Search

পিএমইন্ডিয়াপিএমইন্ডিয়া

সাম্প্রতিক সংবাদ

বিষয়টিকে সরাসরি পিআইবি থেকে নেওয়া হয়েছে

দ্বিতীয় জাতীয় যুব সংসদ মহোৎসবের সমাপন সমারোহে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ

দ্বিতীয় জাতীয় যুব সংসদ মহোৎসবের সমাপন সমারোহে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ


নয়াদিল্লি, ১২ জানুয়ারি, ২০২১

নমস্কার!

আমি সবার আগে এই তিনজন যুবককে হৃদয় থেকে অনেক অভিনন্দন জানাই। তাঁরা খুব ভালোভাবে তাঁদের বক্তব্য রেখেছেন। তাঁদের বক্তব্যে যেমন ভাবনার জোর ছিল, তেমনই বক্তব্য রাখার শৈলীও ছিল অসাধারণ। গড়গড় করে বলে যাওয়া, দর্শন সমৃদ্ধ, অত্যন্ত সঠিক তাঁদের প্রস্তুতি এবং আত্মবিশ্বাসে ভরপুর তাঁদের ব্যক্তিত্ব। আমার এই তিন যুব বন্ধুকে বিজয়ী হওয়ার জন্য অন্তর থেকে অভিনন্দন জানাই। লোকসভার অধ্যক্ষ শ্রী ওম বিড়লাজি, শিক্ষামন্ত্রী শ্রী রমেশ পোখরিয়াল নিশাঙ্কজি, ক্রীড়া এবং যুব বিষয়ক দপ্তরের মন্ত্রী শ্রী কিরণ রিজিজুজি এবং সারা দেশে আমার যে যুব বন্ধুরা এই অনুষ্ঠান দেখছেন, আপনাদের সবাইকে জাতীয় যুব দিবস উপলক্ষে অনেক অনেক শুভকামনা জানাই।

 

স্বামী বিবেকানন্দের জন্মজয়ন্তীর এই দিনটি আমাদের সকলকে নতুন প্রেরণা যোগায়। আজকের দিনটি এজন্য বিশেষ, কারণ এ বছর এই যুব সংসদ দেশের সংসদ ভবনের সেন্ট্রাল হল-এ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এই সেন্ট্রাল হল আমাদের সংবিধান রচনার সাক্ষী। দেশের অনেক মহান ব্যক্তিত্ব এখানে স্বাধীন ভারতের জন্য সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, ভারতের ভবিষ্যতের জন্য ভাবনা-চিন্তা করেছেন, ভাবী ভারতের জন্য তাঁদের স্বপ্ন, সমর্পণ, সাহস, সামর্থ্য, প্রচেষ্টা – এসব কিছু আজও যে কোনও মানুষ এই সেন্ট্রাল হল-এ এসে দাঁড়ালে অনুভব করবেন। আর বন্ধুগণ, যখন সংবিধান রচনার প্রক্রিয়া জারি ছিল, আপনারা এখন যেখানে বসে আছেন সেই আসনগুলিতে এ দেশের কোনও না কোনও গণ্যমান্য মহাপুরুষ নিশ্চিতভাবেই সেখানে বসেছিলেন, আর আজ আপনারা সেই আসনগুলিতে বসে আছেন। কল্পনা করুন, যে জায়গায় দেশের সেই মহাপুরুষেরা বসেছিলেন, আজ সেখানে আপনারা বসে আছেন। আপনাদের কাছ থেকে দেশের অনেক প্রত্যাশা! আমার দৃঢ় বিশ্বাস, এই অভিজ্ঞতা থেকে এই সময় সেন্ট্রাল হল-এ বসে থাকা সমস্ত নবীন বন্ধুরা এই প্রত্যাশার চাপ অনুভব করছেন।

 

আপনারা সবাই এখানে যে আলাপ-আলোচনা করেছেন, মন্থন করেছেন, সেটাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে যে প্রতিযোগিতা, তাতে যাঁরা বিজয়ী হয়েছেন, তাঁদেরকে আমি অভিনন্দন জানাই, আন্তরিক শুভকামনা জানাই। আর এখানে আমি যখন আপনাদের কথা শুনছিলাম, আমার ভাল লাগছিল, মনে হচ্ছিল কিছু করি, আর তখনই সিদ্ধান্ত নিয়ে নিই যে আপনাদের ভাষণগুলিকে আজ আমার ট্যুইটার হ্যান্ডেলে ট্যুইট করব। আর আপনাদের তিনজনের তো করবই। এমন নয়, যদি রেকর্ডেড ম্যাটেরিয়াল থাকে তো ভালো, না হলেও আমি গতকাল যাঁরা ফাইনাল প্যানেলে ছিলেন, তাঁদের ভাষণও ট্যুইট করব, যাতে দেশবাসী জানতে পারেন যে সংসদের এই পরিসরে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মননে ভাবী ভারত কেমন আকার নিচ্ছে! আমার জন্য এটি অত্যন্ত গর্বের বিষয় যে আজ আমি আপনাদের ভাষণ ট্যুইট করব।

