আমার প্রিয় দেশবাসীগণ, নমস্কার!
এই বছর বর্ষার শুরুটা ভালোই হয়েছে। আমাদের কৃষক ভাই-বোনেদের খারিফ শস্যরোপণে সাহায্য হবে। আর একটি খুশির খবর আমার মনে আসাতে খুব আনন্দ হয়েছে। আমাদের দেশে ডালশস্য এবং তৈলবীজের খুব ঘাটতি আছে। গরীব মানুষদের ডাল চাই, খাবার জন্য তরি-তরকারি তৈরিতে অল্প তেলও চাই। আমার কাছে এটা আনন্দের খবর যে এবার যে ফসল হয়েছে, তাতে ডালের পরিমাণ প্রায় ৫০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। তৈলবীজের ক্ষেত্রে মোটামুটি ৩৩ শতাংশ বৃদ্ধি হয়েছে। আমার কৃষক ভাই-বোনদের এজন্য আমি ধন্যবাদ জানাই। তাঁদের অনেক অভিনন্দন। আমার প্রিয় দেশবাসী, ২৬শে জুলাই দিনটি আমাদের দেশের ইতিহাসে ‘কারগিল বিজয় দিবস’ হিসাবে চিহ্নিত হয়ে আছে। কৃষকদের দেশের জমির সঙ্গে যতটা ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক, আমাদের দেশের জওয়ানদেরও তাই। কারগিলের যুদ্ধে আমাদের এক-একজন জওয়ান শত্রুপক্ষের শত শত সৈন্যদের কাছে আতঙ্কজনক হয়ে উঠেছিলেন। নিজেদের জীবনের পরোয়া না করে, শত্রুপক্ষের সমস্ত প্রচেষ্টা বানচাল করে দিয়েছিলেন যে বীর সৈনিকরা তাঁদের শত শত প্রণাম করি। কারগিলের যুদ্ধ কেবল দেশের সীমারেখাতেই হয়নি, ভারতের প্রতিটি শহর, প্রতিটি গ্রামের যোগ ছিল এই যুদ্ধের সঙ্গে। এই যুদ্ধ সেই সব মা ও বোনেরাও লড়েছেন, যাঁদের জওয়ান ছেলে বা ভাই কারগিলে শত্রুদের সঙ্গে লড়াই করছিলেন। সেইসব মেয়েরা লড়াই করেছিলেন যাঁদের হাত থেকে তখনও নতুন বিবাহের মেহেন্দি মুছে যায় নি। সেইসব পিতারা লড়াই করেছেন যাঁরা নিজের জওয়ান পুত্রকে দেখে নিজেকেও সৈনিক বলে মনে করেছেন। আর সেইসব ছেলেরা লড়েছে যারা এখনও বাবার হাত ধরে হাঁটাও শেখে নি। এঁদের আত্মবলিদানের জন্যই আজ ভারত সারা বিশ্বে মাথা উঁচু করে কথা বলতে পারছে। আর এজন্যই আজ ‘কারগিল বিজয় দিবস’-এ আমাদের সৈন্যবাহিনীকে আমার শত শত প্রণাম।
২৬শে জুলাইকে আরও এক দৃষ্টিতে আমি মহত্বপূর্ণ মনে করি, কারণ ২০১৪ সালে আমাদের সরকার গঠনের কয়েক মাস পর ২৬শে জুলাইতেই আমি ‘mygov’ পোর্টাল-এর শুরু করেছিলাম। গণতন্ত্রে জনগণের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ আরও বাড়ানো, প্রতিটি মানুষকে দেশের উন্নতির কাজে লাগানোর সংকল্প আমার, আর আজ এক বছর বাদে এই কাজ করতে গিয়ে এটাই আমার আনন্দ যে প্রায় দু’কোটি মানুষ ‘mygov’ পোর্টালটি দেখেছেন। সাড়ে পাঁচ লক্ষের কাছাকাছি মানুষ তাঁদের মতামত দিয়েছেন আর সবথেকে খুশির কথা এই যে পঞ্চাশ হাজারের বেশি মানুষ সময় বার করে পি.এম.