নয়াদিল্লি, ০৯ এপ্রিল, ২০১৫ উপস্থিত ভদ্র মহোদয়গণ, আমাদের দেশে একটা অভিজ্ঞতা হচ্ছে, অনেক কিছুই ধারণার আশেপাশে রয়ে যায়। আর যখন সূক্ষ্মভাবে সেটা দেখি, তখন অন্য ছবি চোখে পড়ে। যেমন, একজন সাধারণ লোককে জিজ্ঞাসা করলে মনে হবে ‘ভাই এই যে বড় বড় শিল্প আছে, এই যে বড় বড় শিল্পগোষ্ঠী আছে তাতে অধিক কর্মসংস্থান হয়’ কিন্তু যদি সূক্ষ্মভাবে দেখা যায় তবে ছবিটা অন্যরকম, এতে বহু বেশি পরিমাণে মূলধন লাগে, এই সমস্ত যন্ত্রপাতি, প্রচার এসব আমরা দেখি। কিন্তু যদি আমরা সূক্ষ্মভাবে দেখি, চূড়ান্তভাবে আমরা উন্নয়নের মধ্যে আছি। কর্মসংস্থান আমাদের অগ্রাধিকার আর ভারতের মতো দেশ, যার জনসংখ্যাগত সুবিধা রয়েছে, যার জনসংখ্যার ৬৫ শতাংশ ৩৫ বছরের কম বয়সী সেই দেশে উন্নয়নে যে নীতি তৈরি করতে হবে তার কেন্দ্রে যুব শক্তিকে রাখা প্রয়োজন। যদি সেটা ঠিক ঠিকভাবে মিলে যায়, তবে আমরা নতুন উচ্চতা অতিক্রম করতে পারি। যে বড় বড় শিল্পের আলোচনা আমরা শুনি, তাতে মাত্র ১ কোটি ২৫ লক্ষ লোকের কর্মসংস্থান হয়। এইসব বড় বড় লোক, যাদের নিয়ে পৃথিবীতে আলোচনা হয়, খবরের কাগজের অর্ধেক যাদের সংবাদে ভরে থাকে, তাঁরা ১২৫ কোটির দেশে সোয়া কোটি লোকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেন। কিন্তু, এই দেশে ছোট ছোট কাজ করেন, এমন প্রায় ৫ কোটি ৭০ লক্ষ লোক ১২ কোটি লোকের কর্মসংস্থান করেন। ঐ সোয়া কোটি মানুষের কর্মসংস্থানের জন্য বহু রকম ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু, ১২ কোটি মানুষের কর্মসংস্থান যাঁরা করছেন তাঁদের যদি আমরা একটু মদত দিই, তাহলে কত বড় পার্থক্য আসতে পারে, সেটা আমরা অনুমান করতে পারি। আর, এই ৫ কোটি ৭৫ লক্ষ লোক যে ক্ষেত্রে কাজ করেন, তা এক ধরণের স্বনির্ভর কর্মসংস্থান – দর্জি, কুম্ভকার, টায়ার সারাই করেন, সাইকেল সারান, নিজের অটোরিক্সা চালান, সব্জি বিক্রি করেন গরিব মানুষ। তাঁদের যে পুরো কারবার তাতে আমরা যদি হিসাব করি তো ১১ লক্ষ কোটি টাকার পুঁজিও লাগেনি। অথবা, মাত্রা ১১ লক্ষ কোটি পুঁজি লেগেছে, ৫ কোটি ৭৫ লক্ষ লোক নেতৃত্ব দিচ্ছেন আর ১২ কোটি লোকের অন্ন সংস্থান হচ্ছে। এই কথাটা যখন সামনে আসে, তখন মনে হয় দেশে স্বনিযুক্তির সুযোগ সৃষ্টি করা দরকার। যাঁরা দেশের অর্থনীতিকে পেছনের দিক থেকে শক্তি জোগাচ্ছেন, তাদের ক্ষমতা বুঝতে হবে। আর তাদেরকে সুযোগ দিতে হবে। আর এই মূল ভাবনা থেকেই মুদ্রার