 

বন্ধুগণ,

 

স্বামীজি দেশ ও সমাজকে যা দিয়েছেন তা সময় এবং স্থানের সীমানা ছাড়িয়ে প্রত্যেক প্রজন্মকে প্রেরণা জোগায়, পথ দেখায়। আপনারা হয়তো লক্ষ্য করেছেন, ভারতের এমন কোনও গ্রাম নেই, এমন কোনও শহর নেই, এমন কোনও ব্যক্তি নেই, যিনি স্বামীজিকে নিজের সঙ্গে যুক্ত অনুভব করেন না, তাঁর থেকে প্রেরণা পান না। স্বামীজির প্রেরণা স্বাধীনতা সংগ্রামেও নতুন প্রাণশক্তি জুগিয়েছিল। দাসত্বের দীর্ঘ সময়কালে ভারতকে তার নিজস্ব হাজার হাজার বছরের শক্তির অনুভব থেকে দূরে রেখে দিয়েছিল। স্বামী বিবেকানন্দ ভারতকে তার সেই শক্তি স্মরণ করিয়ে দেন, অনুভব করান, মানুষের মন ও মস্তিষ্কে সামর্থ্যকে পুনরুজ্জীবিত করেন, জাতীয় চেতনাকে জাগ্রত করেন। আপনারা এটা জেনে অবাক হবেন যে সেই সময় বিপ্লবের পথ ও শান্তির পথ – এই দুই স্বতন্ত্র ধরনের স্বাধীনতা সংগ্রাম চলছিল। কিন্তু উভয় পথের স্বাধীনতার সেনানীরাই কোনও না কোনভাবে স্বামী বিবেকানন্দের প্রেরণায় উজ্জীবিত ছিলেন। তাঁদের গ্রেপ্তারির সময়, ফাঁসির সময় পুলিশি তল্লাশি চালিয়ে স্বামীজির লেখা বই কিম্বা বাণী পাওয়া যেত। তখনকার শাসকদল এই নিয়ে গবেষণা করিয়েছিল যে স্বামী বিবেকানন্দের দর্শনে এমন কী রয়েছে যা মানুষকে দেশভক্তি, রাষ্ট্র নির্মাণ এবং স্বাধীনতার জন্য আত্মবলিদানের প্রেরণা জোগাচ্ছিল, প্রত্যেক নবীনের মস্তিষ্ককে প্রভাবিত করছিল। সময় এগিয়ে গেছে, দেশ স্বাধীন হয়েছে, কিন্তু আমরা আজও দেখি যে স্বামীজি আমাদের মধ্যেই আছেন, প্রতি মুহূর্তে আমাদের প্রেরণা জোগান, তার প্রভাব আমাদের ভাবনা-চিন্তায় কোথাও না কোথাও পরিলক্ষিত হয়। অধ্যাত্ম নিয়ে তিনি যা বলেছেন, রাষ্ট্রবাদ-রাষ্ট্রনির্মাণ-রাষ্ট্রহিত নিয়ে তিনি যা বলেছেন, জনসেবা থেকে শুরু করে জগৎসেবা নিয়ে তাঁর যে ভাবনা – সেগুলি আজও আমাদের মনমন্দিরে ততটাই তীব্রভাবে প্রবাহিত হয়। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, আপনাদের মতো নবীন বন্ধুরাও অবশ্যই এটা অনুভব করেন। কোথাও বিবেকানন্দজির ছবি দেখলে নিজের অজান্তেই মনের মধ্যে একটি শ্রদ্ধার ভাব জেগে ওঠে। মাথা নত করে প্রণাম করতে ইচ্ছা করে। এই অনুভব নিশ্চয়ই আপনাদেরও হয়।

 

বন্ধুগণ,

 

