১) ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী ১৭ ও ১৮ই আগস্ট ভুটান সফর করেন। ভুটানের প্রধানমন্ত্রী ডঃ লোটে শেরিং – এর আমন্ত্রণে শ্রী মোদী সেদেশ সফরে যান। গত মে মাসে প্রধানমন্ত্রী পদে দ্বিতীয়বার দায়িত্ব গ্রহণের পর এটি শ্রী মোদীর দ্বিপাক্ষিক সফরের অন্যতম একটি।
২) পারো বিমানবন্দরে পৌঁছলে প্রধানমন্ত্রী শ্রী মোদীকে স্বাগত জানান ভুটানের প্রধানমন্ত্রী ডঃ শেরিং সহ তাঁর মন্ত্রিসভার অন্যান্য সদস্য এবং উচ্চ পদস্থ সরকারি আধিকারিকগণ। এর পর, শ্রী মোদীর সম্মানে গার্ড অফ অনার দেওয়া হয়।
৩) প্রধানমন্ত্রী শ্রী মোদীর সঙ্গে ভুটানের রাজা জিগমে খেসার নামগিয়েল ওয়াংচুকের আন্তরিক সখ্যতা রয়েছে। সফররত অতিথির সম্মানে রাজা ও রানীর পক্ষ থেকে ভোজসভার আয়োজন করা হয়। প্রধানমন্ত্রী শ্রী মোদী যত শীঘ্র সম্ভব নিজেদের সুবিধা মতো সময়ে রাজা ও রানীকে ভারত সফরে আসার আমন্ত্রণ জানান।
৪) প্রধানমন্ত্রী শ্রী মোদী এবং প্রধানমন্ত্রী ডঃ শেরিং এক নতুন প্রেক্ষাপটে প্রতিনিধি পর্যায়ের বৈঠকে মিলিত হন। প্রধানমন্ত্রী ডঃ শেরিং, প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদীর সম্মানে রাষ্ট্রীয় ভোজসভার আয়োজন করেন।
৫) ভুটানের জাতীয় আইনসভার বিরোধী দলনেতা ডঃ পেমা গিয়ামস্থো প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
৬) প্রধানমন্ত্রী শ্রী মোদী গত ৩০শে মে তাঁর শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার জন্য প্রধানমন্ত্রী ডঃ শেরিং-কে ধন্যবাদ জানান এবং সেই উপলক্ষে তাঁদের মধ্যে আলাপ-আলোচনার প্রসঙ্গের উল্লেখ করেন। ভুটান ও ভারতের মধ্যে নিয়মিতভাবে উচ্চ স্তরীয় যোগাযোগের বিষয়টিকে দু’দেশের ক্ষেত্রে এক বিশেষ ও কৌশলগত অংশীদারিত্বের গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক বলে উভয় নেতাই সহমত প্রকাশ করেন।
৭) আলাপ-আলোচনার সময় দুই প্রধানমন্ত্রী-ই দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের নানা দিক নিয়ে বিস্তারিত পর্যালোচনার পাশাপাশি, গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বিষয়গুলি নিয়েও আলোচনা করেন। দু’দেশের মধ্যে পারস্পরিক আস্থা ও শ্রদ্ধা তথা অভিন্ন ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক, উন্নয়নমূলক এবং মানুষের সঙ্গে মানুষের যোগসূত্রের ওপর ভিত্তি করে যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক গড়ে উঠেছে, সে ব্যাপারে উভয় নেতাই সন্তোষ প্রকাশ করেন। এই প্রেক্ষিতে, ভুটানের দূরদৃষ্টিসম্পন্ন শাসকরা এবং ভারতের নেতানেত্রীরা পরম্পরাগতভাবে উভয় দেশের মধ্যে সম্পর্ককে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে যে ভূমিকা পালন করেছেন, তা মৈত্রী তথা ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশীর সঙ্গে সহযোগিতার এক অনন্য দৃষ্টান্ত বলে দুই নেতাই অভিমত প্রকাশ করেন।
