Search

পিএমইন্ডিয়াপিএমইন্ডিয়া

সাম্প্রতিক সংবাদ

বিষয়টিকে সরাসরি পিআইবি থেকে নেওয়া হয়েছে

ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সারা মধ্যপ্রদেশ জুড়ে আয়োজিত কিষাণ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ

ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সারা মধ্যপ্রদেশ জুড়ে আয়োজিত কিষাণ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ


নয়াদিল্লি, ১৮ ডিসেম্বর, ২০২০

 

নমস্কার,

 

মধ্যপ্রদেশের মেহনতী কৃষক ভাই ও বোনেদের আমার কোটি কোটি প্রণাম। আজকের এই বিশেষ কর্মসূচিতে মধ্যপ্রদেশের প্রত্যেক প্রান্তের কৃষক বন্ধুরা একত্রিত হয়েছেন। রায়সেন-এ একসঙ্গে এত কৃষক জমায়েত হয়েছেন। তাছাড়া ডিজিটাল মাধ্যমে হাজার হাজার কৃষক ভাই-বোন আমাদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। আমি সবাইকে স্বাগত জানাই। বিগত দিনগুলিতে শিলাবৃষ্টি ও অন্যান্য প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণে মধ্যপ্রদেশের কৃষকদের অনেক লোকসান হয়েছে। আজ এই কর্মসূচিতে মধ্যপ্রদেশের এরকম ৩৫ লক্ষ কৃষকের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে সরাসরি ১,৬০০ কোটি টাকা ট্রান্সফার করা হচ্ছে। মাঝে কোনও দালাল নেই, কাউকে কমিশন দিতে হবে না। কোনও কাট নেই, কাউকে তোলা দিতে হবে না। সরাসরি কৃষকদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে এই সহায়তার অর্থ পৌঁছে যাবে। প্রযুক্তির মাধ্যমেই এটা সম্ভব হয়েছে। আর ভারত বিগত ৫-৬ বছরে এই আধুনিক ব্যবস্থা গড়ে তুলেছে। এই ব্যবস্থা নিয়ে আজ গোটা আলোচনা হচ্ছে। আর এক্ষেত্রে আমাদের দেশের নবীন প্রতিভাধর মানুষদের অনেক বড় অবদান রয়েছে।

 

বন্ধুগণ,

 

আজ এখানে এই অনুষ্ঠানেও অনেক কৃষকদের হাতে কিষাণ ক্রেডিট কার্ড তুলে দেওয়া হয়েছে। আগে প্রত্যেক কৃষক এই কিষাণ ক্রেডিট কার্ড পেতেন না। আমাদের সরকার দেশের প্রত্যেক কৃষকের জন্য এই কিষাণ ক্রেডিট কার্ডের পরিষেবা চালু করতে আইন পরিবর্তন করেছে। এখন কৃষকরা চাষ সংক্রান্ত কাজের জন্য সহজেই প্রয়োজনীয় পুঁজি পাচ্ছেন। এতে তাঁরা সুদখোর মহাজনদের থেকে চড়া সুদে ঋণ নেওয়ার অসহায়তার থেকে মুক্তি পেয়েছেন।

 

বন্ধুগণ,

 

আজ এই কর্মসূচিতে গুদামজাত করা বা হিমঘর সংক্রান্ত পরিকাঠামো এবং অন্যান্য পরিষেবার উদ্বোধন কিংবা ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনও হয়েছে। একথা সত্যি যে কৃষকরা যতই পরিশ্রম করুন না কেন, ফল-সব্জি-শস্য এসব যদি সঠিক পদ্ধতিতে মজুত না করা যায়, তাহলে তাঁদের অনেক বড় লোকসান হয়। আর সেই লোকসান শুধু কৃষকের হয় না, সেই লোকসান হয় গোটা ভারতের। একটা অনুমান অনুসারে প্রায় ১ লক্ষ কোটি টাকার ফল-সব্জি এবং শস্য প্রতি বছর সঠিকভাবে মজুত না করতে পারার কারণে নষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু আগে এই বিষয়টি নিয়ে অনেক বেশি উদাসীনতা ছিল। এখন আমাদের অগ্রাধিকার হল মজুত করার জন্য নতুন নতুন কেন্দ্র, হিমঘর গড়ে তুলে দেশে বিশাল নেটওয়ার্ক তৈরি করা এবং সংশ্লিষ্ট পরিকাঠামো গড়ে তোলা। আমি দেশের বাণিজ্য জগতকে, শিল্প জগতকেও অনুরোধ জানাব যে এই গুদামজাতকরণের এবং হিমঘরের আধুনিক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে খাদ্য প্রক্রিয়াকরণে নতুন মাত্রা যোগ করতে আপনারা এগিয়ে আসুন। সমস্ত দায়িত্ব কৃষকদের ওপর ছেড়ে দেওয়া উচিৎ নয়। এরকম করলে হয়তো আপনাদের রোজগার একটু কম হবে, কিন্তু দেশের কৃষকদের এবং দেশের গরীব ও গ্রামের অনেক উপকার হবে।

 

বন্ধুগণ,

 

ভারতের কৃষক এখন আর পিছিয়ে পড়ে থাকতে পারে না। বিশ্বের বড় বড় দেশের কৃষকরা যেসব আধুনিক পরিষেবা পান, সেইসব পরিষেবা যাতে ভারতের কৃষকরাও পান, সেটা আপনাদের দেখতে হবে। আর এজন্য দেরি করলে চলবে না। সময় আমাদের জন্য অপেক্ষা করবে না। দ্রুত পরিবর্তিত বিশ্বের প্রেক্ষিতে ভারতের কৃষক পরিষেবার অভাবে, আধুনিক বিভিন্ন পদ্ধতির অভাবে অসহায় পড়ে পড়বেন, এই পরিস্থিতি স্বীকার করা চলে না। আগে থেকেই অনেক দেরি হয়ে গেছে। যে কাজগুলি ২৫-৩০ বছর আগে হওয়া উচিৎ ছিল, সেসব কাজ আজ করতে হচ্ছে। বিগত ছয় বছরে আমাদের সরকার কৃষকদের প্রতিটি প্রয়োজনের কথা মাথায় রেখে অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে। এই পর্যায়ে দেশের কৃষকদের সেসব দাবিও পূরণ করা হয়েছে যেগুলি নিয়ে অনেক বছর ধরে শুধু এবং শুধুই আলাপ-আলোচনা চলছিল। বিগত কয়েক দিন ধরে দেশে কৃষকদের জন্য যে নতুন আইন প্রণয়ন করা হয়েছে, সেগুলি নিয়ে খুব আলোচনা চলছে। এই কৃষি সংস্কার, এই আইনগুলি হঠাৎ করে তৈরি করা হয়নি। বিগত ২০-২২ বছর ধরে এ দেশের প্রত্যেক সরকার এবং রাজ্য সরকারগুলি এই বিষয় নিয়ে ব্যাপক আলাপ-আলোচনা করেছে। অধিকাংশ সংগঠনই এ বিষয়ে কম-বেশি আলোচনা ও বিতর্ক করেছে।

