নতুনদিল্লি, ০৬.০২.২০২১
নমস্কার,
দেশের আইনমন্ত্রী শ্রী রবিশঙ্কর প্রসাদজি, গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী শ্রী বিজয় রূপানীজি, শীর্ষ আদালতের বিচারপতি এমআর শাহজি, গুজরাট উচ্চ আদালতের প্রধান বিচারপতি শ্রী বিক্রম নাথজি, গুজরাট সরকারের মন্ত্রীরা, গুজরাট উচ্চ আদালতের সম্মানিত বিচারপতিরা, ভারতের সলিসিটার জেনারেল শ্রী তুষার মেহতাজি, অ্যাডভোকেট জেনারেল গুজরাট শ্রী কমল ত্রিবেদীজি, ‘বার’-এর সমস্ত সম্মানীয় সদস্য, ভদ্রমহোদয় ও মহোদয়া!
গুজরাট উচ্চ আদালতের হীরকজয়ন্তী উপলক্ষ্যে আপনাদের সকলকে অনেক অভিনন্দন জানাই। গত ৬০ বছরে নিজস্ব আইনী বোধ, পাণ্ডিত্য এবং বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে গুজরাট উচ্চ আদালত ও বার, দুইই নিজেদের স্বতন্ত্র পরিচয় তৈরি করেছে। গুজরাট উচ্চ আদালত সত্য ও ন্যায়বিচারের জন্য যে নিষ্ঠার সঙ্গে কর্তব্য পালন করেছে, সাংবিধানিক দায়িত্বের জন্য যে তৎপরতা দেখিয়েছে, তা ভারতীয় বিচার ব্যবস্থা এবং ভারতের গণতন্ত্র, দুটোকেই জোরদার করেছে। গুজরাট উচ্চ আদালতের এই অবিস্মরণীয় যাত্রার স্মরণে আজ একটি ডাকটিকিট প্রকাশ করা হয়েছে। আমি এই উপলক্ষ্যে, ন্যায়পালিকার সঙ্গে যুক্ত সকল মহামান্য ব্যক্তিদের, গুজরাটের জন মানুষদের শুভেচ্ছা জানাই। মাননীয়, আমাদের সংবিধানে আইন সভা, ন্যায়পালিকা, এবং আমলাতন্ত্র, তাদের যে দায়িত্ব, তা আমাদের সংবিধানের প্রাণবায়ু। আজ সমস্ত দেশবাসী পুরো বিশ্বাসের সঙ্গে বলতে পারেন যে আমাদের বিচার বিভাগ, আমাদের ন্যায়পালিকা দৃঢ়তার সঙ্গে সংবিধান রক্ষার দায়িত্ব পালন করেছে। আমাদের বিচার বিভাগ সর্বদা সংবিধানের গঠনমূলক এবং ইতিবাচক ব্যাখ্যার মাধ্যমে সংবিধানকে আরও শক্তিশালী করেছে। দেশবাসীদের অধিকার রক্ষা হোক, ব্যক্তি স্বাধীনতার প্রশ্ন হোক বা এমন পরিস্থিতি যখন দেশের স্বার্থকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে হবে, ন্যায়পালিকা নিজের এই দায়িত্বভার বুঝেছে এবং পালনও করেছে। আপনারা সকলেই ভাল করে জানেন যে ভারতীয় সমাজে ‘আইনের শাসন’ বহু শতাব্দী ধরে আমাদের সভ্যতা, সামাজিক কাঠামো এবং সংস্কৃতির ভিত্তি হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমাদের প্রাচীন গ্রন্থগুলিতে বলা হয়েছে – ‘ন্যায়মূল্যম সুরাজ্যম স্যাত’, অর্থাৎ আইনের শাসনই হল সুরাজ্যের ভিত। এই ভাবনা বহুকাল থেকেই আমাদের মূল্যবোধের একটি অংশ হয়ে রয়েছে, এই মন্ত্রই আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামকে নৈতিক শক্তি দিয়েছে, এবং সংবিধান গঠনের সময় এই ভাবনাকেই আমাদের সংবিধান নির্মাতারা সবথেকে ওপরে রেখেছিল। আমাদের সংবিধানের প্রস্তাবনা আইনের শাসনের এই শপথেরই অভিব্যক্তি ।
