Search

পিএমইন্ডিয়াপিএমইন্ডিয়া

সাম্প্রতিক সংবাদ

বিষয়টিকে সরাসরি পিআইবি থেকে নেওয়া হয়েছে

জাতির উদ্দেশে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ‘মন কি বাত’ (দ্বাবিংশতিপর্ব) অনুষ্ঠানের বাংলা অনুবাদ


আমারপ্রিয় দেশবাসী, নমস্কার! আজ সকাল-সকাল দিল্লির তরুণ বন্ধুদের সঙ্গে কিছু সময়কাটানোর সুযোগ আমার হয়েছিল। আমার বিশ্বাস আগামী দিনগুলিতে পুরো দেশজুড়ে ছড়িয়ে যাবেখেলা নিয়ে প্রতিটি তরুণের উ ৎসাহ-উদ্দীপনার বাতাবরণ। আমরা সবাইজানি কিছুদিনের মধ্যেই বিশ্ব-খেলাধুলোর ক্ষেত্রে সবথেকে বড় ক্রীড়ার মহাকুম্ভ আয়োজিতহতে চলেছে। বারবার আমাদের কানে প্রতিধ্বনিত হবে ‘রিও’। সারা বিশ্ব খেলবে, পৃথিবীরপ্রতিটি দেশ নিজ নিজ খেলোয়াড়দের ওপর তীক্ষ্ণ নজর রাখবে, আপনারাও রাখবেন। আমাদেরআশা-প্রত্যাশা তো অনেক, কিন্তু রিওতে খেলার জন্য যাঁরা গেছেন, সেইসব খেলোয়াড়দের উৎসাহকেআরও জোরদার করার কাজ ১২৫ কোটি দেশবাসীর। আজ দিল্লিতে ভারত সরকার ‘ Run for Rio ’,‘খেলো আর বাঁচো, খেলো আর প্রস্ফুটিত হও’ শীর্ষক এক বিশাল এবং সুন্দর দৌড়ের আয়োজনকরেছে। আমিও আগামী দিনে যেখানেই থাকি না কেন, আমাদের খেলোয়াড়দের উৎসাহিত করারজন্য কিছু না কিছু করব। যে সমস্ত খেলোয়াড় এই পর্যায়ে এসে পৌঁছন তাঁরা অনেক কঠিনপরিশ্রমের পরই এই জায়গায় এসে পৌঁছন। এক রকম কঠোর সাধনা করেন তাঁরা। খাওয়া-দাওয়ারযত শখই থাকুক না কেন, সবকিছু ছেড়ে দিতে হয়। শীতের সময় ঘুমোনোর ইচ্ছে করলেও, বিছানাছেড়ে মাঠে দৌড়তে হয়। আর শুধু খেলোয়াড়ই তো নয়, তাঁর মা-বাবাও ততটাই মনোযোগ সহকারেনিজের ছেলের জন্য মেহনত করেন। রাতারাতি কেউ খেলোয়োড় হয়ে যায় না। এক কঠিন সাধনার পরখেলোয়োড় হয়ে ওঠেন। হার-জিত নিশ্চয়ই গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু সেইসঙ্গে এই প্রতিযোগিতারস্তর পর্যন্ত পৌঁছনো তার চেয়েও অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এজন্যই সব দেশবাসীর উচিত রিওঅলিম্পিকে আমাদের যেসমস্ত খেলোয়োড়রা গেছেন তাঁদের শুভকামনা জানানো। আমাদের হয়ে এইকাজ করার জন্য আমি তৈরি। আপনাদের শুভেচ্ছাবার্তা এইসব খেলোয়োড়দের কাছে পৌঁছনোরজন্য দেশের প্রধানমন্ত্রী ডাকপিওন হতে প্রস্তুত। আপনারা আমাকে ‘নরেন্দ্রমোদীঅ্যাপ’–এ খেলোয়োড়দের নামে শুভেচ্ছা পাঠান, আমি সেই শুভেচ্ছাবার্তা তাঁদের কাছেপৌঁছে দেব। আমিও ১২৫ কোটি দেশবাসীর মত এক দেশবাসী, এক নাগরিক হিসাবে আমাদের এই সবখেলোয়োড়দের উৎসাহ বাড়ানোর জন্য আপনাদের সঙ্গে থাকব। আসুন, আমরা সবাই আগামীদিনগুলিতে এক-একজন খেলোয়োড়কে যতটা গৌরবান্বিত করা সম্ভব তাঁদের প্রচেষ্টাকেপুরস্কৃত করা সম্ভব, করি। আমি আজ যখন রিও অলিম্পিকের কথা বলছি, তখন এক কবিতা-প্রেমিক– পঞ্জাব কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সুরজপ্রকাশ উপাধ্যায় একটি কবিতাপাঠিয়েছেন। হতে পারে, আরো অনেক কবি আছেন যাঁরা অনেক কবিতা লিখেছেন, হয়ত কবিতা লিখেকেউ কেউ তা আবৃত্তি করবেন, প্রতিটি ভাষাতে করবেন, তবে আমাকে সূরজজী যে কবিতাটাপাঠিয়েছেন আমি তা আপনাদের সঙ্গে উপভোগ করতে চাই।

উঠলখেলার আওয়াজ

উঠলখেলার আওয়াজ,

প্রতিযোগিতারবর্ণালী মেজাজ

খেলারএই মহাকুম্ভে, রিও-র শব্দ ঝংকারে

খেলারএই মহাকুম্ভে, রিও-র শব্দ ঝংকারে।

ভারতেরএক শুভ সূচনা হোক।

ভারতেরএক শুভ সূচনা হোক

সোনারুপো, এবং ব্রোঞ্জের বর্ষণ হোক।

ভারতেরএক শুভ সূচনা হোক

সোনা,রুপো এবং ব্রোঞ্জের বর্ষণ হোক।

এবারআমাদের জয় হোক, এমনই প্রস্তুতি হোক।

লক্ষ্যথাকুক সোনাতে

লক্ষ্যথাকুক সোনাতে

নিরাশহয়ো না হারেতে

নিরাশহয়ো না হারেতে।

কোটিমনের গর্ব তোমরা

খেলাতেআমাদের প্রাণ তোমরা।

কোটিমনের গর্ব তোমরা

খেলাতেআমাদের প্রাণ তোমরা।

তোমাদেরকীর্তির নিশানায়

রিওতেউড়ুক বিজয় নিশান

রিওতেউড়ুক বিজয় নিশান।

সূরজ-জী, আপনার এই অনুভব আমি সব খেলোয়োড়দের প্রতি অর্পণকরছি, আর আমার তরফে, ১২৫ কোটি দেশবাসীর তরফে রিও-তে ভারতবর্ষের পতাকা উড্ডীন করারজন্য অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানাতে চাই।