 

দেশের কৃষক, কৃষক সংগঠন, কৃষি বিশেষজ্ঞ, কৃষি অর্থনীতিবিদ, কৃষি বৈজ্ঞানিক, আমাদের দেশের অগ্রগণ্য কৃষকরাও লাগাতার কৃষিতে সংস্কারের দাবি জানিয়ে আসছিলেন। প্রকৃতপক্ষে দেশের কৃষকদের সেই মানুষদের কাছ থেকে জবাব চাওয়া উচিৎ যাঁরা আগে নিজেদের ঘোষণাপত্রে এই সংস্কারগুলি করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন এবং সেগুলির হয়ে নানা কথা বলে, বড় বড় কথা বলে কৃষকদের থেকে ভোট নিয়েছেন। কিন্তু তাঁদের নির্বাচনী ঘোষণাপত্রে লেখা সেসব প্রতিশ্রুতি তাঁরা কখনও বাস্তবায়িত করেননি। এই দাবিগুলির প্রতি তাঁরা উন্নাসিক থেকে গেছেন। কারণ, তাঁদের কাছে কৃষকদের কোনও অগ্রাধিকার ছিল না। আর আমার দেশের কৃষকরা বছরের পর বছর ধরে অপেক্ষা করে গেছেন। যদি আজ দেশের সমস্ত রাজনৈতিক দলের পুরনো ঘোষণাপত্র দেখা যায়, তাঁদের পুরনো বক্তব্যগুলি শোনা হয়, যাঁরা আগে দেশের কৃষি ব্যবস্থা সামলাতেন, তেমন মহানুভবদের চিঠি পড়া হয়, তাহলে আজ যে কৃষি সংস্কার হয়েছে সেটা তাঁদের বক্তব্য থেকে আলাদা কিছু নয়। তাঁরা সেসব কিছু করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিতেন, সেইসব কথাই এই সংস্কারে বাস্তবায়িত করা হয়েছে। আমার মনে হয়, তাঁদের দুঃখ এই বিষয়ে নয় যে এই কৃষি আইনে সংস্কার কেন হয়েছে, তাঁদের সমস্যা হল – যে কাজ আমরা বলতাম কিন্তু করতে পারিনি, তা মোদী কেমন করে করে দিল, মোদী কেন করল? মোদী কেন এর কৃতিত্ব পাবে? আমি সমস্ত রাজনৈতিক দলের কাছে হাতজোড় করে বলতে চাই – আপনারা সমস্ত কৃতিত্ব নিজেদের কাছে রাখুন, আপনাদের সমস্ত পুরনো ঘোষণাপত্রকেই আমি কৃতিত্ব দিতে চাই। আমার কৃতিত্ব চাই না। আমি কৃষকদের জীবনকে সহজ হতে দেখতে চাই। তাঁদের জীবনে সমৃদ্ধি চাই। কৃষিতে আধুনিকতা চাই। আপনারা দয়া করে দেশের কৃষকদের বিভ্রান্ত করা ছেড়ে দিন।

 

বন্ধুগণ,

 

এই আইন চালু হওয়ার পর ৬-৭ মাসেরও বেশি সময় হয়ে গেছে। কিন্তু এখন হঠাৎ ভ্রম ও মিথ্যার জাল বিছিয়ে নিজেদের রাজনৈতিক জমি চাষ করার খেলা তাঁরা খেলছেন। কৃষকদের কাঁধে বন্দুক রেখে আক্রমণ করে যাচ্ছেন। আপনারা হয়তো দেখেছেন, সরকার বারবার জিজ্ঞাসা করছে, মিটিং-এও জিজ্ঞাসা করছে, সর্বসমক্ষে জিজ্ঞাসা করছে, আমাদের কৃষিমন্ত্রী টিভি সাক্ষাৎকারে বলছেন, আমি নিজে বলছি যে আপনাদের আইনের কোন অনুচ্ছেদে কি আপত্তি আছে বলুন। যা যা আপত্তি আছে আপনারা বলুন। তখন এই রাজনৈতিক দলগুলির কাছে কোনও যথাযথ জবাব নেই। আর এটাই হল এই দলগুলির বাস্তব চেহারা।

 

বন্ধুগণ,

 

যাঁদের নিজেদের পায়ের তলার রাজনৈতিক মাটি সরে গেছে, তাঁরা কৃষকদের জমি চলে যাবে, জমি চলে যাবে বলে ভয় দেখিয়ে নিজেদের রাজনৈতিক জমি খুঁজছেন। আজ যাঁরা কৃষকদের নামে আন্দোলন সঞ্চালনা করছেন, যখন তাঁদের সরকার চালানোর বা সরকারের অংশ হওয়ার সুযোগ হয়েছিল তখন তাঁরা কী করেছেন এটা দেশের মনে রাখা জরুরি। আমি আজ দেশবাসীর সামনে, দেশের কৃষকদের সামনে…,এই মানুষগুলির বাস্তব চেহারা দেশের মানুষের সামনে, আমার কৃষক ভাই-বোনেদের সামনে তুলে ধরতে চাই। আমি বলতে চাই।

 

বন্ধুগণ,

 

