Search

পিএমইন্ডিয়াপিএমইন্ডিয়া

সাম্প্রতিক সংবাদ

বিষয়টিকে সরাসরি পিআইবি থেকে নেওয়া হয়েছে

বাজেট-উত্তর ওয়েবিনারে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি নিয়ে ভিডিও কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ

বাজেট-উত্তর ওয়েবিনারে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি নিয়ে ভিডিও কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ


নতুন দিল্লি ৫ মার্চ ২০২৫

 

নমস্কার!
এই গুরুত্বপূর্ণ বাজেট ওয়েবিনারে আপনাদের সকলকে স্বাগত এবং শুভেচ্ছা। মানুষ, অর্থনীতি এবং উদ্ভাবনে বিনিয়োগ-এই থিম উন্নত ভারতের পথচিত্রকে ব্যাখ্যা করে। আপনারা এবছরের বাজেটে এর প্রভাব অনেক বেশি মাত্রায় দেখতে পাবেন। সেইজন্য এই বাজেট ভারতের ভবিষ্যতের জন্য নীল নকশা হয়ে উঠেছে। আমরা মানুষ, অর্থনীতি এবং উদ্ভাবনে বিনিয়োগে যতটা গুরুত্ব দিয়েছি, ততটাই অগ্রাধিকার দিয়েছি পরিকাঠামো এবং শিল্পে। আপনারা সকলে জানেন যে, দেশের অগ্রগতিতে ক্ষমতাবর্ধন এবং প্রতিভার লালন-পালনের কাজ ভিত্তিপ্রস্তর হিসেবে কাজ করে। সেইজন্য উন্নয়নের পরবর্তী পর্বে আমাদের এইসব ক্ষেত্রে আরও বেশি করে বিনিয়োগ করতে হবে। এরজন্য সব পক্ষকে এগিয়ে আসতে হবে। কারণ, দেশের অর্থনৈতিক সাফল্যের জন্য এটা প্রয়োজনীয়। একইসঙ্গে প্রত্যেক সংস্থার সাফল্যের জন্য এটাই ভিত্তি।
বন্ধুগণ,
মানুষের ওপর বিনিয়োগের দর্শন দাঁড়িয়ে আছে তিনটি স্তম্ভের ওপরে- শিক্ষা, দক্ষতা এবং স্বাস্থ্য পরিবেষা! আপনারা বর্তমানে দেখছেন ভারতের শিক্ষাব্যবস্থা কয়েক দশকের পরে কিভাবে এক বিশাল রূপান্তরের মাধ্যমে চলেছে। জাতীয় শিক্ষানীতি, আইআইটিগুলির সম্প্রসারণ, শিক্ষা ব্যবস্থায় প্রযুক্তির অন্তর্ভুক্তি, এআই-এর পূর্ণ সদ্ব্যহার, পাঠ্য পুস্তকের ডিজিটাইজেশন, ২২টি ভারতীয় ভাষায় পাঠ উপকরণ দেওয়ার কাজের মতো বড় পদক্ষেপ, এই ধরনের প্রয়াস এগিয়ে চলছে নির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে। এইসব কারণে বর্তমানে ভারতের শিক্ষাব্যবস্থা একবিংশ শতাব্দীর বিশ্বের চাহিদা এবং প্রয়োজনীয়তার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে এগোচ্ছে। 
বন্ধুগণ,
সরকার ২০২৪ থেকে ৩ কোটির বেশি যুবাকে দক্ষতার প্রশিক্ষণ দিয়েছে। আমরা ১ হাজারটি আইটিআই-এর উন্নতিকল্পে এবং ৫টি উৎকর্ষ কেন্দ্র গঠনের পরিকল্পনা ঘোষণা করেছি। আমাদের লক্ষ্য যুবাদের এমনভাবে প্রশিক্ষণ দেওয়া, যাতে তারা আমাদের শিল্পের প্রয়োজন মেটাতে পারে। এরজন্য আমরা আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের সাহায্য নিচ্ছি এবং বিশ্বস্তরে যাতে আমাদের যুবারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারে, তা নিশ্চিত করছি। এই সফল প্রয়াসে আমাদের শিল্প, শিক্ষা মহলের সবচেয়ে বড় ভূমিকা আছে। শিল্প মহল এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিকে একে অপরের চাহিদা বুঝতে হবে এবং তা পূরণ করতে হবে। দ্রুত পরিবর্তনশীল জগতের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার সুযোগ দেওয়া উচিত যুবাদের।  