আমার মন্ত্রী পরিষদের সহযোগী, মহেশ শর্মা মহোদয়, আজাদ হিন্দ ফৌজের সদস্য এবং দেশের বীর সন্তান শ্রদ্ধেয় লালটি রাম মহোদয়, সুভাষবাবুর ভাইপো ভাই চন্দ্রকুমার বসু মহোদয়, ব্রিগেডিয়ার আর এস চিকারা মহোদয় এবং এখানে উপস্থিত প্রতিরক্ষা বাহিনীগুলির প্রাক্তন আধিকারিকবৃন্দ, অন্যান্য সম্মানিত ব্যক্তিবর্গ, ভাই ও বোনেরা,
আজ ২১শে অক্টোবর একটি ঐতিহাসিক দিন। আমি নিজেকে অত্যন্ত ভাগ্যবান বলে মনে করি। আজ থেকে ৭৫ বছর আগে যেখানে নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু ‘ভিক্টরি প্যারেড’-এর স্বপ্ন দেখেছিলেন – এটি সেই লালকেল্লা। আজাদ হিন্দ সরকারের প্রথম প্রধানমন্ত্রী রূপে শপথ নিয়ে নেতাজী ঘোষণা করেছিলেন যে, একদিন এই লালকেল্লায় অত্যন্ত গৌরবের সঙ্গে ত্রিবর্ণ রঞ্জিত পতাকা উত্তোলিত হবে। এই আজাদ হিন্দ সরকার ছিল অখন্ড ভারতের স্বপ্নের সরকার। আমি দেশবাসীদের আজাদ হিন্দ সরকারের ৭৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে অনেক অনেক অভিনন্দন জানাই।
বন্ধুগণ, নিজের লক্ষ্যের প্রতি যে ব্যক্তির দূরদৃষ্টি এত স্পষ্ট ছিল, সেই লক্ষ্য পূরণের জন্য তিনি সর্বস্ব উৎসর্গ করেছিলেন। এমন মানুষের স্মৃতি প্রজন্মের পর প্রজন্মকাল ধরে মানুষের প্রেরণা যুগিয়ে যাবে। আমি প্রণাম জানাই সেই মাতাপিতাকে যাঁরা নেতাজীর মতো সুপুত্রকে জন্ম দিয়েছেন। প্রণাম জানাই সেই মাতাপিতাদের, যাঁরা দেশের জন্য উৎসর্গীকৃত প্রাণ বীর-বীরাঙ্গনাদের জন্ম দিয়েছিলেন। আমি নত মস্তকে সেই অসংখ্য সৈনিক এবং তাঁদের পরিবাগবর্গকে প্রণাম জানাই, যাঁরা স্বাধীনতা যুদ্ধে নিজেদের সর্বস্ব উৎসর্গ করেছিলেন। আমি সারা সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে থাকা সেই ভারতবাসীদের প্রণাম জানাই। নেতাজীর এই অভিযানে তন-মন-ধন দিয়ে সহযোগিতা করেছেন এবং স্বাধীন, সমৃদ্ধ ও শক্তিশালী ভারত গড়তে নিজেদের বহুমূল্য অবদান রেখেছেন।
বন্ধুগণ, এই আজাদ হিন্দ সরকার নেতাজীর নেতৃত্বে সমস্ত ক্ষেত্রের জন্য নিজেদের পরিকল্পনা-মাফিক কাজ শুরু করেছিল। নিজস্ব ব্যাঙ্ক, নিজস্ব মুদ্রা, ডাকটিকিট এবং স্বতন্ত্র গুপ্তচর বাহিনী। দেশের বাইরে থেকে সীমিত সম্পদ নিয়ে একটি শক্তিশালী সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে এত ব্যাপক ব্যবস্থা বিকশিত করা একটি অসাধারণ ব্যাপার ছিল, যা আমাদের স্বাধীনতা আন্দোলনকে একটি শক্তিশালী পর্যায়ে পৌঁছে দিয়েছিল।
নেতাজী এমন একটি সরকারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য অসংখ্য মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে পেরেছিলেন, যে সরকারের সাম্রাজ্যে কখনও সূর্য অস্ত যেতো না। নেতাজীর লেখা বইগুলি পড়লে জানা যায় যে, কিভাবে ছোটবেলা থেকেই তাঁর মনে এই শ্রেষ্ঠ বীর হয়ে ওঠার ভিত গড়ে উঠেছিল।
