নয়াদিল্লি, ২২ জানুয়ারি, ২০২১
নমস্কার!
আসামের রাজ্যপাল প্রফেসর জগদীশ মুখীজি, কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী শ্রী রমেশ পোখরিয়াল নিশাঙ্কজি, আসামের মুখ্যমন্ত্রী শ্রী সর্বানন্দ সোনোয়ালজি, তেজপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ভি কে জৈনজি, অন্যান্য ফ্যাকাল্টি মেম্বার, আমার প্রিয় তেজস্বী, মেধাবী ছাত্রছাত্রীরা, আজকের দিনটি ১,২০০-রও বেশি ছাত্রছাত্রীর জীবনে সারা জীবন মনে রাখার মতো একটি দিন। আপনাদের শিক্ষক, অধ্যাপক, আপনাদের মা-বাবার জন্য আজকের দিনটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আর সব থেকে বড় কথা হল, আজ থেকে আপনাদের কেরিয়ারের সঙ্গে তেজপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম সারা জীবনের জন্য যুক্ত হয়ে গেল। আজ আপনারা যতটা খুশি, ততটা আমিও খুশি। আজ আপনারা ভবিষ্যতের আশায় যতটা টইটম্বুর, ততটাই আপনাদের ওপর আমার অপার বিশ্বাস। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, আপনারা তেজপুরে থেকে তেজপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে যা কিছু শিখেছেন তা আসামের উন্নয়নকে এবং ভারতের উন্নয়নকে নতুন উচ্চতা প্রদান করবে।
বন্ধুগণ,
এই ভরসার অনেক কারণ রয়েছে। প্রথমত তেজপুরের এই ঐতিহাসিক স্থানটি, এর পৌরাণিক ইতিহাসের সঙ্গে সম্পর্কের আবহ থেকে যে প্রেরণা আপনারা পেয়েছেন, দ্বিতীয়ত তেজপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে আপনারা যেসব কাজ করেছেন, যেগুলি আমাকে বলা হয়েছে – তা অত্যন্ত উৎসাহব্যঞ্জক। আর তৃতীয়ত, পূর্ব ভারতের সামর্থ্য অনুসারে এখানকার জনগণ, এখানকার নবীন প্রজন্মের ক্ষমতার ওপর, তাঁদের রাষ্ট্র নির্মাণের প্রচেষ্টা সম্পর্কে শুধু আমার নয়, সমগ্র দেশবাসীর অটুট বিশ্বাস রয়েছে।
বন্ধুগণ,
এখন পুরস্কার এবং মেডেল দেওয়ার আগে যে বিশ্ববিদ্যালয় গীত গাওয়া হয়েছে তাতে নিঃসন্দেহে তেজপুরের মহান ইতিহাস নিহিত রয়েছে, তাকে প্রণাম জানানো হয়েছে। আমি এর কয়েকটি পংক্তি পুনরুচ্চারণ করতে চাই। এজন্যই করতে চাই যে এই পংক্তিগুলি আসামের গর্ব, ভারতরত্ন ভুপেন হাজারিকাজি লিখেছেন। তিনি লিখেছেন –
“অগ্নিগড়র স্থাপত্য, কলিয়া-ভোমোরার সেতু নির্মাণ, জ্ঞান জ্যোতির্ময়, সেহি স্থানতে বিরাজিসে তেজপুর বিশ্ববিদ্যালয়!”
