Search

পিএমইন্ডিয়াপিএমইন্ডিয়া

সাম্প্রতিক সংবাদ

বিষয়টিকে সরাসরি পিআইবি থেকে নেওয়া হয়েছে

সিঙ্গাপুর ফিনটেক উৎসবে প্রধানমন্ত্রীর মূল ভাষণ

সিঙ্গাপুর ফিনটেক উৎসবে প্রধানমন্ত্রীর মূল ভাষণ

সিঙ্গাপুর ফিনটেক উৎসবে প্রধানমন্ত্রীর মূল ভাষণ

সিঙ্গাপুর ফিনটেক উৎসবে প্রধানমন্ত্রীর মূল ভাষণ


সিঙ্গাপুরের উপ-প্রধানমন্ত্রী থারমন সান্মুগারত্নম, আর্থিক জগতের প্রভাবশালী ব্যক্তিরা, সিঙ্গাপুরের অর্থনৈতিক সংস্থার ম্যানেজিং ডাইরেক্টর রবি মেনন, বিশ্বের ১০০টি দেশের হাজার হাজার প্রতিনিধিরা।

নমস্কার!

সিঙ্গাপুর ফিনটেক উৎসবে প্রথম সরকারি প্রধান হিসাবে মূল বক্তব্য রাখা আমার জন্য অত্যন্ত গর্বের বিষয়। এটি উজ্জ্বল ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে থাকা ভারতের তরুণ প্রজন্মের প্রতি উৎসর্গ করলাম।

ভারতে যে অর্থনৈতিক বিপ্লব হচ্ছে এবং ১৩০ কোটি মানুষের জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন হচ্ছে – এটি তার পরিচায়ক।

এটি আর্থিক ও প্রযুক্তিগত একটি অনুষ্ঠান এবং একটি উৎসবও বটে।

ভারতে এখন আলোর উৎসব দীপাবলীর সময়। সারা বিশ্বে এই উৎসব আশা, জ্ঞান ও উন্নয়নের প্রতীক হিসাবে পালিত হয়। সিঙ্গাপুরে দীপাবলীর আলো এখনও প্রজ্জ্বলিত।

ফিনটেক উৎসব বিশ্বাসের অনুষ্ঠান।

উদ্ভাবনী ক্ষমতায় এবং কল্পনাশক্তিতে বিশ্বাসের অনুষ্ঠান।

বিশ্বকে আরও উন্নত স্থান হিসাবে গড়ে তোলার বিশ্বাসের অনুষ্ঠান।

এবং আশ্চর্যের হলেও এটাই সত্যি যে মাত্র তিন বছরেই এই উৎসব বিশ্বের সর্ববৃহৎ অনুষ্ঠানে পরিণত হয়েছে।

অর্থনৈতিক দিক থেকে সিঙ্গাপুর আন্তর্জাতিক হাব এবং ডিজিটাল ভবিষ্যৎ গড়ার লক্ষ্যে দেশটি এখন এগিয়ে চলেছে। এ বছর জুন মাসে আমি ভারতের রুপে কার্ড চালু করি। এটি ছিল ইউপিআই ব্যবহার করে ভারতের প্রথম আন্তর্জাতিক স্তরের মোবাইল অ্যাপ।

আজ আমার আন্তর্জাতিক এই মঞ্চে দাঁড়িয়ে ফিনটেক সংস্থা ও অর্থনৈতিক বিষয়ক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে যোগসূত্র স্থাপন করার সুযোগ এসেছে। এর মধ্য দিয়ে আসিয়ান ও বিভিন্ন ভারতীয় ব্যাঙ্ক এবং ফিনটেক কোম্পানির মধ্যে যোগাযোগ তৈরি হবে।

ভারত ও সিঙ্গাপুর, ভারত এবং আসিয়ানভুক্ত দেশগুলির ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পগুলির মধ্যে যোগাযোগ তৈরির লক্ষ্যে কাজ করে চলেছে। ক্রমশ তা আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ছড়িয়ে দেওয়া হবে।

বন্ধুগণ,

স্টার্ট আপ বৃত্ত নিয়ে যে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে, আমি তা শুনেছি।

Ø আপনার মূলধন ১০ শতাংশ বাড়াতে বিনিয়োগকারীকে বলুন যে, আপনার নিয়মিত কোনও ব্যবসা নেই, আপনি একটি মঞ্চ চালান।

Ø আপনি যদি আপনার মূলধন ২০ শতাংশ বাড়াতে চান, তবে বিনিয়োগকারীকে বলুন – আপনি ফিনটেক স্পেসে কাজ করছেন।

