নতুন দিল্লি, ৩ মার্চ, ২০২৫
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আজ গুজরাটের গির জাতীয় উদ্যান সফর করেন। সেখানে তিনি জাতীয় বন্যপ্রাণী পর্ষদের সপ্তম বৈঠকে পৌরোহিত্য করেন।
বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ নিয়ে সরকারের গৃহীত বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়ে পর্ষদের বৈঠকে পর্যালোচনা করা হয়। বাঘ, হাতি, স্নো লেপার্ড সহ বিভিন্ন প্রাণীকে ঘিরে প্রকল্প ভিত্তিক সংরক্ষিত নতুন এলাকা গড়ে তোলার সাফল্যের দিকগুলোকে বৈঠকে তুলে ধরা হয়। পর্যদের বৈঠকে ডলফিন এবং এশিয়াটিক সিংহ তথা ভারতীয় সিংহের সংরক্ষণকে ঘিরে নানা প্রয়াস নিয়েও আলোচনা হয়। সেইসঙ্গে আন্তর্জাতিক বিগ ক্যাট জোট স্থাপন নিয়েও আলোচনা হয়।
দেশজুড়ে এই প্রথম নদী ভিত্তিক ডলফিন গণনার রিপোর্ট প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী। এতে দেখা যায়, দেশে মোট ৬ হাজার ৩২৭টি ডলফিন রয়েছে। ৮টি রাজ্যে ২৮টি নদীতে এই গণনা চালানো হয়। ৮ হাজার ৫০০ কিলোমিটার বিস্তৃত দীর্ঘ নদী পথে এই সমীক্ষা চালাতে ৩ হাজার ১৫০টি শ্রমদিবস সৃষ্টি হয়েছে। উত্তরপ্রদেশে এই ডলফিনের সংখ্যা সর্বাধিক। এর পরের স্থানগুলিতে যথাক্রমে রয়েছে বিহার, পশ্চিমবঙ্গ এবং আসাম।
প্রধানমন্ত্রী ডলফিন সংরক্ষণে সচেতনতা গড়ে তোলার গুরুত্বের উপর আলোকপাত করে গ্রামীণ এলাকার স্থানীয় মানুষদেরকে এই কাজে যুক্ত করতে বলেছেন। ছাত্রছাত্রীদের ডলফিন বসতিপূর্ণ এলাকাগুলি ঘুরে দেখানোরও পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী জুনাগড়ে বন্যপ্রাণীদের জন্য জাতীয় রেফারেল সেন্টারের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। বন্যপ্রাণীদের স্বাস্থ্য এবং রোগ সংক্রান্ত নানা ব্যবস্থাপনা নিয়ে প্রশাসনিক সমন্বয়ের একটি হাব হিসেবে কাজ করবে এই কেন্দ্র।
প্রতি ৫ বছর অন্তর এশিয়াটিক সিংহের সংখ্যা গণনা করা হয়। ২০২০ সালে শেষবার এই গণনা হয়েছিল। ২০২৫ সালে এই গণনার ষোড়শ সাইকেল শুরুর ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রাকৃতিক কারণেই স্থানচ্যুত এশিয়াটিক সিংহরা বর্তমানে বারদা বন্যপ্রাণ অভয়ারণ্যের সংরক্ষিত এলাকাকে নিজেদের আবাসস্থল হিসেবে বেছে নিয়েছে। এই এলাকাকে সিংহ সংরক্ষণের জন্য সুগম করে তুলতে বারদায় অনুকূল বাতাবরণ গড়ে তোলার উপর জোর দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। বন্যপ্রাণী আবাসস্থল সংরক্ষণ এবং উন্নয়নকে ঘিরে প্রাকৃতিক পর্যটনের গুরুত্বের উপরেও জোর দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এক্ষেত্রে ভ্রমণের স্বাচ্ছন্দ্য এবং যোগাযোগ গড়ে তোলার দরকার।
মানব-বন্যপ্রাণী সংঘর্ষ নিরসনে উপযুক্ত ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে কোয়েম্বাটোরে এসএসসিওএন (সালিম আলি সেন্টার ফর অরনিথোলজি অ্যান্ড ন্যাচারাল হিস্ট্রি)-তে উৎকৃষ্টমানের ওয়াইল্ড লাইফ ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডিয়া গড়ে তোলার ঘোষণা করেন তিনি। এই কেন্দ্রটি রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলিকে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি সহায়তা দিয়ে বিপদ দূর করতে কার্যকরী ব্যবস্থা নেবে। এক্ষেত্রে বন্যপ্রাণীদের চলাচলের দিক নির্ণয়ের জন্য প্রয়োজনীয় যান্ত্রিক সহায়তা, পূর্ব সতর্কীকরণ ব্যবস্থা থাকবে। মানব-বন্যপ্রাণী সংঘর্ষের হট স্পটগুলিকে চিহ্নিত করে যাতে কোনোরকম অনুপ্রবেশ না ঘটে সেজন্য নজরদারি বজায় রাখতে ক্ষেত্র কর্মীদের দক্ষতা বৃদ্ধি এবং এই সংঘর্ষ দূরীকরণে বিশেষজ্ঞদের যুক্ত করতে তা কাজ করবে।
