Search

পিএমইন্ডিয়াপিএমইন্ডিয়া

সাম্প্রতিক সংবাদ

বিষয়টিকে সরাসরি পিআইবি থেকে নেওয়া হয়েছে

মধ্যপ্রদেশের খাজুরাহে কেন-বেতওয়া নদী সংযোগ জাতীয় প্রকল্পের শিলান্যাস অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ

মধ্যপ্রদেশের খাজুরাহে কেন-বেতওয়া নদী সংযোগ জাতীয় প্রকল্পের শিলান্যাস অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ


নতুন দিল্লি, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪

 

ভারত মাতা কি জয়!

ভারত মাতা কি জয়!   

আমি বীর নায়কদের জন্মস্থান, বুন্দেরখন্ডের প্রতিটি নাগরিককে আমার উষ্ণ অভিনন্দন জানাই। মধ্যপ্রদেশের রাজ্যপাল শ্রী মঙ্গুভাই প্যাটেল, এই অঞ্চলের জনপ্রিয় মুখ্যমন্ত্রী ভাই মোহন যাদব জি, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ভাই শিবরাজ সিং জি, বীরেন্দ্র কুমার জি এবং সি আর পাতিল জি, উপমুখ্যমন্ত্রী জগদীশ দেওদা জি, রাজেন্দ্র শুক্লা জি সহ উপস্থিত অন্যান্য মন্ত্রীরা, সাংসদ, বিধায়ক, বিশিষ্টজনেরা, পরম পূজনীয় সন্ন্যাসীরা এবং আমার প্রিয় মধ্যপ্রদেশের ভাই এবং বোনেদের  শুভেচ্ছা জানাই।  

আজ সারা বিশ্বজুড়ে খ্রীষ্টমাস উদযাপিত হচ্ছে। আমি দেশ ও বিদেশের সকল খ্রীষ্টান ধর্মাবলম্বীদের  খ্রীষ্টমাসের শুভেচ্ছা জানাই। এছাড়াও মোহন যাদব জি-র নেতৃত্বে মধ্যপ্রদেশের বিজেপি সরকারের এক বছর পূর্ণ হল, এই উপলক্ষে আমি রাজ্যের জনগণকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাই। গত কয়েক বছর ধরে মধ্যপ্রদেশে উন্নয়নের জোয়ার এসেছে। আজও এখানে কোটি কোটি টাকার প্রকল্পের উদ্বোধন হয়েছে। এর মধ্যে সব থেকে উল্লেখযোগ্য হল কেন-বেতওয়া সংযোগ প্রকল্পের অধীনে ঐতিহাসিক দাউধান জলাধারের শিলান্যাস এবং মধ্যপ্রদেশে প্রথম ওঙ্কারেশ্বর ভাসমান সৌর প্রকল্পের উদ্বোধন। এই উপলক্ষে আমি রাজ্যের জনসাধারণকে আন্তরিক অভিনন্দন জানাই। 

বন্ধুগণ, 

আজ এই দিনটি আমাদের সকলের কাছে অনুপ্রেরণার দিন। আমাদের পরম পূজনীয় অটল জি-র জন্মদিন আজ। ভারতরত্ন অটল জি-র জন্মশতবার্ষিকীর সূচনা হচ্ছে আজ থেকে। অটল জি-র জন্মদিন সুপ্রশাসন এবং একনিষ্ঠ পরিষেবা প্রদানের অনুপ্রেরণার উৎসব। আজ সকালে আমি অটল জি-র স্মরণে একটি স্মারক ডাকটিকিট এবং মুদ্রা প্রকাশ করেছি। সেই সময় মনের কোনায় অনেক স্মৃতি ভীড় করে এসেছিল। দীর্ঘদিন ধরে অটল জি আমার মতো অনেককে নানা ভাবে পরামর্শ দিয়েছেন। দেশের উন্নয়নে তাঁর চিরস্মরণীয় অবদান কেউ ভুলতে পারবেন না।  

