নয়াদিল্লি, ১১ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫
প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী আজ ভিডিও বার্তার মাধ্যমে ভারত শক্তি সপ্তাহ ২০২৫ – এ ভাষণ দিয়েছেন। যশোভূমিতে সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী জোর দিয়ে বলেন, এই শক্তি সপ্তাহে অংশগ্রহণকারীরা কেবলমাত্র এই অনুষ্ঠানের অংশ নন, তাঁরা শক্তি ক্ষেত্রে ভারতের স্বপ্ন পূরণে অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। তিনি অংশগ্রহণকারী সকলকে এবং দেশ-বিদেশের সম্মানীয় অতিথিদের উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান। তিনি এই অনুষ্ঠানে তাঁদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কথাও তুলে ধরেন।
বিশ্বব্যাপী বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একবিংশ শতাব্দী ভারতের, সেকথা তুলে ধরে শ্রী মোদী বলেন, ভারত কেবল নিজের উন্নতি নয়, বরং সমগ্র বিশ্বের উন্নয়নের লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছে এবং এক্ষেত্রে জ্বালানী ক্ষেত্র গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, জ্বালানী বিষয়ে ভারতের উচ্চাকাঙ্ক্ষা ৫টি বিষয়ের উপর নির্মিত হয়েছে। সেগুলি হ’ল – সম্পদের সদ্ব্যবহার, উদ্ভাবনের বিষয়টিতে মেধাবীদের উৎসাহিত করা, অর্থনৈতিক শক্তি, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও কৌশলগত ভৌগোলিক পরিস্থিতি। এইসব কিছু জ্বালানী ক্ষেত্রকে বাণিজ্যিকভাবে আকর্ষণীয় ও সহজ করে তোলে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই বিষয়গুলি জ্বালানী ক্ষেত্রে ভারতের জন্য নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি করছে।
আগামী দু’দশক উন্নত ভারত গড়ে তোলার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আগামী ৫ বছরে বেশ কিছু মাইলফলক অর্জন করা হবে। তিনি বলেন, জ্বালানী ক্ষেত্রে ভারতের অনেক লক্ষ্য ২০৩০ সালের সময়সীমার সঙ্গে সম্পর্ক-যুক্ত। এর মধ্যে রয়েছে – পুনর্নবীকরণযোগ্য জ্বালানী ক্ষমতা ৫৫০ গিগাওয়াট পর্যন্ত বৃদ্ধি, ভারতীয় রেলের জন্য কার্বন নিঃসরণ শূন্য করার লক্ষ্যমাত্রা অর্জন এবং বার্ষিক ৫ মিলিয়ন মেট্রিক টন গ্রিন হাইড্রোজেন উৎপাদনের লক্ষ্য পূরণ। শ্রী মোদী বলেন, এই লক্ষ্যগুলিকে উচ্চাকাঙ্ক্ষী বলে মনে হতে পারে। তবে, গত দশকের বিভিন্ন সাফল্য এই আত্মবিশ্বাস তৈরি করেছে যে, ভারতের জন্য এই লক্ষ্যগুলিও অর্জন করা সম্ভব।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “গত দশকে ভারত দশম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ থেকে পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশে উন্নীত হয়েছে”। গত ১০ বছরে ভারতের সৌরশক্তি উৎপাদন ক্ষমতা ৩২ গুণ বেড়েছে, যা ভারতকে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম সৌরশক্তি উৎপাদনকারী দেশ হিসেবে গড়ে তুলেছে। তিনি বলেন, ভারতের জীবাশ্ম জ্বালানী ছাড়া জ্বালানী উৎপাদন ক্ষমতা তিনগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং ভারত প্যারিস চুক্তি লক্ষ্য অর্জনকারী প্রথম জি-২-০ দেশ। ইথানল মিশ্রণে ভারতের সাফল্যের উপর জোর দেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, এই ক্ষেত্রে বর্তমান হার ১৯ শতাংশ। বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয়, কৃষকদের রাজস্ব উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস এবং কার্বনডাই অক্সাইড নির্গমন বিশেষভাবে হ্রাস পেয়েছে। প্রধানমন্ত্রী ২০২৫ সালের মধ্যে ২০ শতাংশ ইথানল ম্যান্ডেট অর্জনের জন্য ভারত যে লক্ষ্যমাত্রা স্থির করেছে, তার উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, প্রথম জি-২০ দেশ হিসেবে সভাপতিত্বের সময় আন্তর্জাতিক জৈব জ্বালানী জোট প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। ক্রমাগত এটির এখন সম্প্রসারণ হচ্ছে। বর্তমানে ২৮টি দেশ এবং ১২টি আন্তর্জাতিক সংস্থা এর সঙ্গে যুক্ত রয়েছে। এই জোট বর্জ্যকে সম্পদে রূপান্তরিত করেছে এবং উৎকর্ষ কেন্দ্র স্থাপন করেছে বলেও শ্রী মোদী মন্তব্য করেন।
ভারত তার হাইড্রো কার্বন সম্পদের সম্ভাবনা সম্পূর্ণভাবে খুঁজে দেখার জন্য ক্রমাগত যে সংস্কার চালাচ্ছে, সেকথা উল্লেখ করে শ্রী মোদী বলেন, বড় বড় আবিষ্কার এবং গ্যাস পরিকাঠামোর ব্যাপক সম্প্রসারণ এই খাতে উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। ভারত বর্তমানে চতুর্থ বৃহত্তম পরিশোধন কেন্দ্র।
