Search

পিএমইন্ডিয়াপিএমইন্ডিয়া

সাম্প্রতিক সংবাদ

বিষয়টিকে সরাসরি পিআইবি থেকে নেওয়া হয়েছে

আসিয়ান-ভারত : ভাগ করে নেওয়া মূল্যবোধ, অভিন্ন নিয়তি


আজ ১২৫ কোটি ভারতীয়ের ১০ জন বিশিষ্ট অতিথিকে অভ্যর্থনা করার সম্মানলাভ ঘটেছে – এঁরা আসিয়ান রাষ্ট্রসমূহের কর্ণধারবৃন্দ – ভারতের সাধারণতন্ত্র দিবসের উৎসব উপলক্ষে আমাদের রাজধানী নতুন দিল্লিতে এঁদের আগমনে।

 

বৃহস্পতিবার আসিয়ান-ভারত অংশীদারিত্বের ২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে আসিয়ান নেতৃবৃন্দের জন্য এক স্মারক শীর্ষ বৈঠকের আয়োজন করার সুযোগ ঘটেছিল আমার। এই আসরে আমাদের সঙ্গে তাঁদের উপস্থিতি আসিয়ান রাষ্ট্রগুলির পক্ষ থেকে শুভেচ্ছার এক নজির বিহীন নিদর্শন। এই অসামান্য শুভেচ্ছার জবাবে এই শীতের সকালে ভারত তাঁদের বন্ধুত্বের উষ্ণতায় বরণ করে নিতে এগিয়ে এসেছে।

 

এটা কোনও সাধারণ অনুষ্ঠান নয়, এটা হ’ল এক অবিস্মরণীয় অভিযাত্রায় এক ঐতিহাসিক মাইল ফলক, যা আজ ভারত ও আসিয়ান’কে তাদের ১৯০ কোটি মানুষের, অর্থাৎ বিশ্বের সমগ্র মানবজাতির প্রায় এক-চতুর্থাংশের জন্য এক মহান অঙ্গীকারের সুগভীর সৌহার্দ্যের প্রতীক।

 

ভারত-আসিয়ান অংশীদারিত্ব মাত্র ২৫ বছরে পা দিয়েছে – এটা হতেই পারে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক দুই সহস্রাব্দেরও বেশি প্রাচীন। শান্তি ও মৈত্রী, ধর্ম ও সংস্কৃতি, শিল্পকলা ও বাণিজ্য, ভাষা ও সাহিত্য প্রভৃতির অন্তরে নিহিত সম্পর্কগুলি এখন ভারত ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অসাধারণ বৈচিত্র্যপূর্ণ সম্পর্কের প্রতিটি বিভিন্নতায় উপস্থিত, আর এর ফলে আমাদের এই দুই অঞ্চলের মানুষের মধ্যে সম্পর্ক ও স্বাচ্ছন্দ্যের এক অনন্য বলয় গড়ে উঠেছে।

 

দু-দশকেরও বেশি আগে ভারত প্রয়োজন মতো পরিবর্তনসাধনের মাধ্যমে নিজেকে মেলে ধরেছিল। আর শত শতাব্দী ধরে অর্জিত প্রবৃত্তির মাধ্যমে এটা স্বাভাবিকভাবেই পূর্বের দিকে ঘুরে গিয়েছিল। এইভাবে পূবের সঙ্গে ভারতের পুনরাত্মীকরণের অভিযাত্রা শুরু হয়। ভারতের ক্ষেত্রে আমাদের বেশিরভাগ বৃহৎ প্রধান অংশীদার ও বাজারের অধিকাংশই হ’ল আসিয়ান ও পূর্ব এশিয়া থেকে উত্তর আমেরিকা পর্যন্ত পূবের দিকে ছড়িয়ে আছে। আর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও আসিয়ান ভূমি ও সমুদ্রপথে আমাদের দুই নিকট প্রতিবেশী হ’ল আমাদের ‘পূবে তাকাও’ নীতির মূল ধাত্রীভূমি এবং গত তিন বছরে পূবের প্রতি সক্রিয় হওয়ার নীতির মূল ভিত্তি।

 