আজ থেকে ১০৬ বছর আগে ১৯১২ সাল নাগাদ তিনি তাঁর মা-কে চিঠিতে যে কথা লিখেছিলেন, সেখানে পরাধীন ভারতের দুর্দশা, পরাধীনতার যন্ত্রণা ফুটে উঠেছিল। তখন তাঁর বয়স ১৫-১৬ বছরের বেশি ছিল না। কয়েক শতাব্দীর পরাধীনতা দেশকে যেরকম জর্জর করে তুলেছিল, তার যন্ত্রণা তিনি মায়ের কাছে চিঠিতে লিখে প্রশ্ন করেছিলেন যে, মা আমাদের দেশের কি ভবিষ্যতে আরও অবনতি ঘটবে? এই দুঃখিনী ভারতমায়ের এমন কোনও সন্তান জন্মাবেন না, যিনি নিজের স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে সারা জীবন দেশের সেবায় সমর্পণ করবেন! বল মা, আমরা আর কতদিন ঘুমিয়ে থাকব?
ভাই ও বোনেরা, সেই চিঠিতেই তিনি মায়ের কাছে রাখা প্রশ্নগুলির উত্তরও দিয়েছিলেন। তিনি মা-কে স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন যে, এখন আর প্রতীক্ষা সম্ভব নয়, আর ঘুমিয়ে থাকার সময় নেই। এখন নিজেদের জড়তা কাটিয়ে জেগে উঠতে হবে, আলস্য ত্যাগ করতে হবে এবং কর্মে ডুবে যেতে হবে। নিজের অন্তরের এই তীব্র ইচ্ছা কিশোর সুভাষ-কে নেতাজী সুভাষ করে গড়ে তুলেছিল।
নেতাজীর একটাই উদ্দেশ্য ছিল, একটাই লক্ষ্য ছিল – ভারতের স্বাধীনতা। মা ভারত-কে পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করা – এটাই ছিল তাঁর ভাবধারা এবং কর্ম ক্ষেত্র। তাঁকে নিজেদের জীবনের এই লক্ষ্য স্থির করতে এবং নিজের অস্তিত্ব সমর্পণের মন্ত্র তিনি স্বামী বিবেকানন্দ এবং তাঁর শিক্ষা থেকে নিয়েছেন – আত্মনো মোক্ষার্দম জগত হিতায় চ – অর্থাৎ জগতের সেবাতেই মুক্তির পথ উন্মোচিত হয়। তাঁর দর্শনের প্রধান ভিত্তি ছিল জগতের সেবা। দেশ সেবার এই মনোভাব থেকেই তিনি সমস্ত কষ্ট সহ্য করে, সমস্ত বাধা অতিক্রম করে, সমস্ত ষড়যন্ত্রকে নস্যাৎ করে গেছেন।
ভাই ও বোনেরা, সুভাষবাবু এমনই সৈনিক ছিলেন, যিনি সময়ের সঙ্গে নিজেকে পরিবর্তন করেছেন এবং লক্ষ্য স্থির রেখে এগিয়ে গেছেন। সেজন্য তিনি আগে মহাত্মা গান্ধীর সঙ্গে কংগ্রেসে থেকে দেশের মধ্যেই স্বাধীনতা আন্দোলন শুরু করেছিলেন। কিন্তু পরে, পরিস্থিতি অনুযায়ী সশস্ত্র সংগ্রামের পথ বেছে নেন। তাঁর এই আন্দোলন ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনকে ত্বরান্বিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
বন্ধুগণ, সুভাষবাবু যেভাবে বিশ্ব সম্পর্ক গড়ে তুলেছিলেন, তার সুফল শুধু ভারত নয়, অন্যান্য দেশও পেয়েছে। সেই সময় পৃথিবীর যতগুলি দেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম চলছিল সর্বত্রই তিনি একটি প্রতীক হয়ে উঠেছিলেন। তিনি মনে করতেন কোনও কিছুই অসম্ভব নয়। আমরাও সংগঠিত হতে পারি, ইংরেজদের প্রতিস্পর্ধা জানাতে পারি, আমরাও স্বাধীন হতে পারি। দক্ষিণ আফ্রিকার মহান স্বাধীনতা সংগ্রামী ও পরবর্তীকালে রাষ্ট্রপতি ভারতরত্ন নেলসন ম্যান্ডেলা মহোদয় বলেছিলেন, দক্ষিণ আফ্রিকার ছাত্র আন্দোলনে নেতৃত্ব প্রদানের সময় তিনিও সুভাষবাবুকেই নেতা মনে করতেন, হিরো মনে করতেন।
