কর্ণাটকের হাসান জেলার হোলেনারাসিপুরা তালুকের হারাদানাহাল্লি গ্রামে ১৯৩৩ সালের ১৮ মে শ্রী এইচ.ডি. দেবেগৌড়া জন্মগ্রহণ করেন। তিনি দেশের মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের লক্ষ্যে এক নিবেদিতপ্রাণ যোদ্ধা এবং ভারতের সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের এক গুণমুগ্ধ ব্যক্তিত্ব।
সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং – এ ডিপ্লোমাপ্রাপ্ত শ্রী দেবেগৌড়া মাত্র ২০ বছর বয়সে রাজনীতিতে যোগ দেন। তাঁর শিক্ষা শেষ হওয়ার পর ১৯৫৩ সালে তিনি কংগ্রেসে যোগ দেন এবং ১৯৬২ সাল পর্যন্ত এই দলের সদস্য ছিলেন। মধ্যবিত্ত-কৃষক পরিবার থেকে উঠে এসে, কৃষকের কষ্টকর জীবনের অভিজ্ঞতার সুবাদে যুবক গৌড়া দরিদ্র কৃষক, সমাজের শোষিত, বঞ্চিত এবং অত্যাচারিত শ্রেণীর হয়ে লড়াই করার শপথ নেন।
গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার একেবারে নীচুতলা থেকে শুরু করে তিনি ধাপে ধাপে রাজনৈতিক জীবনের উঁচু স্তরে উঠে আসেন। অনজানেয়া সমবায় সমিতির সভাপতি এবং পরে হোলেনারাসিপুরা তালুক উন্নয়ন পর্ষদের সদস্য হিসাবে তাঁর কাজের মধ্য দিয়ে তিনি সাধারণ মানুষের মনে জায়গা করে নেন।
আবহমানকাল ধরে প্রচলিত সামাজিক বৈষম্যগুলি দূর করার আশায় তিনি এক আদর্শ রাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখতেন। ১৯৬২ সালে মাত্র ২৮ বছর বয়সে যুবক গৌড়া বিধানসভা নির্বাচনে নির্দল প্রার্থী হিসাবে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন এবং কর্ণাটক বিধানসভার সদস্য নির্বাচিত হয়ে প্রথমদিন থেকেই সাফল্যের সঙ্গে কাজ করতে থাকেন। সুবক্তা হিসাবে বিধানসভায় তিনি প্রবীন, নবীন সহ সকলেরই প্রশংসা অর্জন করেন। হোলেনারাসিপুরা বিধানসভা কেন্দ্র থেকে তিনি আরও তিনবার পরপর বিধায়ক নির্বাচিত হন। এগুলি হল – ১৯৬৭ – ১৯৭১ সালে চতুর্থ বিধানসভায়; ১৯৭২ – ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত পঞ্চম বিধানসভায় এবং ১৯৭৮ – ১৯৮৩ সাল পর্যন্ত ষষ্ঠ বিধানসভায়।
১৯৭২ সালের মার্চ থেকে ১৯৭৬ সালের মার্চ পর্যন্ত এবং ১৯৭৬ সালের নভেম্বর থেকে ১৯৭৭ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বিধানসভায় বিরোধী দলনেতা হিসাবে তাঁর কাজ প্রশংসা ও স্বীকৃতি অর্জন করে।
১৯৮২ সালের ২২ নভেম্বর শ্রী দেবেগৌড়া বিধানসভার সদস্য পদে ইস্তফা দেন। সপ্তম ও অষ্টম বিধানসভার সদস্য হিসাবে তিনি রাজ্যের সেচ ও পূর্ত বিভাগের মন্ত্রী পদে কাজ করেন। সেচ মন্ত্রী হিসাবে তাঁর কাজের মেয়াদকালে কর্ণাটকে বহু সেচ প্রকল্পের সূচনা হয়। ১৯৮৭ সালে সেচ দপ্তরের জন্য পর্যাপ্ত অর্থ মঞ্জুর না হওয়ার প্রতিবাদে তিনি মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেন।
স্বাধীনতা ও সমতার পক্ষে জেহাদ ঘোষণা করে তিনি ১৯৭৫ – ১৯৭৬ সালে কেন্দ্রে ক্ষমতার অলিন্দে থাকা মানুষজনের বিরাগভাজন হন এবং জরুরি অবস্থার দিনগুলিতে জেলে বন্দী থাকেন। শ্রী দেবেগৌড়া জেলে বন্দী থাকাকালীন বাধ্যতামূলক বিশ্রামের এই সময়টিকে প্রচুর পড়াশুনার মাধ্যমে জ্ঞানার্জনের কাজে লাগান। এই কাজ এবং ভারতীয় রাজনীতির বিখ্যাত নেতৃবৃন্দের সঙ্গে জেলা (জেলে) কাটানোর সময় তাঁর চিন্তার আদান-প্রদান শ্রী দেবেগৌড়ার ব্যক্তিত্ব বিকাশের পক্ষে সহায়ক হয়। বন্দীদশা থেকে ছাড়া পাওয়ার পর তিনি এক দৃঢ় প্রতিজ্ঞ এবং পরিণত মনের মানুষ হিসাবে পরিচিত হন।
শ্রী ডড্ডে গৌড়া এবং শ্রীমতী দেবাম্মার সন্তান, শ্রী দেবেগৌড়া তাঁর সাধারণ কৃষক বংশধারা এবং প্রেক্ষিতের জন্য গর্বিত। শ্রী দেবেগৌড়ার সঙ্গে শ্রীমতী চেন্নাম্মার বিবাহ হয়। তাঁদের চার পুত্র এবং দুই কন্যা রয়েছে। তাঁর এক পুত্র কর্ণাটকের বিধায়ক এবং আরেকজন লোকসভার সদস্য।
অ-কংগ্রেস, অ-বিজেপি এবং আঞ্চলিক দলগুলিকে নিয়ে গঠিত তৃতীয় ফ্রন্টের নেতা হিসাবে শ্রী দেবেগৌড়া প্রধানমন্ত্রী হন। যদিও তিনি এ ব্যাপারে খুব একটা আগ্রহী ছিলেন না। ১৯৯৬ সালের ৩০ মে শ্রী দেবেগৌড়া কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রী পদে ইস্তফা দেন এবং ভারতের একাদশ প্রধানমন্ত্রী হিসাবে শপথ নেন।