এই পথে সংলাপ-অংশীদারের ভূমিকা থেকে যাত্রা শুরু করে আসিয়ান ও ভারত কৌশলগত অংশীদারে পরিণত হয়েছে। আমরা আমাদের বিরাট ভিত্তিগত অংশীদারিত্বকে ৩০টি ব্যবস্থার সাহায্যে এগিয়ে নিয়ে গেছি। প্রতিবার আসিয়ানে নতুন সদস্যভুক্তির সঙ্গে সঙ্গে আমরা কূটনৈতিক, অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত অংশীদারিত্ব বাড়িয়ে চলেছি। আমরা আমাদের সমুদ্রগুলিকে সুরক্ষিত ও নিরাপদ রাখার জন্য এক সঙ্গে কাজ করছি। আমাদের বাণিজ্য এবং লগ্নির প্রবাহও অনেক গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। আসিয়ান হ’ল ভারতের চতুর্থ বৃহত্তম ব্যবসায়িক অংশীদার; আর ভারত হ’ল আসিয়ানের সপ্তমতম। ভারতের বহির্মুখী বিনিয়োগের ২০ শতাংশের বেশি যায় আসিয়ান দেশগুলিতে। সিঙ্গাপুরের নেতৃত্বে আসিয়ান হ’ল ভারতের বিনিয়োগের প্রধান উৎস। এই অঞ্চলে ভারতের মুক্ত বাণিজ্য চুক্তিগুলি হ’ল এই ক্ষেত্রে তার সবথেকে প্রাচীন এবং সারা পৃথিবীর নিরিখে সবচেয়ে উচ্চাকাঙ্খী।

 

বিমান যোগাযোগ অত্যন্ত দ্রুত বেড়েছে আর মহাদেশগতভাবে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অনেক ভেতর পর্যন্ত আমরা জাতীয় মহাসড়কগুলিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। নব নব ত্বরা ও অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে। ক্রমবর্ধমান সংযোগ নিকটত্ব বাড়িয়েছে আর এরফলে ভারত দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল পর্যটন উৎসগ্যলির অন্যতম হিসাবে স্বীকৃতি পেয়েছে। এই অঞ্চলে মানুষজনের মধ্যে ৬০ লক্ষেরও বেশি জনসংখ্যাবিশিষ্ট ভারতীয় সমাজ – বৈচিত্র্যে শিকড় প্রোথিত রেখে গতি সঞ্চারের সুতীব্র আকাঙ্খা সহ – আমাদের দুই দেশের মধ্যে এক অসামান্য মানব সংযোগ করে তুলেছে।

 

প্রধানমন্ত্রী এবার প্রতিটি আসিয়ান সদস্য দেশ সম্পর্কে তাঁর মতামত তুলে ধরেছেন

 

থাইল্যান্ড

 

থাইল্যান্ড আসিয়ান গোষ্ঠীর মধ্যে ভারতের এক গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক অংশীদার হিসাবে উঠে এসেছে এবং এটি আসিয়ান গোষ্ঠী থেকে ভারতে গুরুত্বপূর্ণ বিনিয়োগকারীদেরও অন্যতম। ভারত ও থাইল্যান্ডের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য গত এক দশকে দ্বিগুণেরও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। ভারত ও থাইল্যান্ডের মধ্যে সম্পর্কে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যাপকভাবে প্রসারিত। দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াকে যুক্ত করে আমরা হলাম গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক অংশীদার। আমরা আসিয়ান, পূর্ব এশিয়া শীর্ষ বৈঠক ও বিমস্টেক (বহু ক্ষেত্রব্যাপী কারিগরি ও অর্থনৈতিক সহযোগিতার বঙ্গোপসাগরীয় বলয়-ভিত্তিক সহযোগিতা) প্রভৃতি গোষ্ঠীতে যেমন ঠিক তেমনই মেকং-গঙ্গা সহযোগিতা, এশীয় সহযোগিতা সংলাপ এবং ভারত মহাসাগরীয় বলয় সঙ্ঘের ক্ষেত্রেও ঠিক তেমনভাবেই ঘনিষ্ঠ সহযোগীর ভূমিকা পালন করে আসছি। ভারতে ২০১৬ সালে থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রীর রাষ্ট্রীয় সফর দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ওপর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ফেলেছে।

 