ও অ্যাপ্লিকেশন-এর ব্যাপারে মতামত দিয়েছেন। এই ব্যাপারে মনোনিবেশ করেছেন। এই কাজকে গুরুত্ব দিয়েছেন। আর কিরকম গুরুত্বপূর্ণ মতামত এসেছে শুনুন – কানপুর থেকে অখিলেশ বাজপেয়ী মহাশয় এক সুন্দর পরামর্শ পাঠিয়েছেন – IRCTC-র Website-এর মাধ্যমে ট্রেনের টিকিট বুক করার সময় প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য কেন সংরক্ষণ রাখা যাবে না? প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের টিকিট পাওয়ার জন্য এত ঝামেলার মোকাবিলা করা কি উচিত? এখন এই কথাটা খুব ছোট, কিন্তু কখনও সরকারী তরফে এটা নিয়ে ভাবা হয়নি বা কোনো বিচার-বিবেচনা করা হয়নি। কিন্তু ভাই অখিলেশ বাজপেয়ী-র এই মতামত সরকার অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করেছে এবং আজ আমাদের প্রতিবন্ধী ভাই-বোনদের জন্য এই ব্যবস্থা চালু করা হয়ে গেছে। আজ যে লোগো তৈরি হচ্ছে, ট্যাগ লাইন তৈরি হচ্ছে, পরিকল্পনা তৈরি হচ্ছে, নীতি তৈরি করা হচ্ছে – ‘mygov’ পোর্টালে এই সবকিছু ব্যাপারে সদর্থক মতামত আসছে। শাসন ব্যবস্থায় এক নতুন স্বচ্ছ বাতাস বয়ে যাওয়ার অনুভূতি হচ্ছে। এক নতুন চেতনা অনুভব হচ্ছে। ১৫ই অগাস্টে আমার কি বলা উচিত তা নিয়েও ইদানিং ‘mygov’ পোর্টালে নানান পরামর্শ আসছে। চেন্নাই থেকে সুচিত্রা রাঘবচারী অনেক মতামত পাঠিয়েছেন। ‘বেটি বাঁচাও বেটি পড়াও’, ‘ক্লিন গঙ্গা’, ‘স্বচ্ছ ভারত’ সম্পর্কে বলুন। কিন্তু এর থেকে আমার এক ভাবনা এসেছে যে এবার ১৫ই অগাস্টে আমার কী বলা উচিত, আপনারা কি এব্যাপারে কোনো উপদেশ পাঠাতে পারেন? ‘mygov’ পোর্টালে পাঠাতে পারেন, আকাশবাণীতে চিঠি লিখতে পারেন, প্রধানমন্ত্রী-র কার্যালয়েও চিঠি লিখতে পারেন। দেখুন, আমি এটা মানি এ এক ভাল জিনিস যে ১৫ই অগাস্ট আমার ভাষণের জন্য জনতা-জনার্দনের কাছ থেকে পরামর্শ সংগ্রহ। আমার বিশ্বাস আপনারা অবশ্যই ভাল পরামর্শ পাঠাবেন। একটি ব্যাপারে আমি আমার চিন্তাভাবনা জানাতে চাই, আমি কোন উপদেশ দিতে চাই না – এটাও ভাববেন না যে আমি রাজ্যসরকার, কেন্দ্র সরকার বা ছোটো ছোটো স্বশাসিত সংস্থার দায়িত্ব থেকে সরে যাওয়ার রাস্তা খুঁজছি।
মাত্র দু’দিন আগে দিল্লিতে এক দুর্ঘটনার দৃশ্য আমার চোখে পড়ে। দুর্ঘটনার পরে এক স্কুটার চালক ১০ মিনিট ধরে পড়ে ছটফট করছেন। তিনি কোনও সাহায্য পাননি! আমি এটাও দেখছি যে কিছু মানুষ বার বার আমাকে লিখছেন পথ নিরাপত্তার বিষয়ে কিছু বলার অনুরোধ জানিয়ে। মানুষজনকে সচেতন করার অনুরোধ জানিয়ে। বেঙ্গালুরু-র হোশাকোট থেকে অক্ষয় হ’ন, পুনের অমেয় জোশী হ’ন বা কর্ণাটকের মুড়বিদ্রী থেকে প্রসন্না কাকুঞ্জে হ’ন, এঁরা সবাই, এমন আরও আছেন, যাঁদের নাম আমি বলিনি, এই বিষয়ে চিন্তাভাবনা করেছেন