Ø কিন্তুআপনিযদিসত্যিচানযে, আপনারবিনিয়োগকারীরপকেটপুরোখালিহয়েযাক, তাহলেতাঁদেরবলুনযে, আপনিব্লকচেনব্যবহারকরছেন।

বিশ্ব অর্থনীতির পরিবর্তনে প্রযুক্তি ব্যবস্থাপনার যে আকর্ষণীয় সুযোগ রয়েছে, এটি আপনাকে সে বিষয়ে জানাবে।

নতুন প্রযুক্তি ও যোগাযোগ ব্যবস্থার মাধ্যমে অর্থনীতির যে পরিবর্তন আসছে, ইতিহাস আমাদের তা দেখিয়েছে।

বন্ধুগণ,

প্রযুক্তির দিক থেকে পরিবর্তনের এক ঐতিহাসিক ক্ষণে দাঁড়িয়ে রয়েছি আমরা।

ডেক্সটপ থেকে ক্লাউড, ইন্টারনেট থেকে সোশ্যাল মিডিয়া, আইটি পরিষেবা থেকে ইন্টারনেট ব্যবস্থাপনা, আমরা খুব স্বল্প সময়ের মধ্যে একটি দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়েছি। প্রতিদিনের ব্যবসায় এটি ব্যাঘাত সৃষ্টি করছে।

আন্তর্জাতিক অর্থনীতির ধরণ বদলে যাচ্ছে।

নতুন বিশ্বে ক্ষমতা ও প্রতিযোগিতার সংজ্ঞা নির্ধারণ করছে প্রযুক্তি।

জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে এটি সীমাহীন সুযোগ তৈরি করছে।

আমি শুনেছি, ফেসবুক, ট্যুইটার বা মোবাইল ফোন যত দ্রুতগতিতে ছড়িয়ে পড়েছে – ঠিক ততটা দ্রুততার সঙ্গে ২০১৪ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উন্নয়ন ও ক্ষমতায়ন হয়েছে।

সারা বিশ্বের দৃষ্টিভঙ্গী ও স্বপ্ন দ্রুত বাস্তবে রূপান্তরিত হচ্ছে।

ভারতে জনপরিষেবায় ও সরকারি ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন এসেছে। আশা-আকাঙ্খা, সুযোগ ও উদ্ভাবনের মধ্য দিয়ে এই পরিবর্তন হয়েছে। সমাজে দুর্বলতর শ্রেণীর মানুষের ক্ষমতায়ন হয়েছে, তাঁদের নিয়ে আসা হয়েছে সমাজের মূলস্রোতে। এরফলে, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাপনায় আরও বেশি করে অর্থনৈতিক সুযোগ-সুবিধা পাওয়া যাবে।

আমার সরকার ২০১৪ সালে ক্ষমতায় আসে। এর লক্ষ্য ছিল – দূরবর্তী গ্রামের দুর্বলতর মানুষ সহ দেশের প্রত্যেক নাগরিকের কাছে সর্বাত্মক উন্নয়ন পৌঁছে দেওয়া।

এই লক্ষ্য পূরণের জন্য অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার শক্ত ভিত প্রয়োজন ছিল – যা ভারতের মতো বিশালায়তন দেশের জন্য সহজ কাজ ছিল না।

আমরা বছর নয়, কয়েক মাসের মধ্যে এই লক্ষ্য পূরণ করতে চেয়েছি।

ফিনটেকের ক্ষমতা এবং ডিজিটাল যোগাযোগ ব্যবস্থাপনায় আমরা আশাতীত গতিতে পরিবর্তনের কাজ শুরু করেছি।

১৩০ কোটি ভারতবাসীর জন্য অর্থনৈতিক স্থিতাবস্থা বাস্তবে পরিণত হতে শুরু হয়েছে। আমরা মাত্র কয়েক বছরে ১২০ কোটি জনগণের বায়োমেট্রিক পরিচয় তৈরি করেছি, যা আধার নামে পরিচিত।

জন ধন যোজনার মাধ্যমে আমরা প্রত্যেক ভারতবাসীকে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খুলে দেওয়ার লক্ষ্য নিয়েছি। মাত্র তিন বছরে আমরা ৩ কোটি ৩০ লক্ষ নতুন ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট চালু করেছি। এই ৩ কোটি ৩০ লক্ষ ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট হ’ল পরিচয়, আত্মপ্রত্যয় ও সুযোগের উৎস।

