Search

পিএমইন্ডিয়াপিএমইন্ডিয়া

সাম্প্রতিক সংবাদ

বিষয়টিকে সরাসরি পিআইবি থেকে নেওয়া হয়েছে

সপ্তম কেন্দ্রীয় বেতন কমিশনের সুপারিশ কার্যকর করার সিদ্ধান্ত কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার


সপ্তম কেন্দ্রীয় বেতন কমিশনের সুপারিশগুলি অনুমোদিত হল কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠকে। প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে আজ কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মীদের বেতন ও ভাতা বৃদ্ধি সম্পর্কিত সুপারিশগুলি রূপায়ণের বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। সুপারিশগুলি কার্যকর হবে এ বছরের ১ জানুয়ারি থেকে। সুপারিশ রূপায়ণের ফলে উপকৃত হবেন কেন্দ্রীয় সরকারের পেনশন গ্রহীতারাও।

অতীতে পঞ্চম কেন্দ্রীয় বেতন কমিশনের সুপারিশ কার্যকর হওয়ার জন্য কর্মীদের অপেক্ষা করতে হয়েছিল ১৯ মাস। তাঁদের ৩২ মাস অপেক্ষা করতে হয়েছিল ষষ্ঠ বেতন কমিশনের সুপারিশ রূপায়ণের জন্য। তবে এবার সুপারিশের নির্দিষ্ট তারিখ থেকে মাত্র ছ’মাসের মধ্যে কার্যকর হতে চলেছে সপ্তম কেন্দ্রীয় বেতন কমিশনের প্রস্তাবগুলি।

সুপারিশগুলি কার্যকর করার ফলে কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মী ও পেনশন গ্রহীতাদের যে বকেয়া অর্থ প্রাপ্য হবে তা চলতি অর্থ বছরের মধ্যেই মিটিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা। অতীতে দুটি অর্থ বছরে মেটানো হত কর্মী ও পেনশন গ্রহীতাদের প্রাপ্য বকেয়া অর্থ।

বেতন কমিশনের এই সুপারিশ কার্যকর হওয়ার ফলে উপকৃত হবেন ৪৭ লক্ষ কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মী এবং ৫৩ লক্ষ পেনশন গ্রহীতা। এঁদের মধ্যে আবার রয়েছেন প্রতিরক্ষা বাহিনীর ১৪ লক্ষ কর্মী এবং ১৮ লক্ষ পেনশন গ্রহীতা।

বেতন কমিশনের সুপারিশ কার্যকর করার ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্তের এক ঝলক:

1. বর্তমানের পে-ব্যান্ড এবং গ্রেড পে প্রথা তুলে দিয়ে চালু হচ্ছে এক নতুন পে-ম্যাট্রিক্স। এতদিন পর্যন্ত গ্রেড পে-র ভিত্তিতে কর্মীদের পদমর্যাদার বিষয়টি স্থির করা হত। এখন থেকে তা পে-ম্যাট্রিক্সের ভিত্তিতে নিরূপণ করা হবে। অসামরিক ও প্রতিরক্ষা কর্মীদের জন্য পৃথক পৃথক পে-ম্যাট্রিক্স চালুর প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়েছে। মিলিটারি নার্সিং সার্ভিসের ক্ষেত্রেও অনুসরণ করা হবে আরেকটি পে-ম্যাট্রিক্স।

2. নতুন বেতন কাঠামোয় বর্তমানের সবক’টি স্তর ও পর্যায়কে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। পে-ম্যাট্রিক্সের প্রতিটি পর্যায়ে ন্যূনতম বেতন নির্ধারণের ক্ষেত্রে সূচককে আরও বাস্তবমুখী করে তোলা হবে।

3. কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মীদের ন্যূনতম বেতন ৭ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে করা হয়েছে ১৮ হাজার টাকা। এর ফলে, সরকারি চাকরির সর্বনিম্ন পর্যায়ে ঢুকেই একজন কর্মীর বেতন শুরু হবে ১৮ হাজার টাকা থেকে। অন্যদিকে, প্রথম শ্রেণীর একজন আধিকারিক তাঁর চাকরি জীবন শুরু করবেন ৫৬,১০০ টাকা বেতনের মধ্য দিয়ে।