আজ মধ্যপ্রদেশে ১১০০-রও বেশি অটল গ্রাম সেবা সদনের নির্মাণ কাজের সূচনা হল। ইতিমধ্যেই এই প্রকল্পের প্রথম কিস্তির টাকা দেওয়া হয়েছে। আমাদের গ্রামাঞ্চলে এই প্রকল্পটি উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করতে সাহায্য করবে। 

বন্ধুগণ, 

আমাদের জন্য সুপ্রশাসন দিবসের অর্থ শুধু দিনটিকে উদযাপনের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখাই নয়, বিজেপি সরকারের পরিচালনার অন্যতম দিক নির্দেশনা করে এই দিনটি। এদেশের মানুষ বিজেপির নেতৃত্বাধীন সরকারকে পর পর তিনবার নির্বাচিত করেছেন। মধ্যপ্রদেশেও আপনারা বিজেপির প্রতি আস্থা রেখেছেন। আমরা যে সফল ভাবে সুপ্রশাসন নিশ্চিত করছি, এর মধ্য দিয়ে সেটিই প্রমাণিত হয়। 

আমি এই দেশের পরিসংখ্যানবিদ এবং বিশ্লেষকদের অনুরোধ করবো স্বাধীনতার ৭৫ বছর উপলক্ষে তাঁরা প্রশাসনিক কাজের মূল্যায়ন করে একটি লিখিত প্রতিবেদন তৈরি করুন। এক্ষেত্রে আমরা উন্নয়ন, জনকল্যাণ এবং সুপ্রশাসনের মতো ১০০ থেকে ২০০টি উপাদানকে শনাক্ত করবো। তারপর যে অঞ্চলে কংগ্রেস শাসন করেছে, যেখানে বাম অথবা কমিউনিস্ট পার্টিগুলি ক্ষমতায় ছিল, যেখানে পরিবারতান্ত্রিক দলগুলি শাসন করছে এবং যেখানে কোনো জোট সরকার শাসনের দায়িত্বে রয়েছে – সেগুলির পুনর্মূল্যায়ন করা হোক। পাশাপাশি যে সব অঞ্চলে বিজেপি রাজ্য শাসনের দায়িত্ব পালন করেছে সেগুলিরও মূল্যায়ন করা হবে।  

আমি নিশ্চিত যে, যেখানে যেখানে বিজেপি রাজ্য শাসন করেছে সেখানে জনকল্যাণ, উন্নয়নমূলক কাজের উদ্যোগ এবং দেশ সেবা করার মতো ক্ষেত্রগুলিতে অন্যদের থেকে আমরা অনেক এগিয়ে থাকবো। যদি, এই উপাদনগুলিকে যাথাযথ ভাবে মূল্যায়ন করা হয়, তাহলে বিজেপি সরকারের সাধারণ মানুষকে পরিষেবা দেবার অঙ্গীকার সারা দেশ উপলব্ধি করবে। আমরা আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামীদের স্বপ্ন পূরণ করতে নিরলস ভাবে উদ্যোগী হিয়েছি। যাঁরা দেশের জন্য নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছেন, তাঁদের স্বপ্ন পূরণ করা আমাদের কর্তব্য।  

ভালো ভালো কয়েকটি প্রকল্পের পরিকল্পনা করার মধ্যেই সুপ্রশাসন সীমাবদ্ধ থাকে না। এই প্রকল্পগুলিকে স্বচ্ছতার সঙ্গে কিভাবে কার্যকর করা হবে তার মধ্যেই সুপ্রশাসনের প্রকৃত অর্থ নিহিত থাকে। বিভিন্ন প্রকল্পের সুবিধা যত বেশি মানুষের কাছে পৌঁছোবে ততই প্রশাসনের প্রকৃত উদ্যোগ উপলব্ধি করা যাবে। কংগ্রেস সরকারের পরিচিতি ছিল কিছু ঘোষণা করা, শিলান্যাস, ফিতে কাটা, আনুষ্ঠানিক ভাবে প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করা এবং কিছু ছবি প্রকাশ করা। এখানেই তাঁদের দায়িত্ব শেষ হয়ে যেত। মানুষকে তাঁরা যে প্রতিশ্রুতিগুলি দিতেন সেগুলি পূরণ হতো না।    