এবং আপনাদের সবার চিন্তাই সঠিক। আর যখন পরিসংখ্যানের দিকে চোখ যায়, তখন মন ব্যথিত হয়ে ওঠে। আমাদের দেশে প্রতি মিনিটে একটি করে দুর্ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনার জন্য, পথ-দুর্ঘটনার জন্য প্রতি ৪ মিনিটে একটি করে মৃত্যু হয়। আর সবথেকে বড় চিন্তার কথা এই যে, এই সমস্ত মৃত মানুষদের এক-তৃতীয়াংশই ১৫ থেকে ২৫ বছর বয়সী নওজওয়ান। একটি মৃত্যু পুরো পরিবারকে ধ্বংস করে দিতে পারে। প্রশাসনের যে কাজ করা উচিত, তা তো তাঁরা করবেনই, কিন্তু আমি মা-বাবাদের অনুরোধ জানাব, আপনার সন্তান টু-হুইলার চালাক বা ফোর-হুইলার, সাবধানতার জন্য সমস্ত প্রচেষ্টা পরিবারের তরফেই হওয়া উচিত। কখনও কখনও আমি দেখি, অটো রিক্সার পেছনে লেখা আছে, “পাপা জলদি ঘর আ যানা” (‘বাবা তাড়াতাড়ি ঘরে ফিরে এস’) – এই লেখা কতটা মর্মস্পর্শী! আর এজন্যই আমি বলছি যে, সরকার তো এব্যাপারে বেশ কিছু নতুন উদ্যোগ নিয়েছে – পথ নিরাপত্তার ব্যাপারে শিক্ষাদান হোক বা রাস্তা তৈরির কারিগরী, প্রশাসনিক ব্যবস্থা লাগু করার কথাই হোক অথবা দুর্ঘটনার পর আহত ব্যক্তিদের আপৎকালীন চিকিৎসা ব্যবস্থার কথা হোক, এই সব কথা মাথায় রেখেই বলব, ‘রোড ট্রান্সপোর্ট অ্যাণ্ড সেফটি বিল’ আমরা আনছি। আগামী দিনে ‘জাতীয় পথ নিরাপত্তা নীতি’ আর ‘রোড সেফটি অ্যাকশন প্ল্যান’-এর প্রয়োগ করার লক্ষে আমি কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়ার ব্যাপারে ভাবনা-চিন্তা করছি। আমি আরও একটি প্রকল্প গ্রহণ করেছি, যা গুরগাঁও, জয়পুর আর বদোদরা থেকে শুরু করে মুম্বই, রাঁচি, রণগাঁও, মোণ্ডিয়ার রাজপথসহ দেশের সমস্ত রাজপথ জুড়ে বিস্তার লাভ করবে। আমি দুর্ঘটনা-পরবর্তী প্রথম পঞ্চাশ ঘণ্টার জন্য একটা ক্যাশলেস্ চিকিৎসা ব্যবস্থার কথা ভাবছি – আহত ব্যক্তির কাছে পয়সা আছে কি নেই, কে পয়সা দেবে, কে দেবে না – এই সমস্ত চিন্তা ছেড়ে আহত ব্যক্তি কীভাবে ভাল স্বাস্থ্য পরিষেবা পাবেন, প্রাথমিক চিকিৎসা পাবেন সেটাই দেখা হবে। সারা দেশ জুড়ে আমি দুর্ঘটনার খবর দেওয়ার জন্য একটি টোল-ফ্রি নম্বর 1033-এর ব্যবস্থা করেছি, অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করেছি – কিন্তু এই সব কিছুই দুর্ঘটনা ঘটে যাওয়ার পরবর্তী পদক্ষেপ। দুর্ঘটনা যাতে না ঘটে সেব্যাপারে আমাদের ভাবনা-চিন্তা করা উচিত। প্রতিটি প্রাণ, প্রতিটি জীবন আমাদের অত্যন্ত প্রিয়। এই জায়গা থেকে বিষয়টি দেখা উচিত। কখনও কখনও আমি বলি যে, কর্মচারীরা কর্মযোগী হন।
