প্রধানমন্ত্রী : আচ্ছা, পূর্ণা তোমার এভারেস্ট শৃঙ্গ জয়ের পর তোমার বন্ধুরা সম্পর্ক রেখেছে তো? ওরা এখন তোমাকে হয়তো অনেক বড় ভাবে, কিন্তু এমন তো নয় যে ওরা তোমাকে দেখলে দূরে পালিয়ে যায় না তো? বড় হওয়ারও কিছু সমস্যা রয়েছে। সারা জীবন বন্ধুরা তোমার সঙ্গে একই রকম বন্ধুত্ব বজায় রাখে কি? রাখে না।
তোমার প্রশ্নটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, আমার জীবনে কার প্রেরণা সবচেয়ে বেশি? আসলে কারও জীবন কোনও নির্দিষ্ট কোনও ব্যক্তির প্রেরণায় গড়ে ওঠে না। আমাদের মনে যদি গ্রহণক্ষমতা থাকে তা হলে প্রতিটি জিনিসই আমরা গ্রহণ করতে থাকি। এই প্রবাহ নিরন্তর চলতে থাকে। প্রত্যেকেই আমাদেরকে কিছু না কিছু দিয়ে যান। কখনও চলমান রেলের কামরায়ও আমরা অনেক কিছু শিখি। ছোটবেলা থেকেই আমার একটি অনুসন্ধিৎসু মন ছিল। সব কিছু বোঝার চেষ্টা করতাম। এই অনুসন্ধিৎসা আমাকে লাভবান করেছে। তাছাড়া, আমার জীবনে যত শিক্ষক এসেছেন, প্রত্যেককেই আমি ভীষণ ভালোবাসতাম। বাড়িতেও আমি মায়ের নেওটা ছিলাম। ছোটবেলা যে গ্রামে বড় হয়েছি, সেটি খুবই ছোট গ্রাম, কিন্তু সেই গ্রামে একটি ছোট গ্রন্থাগার ছিল, আর সেই গ্রন্থাগারেই আমি সবচেয়ে বেশি সময় কাটাতাম। সেখানেই আমি স্বামী বিবেকানন্দের বই পড়ে মুগ্ধ হয়েছিলাম। শৈশবে স্বামী বিবেকানন্দের রচনাই আমাকে সবেচেয়ে বেশি প্রভাবিত করেছিল। ধন্যবাদ।
প্রশ্ন : স্যার, আমি বড় হয়ে একজন সফল নেতা হতে চাই, রাজনীতির মাধ্যমে দেশকে সেবা করতে চাই, সেজন্য আমার ব্যক্তিত্বকে কিভাবে বিকশিত করবো?
প্রধানমন্ত্রী : আমাদের দেশে রাজনীতিবিদদের এত বদনাম হয়ে গেছে যে, সাধারণ মানুষ রাজনীতিতে যোগদান করতে দ্বিধাগ্রস্ত থাকেন। অনেকেই ভাবেন, এটা ভালো মানুষদের জায়গা নয়। এই ভাবনা দেশের পক্ষে ক্ষতিকারক। আমাদের দেশে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা রয়েছে, এই ব্যবস্থায় রাজনীতি ও রাজনৈতিক দলগুলির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। সেজন্যই দেশের রাজনীতিতে লেখাপড়া জানা ভালো মানুষদের আসা উচিত। বিভিন্ন পেশার মানুষ রাজনীতিতে যোগদান করলে আমাদের রাজনৈতিক জীবন অত্যন্ত সমৃদ্ধ হবে। তোমরা দেখো, মহাত্মা গান্ধী যখন স্বাধীনতা সংগ্রাম পরিচালনা করতেন, তখন বিভিন্ন পেশার মানুষ তাঁর সঙ্গে আন্দোলনে যুক্ত হয়েছিলেন। সেজন্য সেই স্বাধীনতা আন্দোলন শক্তিশালী হয়েছিল। প্রত্যেকের সম্মিলিত কন্ঠস্বরে সেই আন্দোলন আকাশ ছুঁয়েছিল। সেজন্য যত বেশি ভালো মানুষরা রাজনীতিতে আসবেন, ততই দেশের মঙ্গল। মা, তুমি রাজনীতিতে এলে নেতৃত্ব দিতে হবে। তুমি যেমন অলিম্পিয়াডে বিজয়ী হয়েছো, তোমার মধ্যে নেতৃত্বের ক্ষমতা রয়েছে বলেই তুমি এই সাফল্য পেয়েছো। তুমি ভাবো, তোমাদের গ্রামের স্কুলে কোনও ঘটনা ঘটলে তুমি সবার আগে ছুটে যাও কিনা। চেষ্টা করবে। তুমি আগে পৌঁছলে সবাই ভাববেন, ঐ মেয়েটি যখন পৌঁছে গেছে, আমাদেরকেও ছুটে যেতে হবে। এভাবেই ধীরে ধীরে তোমার নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হতে শুরু করবে। সবাই তোমাকে বিশ্বাস করতে শুরু করবেন। তোমার নিজের মনেও বিশ্বাস জন্মাবে যে আমি অনেককে নিয়ে এগিয়ে যাবো। নেতৃত্বের ক্ষমতা সহজেই আয়ত্ব করা যায়। দ্বিতীয়ত, কেন নেত্রী হতে চাও, এটা নিজের মনে পরিষ্কার থাকা উচিত। নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার জন্য, ক্ষমতা লাভ করার জন্য, নাকি তুমি যে সমাজে বসবাস করো, সেই সমাজের সমস্যাগুলি সমাধান করার জন্য। যদি তৃতীয়টি হয়, সেক্ষেত্রে সেই সমাজের সাধারণ মানুষের সঙ্গে তোমাকে যুক্ত থাকতে হবে। তাঁদেরকে ভালো বাসতে হবে। তাঁদের দুঃখ তোমাকে রাত্রে শান্তিতে ঘুমোতে দেবে না। তাঁদের সুখ তোমার ব্যক্তিগত সুখকে ছাপিয়ে যাবে। এই গুণগুলি তোমার মধ্যে জেগে না উঠলে নেত্রী হতে পারবে না। এই গুণগুলি তোমার মধ্যে জেগে উঠলে তোমার আর কোনও কিছুর প্রয়োজন পড়বে না। দেশের মানুষ নিজে থেকেই তোমাকে নেত্রী বানিয়ে দেবে। শুভেচ্ছা রইল।
প্রশ্ন : প্রধানমন্ত্রী জী, ডিজিটাল ইন্ডিয়া একটি অসাধারণ কর্মসূচি। কিন্তু দেশের অনেক জায়গায় তো বিদ্যুৎ-ই পৌঁছয়নি, সেখানে এটা কি করে রূপায়ণ করা যাবে?
