Search

পিএমইন্ডিয়াপিএমইন্ডিয়া

সাম্প্রতিক সংবাদ

বিষয়টিকে সরাসরি পিআইবি থেকে নেওয়া হয়েছে

আইএনএস সুরাট, আইএনএস নীলগিরি এবং আইএনএস বাঘশীরকে নৌ-বাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত করার অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ

আইএনএস সুরাট, আইএনএস নীলগিরি এবং আইএনএস বাঘশীরকে নৌ-বাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত করার অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ


নয়াদিল্লি, ১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ 

 

মহারাষ্ট্রের রাজ্যপাল সি পি রাধাকৃষ্ণণজি, রাজ্যের জনপ্রিয় মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়নবিশজি, কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় আমার প্রবীণ সহকর্মী শ্রী রাজনাথ সিংজি, শ্রী সঞ্জয় শেঠজি, মহারাষ্ট্রের দুই উপ-মুখ্যমন্ত্রী শ্রী একনাথ শিন্ডেজি, শ্রী অজিত পাওয়ারজি, সিডিএস, সিএনএস, নৌ-বাহিনীর বন্ধুগণ, মাঝগাঁও ডকইয়ার্ডের সহকর্মীরা, অনুষ্ঠানে উপস্থিত অতিথিবৃন্দ, ভদ্রমহোদয়া ও ভদ্রমহোদয়গণ।

১৫ জানুয়ারি দিনটিকে সেনাবাহিনী দিবস হিসেবে উদযাপন করা হয়। এই উপলক্ষে যেসব বীর সেনানী দেশ রক্ষার জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন, তাঁদের শ্রদ্ধা জানাই। প্রত্যেক সাহসী পুরুষ ও মহিলা — যাঁরা ভারতমাতাকে রক্ষা করছেন, তাঁদের অভিনন্দন। 

বন্ধুগণ,

আজকের দিনটি ভারতের সমুদ্র যাত্রার ঐতিহ্যের ক্ষেত্রে একটি স্মরণীয় দিন। নৌ-বাহিনীর গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস ও আত্মনির্ভর ভারত অভিযানের জন্য এই দিনটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভারতীয় নৌ-বাহিনীকে ছত্রপতি শিবাজী মহারাজ নতুন শক্তিতে উদ্দীপিত করেন এবং নতুন পথের দিশা দেখান। আজ তাঁর পবিত্র ভূমিতে আমরা একবিংশ শতাব্দীর নৌ-বাহিনীকে শক্তিশালী করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ এক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। এই প্রথম একটি ডেসট্রয়ার, একটি ফ্রিগেট এবং একটি ডুবো জাহাজকে একসঙ্গে বাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। সবচেয়ে গর্বের বিষয় এই তিনটি নৌ-যানই ভারতে নির্মিত হয়েছে। এই উপলক্ষে আমি ভারতীয় নৌ-বাহিনী, এই নৌ-যানগুলি নির্মাণের সঙ্গে যাঁরা যুক্ত ছিলেন, সেই সকল ইঞ্জিনিয়র ও কর্মী বন্ধুদের এবং সকল দেশবাসীকে অভিনন্দন জানাই।