এক যুবক, শ্রীমান অঙ্কিত, আমাকেরাষ্ট্রপতি আব্দুল কালাম-জীর মৃত্যুবার্ষিকী স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। গত সপ্তাহেআব্দুল কালাম-জীর প্রয়াণ দিবসে দেশ এবং বিশ্ব শ্রদ্ধাঞ্জলি জানিয়েছে। যখনই আব্দুলকালাম-জীর নাম করা হয়, তখনই বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, ক্ষেপনাস্ত্র – ভবিষ্যতের একশক্তিশালী ভারতের ছবি আমাদের চোখের সামনে ভেসেওঠে। আর এজন্য অঙ্কিত লিখেছেন যে আপনার সরকার আব্দুল কালাম-জীর স্বপ্নকে সার্থককরার জন্য কি করছে? আপনার কথা ঠিক। আগামী দিন প্রযুক্তিনির্ভর, আর প্রযুক্তি সততপরিবর্তনশীল। প্রতিদিন প্রযুক্তি বদলাচ্ছে, প্রতিদিন নতুন নতুন প্রযুক্তি আসছে,ফলে আগামী দিনগুলিতে নতুন সম্ভাবনার জন্ম দিচ্ছে, বদলাচ্ছে। আপনি প্রযুক্তিকে একজায়গায় ধরে রাখতে পারবেন না, যদি এক জায়গায় আটকে রাখতে চান, ততক্ষণে অন্য কোথাওনতুন প্রযুক্তি তৈরি হয়েছে। আপনাদের যদি এই পরিবর্তনের দৌড়ে পা মেলাতে হয়, পরিবর্তনের দৌড়ে এগিয়েথাকতে হবে। গবেষণা ও আবিষ্কার – যা প্রযুক্তির প্রাণ, সেদিকে নজর দিতে হবে। গবেষণাও আবিষ্কার যদি না হয়, তাহলে জমে থাকা জল যেমন দুর্গন্ধ ছড়ায়, তেমনি প্রযুক্তিওবোঝা হয়ে ওঠে। যদি আমরা গবেষণা ও আবিষ্কার বাদ দিয়ে পুরনো প্রযুক্তিকে আঁকড়ে ধরেথাকি, তাহলে আমরা এই বিশ্বের পরিবর্তনশীল যুগের বাইরে পড়ে থাকব। আর এজন্যই নতুনপ্রজন্ম বিজ্ঞানের প্রতি, প্রযুক্তির উন্নয়নের জন্য, গবেষণা ও আবিষ্কারের প্রতিযাতে আকৃষ্ট হয়, সেজন্য সরকার অনেক ব্যবস্থা নিয়েছে। তাই তো আমি বলি, ‘ Let us aim to innovate ’ – আসুন আমরা এগোই গবেষণারলক্ষ্যে। আর যখন আমি ‘ Let us aim to innovate ’ বলি, তখন AIM –এর মানে হল Atal Innovation Mission । নীতি আয়োগের মাধ্যমে Atal Innovation Mission –কে উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে। আমার আশা এই AIM –এর মাধ্যমে – Atal Innovation Mission -এর মাধ্যমে গোটা দেশে এক পরিকাঠামো তৈরি হবে। একইসঙ্গে আবিষ্কার,পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও শিল্পোদ্যোগের এক ধারাবাহিকতা চলুক, এতে নতুন নতুন কাজেরসম্ভাবনাও বাড়বে। আমাদের যদি পরবর্তী প্রজন্মকে উদ্যোগী করতে হয়, তাহলে আমাদেরছেলেদের এই কাজের সঙ্গে যুক্ত করতে হবে। আর এজন্য ভারত সরকার Atal Tinkering Labs তৈরি করার উদ্যোগ নিয়েছে। যে সমস্ত স্কুলে এরকম Tinkering Lab তৈরি হবে, তাদের দশ লক্ষ করে টাকা দেওয়া হবে। আর পাঁচ বছরধরে তাকে ঠিকভাবে চালু রাখার জন্য আরও ১০ লক্ষ টাকা দেওয়া হবে। আবিষ্কারের সঙ্গেসরাসরি সম্পর্কিত – IncubationCentre বা গবেষণার আঁতুড়ঘর। আমাদেরকাছে যদি শক্তিশালী এবং উন্নতমানের গবেষণাগার থাকে, তাহলে আবিষ্কারের জন্য, নতুনউদ্যোগের জন্য, তাকে কাজ লাগানোর জন্য, তাকে এক নিশ্চিত লক্ষ্যে পৌঁছে দেওয়ার জন্যএক পরিকাঠামো তৈরি হয়। যেমন নতুন গবেষণাগার তৈরির প্রয়োজন আছে, তেমনই পুরনোগবেষণাগারকে উন্নত মানের করে তোলারও প্রয়োজন আছে। আর আমি যে ‘অটল ইনকিউবেশনেরসেন্টার’-এর কথা বলছি, তাকে দশ কোটি টাকার এক বড় আর্থিক অনুদান দেওয়ার লক্ষ্যেভাবনা-চিন্তা করছে ভারত সরকার। ভারত নানা সমস্যার সঙ্গে লড়াই করছে। প্রতিদিনেরজীবনে এইসব সমস্যার প্রযুক্তিগত সমাধান খুঁজতে হবে। আমরা আজকের যুবপ্রজন্মকে ‘অটলগ্র্যাণ্ড চ্যালেঞ্জেস’-এর প্রতি আহ্বান জানিয়েছি। যদি আপনাদের নজরে কোনো সমস্যাআসে, তার সমাধানের জন্য প্রযুক্তি খুঁজে বার করুন, গবেষণা করুন, আবিষ্কার করুন,আমাদের জানান। ভারত সরকার আমাদের সমস্যাগুলির সমাধানের জন্য এই ধরনের নতুনপ্রযুক্তির সন্ধান দিতে পারলে উদ্ভাবনকারীকে বিশেষভাবে পুরস্কৃত করে উৎসাহ দিতেচায়। আমি আনন্দিত যে এব্যাপারে মানুষের যথেষ্ট আগ্রহ আছে। আমরা যখন ‘টিংকারিংল্যাব’-এর কথা বলি, তখন প্রায় তেরো হাজারেরও বেশি স্কুল আবেদন করেছিল। আর যখন আমরা‘ইনকিউবেশন সেন্টার’-এর কথা বলেছিলাম, তখন চার হাজারেরও বেশি শিক্ষাদানকারী ওঅন্যান্য প্রতিষ্ঠান আবেদন জানিয়েছিল। আমার বিশ্বাস আব্দুল কালাম-জীর প্রতিসত্যিকারের শ্রদ্ধাঞ্জলি হল গবেষণা ও আবিষ্কার। আমাদের নিত্যকার সমস্যা সমাধানেরজন্য প্রযুক্তির ব্যবহার, আমাদের সমস্যাসঙ্কুল জীবন থেকে মুক্তির জন্য – জীবনযাত্রাকেসহজ করার জন্য আমাদের নবীন প্রজন্ম যত কাজ করবে, তাদের অবদান একবিংশ শতকের আধুনিকভারতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। আর সেটাই হবে আব্দুল কালাম-জীরপ্রটি আমাদের প্রকৃত শ্রদ্ধাঞ্জলি।

