা’র শ্লোকের পান্ডুলিপি প্রকাশ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর মূল বক্তব্যের অনুবাদ


অনুষ্ঠানে আমার সঙ্গে উপস্থিত জম্মু ও কাশ্মীরের লেফটেন্যান্ট গভর্নর শ্রীমান মনোজ সিনহা জি, ধর্মার্থ ট্রাস্টের চেয়ারম্যান ট্রাস্টি ডাঃ কর্ণ সিং জি, এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত  সকল ভদ্রমহিলা ও ভদ্রমহোদয়গণ,

আজ আমরা শ্রীমদ্ভগবত গীতা’র ২০টি ব্যাখ্যার সংকলিত ১১টি সংস্করণ প্রকাশ করছি। আমি এই পবিত্র কাজের প্রচেষ্টার জন্য সব বিদ্বানদের, এর সঙ্গে যুক্ত সকল ব্যক্তি এবং তাঁদের প্রচেষ্টাকে সশ্রদ্ধ প্রণাম জানাচ্ছি এবং তাঁদের অভিনন্দন জানাচ্ছি। আপনারা আজকের যুবসমাজ এবং আগামী প্রজন্মের জন্য জ্ঞানের এত বিশাল ভান্ডার  সহজলভ্য করে দেওয়ার বিরাট কাজ করেছেন। আমি বিশেষভাবে ডাঃ কর্ণ সিং জিকে অভিনন্দন জানাই, যাঁর নেতৃত্বে এই কাজটি বাস্তবায়িত হয়েছে। আমি যখনই তাঁর সঙ্গে দেখা করি জ্ঞান ও সংস্কৃতির অবিরাম ধারা বইতে থাকে। এধরনের মানুষ খুব কম দেখা যায়। এবং আজ অত্যন্ত শুভদিন আরও একটি কারণে, আজ কর্ণ সিং জি’র জন্মদিনও, এবং একরকমভাবে এটি তাঁর ৯০ বছরের সাংস্কৃতিক যাত্রা। আমি তাঁকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাই। আমি আপনার দীর্ঘায়ু এবং সুস্থতা কামনা করছি। ডাঃ কর্ণ সিং জি ভারতীয় দর্শনের জন্য যে কাজ করেছেন, যেভাবে নিজের জীবন এই পবিত্র কাজের জন্য সমর্পণ করেছেন, ভারতের শিক্ষা ক্ষেত্রে তার প্রভাব স্পষ্টভাবে দেখা যায়। আপনার এই প্রচেষ্টার ফলে জম্মু-কাশ্মীরের সেই পরিচয় পুনরুজ্জীবিত হয়েছে যা বহুকাল ধরে ভারতের মূল্যবোধের পরম্পরাকে নেতৃত্ব দিয়েছে। কাশ্মীরের ভট্ট ভাষ্কর, অভিনবগুপ্ত, আনন্দ বর্ধন সহ অসংখ্য বিদ্বান, যাঁরা আমাদের কাছে গীতার রহস্য উন্মোচন করেছিলেন, আজ সেই পরম্পরা আরও একবার দেশকে সমৃদ্ধ করার জন্য প্রস্তুত হচ্ছে। এটি কাশ্মীরের পাশাপাশি গোটা দেশের জন্য গৌরবের।

বন্ধুরা,

একটি ধর্মগ্রন্থের প্রতিটি শ্লোকের আলাদা আলাদা ব্যাখ্যা, এত অসংখ্য মনীষীদের অভিব্যক্তি, এটি গীতার গভীরতার প্রতীক। যার জন্য হাজার হাজার বিদ্বান তাঁদের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। এটি ভারতের মতাদর্শের স্বাধীনতা এবং সহনশীলতারও প্রতীক, যা প্রত্যেক ব্যক্তিকে তাঁর নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি, নিজস্ব মতামত রাখতে অনুপ্রাণিত করে। কারও কাছে গীতা জ্ঞান গ্রন্থ, কারও কাছে এটি সাংখ্য দর্শন, কারও কারও জন্য এটি যোগের সুত্র, আবার কারও জন্যে এটি কর্মের পাঠ।  আমার কাছে গীতা সেই বিশ্বরূপের মতো যা আমরা ১১ তম অধ্যায়ে দেখতে পাই- “মম দেহে গুহাকেশ যচ্চ অন্যত দ্রষ্টুম ইচ্ছসি।” অর্থাৎ, আপনি আমার মধ্যে যা দেখতে চান তাই দেখতে পাবেন। আপনি প্রতিটি ধারণা, প্রতিটি শক্তির দর্শন করতে পাবেন।