৮) পারস্পরিক নিরাপত্তা ও জাতীয় স্বার্থের সঙ্গে জড়িত বিষয়গুলিতে আরও ঘনিষ্ঠ সমন্বয় ও সহযোগিতা বজায় রাখতে উভয় পক্ষই নিরাপত্তা সংক্রান্ত ক্ষেত্রে নিজেদের অঙ্গীকারের কথা পুনরায় ব্যক্ত করে।
৯) প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী ভুটান সরকার ও সেদেশের মানুষের অগ্রাধিকার তথা প্রত্যাশা অনুযায়ী ভুটানে আর্থিক ও পরিকাঠামোগত উন্নয়ন প্রক্রিয়াকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে ভারত সরকারের অঙ্গীকারের কথা পুনরায় জানান। মধ্য আয়ের দেশ হয়ে ওঠার লক্ষ্য পূরণে প্রধানমন্ত্রী শ্রী মোদী ভুটানের সরকার ও মানুষের প্রচেষ্টার অভিনন্দন জানান। ‘জাতীয় খুশি’ – এই আপ্তবাক্যকে সামনে রেখে ভুটানের অনন্য উন্নয়নের ধারাকে নিজেদের সমৃদ্ধ ঐতিহ্য ও পরিবেশ সচেতনতার মাধ্যমে এগিয়ে নিয়ে যেতে সাম্প্রতিক সাফল্যের জন্য শ্রী মোদী ভুটানের মানুষের প্রশংসা করেন।
১০) প্রধানমন্ত্রী হিসাবে ২০১৮’র নভেম্বরে দায়িত্ব গ্রহণের পর সে বছরেরই ডিসেম্বরে তাঁর প্রথম বিদেশ সফর হিসাবে ভারত সফরের কথা প্রধানমন্ত্রী ডঃ শেরিং আন্তরিকতার সঙ্গে স্মরণ করেন। ভুটানের দ্বাদশ পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা রূপায়ণে চলতি সহযোগিতা এবং বিগত দশকগুলিতে ভুটানের উন্নয়নে ভারতের অবদানের প্রশংসা করে ডঃ শেরিং ভারত সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
১১) দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে পারস্পরিক স্বার্থের অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসাবে উভয় নেতাই জলবিদ্যুৎ ক্ষেত্রে উন্নয়নের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব দেন। দুই প্রধানমন্ত্রী সদ্যসমাপ্ত ৭২০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন মাংদেচু জলবিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রটির উদ্বোধন করেন। এই জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ সময়ের মধ্যে শেষ হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করে প্রকল্প পরিচালন কর্তৃপক্ষের আন্তরিকতা ও ধৈর্য্যের প্রশংসা করেন। এই জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের উৎপাদন শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই দু’দেশের উদ্যোগে ভুটানে গড়ে ওঠা জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিমাণ ২ হাজার মেগাওয়াট অতিক্রম করেছে। গুরুত্বপূর্ণ এই মাইলফলক অর্জনে দুই নেতাই সন্তোষ প্রকাশ করে অন্যান্য জলবিদ্যুৎ প্রকল্পগুলির রূপায়ণ ত্বরান্বিত করতে একযোগে কাজ চালিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে দৃঢ় সংকল্প ব্যক্ত করেন। জলাধার-ভিত্তিক সঙ্কোষ জলবিদ্যুৎ প্রকল্প নিয়ে দ্বিপাক্ষিক স্তরে যে আলোচনা চলছে, উভয় নেতাই