অর্থাৎ, যেখানে অগ্নিগড়ের মতো স্থাপত্য রয়েছে, যেখানে কলিয়া-ভ্রমরা সেতু রয়েছে, যেখানে জ্ঞানের জ্যোতি আছে, এমন স্থানে বিরাজমান তেজপুর বিশ্ববিদ্যালয়। এই তিনটি পংক্তির মধ্যে ভুপেনদা কতকিছু বর্ণনা করে রেখেছেন। প্রথমত অগ্নিগড়ের, যেখানে রাজকুমার অনিরুদ্ধ, রাজকুমারী ঊষা, ভগবান শ্রীকৃষ্ণের সঙ্গে যুক্ত ইতিহাস, মহান অহম সুরবীর কলিয়া-ভ্রমরা ফুকনের দূরদৃষ্টি, জ্ঞান ভাণ্ডার – এই সমস্ত কিছু তেজপুরের প্রেরণা। ভুপেনদার পাশাপাশি, জ্যোতিপ্রসাদ আগরওয়াল, বিষ্ণুপ্রসাদ রাভার মতো মহান ব্যক্তিত্ব তেজপুরের পরিচয়। আপনারা তাঁদের কর্মভূমিতে, তাঁদের জন্মভূমিতে পড়াশোনা করেছেন। আর সেজন্য আপনাদের নিয়ে গর্ব করা আর আপনাদের জীবন গৌরবময় আত্মবিশ্বাসে পরিপূর্ণ থাকা অত্যন্ত স্বাভাবিক।
বন্ধুগণ,
আমাদের দেশ এ বছর স্বাধীনতার ৭৫ বছরে প্রবেশ করছে। কয়েকশ’ বছরের পরাধীনতার থেকে মুক্তি প্রদানের লড়াইয়ে আসামের অসংখ্য মানুষের অবদান রয়েছে। যাঁরা সেই সময় ছিলেন, তাঁরা দেশকে স্বাধীন করার জন্য নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছেন। নিজেদের যৌবন কারান্তরালে কাটিয়েছেন। এখন আপনাদের নতুন ভারতের জন্য, আত্মনির্ভর ভারতের জন্য বেঁচে দেখাতে হবে, জীবনকে সার্থক করে দেখাতে হবে। এখন থেকে শুরু করে ভারতের স্বাধীনতার ১০০ বছর পূর্তি পর্যন্ত – এই ২৫-২৬ বছর আপনাদের জীবনেরও সোনালী সময়। আপনারা কল্পনা করুন, ১৯২০-২১-এ যে নব-যুবকেরা ভারতে ছিলেন, যে কন্যারা আপনাদের সমবয়সী ছিলেন, সেই সময় তাঁরা কী স্বপ্ন দেখেছেন! কেমন স্বপ্ন দেখেছেন? তাঁরা নিজের জীবনে কোন উদ্দেশ্যসাধনের জন্য জীবন উৎসর্গ করতে চাইতেন? আপনারা যদি তাঁদের কথা সামান্য ভাবেন, ১০০ বছর আগের কথা ভাবেন – তাহলে আপনাদের এই সিদ্ধান্ত নিতে দেরি হবে না যে এটাই আপনাদের জীবনের সোনালী সময়। তেজপুরের তেজ গোটা ভারতে, গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে দিন। আসামকে, উত্তর-পূর্ব ভারতকে উন্নয়নের নতুন উচ্চতায় নিয়ে যান। আমাদের সরকার আজ যেভাবে উত্তর-পূর্ব ভারতের উন্নয়নে জোর দিয়েছে, যেভাবে যোগাযোগ ব্যবস্থা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য – প্রত্যেক ক্ষেত্রে দ্রুতগতিতে কাজ চলছে, তা থেকে আপনাদের জীবনে অনেক অনেক নতুন সম্ভাবনা গড়ে উঠেছে। এই সম্ভাবনাগুলির সম্পূর্ণ সুযোগ নিন। আপনাদের প্রচেষ্টা থেকে এটা বোঝা যাচ্ছে যে আপনাদের মধ্যে সেই ক্ষমতা রয়েছে; নতুন কিছু ভাবার, নতুন কিছু করার সামর্থ্যও রয়েছে!