প্রধানমন্ত্রী : তুমি ঠিকই বলেছো, গত ১৫ আগস্টে আমি লালকেল্লার প্রাকার থেকে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে বলেছিলাম যে, আমাদের দেশে ১৮ হাজার গ্রামে বিদ্যুৎ নেই। আমি সরকারি আধিকারিকদের সঙ্গে দু-তিন বার মিটিং করেছি, তাঁদেরকে আমি বলেছি, আগামী এক হাজার দিনে ঐ ১৮ হাজার গ্রামে বিদ্যুৎ পৌঁছতেই হবে। তাছাড়া, বিদ্যুৎ না পৌঁছলেও ডিজিটাল কর্মসূচি থেমে থাকবে না। সৌরবিদ্যুতের মাধ্যমেও আমরা এই কর্মসূচি এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবো। এটা আমাদের জীবনের অংশ হতে চলেছে। গতি বাড়াতে হলে আমাদের স্বচ্ছতা আনতে হবে, সুশাসন এবং ই-গভর্ন্যান্স চালু করতে হবে। সাধারণ মানুষের হতে যে মোবাইল ফোন রয়েছে, তার মাধ্যমেই সমস্ত সরকারি পরিষেবা পাওয়ার অধিকার থাকবে না কেন? এভাবেই এই ডিজিটাল ইন্ডিয়া একটি নাগরিক ক্ষমতায়ন কর্মসূচি হয়ে উঠবে। আমার দ্বিতীয় স্বপ্ন ২০২২ সালে যখন দেশ স্বাধীনতার ৭৫ বর্ষ পূর্তি উদযাপন করবে, তার আগেই প্রত্যেক বাড়িতে ২৪ x ৭ বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করা। ২৪ ঘন্টা বিদ্যুৎ না থাকলে দিল্লিতে জেনারেটর ব্যবহারের অভিজ্ঞতা আমাদের রয়েছে। এই বিরক্তিকর অভিজ্ঞতা থেকে মুক্তি চাই! এর জন্য আমি যথাসাধ্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
প্রশ্ন : আপনি কোন্ খেলা পছন্দ করেন?
প্রধানমন্ত্রী : যে খেলায় আমাদের দেশ এগিয়ে যাবে আর যে খেলায় মেয়েরা সাফল্য পাবে। প্রত্যেক খেলোয়াড়েরই সাফল্যের পেছনে তাঁর মায়ের অবদান থাকে। বিশেষ করে, মেয়েদের ক্ষেত্রে কারণ মেয়েরা বড় হলেই মায়েরা চান, তারা রান্নাঘরে সাহায্য করুক বা বাড়ির অন্যান্য কাজকর্ম করুক। যে মা তাঁর মেয়েকে খেলতে পাঠান, তাঁকে অনেক বেশি পরিশ্রম ও আত্মত্যাগ করতে হয়। যে মেয়ের কোনও শারীরিক সমস্যা রয়েছে, তবুও ক্রীড়া ক্ষেত্রে উৎকর্ষসাধন করেছে, তার শিক্ষককেও আমি বিশেষভাবে অভিনন্দন জানাই। তিনি এমন শিক্ষার্থীর পেছনে কত বেশি সময়টাই দিয়েছেন। তবেই তো সোনিয়া এত সাহসী হয়ে উঠেছে। সে আজ আমাকে জিজ্ঞাসা করছে, আমি কোন্ খেলা বেশি পছন্দ করি। রাজনীতির লোকেরা কী খেলা খেলে তা সবাই জানে। কিন্তু, আমি একটা ছোট্ট গ্রামে বড় হয়েছি, তোমরা যে খেলাগুলি খেলো তার অনেকগুলির আমি নামও শুনিনি। আমার বাড়িতেও কেউ খেলতো না। এই গাছে ওঠা, দৌড়ঝাঁপ করা, আর স্কুলে কবাডি এবং খো খো খেলতাম। আমার নিজের জামাকাপড় নিজেকেই ধুতে হতো। পুকুরে ঝাঁপাতাম, তাই নিজে থেকে সাঁতার শিখে গিয়েছিলাম। অনেকক্ষণ ধরেই সাঁতার কাটার অভ্যাস ছিল আমার। আরেকটু বড় হয়ে আমি যোগাভ্যাস করতাম। আমাদের গ্রামে পারমার সাহেব নামে একজন ক্রীড়া শিক্ষক ছিলেন। বরোদার উপকন্ঠে অবস্থিত বান্দ্রার বাসিন্দা ছিলেন তিনি। তিনি আমাদের স্কুলে শরীরচর্চা করাতেন। একটি ব্যায়ামশালা তিনি সংস্কার করেছিলেন। প্রতিদিন সকাল পাঁচটায় সেই ব্যায়ামশালায় যেতাম, মলস্তম শিখতাম। ভালো পারতাম না, কিন্তু কিছুটা শিখেছিলাম। ক্রিকেট কখনও খেলিনি। তবে, বাউন্ডারির বাইরে বসে বল কুড়োতাম। খেলোয়াড়দের সাহায্য করতাম। তোমাকে অনেক অভিনন্দন সোনিয়া।
প্রশ্ন : ভারতে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রটি ভীষণ অসংগঠিত। স্বচ্ছ ভারত অভিযান কার্যকর করার ক্ষেত্রে আপনি কী ধরণের সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে?