চিন্তা এসেছে। আমার নিজের একটা অভিজ্ঞতা এ ব্যাপারে কাজ করেছিল, কারণ, শুধু আর্থিক জগতের লোকেদের হিসাবের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া এত সহজ নয়। কখনও কখনও অভিজ্ঞতা কাজে আসে। আমি গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী ছিলাম। আমি ঘুড়ি শিল্পের প্রতি কিছুটা নজর দিই। এখন গুজরাটে ঘুড়ি একটা বড় উৎসব হিসেবে উদযাপিত হয়। আর বেশি করে সেটা একটা পুরোপুরি পরিবেশ-বান্ধব কুটির শিল্প। ১ লক্ষ লোকের মধ্যে গরিব মুসলমান ঐ কাজে যুক্ত। ঘুড়ি তৈরি ও আনুষঙ্গিক কাজ গুজরাটে মুসলমানরাই করছে। কিন্তু, এরা বহু পুরোনো জিনিস করতেন। ঐ ঘুড়ি তেরঙ্গা করতে হলে তিন রঙের কাগজ এনে সাঁটাতে হত এবং তারপর ঘুড়ি তৈরি হত। এখন দুনিয়া বদলে গেছে। কারণ, এখন তেরঙ্গা কাগজ প্রিন্ট করতে পারা যায়, এতে সময় বাঁচে। আমি চেন্নাইয়ের এক সংস্থাকে দায়িত্ব দিলাম এর অসুবিধা কি – সমস্যা কি তা সমীক্ষা করে দেখার জন্য। এই অভিজ্ঞতা হল যে, ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ব্যক্তিদের সামান্য মদত যদি দেওয়া যায়, যদি দক্ষতাকে সামান্য বিকশিত করা যায়, যদি সামান্য প্যাকেজিং শেখানো যায়, তবে এতে কতবড় পরিবর্তন আনা যেতে পারে। আজ এটা বলতে আমার আনন্দ হচ্ছে, প্রায় ৩৫ কোটি যে ঘুড়ির ব্যবসা ছিল সামান্য সহায়তায় তা ৫০০ কোটি ছাড়িয়ে গেছে। আমার ঐ বিষয়ে আগ্রহ কিছুটা বৃদ্ধি পেলে আমি কিছু নতুন নতুন জিনিস করতে শুরু করলাম। এরা অসম থেকে বাঁশ নিয়ে আসতেন। কারণ, ঘুড়িতে বানাতে যে বাঁশ কাঠির প্রয়োজন হয় সেই মাপের বাঁশ গুজরাটে হতো না। আমি জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং – এর লোকেদের সঙ্গে কথা বললাম। আমি বললাম, দুটো গাঁটের মাঝখানে অনেকটা তফাৎ, এরকম বাঁশ আমাদের এখানে কেন হবে না, তাতে আমাদের স্থানীয় বাঁশের থেকে উৎপন্ন উপকরণ কাজে লাগে। বাঁশ তাঁরা বাইরে থেকে আনলে তার জন্য টাকার ব্যবস্থা করা দরকার। আমি বিজ্ঞাপন কোম্পানি’কেও ডাকলাম। আমি বললাম, ঘুড়ি প্রস্তুতকারকদের সঙ্গে একটু বসুন। ঘুড়ির ওপর কোনও বিজ্ঞাপনের কাজ হলে ওদের আয় বাড়তে পারে। ছোট ছোট বিষয়গুলিতে আমি এতটা মনোযোগ দিয়েছিলাম, আর ঐ কাজে আমার এত আনন্দ হয়েছিল। আমি ২০০৩ – ০৪ সালের কথা বলছি। আমার এই কথা বলার তাৎপর্য এই, যে কাজ পুরোপুরি উপেক্ষিত ছিল, তাতে সামান্য মনোযোগ দেওয়া হল, টাকার