কৃষকদের হয়ে যাঁরা কথা বলছেন আর কুম্ভিরাশ্রু ঝরাচ্ছেন, সেই মানুষেরা কতটা নির্দয় এটাই তার বড় প্রমাণ। স্বামীনাথন কমিটির রিপোর্ট। স্বামীনাথন কমিটির রিপোর্ট জমা পড়ার পর এই এঁরা তার সুপারিশগুলিকে আট বছর চেপে রেখেছিল। কৃষকরা আন্দোলন করে যাচ্ছিলেন, বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন, কিন্তু এই মানুষগুলির কোনও হৃদয় বৈকল্য হয়নি। এঁরা সুনিশ্চিত করেছেন যাতে তাঁদের সরকারকে কৃষকদের বেশি খরচ না করতে হয়। সেজন্য এই রিপোর্ট তাঁরা চেপে রেখেছিলেন। সেজন্য কৃষকদের দেশের মর্যাদা হিসেবে নয়, তাঁরা কৃষকদের নিজেদের রাজনীতির ঘুঁটি হিসেবে বিভিন্ন সময়ে ব্যবহার করেছেন। যখন কৃষকদের জন্য সংবেদনশীল, সমর্পিতপ্রাণ আমাদের সরকার কৃষকদের অন্নদাতা বলে মনে করে, আমরা ফাইল চাপা পড়া সেই স্বামীনাথন কমিটির রিপোর্ট খুঁজে বের করে তার সুপারিশগুলি বাস্তবায়িত করেছি। আর কৃষকদের বিনিয়োগের দেড়গুণ ন্যূনতম সহায়ক মূল্য দিয়েছি।

 

বন্ধুগণ,

 

আমাদের দেশে কৃষকদের সঙ্গে ধোঁকা দেওয়ার একটা বড় উদাহরণ হল কংগ্রেস সরকারগুলির দ্বারা ঋণ মকুব করা। যখন দু’বছর আগে মধ্যপ্রদেশে বিধানসভা নির্বাচন হওয়ার আগে ঋণ মকুবের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল, বলা হয়েছিল যে সরকার ক্ষমতায় এসে ১০ দিনের মধ্যেই সমস্ত কৃষকদের ঋণ মকুব করে দেবে। একথা বলে ক্ষমতায় আসার পর কতজন কৃষকের ঋণ মকুব হয়েছে, সেটা আপনারাই ভালো জানেন। সরকার গঠনের পর কী কী বাহানা দেওয়া হয়েছিল এটা মধ্যপ্রদেশের কৃষকরা আমার থেকে ভালো করে জানেন। রাজস্থানের লক্ষ লক্ষ কৃষকও আজ পর্যন্ত ঋণ মকুবের অপেক্ষা করছেন। কৃষকদের এত বড় ধোকা যাঁরা দিয়েছেন, আমি আশ্চর্য হই যখন তাঁরাই আমরা কৃষকদের হিতে কিছু করলে রাজনৈতিক স্বার্থে বাধা দিতে নেমে পড়েন। তাঁরা কিভাবে এই পর্যায়ের ছল-কপটের আশ্রয় নিতে পারেন জানি না। আর তাও সহজ-সরল কৃষকদের নামে। কৃষকদের আর কত ধোঁকা দেবে এই মানুষগুলি!

 

বন্ধুগণ,

 

প্রত্যেক নির্বাচনের আগে এই মানুষগুলি ঋণ মকুবের কথা বলে। আর ঋণ মকুব কতটা করা যায়? সমস্ত কৃষকদের কি ঋণ মকুবের আওতায় আনা যায়। যাঁরা ছোট কৃষক তাঁরা কখনও ব্যাঙ্কের দরজাই দেখেননি। যাঁরা কখনও ঋণ নেননি, তাঁদের সম্পর্কে কি কখনও এই মানুষগুলি ভেবেছে? আমার নতুন পুরনো সমস্ত অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, এঁরা যত ঘোষণা করতেন, ততটা ঋণ মকুব কখনও করতেন না। এঁরা যত টাকা কৃষকদের পাঠানোর কথা বলতেন, তত টাকা কখনই কৃষকদের হাতে পৌঁছত না। কৃষকরা ভাবতেন এখন তো সম্পূর্ণ ঋণ মাফ হবে, আর তার পরিবর্তে তাঁরা পেতেন ব্যাঙ্কের নোটিশ এবং গ্রেপ্তারির ওয়ারেন্ট। আর এই ঋণ মকুবের দ্বারা সবচাইতে বেশি কারা লাভবান হতেন? লাভবান হতেন এঁদের ঘনিষ্ঠ লোকেরা, আত্মীয়স্বজনরা। আমার সংবাদমাধ্যমের বন্ধুরা যদি একটু খোঁজখবর করেন তাহলে ৮-১০ বছর আগের প্রতিবেদনে তাঁরা সম্পূর্ণরূপে বাস্তব চিত্রটা পেয়ে যাবেন। এটাই তাঁদের চরিত্র ছিল।

 

কৃষকদের নিয়ে রাজনীতি করা এই মানুষগুলি কখনও তাঁদের জন্য আন্দোলন করেননি, বিক্ষোভ দেখাননি। গত ১০ বছরে হাতেগোনা কয়েকজন বড় কৃষকের এক-দু’বার ঋণ মকুব হয়েছে। এতেই তাঁদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সিদ্ধি হয়ে গেছে। তারপর গরীব কৃষকদের কথা কে আর ভাবে? ভোটব্যাঙ্কের রাজনীতি করা এই মানুষদের এখন দেশবাসী খুব ভালোভাবে চিনে গেছেন। তাঁদের দেখছেন। দেশ গঙ্গাজল এবং মা নর্মদার জলের মতো বিষয় নিয়েও আমাদের পবিত্র ভাবনা দেখছে।  আমাদের ইচ্ছাশক্তিকে দেখছে। এই মানুষেরা ১০ বছরে একবার ঋণ মকুব করে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা দেওয়ার কথা বলেছেন। আমাদের সরকার যে পিএম কিষাণ সম্মান যোজনা শুরু করেছে তাতে প্রতিবছর কৃষকরা প্রায় ৭৫ হাজার কোটি টাকা পাবেন। অর্থাৎ ১০ বছরে প্রায় ৭ লক্ষ ৫০ হাজার কোটি টাকা। কৃষকদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে এই টাকা সরাসরি পৌঁছে দেওয়া হবে। কোনও দালালি নয়, কোনও কমিশন নয়। কাট কালচারের নামগন্ধও থাকবে না।

 

বন্ধুগণ,

 