মহান ও জনপ্রিয় নৃপতি ভূমিবল আদুল্যদেজ-এর প্রয়ানে সারা ভারতবর্ষ তাদের থাই ভাই-বোনদের সঙ্গে অশ্রুমোচন করেছে। ভারতবাসী থাইল্যান্ডের বন্ধুত্বপূর্ণ জনসাধারণের সঙ্গে সেদেশের নতুন নৃপতি রাজা মহাবজ্রালংকর্ণ বোদিন্দ্রদেবায়ভারাংকুন-এর দীর্ঘ, সমৃদ্ধিশালী ও শান্তিপূর্ণ রাজত্বকালের জন্য প্রার্থনা করে।

 

ভিয়েতনাম

 

ঐতিহ্যগতভাবে ঘনিষ্ঠ ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের এই দুই দেশের ইতিহাসের মূলে বিদেশি শাসনের হাত থেকে মুক্তির অভিন্ন সংগ্রাম এবং জাতীয় স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রেক্ষাপট বিধৃত। মহাত্মা গান্ধী ও রাষ্ট্রপতি হো চি মিন-এর মতো মহান নেতা উপনিবেশবাদের বিরুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ লড়াইয়ে জাতির নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। ভারতে ২০০৭ সালে প্রধানমন্ত্রী নগুয়েন তান দং-এর সফরকালে আমরা কৌশলগত অংশীদারিত্বের চুক্তি স্বাক্ষর করেছিলাম। এই অংশীদারিত্ব ২০১৬ সাল এক পূর্ণাঙ্গ সামরিক অংশীদারিত্বে বিকশিত হয়েছে আমার ভিয়েতনাম সফরে।

 

ভিয়েতনামের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক যোগাযোগের দ্বারা চিহ্নিত। ভারত ও ভিয়েতনামের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ১০ বছরে প্রায় ১০ গুণ বেড়েছে। প্রতিরক্ষা সহযোগিতা ভারত ও ভিয়েতনামের মধ্যে সামারিক অংশীদারিত্বের এক তাৎপর্যপূর্ণ স্তম্ভ হিসাবে উঠে এসেছে। ভারত ও ভিয়েতনামের মধ্যে সহযোগিতার আরেক গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র হ’ল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি।

 

মায়ানমার

 

ভারত ও মায়ানমারের স্থলসীমান্তের দৈর্ঘ্য ১,৬০০ কিলোমিটারেরও বেশি আর দু’দেশের মধ্যে জলসীমান্তও বিদ্যমান। ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের প্রবহমান ধারায় আমাদের আত্মীয়তার গভীর অনুভূতি ও অভিন্ন বৌদ্ধ ঐতিহ্যের দ্বারা ইতিহাসগত অতীতের মতো এখনও এই দুটি দেশ আবদ্ধ। শোয়েডাগন প্যাগোডার জ্বাজ্বল্যমান স্তম্ভ এই সম্পর্ককে গৌরবজনকভাবে তুলে ধরে রেখেছে। বাগানে ভারতের আর্কিওলজিক্যাল সার্ভের সহযোগিতায় আনন্দ মন্দিরের পুনরুজ্জীবনের প্রয়াস এই অভিন্ন ঐতিহ্যেরই প্রতীক।

 

ঔপনিবেশিক শাসনকালে আমাদের নেতৃবৃন্দের মধ্যে রাজনৈতিক বন্ধন ছিল, যা স্বাধীনতার অভিন্ন সংগ্রামের সময়ে আশা ও ঐক্যের এক মহান দৃষ্টান্ত রূপে প্রতিভাত হয়েছিল। গান্ধীজি বহুবার ইয়াঙ্গন সফর করেন। বালগঙ্গাধর টিলক’কে বহু বছর ইয়াঙ্গনে নির্বাসনে পাঠানো হয়েছিল।  ভারতের স্বাধীনতার জন্য নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসুর ঐতিহাসিক আহ্বান মায়ানমারে বহু মানুষকে উদ্দীপ্ত করেছিল।

 

গত এক দশকে আমাদের বাণিজ্য দ্বিগুণেরও বেশি বেড়েছে। আমাদের বিনিয়োগ সম্পর্কও অত্যন্ত বলিষ্ঠ। ভারত ও মায়ানমারের সম্পর্কের ক্ষেত্রে উন্নয়নমূলক সহযোগিতার এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। এই সহায়তামূলক পোর্টফোলিওর আর্থিক মূল্য এখন ১৭৩ কোটি ডলারেরও বেশি। ভারতের স্বচ্ছ উন্নয়নমূলক সহযোগিতা মায়ানমারের জাতীয় অগ্রাধিকারগুলির সঙ্গে সমরৈখিক এবং আসিয়ান সংযোগের মহাপরিকল্পনার সঙ্গে তালমিল রেখে চলছে।