ভাই ও বোনেরা, আজ আমরা আজাদ হিন্দ সরকারের ৭৫তম বর্ষ পালন করছি। আর চার বছর পর ২০২২ সালে ভারতের স্বাধীনতার ৭৫ বছর পূর্তি পালন করব। আজ থেকে ৭৫ বছর আগে নেতাজী শপথ গ্রহণের সময় এমন এক ভারত নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, যেখানে সকলের সমান অধিকার ও সুযোগ থাকবে। তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, দেশের প্রাচীন ঐতিহ্য থেকে প্রেরণা নিয়ে আরও সমৃদ্ধ ও সুখী ভারত নির্মাণ করবেন। তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, দেশের ভারসাম্যযুক্ত উন্নয়ন এবং প্রতিটি ক্ষেত্রের বিকাশ। তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন ‘বিভাজন কর আর শাসন কর’ নীতিকে শিকড় থেকে উপড়ে ফেলতে হবে। কারণ, এই ‘বিভাজন কর আর শাসন কর’ নীতিই ভারতকে কয়েক শতাব্দীকাল পরাধীন রেখেছে।
আজ স্বাধীনতার এত বছর পরও নেতাজীর স্বপ্ন বাস্তবায়িত হয়নি। ভারত অনেক পা এগিয়েছে কিন্তু এখনও পর্যন্ত নতুন উচ্চতায় পৌঁছানো বাকি রয়েছে। এই লক্ষ্য পূরণের জন্য আজ ভারতের ১২৫ কোটি মানুষ নতুন ভারতের সংকল্প নিয়ে এগিয়ে চলেছে। একটি এমন নতুন ভারত, যার কল্পনা নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু করেছিলেন। আজ যখন অনেক বিধ্বংসী শক্তি দেশকে ভেতর ও বাইরে থেকে আক্রমণ করে আমাদের স্বাধীনতা, ঐক্য এবং সংবিধানকে আঘাত হানছে, ভারতের প্রত্যেক নাগরিকের এটা কর্তব্য – নেতাজী থেকে প্রেরণা গ্রহণ করে সেই অশুভ শক্তিগুলির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করা, তাদের পরাভূত করা এবং দেশের উন্নয়নে নিজেদের সম্পূর্ণ অবদান রাখার সংকল্প গ্রহণ করা।
কিন্তু বন্ধুগণ, এই সংকল্পগুলির পাশাপাশি আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হ’ল – জাতীয়তা বোধ। এই লালকেল্লায় আয়োজিত বিচারসভায় আজাদ হিন্দ সৈন্য শাহনওয়াজ খান বলেছিলেন যে, সুভাষ চন্দ্র বসুই প্রথম ব্যক্তি যিনি তাঁর মনে স্বাধীন ভারতের নাগরিক হওয়ার স্পৃহা জাগিয়ে তুলেছিল। কোন্ পরিস্থিতিতে শাহনওয়াজ খান একথা বলেছিলেন? ভারতকে একজন ভারতীয়র দৃষ্টিতে দেখার কী প্রয়োজন ছিল? এটা আজ যখন আমরা দেশের পরিস্থিতি দেখি, তখন আরও স্পষ্টভাবে বুঝতে পারি।
বন্ধুগণ, সুভাষবাবু নিজের কেম্ব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিজ্ঞতা স্মরণ করে বলেছিলেন যে, ভারতীয়দের ইংল্যান্ডের চশমা পরিয়ে ইউরোপ দর্শন করানো হয়। কারণ সেখানে গ্রেট ব্রিটেনের বড় অস্তিত্ব রয়েছে। আমাদের দুর্ভাগ্য যে, স্বাধীনতার পরও ভারত আর এদেশের ব্যবস্থার রচয়িতারা ভারতকেও ইংল্যান্ডের চশমা দিয়ে দেখেছিলেন।