এখন আমি দেশের কৃষকদের মনে করাতে চাই ইউরিয়ার কথা। মনে করুন ৭-৮ বছর আগে ইউরিয়ার কী অবস্থা ছিল! সারা রাত ধরে কৃষকদের ইউরিয়ার জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হত। এটা ঠিক কিনা? অনেক জায়গা থেকে ইউরিয়ার জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা কৃষকদের ওপর লাঠিচার্জের খবর প্রায়ই আসত। ইউরিয়া নিয়ে প্রচুর কালোবাজারি হত। হত কি হত না? কৃষকদের ফসল সারের অভাবে নষ্ট হয়ে যেত। কিন্তু এই মানুষগুলির হৃদয় গলত না। এটা কি কৃষকদের ওপর অত্যাচার ছিল না? আমি আজ এটা দেখে অত্যন্ত অবাক, যে মানুষগুলির কারণে আজকের এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তাঁরা আজ রাজনীতির স্বার্থে চাষ করতে নেমে পড়েছেন।

 

বন্ধুগণ,

 

ইউরিয়ার সমস্যা নিয়ে আগে কি কোনও সমাধান ছিল না? যদি কৃষকদের দুঃখ, যন্ত্রণা, তাঁদের সমস্যার প্রতি সামান্য সংবেদনশীলতা থাকত তাহলে ইউরিয়া নিয়ে সমস্যাই হওয়ার কথা ছিল না। আমরা এমন কি করেছি যাতে সমস্ত সমস্যা দূর হয়ে গেছে! আজ কোন জায়গা থেকেই ইউরিয়ার সমস্যা নিয়ে খবর আসে না। ইউরিয়ার জন্য কৃষকদের লাঠির মার খেতে হয় না। আমরা কৃষকদের এই সমস্যা দূর করার জন্য সম্পূর্ণ সততার সঙ্গে কাজ করেছি। আমরা কালোবাজারি থামিয়েছি, কড়া পদক্ষেপ নিয়েছি, দুর্নীতির লাগাম টেনেছি, আমরা সুনিশ্চিত করেছি, ইউরিয়া যেন কৃষকের খেতেই যায়। এই মানুষগুলি তাঁদের আমলে কৃষকদের ঋণ ছাড়ের নামে যে টাকা পাঠাতেন, তা দিয়ে কৃষকরা কখনও লাভবান হতেন না। আমরা দুর্নীতির এই যুগলবন্দীও বন্ধ করে দিয়েছি। আমরা ইউরিয়াকে ১০০ শতাংশ নিম আচ্ছাদিত করেছি। দেশের বড় বড় সার কারখানায় যে পদ্ধতিকে পুরনো বলে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল, আমরা সেই প্রক্রিয়া আবার শুরু করে দিয়েছি। আগামী কয়েক বছরে উত্তরপ্রদেশের গোরক্ষপুরে, বিহারের বারাউনিতে, ঝাড়খণ্ডের সিন্ধ্রিতে, ওড়িশার তালচেরে, তেলেঙ্গানার রামাগুন্দামে আধুনিক সার প্রকল্প চালু হবে। ৫০-৬০ হাজার কোটি টাকা শুধু এর পেছনে খরচ করা হচ্ছে। এই আধুনিক সার প্রকল্পগুলি কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে লক্ষ লক্ষ সুযোগ তৈরি করবে, ভারতকে ইউরিয়া উৎপাদনে আত্মনির্ভর করে তুলতে সাহায্য করবে। অন্যান্য দেশ থেকে ইউরিয়া আমদানি-বাবদ ভারতকে যে হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করতে হয় তা হ্রাস করবে।

 

বন্ধুগণ,

 

এই মানুষদের শাসনকালে তাঁদেরকে এই কারখানাগুলি শুরু করতে কেউ বাধা দেয়নি। কেউ বলেনি যে নতুন প্রযুক্তি এনো না। কিন্তু এঁদের কোনও ইচ্ছা ছিল না, নীতি ছিল না, কৃষকদের প্রতি নিষ্ঠাও ছিল না। কৃষকদের মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় আসা, মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিতে থাকা, দুধের সর খেতে থাকা – এসবই এই মানুষগুলির কাজ ছিল।

 

বন্ধুগণ,

 

পুরনো সরকারগুলি যদি কৃষকদের নিয়ে ভাবত, তাহলে দশকের পর দশক ধরে দেশে ১০০টিরও বেশি বড় সেচ প্রকল্প ঝুলে থাকত না। একটা বাঁধ নির্মাণ শুরু হলে তা শেষ হতে ২৫ বছর লাগত না। যেখানে বাঁধ তৈরি হয়েছে সেখানে খাল তৈরি হয়নি, যেখানে খাল তৈরি হয়েছে সেখানে খালগুলিকে পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত করা হয়নি। আর এভাবে সময় এবং টাকা দুটোই নষ্ট করা হয়েছে। এখন আমাদের সরকারকে হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করে সেইসব অসম্পূর্ণ সেচ পরিকল্পনাকে মিশন মোডে বাস্তবায়িত করতে হচ্ছে যাতে আমাদের কৃষকদের প্রত্যেকের খেতে সেচের জল পৌঁছনোর ইচ্ছা বাস্তবায়িত হয়।

 

বন্ধুগণ,

 

কৃষকদের বিনিয়োগের খরচ হ্রাস করার জন্য সরকার নিরন্তর চেষ্টা করে যাচ্ছে। সারা দেশে কৃষকদের অনেক কম দামে সোলার পাম্প প্রদানের অভিযান চালানো হয়েছে। আমরা আমাদের অন্নদাতাদের শক্তিদাতা করে তোলার জন্যও কাজ করছি। তাছাড়া আমাদের সরকার শস্য উৎপাদনকারী কৃষকদের পাশাপাশি মৌ-পালন, পশুপালন এবং মৎস্যচাষের জন্য ততটাই উৎসাহ জোগাচ্ছে। পূর্ববর্তী সরকারের সময় দেশে মধু উৎপাদন হত প্রায় ৭৬ হাজার মেট্রিক টন। এখন দেশে ১ লক্ষ ২০ হাজার মেট্রিক টনেরও বেশি মধু উৎপাদিত হচ্ছে। দেশের কৃষকরা পূর্ববর্তী সরকারের সময় যত পরিমাণ মধু রপ্তানি করতেন, আজ তার দ্বিগুণ মধু রপ্তানি করছেন।

 

বন্ধুগণ,

 