4. বেতন ও পেনশন সংশোধনের উদ্দেশ্যে পে-ম্যাট্রিক্সের সকল পর্যায়ে ২.৫৭ – এই ফিটমেন্ট ফ্যাক্টরটিকে কাজে লাগানো হবে। বর্তমান হারে যে মহার্ঘ ভাতা দেওয়া হচ্ছে তা ধরে সকল কর্মচারী ও পেনশনভোগীদের আর্থিক সুবিধা বাড়বে ১.১.২০১৬ তারিখে কমপক্ষে ১৪.২৯ শতাংশ।

5. কর্মীদের বার্ষিক ইনক্রিমেন্টের হার ৩ শতাংশে অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে।

6. প্রতিরক্ষা বাহিনীর জন্য পে-ম্যাট্রিক্সকে আরও উন্নত ও বাস্তবমুখী করে তোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা।

7. প্রতিরক্ষা এবং সংযুক্ত সশস্ত্র পুলিশ বাহিনীর কর্মী সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অন্যান্য সিদ্ধান্তগুলির মধ্যে রয়েছে :

· গ্র্যাচ্যুইটির মাত্রা ১০ লক্ষ টাকা থেকে বাড়িয়ে করা হচ্ছে ২০ লক্ষ টাকা। মহার্ঘ ভাতার হার ৫০ শতাংশ বাড়লে কর্মীদের প্রাপ্য গ্র্যাচ্যুইটির ঊর্ধ্বসীমাও ২৫ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে।

· অসামরিক এবং প্রতিরক্ষা কর্মীদের এক্সগ্র্যাশিয়ার পরিমাণও বাড়ানো হয়েছে। এর আওতায় বিভিন্ন পর্যায়ে সংশ্লিষ্ট কর্মীদের নিকটাত্মীয়কে প্রদেয় এক্সগ্র্যাশিয়ার পরিমাণ ১০-২০ লক্ষ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২৫-৪৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত করা হয়েছে।

· মিলিটারি সার্ভিস পে ১,০০০, ২,০০০, ৪,২০০ এবং ৬,০০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে করা হচ্ছে যথাক্রমে ৩,৬০০, ৫,২০০, ১০,৮০০ এবং ১৫,৫০০ টাকা।

· শর্ট সার্ভিস কমিশনের আধিকারিকদের চাকরি জীবনের ৭-১০ বছরের মধ্যে অবসর গ্রহণের অনুমতি দেওয়া হবে। এজন্য তাঁদের টার্মিনাল গ্র্যাচ্যুইটির পরিমাণ দাঁড়াবে চাকরি জীবনের ভিত্তিতে ১০.৫ মাসের হিসেবে।

· হসপিটাল লিভ, স্পেশাল ডিস্যাবিলিটি লিভ এবং সিক লিভকে একত্রিত করে ওয়ার্ক রিলেটেড ইলনেস অ্যান্ড ইঞ্জুরি লিভ (ডব্ল্যআরআইআইএল) হিসেবে গণ্য করা হবে। এই ছুটির আওতায় সংশ্লিষ্ট কর্মী যতদিন হাসপাতালে ভর্তি থাকবেন ততদিন পুরো বেতন ও ভাতা পাওয়ার অধিকারী হবেন তিনি।

8. কমিশনের সুপারিশ মেনে গৃহ নির্মাণ খাতে কর্মীদের আবেদনের ভিত্তিতে গৃহ নির্মাণের জন্য অগ্রিমের পরিমাণ ৭ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা থেকে ২৫ লক্ষ টাকায় উন্নীত করারও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা। কর্মীদের যাতে অসুবিধায় পড়তে না হয় সেজন্য চিকিৎসা, সরকারি কাজে সফর/বদলি, মৃত কর্মীর পরিবারের জন্য সফর ভাতা এবং এলটিসি – এই চারটি সুদমুক্ত অগ্রিম দেওয়ার ব্যবস্থা চালু রাখা হচ্ছে।