তা পর্যালোচনা করেন। এই জলবিদ্যুৎ প্রকল্প থেকে দু’দেশের ব্যাপক লাভবান হওয়ার বিষয়টিকে বিবেচনায় রেখে প্রকল্পের কাজ যতদ্রুত সম্ভব শুরু করার জন্য পন্থাপদ্ধতি চূড়ান্তকরণের ব্যাপারেও দুই নেতা সম্মত হন। জলবিদ্যুৎ ক্ষেত্রে বিগত পাঁচ দশকে ভারত – ভুটান সহযোগিতায় পারস্পরিক লাভবান হওয়ার বিষয়টিকে কেন্দ্রবিন্দুতে রেখে দুই প্রধানমন্ত্রী যৌথভাবে ভুটান ডাকটিকিট প্রকাশ করেন।
১২) দুই প্রধানমন্ত্রী ভুটানে ভারতীয় রুপে কার্ড ব্যবহারের আনুষ্ঠানিক সূচনা করেন। এই ব্যবস্থা শুরু হওয়ার ফলে ভারতীয় ভ্রমণকারীরা ভুটানে আর্থিক দিক থেকে উপকৃত হবেন। কারণ, এদেরকে নগদ অর্থ সঙ্গে নেওয়ার আর প্রয়োজন পড়বে না। নতুন এই ব্যবস্থায় ভুটানের অর্থনীতি একদিকে যেমন আরও বিকশিত হবে, অন্যদিকে তেমনই দু’দেশের আর্থিক যোগাযোগ আরও ঘনিষ্ঠ হবে। ভুটানের ব্যাঙ্কগুলি থেকে রুপে কার্ড চালু করার ব্যাপারে যে কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে, তার কাজ আরও ত্বরান্বিত করার ব্যাপারেও উভয় পক্ষই সম্মত হয়েছে। এ ধরণের উদ্যোগ সফল হলে ভারতে আসা ভুটানের ভ্রমণকারীরা উপকৃত হবেন। পক্ষান্তরে উভয় দেশেই রুপে কার্ডের পুরোদমে ব্যবহার শুরু হবে। দু’দেশেই নগদ বিহীন মাশুল মেটানোর প্রক্রিয়া চালু করতে ভুটানে ভীম অ্যাপ শুরু করার লক্ষ্যে একটি সমীক্ষা চালানোর ব্যাপারেও পরম্পরিক সম্মতি পাওয়া গেছে।
১৩) দুই প্রধানমন্ত্রী থিম্পুতে দক্ষিণ এশিয়া স্যাটেলাইটের গ্রাউন্ড আর্থ স্টেশন বা ভূ-পর্যবেক্ষণ তথা নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রের উদ্বোধন করেন। ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরো’র সহায়তায় এই কেন্দ্রটি গড়ে তোলা হয়েছে। দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের দেশগুলিকে উপহার-স্বরূপ ২০১৭’তে যে দক্ষিণ এশিয়া স্যাটেলাইটের উৎক্ষেপণ করা হয়েছিল, তার প্রধান কারিগর প্রধানমন্ত্রী শ্রী মোদীর দূরদৃষ্টির প্রশংসা করেন প্রধানমন্ত্রী ডঃ শেরিং। এই উপগ্রহের ফলে ভুটানের সম্প্রচার পরিষেবার উন্নতি হয়েছে। এতে পরিষেবার পরিধি যেমন বেড়েছে, তেমনই ব্যয় সাশ্রয়ও সম্ভব হয়েছে। ভুটানে বিপর্যয় ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রেও এই উপগ্রহটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
১৪) ভুটানের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে দক্ষিণ এশিয়া স্যাটেলাইটের ইতিবাচক ভূমিকার কথা স্বীকার করে নিয়ে শ্রী মোদী ভুটানের জনগণকে উপহার-স্বরূপ সেদেশের চাহিদা মতো অতিরিক্ত একটি ট্রান্সপন্ডার দেওয়ার প্রস্তাব দেন। দেশের স্বার্থে মহাকাশ সম্পদের উপযোগিতার ব্যাপারে রাজার পরিকল্পনাকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে ভারতের এই উপহারকে এক মাইলফলক বলে প্রধানমন্ত্রী ডঃ শেরিং বর্ণনা করেন। দু’দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে এই উপহার এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করবে। এমনকি, মহাকাশে নিজেদের প্রভাব বাড়াতেও সাহায্য করবে।