 

সিঙ্গাপুর

 

সিঙ্গাপুর হ’ল এই অঞ্চলের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের ঐতিহ্যের জানালা, বর্তমানের প্রগতি আর ভবিষ্যতের সমৃদ্ধির প্রতীক। সিঙ্গাপুর ছিল ভারত ও আসিয়ানের মধ্যে এক সেতুবিশেষ।

 

আজ এটি আমাদের পুবের প্রবেশদ্বার, আমাদের প্রধান অর্থনৈতিক সহযোগী এবং এক প্রধান বৈশ্বিক কৌশলগত অংশীদার, যে সম্পর্কের অহরহ অনুরণন ঘটে বিভিন্ন আঞ্চলিক ও বিশ্ব মঞ্চে আমাদের সদস্যভুক্তির ক্ষেত্রে। সিঙ্গাপুর ও ভারত এক কৌশলগত অংশীদারিত্বের অংশভাক।

 

আমাদের রাজনৈতিক সম্পর্ক শুভেচ্ছা, উষ্ণতা এবং আস্থায় সম্পৃক্ত। আমাদের প্রতিরক্ষা সম্পর্ক উভয়ের ক্ষেত্রেই বলিষ্ঠতমগুলির মধ্যে পড়ে।

 

আমাদের অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব দুটি দেশের অগ্রাধিকারের প্রতিটি ক্ষেত্র জুড়ে রয়েছে। সিঙ্গাপুর হ’ল ভারতের অন্যতম প্রধান গন্তব্য এবং বিনিয়োগের উৎস।

 

হাজার হাজার ভারতীয় কোম্পানি সিঙ্গাপুরেও পঞ্জিকৃত।

 

১৬টি ভারতীয় মহানগরীর সঙ্গে প্রতি সপ্তাহে সিঙ্গাপুরের ২৪০টিরও বেশি সরাসরি উড়ান রয়েছে। সিঙ্গাপুরের তৃতীয় বৃহত্তম পর্যটক হ’ল ভারতের।

 

অনুপ্রেরণামূলক বহু সংস্কৃতিবাদ এবং প্রতিভার প্রতি সম্মানের খ্যাতি রয়েছে সিঙ্গাপুরের। আর তারই ফলে সেখানে এক স্পন্দমান ও গতিশীল ভারতীয় জনগোষ্ঠীর প্রকাশ ঘটেছে, যা দুটি দেশের মধ্যে গভীরতর সহযোগিতার ক্ষেত্র প্রস্তুতিতে অবদান রেখে চলেছে নিরন্তর।

 

ফিলিপিন্স

 

দু’মাসের সামান্য বেশি আগে ফিলিপিন্সে আমি অত্যন্ত সন্তোষজনক এক সফর সেরে এসেছি। আসিয়ান-ভারত, ইএএস ও সংক্রান্ত শীর্ষ বৈঠকগুলিতে যোগদান ছাড়াও আমার সুযোগ ঘটেছিল সেদেশের রাষ্ট্রপ্রধান দুতের্তের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার আর আমাদের উষ্ণ ও সমস্যা বিহীন দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে কিভাবে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায় সে বিষয়ে আমাদের বিস্তারিত আলোচনা হয়েছিল। আমরা উভয় দেশই পরিষেবা ক্ষেত্রে শক্তিশালী আর প্রধান দেশগুলির মধ্যে উচ্চতমদের মধ্যে আমাদের উভয়ের বিকাশ হার পড়ে। আমাদের বাণিজ্য ও ব্যবসা সম্ভাবনা যথেষ্ট প্রতিশ্রুতিমান।

 

অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন আনা ও দুর্নীতির সঙ্গে লড়াই করার বিষয়ে রাষ্ট্রপতি দুতের্তের অঙ্গীকারকে আমি প্রশংসা করি। এগুলি হ’ল সেইসব ক্ষেত্র, যেখানে দুটি দেশ এক সঙ্গে কাজ করতে পারে। সার্বজনীন পরিচয়পত্র, অর্থনৈতিক অন্তর্ভুক্তি, সকলের জন্য ব্যাঙ্কিং-এর সুযোগ করে দেওয়া, সরাসরি সুবিধা হস্তান্তরের ব্যবস্থা এবং নগদ বিহীন লেনদেনে উৎসাহ যোগানোর মতো ক্ষেত্রে আমাদের অভিজ্ঞতা ফিলিপিন্সের সঙ্গে ভাগ করে নিতে পেরে আমরা খুশি। ফিলিপিন্স সরকারের আরেকটি অগ্রাধিকারমূলক এলাকা হ’ল সাশ্রয়ী ওষুধ সকলের জন্য প্রাপ্তির সুযোগ করে দেওয়া আর এক্ষেত্রেও আমরা অবদান রাখতে তৈরি। মুম্বাই থেকে মারাউই, সন্ত্রাসের কোনও সীমানা হয় না – এই অভিন্ন চ্যালেঞ্জটির মোকাবিলায় আমরা ফিলিপিন্সের সঙ্গে সহযোগিতা বাড়িয়ে চলেছি।

 

মালয়েশিয়া

 

ভারত ও মালয়েশিয়ার মধ্যে সমকালীন সম্পর্ক যথেষ্ট প্রসারিত এবং বিভিন্ন ক্ষেত্র জুড়ে রয়েছে মালয়েশিয়া ও ভারত কৌশলগত অংশীদারিত্বের বাঁধনে বাঁধা এবং আমরা বেশ কিছু বহুপাক্ষিক ও আঞ্চলিক মঞ্চে সহযোগিতা করে থাকি। ২০১৭’য় মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর ভারতে সরকারি সফর দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ফেলেছে।

 

মালয়েশিয়া আসিয়ান গোষ্ঠীর মধ্যে ভারতের তৃতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেছে। আর আসিয়ান থেকে ভারতে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে তারা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। ভারত ও মালয়েশিয়ার দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য গত ১০ বছরে দ্বিগুণেরও বেশি বেড়েছে। ভারত ও মালয়েশিয়ার মধ্যে ২০১১ সাল থেকে দ্বিপাক্ষিক পূর্ণাঙ্গ অর্থনৈতিক সহযোগিতা চুক্তি রয়েছে। এই চুক্তিটি হ’ল নজির বিহীন, কেননা দুই দেশই পণ্যসামগ্রীর ব্যবসাগত ক্ষেত্রে আসিয়ানের চেয়েও বেশি অঙ্গীকার করেছে এবং পরিষেবাগত বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ডব্ল্যুটিও প্লাস অফার বিনিময় করেছে। দু’দেশের মধ্যে দ্বৈতকর বিলোপ সংক্রান্ত সংশোধিত চুক্তিটি ২০১২’র মে মাসে স্বাক্ষরিত হয়েছে। এটি এবং ২০১৩’য় স্বাক্ষরিত অন্তঃশুল্ক সংক্রান্ত সহযোগিতামূলক সমঝোতা আমাদের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহযোগিতার ক্ষেত্রকে আরও প্রসারিত করেছে।

 

ব্রুনেই

 

ভারত ও ব্রুনেই-এর মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য গত এক দশকে দ্বিগুণেরও বেশি বেড়েছে। ভারত ও ব্রুনেই উভয়েই রাষ্ট্র সঙ্ঘ, নির্জোট আন্দোলন, কমনওয়েলথ, এআরএফ প্রভৃতির সদস্য এবং উভয়েই বিকাশশীল দেশ হওয়ায় ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিগত সুদৃঢ় বন্ধন রয়েছে। প্রধান আন্তর্জাতিক বিষয়গুলির ক্ষেত্রে ভারত ও ব্রুনেই-এর যথেষ্ট অভিন্নতা রয়েছে। ভারতে ২০০৮-এর মে মাসে ব্রুনেই-এর সুলতানের সফর ভারত-ব্রুনেই সম্পর্কের নিরিখে এক মাইল ফলক। এদেশের উপ-রাষ্ট্রপতি ২০১৬’র ফেব্রুয়ারিতে ব্রুনেই সফর করেছিলেন।

 

লাও পিডিআর

 