বন্ধুগণ,
আপনাদের অভিনব ‘উদ্ভাবন কেন্দ্র’টির জন্য তেজপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি নতুন পরিচয় গড়ে উঠেছে। আপনাদের তৃণমূলস্তরের উদ্ভাবনগুলি ‘ভোকাল ফর লোকাল’কে নতুন গতি প্রদান করছে, নতুন শক্তি জোগাচ্ছে। এই উদ্ভাবনগুলি অনেক স্থানীয় সমস্যা সমাধানে কার্যকরী ভূমিকা পালন করছে। এর ফলে উন্নয়নের নতুন দরজা খুলে যাচ্ছে। একটু আগেই আমাকে যেভাবে বলা হল যে আপনাদের ডিপার্টমেন্ট অফ কেমিক্যাল সায়েন্স পানীয় জল পরিশ্রুত করার জন্য একটু সুলভ ও সহজ প্রযুক্তি উদ্ভাবনের কাজ করেছেন। এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে আসামের অনেক গ্রামের মানুষ উপকৃত হয়েছেন। আমাকে এটাও বলা হয়েছে যে এখন এই নতুন প্রযুক্তি ছত্তিশগড়, ওড়িশা, বিহার, কর্ণাটক এবং রাজস্থানের মতো রাজ্যগুলিতেও পৌঁছে যাচ্ছে। তার মানে আপনাদের কীর্তির পতাকা এখন চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ছে। ভারতে এই ধরনের প্রযুক্তির বিকাশের মাধ্যমে প্রত্যেক বাড়িতে নলের মাধ্যমে জল পৌঁছে দেওয়ার যে স্বপ্ন, জল জীবন মিশনের যে স্বপ্ন তা আরও ক্ষমতায়িত হবে।
বন্ধুগণ,
আপনারা পানীয় জল ছাড়াও গ্রামে গ্রামে বর্জ্য পদার্থকে শক্তিতে রূপান্তরণের যে উদ্যোগ নিয়েছেন তার প্রয়োগ অত্যন্ত সফল হয়েছে। ফসল কাটার পর মাঠে যে অবশিষ্টাংশ থেকে যায়, তা আমাদের কৃষকদের এবং পরিবেশকে অত্যন্ত প্রভাবিত করে। বায়ো-গ্যাস এবং জৈব-সার সংক্রান্ত একটি সুলভ এবং কার্যকরি প্রযুক্তি নিয়ে এর সমাধানের লক্ষ্যে আপনারা বিশ্ববিদ্যালয়ে যে কাজ করছেন তা দেশের একটি অনেক বড় সমস্যার সমাধান করতে পারে।
বন্ধুগণ,
আমাকে এটাও বলা হয়েছে যে তেজপুর বিশ্ববিদ্যালয় উত্তর-পূর্ব ভারতের জৈববৈচিত্র্য এবং উন্নত সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে সংরক্ষণের অভিযান শুরু করেছে। উত্তর-পূর্ব ভারতের বিভিন্ন জনজাতির যে ভাষাগুলি বিলুপ্তপ্রায়, সেগুলির নথিভুক্তিকরণ অত্যন্ত প্রশংসনীয় কাজ। এভাবে সাধু শ্রীমন্ত শঙ্করদেবের জন্মভূমি নগাঁও-এর বাতাদ্রব থান-এ কয়েক শতাব্দী প্রাচীন কাঠে খোদাই করা শিল্পের সংরক্ষণ থেকে শুরু করে দাসত্বের কালখণ্ডে লিখিত আসামের অনেক বই ও নথিপত্রের ডিজিটাইজেশন – আপনারা এই ধরনের অসংখ্য বিচিত্র কাজ করছেন। যে কেউ শুনলে গর্ববোধ করবেন যে ভারতের এত দূরবর্তী পূর্ব প্রান্তে, তেজপুরে যে তপস্যা হচ্ছে, যে সাধনা হচ্ছে তা সত্যিই অসাধারণ। আপনারা অসাধারণ কাজ করছেন।
বন্ধুগণ,
