Search

পিএমইন্ডিয়াপিএমইন্ডিয়া

সাম্প্রতিক সংবাদ

বিষয়টিকে সরাসরি পিআইবি থেকে নেওয়া হয়েছে

জয়পুরে ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপ রাষ্ট্র সমূহের মঞ্চের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর প্রারম্ভিক ভাষণ

জয়পুরে ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপ রাষ্ট্র সমূহের মঞ্চের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর প্রারম্ভিক ভাষণ

জয়পুরে ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপ রাষ্ট্র সমূহের মঞ্চের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর প্রারম্ভিক ভাষণ

জয়পুরে ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপ রাষ্ট্র সমূহের মঞ্চের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর প্রারম্ভিক ভাষণ

জয়পুরে ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপ রাষ্ট্র সমূহের মঞ্চের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর প্রারম্ভিক ভাষণ

 


মান্যবরগণ,

সত্যি এ বড়ই সম্মান ও শ্লাঘার বিষয়, ভারতে আপনাদের স্বাগতম জানাতে পারছি, ফোরাম ফর ইন্ডিয়া পেসিফিক আইল্যান্ডস কো-অপারেসন, বা যা এখন ফিপিক নামে পরিচিত, তার দ্বিতীয় সভায়।

আমি ভীষন কৃতজ্ঞ যে আপনারা ভারতে এসেছেন। আমি জানি, যাত্রাপথ মোটেই সংক্ষিপ্ত নয় আর আপনাদের ব্যস্ততাও প্রচুর। কিন্তু আমি এও জানি যে একাত্ববোধ দূরত্বকে ছোট করে দেয়।

বৃহস্পতিবার দিল্লিতে আমাদের রাস্ট্রপতির সাথে আপনাদের শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করতে পেরে আমি আনন্দিত। আশা করি আপনারা দিল্লি, আগ্রা ও জয়পুর ভ্রমন উপভোগ করেছেন এবং আমাদের টিম আপনাদের কেনাকাটা করার কিছুটা সুযোগ দিয়েছিলো।

আশা করি তাজমহল ভ্রমনও আপনাদের ভালো লেগেছে।

যদি এটা আপনাদের প্রথমবার ভারতে আসা হয়, তাহলে নিশ্চয়ই আপনারা এ্দেশের ভৌগলিক আকার,সংস্কৃতি,বৈচিত্র এবং এক মানব-সমুদ্র দেখে অবাক হয়েছেন, ঠিক যেমন আমরা ভাবতে গিয়ে অবাক হই, প্রকৃতির সাথে মেলন্ধনে একটি সুন্দর দ্বীপে একটি জাতি একটি ছোট গোষ্ঠীতে বাস করছে।

এমন বৈচিত্রই আমাদের গ্রহকে বিশেষত্ব দিয়েছে।

আমি বিশেষভাবে ঐতিহাসিক জয়পুর শহরে আপনাদের স্বাগতম জানাচ্ছি।গোলাপি শহর পরিচিত গোলাপি বেলেপাথরের তৈরি বিখ্যাত প্রাসাদগুলির জন্য।বীরত্ব ও সাহসের, শিল্প ও ঐতিহ্যের শহর এটি, আর সবার ওপরে রয়েছে আথিতেয়তার সুদৃঢ় পরম্পরা।

আমি মুখ্যমন্ত্রী শ্রীমতি বসুন্ধরা রাজে-কে ধন্যবাদ জানাই তার অকুন্ঠ সাহায্যের জন্য।

আমি এই প্রথম ভারতে কোনো আঞ্চলিক অধিবেশনের আয়োজন করছি, এটা সবসময় আমার কাছে বিশেষ হয়ে থাকবে।

ভারত এবং প্রশান্তমহাসাগরীয় দ্বীপ রাস্ট্রগুলি এই শতকে অংশিদারিত্বের নতুন নজির স্থাপন করছে, এ জন্যেও এটা বিশেষ ব্যাপার।

একই লক্ষ্য, আকাঙ্খা এবং সঙ্কট এই অংশিদারিত্বের মূলে। ছোট কিংবা বড়, সব দেশেরই বিশ্বে সমান অধিকার, এই বিশ্বাসের ভিত্তিতেই এই অংশিদারিত্ব।

আমরা এও বুঝতে পেরেছি যে বিশ্বায়িত পৃথিবী একের অপরের ওপর নির্ভরতা গভীর করেছে, এবং ভৌগলিক দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টে দিয়েছে।

নির্দিষ্ট করে বলা যায়, বিশ্বজোড়া সম্ভাবনার ও সমস্যার ভরকেন্দ্র প্রশান্ত এবং ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দিকে দিক পরিবর্তন করছে।এই দুই মহাসাগরের আশেপাশের দেশগুলির ভাগ্য একে অপরের সাথে জুড়ে আছে।