ভারত ও লাও পিডিআর-এর মধ্যে সম্পর্ক বহু ক্ষেত্রেই ব্যাপকভাবে সম্প্রসারিত। ভারত বিদ্যুৎ সংবহন ও কৃষি ক্ষেত্রে লাও পিডিআর-এ নানা প্রকল্পে সক্রিয়ভাবে যুক্ত। আজ ভারত ও লাও পিডিআর নানা ধরনের বহুপাক্ষিক এবং আঞ্চলিক ফোরামে সহযোগিতা করে থাকে।

 

ভারত ও লাও পিডিআর-এর মধ্যে বাণিজ্য এখনও সম্ভাব্যসীমার নীচে। ভারত লাও পিডিআর-কে শুল্ক মুক্ত অগ্রাধিকারমূলক মাশুল প্রদান প্রকল্পের তালিকাভুক্ত করেছে লাও পিডিআর থেকে ভারতে রপ্তানি বৃদ্ধিতে উৎসাহ দেওয়ার জন্য। পরিষেবাগত বাণিজ্যের প্রভূত সম্ভাবনা আমাদের রয়েছে। আসিয়ান-ভারত পরিষেবা ও বিনিয়োগ সংক্রান্ত চুক্তির রূপায়ণ দু’দেশের পরিষেবাগত বাণিজ্যের বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে।

 

ইন্দোনেশিয়া

 

ভারত মহাসাগরে মাত্র ৯০ নটিক্যাল মাইল দূরত্বে অবস্থিত ভারত ও ইন্দোনেশিয়ার মধ্যে একই মানবসভ্যতার অংশভাগ হওয়ার দুই সহস্রাব্দেরও বেশি প্রাচীন এক ঐতিহ্য রয়েছে। ওড়িশায় উদযাপিত বার্ষিক বালি-যাত্রা কর্মসূচিই হোক কিংবা রামায়ণ-মহাভারতের কিংবদন্তী, যা গোটা ইন্দোনেশিয়া জুড়ে চোখে পড়ে, এইসব অনন্য সাংস্কৃতিক বন্ধন এশিয়ার দুটি বৃহত্তম গণতন্ত্রকে এক বিশেষ প্রতিবেশীসুলভ বাঁধনে বেঁধে রেখেছে।

 

বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য বা ভিন্নেকা তুঙ্গল ইকা দু’দেশের ভাগ করে নেওয়া সামাজিক মূল্যবোধ কাঠামোর এক প্রধান দিক। কৌশলগত অংশীদার হিসাবে আমাদের সহযোগিতা রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা, সাংস্কৃতিক এবং মানুষে মানুষে যোগাযোগের সমস্ত ক্ষেত্র জুড়ে প্রসারিত। আসিয়ানে আমাদের বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার হ’ল ইন্দোনেশিয়া। ভারত ও ইন্দোনেশিয়ার মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য গত ১০ বছরে আড়াই গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১৬’য় এদেশে রাষ্ট্রপতি জোকো উইডোডো’র সরকারি সফর দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ওপর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ফেলেছে।

 

কম্বোডিয়া

 

ভারত ও কম্বোডিয়ার মধ্যে সনাতন ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের মূল রয়ে গেছে সভ্যতাগত সুপ্রাচীন বন্ধনের মধ্যে। আমাদের সুপ্রাচীন ঐতিহাসিক, ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক সম্পর্কের গৌরবময় সাক্ষী এবং মহান প্রতীক হ’ল আংকোর ওয়াট মন্দিরের বিশাল স্থাপত্য। ভারত ১৯৮৬-১৯৯৩ – এর কঠিন সময়ে আংকোর ওয়াট মন্দিরের পুনরুজ্জীবন ও সংরক্ষণের কাজ সম্পাদন করে গর্বিত। এই মূল্যবান সহযোগিতাকে টা-প্রোম মন্দিরের সংরক্ষণের বর্তমান কাজেও সম্প্রসারিত করতে পেরে আমরা খুশি।

 

