Search

পিএমইন্ডিয়াপিএমইন্ডিয়া

সাম্প্রতিক সংবাদ

বিষয়টিকে সরাসরি পিআইবি থেকে নেওয়া হয়েছে

দেশজুড়ে ২১ দিন সম্পূর্ণ প্রতিরোধমূলক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর


কোভিড-১৯ মহামারী প্রতিরোধের জন্য প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী আগামী ২১ দিন দেশজুড়ে আজ রাত থেকে লকডাউন অর্থাৎ সম্পূর্ণ প্রতিরোধমূলক নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা কার্যকর করার আহ্বান জানিয়েছেন।

টেলিভিশনে জাতির উদ্দেশে এক বিশেষ ভাষণে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে সব দেশে সেরা স্বাস্থ্য পরিষেবা রয়েছে, সেই সব দেশেও এই ভাইরাসকে মোকাবিলা করা যায়নি এবং এটি প্রতিহত করতে হলে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাই একমাত্র উপায়।

তিনি বলেন,” আপনারা এটাও দেখেছেন, উন্নত দেশগুলিকে কিভাবে এই মহামারী সম্পূর্ণ অসহায় করে দিয়েছে। এমনটা নয় যে এই দেশগুলি যথেষ্ট উদ্যোগ নেয়নি বা তাদের সম্পদ কম রয়েছে।

করোনা ভাইরাস এত দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে, তার ফলে সমস্ত প্রস্তুতি এবং উদ্যোগ সত্ত্বেও এই দেশগুলির পক্ষে এই সঙ্কট সামাল দেওয়া কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এই দেশগুলি গত দুই মাস ধরে যে পরিস্থিতি পর্যালোচনা করেছে এবং বিশেষজ্ঞরাও মতামত দিচ্ছেন, তাতে দেখা যাচ্ছে করোনা ভাইরাসের মোকাবিলা একমাত্র ‘স্যোসাল ডিস্ট্যান্সিং’-এর মাধ্যমেই করা যায়। অর্থাৎ, একজন আরেকজনের থেকে দুরে থাকবেন আর বাড়িতেই থাকবেন। করোনা ভাইরাসের থেকে রেহাই পাওয়ার আর অন্য কোন উপায় নেই”।

যারা অসাবধানী, তাঁদের সতর্ক করে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, “কিছু লোকের অসাবধানতা, ভুল চিন্তাভাবনার জন্য আপনি, আপনার সন্তানরা, আপনার মা-বাবা, আপনার পরিবার, আপনার বন্ধুবান্ধব౼সারা দেশ গভীর সমস্যায় পড়বে। এই অসাবধানতা চলতে থাকলে ভারতকে যে মূল্য দিতে হবে, তা নির্ধারণ করা অসম্ভব”।

দেশের বিভিন্ন অংশে রাজ্য সরকারগুলি যে লকডাউন জারী করেছে, তা গুরুত্বের সঙ্গে পালন করার জন্য তিনি জনসাধারণের প্রতি আহ্বান জানান।

প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করেন, ২১ দিনের জন্য মধ্যরাত থেকে সারা দেশে প্রতিরোধমূলক নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা কার্যকর হবে, কেউ বাড়ির বাইরে বের হতে পারবেন না।

তিনি জানান, স্বাস্থ্য দপ্তরের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ এবং অন্য দেশগুলির অভিজ্ঞতা নিয়ে এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। সংক্রমণের এই চক্র ভাঙতে ২১ দিন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

তিনি বলেন, জনতা কারফিউ-এর থেকে এটি আরো বেশি কঠোর । বিশ্বজুড়ে এই অতিমারী অর্থাৎ করোনা মহামারীকে আটকাতে, দেশের প্রতিটি নাগরিককে রক্ষা করতে এই পদক্ষেপ নেওয়া জরুরী হয়ে পড়েছে।

এই অতিমারীর ফলে আর্থিক প্রভাবের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “দেশকে আর্থিকভাবে এর জন্য অবশ্যই মূল্য দিতে হবে।

কিন্তু প্রতিটি ভারতীয়র জীবন বাচানোর জন্য এই সময়টি౼ আমার, ভারত সরকারের, প্রতিটি রাজ্য সরকারের, প্রতিটি স্থানীয় প্রশাসনের কাছে সবথেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

তাই আপনাদের সকলের কাছে আমার আবেদন, দেশের যেখানে আপনারা রয়েছেন, সেখানেই থাকুন”।

প্রধানমন্ত্রী ব্যাখ্যা করে বলেন, আগামী তিন সপ্তাহে যদি পরিস্থিতি সামাল না দেওয়া যায়, দেশ ২১ বছর পিছিয়ে যাবে। এই ২১ দিনে যদি পরিস্থিতির মোকাবিলা করা না যায়, বহু পরিবার ধ্বংস হয়ে যাবে। আর তাই আগামী ২১ দিন তিনি সকলকে বাড়িতে থাকতে অনুরোধ করেন।