২০১৪ সালে দেশের ৫০ শতাংশের কম মানুষের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ছিল। এটি বর্তমানে প্রায় সর্বাত্মক।

এখন ১ কোটিরও বেশি বায়োমেট্রিক পরিচয়পত্র, ১ কোটিরও বেশি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট এবং ১ কোটিরও বেশি মোবাইল ফোন ভারতে দেওয়া হয়েছে, যা বিশ্বে সরকারি পরিকাঠামোয় সর্ববৃহৎ ব্যবস্থা।

৩ লক্ষ ৬০ হাজার কোটি টাকার বেশি মূল্যের সরকারি সুবিধা সরাসরি জনগণের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।

এখন আর দেশের দূরবর্তী কোনও গ্রামের দরিদ্র নাগরিককে তাঁর অধিকার অর্জনের জন্য লম্বা পথ পাড়ি দিতে হয় না, বা মধ্যস্থতাকারীকে টাকা দিতে হয় না।

এখন আর কোনও ভুয়ো অ্যাকাউন্ট সরকারি অর্থ লুঠ করতে পারে না। আমরা প্রায় ৮০ হাজার কোটি টাকা নষ্ট হওয়া বন্ধ করতে পেরেছি।

এতদিন পর্যন্ত যে লক্ষাধিক মানুষ, তাঁদের অ্যাকাউন্টে বিমার টাকা পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তায় ভুগতেন, বর্তমানে তাঁরা বৃদ্ধ বয়সে পেনশনের নিরাপত্তা পাচ্ছেন।

কোনও পড়ুয়া সরাসরি তাঁর অ্যাকাউন্টে বৃত্তির টাকা পান। এখন আর তাঁকে এই জন্য নানারকম কাগজপত্র পূরণ করতে হয় না।

ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থা দূরবর্তী গ্রামের দোরগোড়ায় পৌঁছে গেছে। ঐ গ্রামগুলিতে আধারের ওপর ভিত্তি করে ৪ লক্ষ অতিক্ষুদ্র এটিএম চালু করা হয়েছে।

বর্তমানে, ডিজিটাল পরিকাঠামো বিশ্বের সর্ববৃহৎ স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রকল্প আয়ুষ্মান চালু করতে সাহায্য করেছে। এরফলে, ৫ কোটি ভারতীয়কে নামমাত্র ব্যয়ে স্বাস্থ্য বিমার সুবিধা দেওয়া হবে।

মুদ্রা যোজনার আওতায় ১ কোটি ৪৫ লক্ষ ক্ষুদ্র শিল্পোদ্যোগীকে ঋণ দেওয়া সম্ভব হয়েছে। গত চার বছরে এই ঋণের অর্থ পরিমাণ ৬ লক্ষ ৫০ হাজার কোটি টাকা। এর প্রায় ৭৫ শতাংশ ঋণ দেওয়া হয়েছে মহিলাদের।

মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগে আমরা ইন্ডিয়া পোস্ট পেমেন্টস্‌ ব্যাঙ্ক চালু করেছি। সারা ভারতের ১ কোটি ৫০ হাজার পোস্ট অফিস এবং ৩ লক্ষেরও বেশি ডাকবিভাগের কর্মীরা বাড়ি থেকে বাড়ি ব্যাঙ্কিং পরিষেবা দেওয়ার জন্য প্রযুক্তির ব্যবহার করছে।

অর্থনৈতিক স্থিতাবস্থার জন্য অবশ্যই ডিজিটাল যোগাযোগ ব্যবস্থাপনার প্রয়োজন।

ভারতের ১ লক্ষ ২০ হাজারের বেশি গ্রাম পঞ্চায়েতকে ইতিমধ্যেই ৩ লক্ষ কিলোমিটার ফাইবার অপ্টিক কেবলের মাধ্যমে সংযুক্ত করা হয়েছে।

৩ লক্ষেরও বেশি সাধারণ পরিষেবা কেন্দ্র গ্রামে গ্রামে ডিজিটাল মাধ্যমে সুবিধা পৌঁছে দিচ্ছে। এর ফলে, কৃষকরা সহজে তাঁদের জমি সংক্রান্ত নথি, ঋণ, বিমা, বাজারজাতকরণ এবং পণ্যের সর্বোৎকৃষ্ট মূল্য সহ সবরকম সুবিধা পাচ্ছেন। এগুলির মাধ্যমে মহিলাদের স্বাস্থ্য পরিষেবা দেওয়া হচ্ছে।