প্রধানমন্ত্রী : আমি যখন এই অভিযানের কথা ঘোষণা করেছিলাম, তখন ভেবেছিলাম অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে। এখন তা ভাবি না। এজন্য ভাবি না কারণ, দেখছি দেশের অষ্টম-নবম শ্রেণীতে পাঠরতা মেয়েরাও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে ‘অ্যাপস্’ ডিজাইন করেছে এবং বিদেশ থেকেও পুরস্কার জিতে এনেছে। এর মানে, আমার দেশ পরিচ্ছন্ন হবেই। এই স্বচ্ছ ভারত অভিযান আমাদের স্বভাব পরিবর্তনের অভিযান। আমরা যদি নিজের মধ্যে অপরিচ্ছন্নতাকে ঘৃণা করার স্বভাব গড়ে তুলি তা হলে পরিচ্ছন্নতা নিজে থেকেই জেগে উঠবে। সম্প্রতি, আমার অনেকের সঙ্গে দেখা হয়েছে, যাঁরা বলেছেন, তাঁদের তিন বছর বয়সী নাতি বাড়িতে কোথাও ময়লা ফেলতে দেয় না, আর মোদী মোদী বলে। আমি অবাক! সরকারি কর্মসূচি চালু হলে রাজনৈতিক নেতারা অনেক কথাই বলেন, বিপক্ষের নেতারা তার বিরোধিতাও করেন। কিন্তু, এই কর্মসূচিতে প্রত্যেকেই সমর্থন জানিয়েছে। সংবাদ মাধ্যম এর প্রচারে নিজে থেকেই এগিয়ে এসেছে। নিজেদের রোজগারের সময় ছেড়ে পরিচ্ছন্নতার স্বার্থে ক্যামেরা নিয়ে দাঁড়িয়ে পড়েছে। কেউ যেখানে সেখানে নোংরা ফেললে, তার সাক্ষাতকার নিয়ে ভয় পাইয়ে দিয়েছে। এভাবে এটি একটি জাতীয় লোক শিক্ষা কর্মসূচিতে পরিণত হয়েছে। তুমি ঠিকই বলেছো, সুচারুভাবে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা না করে আমরা এই সমস্যার সমাধান করতে পারবো না। আমরা কিছু সরল উপায় ভেবেছি। মনে করো, কোনও শহরের বাইরে পাঁচ কিলোমিটার পরিধির মধ্যে যে গ্রামগুলি রয়েছে, সেইসব গ্রাম থেকে কেঁচো এনে শহরের আবর্জনায় ছেড়ে দিলে কেঁচোরা দ্রুত সেই আবর্জনাকে সারে পরিণত করে দেবে। ফলে শহর পরিচ্ছন্ন হবে আর গ্রামের রোজগার বৃদ্ধি হবে। এভাবে ছোট ছোট প্রয়োগের মাধ্যমে বর্জ্যকে অর্থ রোজগারের উপায় করে তুলতে পারবো। এখনও বর্জ্য একটি বড় ব্যবসা। অনেক জায়গায় পেশাদার বর্জ্য ব্যবস্থাপনা শিল্প গড়ে উঠছে। আমরাও চাই, যেখানে ‘ভায়াবিলিটি গ্যাপ ফান্ডিং’ করা প্রয়োজন, সরকার সেখানেই বিনিয়োগ করুক। পৌরসভা এবং পুর সংস্থাগুলি নর্দমার জল নিষ্কাশন ব্যবস্থা উন্নত করুক। এমনকি, গ্রামেও নর্দমার জল নিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নতির প্রয়োজন রয়েছে। এটা ঠিক করতে পারলে বাকি সমস্যাগুলি দূরীভূত হবে। শুষ্ক বর্জ্য ক্ষেতে ফেলে দিলে সেগুলি নিজে থেকেই সারে পরিণত হয়ে যাবে। আমাদের দেশের নানা স্থানে নানারকম ব্যবস্থা প্রচলিত রয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকেও বেশ কিছু চালু কর্মসূচি রয়েছে এবং সেগুলি সাফল্যের মুখ দেখছে। এই প্রশ্ন করার জন্য তোমাকে অনেক ধন্যবাদ।
প্রশ্ন : যেসব ছাত্ররা ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার হতে চায়, তারা স্কুলের পড়াশুনা এবং সমস্ত জিজ্ঞাসা জলাঞ্জলি দিয়ে কেবলমাত্র তিন ঘন্টার কম্পিউটার পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিতে থাকে। এই পরিস্থিতির উন্নতির জন্য আপনি সেই প্রতিযোগীদের কী বার্তা দেবেন?
প্রধানমন্ত্রী : আনমোল, তোমার বয়স খুবই কম। কিছুক্ষণ আগে যে ফিল্ম দেখানো হল, তাতে দেখলাম তুমিও ইঞ্জিনিয়ার হতে চাও। এর জন্য কেউ হয়তো তোমাকে চাপ দিয়েছে। আচ্ছা, তোমার মাস্টারমশাই চাপ দেন? এটা করো, সেটা করো, তোমার এই প্রতিভা আছে, নাকি বাড়ির কেউ চাপ দিয়েছে? কেউ কি বলেছে যে তুমি বাইরের পড়াশুনা ছেড়ে ঐকান্তিক হও। তোমার বাবা কি করেন, ব্যবসা?
