Search

পিএমইন্ডিয়াপিএমইন্ডিয়া

সাম্প্রতিক সংবাদ

বিষয়টিকে সরাসরি পিআইবি থেকে নেওয়া হয়েছে

ভারত – নিউজিল্যান্ড যৌথ বিবৃতি

ভারত – নিউজিল্যান্ড যৌথ বিবৃতি


নয়াদিল্লি, ১৭ মার্চ, ২০২৫

 

প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদীর আমন্ত্রণে নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ক্রিস্টোফার লাক্সন ১৬-২০ মার্চ, ২০২৫ ভারত সফরে রয়েছেন। নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তাঁর প্রথম ভারত সফরে ক্রিস্টোফার লাক্সন নতুন দিল্লির পর মুম্বাই যাবেন। তাঁর সঙ্গে রয়েছেন নিউজিল্যান্ডের পর্যটন মন্ত্রী লুই আপস্টন, জনজাতি গোষ্ঠী মন্ত্রী মার্ক মিশেল, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ মন্ত্রী টর্ড ম্যাকলে এবং নিউজিল্যান্ডের উচ্চ পদস্থ সরকারি আধিকারিক, বাণিজ্য ও সাংস্কৃতিক জগতের প্রতিনিধিরা।

নতুন দিল্লিতে নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রীকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানানো হয়। প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে বসেন তিনি। দুই প্রধানমন্ত্রী ১৭ মার্চ, ২০২৫ দশম রাইসিনা ডায়ালগের উদ্বোধন করবেন। সমারোহে মূল ভাষণ দেবেন নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী। রাজঘাটে মহাত্মা গান্ধীর স্মারকে তিনি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। রাষ্ট্রপতি শ্রীমতী দ্রৌপদী মুর্মুর সঙ্গেও মিঃ লাক্সন সাক্ষাৎ করেছেন।

প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে তাঁর বৈঠকে দু’দেশের সম্পর্ক আরও শক্তিশালী করার বিষয়ে মতবিনিময় হয়েছে। বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা, শিক্ষা ও গবেষণা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, মহাকাশ, জনসংযোগ এবং ক্রীড়া ক্ষেত্রে আরও ঘনিষ্ঠ সহযোগিতার ভিত্তিতে কাজ করতে চায় দুই দেশ।

বৈঠকে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক নানা বিষয়েও মতবিনিময় হয়। বর্তমান বিশ্বের অনিশ্চয়তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন তাঁরা। ভারত – প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে সুস্থিতি রক্ষার গুরুত্ব উল্লেখ করেন তাঁরা। সমুদ্রপথ ব্যবহারের ক্ষেত্রে ১৯৮২’র ইউএনসিএলওএস বিধি মেনে চলার কথা বলেছে ভারত ও নিউজিল্যান্ড।

নিউজিল্যান্ডের জনসংখ্যার প্রায় ৬ শতাংশ ভারতীয় বংশোদ্ভূত ঐ দেশে নানা ক্ষেত্রে তাঁদের অবদান যথেষ্ট। এদের এবং ভারতে আসা নিউজিল্যান্ডের নাগরিকদের নিরাপত্তা রক্ষা করা পারস্পরিক দায়িত্ব বলে দুই প্রধানমন্ত্রীই উল্লেখ করেছেন।

বাণিজ্য ও বিনিয়োগ এবং আর্থিক বিষয়ে সহযোগিতা –

ভারত ও নিউজিল্যান্ডের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যে গতি বজায় থাকা একটি ইতিবাচক বিষয় বলে দুই প্রধানমন্ত্রী মনে করেন। এর উপর ভিত্তি করে আরও দ্বিমুখী বিনিয়োগ এবং বাণিজ্যের নতুন পরিসর তৈরি করার উপর তাঁরা জোর দিয়েছেন।

মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনা শুরু হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন দুই নেতা। এক্ষেত্রে কাজ দ্রুত এগিয়ে নিয়ে যেতে অভিজ্ঞ প্রতিনিধি নিয়োগ করায় সম্মত হয়েছেন উভয়েই। ডিজিটাল লেনদেনের ক্ষেত্রে সহযোগিতার পরিসর বিস্তৃততর করার কথা বলেছেন তাঁরা।

২০২৪ সালে শুল্ক সহযোগিতা ব্যবস্থাপনার আওতায় স্বাক্ষরিত অথরাইজড্‌ ইকনোমিক অপারেটর্স মিউচ্যুয়াল রেকগনিশন অ্যারেঞ্জমেন্ট এক্ষেত্রে এক বড় পদক্ষেপ বলে তাঁরা মনে করেন।

বাগিচা চাষ এবং বনসৃজনে সমঝোতাপত্র স্বাক্ষর হওয়া এক ইতিবাচক অধ্যায় বলে মন্তব্য করেছেন তাঁরা। অর্থনৈতিক বৃদ্ধির ক্ষেত্রে পর্যটনের গুরুত্ব উল্লেখ করেছেন দুই প্রধানমন্ত্রী। ভারত – নিউজিল্যান্ড সরাসরি বিমান পরিষেবা চালু করার জন্য নিজ নিজ দেশের বিমান সংস্থাগুলির সঙ্গে উভয় নেতাই কথা বলবেন।