হাতে কলমে শিক্ষার জন্য তাদের সুযোগ দিতে হবে। এরজন্য সব পক্ষকে এগিয়ে আসতে হবে। আমরা পিএম ইনটার্নশিপ কর্মসূচি শুরু করেছি যুবাদের নতুন সুযোগ এবং হাতে কলমে দক্ষতার প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য। এই কর্মসূচিতে সর্বস্তরে যাতে অধিক সংখ্যক শিল্প যোগ দেয় তা আমাদের নিশ্চিত করতে হবে। 
বন্ধুগণ,
আমরা এই বাজেটে মেডিকেলের জন্য ১০ হাজার অতিরিক্ত  আসন ঘোষণা করেছি। আমাদের লক্ষ্য আগামী ৫ বছরে মেডিকেলে ৭৫ হাজার আসন তৈরি করা। সবকটি প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে টেলি মেডিসিনের সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে। ডে-কেয়ার ক্যান্সার সেন্টার এবং ডিজিটাল স্বাস্থ্য পরিষেবা পরিকাঠামোর মাধ্যমে আমরা চাই শেষ প্রান্ত পর্যন্ত গুণমানসম্পন্ন স্বাস্থ্য পরিষেবা পৌঁছে দিতে। আপনারা কল্পনা করতে পারেন মানুষের জীবনে কত পরিবর্তন আসতে চলেছে। এতেও যুবাদের জন্য অনেক কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয়। এইজন্য আপনাদেরও এইরকম দ্রুতগতিতে কাজ করতে হবে। তবেই বাজেট ঘোষণার সুবিধা আরও বেশি করে মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হবে।
বন্ধুগণ, 
গত ১০ বছরে আমরা অর্থনীতিতে বিনিয়োগকে দেখেছি ভবিষ্যতের পরিকল্পনা নিয়ে। আপনারা জানেন, ২০৪৭-এর মধ্যে ভারতের শহরবাসীর সংখ্যা ৯০ কোটিতে পৌঁছবে বলে অনুমান করা হচ্ছে। এই বিশাল সংখ্যক মানুষের জন্য প্রয়োজন পরিকল্পিত নগরায়ণ। এরজন্য আমরা ১ লক্ষ কোটি টাকার একটি আরবান চ্যালেঞ্জ ফান্ড গঠনের উদ্যোগ নিয়েছি। এটি জোর দেবে সুশাসন, পরিকাঠামো এবং আর্থিক সুস্থায়িত্বের ওপর এবং বৃদ্ধি করবে বে-সরকারি বিনিয়োগ। আমাদের শহরগুলি পরিচিত হবে সুস্থায়ী, শহুরে পরিবহন, ডিজিটাল সমন্বয় এবং জলবায়ু সহনশীল পরিকল্পনার জন্য। আমাদের বেসরকারি ক্ষেত্র বিশেষ করে রিয়ালএস্টেট এবং শিল্পের নজর দেওয়া উচিত পরিকল্পিত নগরায়ণের ওপর এবং তাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। অমৃত ২.০ এবং জলজীবন মিশনের মতো অভিযানকে এগিয়ে নিয়ে যেতে প্রত্যেককে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।
বন্ধুগণ,