দেখো এটা ঠিক, আমাদের দেশের বাবা-মায়েরা নিজে যা হতে পারেননি, সেটাই সন্তানদের মধ্য দিয়ে পেতে চান। যে পিতা নিজে ডাক্তার হতে চেয়েছিলেন কিন্তু, পারেননি তিনি তাঁর ছেলের পেছনে লেগে থাকেন, তোকে ডাক্তার হতেই হবে। এটাই সবচেয়ে বড় সমস্যা। আমি একটা সামান্য পরিবর্তন আনার চেষ্টা করছি, ভবিষ্যতে হয়তো সাফল্য পাবো।
তোমরা হয়তো দেখেছো, ‘স্কুল লিভিং সার্টিফিকেট’ – এর সঙ্গে একটি ‘ক্যারেকটার সার্টিফিকেট’ দেওয়া হয়। যারাই স্কুল পাশ করেছে, তাদের সবার কাছেই এই সার্টিফিকেট থাকে। যে অপরাধীর জেল হয়েছে এমনকি ফাঁসি হয়েছে, তার কাছেও এই ‘ক্যারেকটার সার্টিফিকেট’ রয়েছে। এর মানে, এই শংসাপত্র বিতরণ একটি আনুষ্ঠানিক অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। আমি বিভাগকে বলেছি, ‘ক্যারেকটার সার্টিফিকেট’ – এর বদলে ‘অ্যাপ্টিচিউড সার্টিফিকেট’ চালু করতে। একটি সফ্টওয়্যার বানিয়ে প্রত্যেক তিন মাসে প্রতিটি ছাত্রের সহপাঠিদের বলা উচিত, সেটা পূরণ করতে। তোমার এই বন্ধুটির বিশেষত্ব কী, সে কতটা নিয়মানুবর্তী, সে তোমাদের সাথে কী ভালো কথা বলে, সেগুলি লেখো। মা-বাবাকেও তেমনই একটি ফর্ম পূরণ করতে দেওয়া উচিত। শিক্ষকরা এই সমস্ত তথ্য একত্রিত করে দেখবেন, ছাত্রটির মধ্যে কোন্ তিন-চারটি বৈশিষ্ট্য রয়েছে। সেগুলি সেই ছাত্রটিকে এবং তার অভিভাবককে জানিয়ে দিলে তার ভবিষ্যতের লক্ষ্য স্থির করতে অনেক সুবিধা হবে। এই পরিবর্তন আনা খুব কঠিন। কিন্তু, আমি চেষ্টা করছি, বিভাগও সেইমতো কাজ করছে, আশা করি এই সমস্যা মিটবে।
এমন কিছু করলেই যে সকলের ভবিষ্যত উজ্জ্বল হয়ে যাবে ঠিক তা নয়। তোমারা কখনও ছোট কিছু দিয়ে শুরু করে ভবিষ্যতে অনেক বড় সাফল্য পেতে পারো। ছোট সাফল্য তোমার আত্মপ্রত্যয় বাড়িয়ে দেবে। শুধুই ডিগ্রি এবং চাকরির মধ্যে নিজের চিন্তাকে সীমাবদ্ধ রেখো না। আমি জানি, ডিগ্রি ও চাকরির সঙ্গে সামাজিক প্রতিষ্ঠার সম্পর্ক থাকে। তুমি যদি কবিতা লিখতে কিংবা ছবি আঁকতে ভালোবাসো, তা হলে ঠিক করে নাও আমি তাই করবো, যা হবে দেখা যাবে! তাহলে দেখবে, তুমি জীবনে অনেক আনন্দ পাবে। সেজন্য তিন ঘন্টার পরীক্ষার পরিসীমা থেকে বেরিয়ে নিজেকে জানা এবং তার মাধ্যমে নিজের লক্ষ্য স্থির করা। তা হলেই, তোমরা লাভবান হবে। তোমাকে অনেক ধন্যবাদ আনমোল, জীবনে অনেক উন্নতি করো।
প্রশ্ন : স্যার, আমি দেশের জন্য কাজ করতে চাই। আপনি কী বলবেন, আমি কিভাবে দেশকে সেবা করতে পারি?
প্রধানমন্ত্রী : দেখো, এখন তুমি যা করলে সেটাও দেশের সেবা। অনেকেই ভাবেন, দেশের সেবা মানে সেনাবাহিনীতে যোগদান করা, রাজনীতি করা, নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া। আসলে তা নয়, ছোট ছোট কাজের মাধ্যমেও আমরা দেশের সেবা করতে পারি। কারও বাড়িতে ১০০ টাকা বিদ্যুতের বিল আসে। বাড়ির ছোট ছেলেটি যদি অপ্রয়োজনে চালানো পাখা কিংবা আলো বন্ধ করে ১০ টাকা বাঁচায়, সেটাও আমার মতে দেশেরই সেবা। আমরা অনেক সময় খাবার নষ্ট করি। খাবার বাঁচানোও এক ধরনের দেশ সেবা। আমাদের ভাবা উচিত যে, আমার স্বভাবে দেশের কোনও ক্ষতি হচ্ছে না তো। আমার সময় ও শক্তির প্রয়োগে দেশের জন্য কী করছি?
তেমনই, পথে বেরিয়ে অপ্রয়োজনে স্কুটারের ইঞ্জিন চালু না রেখে জ্বালানি খরচ কমাও। এতে তোমাদের পয়সা বঁচবে আর দেশেরও উন্নতি হবে। তোমাদের বাড়িতে যিনি জামাকাপড় কাচেন, সেই প্রৌরাকে তুমি যদি আধ ঘন্টা পড়াও তা হলেও তুমি দেশের সেবা করছো। এভাবে কোটি কোটি মানুষ প্রতিদিন ছোট ছোট কাজের মাধ্যমেই দেশ সেবা করতে পারেন। তুমি কী করার কথা ভাবছো? ধন্যবাদ।
প্রশ্ন : স্যার, নবীন প্রজন্ম শিক্ষকতাকে আকর্ষণীয় পেশা হিসেবে ভাবছে না কেন? পরিসংখ্যান বলে, দেশে ভালো শিক্ষকের অভাব রয়েছে। দেশের নবীন প্রজন্মকে এই পেশা গ্রহণ করতে কিভাবে প্রেরণা জোগাবেন, যাতে তারা ভবিষ্যতের সর্বেপল্লি রাধাকৃষ্ণণ হয়ে উঠতে পারে?
প্রধানমন্ত্রী : দেশে ভালো শিক্ষক নেই এটা ভুল কথা। আজও দেশে অনেক ভালো শিক্ষক রয়েছেন। আমি এই ছেলেমেয়েদের সঙ্গে কথা বলছি, যাদের একটা ফুলকি রয়েছে, তাদেরকেই শিক্ষকরা এমনভাবে প্রেরণা জুগিয়েছেন যে এরা প্রত্যেকেই নিজ নিজ ক্ষেত্রে দেশের গৌরব বৃদ্ধি করেছে। এই বাচ্চাদের মাধ্যমেই আমি তাদের শিক্ষকদের দেখতে পাচ্ছি। এর মানে, আজকের এই কর্মসূচি ছাত্রছাত্রীদের জন্য যতটা প্রেরণাদায়ক, ততটাই তাদের শিক্ষকদের জন্যও। এই শিক্ষক দিবসের কর্মসূচি সত্যি একটি অদ্ভূত কর্মসূচিতে পরিণত হয়েছে আর প্রত্যেকের কাছেই দেশকে গর্বিত করার মতো ক্ষমতা রয়েছে। শিক্ষকতার পেশায় ভালো লোকেরা আজও আছেন, ভবিষ্যতেও থাকবেন।
কিন্তু, একটি কাজ আমরা করতে পারি, নিজের জীবনে যাঁরা অনেক উন্নতি করেছেন তাঁদেরকে আহ্বান জানাই সপ্তাহে এক ঘন্টা অর্থাৎ বছরে ১০০ ঘন্টা আপনারা নিজের ক্ষেত্রে আগ্রহী ছাত্রদের সঙ্গে কাটান। আপনি ডাক্তার হোন, উকিল হোন, ইঞ্জিনিয়ার কিংবা বিচারপতি। আনু্ষ্ঠানিকভাবে পড়াতে হবে না। তাঁদের সঙ্গে আপনারা সময় কাটালেই দেখবেন শিক্ষা ব্যবস্থায় নতুন প্রাণ সঞ্চার হয়েছে, শিক্ষা ব্যবস্থা কত শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। আমাদের দেশে প্রতিভার অভাব নেই। শুধু সামান্য ‘চ্যানেলাইজ’ করতে হবে। ঠিক আছে আত্মিক, তোমাকে অনেক শুভেচ্ছা জানাই। তোমার শরীর কেমন আছে, নিয়মিত মেডিকেল চেক্আপ করাচ্ছো তো? তুমি ভালো থেকো।
প্রশ্ন : আপনার কি মনে হয়, ছাত্রছাত্রীদের সাফল্যের রেসিপি কী?