স্বামী বিবেকানন্দ আরেকটি অমূল্য উপহার দিয়েছেন। এই উপহার হল ব্যক্তিত্ব গঠন এবং সংস্থার নির্মাণ নিয়ে তাঁর অসাধারণ দর্শন। এই বিষয়ে খুব কম আলোচনা হয়, কিন্তু আমরা তাঁর সৃষ্টিগুলি অধ্যয়ন করলে দেখতে পাব যে স্বামী বিবেকানন্দ এমন সব সংস্থার জন্ম দিয়েছেন, এমন সব সংস্থাকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন যেগুলি আজও খুব ভালোভাবে ব্যক্তিত্ব নির্মাণের কাজ করছে। তাঁর শিষ্টাচার, সেবাভাব ও সমর্পণভাব লাগাতার উদ্ভাসিত হচ্ছে। ব্যক্তি থেকে সংস্থার নির্মাণ এবং সংস্থার মাধ্যমে অনেক ব্যক্তির জীবন গড়ে তোলা, এটি একটি অনবরত অবাধিত চক্র, যা নিরন্তর এগিয়ে যায়। মানুষ স্বামীজির দর্শনে প্রভাবিত হয়, সংস্থা নির্মাণের প্রেরণা গ্রহণ করে, সংস্থা নির্মাণ করে, তারপর সেই সংস্থাগুলির মাধ্যমে সেই ব্যবস্থা থেকে প্রেরণা নিয়ে আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে অপরের প্রতি সমাদর ভাবনার যে পথ স্বামীজি দেখিয়েছেন, সেই পথে এগিয়ে নতুন নতুন মানুষেরা নিজেকে তাঁর সঙ্গে যুক্ত করে এগিয়ে যান। ব্যক্তি থেকে সংস্থা এবং সংস্থা থেকে আবার ব্যক্তি – এই চক্র আজও ভারতের বড় শক্তি। আপনারা শিল্পোদ্যোগীদের কথা অনেক শোনেন, তাঁরাও এমনই। এক একজন মেধাবী ব্যক্তি এক একটি সুন্দর কোম্পানি তৈরি করে ফেলেন। পরবর্তীকালে সেই কোম্পানিতে যে ব্যবস্থা গড়ে ওঠে তার ফলে সেখানে আরও অনেক মেধাবী গড়ে ওঠেন। সেই ব্যক্তিরা পরবর্তীকালে আরও নতুন কোম্পানি তৈরি করেন। ব্যক্তি ও সংস্থার এই চক্র দেশ এবং সমাজের প্রত্যেক ক্ষেত্রে, প্রত্যেক স্তরের জন্য ততটাই গুরুত্বপূর্ণ।

 

বন্ধুগণ,

 

আজ দেশে যে নতুন জাতীয় শিক্ষানীতি চালু হয়েছে, সেখানেও উন্নত ব্যক্তি গড়ে তোলাকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। ব্যক্তি গড়ে তোলার মাধ্যমে দেশ গড়ার এই নীতি, নবীন প্রজন্মের ইচ্ছা, দক্ষতা, ভাবনা-চিন্তা, তাঁদের সিদ্ধান্তগুলিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়। এখন আপনারা চাইলে যে কোনও বিষয় বেছে নিতে পারেন, যে কোনও কম্বিনেশন নিতে পারেন, যে কোনও স্ট্রিম বেছে নিতে পারেন। একটি কোর্সে ব্রেক দিয়ে চাইলে অন্য কোর্স শুরু করতে পারেন। কিন্তু সেক্ষেত্রেও আগের কোর্সে আপনারা যে পরিশ্রম করেছেন তা বিফলে যাবে না। আপনারা ততটুকু পড়াশোনার শংসাপত্র পেয়ে যাবেন যা আপনাদের ভবিষ্যতে কাজে লাগবে।

 

বন্ধুগণ,

 

আজ দেশে একটি এমন ব্যবস্থা গড়ে তোলা হচ্ছে যার খোঁজে আমাদের যুব সম্প্রদায় প্রায়ই বিদেশে চলে যান। সেখানকার আধুনিক শিক্ষা, উন্নত বাণিজ্যিক সুযোগ-সুবিধা, মেধাকে চিহ্নিত করা ও সম্মান প্রদানের ব্যবস্থা, তাঁদের স্বাভাবিকভাবেই আকর্ষণ করে। এখন যদি দেশেই এই ব্যবস্থা আমাদের যুব বন্ধুরা পান, তাহলে তাঁরা আর বিদেশে যাবেন না। সেজন্য আমরা দায়বদ্ধতার সঙ্গে সেরকম পরিবেশ গড়ে তোলার চেষ্টা করে যাচ্ছি। আমাদের নবীন প্রজন্ম যেন উন্মুক্তভাবে তাঁদের প্রতিভা, তাঁদের স্বপ্ন অনুসারে নিজেদের বিকশিত করতে পারেন, সেজন্য আজ একটি পরিবেশ তৈরি করা হচ্ছে, ব্যবস্থা তৈরি করা হচ্ছে। শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে শুরু করে সমাজ ব্যবস্থা, আইনের খুঁটিনাটি সংশোধন – সমস্ত ক্ষেত্রে এই বিষয়টিকে কেন্দ্রে রাখা হচ্ছে। স্বামীজি যে বিষয়গুলিতে জোর দিয়েছিলেন, সেগুলি আমাদের কখনও ভোলা উচিৎ নয়। তিনি সব সময় বলতেন, জোর দিয়ে বলতেন যে শারীরিক শক্তি এবং মানসিক শক্তি দুটোতেই জোর দেওয়া উচিৎ। তিনি বলতেন, ‘লোহার তৈরি পেশী আর ইস্পাতের তৈরি স্নায়ুতন্ত্র!’ তাঁর প্রেরণায় আজ ভারতের যুব সম্প্রদায় শারীরিক এবং মানসিক সুস্থতার দিকে বিশেষ অগ্রাধিকার দিয়ে এগিয়ে চলেছে। ফিট ইন্ডিয়া মুভমেন্ট থেকে শুরু করে যোগের প্রতি সচেতনতা, ক্রীড়া বিষয়ক আধুনিক পরিকাঠামো নির্মাণ, – এই সব কিছু নবীন প্রজন্মকে মানসিক ও শারীরিক দিক থেকে সুদৃঢ় করে তুলছে।