গত কিছু দিনে কিছু ঘটনা আমার নজরে এসেছে, যা আমার ভাল লেগেছে, সেই কথাটি আমি আপনাদের বলতে চাই। কখনও কখনও কাজ করতে করতে মানুষ ক্লান্ত হয়ে পড়ে, আর কিছু বছর বাদে মনে করে ঠিক আছে, মাইনে তো পাচ্ছি, কাজ পরে করে নেব। গত কয়েক দিনে রেলের কর্মচারীদের বিষয়ে একটি তথ্য আমার নজরে আসে – নাগপুর ডিভিশনে বিজয় বিশওয়াল নামে একট টি.টি.ই আছেন। তাঁর ছবি আঁকার শখ আছে। উনি যে কোনো জায়গায় গিয়ে ছবি আঁকতে পারতেন। কিন্তু উনি রেলের কাজকে গুরুত্ব দিয়েছেন এবং রেলের চাকরি করছেন আর রেলের সঙ্গে সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয়ের ছবি আঁকছেন – এতে তাঁর কাজের প্রতি আগ্রহ এবং আনন্দ – দুই-ই বেড়ে যাচ্ছে। এই উদাহরণ দেখে আমার খুব ভাল লেগেছে এই ভেবে যে নিজের কাজের ভেতরও কীভাবে আন্তরিকতার স্পর্শ আনা যায়, তা তিনি দেখিয়েছেন। নিজস্ব রুচি, নিজস্ব শিল্প, নিজস্ব ক্ষমতাকে নিজের কাজের সঙ্গে কীভাবে যুক্ত করা যায়, তা বিজয় বিশওয়াল দেখিয়ে দিয়েছেন। আগামীদিনে বিজয় বিশওয়ালের ছবি নিয়ে নানান আলোচনা, মত বিনিময় অবশ্যই হতে পারে। আমার আর একটি কথাও মনে পড়ছে – মধ্যপ্রদেশের হরদা জেলার সরকারী আধিকারিকদের পুরো দল, পুরো জেলাতে এক এমন কাজ শুরু করেছেন যা আমার মনকে ছুঁয়ে গেছে এবং তাঁদের কাজ আমার খুব পছন্দ হয়েছে। তাঁরা ‘অপারেশন মলযুদ্ধ’ শুরু করেছেন। এখন কেউ এটা শুনলে মনে করবেন যে এটা অন্য কোনো প্রসঙ্গ হবে। কিন্তু আসল কথা হল, তাঁরা ‘স্বচ্ছ ভারত অভিযান’কে এক নতুন দিশা দেখিয়েছেন – তাঁরা গোটা জেলায় আর একটি অভিযান শুরু করেছেন – “ব্রাদার নম্বর ওয়ান” অর্থাৎ সেই সবথেকে ভালো ভাই যিনি রাখীবন্ধন উপলক্ষে তাঁর বোনকে একটি শৌচালয় উপহার দেন। আর তাঁরা দায়িত্ব নিয়েছেন যে রাখীবন্ধন উৎসবের মধ্যেই যাতে এইভাবে সব ভায়েরা তাঁদের বোনদের শৌচালয় দেন আর গোটা জেলার কোনও মা-বোনকে যেন খোলা জায়গায় শৌচকর্ম করতে যেতে না হয়। দেখুন রাখীবন্ধনের অর্থ কেমন বদলে গেছে। আমি হরদা জেলার সরকারী আধিকারিক-দের পুরো টিম-কে অনেক অভিনন্দন জানাচ্ছি। কখনও কখনও কিছু ছোটো ছোটো জিনিস আমাকে খুব আনন্দ দেয়। এইরকম একটি খবর আমি জানতে পারলাম। যেটা আমি আপনাদের সঙ্গে ভাগ করে নিতে চাই। ছত্রিশগড়ের রাজনন্দ গাঁও-তে কেশলা নামে একটি ছোটো গ্রাম আছে। এই গ্রামের লোকেরা গত কয়েক মাস যাবৎ শৌচালয় তৈরির অভিযান চালিয়েছেন। এখন এই গ্রামের কোনও ব্যক্তিকে উন্মুক্ত স্থানে শৌচকর্ম করতে হয় না। শৌচালয় তৈরির কাজ সম্পূর্ণ হওয়ার পর পুরো গ্রামের লোক এই উপলক্ষ্যে একটি বড় উৎসব পালন করেছেন। গ্রাম এই বিষয়ে কৃতকার্য হয়েছে। কেশলা গ্রামের সকলে মিলে আনন্দ-উৎসব পালন করেছেন। সমাজ জীবনে মূল্যবোধ কীভাবে বদলে যাচ্ছে, জনসাধারণের মানসিক চাহিদা কীভাবে বদলে যাচ্ছে, দেশের নাগরিকবৃন্দ দেশকে কীভাবে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ এটি যা আমার সামনে এসেছে।