প্রধানমন্ত্রী দাবানল বা মানুষে-পশুতে সংঘর্ষের বিষয়টি নিরসনে দূরনিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থা, কৃত্রিম মেধা এবং মেশিন লার্নিং সহ ভূসমলয় ম্যাপিং-এর উপর জোর দিয়েছেন। এক্ষেত্রে ওয়াইল্ড লাইফ ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডিয়াকে ভাস্করাচার্য ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর স্পেস অ্যাপ্লিকেশনস অ্যান্ড জিও ইনফরমেটিক্স (বিআইএসএজি-এন)-এর সঙ্গে নিরন্তর যোগাযোগ রক্ষা করার পরামর্শ দিয়েছেন।
অত্যন্ত সংবেদনশীল সংরক্ষিত এলাকাগুলিতে দাবানলের ঘটনা যাতে না ঘটে সেজন্য পূর্ব নির্ণয়, প্রতিরোধ এবং নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে জোর দেওয়ার পাশাপাশি নিয়মিত নজরদারি চালানো ও পরামর্শ গ্রহণের জন্য দেরাদুনের ভারতীয় বন সর্বেক্ষণ কেন্দ্র এবং বিআইএসএজি-এন -এর মধ্যে উপগ্রহ প্রযুক্তির মাধ্যমে নিয়মিত সমন্বয় বজায় রাখতেও পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
মধ্যপ্রদেশের গান্ধীসাগর সংরক্ষিত এলাকা এবং গুজরাটের বান্নি তৃণভূমি চিতার বসবাস এলাকা হিসেবে প্রসারিত করার ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী।
ব্যাঘ্র সংরক্ষিত এলাকার বাইরেও বাঘেদের সংরক্ষণ যাতে করা যায় সেদিকে তাকিয়ে প্রধানমন্ত্রী একটি প্রকল্পের ঘোষণাও করেছেন। স্থানীয় অধিবাসীদের সঙ্গে সহাবস্থানের উপযুক্ত পরিবেশ গড়ে তুলতে কোনো আক্রমণকারীর বিপদ এড়াতে এবং বাঘে-মানুষের সংঘর্ষ নিরসনে তারা সবসময় সজাগ ও সচেতন ও সক্রিয় থাকবে।
ঘড়িয়ালের সংখ্যা ক্রমাগত হ্রাস পাওয়ার দিকটিকে চিহ্নিত করে ঘড়িয়াল সংরক্ষণের বিষয়টিকে নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রী তাদের সংরক্ষণের জন্য একটি নতুন প্রকল্পের কথা ঘোষণা করেন।
গ্রেট ইন্ডিয়ান বাস্টার্ডদের সংরক্ষণে গৃহীত প্রয়াসের প্রশংসা করেন প্রধানমন্ত্রী। এক্ষেত্রে সংরক্ষণ প্রয়াসকে আরও জোরদার করতে ন্যাশনাল গ্রেট ইন্ডিয়ান বাস্টার্ড সংরক্ষণ কর্মপরিকল্পনার কথা ঘোষণা করেন তিনি।
পর্যালোচনা বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী পর্ষদ ও বন মন্ত্রককে প্রথাগত জ্ঞান আহরণে এবং ভারতের বিভিন্ন এলাকা থেকে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ব্যবস্থাপনা নিয়ে পু্ঁথি সংগ্রহের পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি ভারতীয় কালো ভালুক, ঘড়িয়াল এবং গ্রেট ইন্ডিয়ান বাস্টার্ড সংরক্ষণে টাস্কফোর্স গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন। সেইসঙ্গে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের একটি নকশাও প্রস্তুত করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সিংহ এবং লেপার্ড সংরক্ষণে গির সাফল্যের কীর্তি রচনা করেছে। অন্যান্য জাতীয় উদ্যান এবং সংরক্ষিত এলাকায় কৃত্রিম মেধার সাহায্য নিয়ে গিরের প্রথাগত জ্ঞানকে কাজে লাগানোর তিনি পরামর্শ দেন।
পরিযায়ী প্রাণী এবং বন্যপ্রাণীদের (সিএমএস) জন্য রাষ্ট্রসঙ্ঘের অধীন সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় আরও জোরদার করার পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। কমিউনিটি সংরক্ষণের সংখ্যা ভারতে ৬ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বনাঞ্চলগুলিতে ঔষধি গাছের প্রকৃত ডকুমেন্টেশন এবং গবেষণার পরামর্শ দিয়েছেন। এই ঔষধি গাছ জীবজন্তুদের স্বাস্থ্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বিশ্বস্তরেও এই ঔষধি গাছের ব্যবহার প্রসারেরও সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করেন তিনি।
পর্ষদের বৈঠকের পর প্রধানমন্ত্রী প্রথম সারির বন কর্মীদের চলাচলের সুবিধার জন্য মোটর সাইকেল যাত্রার সূচনা করেন। তিনি গিরের ক্ষেত্রকর্মী, গাইড এবং নানা স্তরের কর্মীদের সঙ্গে কথাবার্তাও বলেন।
SC/AB/SKD