এই অদূরদর্শিতার জন্য আমাদের সংস্কৃতি, আমাদের ঐতিহ্যশালী ভাষাগুলি, আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা ও পাঠ্যক্রমকে অনেক মূল্য দিতে হয়েছে। আজ আমি নিশ্চিতভাবে বলতে পারি যে, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর কয়েক দশক যদি সুভাষবাবু এবং সর্দার প্যাটেলের মতো ব্যক্তিত্বদের নেতৃত্বে দেশ চলতো, তা হলে দেশকে দেখার জন্য এ ধরণের বিদেশি চশমার প্রয়োজন হ’ত না এবং পরিস্থিতি অনেক ভিন্ন হ’ত।
বন্ধুগণ, এটা অত্যন্ত দুঃখজনক যে, একটি পরিবারকে বড় দেখানোর জন্য দেশের অনেক সুপুত্র – তা তিনি সর্দার প্যাটেলই হন বা বাবাসাহেব আম্বেদকর কিংবা নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু, এদের অবদানকে বিস্মৃত করার অনেক প্রচেষ্টা চালানো হয়েছে। এখন আমাদের সরকার পরিস্থিতির বদল ঘটাচ্ছে। আপনারা সবাই হয়তো জানেন যে, এখানে আসার আগে আমি জাতির উদ্দেশে রাষ্ট্রীয় পুলিশ স্মারক উৎসর্গ অনুষ্ঠান থেকে আসছি। সেখানে আমি নেতাজী সুভাশ চন্দ্র বসুর নামে একটি রাষ্ট্রীয় সম্মান চালু করার কথা ঘোষণা করেছি।
আমাদের দেশে যখন প্রাকৃতিক বিপর্যয় হয়, তখন বিপর্যয় মোকাবিলা, ত্রাণ ও পুনর্বাসনে অন্যদের জীবন বাঁচাতে নিজের জীবন বাজি রেখে ঝাঁপিয়ে পড়েন যে বীরেরা, তাঁদেরই মধ্যে শ্রেষ্ঠ পুলিশ কর্মীদের প্রতি বছর নেতাজীর নামে একটি সম্মান প্রদান করা হবে। দেশের শৌর্য বৃদ্ধির জন্য আমাদের পুলিশের জওয়ান ও আধা সামরিক বাহিনীর সৈনিকরা এই সম্মান পাবেন।
বন্ধুগণ, দেশের ভারসাম্যযুক্ত উন্নয়ন সমাজে প্রত্যেক স্তরের প্রত্যেক ব্যক্তিকে রাষ্ট্র নির্মাণের সুযোগ প্রদান, দেশের উন্নয়নে তাঁদের ভূমিকাকে সম্মান জানানো, নেতাজীর বিস্তারিত দৃষ্টিভঙ্গীর একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। আজাদ হিন্দ সরকার পূর্ব ভারতকে স্বাধীনতার গেটওয়ে করে তুলেছিল। ১৯৪৪ সালের এপ্রিল মাসে কর্ণেল সৌকম মলিকের নেতৃত্বে মণিপুরের মোয়রাং-এ আজাদ হিন্দ ফৌজ ত্রিবর্ণ রঞ্জিত পতাকা উত্তোলন করেছিল।
দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে যে উত্তর-পূর্ব তথা পূর্ব ভারতের এত গুরুত্বপূর্ণ অবদান ছিল, এটা আমাদের দুর্ভাগ্য যে স্বাধীনতার পর সেই পূর্ব ভারত উন্নয়ন দিক থেকে পিছিয়ে পড়ল। আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে, সুভাষ চন্দ্র বসু যেভাবে পূর্ব ভারতের গুরুত্বকে বুঝেছিলেন, তেমনই স্বাধীনতার এত বছর পর বর্তমান সরকার পূর্ব ভারতের গুরুত্বকে অনুধাবন করে সুপরিকল্পিতভাবে নিজেদের পূর্বমুখী উন্নয়ন যাত্রাকে অগ্রাধিকার দিয়েছে।
ভাই ও বোনেরা, আমি নিজেকে সৌভাগ্যবান বলে মনে করি যে, দেশের জন্য নেতাজী যা রেখে গেছেন, তাকে দেশের সামনে তুলে ধরা এবং তাঁর প্রদর্শিত পথে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ আমি পেয়েছি। সেজন্য আজকের এই অনুষ্ঠানে আসার নিমন্ত্রণ পেয়ে গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন সময়ে নেতাজীর প্রদর্শিত পথে কিছু পদক্ষেপ নেওয়ার কথা মনে পড়ে যায়।
বন্ধুগণ, আমি যখন গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী ছিলাম, তখন ২০০৯ সালে কংগ্রেসের ঐতিহাসিক হরিপুরা অধিবেশন নিয়ে একটি পুনর্নির্মাণ প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছিল। সেই অধিবেশনে সর্দার বল্লভ ভাই প্যাটেল এবং গুজরাটের জনগণ যেভাবে সুভাষ চন্দ্র বসুকে কংগ্রেসের অধ্যক্ষ নির্বাচিত হওয়ার পর মোষের গাড়িতে চড়িয়ে অনেক বড় শোভাযাত্রা বের করেছিলেন, তেমনই একটি শোভাযাত্রাও পুনর্নির্মাণ করা হয়েছিল। আমরা বিরোধী দলের লোক হয়েও ইতিহাসকে অবিকৃত রাখতে কংগ্রেসের অধিবেশনের স্মৃতিকে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তুলে ধরার চেষ্টা করেছিলাম।
বন্ধুগণ, স্বাধীনতার জন্য যাঁরা আত্মোৎসর্গ করেছিলেন, এটা তাঁদের সৌভাগ্য ছিল। কিন্তু আমরা সেই সুযোগ পাইনি। আমাদের সবার দেশের জন্য বেঁচে থাকা, উন্নয়নের জন্য আত্মোৎসর্গ করার পথ খোলা রয়েছে। ১২৫ কোটি ভারতবাসীর সামনে এই স্বাধীনতা থেকে সুশাসনের প্রক্রিয়া জারি রাখার চ্যালেঞ্জ রয়েছে। নেতাজী বলেছিলেন, ‘অস্ত্রের শক্তি আর রক্তের মূল্যে তোমাদের স্বাধীনতা অর্জন করতে হবে। তারপর যখন ভারত স্বাধীন হবে তখন দেশের জন্য স্থায়ী সেনা গড়ে তুলতে হবে, যাঁদের কাজ হবে আমাদের স্বাধীনতাকে চিরকাল রক্ষা করা’।
আজ আমি বলতে পারি যে, ভারত এমনই এক সেনা দল গড়ে তোলার পথে এগিয়ে চলেছে, যেমনটি নেতাজী স্বপ্ন দেখেছিলেন। উৎসাহ ও উদ্দীপনা আমাদের সৈন্যদের প্রধান শক্তি। এখন এর সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি এবং আধুনিক সমরাস্ত্র। আমাদের সৈনাবাহিনীর শক্তি সর্বদাই আত্মরক্ষার জন্য গড়ে তোলা এবং ভবিষ্যতেও তাই থাকবে। আমাদের কখনই অন্যের মাটির প্রতি কোনও লোভ ছিল না। কিন্তু সহস্রাব্দীর ইতিহাস সাক্ষী যখনই কোনও শক্তি ভারতের স্বাধীনতা হরণ করতে চেয়েছে, তখনই তারা তার যথাযথ জবাব পেয়েছে।
বন্ধুগণ, আমরা গত চার বছরে সেনাবাহিনীর শক্তি বৃদ্ধির জন্য, বীর সৈনিকদের জীবনকে সহজ করে তোলা এবং সৈন্য ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য অনেক বড় ও কড়া সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সার্জিকাল স্ট্রাইক থেকে শুরু করে নেতাজি সংক্রান্ত ফাইলগুলিকে সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করার সিদ্ধান্তের মতো এমনই অনেক পদক্ষেপ নিয়েছি। এখানে উপস্থিত অনেক অবসরপ্রাপ্ত সৈনিক এর সাক্ষী যে বিগত কয়েক দশক ধরে তাঁদের যে ‘এক পদ, এক পেনশন’-এর দাবিপুরণ নিয়ে নানা টালবাহানা চলছিল আমরা সরকারের দায়িত্ব নিয়ে প্রতিশ্রুতিমতো তাঁদের সেই দাবি পূরণ করেছি।