খমের রুজ শাসনতন্ত্রের অবসানের পর ভারতই ১৯৮১ সালে প্রথম সেদেশের নতুন সরকারকে স্বীকৃতি দেয়। ১৯৯১ সালে প্যারিস শান্তি চুক্তি ও তা চূড়ান্ত করার কাজেও যুক্ত ছিল ভারত। এইসব ঐতিহাসিক বন্ধুত্বের সম্পর্ক উচ্চ পর্যায়ের নেতৃবৃন্দের নিয়মিত সফরের মাধ্যমে জোরদার হয়েছে। প্রাতিষ্ঠানিক সামর্থ্য নির্মাণ, মানবসম্পদ উন্নয়ন, উন্নয়নমূলক  ও সামাজিক প্রকল্প, সাংস্কৃতিক বিনিময়, প্রতিরক্ষা সহযোগিতা, পর্যটন ও মানুষে মানুষে যোগাযোগের মতো বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমরা দু’দেশের সহযোগিতাকে ছড়িয়ে দিয়েছি।

 

আসিয়ানের দিক থেকে এবং নানা বৈশ্বিক মঞ্চে কম্বোডিয়া হ’ল এক গুরুত্বপূর্ণ মধ্যস্থতাকারী এবং ভারতের সমর্থনমূলক অংশীদার। ভারত কম্বোডিয়ার অর্থনৈতিক বিকাশের অংশীদার হয়ে থাকার ক্ষেত্রে অঙ্গীকারবদ্ধ এবং দু’দেশের ঐতিহ্যপূর্ণ সম্পর্ক আরও গভীর করে তোলার আকাঙ্খা রাখে।

এবং ভারত ও আসিয়ান আরও অনেক কিছু করছে। আসিয়ান নেতৃত্বের নানা প্রতিষ্ঠান যেমন – পূর্ব এশিয়া শীর্ষ বৈঠক, এডিএমএম প্লাস (এশীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক প্লাস) এবং এআরএফ (এশীয় আঞ্চলিক ফোরাম) আমাদের এই অঞ্চলে শান্তি ও স্থিতিশীলতাকে এগিয়ে নিয়ে চলেছে। ভারত আঞ্চলিক পূর্ণাঙ্গ অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তির এক উৎসাহী সদস্য হিসাবে ১৬ জন সদস্যের প্রত্যেকের জন্য পূর্ণাঙ্গ, সুষম ও ন্যায্য চুক্তি প্রার্থনা করে।

 

অংশীদারিত্বের জোর ও বলিষ্ঠতা কেবলমাত্র সংখ্যার বিচারেই আসে না, সম্পর্কের গভীরতা থেকেও আসে। ভারত ও আসিয়ান-এর মধ্যে সম্পর্ক কোনও প্রতিযোগিতা ও দাবি মুক্ত। ভবিষ্যতের ক্ষেত্রে আমাদের অভিন্ন দর্শন রয়েছে অন্তর্ভুক্তি ও সংহতির অঙ্গীকারের ভিত্তিতে, আকার নিরপেক্ষভাবে সব দেশের সার্বভৌম সাম্যের প্রতি বিশ্বাস এবং বাণিজ্য ও যোগাযোগের অবাধ ও উদার সংযোগপথের প্রতি সমর্থনের মাধ্যমে।

 

আসিয়ান-ভারত অংশীদারিত্ব বেড়েই চলবে। জনসংখ্যা, গতিশীলতা ও চাহিদা বৃদ্ধির দান এবং দ্রুত পরিণত হয়ে ওঠা অর্থনীতির মাধ্যমে – ভারত ও আসিয়ান এক বলিষ্ঠ অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব গড়ে তুলবে। যোগাযোগ বাড়বে এবং ব্যবসাও প্রসারিত হবে। ভারতে সহযোগিতা ও প্রতিযোগিতামূলক যুক্তরাষ্ট্রীয়বাদের যুগে আমাদের রাজ্যগুলিও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলির সঙ্গে উৎপাদনশীল সহযোগিতা গড়ে তুলছে। ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল পুনরুজ্জীবনের পথে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ এর উন্নতিকে ত্বরান্বিত করবে। বিনিময়ে এক যুক্ত উত্তর-পূর্বাঞ্চল আমাদের স্বপ্নের আসিয়ান-ভারত বন্ধনের সেতু হয়ে দাঁড়াবে।

 