পেমেন্ট ব্যবস্থাপনার ডিজিটাইজেশনে ফিনটেক যদি বিশাল পরিবর্তন না আনতো, তা হলে এর কোনওটাই কার্যকর করা সম্ভব হ’ত না।

ভারতের পরিস্থিতি বিচিত্র ও নানা চ্যালেঞ্জসম্পন্ন। তাই আমাদের সমাধানগুলিও বিশেষ ধরণের হওয়া প্রয়োজন। আমাদের ডিজিটাইজেশন ব্যবস্থাপনা সফল হয়েছে, কারণ এর ফলে প্রত্যেককে পেমেন্টের সুবিধা দেওয়া সম্ভব হয়েছে।

মোবাইল ও ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের জন্য পেমেন্টের সুবিধা দিতে বিশ্বের সবচেয়ে সহজ ভীম ইউপিআই ব্যবস্থাপনা আনা হয়েছে। যাঁদের মোবাইল আছে কিন্তু ইন্টারনেট পরিষেবা নেই, তাঁদের জন্য আনা হয়েছে ১২টি ভাষায় ইউএসএসডি ব্যবস্থাপনা।

এবং যাঁদের মোবাইল নেই, ইন্টারনেট পরিষেবাও নেই, তাঁদের জন্য বায়োমেট্রিক ব্যবহার করে আধার-নির্ভর পেমেন্ট ব্যবস্থা করা হয়েছে। এতে ১ কোটিরও বেশি লেনদেন ইতিমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে, যা গত দু’বছরে প্রায় ছ’গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।

প্রত্যেকের ক্ষমতার মধ্যে রুপে ব্যবস্থা আনা হয়েছে। এর ফলে, গত চার বছর আগে যাঁদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ছিল না, এরকম ২ কোটি ৫০ লক্ষ মানুষ অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন।

কার্ড থেকে কিউআর এবং ওয়ালেট – এই ডিজিটাল পরিবর্তন ভারতে দ্রুত রূপায়িত হচ্ছে। বর্তমানে দেশের ১২৮টি ব্যাঙ্ক ইউপিআই ব্যবস্থাপনায় সংযুক্ত।

কিন্তু গতির থেকেও আমি ডিজিটাল পেমেন্ট ব্যবস্থা থেকে পাওয়া সুযোগ, ক্ষমতা ও স্বচ্ছতায় বেশি উৎসাহ বোধ করি।

একজন দোকানদার এখন তাঁর রোজগারের টাকা আদায় ও খরচ কমানোর কাজে অনলাইন ব্যবস্থার সুবিধা নেন।

একজন ফল চাষী, কৃষক বা গ্রামীণ মজদুর সহজেই তাঁদের সামগ্রী সরাসরি বাজারে পৌঁছতে পারেন। এর ফলে, তাঁদের আয় বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং পেমেন্টও দ্রুতগতিতে হচ্ছে।

প্রতিটি ডিজিটাল পেমেন্ট ব্যবস্থাপনা সময় বাঁচায়। এর ফলে, দেশের বিপুল সাশ্রয় হয়। এটি প্রত্যেক ব্যক্তি ও দেশের অর্থনীতি উৎপাদনশীলতা বাড়াচ্ছে।

এটি কর সংগ্রহের পরিমাণ বাড়িয়েছে এবং অর্থনীতিতে স্বচ্ছতা এনেছে।

সর্বোপরি, ডিজিটাল পেমেন্ট সম্ভাবনাময় বিশ্বের সূচনা।

তথ্য বিশ্লেষণ ও কৃত্রিম মেধা জনগণকে সামগ্রিক মানের পরিষেবা দিতে সাহায্য করছে। এরফলে, এর আগে যাঁরা ঋণ নেননি, তারাও ঋণের সুবিধা পাচ্ছেন।

অর্থনৈতিক স্থিতাবস্থার অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প ক্ষেত্রেও পৌঁছে যাচ্ছে।

এগুলি সবই সম্ভব হচ্ছে মাত্র এক বছর আগে চালু হওয়া দেশব্যাপী অভিন্ন পণ্য ও পরিষেবা কর বা জিএসটি ডিজিটাল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে।

ব্যাঙ্ক এখন ঋণ নিয়ে সরাসরি তাঁদের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে। এখন আর তাঁদের চড়া সুদে বাজার থেকে ঋণ নিতে হয় না।