এই কারনে ভারতে এবং প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপগুলিতে বয়ে আসা আশা ও সঙ্কট একই।
এই কারনেই কেউ কেউ এই অঞ্চলকে একসাথে ভারত-প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চল বলেন।

কিন্তু এটাই একমাত্র বিষয় নয় যা আমাদের একসাথে এনেছে।

ছোট দ্বীপ রাষ্ট্রগুলি হয়ত ছোট একটু জায়গা নিয়ে থাকে, এবং তার জনসংখ্যাও বেশ কম হতে পারে, কিন্তু অন্য যেকোনো দেশের মতই এই দেশগুলিও আমাদের কাছে সমান গুরুত্বপূর্ন। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে আমরা আপনাদের পাশে ছিলাম এবং থাকব |

একাত্বতার এই বোধ থেকেই সামোয়াতে গতবছর এস আই ডি এস-এর অধিবেশনে আমরা সবচেয়ে ভালো ভূমিকা নিতে পেরেছি, যা সামোয়া পথরেখার জন্ম দিয়েছে।
২০১৫-পরবর্তী উন্নয়ন রূপরেখার সর্বশেষ নথিতে আমরা এসআইডিএস’র সক্ষমতা নির্মানের ব্যাপারে সমর্থন জানিয়েছি।

পরিবর্ধিত ও পুনর্গঠিত রাস্ট্রসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের উভয় বিভাগে একান্তভাবে এসআইডিএস’র আসনের দাবিতে আমরা আপনাদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আছি।

প্রশান্ত মহাসাগরীয় আঞ্চলিকত্বের জন্য আপনাদের যে স্বপ্ন, ভারত তাকে সমর্থন করবে।এটা সহযোগী আঞ্চলিকত্বের এক উজ্জ্বল নিদর্শন, এটা সারাবিশ্বের অন্যান্যদেরও উৎসাহিত করবে।

মান্যবরগণ, বিশ্ব আপনাদের দেখতে পারে স্বল্প জনসংখ্যার ছোট দ্বীপপুঞ্জ হিসাবে। আমি আপনাদের দেখি বিশাল মহাসাগরীয় ব্যাপক সম্ভাবনা হিসাবে।

আপনাদের কারো কারো এমন বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল আছে যা ভারতের ভূমি এবং বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল একসাথে করলে যা হয়, তার থেকেও বড়।

আমরা নতুন যুগের এমন এক জায়গায় এখন দাঁড়িয়ে আছি, যেখানে মহাকাশের মতো মহাসাগরও আমাদের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ চালিকা শক্তি হয়ে উঠবে। মাছ চাষ ছাড়াও, সমুদ্রের সুসংহত ব্যবহার আনবে স্বচ্ছলতা, এবং দেবে পরিবেশ বান্ধব শক্তি,নতুন ওষুধ এবং খাদ্য নিরাপত্তা।

মহাসাগর ভারতের ভবিষ্যতের জন্যেও গুরুত্বপূর্ণ।ঠিক এই কারণেই গত এক বছরে, আমি ভারতে ও আন্তর্জাতিক স্তরে মহাসাগরীয় অর্থনীতির ওপর জোর দিয়েছি। আমি এই ব্যাপারে আমাদের সহযোগিতার ব্যাপক সম্ভাবনা দেখতে পাচ্ছি।

সুসংহতভাবে মহাসাগর ও সামুদ্রিক সম্পদ ব্যবহার নিশ্চিত করতে ভারত আপনাদের পাশে দাঁড়াতে পেরে আনন্দিত, যে বিষয়টি সম্প্রতি রাস্ট্রসংঘে চূড়ান্ত হওয়া দীর্ঘস্থায়ী উন্নয়ন লক্ষ্য সনদে একটি বিশেষ স্থান পেয়েছে।

আমাদের বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জের বিষয়গুলিও এক।

জলবায়ু পরিবর্তন প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে একটা বড় হুমকি স্বরূপ। ভারতের ৭৫০০ কিলোমিটার সৈকত রেখা এবং ১৩০০ দ্বীপও এর শিকার। আমরা উভয়ই চাইছি, প্যারিসে বছরের শেষদিকে যে সিওপি ২১ হচ্ছে তাতে এই বিষয়ে একটা কার্যকরি কিছু সিদ্ধান্ত হোক।

আমরা একসাথে কাজ করেছি যাতে টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে জলবায়ু পরিবর্তনের ব্যাপারে আলাদা কর্মসূচি এমনভাবে স্থির করা হয় যা উন্নয়নশীল দেশগুলির স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলিকে সম্বোধন করে।

ডব্লুটিও-তে আমাদের অভিন্ন বিষয়ে, যেমন মাছচাষ, আমাদের অবশ্যই ঘনিষ্ঠতর অংশিদারিত্ব গড়ে তুলতে হবে।