9. সরকারি কর্মচারীদের সমষ্টি বিমা প্রকল্পের আওতায় মাসিক অবদান বৃদ্ধির যে সুপারিশ করেছিল সপ্তম কেন্দ্রীয় বেতন কমিশন তা গ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা। এর ফলে, এই বিমা প্রকল্পের আওতায় কর্মচারীদের প্রদেয় মাসিক অবদানের হার অপরিবর্তিত রাখা হবে। এর ফলে, নিচের পর্যায়ের কর্মীরা আরও বেশি পরিমাণ বেতনের অর্থ বাড়ি নিয়ে যেতে পারবেন। তবে, কর্মীদের সামাজিক সুরক্ষার প্রয়োজনের কথা বিবেচনা করে কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মীদের স্বল্প প্রিমিয়ামে বড় ধরনের ঝুঁকির কভার সমেত একটি সমষ্টি বিমা প্রকল্পের খুঁটিনাটি স্থির করার জন্য বলা হয়েছে কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রককে।

10. পেনশন সহ অন্যান্য সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রগুলিতে কমিশনের সাধারণ সুপারিশগুলিতে সম্মতি দিয়েছে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা। পেনশন সংশোধনের ক্ষেত্রে যে দুটি বিকল্প ব্যবস্থার কথা সুপারিশ করেছিল কমিশন তাও গ্রহণ করা হয়েছে। দ্বিতীয় বিকল্প হিসেবে ২.৫৭ ফিটমেন্ট ফ্যাক্টরের ভিত্তিতে পেনশন সংশোধনের যে প্রস্তাব পেশ করা হয়েছিল কমিশনের পক্ষ থেকে তা অবিলম্বে কার্যকর হবে। বেতন সংশোধনের প্রথম ফর্মুলাটি কার্যকর করার ক্ষেত্রে একটি কমিটি গঠন করা হবে। এই ফর্মুলা অনুযায়ী যদি পেনশন সংশোধনের বিষয়টি কার্যকর করা সম্ভবপর বলে বিবেচনা করা হয় তবে সেটিকে গ্রহণ করা হতে পারে। চার মাসের মধ্যে এ সম্পর্কিত একটি রিপোর্ট পেশ করার কথা বলা হবে প্রস্তাবিত কমিটিকে।

11. বর্তমানে যে ১৯৬ ধরনের ভাতা কর্মীদের দেওয়া হয় তাকে আরও বাস্তবমুখী করে তুলতে ৫১টি ভাতা পুরোপুরি তুলে দিয়ে অন্য ৩৭টি ভাতা মিলিয়ে দেওয়ার সুপারিশ করেছিল সপ্তম বেতন কমিশন। এ ব্যাপারে কমিশনের এই সুপারিশ পরীক্ষা করে দেখার জন্য কেন্দ্রীয় অর্থ সচিবের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা। নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে চার মাসের মধ্যে রিপোর্ট পেশ করতে হবে এই কমিটিকে। এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে পর্যন্ত বর্তমানের সমস্ত ভাতা চালু রাখা হবে বর্তমান হারে।

12. দুটি পৃথক কমিটি গঠনেরও সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা। এর প্রথমটির কাজ হবে জাতীয় পেনশন ব্যবস্থাকে (এনপিএস) সংহত ও রূপায়িত করার পন্থা-পদ্ধতি উদ্ভাবন করা। কমিশনের সুপারিশ কার্যকর করার ক্ষেত্রে কোনরকম বৈষম্য ঘটলে সে সম্পর্কে চিন্তাভাবনা করে রিপোর্ট পেশ করার দায়িত্ব দেওয়া হবে দ্বিতীয় কমিটিকে।

13. বেতন ও পেনশন সহ বিভিন্ন সুপারিশ অনুমোদন ছাড়াও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য প্রশাসনিক বিষয় মন্ত্রক পর্যায়ে খতিয়ে দেখা হবে বলেও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে মন্ত্রিসভার পক্ষ থেকে।

14. সপ্তম কেন্দ্রীয় বেতন কমিশনের সুপারিশগুলি কার্যকর করতে ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে সরকারের অতিরিক্ত ব্যয় হবে ১,০২,১০০ কোটি টাকা। ২০১৫-১৬ অর্থ বছরের দুটি মাসের বকেয়া প্রাপ্য মেটাতে এজন্য খরচ হবে আরও ১২,১৩৩ কোটি টাকা।