বন্ধুরা,

গীতার বিশ্বরূপ দর্শন মহাভারত থেকে শুরু করে স্বাধীনতা সংগ্রাম পর্যন্ত প্রতিটি সময়ে আমাদের দেশকে পরিচালিত করেছে। আপনি দেখুন আদি শঙ্করাচার্য, যিনি ভারতকে ঐক্যের সূত্রে বেঁধেছিলেন তিনি গীতাকে আধ্যাত্মিক চেতনা হিসেবে দেখতেন। রামানুজাচার্যের মতো সন্ন্যাসীরা গীতাকে আধ্যাত্মিক জ্ঞানের প্রকাশ হিসেবে ব্যাখ্যা করেছিলেন। স্বামী বিবেকানন্দ জির কাছে গীতা অটল কর্মনিষ্ঠা এবং অদম্য আত্মবিশ্বাসের উৎস ছিল। শ্রী অরবিন্দের কাছে গীতা জ্ঞান ও মানবিকতার সাক্ষাৎ প্রতিমূর্তি ছিল। মহাত্মা গান্ধীর সবচেয়ে কঠিন সময়ে গীতা পথপ্রদর্শক হিসেবে কাজ করেছে।

নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুর দেশপ্রেম ও বীরত্বের অনুপ্রেরণা ছিল গীতা। বাল গঙ্গাধর তিলক গীতার ব্যাখ্যা করেছিলেন এবং স্বাধীনতা সংগ্রামকে নতুন শক্তি ও উৎসাহ দিয়েছিলেন। এই তালিকাটি বলতে গেলে এত দীর্ঘ হতে পারে যে কয়েক ঘন্টায় তা শেষ হবে না। এখন, যখন দেশ স্বাধীনতার ৭৫ বছর উদযাপন করতে যাচ্ছে, আমাদের সবার গীতার এই দিকটিও দেশের সামনে রাখার চেষ্টা করা উচিত। গীতা কীভাবে আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামকে শক্তি দিয়েছে, কীভাবে আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামীদের দেশের জন্য ত্যাগ স্বীকার করতে সাহস জুগিয়েছিল এবং গীতা কীভাবে দেশকে ঐক্যের আধ্যাত্মিক সূত্রে বেঁধে দিয়েছে, তা নিয়ে আমাদের গবেষণা করা উচিত, লেখা উচিত এবং তরুণ প্রজন্মকে পরিচিত করানো উচিত।

বন্ধুরা,

গীতা ভারতের সংহতি এবং সম্প্রীতির ভাবনার মূল পাঠ্য, কারণ গীতা বলে, “সমম সর্বেষু ভূতেষু তিষ্ঠন্তম পরমেশ্বরম”। অর্থাৎ, সকল প্রাণীর অন্তরে ঈশ্বর বাস করেন। নরের মধ্যেই নারায়ণ রয়েছেন। গীতা আমাদের জ্ঞান এবং গবেষণা প্রবৃত্তির প্রতীক, কারণ গীতায় বলা হয়েছে ‘‘না হি জ্ঞানেন সদৃশ্যম পবিত্রম ইহ বিদ্যতে’’ অর্থাৎ জ্ঞানের চেয়ে পবিত্র কোনও কিছুই নয়। গীতা ভারতের বৈজ্ঞানিক ভাবনার, শক্তির উৎস, কারণ গীতায় লেখা হয়েছে “জ্ঞানম বিজ্ঞানম সহিতম যত জ্ঞাত্বা মোক্ষসে অশুভাত।” অর্থাৎ যখন জ্ঞান ও বিজ্ঞানের মিলন হয়, তখনই সমস্ত সমস্যার, সমস্ত দুঃখের সমাধান সম্ভব। গীতা বহু শতাব্দী ধরে ভারতের কর্মনিষ্ঠার প্রতীক, কারণ গীতায় বলেছে “যোগ: কর্মসু কৌশলম” অর্থাৎ, দক্ষতার সঙ্গে নিজের দায়িত্ব পালনই যোগ।”