প্রধানমন্ত্রী : দেখো সাফল্যের কোনও রেসিপি হয় না, হওয়াও উচিত না। দৃঢ় প্রত্যয় থাকলে এক না একদিন তুমি সাফল্য অর্জন করবেই। কোনও কাজ করতে গিয়ে সাফল্য না পেলে অনেকের স্বপ্নের সমাধি হয়ে যায়। স্বপ্নকে কখনও সমাধিস্থ হতে দেওয়া উচিত নয়। বিফলতাকে স্বপ্ন পূরণের পথে শিক্ষা হিসেবে গ্রহণ করা উচিত। বিফলতা হোক সাফল্যের পৃষ্ঠভূমি। যিনি বিফলতা থেকে শেখেন তিনিই সফল হন। পৃথিবীতে এমন কোনও ব্যক্তি নেই যিনি কখনও অসফল হননি। বিফলতাকে ইতিবাচক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে সেটাই সাফল্যের পুঁজি হয়ে ওঠে। তোমাদেরকে একটি বই পড়ার পরামর্শ দিচ্ছি, ১৯১৩ সালে লেখা বইটির নাম ‘পলিয়ানা’। বইটি বিশ্বের সমস্ত প্রধান ভাষাতেই অনুবাদ হয়েছে। খুবই ছোট বই, মাত্র ৬০-৭০ পৃষ্ঠা। প্রত্যেক জিনিসকে কেমনভাবে ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখা যায়, এই বই তা শেখায়। প্রত্যেক স্কুলের গ্রন্থাগারেই এই বইটি থাকা উচিত। কিন্তু, এটাকেও তোমরা রেসিপি হিসেবে নিও না।
গাড়ি চালানো শিখতে গিয়ে শুরুতে ছোটখাটো দুর্ঘটনা হলেই অনেকে ভয় পেয়ে যান। তারপর আর সারা জীবন স্টিয়ারিং ধরেন না। এরকম হলে তোমরা কোনও দিনই গাড়ি চালানো শিখতে পারবে না। জলে না ঝাঁপালে সাঁতার শিখতে পারবে না। সাফল্যকে সময়ের কাঠগড়ায় মেপো না। মনে কর, তুমি ১০০ মিটার দৌড়ে অংশগ্রহণ করেছো, আর সেখানে দশম স্থান পেয়েছো, আপাত দৃষ্টিতে এটা বিফলতা। কিন্তু গতবার যদি তুমি চার মিনিটে এই দূরত্ব অতিক্রম করে থাকো, আর এবার তিন মিনিটে সেই দূরত্ব অতিক্রম করেছো তা হলে তুমি সফল। কাজেই দেখার দৃষ্টি বদলালেই বিফলতা কখনও তোমার ধারে কাছে ঘেঁষতে পারবে না। আর তুমি তো নিজে একজন নেতা, এখানে ঝাড়খন্ডের যে নেতা বসে আছেন, তাঁকে বলছি এই অংশিকার নাম লিখে রাখুন, চার বছর পর এই মেয়েটি একজন নেত্রী হয়ে উঠবে।
প্রশ্ন : আপনি যখন ছাত্র ছিলেন, কোন্ বিষয়টি আপনার সবচেয়ে বেশি ভালো লাগতো? ক্লাসের পড়া নাকি অন্যকিছু?
প্রধানমন্ত্রী : অন্যকিছু। কয়েকজন দরিদ্র সহপাঠী, কয়েকটি দরিদ্র পরিবারের পেছনে আমার সময় দিতে হয়েছে, কিন্তু সবকিছু ভালোভাবে দেখা ও শোনা আমার স্বভাবের মধ্যে ছিল। আমি প্রতিটি জিনিস খুব পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে দেখতাম, তা ক্লাসের পড়াই হোক আর অন্য কিছুই হোক। ১৯৬৫ সালের যুদ্ধের সময় আমি খুবই ছোট ছিলাম। আমাদের গ্রামের লোকেরা গ্রাম থেকে কিছুটা দূরের একটি স্টেশনে সৈনিকদের ফল ও মিষ্টি দিতে যেতেন। আমিও তাঁদের সঙ্গে যেতাম, যাঁরা দেশের জন্য মৃত্যুবরণ করতে প্রস্তুত, সেই সৈনিকদের চর্মচক্ষুতে দেখার বাসনা আমাকে টেনে নিয়ে যেতো। তখনই অনুভব করি, আমার গ্রামের ছোট্ট পৃথিবীর বাইরেও একটি বড় পৃথিবী রয়েছে। এভাবেই শেখার আগ্রহ আরও বেড়ে যায়। তবে, একথা ঠিক ক্লাস রুমে আমরা একটা ‘সেন্স অফ প্রায়োরিটি’ পাই, একটি ‘সেন্স অফ মিশন’ পাই। এগুলিকে ভিত্তি করেই আমাদের অন্যকিছু অন্বেষন করতে হয়। এর মাধ্যমেই আমাদের ব্যক্তিত্ব গড়ে ওঠে। আমার বাইরের দিকে নজর বেশি ছিল আর সেটাই হয়তো আমাকে গড়ে তুলেছে। ধন্যবাদ।
প্রশ্ন : সবাই জানে ‘আক্ষা আ ধন্য ছে’ ‘আমাদের চোখ ধন্য’ নামে আপনার লেখা একটি কবিতার
বই রয়েছে। আপনার সাহিত্যে রুচি কিভাবে গড়ে উঠেছে?