শুধু তাই নয়, প্রায় ১১,০০০ কোটি টাকা ‘এরিয়ার’-ও তাঁরা পেয়েছেন। এর দ্বারা লক্ষ লক্ষ অবসরপ্রাপ্ত সৈনিক উপকৃত হয়েছেন। পাশাপাশি, বেতন কমিশনের সুপারিশে তাঁদের যে পেনশন নির্ধারিত হয়েছে, তা-ও ‘এক পদ, এক পেনশন’ চালু হওয়ার পর প্রথম পেনশন ভিত্তি করে বৃদ্ধি পেয়েছে।
এছাড়া, আজকের সৈনিকদের শৌর্য সম্পর্কে যাতে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম জানতে পারে, সেজন্য ন্যাশনাল ওয়ার মিউজিয়াম গঠনের কাজ এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।
বন্ধুগণ, আগামীকাল ২২ অক্টোবর রানী ঝাঁসি রেজিমেন্টেরও ৭৫ বছর পূর্ণ হতে চলেছে। সশস্ত্র সেনায় মহিলাদের সমান অংশীদারিত্বের ভিত্তিও নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসুই স্থাপন করে গেছেন। দেশের প্রথম সশস্ত্র মহিলা রেজিমেন্ট ভারতের সমৃদ্ধ ঐতিহ্যের প্রতি সুভাষবাবুর অগাধ বিশ্বাসের পরিণাম ছিল। সমস্ত বিরোধীদের সমালোচনা অগ্রাহ্য করে তিনি মহিলা সৈনিকদের সেলামী গ্রহণ করেছিলেন।
আমি গর্বের সঙ্গে বলতে পারি যে, নেতাজী যে কাজ ৭৫ বছর আগে শুরু করেছিলেন, তার সদর্থক বাস্তবায়ন বর্তমান সরকারই করেছে। গত ১৫ আগস্ট আমি লালকেল্লার প্রাকার থেকে একটি বড় ঘোষণা করেছি, সেটি হ’ল – শর্ট সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে নিযুক্ত মহিলা আধিকারিকদের তাঁদের পুরুষ সমকক্ষদের মতোই একটি স্বচ্ছ নির্বাচন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে স্থায়ী কমিশন প্রদান করা হবে।
বন্ধুগণ, এটা সরকারের বিগত চার বছরের বিভিন্ন সদর্থক পদক্ষেপের অগ্রগতি মাত্র। ২০১৬ সালের মার্চ মাসে ভারতীয় নৌ-বাহিনীকে মহিলাদের পাইলট নিযুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। কিছুদিন আগেই নৌ-বাহিনীর ৬ জন বীরাঙ্গনা আধিকারিক সাত সমুদ্র জয় করে ভারতের নারী শক্তির পরিচয় বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরেছে। এছাড়া, দেশের প্রথম মহিলা ফাইটার পাইলট নিয়োগের প্রক্রিয়াও বর্তমান সরকারের আমলেই হয়েছে।
আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে, স্বাধীন ভারতে প্রথমবার সশস্ত্র সেনাবাহিনীকে শক্তিশালী করার দায়িত্ব দেশের প্রথম মহিলা প্রতিরক্ষা মন্ত্রী শ্রীমতী সীতারমন-কে প্রদান করা হয়েছে।
বন্ধুগণ, আজ আপনাদের সকলের সহযোগিতায় সশস্ত্র সেনা দলের দক্ষতা এবং শৌর্যে দেশ সম্পূর্ণভাবে নিরাপদ, সক্ষম ও উন্নয়নের পথে সঠিক লক্ষ্যে দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে।