বন্ধুরা,

গীতা এমন একটি আধ্যাত্মিক গ্রন্থ যা এটা বলার সাহস রেখেছে- “না অনবাপ্তম অবাপ্তব্যম বর্ত এব চ কর্মণি।” অর্থাৎ সমস্ত লাভ-ক্ষতি এবং ইচ্ছার থেকে মুক্ত ঈশ্বরও বিনা কর্মে  থাকতে পারেন না। সুতরাং, গীতা ব্যবহারিকভাবে বলে যে কোনও ব্যক্তি কর্ম ছাড়া বাঁচতে পারে না। আমরা কর্ম থেকে মুক্ত হতে পারি না। এখন আমাদের কাজের কী স্বরূপ হবে, কোন দিকে তা নিয়ে যাবে, তা আমাদের দায়িত্ব। গীতা আমাদের পথ দেখায় এবং আমাদের ওপর কোনও আদেশ চাপিয়ে দেয় না। গীতা অর্জুনের ওপর কোনও আদেশ চাপিয়ে দেয় নি, এবং এখন ডাঃ সাহেবও বলছিলেন গীতা কোনও উপদেশ দেয় না। পুরো গীতার  উপদেশের পরে, শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে শেষ অধ্যায়ে বলেছিলেন, “যথা ইচ্ছসি তথা কুরু।” অর্থাৎ, আমার যতটুকু বলার দরকার ছিল বলেছি; এখন তোমার যা ঠিক মনে হয় তাই করো। এর মতো উদার চিন্তাবিদ কেউ হতে পারে না। কর্ম ও চিন্তার এই স্বাধীনতা ভারতের গণতন্ত্রের আসল বৈশিষ্ট্য। আমাদের গণতন্ত্র আমাদের চিন্তাভাবনার স্বাধীনতা দেয়, কাজের স্বাধীনতা দেয়, জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সমান অধিকার দেয়। আমরা এই স্বাধীনতা সেই গণতান্ত্রিক সংস্থাগুলি থেকে পাই যা আমাদের সংবিধানকে রক্ষা করে। সুতরাং, যখনই আমরা আমাদের অধিকারের কথা বলি, আমাদের অবশ্যই আমাদের গণতান্ত্রিক দায়িত্বগুলি মনে রাখা উচিত। এমন কিছু মানুষও রয়েছেন যাঁরা সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের মর্যাদা এবং তার বিশ্বাসযোগ্যতার ক্ষতি করতে চায়! রাজনৈতিক স্বার্থে আমাদের সংসদ, ন্যায়পালিকা এমনকি সেনাবাহিনীকেও আক্রমণ করার চেষ্টা চলছে। এই প্রবণতা দেশের অনেক ক্ষতি করে। এ ধরনের মানুষ দেশের মূলধারার প্রতিনিধিত্ব করেন না সেটাই অত্যন্ত সন্তোষজনক। আজ দেশ তার দায়িত্বকে সংকল্প বিবেচনা করে এগিয়ে চলেছে। আজ দেশ গীতার কর্মযোগকে মন্ত্র মনে করে গ্রাম্য, দরিদ্র, কৃষক, শ্রমিক, দলিত, আদিবাসী, সমাজের প্রতিটি বঞ্চিত ব্যক্তির সেবার,  তাঁদের জীবনে পরিবর্তন আনার  চেষ্টা করছে।