আজ আমরা যখন অর্থনীতিতে বিনিয়োগ নিয়ে কথা বলছি, তখন আমাদের বিশেষ নজর দেওয়া প্রয়োজন পর্যটনের সম্ভাবনার দিকে। আশা করা যায়, আমাদের জিডিপি-র ১০ শতাংশ আসবে পর্যটন ক্ষেত্র থেকে। কোটি কোটি যুবার কর্মসংস্থান হওয়ার সুযোগ আছে পর্যটন ক্ষেত্রে। সেইজন্য ঘরোয়া এবং আন্তর্জাতিক পর্যটনের প্রসারে এই বাজেটে অনেকগুলি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পর্যটনে জোর দিয়ে দেশের ৫০টি স্থানের উন্নয়ন ঘটানো হবে। এইসব জায়গায় হোটেলগুলির মান বাড়ানো হবে পর্যটকদের সুবিধার্থে এবং এতে স্থানীয় মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে। হোমস্টে-র জন্য মুদ্রা কর্মসূচির আওতাও বাড়ানো হয়েছে। ‘হিল ইন ইন্ডিয়া’ এবং ‘ল্যান্ড অফ দ্য বুদ্ধ’ অভিযানের মাধ্যমে সারা বিশ্বের পর্যটকদের আকর্ষণ করা হচ্ছে। ভারতকে বিশ্বমানের পর্যটন এবং সুস্থতার কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার প্রয়াস নেওয়া হচ্ছে।
বন্ধুগণ,
হোটেল শিল্প এবং পরিবহন ক্ষেত্র ছাড়াও যখন আমরা পর্যটন নিয়ে কথা বলি, তাহলে দেখা যাবে অন্যান্য ক্ষেত্রেও নতুন নতুন সুযোগ আছে। সেইজন্য আমি বলব স্বাস্থ্য পর্যটনে বেশি করে বিনিয়োগ করতে এবং এই সুযোগের সদ্বব্যবহার করতে। যোগা এবং সুস্থতা পর্যটনের সম্ভাবনার পূর্ণ সদ্ব্যবহার করতে হবে। শিক্ষা পর্যটনেও আমাদের অনেক সুযোগ আছে। আমি চাই এই নিয়ে আরও আলোচনা হোক এবং এই লক্ষ্যে একটি ভালো পথচিত্র নিয়ে আমাদের এগোনো উচিত।
বন্ধুগণ,
উদ্ভাবনে লগ্নির দ্বারাই দেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারিত হয়। কৃত্রিম মেধা ভারতীয় অর্থনীতিতে বহু লক্ষ কোটি টাকা বৃদ্ধি ঘটাতে পারে, সেইজন্য এই লক্ষ্যে আমাদের দ্রুত এগিয়ে যেতে হবে। এবারের বাজেটে ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে এআই চালিত শিক্ষা এবং গবেষণার জন্য। কৃত্রিম মেধার ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে ভারত ন্যাশনাল লার্জ ল্যাঙ্গুয়েজ মডেলও গঠন করবে। এইলক্ষ্যে আমাদের বেসরকারি ক্ষেত্রকে বিশ্বের মধ্যে একধাপ এগিয়ে থাকা প্রয়োজন। বিশ্ব অপেক্ষা করছে একটি আস্থাভাজন, সুরক্ষিত, গণতান্ত্রিক দেশের জন্য, যারা কৃত্রিম মেধায় অর্থনৈতিক সমাধান ঘটাতে পারবে। বর্তমানে আপনারা যত এতে লগ্নি করবেন, ভবিষ্যতে আপনারা তত সুবিধা ভোগ করবেন।
বন্ধুগণ,
বর্তমানে ভারত সারা বিশ্বে তৃতীয় বৃহত্তম স্টার্টআপ কেন্দ্র। স্টার্টআপ-এর প্রসারে এই বাজেটে সরকার একাধিক পদক্ষেপ নিয়েছে। ১ লক্ষ কোটি টাকার তহবিল গঠন করা হয়েছে গবেষণা ও উদ্ভাবনের প্রসারে। এতে নতুন নতুন ক্ষেত্রে বিনিয়োগ বাড়বে। আইআইটি এবং আইআইএসসি-তে ১০ হাজার ফেলোশিপের সংস্থান রাখা হয়েছে। এতে গবেষণার প্রসার ঘটবে। মেধাবী যুবাদের সুযোগ মিলবে। ন্যাশনাল জিও-স্পেশিয়াল মিশন এবং ন্যাশনাল রিসার্চ ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে উদ্ভাবন গতি পাবে। গবেষণা এবং উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে ভারতকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে আমাদের সকলকে একসঙ্গে প্রত্যেকটি স্তরে কাজ করতে হবে।