 

বন্ধুগণ,

 

আজকাল আপনারা বারবার কিছু শব্দ হয়তো শুনতে পান যেমন, পার্সোনালিটি ডেভেলপমেন্ট, টিম ম্যানেজমেন্ট। স্বামী বিবেকানন্দকে ভালোভাবে পড়লে এই শব্দগুলির মানেও খুব সহজভাবে বোঝা যাবে। পার্সোনালিটি ডেভেলপমেন্ট নিয়ে তাঁর মন্ত্র ছিল নিজেকে ভরসা কর, নিজের ওপর বিশ্বাস রাখো। নেতৃত্ব নিয়ে তাঁর মন্ত্র ছিল সবাইকে বিশ্বাস কর। তিনি বলতেন, “পুরনো ধর্মগুলি অনুসারে তিনিই নাস্তিক যিনি ঈশ্বরে ভরসা করেন না। কিন্তু নতুন ধর্ম বলে নাস্তিক তিনিই যিনি নিজের ওপর ভরসা করেন না।” আর যখন নেতৃত্ব প্রসঙ্গ উঠত তখন তিনি নিজের আগে নিজের টিমকে স্থান দিতেন। আমি কোথাও পড়েছি, সেই গল্পটাও আপনাদের শোনাতে চাই। একবার স্বামীজি তাঁর সাথী স্বামী সারদানন্দজির সঙ্গে লন্ডনে একটি পাবলিক লেকচারের জন্য গিয়েছিলেন। সমস্ত প্রস্তুতি হয়ে গেছে। শ্রোতারা এসে হাজির হয়েছেন এবং এটাই স্বাভাবিক যে প্রত্যেকেই স্বামী বিবেকানন্দের বক্তব্য শোনার জন্য আকর্ষিত হয়ে সেখানে এসেছেন। কিন্তু যখনই বলার সময় হল, তখন স্বামীজি বললেন যে আজ ভাষণ আমি নয়, আমার সহযোগী সারদানন্দজি দেবেন। সারদানন্দজিও ভাবেননি যে হঠাৎ তাঁর ওপর দায়িত্ব পড়বে। তিনি নিজেও এর জন্য প্রস্তুত ছিলেন না। কিন্তু যখন সারদানন্দজি ভাষণ দেওয়া শুরু করেন, তখন প্রত্যেকে চমকে যান, তাঁর বক্তব্যে প্রভাবিত হন। এটাকেই বলে নেতৃত্ব। আর নিজের টিমের সদস্যদের ওপর ভরসা করার শক্তি। আজ আমরা যতটা স্বামী বিবেকানন্দজি সম্পর্কে জানি, তাতে অনেক বড় অবদান স্বামী সারদানন্দজিরও রয়েছে।

 

বন্ধুগণ,

 

এই স্বামী বিবেকানন্দই সেই সফরে বলেছিলেন যে ভয়হীন, মিতভাষী, পরিষ্কার মনের সাহসী এবং উচ্চাকাঙ্ক্ষী যুব সম্প্রদায়ই সেই ভিত্তি যাঁদের ওপর যে কোনও রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ নির্মিত হয়। সেই যুব সম্প্রদায়ের ওপর, যুবশক্তির ওপর তিনি ভরসা রাখতেন। তাঁর এই বিশ্বাসকে এখন আপনাদের নিজেদের জীবনে বাস্তবায়িত করে দেখাতে হবে। ভারতকে এখন নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার কাজ, দেশকে আত্মনির্ভর করে তোলার কাজ আপনাদের মতো যুবক-যুবতীদেরই করতে হবে। এখন আপনাদের মধ্যে কেউ কেউ ভাবতে পারেন যে এখন তো আমাদের এতটা বয়সই হয়নি, এখন তো হাসি-খেলার বয়স, জীবনে আনন্দ করার বয়স। বন্ধুগণ, লক্ষ্য যখন স্পষ্ট থাকে, প্রবল ইচ্ছাশক্তি থাকে, তখন বয়স কোনও বাধা হতে পারে না। বয়সের কোনও মানেই হয় না। আপনারা সব সময় মনে রাখবেন যে পরাধীনতার সময়ে স্বাধীনতার আন্দোলনের নেতৃত্ব দেশের যুব প্রজন্মই সামলেছিলেন। আপনারা কি জানেন, শহীদ ক্ষুদিরাম বোস যখন ফাঁসি কাঠে চড়েছিলেন তখন তাঁর বয়স কত ছিল? ১৮-১৯ বছর। ভগৎ সিং-কে যখন ফাঁসি দেওয়া হয়েছিল তখন তাঁর বয়স কত ছিল? মাত্র ২৪ বছর। ভগবান বিরসা মুন্ডা যখন শহীদ হয়েছিলেন তখন তাঁর বয়স কত ছিল? খুব বেশি হলে ২৫ বছর। সেই প্রজন্ম যখন স্থির করেছিল যে দেশকে স্বাধীন করার জন্যই বাঁচব, দেশকে স্বাধীন করার জন্যই মরব, যুব প্রজন্মের সমস্ত উকিল, চিকিৎসক, অধ্যাপক, ব্যাঙ্কার, সমস্ত পেশার মানুষেরা বাইরে বেরিয়ে আসেন এবং সবাই মিলে আমাদের জন্য স্বাধীনতা অর্জন করেন।