.
রাস্ট্রসংঘ ৭০তম বার্ষিকীতে ঐতিহাসিক ফলকে উপনীত। আমি প্রত্যেক সদস্য দেশকে লিখেছি আগত বছরগুলির জন্য রাস্ট্রসংঘ কার্যপন্থা ঠিক করতে।

রাষ্ট্রসংঘ গড়ে ওঠার সাত দশক বাদে বিশ্ব এখন অন্যরকম। চারগুণ দেশ বেড়ে গেছে।জলবায়ু পরিবর্তনে মত নতুন সঙ্কট এসে গেছে।মহাকাশ এবং মহাসাগর-র মত নতুন দিগন্ত খুলে গেছে।আমরা এখন বিশ্বায়িত পৃথিবীতে পরিবর্তিত অর্থনীতিতে ডিজিটাল যুগে বাস করছি। রাস্ট্রসংঘকে অবশ্যই পরিবর্তিত বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হবে।

২১ শতকের প্রাসঙ্গিকতা ও কার্যকারিতা নিশ্চিত করতে রাস্ট্রসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ পুনর্গঠনের জন্য আমাদের চাপ দিতেই হবে। রাস্ট্রসংঘের সাধারন পরিষদে সভাপতির ভাষন যেন রাস্ট্রসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ পুনর্গঠনের ভিত্তি হয়, আমরা তার জন্য আপনাদের সাহায্য চাইছি।

নিরাপত্তা পরিষদে ভারতের স্থায়ী আসনের জন্য আপনাদের সমর্থন রাস্ট্রসংঘকে দেবে বিশ্বজনীন চেহার এবং সমতা যা আমাদের সময়কে প্রতিফলন করে।

মান্যবরগণ,

যেমন ফিপিক আমাদের জোরালো বৈশ্বিক অংশিদারিত্বের প্রতীক হওয়া উচিত, তেমনি আমরা দ্বিপাক্ষিক ও আঞ্চলিক সহযোগিতার মাধ্যমে অংশিদারিত্ব জোরালো করতে পারি।

এই অধিবেশনে ভারত নানা ঘোষনা দিচ্ছে। তারমধ্যে আছে, প্রশান্তমহাসাগরীয় দ্বীপ রাস্ট্রগুলিকে আর্থিক অনুদানের পরিমাণ বাড়িয়ে ১২৫,০০০ থেকে ২০০,০০০ ডলার করা, ই-টুরিস্ট ভিসা, ভারতীয় বিশেষজ্ঞদের কয়ার শিল্পের জন্য দ্বীপরাষ্ট্রে পাঠানো, প্রশান্তমহাসাগরীয় দ্বীপ রাস্ট্রগুলির কূটনীতিকদের বিশেষ প্রশিক্ষন।

বাণিজ্য, সহায়তার চাইতেও বেশি, উন্নয়নের চাবিকাঠি।আমি আনন্দের সাথে দিল্লিতে ফেডেরসন অব চেম্বার্স অব কর্মাস এন্ড ইন্ডাস্ট্রি-তে ফিপিক ট্রেড অফিস চালু করার ঘোষনা করছি।

ভারত ও প্রশান্তমহাসাগরীয় দ্বীপ রাস্ট্রগুলি’র মধ্যে বাণিজ্যের ও বিনিয়োগের এটা হলো প্রথম সোপান।

মান্যবরগণ, আপনাদের অনেক দেশে ভারতীয় বংশোদ্ভুতরা আছেন, এটা আমাদের বিশেষ মানবিক বন্ধন।

মান্যবরগণ, আমি আপনাদের মতামত শুনতে আগ্রহের সাথে অপেক্ষা করছি। আমাদের সুন্দর এই অংশীদারিত্বকে এগিয়ে নিয়ে যেতে ভবিষ্যত উদ্যোগ সম্পর্কে চিন্তাভাবনাও ব্যক্ত করবো।

রাস্ট্রসংঘের নজিরবিহীন ভাবে আন্তর্জাতিক যোগ দিবস ঘোষনা করার পেছনে আপানাদের সমর্থনের জন্য এবং প্রথম আন্তর্জাতিক যোগ দিবসকে আপনাদের দেশে সফল করার জন্য আমি আপনাদের বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

শেষে আমি বলতে চাই, দ্বীপপুঞ্জের রত্নরাজিতে এই পৃথিবী সুশোভিত। এবং দ্বীপপুঞ্জের জীবন ইশ্বরের অপূর্ব ইচ্ছার ও মানবিক আত্মার সুন্দর প্রমাণ।

আমরা একসাথে কাজ করব, প্রকৃতির কিছু অমূল্য উপহারকে এবং এই বিশ্বের অসাধারন মানুষদের লালন করতে।

ধন্যবাদ।

SC/DSG//AGT/