আমি যখন এতকিছু জানতে পেরেছি, আমার মনে প্রশ্ন উঠেছে যে স্থানীয় বিষয়গুলি নিয়ে, স্থানীয় প্রয়োজনীয়তাগুলি নিয়ে এত কাজ, এত গবেষণার প্রেরণা আপনারা কোথা থেকে পেয়েছেন। এর জবাবও আমি তেজপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস থেকেই পেয়েছি, আপনাদের ছাত্রাবাসগুলি থেকে পেয়েছি। আপনাদের ছাত্রাবাসগুলির নাম – চরাইদেব, নীলাচল, কাঞ্চনজঙ্ঘা, পটকাই, ধানসিড়ি, সুবনসিড়ি, কোপিলী – এসব পর্বতশৃঙ্গ ও নদীর নামে রাখা হয়েছে। আর এই নামগুলি নিছকই নাম নয়, এগুলি জীবনের প্রাণবন্ত প্রেরণাও। জীবনে চলার পথে আমাদের অনেক সমস্যার পর্বত, সমস্যার নদী পার করতে হয়। আর এটা একবার করলেই হয় না, আপনারা একটি পর্বত আরোহণ করেন, তারপর দ্বিতীয়টির দিকে এগিয়ে যান। প্রত্যেক পর্বতারোহণের মাধ্যমে আপনাদের জ্ঞানও বৃদ্ধি পায়, দক্ষতাও বৃদ্ধি পায়, বিশেষজ্ঞতা বাড়ে, নতুন নতুন স্পর্ধার বিরুদ্ধে আপনাদের মনে প্রতিস্পর্ধার প্রেক্ষিতও গড়ে ওঠে। এভাবে নদীগুলি আমাদের অনেক কিছু শেখায়। পাহাড় থেকে বেড়িয়ে আসা অনেক জলপ্রপাত, অনেক ধারা-উপধারা মিলিয়ে নদীগুলি গড়ে ওঠে। আর তারপর নদীগুলি অনেক শাখা-প্রশাখার মাধ্যমে সমুদ্র গিয়ে মেশে। আমাদের জীবনেও ভিন্ন ভিন্ন মানুষের থেকে জ্ঞান আহরণ করতে হয়, শিখতে হয় এবং তাঁদের শিক্ষাকে সম্বল করেই নিজের লক্ষ্য স্থির করতে হয়। আর তারপর সেই লক্ষ্য সাধনের জন্য প্রাণপণ পরিশ্রম করতে হয়।
বন্ধুগণ,
যখন আপনারা এই দৃষ্টিকোণ নিয়ে এগিয়ে যাবেন, তখন আসাম তথা উত্তর-পূর্ব ভারত তথা দেশের উন্নয়নে আপনাদের অবদানও রাখতে পারবেন। আপনারা হয়তো লক্ষ্য করেছেন, করোনার এই সঙ্কটকালে আত্মনির্ভর ভারত অভিযান আমাদের প্রতিদিনকার বক্তব্যের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠেছে। আমাদের স্বপ্নের মধ্যে আত্মনির্ভর অভিযান গড়ে উঠছে। আমাদের পরিশ্রম, আমাদের সঙ্কল্প, সিদ্ধি, প্রচেষ্টা – সবকিছু আমরা এর চারপাশে পরিবৃত হয়ে থাকতে অনুভব করছি। কিন্তু আসলে এই অভিযান কী? আসলে কী পরিবর্তন আসছে? এই পরিবর্তন কি কেবলই সম্পদের পরিবর্তন? এই পরিবর্তন কি কেবলই ভৌতিক পরিকাঠামোর পরিবর্তন?
এই পরিবর্তন কি কেবলই প্রযুক্তির পরিবর্তন? এই পরিবর্তন কি নিছকই এগিয়ে চলা অর্থনীতি এবং কৌশলগত সম্ভাবনার? এধরনের প্রত্যেক প্রশ্নের জবাব আমার কাছে অত্যন্ত ইতিবাচক। কিন্তু এগুলির মধ্যেও সবচাইতে বড় পরিবর্তন হল আমাদের ভাবনার, আমাদের কর্মের, আমাদের প্রতিক্রিয়ার, আমাদের দৃষ্টিভঙ্গির। প্রত্যেক সমস্যার সমাধানের জন্য আমাদের নবীন দেশের ভাবনা-চিন্তা, নবীন দেশের মেজাজ এখন অন্যরকম। এর প্রকৃষ্ট সাম্প্রতিক উদাহরণ আমরা ক্রিকেটের মাঠে দেখেছি। আপনাদের মধ্যে অনেকেই হয়তো ভারতীয় ক্রিকেট দলের অস্ট্রেলিয়া সফরকে লক্ষ্য করেছেন। এই সফরে আমাদের দলের সামনে কত ধরনের সমস্যাই না এসেছিল! গোড়াতেই আমাদের দল এত