১৫) ভুটানের জন্য একটি ছোট আকারের কৃত্রিম উপগ্রহ যৌথভাবে নির্মাণে পারস্পরিক সহযোগিতার ব্যাপারেও দুই নেতা সম্মত হন। দূর-নিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থা এবং ‘জিও স্পেশিয়াল ডেটা’ ব্যবহার করে প্রাকৃতিক সম্পদ ও বিপর্যয় ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে ভুটানের জন্য ‘জিও পোর্টাল ব্যবস্থা’ গড়ে তোলা সহ অন্যান্য কাজকর্ম সুচারুরূপে পরিচালনা করতে এবং উপগ্রহ নির্মাণ প্রকল্পের জন্য একটি যৌথ কর্মীগোষ্ঠী গঠনেও দুই নেতা আধিকারিকদের নির্দেশ দিয়েছেন।
১৬) একটি দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করার ক্ষেত্রে মহাকাশ প্রযুক্তি তথা ডিজিটাল ও ক্রমউত্থানশীল প্রযুক্তির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কথা স্বীকার করে নিয়ে উভয় পক্ষই সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রগুলিতে সহযোগিতা আরও নিবিড়তর করার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেয়।
১৭) ভারতের জাতীয় জ্ঞান নেটওয়ার্ক ও ভুটানের গবেষণা তথা শিক্ষা নেটওয়ার্কের মধ্যে আন্তঃসংযোগ ব্যবস্থার সূচনা করেন দুই প্রধানমন্ত্রী। তথ্য আদান-প্রদানের ক্ষেত্রে এই ব্যবস্থা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে মেনে নিয়ে উভয় পক্ষের তরফেই আশা প্রকাশ করা হয়েছে যে, এই ব্যবস্থার ফলে দুই দেশের বিশ্ববিদ্যালয় ও পড়ুয়াদের মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে মতবিনিময়ে উৎসাহ বাড়বে।
১৮) প্রধানমন্ত্রী শ্রী মোদীর সফরকালে নিম্নলিখিত সমঝোতা বা চুক্তি সংক্রান্ত নথিপত্র বিনিময় হয়।
· দক্ষিণ এশিয়ার স্যাটেলাইটের সদ্ব্যবহারের জন্য স্যাটকম নেটওয়ার্ক স্থাপনে ভুটানের তথ্য প্রযুক্তি ও টেলিযোগাযোগ এবং ইসরো’র মধ্যে সমঝোতা।
· ভারতের জাতীয় জ্ঞান নেটওয়ার্ক ও ভুটানের ড্রুক গবেষণা ও শিক্ষা নেটওয়ার্কের মধ্যে সহযোগিতার লক্ষ্যে সমঝোতাপত্র।
· বিমান দুর্ঘটনা তথা দুর্ঘটনার তদন্তের ক্ষেত্রে ভারতের এয়ারক্র্যাফট্ অ্যাক্সিডেন্ট ইনভেস্টিগেশন ব্যুরো ভুটানের এয়ার অ্যাক্সিডেন্ট ইনভেস্টিগেশন ইউনিটের মধ্যে সমঝোতাপত্র।
· রয়্যাল ইউনিভার্সিটি অফ ভুটান এবং আইআইটি কানপুর দিল্লি ও মুম্বাই সহ এনআইটি শিলচরের মধ্যে শিক্ষামূলক আদান-প্রদান বাড়ানোর জন্য চারটি সমঝোতাপত্র।
· আইনগত শিক্ষা ও গবেষণার মতো ক্ষেত্রে দুই পক্ষের মধ্যে সম্পর্ক আরও বাড়াতে ব্যাঙ্গালোরের ন্যাশনাল ল স্কুল অফ ইন্ডিয়া ইউনিভার্সিটি এবং থিম্পুর জিগমে সিংগে ওয়াংচুক স্কুল অফ ল প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সমঝোতাপত্র।