বন্ধুগণ,
জ্ঞান ভারতম মিশন, আমার আশা আপনারা কথাটি আগে শুনেছেন। জ্ঞান ভারতম মিশনের মাধ্যমে ভারতের সমৃদ্ধ পুঁথির ঐতিহ্য সংরক্ষণের ঘোষণা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই কর্মসূচিতে ১ কোটির বেশি পাণ্ডুলিপি ডিজিটাইজ করা হয়েছে। এরপরে একটি ন্যাশনাল ডিজিটাল রিপোজিটরি তৈরি করা হবে যাতে সারা বিশ্বের বিদ্বান ও গবেষকরা ভারতের ঐতিহাসিক প্রাচীন জ্ঞান এবং প্রজ্ঞা সম্পর্কে জানতে পারেন। সরকার একটি ন্যাশনাল জিন ব্যাঙ্ক তৈরি করছে ভারতের উদ্ভিদের জিন সংরক্ষণে। এই উদ্যোগের লক্ষ্য আগামী প্রজন্মের জন্য জিনের উৎস এবং খাদ্য নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা। এই ধরনের প্রয়াসের সীমা আমাদের বাড়াতে হবে। এই প্রয়াসে বিভিন্ন সংস্থা এবং ক্ষেত্রকে অংশ নিতে হবে।
বন্ধুগণ,
এই ফেব্রুয়ারিতেই ভারতীয় অর্থনীতি নিয়ে আন্তর্জাতিক মুদ্রা ভাণ্ডারের পর্যবেক্ষণ দেখতে পেয়েছি। এই রিপোর্ট অনুযায়ী ২০১৫ থেকে ২০২৫-এর মধ্যে ১০ বছরে ভারতীয় অর্থনীতির বৃদ্ধি হয়েছে ৬৬ শতাংশ হারে। ভারত এখন ৩.৮ ট্রিলিয়ন ডলার অর্থনীতির দেশ। সেইদিন আর বেশি দূরে নয়, যখন ভারত ৫ ট্রিলিয়ন ডলার অর্থনীতি হয়ে উঠবে। আমাদের সঠিক পথে এগোতে হবে। সঠিক লগ্নি করে এই পথেই আমাদের অর্থনীতিকে বাড়াতে হবে। বাজেট ঘোষণার রূপায়ণ এতে বড় ভূমিকা নেবে। আপনাদের সকলেরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে। 
আপনাদের সকলকে আমার শুভেচ্ছা। আমার বিশ্বাস গত কয়েক বছরে বাজেট ঘোষণার মাধ্যমে আমরা সেই প্রথা ভাঙতে পেরেছি, যেখানে বলা হত আপনারা আপনাদের কাজ করুন, আমরা আমাদের কাজ করি। বাজেট তৈরি হওয়ার আগে আমরা আপনাদের সঙ্গে বসি, এমনকি বাজেট তৈরি হওয়ার পরেও, এমনকি ঘোষণার পরেও আমরা আপনাদের সঙ্গে বসি কিভাবে রূপায়ণ করা যায় সেই কথা নিয়ে আলোচনা করতে। মনে হয়, মানুষের এই অংশগ্রহণের মডেলটি বিরল এবং আমি খুশি যে, এই আলোচনার ব্যাপারটি প্রতি বছরই ক্রমশ বাড়ছে, মানুষ উৎসাহের সঙ্গে যোগ দিচ্ছে। প্রত্যেকেই মনে করছে যে, বাজেটের আগে যা নিয়ে আলোচনা করছি সেটি অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ, বাজেটের পরে রূপায়ণের উপকারিতা নিয়ে আলোচনা করার থেকে। আমি নিশ্চিত এই সম্মিলিত আলোচনা আমাদের স্বপ্ন পূরণে বড় ভূমিকা নেবে, ১৪০ কোটি দেশবাসীর স্বপ্ন। আপনাদের সকলকে আমার অনেক অনেক শুভেচ্ছা।
ধন্যবাদ।
প্রধানমন্ত্রীর মূল ভাষণটি হিন্দিতে।

 

SC/AP/CS