এই মাসেই আমরা অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোগীদের ব্যাঙ্কে না গিয়েই মাত্র ৫৯ মিনিটে ১ কোটি টাকা পর্যন্ত ঋণ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছি। মাত্র কয়েকদিনের মধ্যেই ১ লক্ষ ৫০ হাজার এ ধরণের শিল্পোদ্যোগী ঋণের জন্য আবেদন জানিয়েছেন।

কর্মসংস্থান ও উন্নয়ন পরিচালনায় এটি ফিনটেকের ক্ষমতা।

ডিজিটাল প্রযুক্তি দুর্নীতি দূর করতে ও স্বচ্ছতা আনতে সহায়ক হয়েছে। এই লক্ষ্যে সরকারি সংস্থার মাধ্যমে সামগ্রী ক্রয় করার জন্য একটি ঐক্যবদ্ধ প্ল্যাটফর্ম হ’ল ‘জেম’।

এতে দরপত্র, অনলাইনে অর্ডার, কন্ট্রাক্ট, স্বাক্ষর, পেমেন্ট সহ সবরকম সুবিধা রয়েছে।

এতে ইতিমধ্যেই ৬ লক্ষেরও বেশি সামগ্রী রয়েছে। ৩০ হাজারেরও বেশি পণ্য ক্রয় করে এমন সংস্থা এবং ১ লক্ষ ৫০ হাজারেরও বেশি বিক্রেতা ও সুবিধা প্রদানকারী এই প্ল্যাটফর্মে তাঁদের না নথিভুক্ত করিয়েছেন।

বন্ধুগণ, ভারতীয় শিল্পে ফিনটেক উদ্ভাবনের বিস্তৃত প্রসার হয়েছে। সারা বিশ্বের কাছে স্টার্ট আপ দেশ হিসাবে ও নেতৃত্বদানকারী ফিনটেক হিসাবে ভারতের পরিচয় তৈরি হয়েছে। ফিনটেক ক্ষেত্রে ভারতের ভবিষ্যৎ ক্রমশ উজ্জ্বল হয়ে উঠছে।

আমাদের তরুণ প্রজন্ম কাগজ বিহীন, নগদ বিহীন ও ব্যক্তি উপস্থিতি বিহীন কিন্তু সুরক্ষিতভাবে কাজ সম্পন্ন করবে – এই স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে অ্যাপ তৈরি করছে।

তাঁরা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ও ব্লক চেন ব্যবহার করে নানারকম সমাধান তৈরি করছে।

তরুণ প্রজন্ম স্বাস্থ্য থেকে শিক্ষা, ক্ষুদ্র ঋণ থেকে শুরু করে বিমা – সব ক্ষেত্রেই দেশের সামাজিক লক্ষ্য পূরণের জন্য কাজ করে চলেছে।

ডিজিটাল ইন্ডিয়া ও স্টার্ট আপ ইন্ডিয়ার মতো কর্মসূচি থেকে এই উদ্যোগগুলি নেওয়া হচ্ছে। এটি ভারতকে বিশ্বের দরবারে সবচেয়ে কম খরচে তথ্য সংগ্রহের সর্ববৃহৎ দেশ হিসাবে পরিচয় দিচ্ছে। তাই আমি সব ফিনটেক কোম্পানি ও স্টার্ট আপ কোম্পানিগুলিকে বলব যে, ভারতই হচ্ছে আপনার বিনিয়োগের সর্বোৎকৃষ্ট দেশ।

এলইডি বাল্ব শিল্পের মধ্য দিয়ে ভারত শক্তি সঞ্চয়ের পাশাপাশি, স্বল্প মূল্যে সকলের জন্য বিদ্যুতের ব্যবস্থা করে দিতে সক্ষম হয়েছে। ভারতে বিশাল বাজার ফিনটেক সামগ্রীর জন্য স্বল্প ব্যয়ে সবচেয়ে কম ঝুঁকিপূর্ণ। সহজেই এর মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে পৌঁছনো সম্ভব।

বন্ধুগণ,

সংক্ষেপে ভারতের ফিনটেকের ছ’টি প্রধান সুবিধা রয়েছে, সেগুলি হ’ল – প্রবেশ, দায়িত্ব, যোগাযোগ, জীবনযাত্রার মান সহজ করা, সুযোগ এবং অন্তর্ভুক্তি।

সারা বিশ্বে ভারত – প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল থেকে আফ্রিকা থেকে ল্যাটিন আমেরিকা সর্বত্রই আমরা সাধারণ জীবনযাত্রার মান পরিবর্তনে উদ্ভাবনের বিশেষ উৎসাহমূলক কাহিনী দেখতে পাই।