 

বন্ধুগণ,

 

আমরা সেই সময়খণ্ডে জন্মগ্রহণ করেছি, আমি নিজেও স্বাধীন ভারতে জন্মগ্রহণ করেছি। আমরা কেউ পরাধীন দেশ দেখিনি। আর আমার সামনে আপনারা যাঁরা বসে আছেন, আপনারাও স্বাধীন দেশেই জন্মগ্রহণ করেছেন। আমরা দেশের স্বাধীনতার জন্য মৃত্যুবরণ করার সুযোগ পাইনি, কিন্তু আজ স্বাধীন ভারতকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার সুযোগ অবশ্যই পেয়েছি। এই সুযোগ আমাদের হারালে চলবে না। আমার দেশের নবীন বন্ধুগণ, স্বাধীনতার ৭৫ বছর পূর্তি থেকে শুরু করে স্বাধীনতার ১০০ বছর পূর্তি পর্যন্ত আগামী ২৫-২৬ বছর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ২০৪৭ সালে স্বাধীনতার ১০০ বছর পূর্ণ হবে। এই ২৫-২৬ বছর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

 

বন্ধুগণ,

 

আপনারাও ভাবুন। আপনারা আজ যে বয়সে রয়েছেন,  এখন যে সময় শুরু হচ্ছে, এটি আপনাদের জীবনের স্বর্ণিম সময়, উত্তম সময়, আর এই সময় ভারতকে স্বাধীনতার ১০০ বছরের দিকে এগিয়ে নিয়ে চলেছে। অর্থাৎ, আপনাদের উন্নয়নের উচ্চতা, স্বাধীনতার ১০০ বছরের সাফল্য, এই দুটিই পায়ে পা মিলিয়ে এগিয়ে চলেছে। অর্থাৎ, আপনাদের জীবনের আগামী ২৫-২৬ বছর আর দেশের আগামী ২৫-২৬ বছর, এই দুটির মধ্যে অনেক মিল রয়েছে, এই মিলের অনেক গুরুত্ব রয়েছে। আপনাদের জীবনের এই সোনালি বছরগুলিতে  দেশকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিন, দেশের সেবাকে অগ্রাধিকার দিন। বিবেকানন্দজি বলতেন যে একবিংশ শতাব্দী ভারতের শতাব্দী হবে। এখন আপনাদেরকেই এই একবিংশ শতাব্দীকে ভারতের শতাব্দী করে গড়ে তুলতে হবে। আপনারা যাই-ই করবেন, যে সিদ্ধান্তই নেবেন, তখন অবশ্যই ভাববেন যে এর মাধ্যমে দেশের কী লাভ হবে।

 

বন্ধুগণ,

 

স্বামী বিবেকানন্দজি বলতেন যে আমাদের যুব সম্প্রদায়কে এগিয়ে গিয়ে রাষ্ট্রের ভাগ্যবিধাতা হয়ে উঠতে হবে। সেজন্য এটা আপনাদের দায়িত্ব যে আপনারা ভারতের ভবিষ্যতকে নেতৃত্ব দেবেন। আর আপনাদের এই দায়িত্ব দেশের রাজনীতি নিয়েও আছে। কারণ, রাজনীতি, পলিটিক্স দেশে সার্থক পরিবর্তন আনার একটি মজবুত মাধ্যম। প্রত্যেক ক্ষেত্রের মতো রাজনীতিতেও যুব সম্প্রদায়ের অনেক বেশি প্রয়োজন রয়েছে। নতুন ভাবনা, নতুন প্রাণশক্তি, নতুন নতুন স্বপ্ন, নতুন উদ্দীপনা দেশের রাজনীতিতে অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।

 

বন্ধুগণ,

 