উত্তর-পূর্ব ভারতের বিষয়ে গুয়াহাটির ভবেশ ডেকা আমাকে লিখেছেন যে এমনিতে উত্তর-পূর্ব ভারতের লোকের কাজ-কর্মে খুবই সক্রিয়। তাঁরা অনেক কিছু লিখতে থাকেন – এটা খুব ভাল কথা। আমি আজ আনন্দের সঙ্গে তাঁদের বলতে চাই যে, উত্তর-পূর্ব ভারতের জন্য একটি পৃথক মন্ত্রক রয়েছে। যখন অটল বিহারী বাজপেয়ীজী প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, তখন ‘ডেভেলপ্মেন্ট অফ্ নর্থ-ইস্ট রিজিয়ন’ অর্থাৎ ‘D-O-N-E-R’ (ডোনার) নামে একটি পৃথক মন্ত্রক তৈরি হয়। আমাদের সরকার গঠনের পরে আমাদের ‘ডোনার’ ডিপার্টমেন্ট একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয় যে দিল্লিতে বসে উত্তর-পূর্ব ভারতের উন্নয়ন সম্ভব নয়। সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নেয় যে ভারত সরকারের আধিকারিকদের একটি দল উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলিতে যেমন – নাগাল্যাণ্ড, মণিপুর, অরুণাচল, ত্রিপুর, অসম, সিকিম প্রভৃতি জায়গায় যাবেন এবং সাত দিন শিবির করে থাকবেন। জেলাতে যাবেন, গ্রামে যাবেন, সেখানকার স্থানীয় সরকারী আধিকারিকদের সঙ্গে মিলিত হবেন, জন প্রতিনিধি ও জনসাধারণের সঙ্গে কথা বলবেন, তাঁদের সমস্যা সম্পর্কে অবগত হবেন এবং সমস্যার সমাধানে ভারত সরকারের যা করণীয় তা করবেন। আগামী দিনে এই প্রচেষ্টা ফলপ্রসূ হবে। যে আধিকারিকরা ওখানে যান, তাঁরাও বলেন, কত সুন্দর এই রাজ্যগুলো, লোকেরা কত ভালো। এই এলাকার উন্নয়ন করতেই হবে। লোকেদের সমস্যার সমাধান করার খুবই দরকার। এই সঙ্কল্প করে দিল্লিতে ফেরার পরে ওখানকার সমস্যার সমাধান করা অনেক সহজ হয়ে যায়। এটি একটি ভাল প্রচেষ্টা। দিল্লি থেকে দূরে পূর্ব পর্যন্ত যাওয়ার প্রচেষ্টা যাকে আমি ‘অ্যাক্ট ইস্ট পলিসি’ বলছি, এটা এগিয়ে নিয়ে যাওয়া দরকার।
আমার প্রিয় দেশবাসী, ‘মার্স মিশন’-এর সফলতায় আমরা আনন্দিত। আমরা গর্বিতও। বিগত দিনে ভারতের ‘PSLV C28’ ইউনাইটেড কিংডমের পাঁচটি উপগ্রহকে সফল উৎক্ষেপণ করেছি। এখনও পর্যন্ত ভারতের উপগ্রহ উৎক্ষেপণগুলির মধ্যে এটাই ছিল সবচেয়ে ভারী উপগ্রহ উৎক্ষেপণ প্রকল্প। এই সমস্ত সংবাদগুলো কয়েক মুহূর্তের জন্য আসে, আবার চলেও যায়। এইগুলো আমরা সাধারণত মনে রাখি না। কিন্তু এটা একটা বড় সাফল্য।