কিন্তু এক্ষেত্রে আরও অনেক কিছু করার আছে। আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিৎ, সকলের জন্য উন্নয়ন।

ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নেই এমন ১ কোটি ৭০ লক্ষেরও বেশি বিশ্ববাসীকে আনুষ্ঠানিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার অন্তর্ভুক্ত করা আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিৎ।

সারা বিশ্বে ইনফরমাল ক্ষেত্রে যে কোটি কোটি শ্রমিক কাজ করেন, তাঁদের বিমা ও পেনশনের সুবিধা দিতে হবে আমাদের। এখনও তাঁরা এই সুযোগ থেকে বঞ্চিত।

অর্থের সুবিধার অভাবে কোনও শিল্পের সৃষ্টি যেন বন্ধ না হয় এবং কোনও স্বপ্নই যেন অধরা না থাকে, তা সুনিশ্চিত করতে আমাদের ফিনটেক ব্যবহার করতে হবে।

ব্যাঙ্ক ও অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলিকে আমাদের আরও ঝুঁকি মুক্ত ও সহজ করে তুলতে হবে। দুর্নীতির মোকাবিলায় এরা যেন আরও কার্যকর ভূমিকা নিতে পারে – সে বিষয়ে নজর দিতে হবে।

অর্থ তছরূপ এবং অন্যান্য অর্থনৈতিক দুর্নীতি মোকাবিলায় আমাদের অবশ্যই ফিনটেক টুল ব্যবহার করতে হবে। আমাদের তথ্য ও সামগ্রিক ব্যবস্থাপনা যখন বিশ্বাসযোগ্য ও নিরাপদ হবে, তখন বিশ্ব অর্থনীতির আরও উন্নতি হবে।

সাইবার হুমকির মোকাবিলায় আমাদের আন্তর্জাতিক ব্যবস্থাপনাকে আরও সুরক্ষিত করতে হবে।

ফিনটেক কাজের সুবিধা যেন জনগণের কাছে উপকারী হয়, সে বিষয়টি সুনিশ্চিত করতে হবে। অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে প্রযুক্তির ব্যবহার পরিস্থিতির উন্নয়নকেই সুনিশ্চিত করে।

সাধারণ জনগণের জন্য চালু করা প্রযুক্তির ব্যবহার সম্পর্কে তাঁদের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে হবে।

এর জন্য ফিনটেকের প্রয়োজন প্রচার কর্মসূচির।

সবশেষে, ভবিষ্যতের জন্য দক্ষতা উন্নয়নে আমাদের বিনিয়োগ করতে হবে। দীর্ঘ মেয়াদী লগ্নির জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

বন্ধুগণ,

প্রতিটি যুগ তার নিজের সুযোগ ও চ্যালেঞ্জ দিয়ে পরিচিত হয়। ভবিষ্যৎ গঠনে প্রত্যেক প্রজন্মেরই দায়িত্ব রয়েছে।

এই প্রজন্ম সারা বিশ্বের প্রতিটি মানুষের হাতের রেখার সঠিক আকার দিতে সাহায্য করবে।

ইতিহাসে এর আগে এত সম্ভাবনাময় সময় আর কখনও আসেনি।

সুযোগ ও সম্ভাবনা বৃদ্ধিতে এবং কোটি কোটি মানুষের জন্য চিরতরে উন্নয়নকে বাস্তব রূপ দিতে হবে।

বিশ্বকে আরও মানবিক ও বৈষম্যহীন করে তুলতে এবং আশা ও লক্ষ্য অর্জনের মধ্যে ফারাক দূর করতে উদ্যোগ নিতে হবে।

ভারত অন্যদের থেকে যেমন শিখবে, তেমনই সারা বিশ্বের সঙ্গে আমরা আমাদের অভিজ্ঞতাকে ভাগ করে নেব।

কারণ, ভারতকে যা চালিত করে, তা অন্যদের জন্য আশার সঞ্চার করে। আমরা ভারতের জন্য যা স্বপ্ন দেখি, গোটা বিশ্ব তা অর্জন করবে সেই আশা করি।

এটি সর্বসাধারণের যাত্রা।

আলোর উৎসবের মতো অন্ধকার দূর করে আলো ছড়িয়ে দিতে এই উৎসবও আমাদের আশা ও আনন্দ সঞ্চারে এবং মানবতার লক্ষ্যে উন্নত ভবিষ্যৎ গড়তে একযোগে কাজ করার জন্য উদ্বুদ্ধ করে।

ধন্যবাদ

CG/PM/SB