বাজেভাবে হেরে গিয়েছিল; তবু সেখান থেকে উঠে এসে পরের টেস্টেই ভারতীয় দল জয়লাভ করেছে। অনেক খেলোয়াড়ের চোট-আঘাত থাকা সত্ত্বেও ম্যাচ বাঁচানোর জন্য মাঠে অটল থেকে লড়াই করে গেছে। চাপের মুখে নিরাশ না হয়ে নবীন খেলোয়াড়রা প্রতিস্পর্ধায় লড়াই করেছেন, নতুন সমাধান খুঁজে বের করেছেন। এঁদের মধ্যে অনেকেরই অভিজ্ঞতা কম ছিল কিন্তু ইচ্ছাশক্তি ছিল প্রবল। আর যখনই তাঁরা সুযোগ পেয়েছেন, ইতিহাস রচনা করেছেন। একটি উন্নত দলে মেধা এবং মেজাজের যে শক্তি তা দিয়ে তাঁরা অস্ট্রেলিয়ার মতো এত অভিজ্ঞ দলকে, এত প্রতিষ্ঠিত খেলোয়াড়ের দলকে পরাস্ত করে দিয়েছেন। আমার যুব বন্ধুরা, ক্রিকেটের মাঠে আমাদের খেলোয়াড়দের এই দক্ষতা শুধুই খেলার প্রেক্ষিতে গুরুত্বপূর্ণ নয়, এটি আমাদের প্রত্যেকের জীবনের জন্য একটি বড় শিক্ষাও। প্রথম শিক্ষা হল নিজের ক্ষমতায় বিশ্বাস থাকতে হবে। আত্মবিশ্বাসে পরিপূর্ণ থাকতে হবে। দ্বিতীয় শিক্ষা হল আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে। যদি আমরা ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে এগিয়ে যাই তাহলে পরিণামও ইতিবাচকই আসে। তৃতীয়টি হল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা। যদি আপনাদের কাছে একদিকে নিরাপদভাবে বেরিয়ে যাওয়ার উপায় থাকে আর অন্যদিকে কঠিন জয়ের বিকল্প; তাহলে আপনাদের অবশ্যই জয়ের বিকল্পটিকে বেছে নেওয়ার দিকে এগিয়ে যেতে হবে। যদি জেতার চেষ্টায় কখনও সাফল্য না-ও আসে, তাহলেও কোনও লোকসান নেই। ঝুঁকি নিতে এবং প্রয়োগ করতে ভয় পেলে চলবে না। আমাদের সক্রিয় এবং ভয়হীনভাবে কাজ করতে হবে। আমাদের মধ্যে যে পরাজয়ের ভয় থাকে, আমরা যে অপ্রয়োজনীয় চাপ নিজেদের ওপর নিই, তা থেকে যখন আপনারা বেরিয়ে আসবেন, তখন অবশ্যই ভয়হীনভাবে নিজেদের জয়ী করে তুলতে পারবেন।
বন্ধুগণ,
উদ্দীপনায় পরিপূর্ণ আপনাদের লক্ষ্যের প্রতি সমর্পিত ভারত শুধুই যে ক্রিকেটের মাঠে দেখা যায় তা নয়, আপনারা নিজেরাও তো এর এক একজন মূর্ত স্বরূপ। আপনারা আত্মবিশ্বাসে ভরপুর, আপনারা গড্ডালিকা প্রবাহ থেকে সরে ভাবতে এবং চলতে ভয় পান না। আপনাদের মতো যুব প্রাণশক্তিই করোনার বিরুদ্ধে আমাদের লড়াইয়ে ভারতকে অনেক শক্তি জুগিয়েছে। আপনাদের হয়তো মনে পড়বে, এই লড়াইয়ের শুরুর দিনগুলিতে এমন সব আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছিল যে এতবড় জনসংখ্যার দেশ ভারত সম্পদের অভাবে করোনা এ দেশকে সর্বস্বান্ত করে দেবে। কিন্তু ভারত লড়াই করে দেখিয়েছে যে সমাধান এবং প্রত্যয় আপনাদের কাছে থাকলে সম্পদ তৈরি হতে বেশি সময় লাগে না। ভারত এটা করে দেখিয়েছে। ভারত পরিস্থিতির সঙ্গে সমঝোতা না করে, সমস্যা বৃদ্ধি