বন্ধুরা,

গীতার মাধ্যমে ভারত স্থান ও কালের সীমানার বাইরে সমগ্র মানব জাতির সেবা করেছে। গীতা এমন একটি গ্রন্থ যা সমগ্র বিশ্বের জন্য, প্রতিটি প্রাণীর জন্য। এটি বিশ্বের অনেক ভাষায় অনুবাদ করা হয়েছে, বহু দেশে গীতার ওপর গবেষণার কাজ চলছে এবং বিশ্বের বহু বিদ্বান এর সান্নিধ্যে রয়েছেন। গীতাই গোটা বিশ্বকে নিঃস্বার্থ সেবার ভাবনার মতো ভারতীয় আদর্শের সঙ্গে পরিচয় করিয়েছে। অন্যথা, ভারতের নিঃস্বার্থ সেবার ভাবনা, আমাদের ‘বিশ্ব বন্ধুত্বের’ ভাবনা, অনেকের কাছে অজানাই রয়ে যেতো।

আপনারা দেখুন, যখন করোনা অতিমারি বিশ্বে প্রথম হানা দিয়েছিলো, তখন গোটা বিশ্বের কাছে এই রোগের কোনও তথ্য ছিল না। এটি একটি অজানা শত্রু ছিল। বিশ্ব প্রস্তুত ছিল না, মানবজাতি প্রস্তুত ছিল না এবং একই অবস্থা ভারতেরও হয়েছিল। তবে ভারতও নিজেকেও সামলাতে পেরেছে, এবং বিশ্বের সেবা করতেও পিছপা হয়নি। বিশ্বের বিভিন্ন দেশগুলিতে ওষুধ এবং সমস্ত প্রয়োজনীয় সামগ্রী পৌঁছে দিয়েছে। বিশ্বে এমন অনেক দেশ রয়েছে যাদের টিকার সংস্থান ছিল না। ভারত কোনও শর্ত ছাড়াই তাদের কাছে টিকার ডোজ পৌঁছে দিয়েছে। এই পরিষেবা সেখানকার মানুষদের জন্য আনন্দদায়ক আশ্চর্যর চেয়ে কম নয়। এটি তাদের জন্য অন্য অভিজ্ঞতা নিয়ে এসেছে।

বন্ধুরা,

একইভাবে, বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন দেশের যে নাগরিকরা আটকে পড়েছিল, ভারত তাঁদেরও সরিয়ে নিয়ে নিরাপদে তাদের দেশে পৌঁছে দিয়েছিল। ভারত সেসময় নিজের লাভ বা ক্ষতির হিসেব করেনি। মানুষের সেবাকেই কর্ম হিসেবে বিবেচনা করে ভারত এই দায়িত্ব পালন করেছিল। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মানুষ এবং বিশ্বের নেতারা যখন একে ভারতের সাহায্য বলে আমাকে ভারতের পক্ষে ধন্যবাদ জানায়, আমি বলি, এটি ভারতের সাহায্য নয়, তার মূল্যবোধ। ভারত এটিকে মহত্ত্ব হিসেবে দেখেনি, মানবিক ব্যবহার হিসেবে দেখেছে। ভারত যে বহুযুগ ধরে এরকমই নিঃস্বার্থভাবে মানবজাতির সেবা করে এসেছে, তা গীতা পাঠ করার পরই সারা পৃথিবী জানতে পেরেছে। গীতা আমাদের এটাই শিখিয়েছে “কর্মণ্য বাধিকারস্তে, মা ফলেষু কদাচন।” অর্থাৎ ফলাফলের বিষয়ে চিন্তা না করে নিঃস্বার্থভাবে কাজ করা উচিত। গীতা আমাদের বলেছে: “যুত্তঃ কর্মফলং ত্যক্তবা শান্তিম আপ্রোতি নৈষ্ঠিকীম।” অর্থাৎ কর্মফল ও লাভ ক্ষতির সম্পর্কে না ভেবে, কর্তব্য ও সেবার মনোভাব নিয়ে কাজের মাধ্যমে অন্তরে শান্তি পাওয়া যায়। এটিই সর্বোচ্চ সুখ, সর্বশ্রেষ্ঠ পুরস্কার।