প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর আমি ‘প্রগতি’ কর্মসূচির মাধ্যমে পুরোনো প্রকল্পগুলি পর্যালোচনা করি। আশ্চর্যের ব্যাপার ৩৫ থেকে ৪০ বছর আগে নেওয়া বিভিন্ন প্রকল্পের এক ইঞ্চিও কাজ হয়নি। এর মধ্য দিয়ে কংগ্রেস শাসনে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নের কোনো উৎসাহ যে ছিল না তা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। 

আজ আমরা পিএম কিষাণ সম্মান নিধি-র মতো বিভিন্ন প্রকল্পের সুফল দেখতে পাচ্ছি। মধ্যপ্রদেশের কৃষকরা এই প্রকল্পের আওতায় প্রতি বছর ১২,০০০ টাকা করে পাচ্ছেন। এটি সম্ভব হয়েছে জনধন ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলার কারণে। মধ্যপ্রদেশে লাডলি বেহেনা প্রকল্পটি মানুষের জীবনযাত্রায় পরিবর্তন নিয়ে এসেছে। মহিলাদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলা এবং সেই অ্যাকাউন্টে আধার এবং মোবাইল নম্বর যুক্ত করার মধ্য দিয়ে এই প্রকল্পগুলি বাস্তবায়নে সুবিধা হচ্ছে।   

অতীতেও ভর্তুকি মূল্যে রেশন দেওয়ার ব্যবস্থা ছিল। কিন্তু দরিদ্র মানুষেরা এই প্রকল্পগুলির পুরো সুবিধা পেতেন না। আজ প্রযুক্তির ব্যবহারের কারণে আমরা দক্ষ ভাবে, স্বচ্ছতার সঙ্গে রেশন বিতরণ করতে পারছি। দরিদ্র মানুষেরা এখন নির্ঝঞ্ঝাটে, বিনামূল্যে রেশন পাচ্ছেন। ‘এক দেশ এক রেশনকার্ড’-এর মতো উদ্যোগের কারণে নিত্যপ্রয়োজনীয় পরিষেবাগুলি দেশজুড়ে সফল ভাবে কার্যকর হচ্ছে। এখন কোনরকমের জালিয়াতি আর হচ্ছে না। 
 
বন্ধুগণ, 

সুপ্রশাসনের অর্থ হল একজন নাগরিককে সরকারের কাছে গিয়ে তার অধিকার পাওয়ার জন্য এক দপ্তর থেকে আরেক দপ্তর ঘোরাঘুরি করতে হবে না। তিনি সহজেই তাঁর প্রাপ্য পেয়ে যাবেন। আমাদের নীতি হল একশো শতাংশ সুবিধাভোগীর কাছে পুরো পরিষেবা পৌঁছে দেওয়া। এখানেই বিজেপি সরকারের সঙ্গে অন্যান্য সরকারগুলির তফাৎ। আজ সারা দেশ এটি বুঝতে পেরেছে। আর তাই, বিজেপি বারবার নেতৃত্বদানের সুযোগ পাচ্ছে।   

বন্ধুগণ, 

সুপ্রশাসনের মাধ্যমে শুধুমাত্র বর্তমান সময়কালের বিভিন্ন সমস্যার সমাধানই করা হবে না, বরং ভবিষ্যতের সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জগুলিকে মোকাবিলা করতে আগে থেকেই পরিকল্পনা নেওয়া হবে। দুর্ভাগ্যজনক ভাবে কংগ্রেসের শাসনকালে দীর্ঘদিন ধরে দেশে যথাযথ প্রশাসনিক সুবিধা পাওয়া যায়নি। কংগ্রেস মনে করতো সরকারে থাকা তাদের জন্মগত অধিকার। অথচ, প্রশাসনিক ব্যবস্থা থেকে তারা দূরত্ব বজায় রাখতো। খুব সোজা ভাবে বলা যায়, প্রশাসন এবং কংগ্রেসের মধ্যে সহাবস্থান হতে পারে না। বুন্দেলখন্ডের জনগণ যুগ যুগ ধরে এই অবহেলার শিকার হয়ে এসেছেন। এই অঞ্চলে একফোঁটা জল পাওয়ার জন্য কৃষক, মা-বোনেরা কী কষ্টটাই না করতেন। এই পরিস্থিতির কেন উদ্ভব হয়েছিল? কারণ, জল সঙ্কট মেটাতে কংগ্রেস কখনই স্থায়ী সমাধান খুঁজে বের করতে উদ্যোগী হয়নি।  