কিন্তু আমাদের দেশে এই ধারণা তৈরি হয়ে গিয়েছিল, যদি কোনও যুবক রাজনীতির দিকে পা বাড়ায়, তাহলে বাড়ির সবাই বলতেন যে ছেলেটি বিগড়ে গেছে। কারণ রাজনীতি, ঝগড়া, লুঠমার, দুর্নীতি – এইসব কিছুর সমার্থক হয়ে উঠেছিল। আরও কত না লেবেল লেগে গিয়েছিল রাজনীতির গায়ে। সবাই বলতে শুরু করেছিলেন যে সবকিছু বদলাতে পারে, কিন্তু শাসকের চরিত্র বদলাবে না। কিন্তু আজ আপনারা দেখুন, আজ দেশের জনগণ এত সচেতন হয়েছেন যে রাজনীতিতেও তাঁরা সৎ ব্যক্তিদের পেছনেই দাঁড়াচ্ছেন, সৎ ব্যক্তিদের সুযোগ দিচ্ছেন। দেশের সাধারণ মানুষ সৎ, সমর্পিত প্রাণ, সেবাভাব সম্পন্ন রাজনীতিবিদদের পেছনে ভিড় জমাচ্ছেন। সততা এবং দক্ষতা আজকের রাজনীতিতে সবচাইতে অনিবার্য শর্ত হয়ে উঠছে। আজ দেশে যে সচেতনতা এসেছে তা এই চাপ সৃষ্টি করেছে। দুর্নীতি যাঁদের পরম্পরা ছিল, সেই দুর্নীতিই আজ তাঁদের জন্য বোঝা হয়ে উঠেছে। আজ এ দেশের সাধারণ মানুষের সচেতনতার শক্তিকে তাঁরা লক্ষ চেষ্টা করেও জয় করতে পারছেন না। দেশ এখন সৎ মানুষদের ভালবাসছে, সৎ মানুষের আশীর্বাদ দিচ্ছে, সৎ মানুষদের সঙ্গে জোট বাঁধছে, তাঁদেরকে বিশ্বাস করছে। এখন জনপ্রতিনিধিরাও বুঝতে পারছেন যে আগামী নির্বাচনে যেতে হলে তাঁদের সিভি স্ট্রং হতে হবে, কাজের হিসেব ভালো হতে হবে। কিন্তু বন্ধুগণ, কিছু পরিবর্তন এখনও বাকি আছে। আর সেই পরিবর্তন করতে হবে দেশের যুব সম্প্রদায়কে, আপনাদেরকে। গণতন্ত্রের সব থেকে বড় শত্রু এখনও অঙ্কুরিত হচ্ছে, আর তা হল রাজনৈতিক বংশবাদ। রাজনৈতিক বংশবাদ ও স্বজনপোষণ দেশের সামনে এমন সমস্যা যা শেকড় থেকে উপড়ে ফেলতে হবে। এটা সত্যি কথা যে এখন শুধুই পদবীর ভরসায় নির্বাচনে জেতা মানুষদের দিন চলে গেছে। কিন্তু রাজনীতিতে বংশবাদ ও স্বজনপোষণের রোগ এখনও সম্পূর্ণ রূপে সমাপ্ত হয়নি। এখনও এমন মানুষ আছেন যাঁদের ভাবনা, আচার, ব্যবহার, লক্ষ্য সবকিছু নিজের পরিবারের রাজনীতি এবং রাজনীতিতে নিজের পরিবারকে বাঁচানোর জন্য করে যাচ্ছেন।

 

বন্ধুগণ,

 

এই রাজনৈতিক বংশবাদ গণতন্ত্রে একটি নতুন রূপ নিয়ে দেশে একনায়কতন্ত্রকে আবার ফিরিয়ে আনতে চাইছে। এই রাজনৈতিক বংশবাদ ‘দেশ আগে’ – এই ভাবনার জায়গায় ‘আমার পরিবার আগে’ – এই ভাবনাকে শক্তিশালী করে। এই ভাবনা ভারতে রাজনৈতিক এবং সামাজিক দুর্নীতিরও একটি অনেক বড় কারণ। বংশবাদ ও স্বজনপোষণের ফলেই এগিয়ে থাকা মানুষদের মনে হয় যে তাঁর পূর্ববর্তী প্রজন্মের মানুষদের যেহেতু দুর্নীতি কোনও ক্ষতি করতে পারেনি, দুর্নীতি তাঁদেরও কিছু বিগড়ে দিতে পারবে না। কারণ তাঁরা নিজের বাড়িতেই এর বিকৃত উদাহরণ দেখে এসেছেন। এমন মানুষদের মনে আইনের প্রতি কোনও সম্মান কিংবা ভয় থাকে না।

 

বন্ধুগণ,

 

এই পরিস্থিতি পরিবর্তনের দায়িত্ব দেশের সচেতনতা, দেশের নবীন প্রজন্মের ওপর রয়েছে। আপনাদের রাষ্ট্রয়াম জাগ্রিয়াম বয়ং – এই মন্ত্র নিয়ে বাঁচতে হবে। আপনারা বিপুল সংখ্যায় রাজনীতিতে আসুন, অংশগ্রহণ করুন। কিছু পাওয়া, কিছু হওয়ার ইচ্ছা নিয়ে আসবেন না। কিছু করার ইচ্ছা নিয়ে আসুন। আপনারা নিজেদের ভাবনা, নিজেদের দূরদৃষ্টি নিয়ে এগিয়ে যান। একসঙ্গে মিলেমিশে কাজ করুন,নির্ভয়ে কাজ করুন। মনে রাখবেন, যতদিন না দেশের সাধারণ যুব সম্প্রদায় রাজনীতিতে আসবেন, বংশবাদের এই বিষ এভাবেই আমাদের গণতন্ত্রকে দুর্বল করতে থাকবে। এ দেশের গণতন্ত্রকে বাঁচানোর জন্য আপনাদের রাজনীতিতে আসা অত্যন্ত প্রয়োজন। আর এই যে আমাদের সরকারের যুব বিভাগ ‘মক পার্লামেন্ট’ কর্মসূচি চালু করেছে, দেশের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে যুব বন্ধুরা মন খুলে আলোচনা করছেন, তাঁদের মধ্যে যাঁরা কৃতিত্বের পরিচয় দিয়েছেন, সেই যুবক-যুবতীদের ভারতের সংসদের সেন্টাল হল পর্যন্ত নিয়ে এসেছে, এসবের পেছনে উদ্দেশ্য এটাই যাতে দেশের নবীন প্রজন্মকে আমরা প্রস্তুত করতে পারি। আগামীদিনে দেশকে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য যেন তাঁরা এগিয়ে আসেন। আপনাদের সামনে স্বামী বিবেকানন্দের মতো মহান পথপ্রদর্শক রয়েছেন। তাঁর প্রেরণায় আপনাদের মতো যুবক-যুবতীরা রাজনীতিতে এলে দেশ আরও মজবুত হবে।