বন্ধুরা,

শ্রীকৃষ্ণ গীতায় তিনটি প্রবণতা – তামসিক (অন্ধকার), রাজসিক (আবেগপূর্ণ) এবং সাত্ত্বিক (খাঁটি) – বর্ণনা করেছেন। গীতার সঙ্গে জড়িত সমস্ত বিজ্ঞ ও বিদ্বানেরা আমার সামনে রয়েছেন। আপনারা সকলেই জানেন যে গীতার ১৭ তম অধ্যায়ে এ সম্পর্কে অনেক শ্লোক রয়েছে। আমার অভিজ্ঞতায় বলে যদি আমাদের এই তামসিক, রাজসিক এবং সাত্ত্বিক প্রবণতাগুলি একটি সহজ উপায়ে বর্ণনা করতে হয় তবে তামসিক প্রবণতাটি হ’ল অন্যের কাছে যা কিছু আছে তা আমার কাছেও থাকা উচিত। এর ফলে বিশ্বে যুদ্ধ, অস্থিরতা ও ষড়যন্ত্রের সৃষ্টি হয়। যা আমার তা আমার কাছে থাকা উচিত এবং যা অন্যের তা তাদের কাছেই থাকা উচিত, এটি রাজসিক প্রবণতা, একটি সাধারণ পার্থিব চিন্তাভাবনা। তবে আমার যা আছে তা সবার মতো, আমার যা কিছু আছে তা মানবজাতির জন্য, এটি একটি সাত্ত্বিক প্রবণতা। ভারত সর্বদা তার মানবিক মূল্যবোধকে আকার দিয়েছে, এই সাত্ত্বিক প্রবণতা অনুযায়ী সমাজের মানদণ্ড তৈরি করেছে। আমাদের পরিবারে বাচ্চাদের প্রথম যে শিক্ষা দেওয়া হয় তা হলো, নিজে যা পাবে তা সবার সঙ্গে ভাগ করে নেবে এবং পরে নিজের জন্য রাখবে। আমি, আমার, করতে নেই, সবাইকে নিয়ে চলতে হয়। এই মূল্যবোধের কারণেই ভারত কখনই নিজের সম্পদ, জ্ঞান এবং আবিষ্কারকে অর্থনৈতিক ভিত্তি হিসেবে দেখে না। গণিত, বস্ত্র, ধাতুবিদ্যার জ্ঞান, বিভিন্ন ধরণের ব্যবসায়িক অভিজ্ঞতা, বা আয়ুর্বেদের বিজ্ঞানই হোক না কেন, আমরা এগুলিকে মানবতার সম্পদ হিসেবে বিবেচনা করি।  যখন আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞান এই রূপে ছিল না, তখন থেকে আয়ুর্বেদ বিজ্ঞান মানবতার সেবা করে আসছে।  আজও, যখন বিশ্ব আবারও ভেষজ ও প্রাকৃতিক বিষয়ে কথা বলছে, চিকিৎসার আগে নিরাময়ের দিকে বেশি জোর দিচ্ছে, যখন আয়ুর্বেদ নিয়ে বিভিন্ন দেশে গবেষণা করা হচ্ছে, তখন ভারত তাকে উৎসাহিত করছে এবং সহায়তাও করছে। অতীতেও, বিদেশী শিক্ষার্থীরা আমাদের প্রাচীন বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে আসত, বিদেশী ভ্রমণকারীরা আসত; আমরা আমাদের জ্ঞান এবং বিজ্ঞানকে উদারভাবে তাদের সঙ্গে ভাগ করে নিয়েছি। আমরা যত বেশি অগ্রগতি করেছি, মানবজাতির অগ্রগতির জন্য আমরা তত বেশি প্রচেষ্টাও চালিয়ে যাচ্ছি।