বন্ধুগণ,

ভারতের উন্নয়নে নদীর জলের গুরুত্বকে আমিই প্রথম স্বীকৃতি দিই। আপনারা শুনলে আশ্চর্য হবেন, স্বাধীনতার পর আমিই প্রথম ‘জলশক্তি’-র বিষয়ে ভাবনা-চিন্তা শুরু করি। ভারতের জলসম্পদের বিষয়ে দূরদর্শী পরিকল্পনা প্রথম কে করেছে? কে এই বিষয়গুলি নিয়ে কাজ করেছে?  আমার সাংবাদিক বন্ধুদেরও এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বের করতে কষ্টই হবে, কারণ সত্য কখনও চাপা থাকে না। তাঁরা জনৈক ব্যক্তিবিশেষকে সবকিছুর কৃতিত্ব দিতে গিয়ে দূরদর্শিতার বিষয়টি ভুলেই গিয়েছিলেন। আজ আমি আপনাদের জানাতে চাই, স্বাধীনতার পরে ভারতের জলসম্পদ সম্পর্কে প্রকৃত ভাবনা-চিন্তা করা, জলাধার নির্মাণ করা এবং জলশক্তির ধারণা প্রথম নিয়ে আসেন ডঃ বাবা সাহেব আম্বেদকর। 

ডঃ আম্বেদকর ভারতে বড় বড় নদী প্রকল্প বাস্তবায়নের স্বপ্ন দেখতেন। তাঁর উদ্যোগেই কেন্দ্রীয় জল কমিশন তৈরি হয়। অথচ কংগ্রেস কখনই জল সংরক্ষণ ও বড় বড় জলাধার নির্মাণে তাঁর অবদানকে স্বীকৃতি দেয়নি। তাঁর উদ্যোগগুলিকে সবসময়ই লোকচক্ষু অন্তরালে রেখে দেওয়া হতো। কংগ্রেস বাবা সাহেবকে তাঁর প্রাপ্য সম্মান দেয়নি। 

এমনকি, আজও সাত দশক পরেও দেশের অনেক রাজ্যে জল নিয়ে বিবাদ থেকেই গেছে। কংগ্রেস যখন পঞ্চায়েত থেকে সংসদ পর্যন্ত সর্বস্তরে ক্ষমতায় ছিল, তখন এই বিবাদগুলি সহজেই মেটাতে পারতো। কিন্তু, কংগ্রেসের উদ্দেশ্য সেটি ছিল না। এই সমস্যাগুলি সমাধানে তারা কোন সক্রিয় উদ্যোগ নেয়নি। 

বন্ধুগণ, 

অটল জি-র সরকার গঠিত হওয়ার পর তিনি যথেষ্ট গুরুত্ব সহকারে দেশের জল সংক্রান্ত সমস্যাগুলির সমাধানে উদ্যোগী হন। তবে, ২০০৪ সালে অটল জি-র সরকারের পর কংগ্রেস ক্ষমতায় ফিরে এলে তারা সেই পূর্ববর্তী সরকারের সবকটি পরিকল্পনা বাতিল করে দেয়। আজ আমাদের সরকার জাতীয় স্তরে নদী সংযোগের উদ্যোগ শুরু করেছে। কেন-বেতওয়া সংযোগ প্রকল্প বাস্তবায়নের পথে এই প্রকল্প বুন্দেলখন্ড অঞ্চলে সমৃদ্ধি ও শান্তি নিয়ে আসবে। ছাতারপুর, টিকমগড়, নিউয়ারি, পান্না, দামো এবং সাগর সহ মধ্যপ্রদেশের ১০টি জেলা উন্নত সেচ প্রকল্পের সুবিধা পাবে। 