আমার প্রিয় দেশবাসী, কিছুদিন আগেই আমরা খরা নিয়েচিন্তাগ্রস্ত ছিলাম। এখন যেমন বর্ষার আনন্দ পাচ্ছি তেমনি বন্যারও খবর আসছে। রাজ্যসরকার এবং কেন্দ্রীয় সরকার একসঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে বন্যাকবলিত মানুষদের সাহায্যকরার জন্য আন্তরিক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বর্ষার জন্য কিছু সমস্যা তৈরি হলেও, বর্ষায়প্রতিটি মানুষের মন পুলকিত হয়ে ওঠে। কারণ আমাদের গোটা আর্থিক চিত্রেরকেন্দ্রবিন্দুতে আছে বর্ষা আর চাষাবাদ। কখনও কখনও এমন রোগ আসে যে আমাদের জীবনভোর আফশোষকরতে হয়। তবে, আমরা যদি সচেতন থাকি, সর্তক থাকি, রোগের মোকাবিলায় সচেষ্ট থাকি,তাহলে এর থকে বাঁচা সহজ। ডেঙ্গুর কথাই ধরুন, ডেঙ্গু থেকে বাঁচা সম্ভব। একটুপরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার প্রতি মনোযোগী থাকার চেষ্টা করুন, একটু সতর্ক থাকুন,সুরক্ষিত থাকার চেষ্টা করুন। বাচ্চাদের প্রতি বিশেষভাবে মনোযোগ দিন আর এই যে ভুলধারণা আছে না যে ডেঙ্গু শুধু গরীব বস্তিতেই হয়, তা কিন্তু ঠিক নয়। সুখী, সমৃদ্ধএলাকাতেই সবচেয়ে আগে ডেঙ্গু ছড়ায়। এজন্য এটা বুঝুন। আপনারা দূরদর্শনে নিশ্চয়ইবিজ্ঞাপন দেখেন, তবুও কখনও কখনও আমরা তা কাজে লাগানোর ক্ষেত্রে উদাসীন হয়ে পড়ি।সরকার, হাসপাতাল, ডাক্তাররা তো নিজেদের কাজ করবেনই, কিন্তু আমাদেরও সর্তক থাকতেহবে যাতে আমাদের ঘরে, আমাদের এলাকায়, আমাদের পরিবারে ডেঙ্গু প্রবেশ করতে না পারেএবং জলবাহিত কোনো রোগ যেন না হয়। এটাই আমার আপনাদের কাছে প্রার্থনা।

আরেকসমস্যার প্রতি প্রিয় দেশবাসী, আপনাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই। জীবন এখন এতপ্রাণচঞ্চল, এত এর মধ্যে দৌড়-ঝাঁপ রয়েছে, তাই কখনো কখনো নিজের জন্য চিন্তা করার অবকাশহয় না। অসুস্থ হলাম তো মনে হয় তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যাই, সেই জন্য যে কোন অ্যান্টিবায়োটিকখেয়ে ফেলি। সঙ্গে সঙ্গে রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়, কিন্তু আমার প্রিয় দেশবাসী,এরকম কথায় কথায় অ্যাণ্টি-বায়োটিক খাওয়ার অভ্যেস গুরুতর সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে।হতে পারে আপনি কিছু সময়ের জন্য আরাম পেলেন, কিন্তু আমাদের উচিত ডাক্তারদের পরামর্শছাড়া অ্যাণ্টি-বায়োটিক খাওয়া বন্ধ করা। ডাক্তার যতক্ষণ পর্যন্ত লিখে না দিচ্ছেন, ততক্ষণআমরা যেন এটা না খাই, এই শর্টকাট রাস্তা পরিত্যাগ করি, কারণ এর থেকে এক জটিলসমস্যার উদ্ভব হচ্ছে, অ্যাণ্টি-বায়োটিকের যথেচ্ছ ব্যবহারের ফলে রোগী তো সঙ্গেসঙ্গে সুস্থ হয়ে যাচ্ছে, কিন্তু রোগের জীবানু এই সব