ভারতের পাললিক অববাহিকায় অসংখ্য হাইড্রোকার্বন সম্পদ রয়েছে, যার মধ্যে কিছু কিছু ইতিমধ্যেই চিহ্নিত করা হয়েছে। অন্যগুলি অনুসন্ধানের কাজ চলছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার একটি এক জানালা ছাড়পত্র ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেছে। তৈল ক্ষেত্রকে নিয়ন্ত্রণ ও উন্নয়ন ছাড়াও অংশীদারদের নীতিগত স্থিতিশীলতা বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। প্রধানমন্ত্রী জোর দিয়ে বলেন, বিভিন্ন সংস্কার সামুদ্রিক ক্ষেত্রে তেল ও গ্যাস সম্পদ অনুসন্ধানকে সহজতর করে তুলবে, উৎপাদন বাড়াবে এবং কৌশলগত পেট্রোলিয়াম মজুত বজায় রাখবে।
প্রধানমন্ত্রী জোর দিয়ে বলেন, ভারতের বেশ কিছু আবিষ্কার এবং পাইপলাইন পরিকাঠামো সম্প্রসারণের ফলে প্রাকৃতিক গ্যাস সরবরাহ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর ফলে, অদূর ভবিষ্যতে প্রাকৃতিক গ্যাসের ব্যবহার বৃদ্ধি পাবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই ক্ষেত্রগুলিতে বিনিয়োগের অসংখ্য সুযোগ রয়েছে।
শ্রী মোদী বলেন, “ভারতের প্রধান লক্ষ্য ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ এবং ‘স্থানীয় সরবরাহ-শৃঙ্খল’। ভারতে পিভি মডিউল সহ বিভিন্ন ধরনের হার্ডওয়্যার তৈরির বিশেষ সম্ভাবনার কথা তিনি তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারত স্থানীয় উৎপাদনকে সমর্থন করছে। গত ১০ বছরে সৌর পিভি মডিউল উৎপাদন ক্ষমতা ২ গিগাওয়াট থেকে বেড়ে প্রায় ৭০ গিগাওয়াটে পৌঁছেছে। পিএলআই প্রকল্পটি এই ক্ষেত্রকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলছে এবং উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন সৌর পিভি মডিউল তৈরির বিষয়টি প্রচারও করছে।
ব্যাটারি এবং স্টোরেজ ক্ষমতা ক্ষেত্রে উদ্ভাবন ও উৎপাদনের উল্লেখযোগ্য সুযোগগুলি তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারত দ্রুত বৈদ্যুতিক গতিশীলতার দিকে এগিয়ে চলেছে। এই ক্ষেত্রে এত বড় দেশের চাহিদা মেটাতে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ প্রয়োজন বলেও তিনি উল্লেখ করেন। চলতি বছরের বাজেটে পরিবেশ-বান্ধব জ্বালানীকে সমর্থন করে অসংখ্য ঘোষণা করা হয়েছে বলে শ্রী মোদী উল্লেখ করেন। শ্রী মোদী বলেন, সরকার বৈদ্যুতিক যানবাহন এবং মোবাইল ফোনের ব্যাটারি তৈরির সঙ্গে সম্পর্কিত বেশ কয়েকটি জিনিসকে মৌলিক শুল্ক থেকে অব্যাহতি দিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে – কোবাল্ট পাউডার, লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারির বর্জ্য, সীসা, দস্তা এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ খনিজ। জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ খনিজ পদার্থ মিশন ভারতে শক্তিশালী সরবরাহ-শৃঙ্খল তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে তিনি মন্তব্য করেন। লিথিয়াম বহির্ভূত ব্যাটারি বাস্তুতন্ত্র প্রচারের বিষয়টিও তুলে ধরেন তিনি। জ্বালানী ক্ষেত্রে প্রতিটি বিনিয়োগ এবং চলতি বছরের বাজেটে শক্তি ক্ষেত্রকে গুরুত্ব দেওয়ার বিষয়টি তরুণদের জন্য নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করছে এবং পরিবেশ-বান্ধব চাকরির ব্যবস্থাও করছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “ভারতের জ্বালানী ক্ষেত্রকে শক্তিশালী করার জন্য সরকার জনগণের ক্ষমতায়ন করছে”। সাধারণ পরিবার ও কৃষকদের জ্বালানী সরবরাহ করা হচ্ছে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী সূর্যঘর বিনামূল্যে বিদ্যুৎ প্রকল্পটি গত বছর চালু করা হয়েছিল। এর পরিধি কেবল জ্বালানী উৎপাদনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। এই প্রকল্প সৌর ক্ষেত্রে নতুন দক্ষতা তৈরি করছে এবং বিনিয়োগের সুযোগ বৃদ্ধি করছে।
পরিশেষে প্রধানমন্ত্রী ভারতের শক্তি সমাধান প্রদানের ক্ষেত্রে প্রতিশ্রুতির কথা পুনর্ব্যক্ত করেন। প্রকৃতিকে সমৃদ্ধ করার ক্ষেত্রে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে তিনি মন্তব্য করেন। শক্তি সপ্তাহ এই লক্ষ্যে সুনির্দিষ্ট ফলাফল আনবে বলেও আশা প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি সকলকে ভারতে উদ্ভূত প্রতিটি সম্ভাবনা অন্বেষেণের জন্য উৎসাহিত করেন ও সকল অংশগ্রহণকারীদের শুভেচ্ছা জানান।
SC/PM/SB
Sharing my remarks at the @IndiaEnergyWeek. https://t.co/LR166lIqyF
— Narendra Modi (@narendramodi) February 11, 2025