বন্ধুরা,

আমাদের মূল্যবোধ এবং আমাদের অতীত আত্মনির্ভর ভারতের সংকল্প হিসেবে আবার জাগ্রত হয়ে উঠছে। আবারও, ভারত তার সম্ভাবনা জাগিয়ে তুলছে যাতে তা পুরো বিশ্বের অগ্রগতিতে গতি প্রদান করতে পারে এবং মানবজাতির আরও সেবা করতে পারে। সাম্প্রতিককালে বিশ্ব ভারতের মানবজাতির জন্য যে অবদান দেখেছে, আত্মনির্ভর ভারতের অবদানও আরও ব্যাপকভাবে বিশ্বকে সাহায্য করবে। এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য গীতায় লেখা কর্মযোগের প্রয়োজন। শতাব্দীর অন্ধকার থেকে বেরিয়ে এবং আত্মনির্ভর ভারতের নির্মাণের জন্য একটি নতুন ভারতের নতুন প্রহর নিশ্চিত করতে আমাদের আমাদের কর্তব্যগুলি জানা এবং তাদের প্রতি তাদের প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হওয়া দরকার। ভগবান শ্রীকৃষ্ণ যেমন অর্জুনকে বলেছিলেন: “ক্ষুদ্রম হৃদয় দৌর্বল্যম ত্যক্তবা উত্তিষ্ঠ পরন্তপ।” অর্থাৎ, এখন ছোট চিন্তা, ছোট মন এবং অভ্যন্তরীণ দুর্বলতা রেখে উঠে দাঁড়াও। এই উপদেশের সময়, শ্রীকৃষ্ণ গীতায় অর্জুনকে ‘ভারত’ বলে সম্বোধন করেছিলেন। আজ, গীতার এই মন্তব্যটি আমাদের ভারতের জন্য, ১৩০ কোটি ভারতবাসীর জন্য প্রযোজ্য। আজ, এই আহ্বানের দিকে একটি নতুন জাগৃতি তৈরি রয়েছে। আজ, বিশ্ব ভারতকে নতুন দৃষ্টিকোণ এবং শ্রদ্ধার চোখে দেখছে। আমাদের এই পরিবর্তনকে ভারতের আধুনিক পরিচয় এবং বিজ্ঞানের শিখরে নিয়ে যেতে হবে। আমি আত্মবিশ্বাসী যে একসঙ্গে আমরা এই লক্ষ্যগুলি অর্জন করব। স্বাধীনতার ৭৫ বছর দেশের জন্য একটি নতুন ভবিষ্যতের সূচনার ভিত্তি হয়ে উঠবে। আমি আবারও ডাঃ সাহেবকে অভিনন্দন জানাচ্ছি, এই ট্রাস্টকে পরিচালনা করে এমন সমস্ত গণ্যমান্য ব্যক্তিকে এবং আপনারা এই কাজের জন্য যে পরিশ্রম করেছেন তার জন্য আমি আন্তরিকভাবে আপনাদের অভিনন্দন জানাই। আমি নিশ্চিত যে এই বইটি যারা প্রসঙ্গ উল্লেখ করে পড়তে ভালোবাসেন, তাদের জন্য  প্রচুর সহায়ক হবে। আমাদের মতো পাঠকদের এধরনের বইয়ের বেশি প্রয়োজন হয়। তাই আমি মনে করি আপনারা একটি মূল্যবান সম্পদ দিয়েছেন। আমি পুরোপুরি একমত যে সম্ভবত এটি বিশ্বের প্রথম বই যা যুদ্ধের ময়দানে তৈরি হয়েছিল। জয়- পরাজয়ের টানাপোড়েনের সময় এটি বলা করা হয়েছিল।  এইরকম একটি বিরূপ ও অশান্ত পরিবেশ থেকে এমন নির্মল আদর্শের উদ্ভব হয়েছিল, যা অমৃত ব্যতীত আর কিছুই হতে পারে না। ভবিষ্যতের প্রজন্মকে তাদের ভাষা এবং যে ভাবে তারা বুঝতে পারে সেভাবে গীতার জ্ঞান সরবরাহ করা প্রতি প্রজন্মের কর্তব্য। ডঃ কর্ণ সিং জি, তাঁর পুরো পরিবার, তাঁদের মহান পরম্পরা সর্বদা এই সাধনা বজায় রেখেছে। আমি আশাবাদী যে পরবর্তী প্রজন্মও এটিকে বাঁচিয়ে রাখবে। আমরা সবসময় ডাক্তার কর্ণ সিং জির সেবার কথা মনে রাখব । এই মহান কাজের জন্য আমি সশ্রদ্ধ প্রণাম জানাই। তিনি বয়সে বড়, জীবনে এত বড় যে তাঁর আশীর্বাদ আমাদের প্রয়োজন যাতে আমরাও দেশের জন্য এই আদর্শ নিয়ে কিছু করতে থাকি।

অনেক অনেক ধন্যবাদ!