Search

পিএমইন্ডিয়াপিএমইন্ডিয়া

সাম্প্রতিক সংবাদ

বিষয়টিকে সরাসরি পিআইবি থেকে নেওয়া হয়েছে

প্যারিসে ভারত – ফ্রান্স সিইও ফোরামে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের বঙ্গানুবাদ

প্যারিসে ভারত – ফ্রান্স সিইও ফোরামে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের বঙ্গানুবাদ


নয়াদিল্লি, ১১ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

 

মহামান্য প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রঁ,

এখানে উপস্থিত ভারত ও ফ্রান্সের শিল্প নেতৃবৃন্দ,

নমস্কার, বঁ জুর

এখানে এসে আমি অসাধারণ উৎসাহ, উত্তেজনা ও উদ্দীপনা অনুভব করছি। এটা আর পাঁচটা ব্যবসায়িক সম্মেলনের মতো নয়।

এখানে ভারত ও ফ্রান্সের শ্রেষ্ঠ ব্যবসায়িক মননের সম্মিলন ঘটেছে। এইমাত্র সিইও ফোরামের যে প্রতিবেদন পেশ করা হ’ল, তাকে স্বাগত জানাই।

আপনারা সবাই উদ্ভাবন, সহযোগিতা ও উত্তরণের মন্ত্র নিয়ে এগিয়ে চলেছেন। আপনাদের মধ্যে কেবল বোর্ড রুমের সংযোগই স্থাপিত হচ্ছে না, আপনারা ভারত ও ফ্রান্সের কৌশলগত অংশীদারিত্বকে আরও মজবুত করছেন।

বন্ধুগণ,

আমার বন্ধু প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রঁর সঙ্গে এই ফোরামে যোগ দিতে পেরে আমার খুব ভালো লাগছে। গত দু’বছরের মধ্যে এটি আমাদের ষষ্ঠ বৈঠক। গত বছর আমাদের সাধারণতন্ত্র দিবসের প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রঁ প্রধান অতিথি ছিলেন।

আজ সকালে আমরা একসঙ্গে এআই অ্যাকশন সামিটে পৌরহিত্য করেছি। এই সফল সামিটের জন্য আমি প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রঁ’কে আন্তরিক অভিনন্দন জানাই।

বন্ধুগণ,

ভারত ও ফ্রান্স শুধুমাত্র গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের যোগসূত্রেই বাধা নয়। সুগভীর আস্থা, উদ্ভাবন এবং জনকল্যাণের চেতনার মধ্যে আমাদের বন্ধুত্বের ভিত্তি নিহিত রয়েছে।

আমাদের অংশীদারিত্ব কেবল দুটি দেশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। বিশ্ব সমস্যা ও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলাতেও আমরা পরস্পরকে সহযোগিতা করছি। আমার গতবারের ফ্রান্স সফরের সময় আমরা আমাদের অংশীদারিত্বের ২০৪৭ রোডম্যাপের রূপরেখা দিয়েছিলাম। সেই পথ অনুসরণ করে আমরা প্রতিটি ক্ষেত্রে সার্বিক সহযোগিতায় আবদ্ধ রয়েছি।

বন্ধুগণ,

আপনাদের বেশিরভাগ কোম্পানী ভারতে কাজ করে। আকাশপথ, বন্দর, প্রতিরক্ষা, ইলেক্ট্রনিক্স, ডেয়ারী, রাসায়নিক, ভোগ্যপণ্য বিভিন্ন ক্ষেত্রেই আপনারা সক্রিয় রয়েছেন।

আমি ভারতেও অনেক সিইও-র সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পেয়েছি। গত এক দশকে ভারতে যেসব পরিবর্তন এসেছে, সে সম্পর্কে আপনারা ওয়াকিবহাল। আমরা সুস্থিত ও বাস্তবোচিত এক নীতি পরিমণ্ডল গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছি।

রিফর্ম, পারফর্ম অ্যান্ড ট্রান্সফর্মের পথ ধরে এগিয়ে ভারত আজ বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতি হয়ে উঠেছে। বৃহৎ অর্থনীতিগুলির মধ্যে ভারতই আজ বিশ্বের দ্রুততম বিকাশশীল অর্থনীতি।

খুব শীঘ্রই ভারত বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতিতে পরিণত হবে। এখানকার দক্ষ তরুণ প্রতিভা এবং উদ্ভাবনী চেতনাই বিশ্ব মঞ্চে আমাদের অভিজ্ঞান।

ভারত বর্তমানে অতিদ্রুত বিশ্ব বিনিয়োগের পছন্দের গন্তব্যস্থানে পরিণত হচ্ছে।

ভারতে আমরা এআই, সেমিকন্ডাক্টর এবং কোয়ান্টাম মিশনের সূচনা করেছি। প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে আমরা ‘মেক ইন ইন্ডিয়া অ্যান্ড মেক ফর দ্য ওয়ার্ল্ড’ নীতিকে উৎসাহ দিচ্ছি। আপনারা অনেকেই এর সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। মহাকাশ প্রযুক্তিতে আমরা নতুন উচ্চতা স্পর্শ করছি। এই ক্ষেত্রটি প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে। ভারতকে বিশ্বের জৈব প্রযুক্তি কেন্দ্রে পরিণত করার লক্ষ্যেও আমরা দ্রুত অগ্রসর হচ্ছি।