রাজনীতি, প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা সহযোগিতা –

সংসদীয় স্তরে আদান-প্রদানের গুরুত্ব উল্লেখ করেছেন দুই প্রধানমন্ত্রী। যৌথ মহড়া এবং আরও নানা উদ্যোগের মধ্য দিয়ে প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে সহযোগিতার প্রসারে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন তাঁরা। ভারত – নিউজিল্যান্ড প্রতিরক্ষা সহযোগিতা চুক্তি এই কাজে আরও গতি আনবে বলে তাঁরা আশাবাদী।

ভারত – প্রশান্ত মহাসাগরীয় উদ্যোগ বা ইন্দো – প্যাসিফিক ওশন ইনিশিয়েটিভ – এ যোগদান নিউজিল্যান্ডের স্বার্থের অনুকূল হবে বলে মিঃ লাক্সন মনে করেন।

বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও বিপর্যয় মোকাবিলা সংক্রান্ত সহযোগিতা –

গবেষণা, বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তি ক্ষেত্রে অংশীদারিত্ব দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ বলে দুই নেতা উল্লেখ করেছেন। এর প্রসারের কাজে বাণিজ্য ও শিল্প জগতকে সামিল করার বিষয়ে উভয় পক্ষই একমত। আন্তর্জাতিক সৌর জোটে ভারতের নেতৃস্থানীয় ভূমিকার কথা উল্লেখ করে নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০২৪ থেকে তাঁর দেশ ঐ জোটের সদস্য। কোয়ালিশন ফর ডিজাস্টার রেজিলিয়েন্ট ইনফ্রাস্ট্রাকচার বা সিডিআরআই-তে নিউজিল্যান্ডের যোগদানকে স্বাগত জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। এর আওতায় ধারাবাহিক উন্নয়নী লক্ষ্যসমূহ প্যারিস জলবায়ু চুক্তি এবং বিপর্যয় মোকাবিলা সংক্রান্ত সেন্ডাই কাঠামো বিধির শর্তপূরণ সহজতর হবে। ভূমিকম্পের বিপদ মোকাবিলায় ভারত – নিউজিল্যান্ড সহযোগিতা চুক্তি নিয়ে কাজ এগোনোয় তাঁরা সন্তোষ প্রকাশ করেন।

শিক্ষা, যোগাযোগ এবং ক্রীড়া –

এক্ষেত্রে সহযোগিতা আরও বাড়ানো দরকার বলে দুই প্রধানমন্ত্রী মনে করেন। শিক্ষা ক্ষেত্রে সহযোগিতা জোরদার করতে স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত নতুন চুক্তিকে দু’পক্ষই স্বাগত জানিয়েছে। এর ফলে, তথ্য আদান-প্রদানে গতি আসবে।
ক্রিকেট, হকি এবং আরও নানাধরনের খেলাধূলা ভারত – নিউজিল্যান্ড সম্পর্ককে মজবুত করেছে বলে দুই প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন। ভারত ও নিউজিল্যান্ডে চিরাচরিত চিকিৎসা প্রণালীর প্রসারে দুই নেতাই খুশি। নিউজিল্যান্ডে যোগাভ্যাস জনপ্রিয় হয়ে ওঠা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে ইতিবাচক বলে তাঁদের মন্তব্য।

আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বিষয়ে সহযোগিতা –

মুক্ত ও অবাধ ভারত – প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ক্ষেত্রে দুই দেশই একমত। পূর্ব এশিয়া শিখর সম্মেলন, আসিয়ান এবং আসিয়ানের মতো মঞ্চে ভারত ও নিউজিল্যান্ড যেভাবে সহযোগিতার ভিত্তিতে কাজ করছে, তা ইতিবাচক বলে উভয় নেতাই মনে করেন। রাষ্ট্রসংঘকে আধুনিক বিশ্বের চাহিদানুযায়ী গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করেন তাঁরা। নিরাপত্তা পরিষদে ভারতের স্থায়ী সদস্যপদের দাবিকে সমর্থন করেছে নিউজিল্যান্ড। সারা বিশ্বে পরমাণু অস্ত্র প্রসার রোধ এবং নিউক্লিয়ার সাপ্লায়ার্স গ্রুপে ভারতের অন্তর্ভুক্তি গুরুত্বপূর্ণ বলে নিউজিল্যান্ড মনে করে। মধ্যপ্রাচ্যের সুস্থিতির উপরও তাঁরা অগ্রাধিকার দেন। গাজায় পর্যাপ্ত মানবিক ত্রাণের প্রয়োজনীয়তার কথাও তাঁরা উল্লেখ করেছেন। প্যালেস্তাইন – ইজরায়েল বিবাদ মেটাতে দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের পথে এগোনোর কথা বলেছেন ভারত ও নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী। রাষ্ট্রসংঘের সনদকে মর্যাদা দিয়ে ইউক্রেন বিবাদের মীমাংসা হওয়া দরকার বলেও তাঁরা মনে করেন।

সন্ত্রাসবাদের প্রশ্নে কঠোর অবস্থান নিয়েছে ভারত ও নিউজিল্যান্ড। রাষ্ট্রসংঘের চিহ্নিত জঙ্গী সংগঠন এবং সন্ত্রাসবাদীদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছে দুই দেশ। জঙ্গী তৎপরতা মোকাবিলায় দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা দরকার বলে উভয় প্রধানমন্ত্রীই মনে করেন।

ভারত সফরে উষ্ণ অভ্যর্থনা ও আতিথ্যের জন্য প্রধানমন্ত্রী মোদীকে ধন্যবাদ জানান নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী। তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে নিউজিল্যান্ড সফরের আমন্ত্রণ জানান।

 

SC/AC/SB