এই মঞ্চে প্রবেশের সময়ে বিভিন্ন জেলার কৃষকদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার সৌভাগ্য আমার হয়েছিল। তাঁদের চোখে-মুখের আনন্দ ফুটে উঠেছে। তাঁরা মনে করেন, আগামী প্রজন্মের ভবিষ্যৎ এই প্রকল্পের কারণে আরও সুরক্ষিত হবে। 

বন্ধুগণ, 

উত্তরপ্রদেশের বুন্দেলখন্ড অঞ্চলের বান্দা, মাহোবা, ললিতপুর এবং ঝাঁসির মতো জেলাও এই প্রকল্পে উপকৃত হবে। 

বন্ধুগণ,  

নদী সংযোগের এই বৃহৎ উদ্যোগে দেশের মধ্যে মধ্যপ্রদেশই প্রথম রাজ্য, যেখান থেকে দুটি প্রকল্পের সূচনা হল। দিন কয়েক আগে আমি যখন রাজস্থানে গিয়েছিলাম, তখন মোহন জি এই বিষয়ে আমাকে বিস্তারিত জানিয়েছেন। পার্বতী-কালিসিন্ধ-চম্বল এবং কেন-বেতওয়া সংযোগ প্রকল্পের মতো বিভিন্ন নদীকে যুক্ত করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। এই চুক্তির যথেষ্ট সুফল মধ্যপ্রদেশ পাবে। 

বন্ধুগণ, 

একবিংশ শতাব্দীর সব থেকে বড় একটি সমস্যা জলসঙ্কট। এই শতাব্দীতে সেই দেশ এবং অঞ্চলগুলিই উন্নতি করতে পারবে যেখানে প্রচুর জল রয়েছে এবং জলসম্পদের যথাযথ ব্যবস্থাপনা রয়েছে। জলের মাধ্যমে কৃষিকাজ এবং পশুপালনের উন্নতি হয়। শিল্প এবং বাণিজ্যের উন্নতিতেও জল সাহায্য করে। 

আমি গুজরাট থেকে এসেছি। বছরের দীর্ঘ সময়ে এই রাজ্য খরার কবলে পড়তো। কিন্তু, মা নর্মদার আশীর্বাদে গুজরাটের ভাগ্য বদলে গেছে। নর্মদা নদীর উৎসস্থল মধ্যপ্রদেশ। আমি মনে করি মধ্যপ্রদেশের খরাপ্রবণ এলাকাগুলিকেও জলসঙ্কট থেকে মুক্ত করা আমার দায়িত্ব ও কর্তব্যের মধ্যে পড়ে। আর তাই আমি বুন্দেলখন্ডের বোনেদের এবং কৃষকদের কাছে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম তাঁদের সমস্যা থেকে মুক্ত করতে নিরলস ভাবে কাজ করবো। 

আর তাই আমরা বুন্দেলখন্ডের জল সমস্যা মেটাতে ৪৫,০০০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প কার্যকর করছি। আমরা বিজেপি শাসিত মধ্যপ্রদেশ এবং উত্তরপ্রদেশকে এই প্রকল্প বাস্তবায়নে উদ্যোগী হতে বলেছি। আজ দাউধন জলাধারের শিলান্যাস করা হল। এটি কেন-বেতওয়া প্রকল্পের অঙ্গ। এই জলাধার থেকে সেচ খালের মাধ্যমে ১১ লক্ষ হেক্টর জমিতে জলের যোগান দেওয়া হবে। 

বন্ধুগণ, 

ভারতের ইতিহাসে গত দশক জল সুরক্ষা এবং সরক্ষণের উন্নয়নের সময়কাল হিসেবে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। পূর্ববর্তী সরকারগুলি জল সংক্রান্ত দায়িত্ব বিভিন্ন দপ্তরের মধ্যে বন্টন করেছিল। এই সমস্যা সমাধানে আমরা জলশক্তি মন্ত্রক গঠন করেছি। এই প্রথম ঘরে ঘরে নলবাহিত জল পৌঁছে দেওয়ার জন্য আমরা একটি জাতীয় মিশন কার্যকর করেছি। স্বাধীনতার সাত দশক পরেও গ্রামাঞ্চলে মাত্র ৩ কোটি পরিবার নলবাহিত বিশুদ্ধ জল পেতো। গত ৫ বছরে আমরা আরও ১২ কোটি অতিরিক্ত পরিবারের কাছে এই জল পৌঁছে দিয়েছি। এ পর্যন্ত এই প্রকল্পে বিনিয়োগ করা হয়েছে ৩ লক্ষ ৫০ হাজার কোটি টাকা। 