অ্যাণ্টি-বায়োটিকের কর্মক্ষমতাকে নষ্ট করে দিচ্ছে, তাই এই ঔষধগুলি ওইসবরোগজীবানুকে মারতে অক্ষম হচ্ছে। বিজ্ঞানীদের প্রচেষ্টার মাধ্যমে নতুন ঔষধ আবিষ্কারকরে এই রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করতে বছরের পর বছর কেটে যায়, তখন এই সব রোগ নতুনসমস্যার সৃষ্টি করে, সেইজন্য অ্যাণ্টি-বায়োটিক ব্যবহারের প্রতি আমাদের সচেতনতারদরকার। আর একটি সমস্যা হলো, ডাক্তার হয়তো বললেন, এই অ্যান্টি-বায়োটিক পনেরোটা খেতেহবে পাঁচদিন ধরে, আমি আপনাদের অনুরোধ করছি, ডাক্তারের কথা শুনে পুরো কোর্স ঔষধখান, আর্ধেক খাওয়ার পর ছেড়ে দেবেন না, তা না হলে এতে জীবানুদের সুবিধা হবে, আরদরকারের বেশি খেয়ে ফেললেও ওই সব জীবানুদের সুবিধা হয়ে যাবে। তাই যতদিনের জন্যযতগুলো ঔষধ দেওয়া হয়েছে, সেই কোর্সটা পুরো করাটা খুবই দরকারী, শরীর সুস্থ হয়েগেছে, তাই এখন আর দরকার নেই, এটা যদি আমরা করি, তাতে রোগের জীবানুদের সুবিধা হয়েযাবে, আর ওই সব জীবানু আরও শক্তিশালী হয়ে উঠবে। যেসব জীবানু যক্ষ্মা ও ম্যালেরিয়াছড়ায় সেগুলি দ্রুত গতিতে নিজেদের মধ্যে এতটাই পরিবর্তন আনছে যাতে ঔষধের কর্মক্ষমতানষ্ট হয়ে যায়। ডাক্তারি ভাষায় একে ‘অ্যান্টি-বায়োটিক রেজিস্ট্যান্স’ বলে। সেইজন্যনিয়ম মেনে অ্যান্টি-বায়োটিকের ব্যবহার করা উচিত। সরকার ‘অ্যাণ্টি-বায়োটিকরেজিস্ট্যান্স’-কে বন্ধ করতে বদ্ধপরিকর। আপনি হয়তো দেখেছেন, আজকালঅ্যাণ্টি-বায়োটিকের যে ঔষধ বিক্রি হয়, তার যে পাতা থাকে, তাতে একটা লাল লাইন এঁকেআপনাদের সাবধান করে দেওয়া হয়। আপনি এর প্রতি নিশ্চয়ই নজর দেবেন।

যখনস্বাস্থ্য সম্বন্ধীয় কথা হচ্ছে, আমি আরেকটি কথা এর সঙ্গে যোগ করতে চাই। আমাদেরদেশে যেসব গর্ভবতী মায়েরা আছেন, তাঁদের জীবনহানির চিন্তা কখনো কখনো খুব ভাবায়।আমাদের দেশে প্রতি বছর প্রায় তিনকোটি মহিলা গর্ভবতী হন, কিন্তু কিছু মা সন্তানপ্রসবের সময় মারা যান, কখনো মা মারা যান, কখনো বা সন্তান, আবার কখনো মা ও সন্তানদুজনেই মারা যায়। এটা ঠিক যে গত এক দশকে মায়েদের প্রসবকালীন মৃত্যুর হার কমেছেকিন্তু তবুও আজও অনেক গর্ভবতী মায়েদের জীবন বাঁচানো সম্ভবপর হয় না। গর্ভাবস্থায় বাপরে রক্তাল্পতা, প্রসবের সময় সংক্রমণ, উচ্চ রক্তচাপ – কতরকমের অজানা সংকট কখন তাঁরজীবনকে নষ্ট করে দেবে কেউ জানে না। এই সব কথা মনে রেখে ভারত সরকার গত কিছু মাসথেকে এক নতুন অভিযান শুরু করেছে – ‘প্রধানমন্ত্রী সুরক্ষিত মাতৃত্ব অভিযান’। এইঅভিযান অনুসারে প্রত্যেক মাসের নয় তারিখে সকল গর্ভবতী মহিলাদের সরকারীস্বাস্থ্যকেন্দ্রে বিনা খরচে পরীক্ষা করা যাবে। এক পয়সাও খরচ না করে সরকারীহাসপাতালে প্রত্যেক মাসের নয় তারিখে এই কাজকর্ম চলবে। আমি প্রত্যেক দরিদ্রপরিবারকে অনুরোধ করবো, সকল গর্ভবতী মায়েরা মাসের নয় তারিখে এই পরিষেবা গ্রহণ করুণ,যাতে নবম মাস পর্যন্ত পৌঁছতে পৌঁছতে যদি কোনো সমস্যা হয়, তাহলে আগে থেকেই তারচিকিৎসা সম্ভব হবে। মা ও সন্তান – দুজনেরই প্রাণ বাঁচানো সম্ভব হবে, আর আমি স্ত্রীরোগবিশেষজ্ঞ–দেরবিশেষ ভাবে বলতে চাই, আপনারা কি মাসের একদিন, নয় তারিখ দরিদ্র মায়েদের বিনা পয়সায়চিকিৎসা করতে পারেন না! আমার ডাক্তার ভাই-বোনেরা কি বছরে বারো দিন দরিদ্রদের এইকাজের জন্য নিজেদের নিয়োজিত করতে পারেন না? বিগত দিনে আমাকে অনেক ডাক্তাররা চিঠিলিখেছেন, হাজার হাজার ডাক্তাররা আমার কথামতো এগিয়ে এসেছেন, কিন্তু ভারতবর্ষ এত বড়একটা দেশ, লক্ষ লক্ষ ডাক্তারদের এই অভিযানে সামিল হতে হবে। আমার বিশ্বাস, আপনিঅবশ্যই সামিল হবেন।