· বিচার-বিভাগীয় শিক্ষা ও পারস্পরিক আদান-প্রদানের ক্ষেত্রে সহযোগিতার লক্ষ্যে ভুটানের জাতীয় আইন প্রতিষ্ঠান এবং ভারতে ভোপালের ন্যাশনাল জুডিশিয়াল অ্যাকাডেমির মধ্যে সমঝোতাপত্র।
· পিটিসি ইন্ডিয়া লিমিটেড এবং ভুটানের ড্রুক গ্রিন পাওয়ার কর্পোরেশনের মধ্যে মাংদেচু জলবিদ্যুৎ প্রকল্প থেকে বিদ্যুৎ ক্রয় সংক্রান্ত চুক্তি।
১৯) প্রধানমন্ত্রী শ্রী মোদী ভুটানের রয়্যাল ইউনিভার্সিটিতে আয়োজিত এক বিশেষ অনুষ্ঠানে সেদেশের যুবসম্প্রদায়ের উদ্দেশে ভাষণ দেন। দু’দেশের মধ্যে নাগরিক কল্যাণ-কেন্দ্রিক দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের পাশাপাশি, গভীর আধ্যাত্মিক ও বৌদ্ধধর্ম-কেন্দ্রিক যোগসূত্রের কথা তিনি বিশেষভাবে উল্লেখ করেন। ভারত – ভুটান সম্পর্ককে এক নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে শিক্ষা ও উচ্চ প্রযুক্তি ক্ষেত্রে দু’দেশের যুবসম্প্রদায়ের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাও তিনি উল্লেখ করেন। ভুটানে উন্নয়ন, পরিবেশ ও সংস্কৃতি একে অপরের থেকে পৃথক নয়, বরং তা যে পরস্পরের পরিপূরক, তিনি তার প্রশংসা করেন। প্রকৃতির সঙ্গে এ ধরণের সহাবস্থান সম্প্রীতি বজায় রাখার পাশাপাশি, মানবজাতির প্রতি ভুটানবাসীর ‘খুশি’ থাকার এক উজ্জ্বল বার্তা বহন করে। মহাকাশ ও ডিজিটাল প্রযুক্তি তথা ক্রমবিকাশশীল প্রযুক্তি ক্ষেত্রে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার নতুন অধ্যায়ের কথা উল্লেখ করে শ্রী মোদী উদ্ভাবন ও সুস্থায়ী বিকাশের লক্ষ্যে যুবসম্প্রদায়ের ভূমিকার প্রশংসা করেন। রয়্যাল ইউনিভার্সিটির এই অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী ডঃ শেরিং – এর পাশাপাশি, ভুটানের জাতীয় আইনসভার সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন।
২০) ভুটানের নাগরিকদের স্বার্থে স্বাস্থ্য পরিচর্যার মানোন্নয়ন সহ সকলের নাগালে স্বাস্থ্য পরিষেবাকে পৌঁছে দিতে প্রধানমন্ত্রী ডঃ শেরিং ব্যক্তিগতভাবে যে উদ্যোগ নিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী শ্রী মোদী তার প্রশংসা করেন। এ প্রসঙ্গে জানানো হয় যে, ভুটানে একটি নতুন মাল্টি ডিসিপ্লিনারি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল গড়ে তোলার জন্য প্রয়োজনীয় কারিগরি সহায়তা প্রদানে এক ভারতীয় বিশেষজ্ঞ দল সম্প্রতি সেদেশ সফর করেন।
২১) দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বিনিয়োগের পরিমাণ বাড়াতে উভয় পক্ষই সম্মত হয়েছে। ২০১৮’র ডিসেম্বরে প্রধানমন্ত্রী ডঃ শেরিং – এর ভারত সফরের সময়ে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ও আর্থিক যোগসূত্র আরও নিবিড়তর করতে ভারত সরকারের পক্ষ থেকে ভারতীয় মুদ্রায় ৪ বিলিয়ন ডলার আর্থিক সহায়তার যে প্রস্তাব দেওয়া হয়, ভুটান সরকার সে