শ্রী মোদী বলেন, আশার আলো দেখতে পাওয়া যাচ্ছে সেই সব দেশের কাছ থেকে, যারা করোনাকে কিছুটা হলেও আটকাতে পেরেছে।

এই সব দেশের নাগরিকরা সপ্তাহের পর সপ্তাহ বাড়ির বাইরে বের হন নি। এইসব দেশের নাগরিকরা সরকারের নির্দেশাবলী পুরো মেনে চলেছেন আর তাই তারা বিশ্বজুড়ে এই মহামারী বা অতিমারীর থেকে বেরিয়ে আসতে পারছেন।

তিনি বলেন, “ ভারত এখন এমন এক অবস্থায় আছে, যেখানে আমাদের ভূমিকাই ঠিক করে দেবে কিভাবে আমরা এই বিপর্যয়ের প্রভাবকে কমিয়ে ফেলতে পারব। এই সময় আমাদের সংকল্পগুলিকে আরো শক্তিশালী করতে হবে। সতর্কতার সঙ্গে প্রতিটি পদক্ষেপ নিতে হবে। আপনাদের মনে রাখতে হবে প্রাণ থাকলেই জগত থাকবে।এখন ধৈর্য ও শৃঙ্খলার সময়। যতদিন এই প্রতিরোধমূলক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা থাকবে, আমরা সিদ্ধান্ত নেব যে, আমাদের প্রতিজ্ঞা থেকে আমরা বের হব না।“

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বজুড়ে করোনা মহামারীর পরিস্থিতি সৃষ্টি হবার সঙ্গে সঙ্গেই কেন্দ্র এবং দেশ জুড়ে রাজ্য সরকারগুলি দ্রুত কাজ করতে শুরু করেছে। সবসময় খেয়াল রাখা হচ্ছে , নাগরিকরা দৈনন্দিন জীবনে যেন খুব সমস্যায় না পরেন। নিত্যপ্রয়োজনীয় সকল সামগ্রীর সরবরাহ বজায় রাখা নিশ্চিত করতে সব ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এই সঙ্কটে গরীব মানুষরা নিশ্চিতভাবেই খুব সমস্যায় পড়বেন। গরীব মানুষদের সমস্যার নিরসনে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারগুলির পাশাপাশি সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা এবং প্রতিষ্ঠানগুলি নিরলস চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। গরীবদের সাহায্যের জন্য অনেকেই উদ্যোগী হয়েছেন।

করোনা সংক্রমিত রোগীদের চিকিৎসার জন্য এবং দেশের স্বাস্থ্য পরিকাঠামো মজবুত করতে কেন্দ্র ১৫হাজার কোটি টাকার ব্যবস্থা কথা জানান প্রধানমন্ত্রী।

সকলের কাছে তিনি আবেদন করেন, যে কোন রকমের গুজব বা কুসংস্কারের থেকে সতর্ক থাকার জন্য। তিনি বলেন, কেন্দ্র, রাজ্যসরকারগুলি এবং চিকিৎসা ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞরা যে নির্দেশ ও পরামর্শ জনসাধারণকে দিচ্ছে, সেগুলি মেনে চলা এখন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তিনি অনুরোধ করেন, এই সংক্রমণের কোন লক্ষণ দেখা দিলে কেউ যেন চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ না খান। চিকিৎসার বিষয়ে কোন পরীক্ষা নিরীক্ষা করলে জীবন সংশয় হতে পারে। তিনি আশা ব্যক্ত করেন, সংকটের এই সময়ে প্রতিটি ভারতবাসী সরকার এবং স্থানীয় প্রশাসনের নির্দেশ মেনে চলবে।

প্রধানমন্ত্রী সকলের প্রশংসা করে বলেন, 22 মার্চ যে জনতা কারফিউ-এর সঙ্কল্প নেওয়া হয়েছিল, সেটিকে সফল করতে, প্রতিটি ভারতবাসী দায়িত্ব এবং সংবেদনশীলতার সঙ্গে তাতে যোগ দিয়েছিলেন। তিনি বলেন,” জনতা কারফিউকে প্রতিটি ভারতবাসী সফল করে তুলেছিলেন। যখন দেশে সঙ্কট আসে, মানবতার সঙ্কট আসে౼ এই জনতা কারফিউ-এর মাধ্যমে ভারত প্রমাণ করেছে কিভাবে সংঘবদ্ধভাবে তার মোকাবিলা করতে হয়”।

প্রধানমন্ত্রী শেষে বলেন ২১ দিনের লকডাউন একটি দীর্ঘ সময়, কিন্তু আপনার ও আপনার পরিবারের নিরাপত্তার জন্য এটা সমান ভাবে প্রয়োজন। তিনি আশাবাদী সংকটের এই সময়ে প্রত্যেক ভারতবাসী সফলভাবে লড়াই-ই চালাবেন না, তাঁরা বিজয়ীও হবেন।

CG/CB/