আমারপ্রিয় দেশবাসী, আজ সমগ্র পৃথিবী ঋতু পরিবর্তন, বিশ্ব উষ্ণায়ণ, পরিবেশ নিয়ে বিশেষভাবে চিন্তাগ্রস্ত। দেশ-বিদেশে সামগ্রিকভাবে এর আলোচনা হচ্ছে। আদিকাল থেকে ভারতেএই বিষয়ে জোর দেওয়া হয়েছে। কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের সময় যুদ্ধক্ষেত্রেও ভগবানশ্রীকৃষ্ণ গাছেদের কথা বলেছেন, যুদ্ধক্ষেত্রেও গাছেদের কথা চিন্তা করার মাহাত্ম্যযে কতখানি, আমরা সেটা নিশ্চয়ই আন্দাজ করতে পারি। গীতাতে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলছেন –‘অশ্বত্থ: সর্ববৃক্ষানাং’ অর্থাৎ সকল বৃক্ষের মধ্যে আমি অশ্বত্থ। শুক্রাচার্যনীতিতে বলা হয়েছে, ‘নাস্তি মূলং অনৌষধং’ – এরকম কোনও গাছ নেই যার ঔষধি গুণ নেই।মহাভারতের অনুশাসন পর্বে বিস্তৃতভাবে এর আলোচনা রয়েছে, এতে লেখা রয়েছে যে গাছলাগায়, তাঁর কাছে গাছ সন্তানসম, এতে কোনো সংশয় নেই। যে গাছ দান করে, তাঁকে ওই গাছসন্তানের মতো পরলোকেও পার করে দেয়। সেই জন্য যেসব মাতা-পিতা নিজেদের কল্যাণের কথাভাবেন, ভালো ভালো গাছ লাগিয়ে সন্তানের মতো লালন-পালন করুন। আমাদের শাস্ত্র – গীতাহোক, শুক্রাচার্য নীতি হোক বা মহাভারতের অনুশাসন পর্ব – বর্তমান প্রজন্মের কিছুমানুষ রয়েছেন, যাঁরা শাস্ত্রের এই দর্শনকে নিজেদের কর্মে করে দেখিয়েছেন। কিছুদিনআগে পুনের এক মেয়ে সোনাল-এর উদাহরণ আমার মনে আসছে – ও আমার হৃদয়কে স্পর্শ করেছে।মহাভারতের অনুশাসন পর্বে বলা হয়েছে – গাছ পরলোকেও সন্তানের কর্তব্য পালন করে।সোনাল কেবলমাত্র নিজেদের মাতা-পিতার দায়িত্ব ছাড়াও সমাজের চাহিদা পূর্ণ করতে এরকমকঠিন কাজ করেছেন। মহারাষ্ট্র রাজ্যের পুনের জুন্নর তালুকের নারায়ণপুর গ্রামের কৃষকখণ্ডু মারুতি মহাত্রে নিজের নাতনি সোনালের বিয়ে এক দৃষ্টান্তমূলক পদ্ধতিতেকরিয়েছেন। মহাত্রেজী সোনালের বিয়েতে যত কুটুম, বন্ধু-বান্ধব, অতিথি এসেছিলেন,সবাইকে কেসর আমের চারা উপহারস্বরূপ দান করেছেন। যখন আমি সোশ্যাল মিডিয়াতে এর ছবিদেখলাম, আমি আশ্চর্য হয়ে গেলাম – বিয়েতে বরযাত্রী দেখা যাচ্ছে না, চারদিকে শুধুগাছের চারা দেখা যাচ্ছিল। হৃদয়স্পর্শী দৃশ্য এই ছবিগুলোর মধ্যে ছিল। সোনাল নিজেই এগ্রিকালচারালগ্র্যাজুয়েট, এই বুদ্ধি ওই দিয়েছিল, বিয়েতে আমের চারা উপহার দেওয়া, দেখুন,প্রকৃতির প্রতি ভালোবাসা কত সুন্দরভাবে ফুটে উঠেছে। একদিক থেকে সোনালের বিয়েপ্রকৃতির প্রতি ভালোবাসার এক অমরগাথা হয়ে রইলো। আমি সোনাল আর শ্রীমান মোহাত্রেজী-কেএই অভিনব প্রয়াসের জন্য অনেক অনেক অভিনন্দন জানাই। আর এরকম দৃষ্টান্ত অনেকেইরেখেছেন। আমার মনে আছে, আমি যখন গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী ছিলাম, ওখানে অম্বাজীরমন্দিরে ভাদ্র মাসে অনেক পুণ্যার্থী আসেন, একবার এক সমাজসেবী সংস্থা ঠিক করলমন্দিরে যেসব পুণ্যার্থী আসবেন, তাঁদের প্রসাদে গাছের চারা দেবেন আর তাঁদেরকেবলবেন, দেখুন, এটা মাতাজীর প্রসাদ, এই গাছের চারাকে নিজেদের গ্রামে-ঘরে গিয়েলাগিয়ে বড় করুন, মাতা আপনাদের আশীর্বাদ দিতে থাকবেন। গাছের যত্ন আপনারা নিন। লক্ষলক্ষ পুণ্যার্থী এসেছিলেন, লক্ষ লক্ষ গাছের চারা বণ্টন করা হয়েছিল সেই বছর।অন্যান্য মন্দিরও এই বর্ষাতে প্রসাদের পরিবর্তে গাছের চারা বিলি করার পরম্পরা শুরুকরতে পারেন। গাছ লাগানোর এক জন-আন্দোলন সহজ ভাবে তৈরি হতে পারে। আমি কৃষক ভাইদেরবারবার বলি, আমাদের খেতের ধারে যে আল দিয়ে জমি নষ্ট করি, তার পরিবর্তে কেন আমরা বড়,লম্বা গাছের চারা লাগাই না! বর্তমানে ভারতবর্ষে ঘর বানানোর জন্য, আসবাবপত্রবানানোর জন্য কোটি কোটি টাকার কাঠের গুঁড়ি বিদেশ থেকে আমদানী করতে হয়। যদি আমরাআমাদের খেতের ধারে এরকম গাছের চারা লাগাই, যেগুলো আসবাবপত্রে ও ঘর বানাতে কাজেলাগবে, তাহলে ১৫-২০ বছর পরে সরকারী অনুমতি নিয়ে ওদের কেটে বিক্রিও করতে পারেন আপনি।এটা আপনার আয়ের এক নতুন উৎস হতে পারে, আর ভারতবর্ষকে কাঠ আমদানি থেকে বাঁচাতেওপারেন। বিগত দিনে অনেক রাজ্য এই বর্ষা ঋতুর সুবিধা নিয়ে অনেক অভিযান চালিয়েছে,ভারত সরকারও এক CAMPA আইন সম্প্রতি পাশ করেছে, এইআইনের মাধ্যমে প্রায় চল্লিশ হাজার কোটিরও বেশি টাকা রাজ্যগুলিকে বৃক্ষরোপণের জন্যবিলি করা হচ্ছে। আমাকে বলা হয়েছে যে, মহারাষ্ট্র সরকার পয়লা জুলাই সমগ্র রাজ্যেরপ্রায় ২ কোটি ২৫ লক্ষ গাছের চারা লাগিয়েছে, আর আগামী বছর ওরা তিন কোটি চারালাগানোর লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করেছে। সরকার এক জন-আন্দোলন শুরু করে দিয়েছে। রাজস্থানএক মরুভূমি-র রাজ্য – এতবড় বন-মহোৎসব পালন করেছে এবং পঁচিশ লক্ষ চারা লাগানোরসংকল্প নিয়েছে। রাজস্থানে পঁচিশ লাখ চারাগাছ লাগানো ছোটোখাটো ব্যাপার নয়। যাঁরারাজস্থানের মাটির সঙ্গে পরিচিত তাঁরাই বুঝতে পারবেন কত কঠিন কাজ। অন্ধ্রপ্রদেশও২০২৯ সালের মধ্যে রাজ্যের সবুজায়ন ৫০ শতাংশে বাড়ানোর লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে। কেন্দ্রসরকার যে ‘গ্রীন ইণ্ডিয়া মিশন’ চালাচ্ছে, সেই যোজনার মাধ্যমে রেলকর্তৃপক্ষ সবুজায়নকরছে। গুজরাতেও বন-মহোৎসবের এক উজ্জ্বল ধারাবাহিকতা আছে। এবছর গুজরাত ‘আমবন’, ‘একতাবন’, ‘শহীদ বন’ নামক অনেক প্রকল্পকে বন-মহোৎসব হিসাবে পালন করেছে এবং কোটি কোটিগাছ লাগানোর অভিযান চালিয়েছে। আমি সমস্ত রাজ্যের কথা উল্লেখ করতে পারছি না কিন্তুসবাই প্রশংসার যোগ্য।