বন্ধুগণ,

আজকের এই অনুষ্ঠান আমাদের গৌরবোজ্জ্বল ঐতিহ্যের সঙ্গে ভবিষ্যতের উচ্চাকাঙ্ক্ষার মধ্যে মেলবন্ধন ঘটাবে। দীর্ঘ সমুদ্র যাত্রা, সমুদ্র পথে বাণিজ্য, সামুদ্রিক প্রতিরক্ষা এবং জাহাজ শিল্পের এক গুরুত্বপূর্ণ ইতিহাস আমাদের রয়েছে। সেই ইতিহাস থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে ভারত সামুদ্রিক ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ এক শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। আজকের এই অনুষ্ঠান তারই প্রতিফলন। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, আমাদের নীলগিরিকে চোল সাম্রাজ্যের সামুদ্রিক শক্তির উদ্দেশে উৎসর্গ করা হয়েছে। পশ্চিম এশিয়ার সঙ্গে গুজরাটের বিভিন্ন বন্দরের মাধ্যমে ভারতের যে যোগাযোগ গড়ে উঠেছিল, তাকে স্মরণ করবে সুরাট রণতরী। আজকের দিনে এই দুটি রণতরীর পাশাপাশি বাঘশীর ডুবো জাহাজটিকেও নৌ-বাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বছর কয়েক আগে পি-৭৫ শ্রেণীর প্রথম ডুবো জাহাজ কালভারিকে নৌ-বাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত করার সৌভাগ্য আমার হয়েছিল। আজ এ ধরনের ষষ্ঠ ডুবো জাহাজটিকে বাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত করার সুযোগও আমার কাছে এসেছে। নতুন এই সামুদ্রিক যানগুলি ভারতের নিরাপত্তা ও প্রগতির ক্ষেত্রে নতুন শক্তি যোগাবে।

বন্ধুগণ,

আজ বিশ্ব জুড়ে, বিশেষত দক্ষিণী বিশ্বে ভারতকে আস্থাশীল ও দায়িত্বশীল অংশীদার হিসেবে বিবেচনা করা হয়। সম্প্রসারণবাদ নয়, ভারত উন্নয়নের দৃষ্টিভঙ্গী নিয়ে কাজ করে। একটি মুক্ত, সুরক্ষিত, সমন্বিত এবং সমৃদ্ধ ভারত – প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের পক্ষে ভারত সোচ্চার। আর তাই, সমুদ্র তীরবর্তী দেশগুলির উন্নয়নের প্রসঙ্গ যখন আসে, ভারত তখন ‘সাগর’ মন্ত্রে এগিয়ে চলে। সাগর অর্থাৎ, এই অঞ্চলের জন্য নিরাপত্তা ও উন্নয়ন। আমরা এই মানসিকতা নিয়েই কাজ করে চলেছি। জি-২০ গোষ্ঠীর সভাপতিত্বের দায়িত্ব যখন আমাদের কাঁধে এসে পড়ে, তখন আমরা ‘এক বিশ্ব, এক পৃথিবী, এক ভবিষ্যৎ’ – এই ভাবনায় এগিয়ে চলি। সারা পৃথিবী যখন করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ক্লান্ত, তখন ‘এক বিশ্ব, এক স্বাস্থ্য’ মন্ত্র ভারত পৃথিবীকে দেয়। আমরা সারা বিশ্বকে একটি পরিবার হিসেবে বিবেচনা করি। আমরা ‘সবকা সাথ সবকা বিকাশ’ নীতিতে বিশ্বাসী। আর তাই, এই সমগ্র অঞ্চলের প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তাকে ভারত সুনিশ্চিত করতে অঙ্গীকারবদ্ধ।