জল জীবন মিশনের আর একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হল জলের গুণমান পরীক্ষা করা। এই বিষয়টি প্রায়শই আলোচিত হয় না। দেশজুড়ে ২,১০০টি পরীক্ষাগার গড়ে তোলা হয়েছে, যেখানে জলের গুণমান পরীক্ষা করা হবে। গ্রামাঞ্চলে পানীয় জলের গুণমান পরীক্ষা করার জন্য ২৫ লক্ষ মহিলাকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। ফলস্বরূপ দেশের হাজার হাজার গ্রাম এখন দূষিত জল ব্যবহারের সমস্যা থেকে মুক্ত। এই উদ্যোগের তাৎপর্য আপনারা বোঝার চেষ্টা করুন। শিশু সহ সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের বাসিন্দারা জলবাহিত অসুখের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছেন।  
 
বন্ধুগণ, 

২০১৪ সালের আগে পর্যন্ত দেশে প্রায় ১০০টি বড় সেচ প্রকল্প ছিল। যেগুলি পুরোপুরি কার্যকর হয়নি। দীর্ঘদিন ধরে বকেয়া থাকা এই প্রকল্পগুলি বাস্তবায়নের জন্য আমরা হাজার হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছি। এছাড়াও সেচ প্রকল্পে আধুনিক প্রযু্ক্তিকে ব্যবহার করা হচ্ছে। গত এক দশক ধরে ক্ষুদ্র সেচ প্রকল্পের আওতায় প্রায় ১ কোটি হেক্টর জমিকে নিয়ে আসা হয়েছে। মধ্যপ্রদেশই এই প্রকল্পের আওতায় ৫ লক্ষ হেক্টর জমিকে নিয়ে এসেছে। জলের প্রতিটি ফোঁটাকে যাতে সর্বোচ্চ ব্যবহার করা যায়, তার জন্য আমরা উদ্যোগী হয়েছি।  

স্বাধীনতার ৭৫তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে আমরা দেশের প্রতিটি জেলায় ৭৫টি অমৃত সরোবর খননের এক প্রকল্পের সূচনা করেছি। এপর্যন্ত দেশজুড়ে ৬০,০০০ অমৃত সরোবর খনন করা হয়েছে। আমরা জলশক্তি অভিযানের মাধ্যমে দেশজুড়ে বৃষ্টির জল সংরক্ষণে উদ্যোগী হয়েছি। ইতিমধ্যেই ৩ লক্ষের বেশি কুয়ো খনন করা হয়েছে, যার সাহায্যে ভূগর্ভে বৃষ্টির জল পৌঁছে দেওয়া যায়। এই প্রকল্পের সব থেকে উল্লেখযোগ্য দিক হল গ্রাম বা শহরে যে কোন অঞ্চলেরই সাধারণ মানুষ এখানে সক্রিয় ভাবে অংশগ্রহণ করছেন।  

মধ্যপ্রদেশ সহ যেসব অঞ্চলে ভূগর্ভস্থ জলস্তর খুবই নিচে, সেখানে আমরা অটল ভূজল যোজনার সূচনা করেছি। এর ফলে এই সমস্যার সমাধান হবে। 