আমারপ্রিয় দেশবাসী, কিছুদিন আগে আমার দক্ষিণ আফ্রিকা যাওয়ার সুযোগ হয়েছিল। এটা আমারপ্রথম যাত্রা, এবং যখনই বিদেশ যাত্রা হয়, তখনই কূটনীতির কথা হয়, শিল্প-বাণিজ্যনিয়ে কথা হয়, সুরক্ষা নিয়ে আলোচনা হয়, কখনো ‘মউ’ সাক্ষরিত হয় – এই সবকিছুই তো হওয়াচাই। কিন্তু আমার কাছে দক্ষিণ আফ্রিকা যাত্রা একরকম তীর্থযাত্রা ছিল। যখনই দক্ষিণআফ্রিকার কথা মনে করা হয়, মহাত্মা গান্ধী এবং নেলসন ম্যাণ্ডেলার কথা মনে আসা খুবইস্বাভাবিক। যখনই এই পৃথিবীতে অহিংসা, প্রেম, ক্ষমা ইত্যাদি শব্দগুলি কানে আসে,তখনই তাঁদের চেহারা আমাদের চোখের সামনে ফুটে ওঠে। আমি আমার দক্ষিণ আফ্রিকা ভ্রমণেরসময় Phoenix Settlement -এ গিয়েছিলাম, যা মহাত্মাগান্ধীর বাসস্থান ‘সর্বোদয়’ নামে পরিচিত। যে ট্রেনে মহাত্মা গান্ধী সফর করেছিলেন,যে ট্রেনের ঘটনায় জনৈক মোহনদাসকে মহাত্মা গান্ধীতে পরিণত করার বীজবপন হয়েছিল, আমারসৌভাগ্য হয়েছিল সেই পিটারমারিৎসবুর্গ স্টেশন থেকে সেই ট্রেনে সফর করার, কিন্তু আমিযে কথা বলতে চাইছি, তা হল, এবার আমার সেই মহান মানুষদের সঙ্গে মিলিত হওয়ার সুযোগহয়েছিল যাঁরা নিজেদের জীবন নিয়োজিত করেছেন সকলের সমানাধিকারের জন্য, সকলের সমানসুযোগের জন্য। নেলসন ম্যাণ্ডেলার সঙ্গে একসঙ্গে কাঁধে কাঁধে মিলিয়ে লড়াই করেছেন,কুড়ি-বাইশ বছর ধরে জেলে নেলসন ম্যাণ্ডেলার সঙ্গে জীবন কাটিয়েছেন, একরকম নিজেদেরপুরো যৌবনই তাঁরা আহুতি দিয়েছেন। পুরো যৌবনকাল-কেই তাঁরা সমর্পণ করেছেন। নেলসনম্যাণ্ডেলার ঘনিষ্ঠ সঙ্গী আহমেদ কথাড়া, লালু চিবা, জর্জ বিজোস, রনি কাসরিল্‌সেরমতো মহান ব্যক্তিদের দর্শন করার সৌভাগ্য আমার হয়েছিল। এঁরা আদতে ভারতীয়, কিন্তুসেখানে গিয়ে সেখানকারই হয়ে গেছেন। যাঁদের মধ্যে থেকেছেন, তাঁদের জন্য জীবন উৎসর্গকরতে প্রস্তুত হয়েছেন। আমি যখন তাঁদের সঙ্গে কথা বলছিলাম, তাঁদের বন্দীজীবনেরঅভিজ্ঞতার কথা শুনছিলাম, তাঁদের কথার মধ্যে কোনওরকম কটুতা বা বিরূপতা ছিল না। এটাকতবড় শক্তির কথা। এতবড় তপস্যা করার পরও তাঁদের চেহারায় কিছু নেবার, কিছু পাওয়ার বাকিছু হওয়ার কোন চাহিদার প্রকাশ চোখে পড়েনি। গীতাতে যে কর্তব্যের কথা বলা হয়েছে,তার সাক্ষাৎ রূপ যেন আমি তাঁদের মধ্যে দেখতে পাচ্ছিলাম। সেই সাক্ষাৎকারটি আমারচিরদিন মনে থাকবে। কোনও সমাজের বা কোনও সরকারের জন্যই সাম্য এবং সমান সুযোগের এরচেয়ে বড় কোনও মন্ত্র হতে পারে না। সকলকে সমান ভাবা এবং সকলকে আপন ভাবার এটাই তো পথযা আমাদের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের দিকে নিয়ে যায়। আমরা সুন্দর জীবন চাই, বাচ্চাদের ভালোভবিষ্যৎ চাই – প্রত্যেকের প্রয়োজন আলাদা আলাদা। ‘ Priority ’ আলাদা আলাদা হতে পারে, কিন্তু পথ একটাই, আর সেই পথ হলউন্নয়ন, সাম্য, সমান সুযোগ, সকলকে সমান ভাবা এবং সকলকে নিজের ভাবা। আসুন, আমরা সেইভারতীয়দের জন্য গর্ব অনুভব করি, যাঁরা দক্ষিণ আফ্রিকাতেও আমাদের জীবনের মূলমন্ত্রকে সম্বল করে জীবনযাপন করে দেখিয়েছেন।