আজ প্রত্যেক দেশবাসী গর্বিত যে আমাদের সংবিধানের এই ভাবনাকে, এই মূল্যবোধগুলোকে ন্যায়পালিকা ধারাবাহিকভাবে শক্তি দিয়েছে। ন্যায়পালিকার প্রতি এই বিশ্বাস সাধারণ থেকে সাধারণ মানুষের মনেও একটি আস্থা জাগিয়ে তুলেছে, তাঁদের সত্যের পক্ষে দাঁড়ানোর শক্তি দিয়েছে। এবং আমরা যখন স্বাধীনতার সময় থেকে বর্তমান পর্যন্ত দেশের এই যাত্রায় ন্যায়পালিকার অবদান নিয়ে অবিচ্ছিন্নভাবে আলোচনা করি তখন সেখানে ‘বার’-এর অবদান নিয়েও আলোচনা করা দরকার। আমাদের ন্যায় ব্যবস্থার এই গৌরবময় স্থাপত্য ‘বারের’ স্তম্ভের আছেওপর দাঁড়িয়ে আছে। কয়েক দশক ধরে ‘বার’ এবং ন্যায়পালিকা একসঙ্গে মিলেই ন্যায় ব্যবস্থার মূল উদ্দেশ্যগুলি পূরণ করে এসেছে। আমাদের সংবিধান যে ন্যায়বিচারের ধারণা তুলে ধরেছে, ন্যায়বিচারের যে আদর্শগুলি ভারতীয় মূল্যবোধের অংশ হয়ে উঠেছে, সেই ন্যায় ব্যবস্থার ওপর প্রত্যেক ভারতীয়ের অধিকার রয়েছে। সুতরাং, এখন ন্যায়পালিকা এবং সরকার দুজনেরই দায়িত্ব বিশ্বের বৃহত্তম প্রজাতন্ত্র গড়ে তোলা। আমাদের ন্যায় ব্যবস্থা এমন হওয়া উচিত যাতে সমাজের সর্বশেষ পর্যায়ে দাঁড়িয়ে থাকা ব্যক্তির পক্ষেও তা সহজ হয়, যেখানে প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য ন্যায়ের আশ্বাস থাকে এবং সঠিক সময়ের মধ্যে ন্যায়বিচারের আশ্বাস থাকে। আজ ন্যায়পালিকার মতো সরকারও এই দিকে নিজের কর্তব্য পালনের জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সবচেয়ে কঠিন সময়ে এমনকি ভারতীয় প্রজাতন্ত্রে, আমাদের ন্যায়পালিকা কঠিন থেকে কঠিনতম সময়েও ভারতীয় নাগরিকদের ন্যায়বিচারের অধিকারকে রক্ষা করেছে।
করোনা অতিমারির সময় এর একটি ভালো উদাহরণ আমরা দেখতে পেয়েছি। একদিকে যেমন দেশ এই বিপর্যয়ের মধ্যেও সামর্থ্য দেখিয়েছে, অন্যদিকে আমাদের ন্যায়পালিকাও নিষ্ঠা ও কর্তব্যর উদাহরণ পেশ করেছে। গুজরাট উচ্চ আদালত যেভাবে লকডাউনের প্রথমদিক থেকেই ভিডিও কনফারেন্সিং-য়ের মাধ্যমে শুনানি শুরু করে দিয়েছিল, যেভাবে এসএমএস কল আউট, মামলার ই-ফাইলিং এবং ‘ইমেল মাই কেস স্ট্যাটাস’ এর মতো পরিষেবা চালু করা হয়েছিল, ইউটিউবে আদালতের ডিসপ্লে বোর্ডে ইউটিউবের স্ট্রিমিং শুরু করা হয়েছিল, প্রতিদিন রায় এবং নির্দেশ ওয়েবসাইটে আপলোড করা হয়েছিল, এসব প্রমাণ করে যে আমাদের বিচার ব্যবস্থা কতটা অ্যাডাপ্টিভ এবং ন্যায় বিচারের জন্য তারা কতদূর যেতে পারে। আমাকে বলা হয়েছে যে গুজরাট উচ্চ আদালত থেকে প্রথম লকডাউনের সময় আদালতের কার্যক্রমের ‘লাইভ স্ট্রিমিং করা হয়, এবং উন্মুক্ত আদালতের যে ধারণার ওপর দীর্ঘকাল ধরে আলোচনা হয়ে আসছিল, তাও গুজরাট উচ্চ আদালত করে দেখিয়েছে। এটা আমাদের জন্য আনন্দের বিষয় যে আইন মন্ত্রক ‘ই-কোর্টস ইন্টিগ্রেটেড মিশন মোড’ প্রকল্পের আওতায় যে ডিজিটাল পরিকাঠামো তৈরি করেছিল তা এত অল্প সময়ের মধ্যেই আমাদের আদালতগুলিকে ভার্চুয়াল আদালত হিসেবে কাজ করতে সাহায্য করেছে। ডিজিটাল ইন্ডিয়া মিশনের মাধ্যমে আমাদের বিচার ব্যবস্থার খুব দ্রুত আধুনিকীকরণ হচ্ছে।
বর্তমানে দেশে ১৮ হাজারেরও বেশি আদালত কম্পিউটারাইজড হয়েছে। শীর্ষ আদালতের তরফে ভিডিও কনফারেন্সিং এবং টেলি-কনফারেন্সিংকে আইনী বৈধতা দেওয়ার পর থেকে সমস্ত আদালতে ই-প্রসিডিংয়ে গতি এসেছে। আমরা সকলেই গর্ববোধ করি যে আমাদের শীর্ষ আদালত বিশ্বে সবথেকে বেশি ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে শুনানি করা আদালত হয়ে উঠেছে। আমাদের উচ্চ আদালত এবং জেলা আদালতও কোভিডের সময়ে ভিডিও কনফারেন্সিং-য়ের মাধ্যমে বেশি শুনানি করেছে। কেসের ই-ফাইলিংয়ের সুবিধা আইনের স্বাচ্ছন্দ্যে এক নতুন মাত্রা দিয়েছে। একইভাবে, আজ আমাদের আদালতে প্রতিটি মামলার জন্য একটি অনন্য পরিচয় কোড এবং কিউআর কোড দেওয়া হচ্ছে। এরফলে মামলার সঙ্গে সম্পর্কিত প্রতিটি তথ্যই যেমন সহজ করে তুলে ধরতে সুবিধা হয়েছে, এরফলে ন্যাশনাল জুডিশিয়াল ডেটা গ্রিডেরও একটি শক্ত ভিত তৈরি হয়েছে। ন্যাশনাল জুডিশিয়াল ডেটা গ্রিডের মাধ্যমে, আইনজীবী এবং মামলাকারী কেবলমাত্র একটি ক্লিকের মাধ্যমে সমস্ত মামলা এবং আদেশ দেখতে পাবেন।
মাননীয়,
আসন্ন দিনগুলিতে, ভারতে ‘ন্যায়বিচারের স্বাচ্ছন্দ্য’ যাতে আরও দ্রুত বৃদ্ধি হয়, সেই পথে শীর্ষ আদালতের ই-কমিটি এনআইসির সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করছে। শক্তিশালী সুরক্ষার পাশাপাশি ক্লাউড ভিত্তিক পরিকাঠামোর মতো সুবিধাকে অন্তর্ভুক্ত করার কাজ হচ্ছে। আমাদের বিচার ব্যবস্থাকে ভবিষ্যত সময়ের জন্য প্রস্তুত করতে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সম্ভাবনা, এআইয়ের সম্ভাবনাগুলিও খুঁজে দেখা হচ্ছে।