প্রধানমন্ত্রী : তুমি কোথা এসেছো, অসম থেকে? ওহ দিল্লিতে থাকো! অসম আর বাংলার সাহিত্য খুবই উঁচু মানের। এখানে যত ছাত্রছাত্রী রয়েছে, তাদের মধ্যে ক’জন কবিতা লেখো? হাত ওঠাও। যারা এক-দুই লাইন লিখেছো তারাও হাত তুলতে পারো। এই দেখো কত হাত উঠেছে। তার মানে প্রত্যেকের মধ্যেই কবিতা রয়েছে। প্রত্যেক মানুষের কলমেই কবিতা জন্ম নিতে পারে। কারও কবিতা অশ্রু দিয়ে লেখা হয়, আর কারও এমনি এমনি। এটা ঈশ্বরের আশীর্বাদ। এটা কেউ কাউকে দিতে পারে না। কেউ এটাকে ধরে রেখে প্রতিপালন করেন। আমি যা লিখেছি, সেগুলিকে কবিতা বলতে আমার সঙ্কোচ হয়। তুমি জিজ্ঞেস করেছো বলেই সেগুলিকে আমার কবিতা বলতে হচ্ছে। দুটি চাকা, একটি ফ্রেম, একটি সিট থাকলে সবাই তাকে বাইসাইকেল বলে। সেটি যদি নাও চলে তাহলেও সেটি বাইসাইকেল। আমার লেখাও তেমনই, সেগুলিকে কবিতার দাড়িপাল্লায় না মাপলেই ভালো। আমি বরাবরই প্রকৃতির সঙ্গে মিশে থাকি। আমার মনে যে ভাব আসে, তাই লিখি। আমাদের গুজরাটের এক বড় সাহিত্যিক নিজের উদ্যোগে আমার এই সঙ্কলনটি প্রকাশ করেছেন। তারপরই সকলে জানতে পারলেন যে, মোদী এটাও করে। এখন দেখছি অনেক ভাষাতেই সেটি অনুদিত হচ্ছে। তুমি কি বইটা দেখেছো, তোমরা কেউ দেখেছো, অনলাইনে পড়া যায়, আমার সমস্ত বই-ই অনলাইনে পড়া যায়। ধন্যবাদ।
প্রশ্ন : আপনি যখন বক্তৃতা দেন, কখনই লিখিত বক্তৃতা দেন না, নিজের মন থেকে বক্তৃতা দেওয়ার এই প্রেরণা কার কাছ থেকে পেয়েছেন? কিভাবে এই অভ্যাস রপ্ত করেছেন?
প্রধানমন্ত্রী : তুমিও তো ভালোই বলছো। তুমি কি বক্তৃতা দিতে পারো? ভালো বক্তৃতা দিতে হলে আগে ভালো শ্রোতা হতে হবে। শুধু কান দিয়ে শুনলেই হবে না। চোখ এবং মস্তিষ্কও প্রয়োগ করতে হবে তাহলেই দেখবে, ধীরে ধীরে তোমার আত্মপ্রত্যয় বৃদ্ধি পাবে।
দ্বিতীয়ত, লোকে কি বলবেন, একথা ভেবো না। অধিকাংশই লোকে কি বলবেন ভেবে ভয় পান। অনেকে ভাবেন, মাঝপথে মাইক খারাপ হয়ে গেলে কী হবে? কী আর হবে …. বড় জোর প্রথমবার লোকে হাসবেন, তাদেরকে হাসতে দাও। ‘কনফিডেন্স লেভেল’ এতটাই থাকা উচিত।
তৃতীয়ত, নোট নেওয়া শিখতে হবে। যে বিষয়ে বলবো, সে বিষয় নিয়ে কিছুটা পড়াশুনা করা উচিত। তাহলেই দেখবে, যখন যে রকম প্রয়োজন, তোমার জ্ঞান থেকেই সেই তথ্য মাথায় চলে আসবে। আরেকটা সমস্যা হয়, যা বলতে চাও সেই বিষয়ে আসতে দেরী হলে শ্রোতাদের মনোযোগ সরে যায়। এই সমস্যা দূর করতে যা বলতে চাও, সেটা আগে লিখে প্রস্তুত করো, তারপর দেখো সেটাকে কত সংক্ষেপে বলা যায়, তবেই তোমার বক্তব্য ক্ষুরধার হবে। নিয়মিত অভ্যাস না করলে এটা সম্ভব নয়। আমি অবশ্য এতো অভ্যাস করতে পারিনি। যা মন চায় বলে ফেলি। কিন্তু ভালোভাবে বলতে হলে তোমরা গুগল গুরু থেকে শিক্ষা নাও। এছাড়া, ‘পাবলিক স্পিকিং’ এর বেশ কিছু কোর্সও চালু রয়েছে। ইউটিউব-এও বিশ্বের গণ্যমান্য ব্যক্তিদের বক্তৃতা শুনতে পারো। এগুলি থেকেই তোমার ধারনা পোক্ত হবে। আমি কাগজ এই জন্যই রাখি না কারণ, কাগজ রাখলেই আমার সব এলোমেলো হয়ে যায়। ধন্যবাদ।
প্রশ্ন : আজকাল অভিভাবকরা চান, ছেলেমেয়েরা শুধু ডাক্তার কিংবা ইঞ্জিনিয়ার হোক। আপনার অভিভাবকরা যদি এরকম চাপ সৃষ্টি করতেন, তা হলে দেশ কি আপনার মতো এ রকম একজন প্রধানমন্ত্রী পেতো? এ ব্যাপারে আপনি কি বলবেন?