প্রধানমন্ত্রী হিসাবে আমি চারটি বার্ষিক আসিয়ান-ভারত শীর্ষ বৈঠক এবং পূর্ব এশিয়া শীর্ষ বৈঠকে যোগ দিয়েছি। এগুলি এতদঅঞ্চলকে আসিয়ান ঐক্য, কেন্দ্রীয়তা এবং নেতৃত্বের মাধ্যমে উপযুক্ত রূপদানে আমার আস্থাকেই সুদৃঢ় করেছে।

 

এই বছরটি নানা মাইলফলকের। ভারত গত বছর ৭০ পূর্ণ করেছে। আসিয়ান ৫০ বছরের সোনালী মাইলফলকে উপনীত। আমরা প্রত্যেকেই আমাদের ভবিষ্যতের দিকে আশা নিয়ে এবং আমাদের অংশীদারিত্বের দিকে প্রত্যয় নিয়ে তাকাতে পারি।

 

৭০-এ উপনীত ভারত হ’ল তার যুবশক্তির  চেতনা, উদ্যোগ ও অন্তর্নিহিত শক্তির দ্যোতক। বিশ্বে সবচেয়ে দ্রুত বিকাশশীল প্রধান অর্থনীতি হিসাবে ভারত বৈশ্বিক সুযোগের নতুন সীমানা এবং বৈশ্বিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতার নোঙর হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রত্যেকটি দিন কাটছে আর ভারতে ব্যবসা করা ততই সহজ ও স্বচ্ছন্দ হয়ে উঠছে। আমাদের প্রতিবেশী ও বন্ধুদের মতোই আসিয়ান দেশগুলিও নবভারতের রূপান্তরের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হয়ে উঠবে বলে আমার আশা।

আসিয়ানের নিজস্ব উন্নতিকে আমরা প্রশংসা করি। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া যখন পৈশাচিক যুদ্ধের রঙ্গ মঞ্চ হয়ে উঠেছিল আর অনিশ্চয়তার দেশসমূহের অঞ্চল হিসাবে পরিচিত ছিল, সেই সময়ে জন্ম নিয়ে আসিয়ান এক অভিন্ন উদ্দেশ্য ও ভাগ করে নেওয়া ভবিষ্যতের লক্ষ্যের পেছনে ১০টি রাষ্ট্রকে ঐক্যবদ্ধ করেছিল। উচ্চতর আকাঙ্খার পথ অনুসরণ করা এবং আমাদের সময়ের নানা চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করার ক্ষমতা আমাদের আছে : পরিকাঠামো ও নগরায়ন থেকে ঘুরে দাঁড়ানো কৃষি ও এক স্বাস্থ্যবান গ্রহ। আমরা ডিজিটাল প্রযুক্তি, উদ্ভাবন এবং সংযোগ ক্ষমতাকেও কাজে লাগাতে পারি নজির বিহীন গতি ও মাপে জীবনটাকে পাল্টে ফেলার চেষ্টায়।

 

আশার ভবিষ্যতের জন্য প্রয়োজন শান্তির সুদৃঢ় বলিষ্ঠতা। এ হ’ল বদলের যুগ, বিপর্যয় ও পরিবর্তন যা আসে, তা ইতিহাসে বিরল। আসিয়ান ও ভারত উভয়েরই সামনে রয়েছে অফুরান সুযোগ – বিরাট দায়িত্ব – আমাদের সমকালের অনিশ্চয়তা ও উচ্চাবচতার মধ্য দিয়ে আমাদের অঞ্চল ও গোটা বিশ্বের জন্য স্থিতিশীল ও শান্তিপূর্ণ ভবিষ্যতের রূপরেখা তৈরির।

 

বিশ্বপালক রবির প্রথম রেখা এবং সুযোগের রশ্মিগুচ্ছের দর্শন পেতে ভারতীয়রা সবসময়েই পুবের দিকে তাকিয়ে থেকেছেন। এখন, ঠিক আগের মতোই, সেই পুব অথবা ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল ভারতের ভবিষ্যৎ এবং আমাদের অভিন্ন ভাগ্যের ক্ষেত্রে অনিবার্য ভূমিকা নেবে। আসিয়ান-ভারত অংশীদারিত্ব উভয় ক্ষেত্রেই এক সংজ্ঞামূলক ভূমিকা পালন করবে। আর দিল্লিতে আসিয়ান ও ভারত উভয়েই আগামী অভিযাত্রার জন্য তাদের শপথের পুনরুচ্চারণ করেছে।

 *** 

PG/SB