Search

পিএমইন্ডিয়াপিএমইন্ডিয়া

সাম্প্রতিক সংবাদ

বিষয়টিকে সরাসরি পিআইবি থেকে নেওয়া হয়েছে

আসামের ডিব্রুগড়ে লেপেটকাটায় বি পি সি এল-এর প্রকল্প উদ্বোধনের পর প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ

s2016020576682


শ্রীযুক্ত তরুণ গগৈ মহোদয়, কেন্দ্রীয় মন্ত্রিপরিষদের আমার সহকর্মীরা এবং বিপুল সংখ্যায় উপস্থিত ভাই ও বোনেরা,

আজ ডিব্রুগড়ে দুটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প উদ্বোধন হচ্ছে। গুরুত্বপূর্ণ কারণ প্রাকৃতিক সম্পদের মূল্য সংযোজনের পাশাপাশি, আসামের নবীন প্রজন্মের যুবক-যুবতীদের বিপুল কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হচ্ছে। এই প্রকল্পগুলি দেশ ও জাতির উন্নয়নের পক্ষেও গুরুত্বপূর্ণ। আজ থেকে ২৫ বছর আগেই এই প্রকল্পগুলির উদ্বোধন হওয়া উচিৎ ছিল।

কখনও আমার মনে হয়, অনেক ভালো কাজ সম্পূর্ণ করার সৌভাগ্য নিয়ে আমি জন্মগ্রহণ করেছি। আমাদের দেশের সবচেয়ে বড় সমস্যা হল, নেতারা ক্রান্তদর্শী নন। সময়ের আগে তাঁরা কোনও পরিকল্পনা করতে পারেন না, সে অনুযায়ী রোড ম্যাপ-ও বানাতে পারেন না। আর, কখনও বানিয়ে ফেললেও পরিকল্পনাহীনভাবে ঘোষণা করে দেন। তারপর বেশ কয়েক বছর লাগে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করতে। তারপর, কয়েক বছর পেরিয়ে গেলে যখন মানুষ ভুলেই যান তখন উদ্বোধনের মুহূর্ত আসে। ফলে, যে কাজে ৫০০ কোটি টাকা খরচ হওয়ার কথা ছিল, সেখানে ১ হাজার থেকে ১১০০ কোটি টাকা খরচ হয়। আজ থেকে ২৫ বছর আগে এই প্রকল্পগুলি উদ্বোধন হলে এতদিনে দ্বিতীয় প্রজন্মের মানুষদের কর্মসংস্থান হয়ে যেত। এই কথা ও কাজের মধ্যে, স্বপ্ন ও বাস্তবের মধ্যে পার্থক্য দূর করতে আমি ভারত সরকারের পক্ষ থেকে সম্প্রতি একটি ‘প্রগতি কার্যক্রম’ শুরু করেছি। প্রত্যেক রাজ্যে মুখ্য সচিবদের সঙ্গে আমি নিজে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে কথা বলে এ ধরণের থেমে থাকা প্রকল্পগুলি কেন থেমে রয়েছে, তার খোঁজখবর নিয়ে সেগুলিকে চালু করার বিশেষ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। সম্প্রতি কয়েকটি খবরের কাগজেও লেখা হয়েছে যে লক্ষ লক্ষ কোটি টাকার থেমে থাকা প্রকল্প এখন নতুন করে চালু হচ্ছে। এরকমই থেমে থাকা দুটি প্রকল্প আজ উদ্বোধন হচ্ছে। আগামী দিনে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে, দ্রুতগতিতে উন্নয়নযজ্ঞে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে তবেই দেশের সর্বাঙ্গীন বিকাশ সম্ভব।

শুধু ভারতের পশ্চিম প্রান্তের উন্নতি হলে চলবে না। পশ্চিম প্রান্তের কেরল, কর্ণাটক, গোয়া, মহারাষ্ট্র, রাজস্থান, দিল্লি, গুজরাট, হরিয়ানা, পাঞ্জাব এবং জম্মু ও কাশ্মীরের উন্নয়ন হলেই চলবে না। পূর্ব উত্তরপ্রদেশ, বিহার, ওড়িশা, পশ্চিমবঙ্গ, আসাম ও উত্তর-পূর্ব ভারতের অন্যান্য রাজ্যগুলির উন্নয়ন সমানতালে না হলে ভারতের উন্নয়ন অসম্পূর্ণ থাকবে। এই ভারসাম্য রক্ষার জন্য আমরা ‘অ্যাক্ট ইস্ট পলিসি’ চালু করেছি। এর মাধ্যমে দেশের পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে যেসব দেশের সীমান্ত রয়েছে, সেই প্রতিবেশী দেশগুলির সঙ্গে সহজ ব্যবসায়িক সম্পর্ক গড়ে তোলার চেষ্টা করা হচ্ছে। মায়ানমার, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া এবং বাংলাদেশের সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করতে হবে। সেজন্য ভারত, পূর্ব ও উত্তর-পূর্ব ভারতের পরিকাঠামো উন্নয়নে জোর দিয়েছে।

ভারত স্বাধীন হওয়ার পর থেকে আজ পর্যন্ত কখনও যা ভাবা হয়নি, তার থেকে অনেক বেশি করে রেল বাজেটে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে। কারণ, রেলের পরিকাঠামো উন্নত হলে অবশিষ্ট ভারতের গোটা উত্তর-পূর্বাঞ্চলের যোগাযোগ আরও সহজ হবে। পূর্ব ভারতের এই রাজ্যগুলির অপার সম্ভাবনা রয়েছে। এখানকার যুবকরা অনেক বেশি নিষ্ঠাবান ও বুদ্ধিমান। তারা সুযোগ পেলে আসাম’কে ভারতের এক নম্বর রাজ্যে পরিণত করার সামর্থ্য রাখেন।