আমারপ্রিয় দেশবাসী, আমি শিল্পী বর্মার প্রতি কৃতজ্ঞ, উনি আমাকে একটি ঘটনার কথাজানিয়েছেন। “…প্রধানমন্ত্রীজী, আমি ব্যাঙ্গালোর থেকে শিল্পী বর্মা বলছি। কিছুদিনআগে আমি সংবাদপত্রের এক নিবন্ধে পড়েছি যে এক ভদ্রমহিলা ভুয়ো এবং প্রতারণামূলকই-মেলে প্রতারিত হয়ে এগারো লক্ষ টাকা হারিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। একজন মহিলা হিসেবেতাঁর পরিবারের জন্য আমার যথেষ্ট সমবেদনা আছে। আমি জানতে চাই, এই প্রতারণামূলক এবংভুয়ো ই-মেলের সম্পর্কে আপনারা কী ভাবছেন।”

এটাতোআপনারা সকলেই জানেন, আমাদের মোবাইল ফোনে, ই-মেইলে কখনও কখনও খুব লোভনীয় মেসেজ আসে –“আপনি এত টাকার পুরস্কার জিতেছেন। এত টাকা দিয়ে পুরস্কার নিয়ে নিন।” কিছু মানুষভুল করে টাকার মোহে ফেঁসে যান। প্রযুক্তির মাধ্যমে চৌর্যবৃত্তির এ এক নতুন উপায়,যা সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ছে। প্রযুক্তি একদিকে যেমন আর্থিক উন্নয়নে এক বড় ভূমিকানিয়েছে, তেমনি অন্যদিকে তার অপব্যবহার করার লোকও মাঠে নেমে পড়েছে। একজনঅবসরপ্রাপ্ত ব্যক্তি, যাঁর মেয়ের বিয়ে দেওয়া বাকি এবং বাড়িও তৈরি করতে হবে, তাঁরকাছে এই মর্মে একটি এস.এম.এস. আসে যে, বিদেশ থেকে ওঁর জন্য একটি মূল্যবান উপহারএসেছে, যেটা পেতে গেলে কাস্টমস্‌ ডিউটি বাবদ একটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে তাঁকে দুইলক্ষ টাকা জমা করতে হবে। এই ভদ্রলোক কোন চিন্তা-ভাবনা না করেই শুধু একটিএস.এম.এস-এর ভরসায় সারা জীবনের পরিশ্রমের উপার্জন দু’লাখ টাকা একটি অপরিচিতমানুষকে পাঠিয়ে দিলেন। আর কিছুক্ষণের মধ্যেই তিনি বুঝতে পারেন যে তাঁর সবকিছু লুঠহয়ে গেছে। আপনারাও কোনও কোনও সময়ে ভুল করে ফেলেন, কারণ ওরা এত সুন্দর করে আপনাদেরচিঠি লেখে যে মনে হয় যেন একেবারে আসল। কোনও একটা নকল লেটার প্যাড বানিয়ে পাঠিয়েদিয়ে আপনার ক্রেডিট কার্ড, ডেবিট কার্ডের নম্বর জেনে নেয় এবং প্রযুক্তির মাধ্যমে আপনারব্যাঙ্কের খাতা খালি হয়ে যায়। এ হল নতুন রকমের ধোঁকাবাজি, ডিজিটাল-ধোঁকাবাজি।এধরনের মোহ থেকে দূরে থাকতে হবে, সজাগ থাকতে হবে, আর এরকম কোনও মিথ্যে মেসেজ এলেনিজেদের বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে তা শেয়ার করে তাঁদেরও সতর্ক করে দিতে হবে। শিল্পীবর্মা একটা জরুরি কথা আমার গোচরে এনেছেন। বিষয়টা আপনারা সবাই বোঝেন, কিন্তু হয়তঅতটা গভীরতা দিয়ে দেখেন না। কিন্তু আমার মনে হয়, দেখার দরকার আছে।

আমারপ্রিয় দেশবাসী, এখন সংসদের অধিবেশন চলছে। এই অধিবেশন চলাকালীন দেশের বহু মানুষের সঙ্গেআমার মিলিত হওয়ার সুযোগ হয়। আমাদের সাংসদরাও নিজের নিজের এলাকা থেকে লোককে নিয়েআসেন, আমার সঙ্গে দেখা করান, কথাবার্তা হয়, তাঁরা তাঁদের অসুবিধার কথাও বলেন।কিন্তু সম্প্রতি আমার এক ভালো অভিজ্ঞতা হল। আলিগড়ের কিছু ছাত্র আমার কাছেএসেছিলেন। আলিগড়ের সাংসদ তাঁদের নিয়ে এসেছিলেন, ছেলে-মেয়েগুলির উৎসাহ ছিল দেখারমতো। ওঁরা একটা বেশ বড় অ্যালবাম নিয়ে এসেছিলেন আমাকে তার থেকে ছবি দেখালেন। তাঁরাআলিগড় রেলস্টশনের সৌন্দর্যীকরণ করেছেন। স্টেশনে চমৎকার ছবি এঁকেছেন। শুধু এ-ই নয়,গ্রামে যত প্লাস্টিকের বোতল কিংবা তেলের ক্যানের মতো আবর্জনা পড়ে ছিল, তা খুঁজেখুঁজে জড়ো করে মাটি ভরে গাছ লাগিয়ে ‘ভার্টিক্যাল গার্ডেন’ বানিয়েছেন। এইভাবে তাঁরারেলস্টেশনটিকে সম্পূর্ণ নতুন এক রূপ দিয়েছেন। আপনারা কখনও আলিগড় গেলে স্টেশনটিনিশ্চয়ই দেখবেন। ভারতের বেশ কিছু রেলস্টেশন থেকে ইদানিং আমি এইরকম খবর পাচ্ছি।স্থানীয় মানুষজন তাঁদের রেলস্টেশনগুলির দেওয়ালকে চিত্রকলায় সাজিয়ে নিজেদের এলাকারস্বতন্ত্র পরিচয় রাখছেন। একটি নতুনত্বের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। জনসাধারণের অংশগ্রহণেকীরকম পরিবর্তন আনা যায়, এটা তারই উদাহরণ। দেশে এরকম কাজ যাঁরা করছেন, তাঁদেরধন্যবাদ, বিশেষ করে ধন্যবাদ আমার আলিগড়ের সাথীদের।

