Search

পিএমইন্ডিয়াপিএমইন্ডিয়া

সাম্প্রতিক সংবাদ

বিষয়টিকে সরাসরি পিআইবি থেকে নেওয়া হয়েছে

প্যারিসে সি ও পি-২১ শীর্ষ বৈঠকের পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদীর বিবৃতি (৩০ নভেম্বর, ২০১৫)


মাননীয় প্রেসিডেন্ট হল্যান্ড এবং অন্যান্য বিশিষ্ট অতিথিবর্গ,

প্যারিস তার যন্ত্রণাবিদ্ধ দিনটির স্মৃতি আজও ভুলতে পারেনি।আপনাদের ধৈর্য ও সংকল্পের আমি ভুয়সী প্রশংসা করি।সমগ্র বিশ্বকে আমি অভিবাদন জানাই প্যারিস ও ফ্রান্সের সঙ্গে পূর্ণ শক্তি নিয়ে সহযোগিতার জন্য।

আগামী কয়েকদিন ধরে এই গ্রহের ভাগ্য আমরা নির্ধারণ করবো।আমরা এই কাজে সচেষ্ট হয়েছি এমন একটি সময়ে যখন এই শিল্পায়নের যুগের ফলাফল তথা জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহারের পরিণতি ভোগ করছে বিশ্বের দরিদ্র নাগরিকরা।

সমৃদ্ধ জাতিগুলির কার্বন নির্গমন এখনও অব্যাহত রয়েছে।উন্নয়নের নীচের সারিতে বসবাসকারী পৃথিবীর কোটি কোটি মানুষ বিকাশের খোঁজে এখন দিশাহারা।

তাই, আমাদের কাজটি মোটেই সহজ নয়।কিন্তু, আমাদের রয়েছে সচেতনতা, রয়েছে প্রযুক্তি।এই মুহূর্তে আমাদের যা প্রয়োজন তা হল এক জাতীয় সদিচ্ছা এবং অকৃত্রিম বিশ্ব অংশীদারিত্ব।

১২৫ কোটি মানুষের আশা-আকাঙ্খার দ্রুত রূপায়ণে গণতান্ত্রিক ভারতের উন্নয়নের ধারা আজ দ্রুত গতিশীল।দেশের ৩০ কোটি মানুষ আজও জ্বালানির সুযোগ থেকে বঞ্চিত।

কিন্তু, আমাদের সংকল্পে আমরা স্থির।কারণ, প্রাচীনকাল থেকেই আমরা বিশ্বাস করি যে, গ্রহ ও মানুষের মধ্যে রয়েছে এক অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক।মানুষের সঙ্গে প্রকৃতির যোগ তাই নিবিড় ও অবিচ্ছিন্ন।

এই কারণেই, আমরা স্থির করেছি এক উচ্চাকাঙ্খামূলক লক্ষ্যমাত্রা।আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে আমরা কার্বন নিয়ন্ত্রণের মাত্রা প্রতি ইউনিট জি ডি পি’র ৩৩ শতাংশ থেকে ৩৫ শতাংশে কমিয়ে আনতে সচেষ্ট রয়েছি।অর্থাৎ, ২০০৫-এ যে গ্যাস নির্গমন পরিস্থিতি ছিল তার দিকে আমরা ফিরে তাকিয়েছি।আমাদের সংস্থাপিত উৎপাদন ক্ষমতার ৪০ শতাংশ কাজেই ব্যবহৃত হবে জীবাশ্ম বহির্ভূত জ্বালানি।

পুনর্নবীকরণযোগ্য জ্বালানির প্রসারের মধ্য দিয়ে আমরা আমাদের লক্ষ্য পূরণে সফল হবো।আগামী ২০২২ সালের মধ্যে অতিরিক্ত ১৭৫ গিগাওয়াট পুনর্নবীকরণযোগ্য জ্বালানি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা স্থির করেছি আমরা।আমরা আমাদের অরণ্য পরিবেশ আরও বাড়িয়ে তোলার চেষ্টা করে চলেছি, যাতে ২.৫ বিলিয়ন টন কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্যাস নির্গমনের পথ প্রশস্ত করা যায়।

লেভি ধার্য করে এবং ভর্তুকির মাত্রা হ্রাস করে জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরতা আমরা ক্রমশ কমিয়ে আনতে সচেষ্ট হয়েছি। সম্ভাব্য ক্ষেত্রে জ্বালানির উৎস পরিবর্তনের ব্যাপারেও আমরা উদ্যোগী। নগরায়ন এবং সরকারি পরিবহণ ক্ষেত্রেও আমাদের এই প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