আরেকবার আপনাদের সবাইকে, সমগ্র দেশবাসীকে এই গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠান উপলক্ষে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাই। দেশের ঐক্য, অখন্ডতা এবং আত্মবিশ্বাস অর্জনের জন্য আমাদের এই যাত্রা সর্বদা নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসুর আশীর্বাদ ধন্য হয়ে থাকুক – এই কামনা নিয়ে আপনারা সবাই আমার সঙ্গে বলুন –
ভারতমাতা কী – জয়
ভারতমাতা কী – জয়
ভারতমাতা কী – জয়
বন্দে – মাতরম্
বন্দে – মাতরম্
বন্দে – মাতরম্
অনেক অনেক ধন্যবাদ।
CG/SB/SB
Members of the Azad Hind Fauj fought valiantly for India’s freedom.
— Narendra Modi (@narendramodi) October 21, 2018
We will always be grateful to them for their courage.
Today, I had the honour of meeting Lalti Ram Ji, an INA veteran. It was wonderful spending time with him. pic.twitter.com/5vjuFTf3BV
It was a privilege to hoist the Tricolour at the Red Fort, marking 75 years of the establishment of the Azad Hind Government.
— Narendra Modi (@narendramodi) October 21, 2018
We all remember the courage and determination of Netaji Subhas Bose. pic.twitter.com/m9SuBTxhPQ
By setting up the Azad Hind Fauj and the Azad Hind Government, Netaji Subhas Bose showed his deep commitment towards a free India.
— Narendra Modi (@narendramodi) October 21, 2018
This spirit of nationalism was a part of him from his young days, as shown in a letter he wrote to his mother. pic.twitter.com/21SxPLW0Rk
All over the world, people took inspiration from Netaji Subhas Bose in their fights against colonialism and inequality.
— Narendra Modi (@narendramodi) October 21, 2018
We remain committed to fulfilling Netaji's ideals and building an India he would be proud of. pic.twitter.com/axeQPnPHGN
Subhas Babu always took pride in India's history and our rich values.
— Narendra Modi (@narendramodi) October 21, 2018
He taught us that not everything must be seen from a non-Indian prism. pic.twitter.com/9qKPTILBWt
It is unfair that in the glorification of one family, the contribution of several other greats was deliberately forgotten.
— Narendra Modi (@narendramodi) October 21, 2018
It is high time more Indians know about the historic role of stalwarts Sardar Patel, Dr. Babasaheb Ambedkar and Netaji Subhas Bose. pic.twitter.com/t7G34trODe
It is our Government's honour that we have taken several steps for the welfare of our armed forces, including for women serving in the forces. pic.twitter.com/Lgd6wARIW2
— Narendra Modi (@narendramodi) October 21, 2018