পাওয়ার জন্য অপেক্ষা না করে দ্রুতগতিতে সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং সক্রিয় হয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর পরিণামস্বরূপ ভারত কার্যকরিভাবে ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়তে পেরেছে এবং ‘মেড ইন ইন্ডিয়া’ সমাধানের মাধ্যমে আমরা ভাইরাসের সংক্রমণকে প্রতিহত করেছি। আমাদের স্বাস্থ্য পরিকাঠামোকে উন্নত করেছি। এখন আমাদের ভ্যাক্সিন সংক্রান্ত গবেষণা এবং উৎপাদনের ক্ষমতা ভারতের পাশাপাশি বিশ্বের অনেক দেশকে সুরক্ষা কবচের প্রত্যয় এনে দিচ্ছে।
আমরা যদি নিজেদের বৈজ্ঞানিক, গবেষক, স্কলারদের এবং আমাদের শিল্প জগতের শক্তি ওপর ভরসা না করতাম, তাহলে এই সাফল্য কি সম্ভব হত? আর বন্ধুগণ, শুধু স্বাস্থ্যক্ষেত্রেই কেন, আমাদের ডিজিটাল পরিকাঠামোর কথাই ধরুন না। যদি আমরা এটা মনে করে বসে থাকতাম যে ভারতে শিক্ষার হার কম, সেজন্য ডিবিটি এবং ডিজিটাল লেনদেন সম্ভব নয়, তাহলে কি করোনার মত সঙ্কটের সময় সরকার দরিদ্র থেকে দরিদ্রতর মানুষের পাশে এত কার্যকরভাবে পৌঁছতে পারত? আজ যে ফিনটেক-এর মাধ্যমে, ডিজিটাল অন্তর্ভুক্তিকরণের মাধ্যমে আমরা বিশ্বের অগ্রণী দেশগুলির তালিকায় সামিল হয়েছি, তা কি কখনও সম্ভব হত? আজকের ভারত সমস্যার সমাধানের জন্য কোনও পরীক্ষা-নিরীক্ষাকে ভয় পায় না। আর বড় মাপের কাজ করার ক্ষেত্রেও পিছিয়ে পড়ে না। সব থেকে বড় ব্যাঙ্কিং অন্তর্ভুক্তিকরণ অভিযান ভারতে সম্ভব হয়েছে, শৌচালয় নির্মাণের সব থেকে বড় অভিযান সম্ভব হয়েছে, প্রত্যেক পরিবারকে গৃহ প্রদানের অভিযানও ভারতে হয়েছে, বাড়িতে বাড়িতে পানীয় জল পৌঁছে দেওয়ার সব থেকে বড় অভিযানও ভারতে চলছে, সব থেকে বড় স্বাস্থ্য বিমা প্রকল্প ভারতে কার্যকরি হয়েছে, আর এখন সব থেকে বড় করোনা টিকাকরণ অভিযানও ভারতে শুরু হয়েছে। এর ফলে, সবচাইতে বেশি লাভবান হয়েছেন আমাদের আসাম তথা উত্তর-পূর্ব ভারতের জনগণ। এই কর্মসূচি তখনই দ্রুতগতিতে চলতে পারে যখন দেশ ও সমাজ আত্মবিশ্বাসে ভরপুর থাকে, দেশের যে কোনও কালবাহ্য বিষয় বা অচলাবস্থাকে পরিবর্তনের জন্য, উদ্ভাবনের জন্য সম্পূর্ণ শক্তি দিয়ে কাজ করতে থাকে।
বন্ধুগণ,
আজ যেভাবে বিশ্বে ভারতের নতুন প্রযুক্তির প্রসার ঘটছে, এর মাধ্যমে প্রত্যেক ক্ষেত্রে নতুন নতুন সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে। আজ আমরা কোনও শাখা ছাড়াই ব্যাঙ্ক, কোনও শোরুম ছাড়াই রিটেল বিজনেস এবং কোনও ডাইনিং হল ছাড়াই ক্লাউড কিচেন – এ ধরনের অনেক প্রয়োগ দৈনন্দিন জীবনে দেখতে পাচ্ছি। এক্ষেত্রে এটাও সম্ভব যে ভবিষ্যতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলি সম্পূর্ণরূপে ভার্চ্যুয়াল