অগ্রণী দেশগুলি উচ্চাকাঙ্খামূলক লক্ষ্যমাত্রা স্থির করে সেই লক্ষ্যে এগিয়ে যাবে বলেই আমাদের বিশ্বাস।এটি শুধুমাত্র এক ঐতিহাসিক দায়িত্বশীলতার প্রশ্নই নয়, কার্বন নির্গমন হ্রাস করে অনুকূল প্রভাব সৃষ্টির কাজে তারা সফল হবে বলেই আমি মনে করি।

জলবায়ুর প্রতি ন্যায়-বিচারের মূল কথা হল তাই।উন্নয়নশীল দেশগুলিকে অবশ্যই বিকাশের সুযোগ করে দিতে হবে।

আগামী ২০২০ সালের আগেই ব্যাপকভাবে কার্বন নির্গমনের মাত্রা কমিয়ে আনতে হবে উন্নত দেশগুলিকে।কিওটো প্রটোকলের দ্বিতীয় অঙ্গীকার অনুযায়ী, লক্ষ্যমাত্রাকে নতুন করে স্থির করতে হবে।

দূষণ নির্গমনের মাত্রা হ্রাস, পরিস্থিতির সঙ্গে সামঞ্জস্য বিধান এবং রূপায়ণের রূপরেখা গঠন সহ আমাদের সমবেত প্রচেষ্টার সমস্ত ক্ষেত্রেই দায়িত্বশীলতার মনোভাব নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে।তা না হলে, নীতিভ্রষ্টতা ও বৈষম্যের দায় বহন করতে হবে আমাদেরই।

কার্বন নির্গমনের দিকে লক্ষ্য রেখে আমাদের জাতীয় অঙ্গীকার গড়ে তুলতে হবে।

সামঞ্জস্য বিধান এবং ক্ষয়ক্ষতির ব্যাপারে আমাদের সম্পাদন করতে হবে এক সুনির্দিষ্ট চুক্তি।

উন্নয়নশীল দেশগুলিতে বিশুদ্ধ জ্বালানি যাতে সুলভ হয়ে ওঠে সেই দায়িত্ব পালন করতে হবে উন্নত দেশগুলিকে।আমাদের সকলের স্বার্থ এখানে অভিন্ন।

এই কারণেই, উন্নয়নশীল দেশগুলির স্বার্থে ২০২০ সাল পর্যন্ত বছরে ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করতে হবে উন্নত দেশগুলিকে।স্বচ্ছতা ও বিশ্বাসযোগ্যতার সঙ্গে উন্নত দেশগুলিকে এই প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে হবে এমনভাবে যাতে তা যেন অর্থবহ হয়ে ওঠে।

জ্বালানি মানুষের একটি প্রাথমিক চাহিদা বা প্রয়োজন।তাই বিপণনের সুবিধার্থে নয়, মানুষের স্বার্থেই আমাদের প্রয়োজন এক উচ্চাকাঙ্খামূলক প্রযুক্তি গড়ে তোলার লক্ষ্যে সমবেত প্রচেষ্টা।এই উদ্দেশ্যকে সফল করে তুলতে সবুজ পরিবেশ তহবিলকে আরও শক্তিশালী করে তুলতে হবে।প্রযুক্তি ও মেধা-সম্পদকে আশ্রয় করে কাঙ্খিত লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছে যাওয়ার জন্য তা একান্ত জরুরি।

তবে, প্রচলিত জ্বালানির প্রয়োজন এখনও শেষ হয়ে যায়নি।এর ব্যবহার বন্ধ করতে আমরা উদ্যোগী নই, বরং তাকে বিশুদ্ধ জ্বালানিতে রূপান্তরিত করতেই আমরা বেশি আগ্রহী।আমরা একতরফাভাবে এমন কোনও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবো না, যাতে তা অন্যের কাছে অর্থনৈতিক প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে।

কিন্তু, সাফল্যের ক্ষেত্রে সবচেয়ে যেটা বেশি জরুরি, তা হল আমাদের জীবনশৈলীকে নিয়ন্ত্রণ করা, যাতে ভবিষ্যতে কার্বন নির্গমনের মাত্রা পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণের মধ্যে থাকে।

মাননীয় অতিথিবৃন্দ,

১৯৬টি দেশ আজ এখানে সমবেত হয়েছে।এ থেকে প্রমাণিত যে একটি সাধারণ লক্ষ্যকে সামনে রেখে আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে উঠতে পারি।

সামর্থ্য ও দায়িত্বশীলতার সঙ্গে আশা-আকাঙ্খা ও প্রয়োজনের সুষম এক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে আমরা যদি আমাদের সাহস ও প্রজ্ঞাকে অবলম্বন করে সকলে মিলে এক অংশীদারিত্বের বাতাবরণ গড়ে তুলতে পারি, তা হলে সফল আমরা হবই।

আমি আশাবাদী, যে নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছে আমরা যাবই।

পরিশেষে, আপনাদের সকলকে জানাই ধন্যবাদ।

PG/SKD/SB