বন্ধুগণ,

আন্তর্জাতিক স্তরের নিরাপত্তা, অর্থনীতি এবং ভূ-রাজনৈতিক সমীকরণের প্রেক্ষিতে ভারতের মতো একটি সমুদ্র তীরবর্তী রাষ্ট্রের জন্য যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও জ্বালানী সুরক্ষার প্রশ্নে আমাদের আঞ্চলিক জল সীমানাকে রক্ষা করতে হবে। এক্ষেত্রে সমুদ্র যাত্রায় এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের সরবরাহ-শৃঙ্খল ও নৌ-পথের সুরক্ষার বিষয়গুলিকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। জঙ্গীবাদ এবং মাদক ও অস্ত্র চোরাচালানের হাত থেকে সমগ্র অঞ্চলকে আমাদের রক্ষা করতে হবে। আর তাই, সমুদ্রের সুরক্ষার জন্য আমরা একযোগে কাজ করব। সমুদ্র পথে পণ্য চলাচল এবং জাহাজ শিল্পে দক্ষতার বৃদ্ধির জন্য আমাদের সচেষ্ট হতে হবে। বিরল মৃত্তিকা, মৎস্য সম্পদের মতো বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমাদের দক্ষতা বাড়াতে হবে। গুরুত্বপূর্ণ খনিজ উপাদান এবং মৎস্যসম্পদের অপব্যবহার ঠেকাতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ জরুরি। সমুদ্র যাত্রার ক্ষেত্রে নতুন নতুন পথ খুঁজে পাওয়ার জন্য ভারত বিনিয়োগ করছে। সমগ্র ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে আমরা অগ্রণী ভূমিকা পালন করছি। গত কয়েক মাসে আমাদের নৌ-বাহিনীর সদস্যরা শত শত মানুষের জীবন রক্ষা করেছে, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নৌ-যানগুলির কোটি কোটি টাকার সম্পদকে ক্ষতির হাত থেকে বাঁচিয়েছে। এইভাবে ভারত সারা বিশ্বের আস্থা অর্জন করছে। আপনাদের কারণেই এই আস্থা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই, আজকের এই দিনে আপনাদের সকলকে অভিনন্দন জানাই। 
ভারতীয় নৌবাহিনী ও উপকূল রক্ষী বাহিনীর প্রতি আস্থা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। আজ আপনারা দেখছেন, আসিয়ান গোষ্ঠীভুক্ত রাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, উপসাগরীয় অঞ্চল ও আফ্রিকার দেশগুলির সঙ্গে ভারতের অর্থনৈতিক সহযোগিতা প্রতিনিয়ত আরও শক্তিশালী হচ্ছে। ভারত মহাসাগর অঞ্চলে ভারতের উপস্থিতি আরও বেশি করে অনুভূত হচ্ছে। এই অঞ্চলের অন্যান্য রাষ্ট্রগুলির সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের মূল ভিত্তি এটি। আর তাই, আজকের এই অনুষ্ঠান সামরিক ও অর্থনৈতিক – দুটি দিক দিয়েই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। 

বন্ধুগণ,

একবিংশ শতাব্দীর ভারতের সামরিক দক্ষতা বৃদ্ধি করা আমাদের অগ্রাধিকারের তালিকার মধ্যে রয়েছে। আমাদের সেনাবাহিনীকে আরও আধুনিক করে তুলতে হবে। জল, স্থল, অন্তরীক্ষ, গভীর সমুদ্র অথবা মহাকাশ — সর্বত্র ভারতের স্বার্থ রক্ষা করতে হবে। এই কাজে প্রতিনিয়ত সংস্কার চলছে। চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ পদ সৃষ্টি তারই ফসল। আমাদের বাহিনী যাতে আরও দক্ষভাবে কাজ করতে পারে, তার জন্য একটি থিয়েটার কমান্ড গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