প্রধানমন্ত্রী : দেখো, আমার ভাগ্যে সেসব ছিল না। আমি যদি স্কুলের কেরানিও হতাম, তাহলেও আমার বাবা-মা খুব খুশি হতেন। আমি ডাক্তার কিংবা ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার স্বপ্নও দেখিনি, বাড়ির পরিস্থিতিও সেরকম ছিল না। তবে, আমি তোমার সঙ্গে সহমত যে, ছেলেমেয়েদের ওপর অভিভাবকদের চাপ সৃষ্টি করা উচিত নয়।
স্বভাব এবং ক্ষমতা না জেনে অযথা চাপ দিলে শিশুর ক্ষতি হয়। বাড়িতে কোনও অতিথি এলে বাবা-মায়েরা অতিথির সন্তান-সন্ততির সঙ্গে নিজের সন্তান-সন্ততির তুলনা করতে বসে যান, এটাও করা উচিত না। অভিভাবকদের উচিত তাদের সন্তানদের সঙ্গে সময় কাটানো। তার কি ভালো লাগে সেটা জানা উচিত। যে বিষয় ভালো লাগে সে পথে এগিয়ে যাওয়ার উৎসাহ দিলে, তাকে সাহায্য করলে, সাফল্য সহজেই আসবে। জোর করে চাপিয়ে দিলে সাফল্য আসে না। তুমি যদি সাংবাদিক হতে চাও, আমি তোমার অভিভাবকদের অনুরোধ করবো তাঁরা অবশ্যই তোমাকে সাহায্য করবেন। ধন্যবাদ।
প্রশ্ন : সম্প্রতি আমরা বিশ্ব যোগদিবস পালন করেছি। গোটা বিশ্বকে যোগ শিক্ষা দিয়ে ভারত নিজের গৌরব বৃদ্ধি করেছে, সেজন্য আমরা সবাই আপনার কাছে কৃতজ্ঞ। এটা আপনি কি করে ভাবলেন?
প্রধানমন্ত্রী : প্রধানমন্ত্রী কিংবা মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার অনেক বছর আগে অস্ট্রেলিয়া সরকারের আমন্ত্রণে আমি সেদেশি গিয়েছিলাম। সেদেশে গিয়ে আশ্চর্য হয়েছিলাম যে, আমি ভারত থেকে এসেছি শুনেই অনেকে আমাকে যোগাসন নিয়ে প্রশ্ন করে। প্রতি দশ জনের ছ’জনই আমার কাছে যোগাসন নিয়ে জানতে চায়। এই উৎসাহ দেখে আমি বুঝেছিলাম, আমাদের এই শক্তিকে নিজেদের চেনা উচিত। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর, প্রথম সুযোগেই আমি রাষ্ট্রসঙ্ঘে গিয়ে এই প্রস্তাব রাখি, আর গোটা বিশ্ব আমাকে সমর্থন করে। সম্ভবত, প্রথমবার প্রস্তাব রাখার ১০০ দিনের মধ্যেই এই দিবস পালিত হয় আর বিশ্বে ১৬৭টি দেশ সহযোগী দেশ হিসেবে অংশগ্রহণ করে। তার মানে, যোগের মাহাত্ম বিশ্ববাসী যতটা জানতেন, আমরাই ততটা জানতাম না। দ্বিতীয়ত ২১ জুন, আমি দেখেছি, আমাদের সংবাদ মাধ্যমে এই দিন নির্বাচন নিয়েও সমালোচনা হয়েছে। আজ আমি তাঁদের প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছি। আমাদের শক্তির সবচেয়ে বড় উৎস হল সূর্য। আর ২১ জুন আমাদের দেশে দিন সবচেয়ে বড় হয়, সূর্য সবচেয়ে বেশি সময় ধরে আমাদের আলো দেয়। সেজন্য আমি এই দিনটিকে বেছে নিয়েছি। ভারতের নবীন প্রজন্ম যদি যোগ শিক্ষাকে পেশা হিসেবে নেয়, তাহলে গোটা বিশ্বেই তাদের কর্মসংস্থান হতে পারে। গোটা বিশ্বেই যোগ শিক্ষকের চাহিদা রয়েছে। এতে তারা নিজেরা যেমন উপার্জন করবে, দেশের আয়ও তেমনই বৃদ্ধি পাবে। নবীন প্রজন্মের আত্মিক স্বাস্থ্যের জন্যও এটি লাভদায়ক হবে। উৎকন্ঠামুক্ত জীবনের জন্য যোগ একটি বড় উপায়। দাবা খেললে যেমন ধৈর্য বৃদ্ধি হয়, অন্য খেলায় উত্তেজনা থাকে কিন্তু দাবা ছাত্রছাত্রীদের ধৈর্যের বিকাশ ঘটায়। যোগাসনও তেমনই তোমাদের অন্তরের ক্ষমতাকে শক্তিশালী করে তুলবে। এখন গোটা বিশ্ব এই শক্তির কথা স্বীকার করে নিয়েছে। যোগাসনের গুরুত্ব যাতে না কমে, সত্যিকারের যোগ ব্যায়ামই যেন আমরা শিখি এবং বিশ্বকে শেখাই, সেটা দেখাও ভারতের দায়িত্ব। ধন্যবাদ।
প্রশ্ন : আপনার পোশাক আমাদের আকর্ষিত করে। আপনি ভারতীয় বস্ত্রী এবং রং – এর ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর হয়ে উঠেছেন। ‘মোদী কুর্তা’র জনপ্রিয়তা ক্রমবর্ধমান। এভাবে গোটা বিশ্বে ভারতীয় বস্ত্রকে জনপ্রিয় করে তোলার চিন্তা আপনার মাথায় কি করে এলো?