এই পলিমার শিল্প এক ধরণের মূল্য সংযোজন। এখানে পলিমার উৎপাদিত হলে বিদেশ থেকে যে পরিমাণ পলিমার আমদানি করতে হয়, তা আর করতে হবে না। এই সাশ্রয় মূল্য বৃদ্ধি রোধে কার্যকরি ভূমিকা নেবে। এটা তো মানতেই হবে, এটা প্লাস্টিকের যুগ। কিন্তু, বিশ্বের অন্য অনেক দেশের তুলনায় আমরা অনেক কম প্লাস্টিক ব্যবহার করি, মাথা পিছু ১০ কেজিও নয়। দেশের এই অঞ্চলে যে পরিমাণ প্রাকৃতিক সম্পদ রয়েছে, এখানকার যুবকদের যে কর্মদক্ষতা রয়েছে, তারা ছোট ছোট ব্যবসা চালু করলে এখানে সহজেই একটি শিল্পের‘হাব’ গড়ে তুলতে পারবে। সেখানে লক্ষাধিক মানুষের কর্মসংস্থান হবে। ভারত সরকার ‘মুদ্রা যোজনা’ শুরু করেছে। ‘স্টার্ট আপ ইন্ডিয়া, স্ট্যান্ড আপ ইন্ডিয়া’ কর্মসূচিও চালু হয়ে গেছে। এই দুটি পরিকল্পনা এমনই যে এখানকার প্রাকৃতিক সম্পদের যথাযথ ব্যবহারে তা লাভদায়ক হবে। ‘স্টার্ট আপ ইন্ডিয়া, স্ট্যান্ড আপ ইন্ডিয়া’ প্রকল্পে অনেক সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। আশা করি, আসামের নবীন প্রজন্ম নতুন নতুন শিল্পোদ্যোগে এগিয়ে আসবে। আমি সরকারকে অনুরোধ করবো, বিভাগকে বলবো, যাতে এখানকার প্রাকৃতিক সম্পদ মূল্য সংযোজনের মাধ্যমে সবার আগে আসামের নবীন প্রজন্মের কর্মসংস্থানের কাজে লাগে। বাকিটা, দেশের অন্যত্র পাঠানো যেতে পারে।

এই প্রকল্পগুলি আপনাদের ভাগ্য বদলে দেবে। আমরা পূর্ব ভারতের উন্নয়নকে অগ্রাধিকার দিচ্ছি। মনে করুন,কোনও কৃষকের ১০০ একর জমি রয়েছে, তার যদি তিন ছেলে হয়, তা হলে, তার মধ্যে একজনকেই তিনি চাষবাসের কাজে নিযুক্ত করতে চাইবেন। আর বাকি দুজনকে শহরে চাকরির জন্য পাঠাবেন। আমরা ঐ দুই ছেলের রোজগারের জন্য বেশি চিন্তা করছি। গ্রামের উন্নতি করতে হলে কৃষক সন্তানদের কর্মসংস্থানকেই অগ্রাধিকার দিতে হবে। সেজন্য শুধু বড় বড় শহরে কারখানা চালু হলে হবে না। ডিব্রুগড়ের মতো ছোট ছোট শহরে শিল্পের জাল বিস্তার করতে হবে।

আমাদের সরকার সারা দেশে ছোট ছোট শহরগুলিতে শিল্পের বিস্তার ঘটিয়ে কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি করার চেষ্টা করছে।মূল্য বৃদ্ধি হোক বা মূল্য সংযোজন হোক, যাতে দেশের আয় বৃদ্ধি হয়। প্রাকৃতিক সম্পদের মূল্য বৃদ্ধি যেমন অনিবার্য, তেমনই প্রত্যেক জীবনেরও মূল্য বৃদ্ধি হওয়া উচিৎ। অদক্ষ কর্মীদের রোজগার কম, সেজন্য আমরা দক্ষতা উন্নয়নকে অগ্রাধিকার দিয়েছি। দেশের প্রত্যেক যুবক যেন দক্ষ হয়ে উঠে নিজের পাশাপাশি অন্যদেরও কর্মসংস্থান করে দিতে পারে আমরা সেই চেষ্টাই করছি।

ভাই ও বোনেরা, আগামীদিনে ‘সহযোগিতা-ভিত্তিক যুক্তরাষ্ট্রীয়বাদ’কে অগ্রাধিকার দিয়ে কেন্দ্র ও রাজ্য মিলেমিশে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই। আমাদের মন্ত্র হল – ‘সবার সঙ্গে, সবার উন্নয়ন’। আগামীদিনে আমরা অবশ্যই এর সুফল পাবো। আমি আরেকবার আপনাদের সকলকে অনেক অনেক অভিনন্দন জানাই। দেশের এক জায়গায় পলিমার উৎপাদিত হবে, অন্য জায়গায় গালা উৎপাদিত হবে। এই দুটি জিনিস-ই আমাদের বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। এই উৎপাদন দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। আপনাদের সকলকে শুভেচ্ছা জানাই।

অনেক অনেক ধন্যবাদ।

PG/SB/SB