ব্যবস্থা করা হল, সেটা দ্রুতগতিতে এগোল। এইসব শক্তি দূরে আছে। দেখুন প্রতি গ্রামে দু-চার জন মুসলমান ছেলে এ রকম থাকবে যারা এতটা উদ্ভাবনী শক্তিসম্পন্ন হয় যে প্রযুক্তিতে তাদের প্রতি ঈশ্বরের কৃপা থাকে। তারা দ্রুত অনেক জিনিস ধরতে পারে। আপনি তাদের একটা তালা মেরামত করতে দিন তো দ্বিতীয়দিন তারা সেটা ঐ রকমই মেরামত করে দেয়। পারম্পরিকভাবেই এরা দক্ষ। এ রকম লোকেদের আমরা সহায়তা দিলে, তারা যে কিছু বন্ধক যে রাখবে, সেরকম বন্ধক রাখার মতো তাদের কাছে কিছুই নেই, একমাত্র তাদের বিশ্বাসযোগ্যতা ছাড়া। তাদের সবচেয়ে বড় পুঁজি হচ্ছে তাদের বিশ্বাসযোগ্যতা। গরিব মানুষদের যে মূলধন তা হল তাদের বিশ্বাসযোগ্যতা। ঐ পুঁজির সঙ্গে মুদ্রা নিজের পুঁজিকে যুক্ত করতে চায়, যাতে সাফল্যের চাবি তৈরি হয়, আর এই লক্ষ্যেই আমরা কাজ করতে চাই। কুম্ভকার আছেন, এখন গ্রামে বিদ্যুৎ পৌঁছে গেছে। ওরাও চান কি, ছোট কলসি আর অন্যান্য জিনিস তৈরি করি। যদি বৈদ্যুতিক মটর লাগানো যায়, তবে আমার কাজ দ্রুত হবে। কিন্তু বৈদ্যুতিক মটর কেনার পয়সা নেই। ব্যাঙ্কে যাওয়া-আসার জন্য তার কাছে এত সময়ও নেই, আর এরকম যোগাযোগও নেই। আজ এখানে ব্যাঙ্কের বড় বড় ব্যক্তি বসে আছেন। আমার কথা লিখে রাখুন, এক বছর বাদে ব্যাঙ্কের লোকেরা মুদ্রা লোকেদের কাছে লাইন লাগাবেন, আর বলবেন, ভাই আমাকে ৫০ লক্ষ ক্লায়েন্ট দিন। কারণ, দেখুন প্রধানমন্ত্রী জন ধন যোজনায় ভারতের ব্যাঙ্কিং সেক্টর যে কাজ করেছে, তাতে আমি যতই অভিনন্দন জানাই সেটা কম হবে, যত অভিনন্দন জানাই, তা যথেষ্ট নয়। কেউ ভাবতেই পারেন না, কারণ ব্যাঙ্কের বিষয়ে একটা ধারনা তৈরি হয়েছিল যে, ব্যাঙ্ক একটা পর্যায়ের নীচে যেতে পারে না। ব্যাঙ্কের লোকেরা গরমের দিনে গ্রামে গ্রামে বাড়ি বাড়ি গিয়ে গরিবদের ঝুঁপড়িতে গিয়ে তাঁদের দেশের অর্থ ব্যবস্থার মূলস্রোতে আনার চেষ্টা করেছেন। আর এই দেশে ১৪ কোটি লোককে, ব্যাঙ্কিং ক্ষেত্রের সঙ্গে যুক্ত করেছেন। আমরা এই শক্তি উপলব্ধি করেছি। এটা তার নতুন একটা পদক্ষেপ। আজ এমন একটা উপলক্ষ্য, যখন সিডবি’র রজত জয়ন্তী বর্ষ। সিডবি’র বয়স ২৫ বছর হয়ে গেছে। প্রধাণত, সিডবি’র কারবার এই কাজ থেকেই শুরু হয়েছিল। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ব্যক্তিদের সাহায্য করতে। ভারত যতো দ্রুতই ছন্দোবদ্ধ পদক্ষেপে এগোক তাতে আকাঙ্খা পূরণ হবে না। আমাদের ঐ ছন্দের পরিবর্তন করে লাফ দেওয়া প্রয়োজন। আমাদের পরিসরকে বাড়ানো আবশ্যক। আরও বেশি সংখ্যক মানুষকে এর ভেতরে নিয়ে আসা প্রয়োজন। সাধারণ নারীর নিজস্ব অভিজ্ঞতা রয়েছে। দেখুন, ভারতে মহিলা স্বনির্ভর গোষ্ঠী কাজ করছে। টাকা-কড়ির ব্যাপারে সম্ভবত এত বিশ্বাসযোগ্যতা কোথাও দেখতে পাওয়া যাবে না। যদি ওঁদের ৫ তারিখে টাকা জমা করার কথা থাকে, সেই তারিখে গিয়েই তাঁরা সেই টাকা জমা করে আসেন। সঞ্চয় আমাদের এখানে অভ্যাস। তাকে আরও শক্তি জোগানো দরকার। পারম্পরিকভাবে আমাদের সেই শক্তি আছে। মুদ্রা ব্যাষ্কের মাধ্যমে ব্যবসার ক্ষেত্রে, স্বনিযুক্তির ক্ষেত্রে, শিল্পের ক্ষেত্রে যাঁরা আর্থিক ব্যবস্থার নীচের দিকে, তারা আমাদের সবচেয়ে বড় ক্লায়েন্ট, আমাদের উদ্দিষ্ট সবচেয়ে বড় গোষ্ঠী। তাদের ওপরই আমরা নজর দিতে চাই। এই যে ৫ কোটি ৭৫ লক্ষ ছোট ব্যবসায়ি আছেন, তাঁদের গড় ঋণের পরিমাণ কত? হিন্দুস্থানে তাঁদের কাছে পুরো পুঁজি আছে ১১ লক্ষ কোটি। সারা দেশে এটা খুব বেশি পরিমাণ নয়, আর গড় ঋণের পরিমাণ বের করা গেলে দেখা যাবে একটা ইউনিটের গড় ঋণের পরিমাণ মাত্র ১৭ হাজার, যা কিছুই নয়। তাদের ১ লক্ষ টাকার ঋণ সহায়তা দেওয়া যাক, যদি এতটা যোগ করি ১১ লক্ষ ১ কোটি পর্যন্ত পৌঁছে যাবে। আমরা কল্পনা করতে পারি, দেশের অর্থনীতিকে মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনকে নীচে থেকে বল জোগানোর এত বড় শক্তি রয়েছে, যাকে কখনও কাজে লাগানো হয়নি। আর এই জন্য যখন আমরা প্রধানমন্ত্রী জন ধন যোজনা নিয়ে আসি, তখন আমরা বলেছিলাম, যেখানে ব্যাঙ্ক নেই তাকে আমরা ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত করব। আজ যখন আমরা মুদ্রা নিয়ে এসেছি, তখন আমাদের মন্ত্র, যাঁদের ফান্ডিং বা অর্থ জোগানোর ব্যবস্থা নেই, যাদের অর্থ জোগানো হয়নি, তাদের অর্থ জোগানোর চ্যালেঞ্জ আমরা নিচ্ছি। এটা এমন একটা ব্যবস্থা, যাতে শুরুর সময় সাধারণ ব্যক্তি যাবেন, এটা সম্ভব নয়, কারণ বেচারির অভিজ্ঞতা খুব খারাপ। তিনি বলেন, ভাই আমাকে তো মহাজনের কাছ থেকেই অর্থ নিতে হয়, ৩০ শতাংশ সুদ দিতে হয়, এটা আমার অভ্যাস হয়ে গেছে। তিনি বিশ্বাস করবেন না যে তিনি এইভাবে ঋণ পেতে পারেন। আমরা একটা নতুন বিশ্বাস তৈরি করতে চাই যে, আপনি দেশের জন্য কাজ করছেন, দেশের উন্নয়নের অংশীদার আপনি, দেশ আপনার জন্য ভাবতে প্রস্তুত, আমি এই বার্তা দিতে চাই। এই মুদ্রার যে ধারণা, তার সাহায্যে ঐ লক্ষ্যে আমরা অগ্রসর