বিশেষজ্ঞরা বলেন যে, কৃষিতে মৎস্যচাষ এমন একটি ক্ষেত্র যা কম বিনিয়োগে সবচাইতে বেশি লাভজনক হয়। মৎস্যচাষকে উৎসাহ জোগানোর জন্য আমাদের সরকার নীল বিপ্লব প্রকল্প চালু করেছে। কিছুক্ষণ আগেই ২০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগে ‘প্রধানমন্ত্রী মৎস্য সম্পদা যোজনা’ চালু করা হয়েছে। এই প্রচেষ্টাগুলিরই সুফল হল দেশে মৎস্য উৎপাদনে বিগত সমস্ত রেকর্ড ভেঙে গেছে। এখন দেশ আগামী ৩-৪ বছরে মৎস্য রপ্তানিতে ১ লক্ষ কোটি টাকারও বেশি লাভের লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে।

 

ভাই ও বোনেরা,

 

আমাদের সরকার যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে, আমাদের রাজ্য সরকারগুলি যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে, আপনারা আজ নিজের চোখেই দেখছেন, মধ্যপ্রদেশ সরকার কৃষকদের কল্যাণে যেসব পদক্ষেপ নিচ্ছে তা সম্পূর্ণরূপে কৃষকদের প্রতি সমর্পিত। আমি যদি সেইসব পদক্ষেপের তালিকা তুলে ধরতে যাই তাহলে অনেকক্ষণ লাগবে। কিন্তু আমি কিছু উদাহরণ দিয়েছি যাতে আপনারা আমাদের সরকারের ইচ্ছাশক্তিকে যাচাই করতে পারেন, আমাদের ট্র্যাক রেকর্ড দেখতে পারেন, আমাদের সদিচ্ছাকে বুঝতে পারেন। আর এই ভিত্তিতে আমি প্রত্যয়ের সঙ্গে বলছি, আমরা সম্প্রতি যে কৃষি সংস্কার করেছি, সেগুলিতে অবিশ্বাসের কোনও কারণ নেই, মিথ্যার জন্য কোনও জায়গা নেই। আমি এখন আপনাদের কৃষি সংস্কারের পর বলা সব থেকে বড়ো মিথ্যা সম্পর্কে বলতে চাই। বারবার সেই মিথ্যাটিকে পুনরাবৃত্তি করা হচ্ছে, আর চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে বলা হচ্ছে। যেখানে সুযোগ পাচ্ছেন তাঁরা বলছেন, কোনও মাথা-মুন্ডু ছাড়াই বলছেন।

 

আমি যেমন আগে বলেছিলাম, স্বামীনাথন কমিটির রিপোর্ট বাস্তবায়িত করার কাজই তো আমাদের সরকার করেছে। আমাদের যদি ন্যূনতম সহায়ক মূল্য সরাতেই হত, তাহলে স্বামীনাথন কমিটির রিপোর্ট বাস্তবায়িত কেন করতাম? আপনারাও করেননি, আমরাও করতাম না। আমরা তো এরকম করিনি। আমরা বাস্তবায়িত করেছি। আমাদের সরকারই ন্যূনতম সহায়ক মূল্যকে এতটা গুরুত্ব দিচ্ছে। প্রত্যেকবার বীজ বপনের আগেই ন্যূনতম সহায়ক মূল্য ঘোষণা করা হয়। এতে কৃষকদেরও সুবিধা হয়। তাঁরাও আগেই জেনে যান যে অমুক ফসলে কতটা ন্যূনতম সহায়ক মূল্য পাওয়া যাবে। এতে তাঁরা চাষের ক্ষেত্রে যদি কিছু পরিবর্তন করতে চান সেটা করতে পারেন।

 

বন্ধুগণ,

 

এই আইন চালু হওয়ার পর ছয় মাস পেরিয়ে গেছে। আইন চালু হওয়ার পরেও যদি ন্যূনতম সহায়ক মূল্য ঘোষণা হয়, ন্যূনতম সহায়ক মূল্য অনুসারে সরকার ফসল কেনে, সেই মান্ডিগুলি থেকেই কেনে, তাহলে কি কোনও বিচক্ষণ মানুষ একথা মানবেন যে ন্যূনতম সহায়ক মূল্য বন্ধ হবে? সেজন্য আমি বলি, এর থেকে বড় মিথ্যা আর কিছু হতে পারে না! এর থেকে বড় কোনও ষড়যন্ত্র হতে পারে না। আর সেজন্য আমি দেশের প্রত্যেক কৃষককে আশ্বস্ত করছি, আগে যেভাবে ন্যূনতম সহায়ক মূল্য দেওয়া হত, এখনও সেভাবেই দেওয়া হবে। ন্যূনতম সহায়ক মূল্য বন্ধ হবে না, বাতিলও হবে না।

 

বন্ধুগণ,

 

এখন আমি আপনাদের যে পরিসংখ্যান দিচ্ছি তা আপনাদের সামনে সব পরিষ্কার করে দেবে। বিগত সরকারের সময় গমের ওপর ন্যূনতম সহায়ক মূল্য ছিল কুইন্টালপ্রতি ১,৪০০ টাকা। আমাদের সরকার কুইন্টালপ্রতি গমে ন্যূনতম সহায়ক মূল্য ১,৯৭৫ টাকা দিচ্ছে। বিগত সরকারের সময় ধানের ওপর ন্যূনতম সহায়ক মূল্য ছিল কুইন্টালপ্রতি ১,৩১০ টাকা। আমাদের সরকার কুইন্টালপ্রতি ধানে ন্যূনতম সহায়ক মূল্য ১,৮৭০ টাকা দিচ্ছে। বিগত সরকারের সময় জোয়ারের ওপর ন্যূনতম সহায়ক মূল্য ছিল কুইন্টালপ্রতি ১,৫২০ টাকা। আমাদের সরকার কুইন্টালপ্রতি জোয়ারে ন্যূনতম সহায়ক মূল্য ২,৬৪০ টাকা দিচ্ছে। বিগত সরকারের সময় মুসুর ডালের ওপর ন্যূনতম সহায়ক মূল্য ছিল কুইন্টালপ্রতি ১,৯৫০ টাকা। আমাদের সরকার কুইন্টালপ্রতি মুসুর ডালে ন্যূনতম সহায়ক মূল্য ৫,১০০ টাকা দিচ্ছে। বিগত সরকারের সময় ছোলার ওপর ন্যূনতম সহায়ক মূল্য ছিল কুইন্টালপ্রতি ৩,১০০ টাকা। আমাদের সরকার কুইন্টালপ্রতি ছোলাতে ন্যূনতম সহায়ক মূল্য ৫,১০০ টাকা দিচ্ছে। বিগত সরকারের সময় অড়হর ডালের ওপর ন্যূনতম সহায়ক মূল্য ছিল কুইন্টালপ্রতি ৪,৩০০ টাকা। আমাদের সরকার কুইন্টালপ্রতি অড়হর ডালে ন্যূনতম সহায়ক মূল্য ৬,০০০ টাকা দিচ্ছে। বিগত সরকারের সময় মুগ ডালের ওপর ন্যূনতম সহায়ক মূল্য ছিল কুইন্টালপ্রতি ৪,৫০০ টাকা। আমাদের সরকার কুইন্টালপ্রতি মুগ ডালে ন্যূনতম সহায়ক মূল্য ৫,২০০ টাকা দিচ্ছে।