বন্ধুগণ,

গত ১০ বছরে ভারতের তিন বাহিনী স্বনির্ভর হয়ে ওঠার ক্ষেত্রে যে পদক্ষেপগুলি নিয়েছে, তা অত্যন্ত প্রশংসনীয়। সঙ্কটের সময়কালে অন্য দেশের প্রতি নির্ভরশীল হওয়া কমানোর বিষয়টি যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ, তা সকলে উপলব্ধি করতে পেরেছেন। আর তাই, স্বনির্ভর হওয়ার লক্ষ্যে আপনারা এগিয়ে এসেছেন। বর্তমানে প্রায় ৫ হাজারেরও বেশি সরঞ্জাম আমাদের দেশেই তৈরি হচ্ছে। বিদেশ থেকে এগুলিকে আমদানী করতে হচ্ছে না। একজন ভারতীয় সৈন্য যখন দেশে তৈরি সরঞ্জাম নিয়ে এগিয়ে চলেন, তখন তিনি আত্মবিশ্বাসে ভরপুর হয়ে ওঠেন। গত ১০ বছরে দেশের বৃহত্তম হেলিকপ্টার নির্মাণ কারখানা কর্ণাটকে কাজ শুরু করেছে। সেনাবাহিনীর সদস্যদের জন্য বিমান তৈরির কারখানাটিও কাজ শুরু করেছে। তেজস যুদ্ধ বিমান ভারতের সম্মানকে নতুন এক উচ্চতায় নিয়ে গেছে। প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম উৎপাদনের ক্ষেত্রে উত্তর প্রদেশ ও তামিলনাডুতে করিডর নির্মাণ চলছে। আমাদের নৌ-বাহিনী ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ কর্মসূচীকে বাস্তবায়িত করার জন্য উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করায় আমি আনন্দিত। মাঝগাওঁ ডকইয়ার্ডে কর্মরত আপনারা প্রত্যেকে এই কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। ভারতীয় নৌ-বাহিনীতে গত ১০ বছরে ৩৩টি জাহাজ ও ৭টি ডুবো জাহাজ অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এই ৪০টি নৌ-যানের মধ্যে ৩৯টি ভারতে তৈরি হয়েছে। এই তালিকায় রয়েছে, বিমান পরিবহণক্ষম বৃহৎ রণতরী আইএনএস বিক্রান্ত এবং পারমানবিক যুদ্ধ করতে সক্ষম দুই ডুবো জাহাজ আইএনএস আরিহন্ত ও আইএনএস আরিঘাত। ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ কর্মসূচীকে সফল করে তুলতে দেশের এই তিন বাহিনী যে ভূমিকা পালন করছে, তার জন্য আমি আপনাদের আন্তরিক অভিনন্দন জানাই। আজ ভারতের প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে উৎপাদনের পরিমাণ ১ লক্ষ ২৫ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। ১০০টিরও বেশি দেশে আমরা প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম রপ্তানী করছি। আপনাদের সকলের সহায়তায় ভারত প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে আরও এগিয়ে যাবে বলে আমি আশাবাদী। 

বন্ধুগণ,

ভারতীয় সেনাবাহিনীর শক্তি বৃদ্ধির পাশাপাশি ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নেও নতুন নতুন সুযোগ নিয়ে আসছে। যেমন ধরুন – জাহাজ নির্মাণ শিল্প। বিশেষজ্ঞরা বলেন, জাহাজ নির্মাণ শিল্পে যত বেশি বিনিয়োগ করা যাবে, অর্থনীতিতে তত বেশি ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। আপনি যদি এই শিল্পে এক টাকা বিনিয়োগ করেন, তা হলে অর্থনীতিতে প্রায় এক টাকা বিরাশি পয়সা আবর্তিত হবে। একটু ভাবুন, এই মুহূর্তে দেশে ৬০টি বড় বড় জাহাজ তৈরি হচ্ছে। এগুলির মোট আর্থিক মূল্য ১ লক্ষ ৫০ হাজার কোটি টাকা। এর মানে এই অর্থ বিনিয়োগের ফলে আমাদের অর্থনীতিতে প্রায় ৩ লক্ষ কোটি টাকা আবর্তিত হচ্ছে। কর্মসংস্থানের নিরিখে এর ছ’গুণ প্রভাব পড়ে। জাহাজ শিল্পের বেশিরভাগ সরঞ্জাম আসে দেশের অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প সংস্থাগুলি থেকে। যদি ২ হাজার কর্মী জাহাজ নির্মাণের সঙ্গে যুক্ত থাকেন, তা হলে অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের সঙ্গে যুক্ত ১২ হাজার কর্মী সংশ্লিষ্ট শিল্পের জন্য সরঞ্জাম সরবরাহ করেন।

বন্ধুগণ,

আজ বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে ভারত এগিয়ে চলেছে। আমাদের নির্মাণ শিল্প এবং রপ্তানীর পরিমাণ প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। আগামী বছরগুলিতে ভারতের প্রচুর নতুন জাহাজ ও কন্টেনারের প্রয়োজন। তাই, বন্দরের মাধ্যমে উন্নয়নের এই উদ্যোগ আমাদের অর্থনীতির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব পড়বে। ফলস্বরূপ, হাজার হাজার কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। 