 

বন্ধুগণ,

 

স্বামী বিবেকানন্দজি যুব সম্প্রদায়কে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্র দিয়ে গেছেন। তিনি বলতেন, “কোনও বিপর্যয় কিংবা সমস্যা থেকেও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হল সেই বিপর্যয় থেকে গ্রহণ করা শিক্ষা!” আপনারা তা থেকে কী শিখেছেন! যে কোনও বিপর্যয়ের মোকাবিলায় আমাদের সংযম ও সাহসের প্রয়োজন হয়। বিপর্যয় আমাদের এটা বোঝার সুযোগ দেয়, যা নষ্ট হয়েছে তাকে আবার বানাতে হবে। নতুনভাবে নতুন নির্মাণের ভিত্তি রাখতে হবে। অনেকবার আমরা একটি সঙ্কট, একটি বিপর্যয়ের পর অনেক নতুন ভাবনা পাই, আর তারপর দেখি যে সেই নতুন ভাবনা কিভাবে সমগ্র ভবিষ্যতকে বদলে দিয়েছে। আপনারাও হয়তো নিজেদের জীবনে এটা অনুভব করেছেন। আমার ইচ্ছা করছে আজ একটি অভিজ্ঞতার কথা আপনাদের সামনে রাখি। ২০০১ সালে যখন গুজরাটের কচ্ছ-এ ভূমিকম্প এসেছিল, তখন কিছুক্ষণের মধ্যেই সবকিছু ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। গোটা কচ্ছ এক প্রকার মৃত্যুর চাদর ঢেকে শুয়ে পড়েছিল। সমস্ত বাড়ি-ঘর ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছিল। যে পরিস্থিতি ছিল তা দেখে মানুষ বলছিলেন যে এখন কচ্ছ চিরকালের জন্য ধ্বংস হয়ে গেল। এই ভূমিকম্পের কয়েক মাস পরেই আমি গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী রূপে দায়িত্ব পালনের সুযোগ পাই। তখন চারিদিকে এ কথার অনুরণন চলছিল যে গুজরাটের সর্বনাশ হয়ে গেছে। আমি আমার সঙ্গীদের নিয়ে একটি নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে কাজ করতে শুরু করি। একটি নতুন রণনীতি নিয়ে এগিয়ে যাই। আমরা শুধু নতুন দালান বাড়ি তৈরি করি না, আমরা এই পণ নিই যে কচ্ছ-এর উন্নয়নকে নতুন উচ্চতায় পৌঁছে দেব। তখন সেখানে তেমন রাস্তাঘাটও ছিল না। বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থাও আগে সেরকম ভালো ছিল না। সহজে জল পাওয়া যেত না। আমরা সুপরিকল্পিতভাবে প্রত্যেকটি ব্যবস্থা গড়ে তুলি। আমরা কয়েকশ’ কিলোমিটার দীর্ঘ নালা কেটে কচ্ছ পর্যন্ত জল নিয়ে যাই। নলের মাধ্যমে গ্রামে গ্রামে বাড়িতে বাড়িতে জল পৌঁছে দিই। কচ্ছ-এর অবস্থা এমন হয়েছিল যে তখন সেখানে পর্যটন নিয়ে কেউ ভাবতেও পারতেন না। উলটে সেখান থেকে হাজার হাজার মানুষ প্রতি বছর পালিয়ে যেতে বাধ্য হতেন। আর আজ পরিস্থিতি এমন হয়েছে যে অনেক বছর আগে কচ্ছ ছেড়ে চলে যাওয়া মানুষেরাও এখন ফিরে আসছেন। আজ কচ্ছে প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ পর্যটক ‘রান উৎসব’-এর আনন্দ উপভোগ করতে পৌঁছে যান। অর্থাৎ, সেই বিপর্যয় থেকে আমরা এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ অন্বেষণ করেছি, এভাবেই সাফল্য পেয়েছি।

 

বন্ধুগণ,

 