 

বন্ধুগণ,

 

এটা প্রমাণ করে যে আমাদের সরকার সময়ের সঙ্গে ন্যূনতম সহায়ক মূল্য বৃদ্ধিকে কতটা গুরুত্ব দেয়। ন্যূনতম সহায়ক মূল্য বাড়ানোর পাশাপাশি সরকার এ বিষয়েও জোর দিয়েছে যাতে যত বেশি সম্ভব শস্য ন্যূনতম সহায়ক মূল্যে কেনা যায়। বিগত সরকারের সময় মুগ ডালের ওপর ন্যূনতম সহায়ক মূল্য ছিল কুইন্টালপ্রতি ৪,৫০০ টাকা। আমাদের সরকার কুইন্টালপ্রতি মুগ ডালে ন্যূনতম সহায়ক মূল্য ৫,২০০ টাকা দিচ্ছে। বিগত সরকার তাদের পাঁচ বছরে কৃষকদের থেকে প্রায় ১,৭০০ লক্ষ মেট্রিক টন ধান কিনেছিল। এই পরিসংখ্যান মনে রাখবেন। আমাদের সরকার পাঁচ বছরে ৩,০০০ লক্ষ মেট্রিক টন ধান কৃষকদের থেকে ন্যূনতম সহায়ক মূল্যে কিনেছে। অর্থাৎ, প্রায় দ্বিগুণ। বিগত সরকার তাদের পাঁচ বছরে প্রায় ৩ লক্ষ ৭৫ হাজার মেট্রিক টন তিল কিনেছিল, আমাদের সরকার পাঁচ বছরে ৫৬ লক্ষ মেট্রিক টনেরও বেশি তিল ন্যূনতম সহায়ক মূল্যে কৃষকদের থেকে কিনেছে। এখন ভাবুন, কোথায় ৩ লক্ষ ৭৫ হাজার আর কোথায় ৫৬ লক্ষ। অর্থাৎ আমাদের সরকার শুধুই ন্যূনতম সহায়ক মূল্য বাড়ায়নি, কৃষকদের থেকে বেশি মাত্রায় তাঁদের উৎপাদিত ফসল ন্যূনতম সহায়ক মূল্য দিয়ে কিনেছে। এর মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি লাভবান হয়েছেন কৃষকরাই। তাঁদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে আগের তুলনায় অনেক বেশি টাকা পৌঁছেছে। পূর্ববর্তী পাঁচ বছরে ধান এবং গম ন্যূনতম সহায়ক মূল্যে কেনার পরিবর্তে ৩ লক্ষ ৭৪ হাজার কোটি টাকা দিয়েছিল। আমাদের সরকার এই সময়ের মধ্যেই গম ও ধান কিনে কৃষকদের ৮ লক্ষ কোটি টাকা দিয়েছে।

 

বন্ধুগণ,

 

রাজনীতির জন্য কৃষকদের ব্যবহারকারীরা তাঁদের সঙ্গে কী ব্যবহার করেছে এর আরেকটি উদাহরণ হল ডাল চাষ। ২০১৪-র কথা মনে করুন। তখন কিরকম ডালের সঙ্কট ছিল। দেশে ডাল নিয়ে হাহাকার শুরু হয়েছিল। বিদেশ থেকে ডাল আমদানি করা হত। প্রত্যেক রান্নাঘরে খরচ ডালের ক্রমবর্ধমানে দামের ফলে দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছিল। যে দেশে বিশ্বের সবচাইতে বেশি ডালের চাহিদা রয়েছে, সে দেশে ডাল উৎপাদনকারী কৃষকদের সর্বনাশ করতে তাঁরা কোনভাবেই পিছিয়ে ছিল না। কৃষকরা ব্যতিব্যস্ত ছিলেন, আর তাঁরা আনন্দ পাচ্ছিলেন। অন্য দেশ থেকে ডাল আমদানি করেই তাঁরা আনন্দ পাচ্ছিলেন। হ্যাঁ, কখনও প্রাকৃতিক বিপর্যয় এলে বা অন্য কোন সঙ্কট এসে গেলে বিদেশ থেকে ডাল আমদানি করা যেতে পারে, যাতে দেশের নাগরিকরা ক্ষুধার্ত না থাকেন। কিন্তু সবসময়ই কেন আনাতে হবে?

 

বন্ধুগণ,

 

এই মানুষেরা ডালের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য বেশি দিতেন না, আবার বেশি কিনতেনও না। সমস্যা এটাই ছিল, ২০১৪-র আগের পাঁচ বছরে, তাঁদের পাঁচ বছরে তাঁরা মাত্র ১ লক্ষ ৫০ হাজার মেট্রিক টন ডালই কৃষকদের কাছ থেকে কিনেছে, এই পরিসংখ্যানও মনে রাখবেন। মাত্র ১ লক্ষ ৫০ হাজার মেট্রিক টন ডাল যখন ২০১৪ সালে আমাদের সরকার ক্ষমতায় আসে তখন আমরা নীতি পরিবর্তন করি এবং বড় সিদ্ধান্ত নিই। আমরা কৃষকদের ডাল উৎপাদনে উৎসাহিত করি।

 

ভাই ও বোনেরা,

 