বন্ধুগণ,

কিভাবে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পাচ্ছে, তার একটি উদাহরণ আমি সমুদ্রের নাবিকদের সংখ্যার মাধ্যমে আপনাদের কাছে তুলে ধরছি। ২০১৪ সালে ভারতে সমুদ্র নাবিকের সংখ্যা ছিল ১ লক্ষ ২৫ হাজারের কিছু কম। আজ এই সংখ্যা দ্বিগুণেরও বেশি, প্রায় ৩ লক্ষে পৌঁছেছে। সমুদ্র নাবিকের সংখ্যার নিরিখে বিশ্বের প্রথম ৫টি দেশের মধ্যে ভারত জায়গা করে নিয়েছে। 

বন্ধুগণ,

তৃতীয় মেয়াদে আমাদের সরকার বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তকে কার্যকর করছে। দেশের চাহিদার কথা বিবেচনা করে আমরা নতুন নতুন নীতি প্রণয়ন করেছি, নতুন নতুন কাজ শুরু করেছি। দেশের প্রত্যেক অঞ্চলের জন্য প্রতিটি ক্ষেত্রের জন্য উন্নয়নমূলক কাজ চলছে। বন্দরগুলির সম্প্রসারণ তারই অঙ্গ। তৃতীয় মেয়াদে আমাদের সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হ’ল – মহারাষ্ট্রে বাদাবন বন্দরের অনুমোদন। ৭৫ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে এই বন্দরটি গড়ে তোলা হবে। এর কাজ ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে। এর ফলে, মহারাষ্ট্রে হাজার হাজার কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।

বন্ধুগণ,

দীর্ঘদিন ধরে সীমান্তবর্তী অঞ্চল ও উপকূল অঞ্চলে যোগাযোগ ব্যবস্থার পরিকাঠামোর ক্ষেত্রে খুব বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। গত ১০ বছরে এক্ষেত্রে অভূতপূর্ব কাজ হয়েছে। মাত্র দু’দিন আগে জম্মু ও কাশ্মীরে সোনমার্গ সূড়ঙ্গ উদ্বোধন করার সৌভাগ্য আমার হয়েছে। এরফলে, কারগিল ও লাদাখের মতো সীমান্তবর্তী অঞ্চলে সহজেই পৌঁছে যাওয়া যাবে। গত বছর অরুণাচল প্রদেশের সেলা সূড়ঙ্গের উদ্বোধন করা হয়। আমাদের সেনাবাহিনী খুব সহজেই এখন নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর অঞ্চলে পৌঁছে যেতে পারে। শিঙ্কুন লা এবং জোজিলা সূড়ঙ্গের মতো গুরুত্বপূর্ণ পরিকাঠামো প্রকল্পগুলির কাজও দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে। ভারতমালা প্রকল্পে সীমান্তবর্তী অঞ্চলে জাতীয় সড়ক নির্মাণ হচ্ছে। আমাদের সীমান্তের গ্রামগুলির উন্নয়নের ক্ষেত্রে ভাইব্রেন্ট ভিলেজ কর্মসূচী অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গত দশকে আমরা প্রত্যন্ত দ্বীপগুলির প্রতিও মনোনিবেশ করেছি। যেসব দ্বীপে কেউ থাকেন না, সেখানে নিয়মিত নজরদারি চালানো হয়। এছাড়াও, দ্বীপগুলির নতুন নতুন নামকরণ করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, ভারত মহাসাগরে সমুদ্রের নীচে যে পাহাড়গুলি রয়েছে, সেগুলিরও নামকরণ করা হয়েছে। গত বছর ভারতের উদ্যোগে একটি আন্তর্জাতিক সংগঠন এরকম ৫টি পাহাড়ের নামকরণ করেছে। এগুলি হ’ল – অশোক সামুদ্রিক পর্বত, হর্ষবর্ধন সামুদ্রিক পর্বত, রাজা চোল সামুদ্রিক পর্বত, কল্পতরু রীজ এবং চন্দ্রগুপ্ত রীজ। এরফলে, ভারতের গৌরব বৃদ্ধি হয়েছে।