সেই ভূমিকম্পের সময়েই আরেকটি বড় কাজ হয়েছে যা নিয়ে তেমন আলোচনা হয়নি। আজকাল করোনার সঙ্কটকালে আপনারা হয়তো বারবারই ‘ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট অ্যাক্ট’ সম্পর্কে শুনেছেন। বর্তমান করোনা সঙ্কটের বিভিন্ন ধাপে সমস্ত সরকারি আদেশ এই আইনের ভিত্তিতেই জারি করা হয়েছে। কিন্তু এই আইন রচনারও একটি ইতিহাস আছে, তার সঙ্গে কচ্ছ-এর ভূমিকম্পের একটি সম্পর্ক আছে। আর এই সম্পর্কের কথা আমি আপনাদেরকে বললে আপনাদের আনন্দ হবে।

 

বন্ধুগণ,

 

আগে আমাদের দেশে বিপর্যয় ব্যবস্থাপনা শুধুই কৃষি বিভাগের দায়িত্বে ছিল। কারণ আমাদের দেশে বিপর্যয়ের মানেই ছিল বন্যা কিংবা খরা। বেশি বর্ষা হলে বিপর্যয়, কম বর্ষা হলেও বিপর্যয়। চাষীদের ক্ষতিপূরণ ইত্যাদি দেওয়াটাকেই মূলত বিপর্যয় মোকাবিলা ব্যবস্থাপনা বলে মনে করা হত। কিন্তু কচ্ছ ভূমিকম্প থেকে শিক্ষা নিয়ে গুজরাট ২০০৩ সালে ‘গুজরাট স্টেট ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট অ্যাক্ট’  রচনা করে। তখন দেশে প্রথমবার এমনটি হয় যখন বিপর্যয় ব্যবস্থাপনাকে কৃষি বিভাগ থেকে বের করে স্বরাষ্ট্র বিভাগের অধীনস্ত করে দেওয়া হয়। পরবর্তী সময়ে কেন্দ্রীয় সরকারও ২০০৫-এ গুজরাটের সেই আইন থেকে শিক্ষা নিয়ে গোটা দেশের জন্য ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট অ্যাক্ট প্রণয়ন করে। এখন এই আইনের সাহায্যে, এই আইনের শক্তিতে দেশ মহামারীর বিরুদ্ধে এতবড় লড়াই লড়ছে। আজ এই আইন আমাদের লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবন রক্ষায় সহায়ক হয়েছে। দেশকে এতবড় সঙ্কট থেকে তুলে আনার ভিত্তি হয়ে উঠেছে। শুধু তাই নয়, যেখানে এক সময় বিপর্যয় ব্যবস্থাপনা শুধুই ক্ষতিপূরণ এবং ত্রাণসামগ্রী পর্যন্ত সীমিত ছিল, সেখানে ভারতের বহুমুখী বিপর্যয় ব্যবস্থাপনা থেকে গোটা বিশ্ব শিক্ষা গ্রহণ করছে।

 

বন্ধুগণ,

 

যে সমাজ সঙ্কট থেকেও উন্নতির পথ তৈরি করা শিখে নেয়, সেই সমাজ নিজেদের ভবিষ্যৎ নিজেরাই লেখে। সেজন্য আজ ভারত এবং ১৩০ কোটি ভারতবাসী নিজেদের ভবিষ্যৎ এবং সুনিশ্চিতভাবে উন্নত ভবিষ্যৎ নিজেরাই গড়ে তুলছেন। আপনাদের প্রতিটি প্রচেষ্টা, প্রত্যেক সেবার কাজ, প্রত্যেকের উদ্ভাবন, প্রত্যেকের সৎ সঙ্কল্প ভবিষ্যতের ভিত্তি স্থাপনকারী এক একটি শক্তিশালী পাথর। আজ আপনাদের প্রচেষ্টা সফল হোক – এই শুভকামনা জানিয়ে আরেকবার সারা দেশের লক্ষ লক্ষ যুবক-যুবতীদের করোনার এই সঙ্কটকালে যেভাবে অনেক সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে, অনেক ভার্চ্যুয়াল সম্মেলনের মাধ্যমে এই যুব অভিযানকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন, তার জন্য কেন্দ্রীয় সরকার যুব বিভাগ অভিনন্দনের যোগ্য। এতে অংশগ্রহণকারী লক্ষ লক্ষ যুবক-যুবতীও অভিনন্দনের যোগ্য। আর এতে যাঁরা জয়ী হয়েছেন তাঁদেরকে অনেক অনেক শুভকামনা জানিয়ে আমি প্রার্থনা করি তাঁরা যে কথাগুলি মন থেকে বলেছেন, সেগুলি যেন সমাজের শিকড়ে পৌঁছয়। সেজন্য তাঁরা যেন সাফল্যের সঙ্গে এগিয়ে যান, তাঁদের প্রত্যেকের জন্য আমি এই শুভকামনা জানাই। আমি আরেকবার মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়কে সংসদ ভবনে এ ধরনের কর্মসূচি রচনার জন্য কৃতজ্ঞতা জানিয়ে আমার বক্তব্য সম্পূর্ণ করছি।

 

অনেক অনেক ধন্যবাদ!

***

 

 

CG/SB/DM