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে ন্যায়পালিকার দক্ষতাও বৃদ্ধি পাবে এবং গতিও বাড়বে। এই প্রয়াসে দেশের স্বনির্ভর ভারত অভিযান একটি বড় ভূমিকা নিতে চলেছে। স্বনির্ভর ভারত অভিযানের অংশ হিসেবে ভারতের নিজস্ব ভিডিও কনফারেন্সিং প্ল্যাটফর্মগুলিরও প্রসার করা হচ্ছে। দেশে ডিজিটাল বিভাজন কমাতে সাধারণ মানুষকে সাহায্য করতে উচ্চ আদালত ও জেলা আদালতেও ই-সেবা কেন্দ্র খোলা হচ্ছে। আমরা সকলেই লক্ষ্য করেছি যে অতিমারির এই কঠিন সময়ে অনলাইন ই-লোক আদালতও একটি নতুন নর্মাল হয়ে উঠেছে। ঘটনাচক্রে, ৩৫-৪০ বছর আগে,গুজরাটের জুনাগড়েই প্রথম লোক আদালত প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। আজ, ই-লোক আদালত সময়াবদ্ধ এবং সুবিধাজনক ন্যায়বিচারের একটি প্রধান মাধ্যম হয়ে উঠছে। এখনও পর্যন্ত দেশের ২৪ টি রাজ্যে লক্ষ লক্ষ মামলা ই-লোক আদালতে এসেছে এবং সেগুলির নিষ্পত্তিও হচ্ছে। এই গতি, এই সুবিধা এবং এই বিশ্বাসই আমাদের আজকের বিচার ব্যবস্থার চাহিদা। গুজরাট আরও একটি বিষয়ে নিজের অবদানের জন্য গর্বিত, গুজরাট প্রথম রাজ্য যেখানে সন্ধ্যা আদালতের পরম্পরা শুরু হয়েছিল এবং দরিদ্রদের উন্নতির জন্য অনেক উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। যে কোনও সমাজে নিয়ম এবং বিধির সার্থকতা হল ন্যায়বিচার। আইনের মাধ্যমেই নাগরিকরা নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন এবং একটি নিশ্চিন্ত সমাজই অগ্রগতির কথা চিন্তা করতে পারে, সমাধান করে এবং অগ্রগতির পথে এগিয়ে যেতে পারে।আমি নিশ্চিত যে আমাদের ন্যায়পালিকা ও বিচার বিভাগের সঙ্গে যুক্ত সমস্ত প্রবীণ সদস্যরা আমাদের সংবিধানের ন্যায়শক্তি আরও দৃঢ় করবেন। ন্যায়বিচারের এই শক্তির মাধ্যমে, আমাদের দেশ এগিয়ে যাবে, এবং একটি স্বনির্ভর ভারতের স্বপ্ন আমাদের সমস্ত চেষ্টা, আমাদের প্রয়াস, আমাদের সম্মিলিত শক্তি, আমাদের ইচ্ছাশক্তির মাধ্যমে, আমাদের অবিরাম অনুশীলনের মাধ্যমে পূর্ণ হবে। এই শুভেচ্ছার সঙ্গে, আপনাদের সবাইকে আবারও হীরক জয়ন্তীর অনেক অভিনন্দন। অনেক শুভেচ্ছা।
ধন্যবাদ !
***
CG/JD
Addressing programme to mark Diamond Jubilee of the Gujarat HC. https://t.co/9z193nuYTT
— Narendra Modi (@narendramodi) February 6, 2021