বন্ধুগণ,

আমরা সকলেই জানি যে, ভবিষ্যতে মহাকাশ ও গভীর সমুদ্রের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকবে। আর তাই, সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রগুলিতে ভারত তার কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করছে। সমুদ্র গভীরের ৬ হাজার কিলোমিটার নীচে আমাদের বিজ্ঞানীরা পৌঁছেছেন। সমুদ্রযান প্রকল্পের বাস্তবায়নের ফলে এটা স্পষ্ট যে, ভবিষ্যতের প্রতিটি সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে আমাদের সরকার বদ্ধ পরিকর। মাত্র কয়েকটি দেশই এত গভীরে পৌঁছতে সক্ষম হয়েছে। 

বন্ধুগণ,

একবিংশ শতাব্দীর ভারত আত্মবিশ্বাসে ভরপুর। আমরা দাসত্বের যে কোনও প্রতীকের থেকে নিজেদের মুক্ত করছি। এক্ষেত্রে আমাদের নৌ-বাহিনী পথ দেখিয়েছে। নৌ-বাহিনীর পতাকা ছত্রপতি শিবাজী মহারাজের গৌরবোজ্জ্বল ঐতিহ্যের প্রতিফলন। শিবাজী মহারাজের ঐতিহ্যের সঙ্গে সাযুজ্য রেখে নৌ-বাহিনীর অ্যাডমিরাল পদের আধিকারিকদের প্রতীকটিরও নতুন নক্‌শা করা হয়েছে। ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’, আত্মনির্ভর ভারত অভিযানের মতো বিভিন্ন উদ্যোগ দাসত্বের মানসিকতা থেকে মুক্ত হতে সহায়তা করে। দেশের এই গৌরবোজ্জ্বল মুহূর্তগুলিকে আপনারা সকলেই যে উপভোগ করছেন, সেই বিষয়ে আমি নিশ্চিত। ভারতকে উন্নত করার জন্য আমাদের সকলকে একযোগে কাজ করতে হবে। আমাদের কাজের দায়িত্ব হয়তো আলাদা, কিন্তু লক্ষ্য অভিন্ন – উন্নত ভারত গড়ে তোলা। দেশের সীমান্তবর্তী অঞ্চলকে আরও শক্তিশালী করে তোলা আমাদের সঙ্কল্প। 

বন্ধুগণ,

যখন আমি হাল্কা চালে কথা বলি, তখন আমি সেনাবাহিনীর খাবারের বিষয়ে আমার অভিজ্ঞতার কথা সকলকে জানাই। আর নৌ-বাহিনী তো নানাধরনের খাবার তৈরি করে। আজ এই বাহিনীতে সুরাট যুক্ত হয়েছে। একটা খুব প্রচলিত কথা আছে, তা হ’ল – সুরাটের খাবার আর কাশীতে মৃত্যু (সুরাট কা জমণ অউর কাশী কা মরণ) আমি ক্যাপ্টেন সন্দীপকে বলছি, সুরাট আজ এই বাহিনীতে যুক্ত হয়েছে। আমি নিশ্চিত, আপনি নিশ্চয়ই সকলের জন্য সুরাটের খাবারের ব্যবস্থা করেছেন। 

বন্ধুগণ,

আজ সারা দেশ আপনাদের শুভেচ্ছা জানাচ্ছে। আজ দেশ গর্বে, আত্মপ্রত্যয়ে, নতুন উদ্দীপনায় এবং নতুন সংকল্পে এগিয়ে চলেছে। উন্নত ভারত গড়ার যে অঙ্গীকার আমরা করেছি, তা আমাদের পূরণ করতেই হবে। এই তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপের জন্য, তিনটি উপহারের জন্য আপনাদের সকলকে আবারও অভিনন্দন জানিয়ে আমি আমার বক্তব্য সম্পন্ন করছি। আপনারা সকলে আমার সঙ্গে জোর গলায় বলে উঠুন –
ভারতমাতার জয়
নিদেনপক্ষে এই অনুষ্ঠানে এই ধ্বনি আরও বেশি করে অনুরণিত হোক
ভারতমাতার জয়
ভারতমাতার জয়
ভারতমাতার জয়

অনেক অনেক ধন্যবাদ।

(প্রধানমন্ত্রীর মূল ভাষণটি হিন্দিতে ছিল)

 

SC/CB/SB