হবে এবং সারা পৃথিবী থেকে ছাত্রছাত্রী এবং শিক্ষক-শিক্ষিকারা যে কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ের অংশ হয়ে উঠতে পারবেন। এভাবে রূপান্তরণের জন্য আমাদের কাছে একটি জরুরি নিয়ন্ত্রক ফ্রেমওয়ার্ক থাকা অত্যন্ত প্রয়োজন। নতুন জাতীয় শিক্ষানীতির মাধ্যমে লাগাতার এই প্রচেষ্টা করা হচ্ছে। এই নীতিতে প্রযুক্তির অধিক ব্যবহার, মাল্টি-ডিসিপ্লিনারি এডুকেশন এবং নমনীয়তাকে উৎসাহ জোগানো হচ্ছে। নতুন জাতীয় শিক্ষানীতি তথ্য এবং তথ্য বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থাকে প্রস্তুত করার দিকে জোর দিয়েছে। তথ্য বিশ্লেষণের সাহায্যে ছাত্র ভর্তি থেকে শুরু করে শিক্ষা এবং অভিব্যক্তির সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া অত্যন্ত উন্নত হয়ে পড়বে।
আমার দৃঢ় বিশ্বাস, তেজপুর বিশ্ববিদ্যালয় জাতীয় শিক্ষানীতির এই লক্ষ্যগুলি বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। আমি তেজপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্র্যাক রেকর্ড এবং তার সামর্থ্য সম্পর্কে আস্থাবান। আর আমি আমার ছাত্রছাত্রী বন্ধুদের একথা বিশেষভাবে বলতে চাই, আপনাদের প্রথাগত শিক্ষা যখন শেষ হয়, তখন আপনারা শুধু নিজের ভবিষ্যতের জন্য নয়, গোটা দেশের ভবিষ্যতের জন্য কাজ করতে শুরু করেন। আপনারা শুধু একটি কথা মনে রাখবেন, যদি আপনাদের উদ্দেশ্য মহৎ হয়, তাহলে কোনও উত্থান-পতন আপনাদের জীবনে এতটা প্রভাব ফেলতে পারবে না! আপনাদের জীবনের আগামী ২৫-২৬ বছর আপনাদের পেশার পাশাপাশি দেশের ভাগ্যকেও নির্ধারিত করতে চলেছে।
আমার দৃঢ় বিশ্বাস, আপনারা সবাই দেশকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবেন। ২০৪৭-এ যখন আমাদের দেশ স্বাধীনতার ১০০ বছর পূর্তি পালন করবে, তার আগে এই ২৫-৩০ বছর আপনাদের অবদান, আপনাদের পরিশ্রম, আপনাদের স্বপ্ন পূরণের মাধ্যমে এগিয়ে যান। কল্পনা করুন, স্বাধীনতার শতবর্ষ পূর্তি উপলক্ষে আপনারা আগামী ২৫ বছর কত বড় ভূমিকা পালন করতে চলেছেন। আসুন বন্ধুরা, নিজেদের এই স্বপ্নগুলিকে জাগিয়ে তুলুন, এগিয়ে চলুন, সঙ্কল্প নিয়ে এগোন, স্বপ্ন নিয়ে এগোন, সাফল্য পাওয়ার লক্ষ্য নিয়ে বেরিয়ে পড়ুন। তাহলেই দেখবেন, জীবন সাফল্যের এক একটি উচ্চতাকে অতিক্রম করে যাবে। আজকের এই পবিত্র মুহূর্তে আপনাদের পরিবার-পরিজনদের, আপনাদের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের, আপনাদের স্বপ্নগুলিকে অনেক অনেক শুভকামনা জানাই, অনন্ত শুভকামনা জানাই!
অনেক অনেক কৃতজ্ঞতা!!
***
CG/SB/DM
Speaking at the Convocation of @TezpurUniv. https://t.co/ROb59hi5HL
— Narendra Modi (@narendramodi) January 22, 2021