হতে চাই। আমাদের দেশে কৃষি ক্ষেত্রে মূল্য যুক্ত করার (ভ্যালু অ্যাডিশন) এত বড় সম্ভাবনা রয়েছে। যদি তার উপায়কে উন্নত করা যায়, তাহলে আমাদের কৃষকদের কখনও সংকটের মধ্যে দিয়ে যেতে হবে না। আর এই ছোট ছোট উদ্যোক্তাদের মাধ্যমে একটা পুরো ব্যবস্থা দাঁড় করানো যেতে পারে যা, সাধারণ কৃষক যাঁরা সামান্য উৎপাদন করেন, তাতে মূল্য যুক্ত করার কাজ করে, আর সেটা স্থানীয়ভাবে খুব বড় কোনও ব্যবস্থার প্রয়োজন নেই তার কাজ আপনা থেকেই এগিয়ে চলবে। আর আমরা দেখি, আম তাঁকে বিক্রি করতে হয় কিন্তু তিনি খুব কম দাম পান। কিন্তু, একটা ছোট ইউনিট হলেও আমের আচার বানালে বেশি পয়সা পাওয়া যায়। আর আচার একটা বেশ সুন্দর শিশিতে প্যাক করা যায় তো আরও বেশি পয়সা পাওয়া যায়। আর কোনও অভিনেত্রী শিশি নিয়ে দাঁড়ান তো বিজ্ঞাপন হয়, আরও বেশি অর্থ মেলে। সময় বদলেছে, ব্র্যান্ডিং বিজ্ঞাপন এই সব কিছুর প্রয়োজন দেখা দিয়েছে। আমরা এরকম ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সব ব্যক্তিকে শক্তি জোগাতে চাই। আর তাঁদের এই শক্তি জোগানো গেলে দেশের অর্থনীতির নীচের ক্ষেত্র যতটা বেশি মজবুত হবে, দেশের অর্থনীতির ততটাই লাভ হবে। যখন আমি এইসব পরিসংখ্যান বলছিলাম, আপনারা আশ্চর্য হয়ে গিয়েছিলেন, এত বড় বড় যন্ত্রপাতি এসব দিয়ে ১ কোটি ২৫ লক্ষ লোকের কর্মসংস্থান হয়। আর যাঁদের কেউ দেখেন না, তাঁরা ১২ কোটি লোকের অন্নসংস্থান করেন, কত বড় পার্থক্য। এই যে ১২ কোটি লোক আছেন, ২৫ কোটি কর্মসংস্থানের ক্ষমতা রাখেন, এই সম্ভাবনা রয়েছে। আর সরকারি ব্যবস্থায় খুব বেশি পরিবর্তনেরও প্রয়োজন নেই। একটু সংবেদনশীলতা প্রয়োজন, একটু অনুভূতির প্রয়োজন, আরেকটু স্বতঃপ্রণোদিত (প্রো-অ্যাক্টিভ) ভূমিকার প্রয়োজন। মুদ্রা’কে একটি এমন মঞ্চ হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে, যে মঞ্চের সঙ্গে আজ ছোট ছোট অর্থ লগ্নির ব্যবস্থাও রয়েছে। পৃথিবীর অনেক জায়গায় মাইক্রো ফিন্যান্সের ব্যবস্থা প্রয়োগ করা হয়েছে। আমি চাইব, সারা বিশ্বে মাইক্রো ফিন্যান্সে যে সফল মডেল আছে আমরা সেগুলিকে অধ্যয়ন করি। সেগুলির যে ভালো দিকসমূহ আমাদের পক্ষে উপযোগী সেগুলিকে আমরা গ্রহণ করি। আর হিন্দুস্তান এমন বড় দেশ কি যে যে-জিনিস নাগাল্যান্ডে চলে তা যে মহারাষ্ট্রে চলবে এমন কোনও বাধ্যবাধকতা নেই। বৈচিত্র্য চাই, আর বৈচিত্র্য অনুসারে স্থানীয় প্রয়োজনীয়তা