বিষয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে। সীমান্ত পারের বাণিজ্যে সহায়তার জন্যই এই অর্থ সাহায্য। ভারত সরকার ইতিমধ্যেই প্রথম কিস্তিতে ৮০ কোটি টাকা সাহায্য করেছে। সার্ক গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলির জন্য যে মুদ্রা বিনিময় কাঠামো রয়েছে, তার মাধ্যমে মুদ্রা বিনিময়ের পরিমাণ বাড়ানোর জন্য ভুটানের অনুরোধ গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা হবে বলে প্রধানমন্ত্রী মোদী সেদেশের প্রধানমন্ত্রী ডঃ শেরিং-কে আশ্বাস দেন। অন্তর্বর্তীকালীন ব্যবস্থা হিসাবে তৎক্ষণাৎ মুদ্রা বিনিময় চুক্তির আওতায় অতিরিক্ত ১০ কোটি মার্কিন ডলার বিনিময়ের প্রস্তাব দেন প্রধানমন্ত্রী শ্রী মোদী।
২২) দেশে ক্রমবর্ধমান রান্নার গ্যাসের চাহিদা মেটাতে এবং গ্রামাঞ্চলে রান্নার গ্যাসের ব্যবহার আরও বাড়াতে ভর্তুকিযুক্ত মূল্যে রান্নার গ্যাস সরবরাহের পরিমাণ বাড়ানোর জন্য ভুটান সরকারের পক্ষ থেকে অনুরোধ জানানো হয়। এই অনুরোধের প্রেক্ষিতেই প্রধানমন্ত্রী শ্রী মোদী রান্নার গ্যাসের পরিমাণ বর্তমানের মাসিক ৭০০ মেট্রিক টন থেকে বাড়িয়ে ১ হাজার টন করার কথা ঘোষণা করেন।
২৩) ভুটান রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা ঝাবড্রুঙ নাওয়াঙ্গ নামগিয়েল – এর মূর্তি থিম্পুর যে বাড়িতে রয়েছে, সেই ঐতিহাসিক ভবন সেমটোখাজঙ – এ গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শ্রী মোদী প্রার্থনা সভায় অংশ নেন। প্রতিবেশী দু’দেশের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সাংস্কৃতিক ও সামাজিক বন্ধনের বিষয়টিকে বিবেচনায় রেখে প্রধানমন্ত্রী শ্রী মোদী ভারতের পক্ষ থেকে ঋণ সহায়তার মেয়াদ আরও পাঁচ বছর বাড়ানোর কথা ঘোষণা করেন। নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভুটানের ছাত্রছাত্রীদের জন্য বৃত্তির সংখ্যা ২ থেকে বাড়িয়ে ৫ করার কথাও প্রধানমন্ত্রী শ্রী মোদী ঘোষণা করেন।
২৪) দু’দেশের মধ্যে সহযোগিতার পরম্পরাগত ক্ষেত্রগুলি নিবিড়তর করার পাশাপাশি, উভয় দেশের যুবসম্প্রদায়ের মধ্যে আরও বেশি যোগাযোগ ও আদান-প্রদানের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে উদীয়মান বিষয়গুলিতে সহযোগিতা আরও সম্প্রসারিত করার ব্যাপারেও উভয় পক্ষই অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছে।
২৫) প্রধানমন্ত্রী শ্রী মোদীর সফরে আলাপ-আলোচনার সময় যে উষ্ণতা ও মৈত্রীসুলভ মানসিকতা দেখা গিয়েছে, তা ভারত ও ভুটানের মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী এক অনন্য ও বিশেষ বন্ধুত্বের ক্ষেত্রে পারস্পরিক আস্থা, সহযোগিতা ও শ্রদ্ধা প্রদর্শনের বিষয়গুলিকেই প্রতিফলিত করে।
CG/BD/SB
Joint press meet with @PMBhutan. Watch. https://t.co/856smFi65l
— Narendra Modi (@narendramodi) August 17, 2019