কিন্তু কখনও কখনও ভাবি, আজ আমরা যখন যুব প্রজন্মের সঙ্গে কথা বলি এবং জানতে চাই, তাঁরা ভবিষ্যতে কি হতে চান, সেক্ষেত্রে একশো জনের মধ্যে এক-আধজন বিদ্যার্থী পাওয়া যায়, যাঁরা বলেন, ‘আমি বৈজ্ঞানিক হতে চাই’। বিজ্ঞানের প্রতি আগ্রহ কমে যাওয়া খুব চিন্তার বিষয়। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি আসলে উন্নয়নের DNA। নতুন প্রজন্ম বৈজ্ঞানিক হওয়ার স্বপ্ন দেখুক, গবেষণা এবং উদ্ভাবনায় আগ্রহ দেখাক, আর তাঁদের উৎসাহিত করা, তাঁদের ক্ষমতা সম্পর্কে অবহিত হওয়া খুব দরকার। ভারত সরকারের মানব সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক নতুন প্রতিভার সন্ধানে একটি জাতীয় মেধা অনুসন্ধান অভিযান শুরু করেছে। আমাদের দেশের প্রাক্তণ রাষ্ট্রপতি
ড. কালাম এটা শুরু করেছেন। এই অভিযানের অন্তর্গত যেখানে এই রকম মেধার সম্ভাবনা আছে, সেখানকার বিদ্যার্থীদের উৎসাহিত করতে, পথ দেখাতে এবং অন্যান্য সাহায্য করতে IIT,NIT, কেন্দ্রীয় ও রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলি মেন্টররূপে কাজ করবে। আমি তো আমার আই-এ-এস আধিকারিকদের বলি, আপনারা লেখাপড়া করে এতদূর এগিয়েছেন, আপনারা কখনও কখনও সপ্তাহে দু-চার ঘণ্টা আপনাদের কাছাকাছি স্কুল-কলেজে গিয়ে বাচ্চাদের সঙ্গে কথা বলুন, আপনাদের উপলব্ধি, আপনাদের ভাবনাশক্তি এই নতুন প্রজন্মের কাজে লাগবে।
আমরা বড় একটা দায়িত্ব নিয়েছি। আমাদের দেশের প্রতি গ্রামে ২৪ ঘণ্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ দরকার। কাজটি কঠিন। কিন্তু আমাদের করতে হবে। আমরা এর শুভারম্ভ করে দিয়েছি। আগামী কয়েক বছরের মধ্যে প্রতিটি গ্রামে ২৪-ঘণ্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ থাকবে। পরীক্ষার দিনগুলিতে বিদ্যুতের অভাবে গ্রামের বাচ্চাদের পড়াশোনার কোনও কষ্ট হবে না। গ্রামে ছোটখাটো শিল্প স্থাপনে বিদ্যুতের অভাব হবে না। এখন তো মোবাইল চার্জ করতে হলেও অন্য গ্রামে যেতে হয়। শহরে লভ্য সমস্ত সুবিধা গ্রামেও পাওয়া উচিত। এই সুবিধা দরিদ্র মানুষের কাছ পর্যন্ত পৌঁছনো দরকার। সেইজন্যই আমরা শুরু করেছি ‘দীনদয়াল উপাধ্যায় গ্রাম জ্যোতি কার্যক্রম’। আমি জানি, আমাদের দেশ বিশাল। লক্ষ লক্ষ গ্রাম রয়েছে। দূর দূরান্তের প্রতিটি ঘর পর্যন্ত বিদ্যুৎ পৌঁছতে হবে। কিন্তু গরীবদের জন্য আমাদের আরও কাজ করতে হবে। আমরা এটা সম্পূর্ণ করব। এটা শুরু করে দিয়েছি, শেষও করব।
আজ এই অনুষ্ঠানে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলার ইচ্ছা হল। একদিক দিয়ে আমাদের দেশে অগাস্ট-সেপ্টেম্বর উৎসবের মাস বলে পালিত হয়। অনেক উৎসবও পালিত হয়। আপনাদের সবাইকে আমার অনেক অনেক শুভেচ্ছা। ১৫-ই অগাস্টের জন্য আপনাদের পরামর্শ অবশ্যই পাঠান। আপনাদের মতামত আমার অনেক কাজে আসবে।
অসংখ্য ধন্যবাদ!