অনুসারে নিজস্ব মডেল তৈরি করি, যার প্রয়োজন আছে। তবে, আমরা দিল্লিতে বসে দর্জির জন্য বলব, তুমি এই পাবে বললে, তালমিল হবে না। সে অন্য জায়গায় আছে, তাকেই জিজ্ঞাসা করতে হবে ভাই বল, তোমার কি দরকার? যদি আমরা এটা করি তো আমরা খুব ভালোভাবেই সমাজে এই নীচের দিকের অংশকে সাহায্য করতে পারি। যেভাবে সাধারণ মানুষদের কথা ভাবার চেষ্টা করি ….. আর আপনারা এই সরকারের একেকটি পদক্ষেপ দেখে থাকবেন, গতিশীলতা তো আপনারা দেখেই থাকবেন। তবু সাধারণত, দেশের পরিকল্পনার ঘোষণাকে কাজ বলে মনে করা হয়, আর আপনি রোজ নতুন নতুন যোজনার ঘোষণা করেন তো যে মানুষদের দেশকে বোঝার ভিত্তি সংবাদপত্র, তাঁরা মনে করেন, বাঃ দেশ বেশ এগিয়ে গেছে। আর দু-চার বছর বাদেই দেখেন, যা ছিল তাই রয়েছে। আমাদের চেষ্টা হচ্ছে, পরিকল্পনাগুলিকে বাস্তবায়িত করা। প্রধানমন্ত্রী জন ধন যোজনা এটা সরাসরি দেখাচ্ছে উদযোগ পরিকল্পনা – বিশ্বের সবচেয়ে বড় নগদ হস্তান্তরের কাজ, গ্যাস সাবসিডিতে। ১৩ কোটি লোকের গ্যাস সাবসিডি সিলিন্ডার সাবসিডি সরাসরি তাঁদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে চলে গেছে। যদি একবার সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়, এই কাজটা পুরো করতে হবে আর প্রত্যেকটা কাজ আপনারা দেখুন ….. যখন আমরা ১৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী জন ধন যোজনার কথা বলেছিলাম প্রায় ১২৫ দিনের মধ্যে সেই কাজ সম্পূর্ণ করেছি। যখন আমরা প্রধানমন্ত্রী জন ধন যোজনার পরে এগোলাম ১০০ দিনের মধ্যে আমরা উদযোগের নির্ধারিত কাজ সম্পন্ন করলাম। আর আজ যখন বাজেটে ঘোষণা হল, ৫০ দিনও হয়নি আজ এই যোজনা আপনাদের সামনে আনলাম। এই যোজনা কার্যকর হবে এবং আমি বলছি, এর ফল এক বছরের মধ্যেই পাওয়া যাবে। এক বছরের মধ্যে আমাদের যে প্রতিষ্ঠিত ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থা তা মুদ্রার মডেলের দিকে অগ্রসর হবে এবং আমি দাবি করছি, কারণ, এর শক্তি চেনা যাচ্ছে। এটা নিজস্ব একটা নমনীয় ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থা তৈরি করবে। একটা খুব বড় অফিস চাই, কয়েকটা এয়ার কন্ডিশন চাই এমন কোনও প্রয়োজন নেই। এমন নগ্নপদ (বেয়ার ফুটেড) ব্যাঙ্কার্স তৈরি হতে পারেন, যাঁরা মুদ্রা মডেলে বড় বড় ব্যাঙ্কে কাজ করতে পারেন। আগামী দিনগুলিতে কম অর্থ লগ্নি করেও বেশি মানুষের কর্মসংস্থানের কাজ সহজভাবে চলতে পারে। মানুষ সমস্যাক্লিষ্ট, সুদের যাতাকলে গরিব মানুষ মারা পড়েন, তাঁদের বাঁচাতে হবে এবং তাঁদের যে ক্ষমতা তাকে সুযোগ দিতে হবে। ঐ সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে কাজ করছে, দেশের যেসব শ্রেণী, তাঁদের বিষয়ে যতটা ভাবা যায়, দেশের কৃষকদের নিয়েও ভাবা ততটাই জরুরি। কোনও না কোনও কারণে দেশের কৃষকরা প্রাকৃতিক সঙ্কটের মোকাবিলা করছেন। গত বছর বৃষ্টি কম হওয়ার কারণে এমনিতেই কৃষকরা সমস্যার মধ্যে কাটাচ্ছিলেন। আর এবার যেভাবে অসময়ে বৃষ্টি আর শিলাবৃষ্টি হয়েছে যে কৃষকদের এতটা কষ্টের মধ্যে পড়তে হয়েছে। আমি মন্ত্রীদের পাঠিয়েছিলাম। চাষের ক্ষেতে গিয়ে কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে পরিস্থিতি দেখে এসেছেন। গতকাল এইসব মন্ত্রীদের কাছে আমি বিস্তারিত রিপোর্ট নিয়েছি। এই কৃষকদের আমরা কি সাহায্য দিতে পারি? আমি প্রথমদিন বলেছিলাম কৃষকদের এই সমস্যা থেকে বাঁচানো, তাঁদের সঙ্গে থাকা, তাঁদের সঙ্কটমুক্ত করা সরকারের, সমাজের, আমাদের সকলের দায়িত্ব আর কৃষকদের বিষয়ে ভাবা আবশ্যক। আগেও প্রাকৃতিক দুর্যোগ এসেছে। কিন্তু সরকারের যে মানদন্ড (প্যারামিটার) আছে, সেই মানদন্ডে আজকের সঙ্কটে কৃষকেরা খুব বেশি সহায়তা পাবেন না। এই কারণেই, এই সঙ্কটের ব্যপকতা এতটা আর এমন সময় যখন তাঁদের ফসল নিয়ে বাজারে যাওয়ার কথা। একরকম তাঁদের টাকার বান্ডিলই পুড়ে গেছে, এইভাবে আমরা বলতে পারি। এত ঘাম ঝরানোর পরে তাঁদের এই অবস্থা। এই জন্য আমরা বিমা সংস্থাগুলিকে নির্দেশ দিয়েছি, নিজে থেকেই অত্যন্ত সক্রিয় হয়ে তারা যেন কৃষকদের সাহায্য করে। ব্যাঙ্কগুলিকে আমরা আদেশ দিয়েছি, ব্যাঙ্কের কাছে তাঁদের যে ঋণ আছে সে ব্যাপারে কিভাবে তাঁদের ঋণ পরিশোধের পুনর্বিন্যাস করা যায় যাতে তাঁরা সঙ্কটমুক্ত হতে পারেন। সরকারের পক্ষ থেকে আমরা একটি খুব গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে চলেছি। এ পর্যন্ত ক্ষেতে ফলনের ৫০ শতাংশের বেশি নষ্ট হলে কৃষকেরা এই সাহায্যপ্রাপকদের তালিকায় আসতেন। ৫০ শতাংশের বেশি ক্ষতি হলে তখনই তাঁরা সাহায্য পেতে পারেন। ক্ষতি যদি ৫০ শতাংশের কম হয় তা হলে সাহায্য পাওয়া যায় না। রাজ্যগুলির মুখ্যমন্ত্রীদেরও পরামর্শ ছিল এই মানদন্ডের পরিবর্তন প্রয়োজন। আমাদের মন্ত্রীরা সদ্য সদ্য ঘুরে এসেছেন, তাঁরা নিজেরা দেখেছেন, আর এইসব দেখার পর একটি অত্যন্ত বড় ও গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে যে কৃষকদের ৫০ শতাংশ ক্ষতির যে মানদন্ড ছিল, তাকে পরিবর্তন করে ৩৩ শতাংশ করা হবে। ৩৩ শতাংশ ক্ষতি হলেও কৃষকেরা এই সাহায্য পাওয়ার উপযুক্ত হবেন। আমি বুঝি, এই কারণে, বেশ বড় বোঝা চাপবে কিন্তু কৃষকদের জন্য ঐ ৫০ শতাংশ মানদন্ড রেখে দিলে তাঁদের খুব একটা লাভ হবে না। ৩৩ শতাংশ যা অনেকেরই দাবি ছিল, তা আমরা মেনে নিয়েছি। দ্বিতীয় বিষয় হল, তাঁদের যে ক্ষতি পূরণ দেওয়া হয় সেই বিষয়ে। স্বাধীনতার পর দেশে এই প্রথমবার সবচেয়ে বড় সিদ্ধান্ত হচ্ছে (ক্ষতি পূরণ পাওয়ার মানদন্ডের ক্ষেত্রে) ক্ষতির পরিমাণ ৫০ শতাংশকে ৩৩ শতাংশে নিয়ে আসা। আর স্বাধীনতার পর এত বড় পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি, কৃষকদের সহায়তা দিতে এইবার এত বড় পদক্ষেপ আমরা নিচ্ছি। তাঁদের সাহায্য করার যে সমস্ত মানদন্ড আছে সেগুলিকে দেড় গুণ করা হবে। যদি ক্ষতির ক্ষেত্রে আগে ওঁরা ১০০ টাকা পেতেন, এখন ১৫০ টাকা পাবেন, ১ লক্ষ টাকা পেতেন তো এখন দেড় লক্ষ টাকা পাবেন। তাঁদের জন্য সহায়তা দেড়গুণ করে দেওয়া হবে। আমাদের এখানে বাড়ানো হতো কখনও ৫ শতাংশ, ২ শতাংশ, এখন ৫০ শতাংশ বৃদ্ধি। কৃষকেরা যেন সঙ্গে সঙ্গে সাহায্য পান। রাজ্যগুলি সমীক্ষার কাজ করেছে, ভারত সরকার ও রাজ্য সরকার মিলিতভাবে এই কাজকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন। কিন্তু আমি চাই, আমাদের দেশে কৃষকদের যতটা সহায়তা করা যায়, ততটা সহায়তা দিতে সরকার অঙ্গীকারবদ্ধ। কারণ, অর্থনৈতিক বিকাশ যাত্রায় কৃষকেরা খুব বড় আকারে অংশ নেন। আর আমাদের জীবনযাত্রায় কৃষকদের খুব বড় ভূমিকা রয়েছে। ব্যাঙ্ক হোক, বিমা সংস্থা হোক, ভারত সরকার হোক, রাজ্য সরকার হোক, আমরা সবাই মিলে কৃষকদের এই সঙ্কট থেকে মুক্ত করব। এই পূর্ণ বিশ্বাস আমার রয়েছে। সিডবি’র রজত জয়ন্তী বর্ষের সূচনা উপলক্ষ্যে আমি তাঁদের শুভেচ্ছা জানাই। আগামীদিনে সিডবি নতুন লক্ষ্য নিয়ে নতুন নতুন উচ্চতা অতিক্রমে সফল হোক, এই শুভকামনা জানাই। মুদ্রা মঞ্চ, প্রধানমন্ত্রী মুদ্রা যোজনা আগামীদিনে দেশের আর্থিক, ঐতিহ্যকে আরও জীবনদায়ী ও চমকপ্রদ করার কাজে অত্যন্ত বড় ভূমিকা পালন করবে। আর এই মূলধন তার সফলতার চাবিকাঠি হয়ে উঠুক এই মন্ত্রকে আমরা সফল করে তুলব। এই একটি শুভ অভিপ্রায় নিয়ে আজ এই গুরুত্বপূর্ণ পরিকল্পনার সূচনা করে আমি আনন্দিত, আমার অনেক অনেক শুভেচ্ছা। ধন্যবাদ।