পরিকাঠামো উন্নয়নকে আমরা বিশেষ অগ্রাধিকার দিচ্ছি। এর জন্য আমরা বার্ষিক ১১৪ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি সরকারি খরচ করছি। প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে বিপুল মাত্রায় নতুন রেল লাইন পাতা হচ্ছে। রেলের আধুনিকীকরণ দ্রুতগতিতে এগোচ্ছে।

২০৩০ সালের মধ্যে ৫০০ গিগাওয়াট পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি উৎপাদনের লক্ষ্য অর্জনে আমরা সচেষ্ট। এজন্য আমরা সোলার সেল উৎপাদনে উৎসাহ দিচ্ছি। আমরা বিরল খনিজ মিশনও চালু করেছি।

হাইড্রোজেন মিশনেরও সূচনা হয়েছে। এক্ষেত্রে ইলেক্ট্রোলাইজার উৎপাদনের উপর বিশেষ জোর দেওয়া হচ্ছে। ২০৪৭ সালের মধ্যে ১০০ গিগাওয়াট পরমাণু শক্তি উৎপাদনের লক্ষ্য আমরা নিয়েছি। আপনাদের জানাতে আমার ভালো লাগছে যে, এই ক্ষেত্রটি বেসরকারি সংস্থার জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে। আমরা এসএমআর এবং এএমআর প্রযুক্তির উপরও বিশেষ জোর দিচ্ছি।

বন্ধুগণ,

ভারত আজ বৈচিত্র্যকরণ ও ঝুঁকি হ্রাসের বৃহত্তম কেন্দ্রে পরিণত হচ্ছে। মাত্র কয়েকদিন আগে আমাদের বাজেটে বেশ কিছু নতুন প্রজন্মের সংস্কারের কথা ঘোষণা করা হয়েছে।

ব্যবসা সহায়ক পরিবেশ গড়ে তুলতে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। গত কয়েক বছরে আমরা ৪০ হাজারেরও বেশি বাধ্যতামূলক বিধি পালনকে সহজ করে তুলেছি। আস্থা-ভিত্তিক অর্থনৈতিক শাসন প্রতিষ্ঠায় বিধি সংক্রান্ত সংস্কারের লক্ষ্যে একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করা হয়েছে। সীমাশুল্ক কাঠামোরও সংস্কারসাধন করে সেটিকে যুক্তিযুক্ত করা হয়েছে।

আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের প্রসারে ডিজিটাল গণপরিকাঠামোর সহযোগিতায় ‘ইন্ডিয়া ট্রেড নেট’ গড়ে তোলা হয়েছে। জীবনযাত্রা সহজ করতে আমরা নতুন সরলীকৃত আয়কর বিধি নিয়ে আসছি।

জাতীয় ম্যানুফ্যাকচারিং মিশনের ঘোষণা করা হয়েছে। বীমার মতো নতুন ক্ষেত্রগুলিকে ১০০ শতাংশ প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। আপনারা এ সংক্রান্ত সরকারি উদ্যোগগুলি ভালো করে খতিয়ে দেখবেন।

আমি আপনাদের বলছি, এটাই হ’ল ভারতে আসার উপযুক্ত সময়। প্রত্যেকের অগ্রগতি, ভারতের অগ্রগতির সঙ্গে সংযুক্ত। এর একটা উদাহরণ আপনারা বিমান পরিবহণ ক্ষেত্রে দেখতে পাবেন, যখন ভারতীয় সংস্থাগুলি বিমানের বিশাল বরাত দিতে শুরু করবে। আমরা ১২০টি নতুন বিমানবন্দর নির্মাণ করতে চলেছি। আপনাদের সামনে কি অসীম সম্ভাবনা রয়েছে, তা বুঝে নিন।

বন্ধুগণ,

ভারতের ১৪০ কোটি মানুষ ২০৪৭ সালের মধ্যে বিকশিত ভারত গঠনের সংকল্প নিয়েছে। প্রতিরক্ষা বা অত্যাধুনিক প্রযুক্তি, আর্থিক প্রযুক্তি বা ওষুধ ক্ষেত্র, কারিগরি বা বস্ত্র ক্ষেত্র, কৃষি বা বিমান পরিবহণ, স্বাস্থ্য বা সড়ক, মহাকাশ বা সুস্থিত উন্নয়ন – যে কোনও ক্ষেত্রেই আপনাদের সামনে বিনিয়োগ ও সহযোগিতার বিপুল সুযোগ রয়েছে।

ভারতের এই উন্নয়ন যাত্রায় শরিক হতে আপনাদের সবাইকে স্বাগত জানাই।

ফ্রান্সের সূক্ষ্মতার সঙ্গে ভারতের মাত্রার যোগ হলে …

ভারতের গতির সঙ্গে ফ্রান্সের নির্ভুলতা যোগ হলে ….

ফ্রান্সের প্রযুক্তির সঙ্গে ভারতের প্রতিভার সংযোগ ঘটলে …

শুধু ব্যবসার চালচিত্রই নয়, গোটা বিশ্বের রূপান্তর ঘটে যাবে।

আপনাদের বহুমূল্য সময় আপনারা দিয়েছেন বলে আরও একবার আপনাদের সকলকে ধন্যবাদ জানাই।

(প্রধানমন্ত্রীর মূল ভাষণটি হিন্দিতে ছিল)

 

SC/SD/SB