আমাদের সরকার পাঁচ বছরে কৃষকদের থেকে আগের তুলনায় অনেক বেশি, ১১২ লক্ষ মেট্রিক টন, আবার বলছি, ১১২ লক্ষ মেট্রিক টন ডাল ন্যূনতম সহায়ক মূল্যে কিনেছে। ভাবুন, ১ লক্ষ ৫০ হাজার তাঁদের সময়ে, সেখান থেকে আমরা সোজা পৌঁছে দিয়েছি ১১২ লক্ষ মেট্রিক টনে। তাঁরা নিজেদের পাঁচ বছরে ডাল চাষীদের, ডাল উৎপাদনকারী কৃষকদের ৬৫০ কোটি টাকা দিয়েছে। আমাদের সরকার দিয়েছে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা। আজ ডাল চাষীরা অনেক বেশি টাকা পাচ্ছেন। ডালের দামও কমেছে। এর মাধ্যমে গরীবরাও উপকৃত হয়েছেন। যাঁরা কৃষকদের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য দিতে পারেননি, আজ তাঁরাই ন্যূনতম সহায়ক মূল্য নিয়ে কৃষকদের বিভ্রান্ত করছেন।

 

বন্ধুগণ,

 

কৃষি সংস্কার নিয়ে আরেকটি গুজব রটানো হচ্ছে। এপিএমসি অর্থাৎ, আমাদের মান্ডিগুলি নিয়ে। আমরা আইনে কী করেছি? আমরা আইনে কৃষকদের স্বাধীনতা দিয়েছি, নতুন বিকল্প দিয়েছি। যদি দেশে কেউ সাবান বেচতে চান, তাহলে সরকার এটা ঠিক করে না যে শুধু তাঁরা দোকানেই বেচতে পারেন। কেউ যদি স্কুটার বিক্রি করতে চান, সরকার এটা ঠিক করে দেয় না যে শুধুই অমুক ডিলারকে বিক্রি করতে হবে। কিন্তু বিগত ৭০ বছর ধরে সরকার কৃষকদের বলে আসছে যে আপনারা কেবল অমুক মান্ডিতেই আপনাদের উৎপাদিত শস্য বিক্রি করতে পারেন। মান্ডি ছাড়া কৃষকরা চাইলেও তাঁদের ফসল অন্যত্র বেচতে পারতেন না। নতুন আইনে আমরা শুধু এটাই বলেছি যে কৃষকরা যদি লাভ দেখেন তাহলে আগের মতোই গিয়ে মান্ডিতে বেচবেন, আর যদি বাইরে বেশি লাভবান হন তাহলে তাঁদের মান্ডির বাইরে বিক্রি করার অধিকার পাওয়া উচিৎ। তাঁদের ইচ্ছা, গণতন্ত্রে আমাদের কৃষকদের ভাইদের কি এটুকু অধিকার থাকতে পারে না?

 

এখন কৃষকরা যেখানে লাভ পাবেন, সেখানেই তাঁদের উৎপাদিত ফসল বেচবেন। মান্ডিও চালু আছে, চাইলে মান্ডিতেও বিক্রি করতে পারেন। কৃষকদের ইচ্ছামতো করবেন। নতুন আইনে কৃষকরা নিজেদের লাভ দেখে উৎপাদিত ফসল বিক্রি করতে শুরুও করে দিয়েছেন। সম্প্রতি এক জায়গায় ধান চাষিরা মিলে একটি চাল কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করেছেন, ফলে তাঁদের রোজগার ২০ শতাংশ বেড়েছে। আর এক জায়গায় ১ হাজার আলু চাষি মিলে একটি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করেছেন, এই কোম্পানি তাঁদের বিনিয়োগের তুলনায় ৩৫ শতাংশ অধিক অর্থের গ্যারান্টি দিয়েছে। অন্য এক জায়গার খবর আমি পড়ছিলাম। এক কৃষক তাঁর খেতের লঙ্কা এবং কলা সরাসরি বাজারে বিক্রি করায় আগের থেকে দ্বিগুণ দাম পেয়েছেন। আপনারা আমাকে বলুন, দেশের প্রত্যেক কৃষকের এই লাভ ও এই অধিকার পাওয়া উচিৎ কিনা? কৃষকদের শুধু মান্ডিতেই সীমাবদ্ধ রেখে বিগত দশকগুলিতে যে পাপ করা হয়েছে, এই কৃষি সংস্কার আইন তার প্রায়শ্চিত্ত করছে। আমি আরেকবার পুনরাবৃত্তি করছি, নতুন আইন ছয় মাস আগেই বাস্তবায়িত হয়েছে। ভারতের কোনও প্রান্তে কোথাও একটা মান্ডিও বন্ধ হয়নি। তাহলে কেন এই গুজব রটানো হচ্ছে? বাস্তব তো এটাই যে আমাদের সরকার এপিএমসি-কে আধুনিক করে তুলতে, সেগুলিকে কম্পিউটারাইজড করে তুলতে ৫০০ কোটি টাকারও বেশি খরচ করছে। তাহলে এই এপিএমসি বন্ধ করার কথা কোথা থেকে এল? কোনও মাথা-মুন্ডু ছাড়া মিথ্যা রটানো, বারবার বলা!

 

বন্ধুগণ,

 

নতুন কৃষি আইন নিয়ে  তৃতীয় বড় গুজব হল কৃষি চুক্তি নিয়ে। দেশে কৃষি চুক্তি কোনও নতুন বিষয় নয়। আমরা কি হঠাৎ কোন আইন প্রণয়ন করে কৃষি চুক্তি চালু করেছি? একদমই না। আমাদের দেশে অনেক বছর ধরেই কৃষি চুক্তির ব্যবস্থা চলছে। একটা দুটো নয়, অনেক রাজ্যেই আগে থেকে কৃষি চুক্তি চলছে। সম্প্রতি কেউ আমাকে ২০১৯ সালের ৮ মার্চের একটি সংবাদপত্রের প্রতিবেদন পাঠিয়েছেন। এতে পাঞ্জাবের কংগ্রেস সরকার কৃষকদের সঙ্গে একটি বহুজাতিক সংস্থার ৮০০ কোটি টাকার কৃষি চুক্তি নিয়ে আনন্দ উদযাপন করছে, তাকে স্বাগত জানাচ্ছে। আমার পাঞ্জাবের কৃষক ভাই-বোনেদের কৃষিতে যথাসম্ভব বিনিয়োগ হবে এটা আমাদের সরকারের জন্যও অত্যন্ত আনন্দের বিষয়।

 

বন্ধুগণ,

 