আমারপ্রিয় দেশবাসী, বর্ষা এলেই আমাদের দেশে উৎসবের মরশুম শুরু হয়ে যায়। আগামীদিনগুলিতে বিভিন্ন জায়গায় মেলার আয়োজন হবে। মন্দিরে, আরাধনাস্থলে উৎসব পালিত হবে,আর আপনারাও ঘরে-বাইরে উৎসবে মেতে উঠবেন। রাখীবন্ধন আমাদের এক গুরুত্বপূর্ণ উৎসব।গতবছরের মত এবছরেও কি আপনারা রাখীবন্ধন উপলক্ষে দেশের মা-বোনেদের ‘প্রধানমন্ত্রীসুরক্ষা বীমা যোজনা’ বা ‘জীবন-জ্যোতি বীমা যোজনা’ উপহার দিতে পারেন না? ভাবুন,বোনকে এমন কোন উপহার দিন, যা তার জীবনকে সত্যি সত্যি সুরক্ষা দেবে। শুধু এ-ই নয়,আমাদের বাড়িতে যে মহিলা রান্না করেন, যে মহিলা বাড়ি পরিষ্কার করেন বা পরিচিত কোনওগরীব মায়ের মেয়েকে এই রাখীবন্ধন উৎসবে আপনি ‘সুরক্ষা বীমা যোজনা’ বা ‘জীবনজ্যোতিবীমা যোজনা’ উপহার দিতে পারেন। আর এটাই তো যথার্থ সামাজিক সুরক্ষা, রাখীবন্ধনেরসঠিক অর্থই তো এই।

আমারপ্রিয় দেশবাসী, আমাদের মধ্যে বহু মানুষ আছেন, যাঁদের জন্ম হয়েছে স্বাধীনতার পরে।আমি দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী, যে স্বাধীন ভারতবর্ষে জন্মেছে। ৮-ই আগস্ট ‘ভারতছাড়ো’ আন্দোলনের সূচনা হয়েছিল, এবছর তার ৭৫ বছর হচ্ছে। আর ১৫-ই আগস্ট স্বাধীনতার৭০ বছর হতে চলেছে। আমরা স্বাধীনতার আনন্দ উপভোগ করছি, স্বাধীন নাগরিক হওয়ার গর্বওঅনুভব করছি – এই স্বাধীনতা যাঁরা এনেছিলেন, সেই সব মানুষদের স্মরণ করার এটাই তোসময়। ‘ভারত ছাড়ো’ আন্দোলনের ৭৫ বছর এবং স্বাধীনতার ৭০ বছর আমাদের নতুন প্রেরণাদিতে পারে, নতুন উৎসাহ যোগাতে পারে, এবং দেশের জন্য ভালো কিছু করার সংকল্প নেওয়ারউপযুক্ত সময় হয়ে উঠতে পারে। আসুন, আমরা এমন এক পরিবেশ তৈরি করি, যাতে স্বাধীনতাসংগ্রামীদের সংগ্রামের রঙ গোটা দেশে ছড়িয়ে পড়ে, স্বাধীনতার সুবাস চারদিকে অনুভূতহয়। স্বাধীনতার এই উৎসব কোনও সরকারি অনুষ্ঠান নয়, দীপাবলির মত এটিও দেশবাসীরনিজস্ব উৎসব হওয়া উচিত। আমার আশা, আপনারাও স্বদেশপ্রেমের প্রেরণায় কিছু না কিছুভালো কাজ করবেন। ‘নরেন্দ্র মোদী অ্যাপ’-এ তার ছবি অবশ্যই পাঠান। দেশে একটাদেশভক্তির পরিবেশ গড়ে তুলুন।

প্রিয়দেশবাসী, ১৫ আগস্ট লালকেল্লার প্রাকার থেকে আমার গোটা দেশের সঙ্গে কথা বলারসৌভাগ্য হয়। এটি একটি পরম্পরা। আপনাদের মনেও হয়ত এমন কিছু কথা থাকতে পারে, যাআপনারা চান লালকেল্লার ওই প্রাকার থেকেই সমান গুরুত্ব দিয়ে পেশ করা হোক। আমিআপনাদের আমন্ত্রণ জানাচ্ছি, আপনাদের মনে যে ভাবনা আসছে, যেটা আপনারা মনে করেনআপনাদের প্রতিনিধি হিসেবে, আপনাদের প্রধান সেবক হিসেবে আমার লালকেল্লা থেকে বলাদরকার, সেটা আমাকে অবশ্যই লিখে পাঠান, মতামত দিন, পরামর্শ দিন, নতুন চিন্তাভাবনানিয়ে আসুন। আমি আপনাদের কথা দেশবাসীর কাছে পৌঁছে দিতে সচেষ্ট হবো। আমি চাইনা যেলালকেল্লার প্রাকার থেকে যেকথা বলা হবে, তা কেবল প্রধানমন্ত্রীর কথাই হবে, উপরন্তুদেশের ১২৫ কোটি জনসাধারণের কথাই বলা হবে। আপনারা আমাকে অবশ্যই কিছু লিখে পাঠান।‘নরেন্দ্র মোদী অ্যাপ’-এ বা mygov.in –এ পাঠাতে পারেন। আর আজকালতো প্রযুক্তি এত সুলভ হয়ে গেছে যে আপনারা স্বচ্ছন্দেই যে কোন জিনিস আমার কাছেপৌঁছে দিতে পারেন। আমি আপনাদের আমন্ত্রণ জানাই – আসুন, স্বাধীনতাসংগ্রামীদের পুণ্যজীবনকে স্মরণ করি। ভারতের জন্য যাঁরা জীবন উৎসর্গ করেছেন, সেইসব মহাপুরুষদের স্মরণকরি এবং দেশের জন্য কিছু করার সংকল্প নিয়ে এগিয়ে যাই, অনেক অনেক শুভেচ্ছা। অনেকঅনেক ধন্যবাদ!

PG /SB