প্রধানমন্ত্রী : দেখো, বাজারে একটি রটনা আছে, আমার নাকি কোনও ফ্যাশন ডিজাইনার রয়েছেন। শুনেছি কোনও কোনও ফ্যাশন ডিজাইনারও নিজেদেরকে আমার ফ্যাশন ডিজাইনার হিসেবে দাবি করেন। এখন সব প্রশ্নের জবাব দেওয়ার সময় তো আর আমার নেই। আজ আমি বলছি, আমি কোনও ফ্যাশন ডিজাইনারকে চিনি না। ছোটবেলাতেই বাড়ি ছেড়ে পথে বেরিয়ে পড়েছিলাম। ৩০-৪০ বছর পথেই ঘুরেছি। কাঁধে একটা ঝোলা থাকতো, তাতে থাকতো দু-একটি কাপড় আর দু-একটি বই। তোমরা নিশ্চয়ই জানো গুজরাটে খুব একটা ঠান্ডা পড়ে না। যে বছর শীতে তাপমাত্রা একটু কম থাকে সে বছর ফুল হাতা সার্ট পরলেই যথেষ্ট। আমি কুর্তা-পায়জামা পরতাম, নিজের হাতেই জামাকাপড় পরিস্কার করতাম। একদিন মনে হল, ঐ কুর্তার হাতাগুলির জন্য আমার ব্যাগ বেশি ভারী হচ্ছে, সেদিন আমি নিজের হাতেই সবকটি কুর্তার হাতা কেটে দিলাম। সেই থেকে আমি হাফ হাতা কুর্তাই পরি।
আমি নিজের সুবিধার জন্য এটা করেছি। এখন কোনও ফ্যাশন ডিজাইনার যদি এটা অনুসরণ করে নিজের সৃষ্টি বলে দাবি করে, তাহলে আমি কী করতে পারি! ছোটবেলা থেকেই আমি পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন, পরিপাটি থাকা পছন্দ করি। কিন্তু, পারিবারিক অবস্থা এমন ছিল না যে ইস্তিরি করে জামাকাপড় পরবো। জামাকাপড় ধুয়ে আমি ঘটির মধ্যে জ্বলন্ত কয়লা ভরে নিয়ে তা দিয়ে ইস্তিরি করে সেটা পড়ে স্কুলে যেতাম। এভাবেই পরিপাটি থাকার স্বভাব আমার আগে থেকেই ছিল। আমাদের এক আত্মীয় একবার আমাকে এক জোড়া ক্যানভাসের জুতো উপহার দিয়েছিলেন, তখন তার দাম ছিল ১০ টাকা। আমি শিক্ষক চলে যাওয়ার পর তার ফেলে দেওয়া চকের টুকরো কুড়িয়ে আনতাম। সেই চকের টুকরোই ভেজা ক্যানভাসের জুতোতে ঘষে, শুকিয়ে প্রত্যেকদিন পরতাম। আমার স্বভাব এই রকমই। পরিপাটি থাকতে হয়। অনুষ্ঠান অনুযায়ী পোশাক পরার চেষ্টা করি। অনুষ্ঠানকে গুরুত্ব দেওয়ার জন্যই এটা করি। ধন্যবাদ।
তোমাদেরকে ধন্যবাদ জানালাম। এবার আমি এই কর্মসূচির আয়োজকদেরও আমি ধন্যবাদ জানাই। আপনারা সাহস করে পুরো অনুষ্ঠানটিই ছাত্রছাত্রীদের হাতে ছেড়ে দিয়েছেন। ছাত্রছাত্রীরা খুব সুন্দরভাবে এই অনুষ্ঠান পরিচালনা করেছে। অনেক অনেক ধন্যবাদ।
PG/SB//SB/
Who has been the biggest influence on you - the first question to PM @narendramodi by Malavath Purna.
— PMO India (@PMOIndia) September 4, 2015
I don't think any one person makes a life. It is about having a receptive mind, people keep teaching us something or the other: PM
— PMO India (@PMOIndia) September 4, 2015
You can learn something new even during a train journey. I have learnt a lot from my teachers. I spent lot of time in the library: PM
— PMO India (@PMOIndia) September 4, 2015
Reading about Swami Vivekananda was a big influence: PM @narendramodi
— PMO India (@PMOIndia) September 4, 2015
The next question is from Imphal- want to be a successful leader and contribute in politics. What personality and traits are needed.
— PMO India (@PMOIndia) September 4, 2015
Good people and people from all walks of life are required in politics: PM @narendramodi https://t.co/I8jovXoECQ
— PMO India (@PMOIndia) September 4, 2015
Do you recall how people from all walks of life joined Mahatma Gandhi during freedom struggle. It benefitted the nation: PM @narendramodi
— PMO India (@PMOIndia) September 4, 2015
Leadership quality is essential. You must also be clear why you want to be a leader: to fight elections only or to make a difference: PM
— PMO India (@PMOIndia) September 4, 2015
Sarthak Bhardwaj from Uttarakhand asks PM - Digital India is a great effort but many places in India do not have electricity...
— PMO India (@PMOIndia) September 4, 2015
You are right, there are villages with no electricity. In next 1000 days we have taken up the effort to give power to 18,000 villages: PM
— PMO India (@PMOIndia) September 4, 2015
Next question from Sonia Patil - what game do you enjoy. https://t.co/I8jovXoECQ
— PMO India (@PMOIndia) September 4, 2015
Whenever a woman shines on the sports field, the mother of the child has a very important contribution: PM @narendramodi
— PMO India (@PMOIndia) September 4, 2015
A question from Bengaluru: what are the challenges on Swachh Bharat initiative? #MyCleanIndia
— PMO India (@PMOIndia) September 4, 2015
If school students are achieving so much, making Apps on Swachh Bharat & winning laurels then am sure India can be Swachh: PM #MyCleanIndia
— PMO India (@PMOIndia) September 4, 2015
Anmol from Patna asks the next question: what message for students wanting to give engineering and medical exams.
— PMO India (@PMOIndia) September 4, 2015
Can serve the nation not only by joining the armed forces or being in politics. Several ways to contribute to nation building: PM
— PMO India (@PMOIndia) September 4, 2015
Question from Bengaluru- why can't the youth take up teaching as a profession. How to make teaching more attractive to youth.
— PMO India (@PMOIndia) September 4, 2015
I don't think India lacks good teachers: PM @narendramodi pic.twitter.com/uisV4QjdmH
— PMO India (@PMOIndia) September 4, 2015
A question to the Prime Minister from Jammu and Kashmir - when you were a student what fascinated you the most?
— PMO India (@PMOIndia) September 4, 2015
Classroom gives a sense of mission and a sense of priority: PM @narendramodi https://t.co/I8jovXoECQ
— PMO India (@PMOIndia) September 4, 2015
Question to PM - you never use a written speech. How did you develop this mastery in oratory? pic.twitter.com/O0E0b8H9YQ
— PMO India (@PMOIndia) September 4, 2015
To speak well you need to be a good listener. And this will increase your confidence level: PM @narendramodi https://t.co/I8jovXoECQ
— PMO India (@PMOIndia) September 4, 2015
Want to thank you all, and am happy children played a key role in this programme: PM @narendramodi
— PMO India (@PMOIndia) September 4, 2015