দেশে কৃষি চুক্তি সংক্রান্ত যেসব ব্যবস্থা ছিল, সেগুলিতে কৃষকদের জন্য অনেক ঝুঁকি ছিল। নতুন আইনে আমাদের সরকার কৃষি চুক্তির সময় কৃষকদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে আইনি ব্যবস্থা করেছে। আমরা ঠিক করেছি, কৃষি চুক্তিতে সবচাইতে বেশি লাভ কৃষকদেরই হবে। আমরা আইনে সুনিশ্চিত করেছি যাতে কৃষকদের চুক্তি সম্পাদনকারীরা আর নিজেদের দায়িত্ব এড়াতে পারবে না। কৃষককে যে প্রতিশ্রুতি দেবে, তা সেই স্পনসরকে পূরণ করতেই হবে। নতুন কৃষি আইন চালু হওয়ার পর কত না উদাহরণ সামনে আসছে যেখানে কৃষকরা স্থানীয় এসডিএম-এর কাছে অভিযোগ করেছেন, আর অভিযোগের কিছুদিনের মধ্যেই কৃষকরা নিজেদের বকেয়া পেয়েছেন।

 

বন্ধুগণ,

 

কৃষি চুক্তিতে শুধু ফসল নিয়ে চুক্তি হয়। জমি কৃষকদের কাছেই থাকে। চুক্তির সঙ্গে জমির কোনও সম্পর্ক নেই। প্রাকৃতিক বিপর্যয় এলেও চুক্তি অনুযায়ী কৃষকরা পুরো পয়সা পাবেন। নতুন আইন অনুযায়ী যদি হঠাৎ চুক্তি হয়ে যাওয়ার পর যিনি অংশীদার, যিনি বিনিয়োগ করেছেন, তাঁর হঠাৎ লাভ বৃদ্ধি পায়, তখন এই আইনে এমন ব্যবস্থা আছে যে তাঁর বাড়তি লাভ থেকে একটা অংশ কৃষককেও দিতে হবে।

 

বন্ধুগণ,

 

চুক্তি করবেন কি করবেন না, তার কোনও বাধ্যবাধকতা নেই। এটা কৃষকের ইচ্ছা। কৃষক চাইলে করবেন, না চাইলে করবেন না। কিন্তু কেউ যেন কৃষকের সঙ্গে কোনও বেইমানি না করতে পারে, কৃষকের সারল্যের সুযোগ না নিতে পারে, সেজন্য আইনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। নতুন আইনগুলি এক্ষেত্রে ভীষণ কড়া। স্পনসরদের জন্য কড়া, কৃষকদের জন্য নয়। স্পনসরদের চুক্তি বাতিল করার কোনও অধিকার নেই। তাঁরা যদি চুক্তি বাতিল করেন, তাহলে কৃষকদের জরিমানা দিতে হবে। কিন্তু সেই চুক্তি যদি কৃষক বাতিল করতে চান, যে কোনও সময় কোনও জরিমানা না দিয়েই কৃষকরা সেই সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। রাজ্য সরকারগুলির প্রতি আমার উপদেশ যে সহজ ভাষায়, সহজ পদ্ধতিতে বোঝা যায় এমন একটা কৃষি চুক্তির খসড়া বানিয়ে কৃষকদের হাতে তুলে দেওয়া হোক যাতে কেউ কৃষকদের ঠকাতে না পারে।

 

বন্ধুগণ,

 

আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে, সারা দেশে কৃষকরা শুধু নতুন কৃষি সংস্কারকে আপন করেই নেননি, তাঁরা যারা বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন, তাঁদেরকে সরাসরি নস্যাৎ করছেন। যে কৃষকদের মনে এখনও সামান্যতম আশঙ্কা রয়েছে, তাঁদেরকে বলব আপনারা আরেকবার ভাবুন, যা হয়ইনি, যা হবেই না, সেজন্য ভ্রম এবং ভয় ছড়ানো ব্যক্তিদের থেকে আপনারা সতর্ক থাকুন। এমন লোকেদের চিনুন। এঁরা সর্বদাই কৃষকদের ধোকা দিয়েছেন। তাঁদেরকে ব্যবহার করেছেন, আর আজও তাই করছেন। আমার এই বক্তব্যের পরও, সরকারের এই প্রচেষ্টার পরও যদি কারোর মনে কোনও আশঙ্কা থাকে তাহলে আমরা মাথা নত করে, কৃষক ভাইদের সামনে হাতজোড় করে অত্যন্ত বিনম্রতার সঙ্গে দেশের কৃষকদের ভালোর জন্য, তাঁদের দুশ্চিন্তা দূর করতে প্রত্যেক বিষয় কথা বলতে প্রস্তুত। দেশের কৃষক, দেশের কৃষকদের হিত আমাদের জন্য অন্যতম সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার।

 

বন্ধুগণ,

 

আজ আমি অনেক কথা বিস্তারিত বলেছি, অনেক বিষয়ে প্রকৃত চিত্র দেশের সামনে তুলে ধরেছি। আগামী ২৫ ডিসেম্বর, শ্রদ্ধেয় অটলজির জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে আরেকবার এই বিষয়ে দেশের কৃষকদের সঙ্গে বিস্তারিত কথা বলব। সেদিন ‘পিএম কিষাণ সম্মান নিধি’র আরেকটি কিস্তি কয়েক কোটি কৃষকের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে একসঙ্গে ট্রান্সফার করা হবে। ভারতের কৃষকরা পরিবর্তিত সময়ের সঙ্গে চলার জন্য, আত্মনির্ভর ভারত গড়ে তোলার জন্য আমার দেশের কৃষকরা এগিয়ে চলেছেন।

 

নতুন সঙ্কল্প নিয়ে, নতুন পথে আমরা এগিয়ে যাব এবং এই দেশ অবশ্যই সফল হবে। এ দেশের কৃষকরাও সফল হবেন, এই বিশ্বাস নিয়ে আমি আরেকবার মধ্যপ্রদেশ সরকারকে অভিনন্দন জানিয়ে, আজ মধ্যপ্রদেশের লক্ষ লক্ষ কৃষকদের সঙ্গে আমার কথা বলার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য সবাইকে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে আরেকবার আপনাদের সবাইকে অনেক অনেক শুভকামনা জানাই।

 

অনেক অনেক ধন্যবাদ।

 

***

 

 

CG/SB/DM