বন্ধুগণ, 

পর্যটন ক্ষেত্রে দেশের প্রথম সারির রাজ্যগুলির মধ্যে মধ্যপ্রদেশ অন্যতম। খাজুরাহতে আমি পর্যটনের কথা বলবো না, তা কীভাবে সম্ভব? পর্যটন এমন একটি ক্ষেত্র যেখানে যুবক-যুবতীদের কর্মসংস্থান যেমন হয়, পাশাপাশি জাতীয় অর্থনীতিও শক্তিশালী হয়ে ওঠে। বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে ভারত আত্মপ্রকাশ করতে চলেছে। সারা পৃথিবীর মানুষ ভারত সম্পর্কে জানতে, বুঝতে আগ্রহী। আর মধ্যপ্রদেশ এই আকর্ষণের গুরুত্বপূর্ণ জায়গা। 
 
সম্প্রতি একটি মার্কিন সংবাদপত্রে বিশ্বের ১০টি আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্রের যে তালিকা প্রকাশিত হয়েছে, সেখানে মধ্যপ্রদেশ স্থান করে নিয়েছে। মধ্যপ্রদেশের সংবাদপত্রগুলিতে এই স্বীকৃতির খবরটি প্রকাশিত হয়েছে। রাজ্যের প্রতিটি জনগণ এর জন্য কতটা গর্বিত হয়েছেন এবং আনন্দিত হয়েছেন তা সহজেই অনুমেয়। আপনাদের পরিচিতি এবং সম্মান এর ফলে কি বৃদ্ধি পায়নি? এর মাধ্যমে এই অঞ্চলের পর্যটন শিল্পের কি প্রসার ঘটবে না? এর মাধ্যমে দরিদ্রতম নাগরিকও কি কাজের সুযোগ পাবেন না?

বন্ধুগণ, 

দেশ-বিদেশের পর্যটকদের আরও সুযোগ-সুবিধা দিতে কেন্দ্রীয় সরকার নিরলস কাজ করে চলেছে। এর ফলে সহজেই পর্যটকরা তাঁদের গন্তব্যে পৌঁছে যেতে পারেন। আন্তর্জাতিক পর্যটকদের জন্য আমরা ই-ভিসা-র মতো বিভিন্ন পরিষেবা চালু করেছি, যাতে তাঁরা সহজেই ভারতে আসতে পারেন। ভারতের ঐতিহ্য এবং বন্যপ্রাণ পর্যটন প্রসারিত হচ্ছে। মধ্যপ্রদেশের সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে প্রভূত সম্ভাবনা রয়েছে। খাজুরাহের কথাই ধরুন, এখানে ইতিহাস এবং অধ্যাত্মের অমূল্য সম্পদ রয়েছে। কান্দারিয়া মহাদেব, লক্ষণ মন্দির এবং চৌষাট যোগিনী মন্দিরের মতো বিখ্যাত তীর্থস্থান রয়েছে। পর্যটন শিল্পের প্রসারের জন্য আমরা ভারতের বিভিন্ন স্থানে জি-২০ সম্মেলনের আযোজন করেছিলাম – এর একটি খাজুরাহে অনুষ্ঠিত হয়। সেই সময় খাজুরাহে একটি অত্যাধুনিক আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র গড়ে তোলা হয়। 

বন্ধুগণ, 

কেন্দ্রীয় সরকারের স্বদেশ দর্শন যোজনায় মধ্যপ্রদেশে প্রাকৃতিক পর্যটনের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা তৈরি করতে কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। এর ফলে পর্যটকরা নতুন নতুন পর্যটন কেন্দ্রের সন্ধান পাবেন। আজ বৌদ্ধ সার্কিটের মাধ্যমে সাঁচি এবং ভগবান বুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত অন্যান্য স্থানগুলির মধ্যে যোগাযোগ গড়ে তোলা হচ্ছে। গান্ধীসাগর, ওঙ্কারেশ্বর জলাধার, ইন্দিরাসাগর জলাধার, ভেদাঘাট এবং বনসাগর জলাধারের মতো জায়গায় প্রাকৃতিক পর্যটন কেন্দ্রিক ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা হচ্ছে। একই ভাবে খাজুরাহ, গোয়ালিয়র, ওর্ছা, চান্দেরি এবং মান্ডুর মতো ঐতিহ্যবাহী পর্যটন কেন্দ্রগুলিকে নিয়ে একটি সার্কিট গড়ে তোলা হয়েছে। পাশাপাশি বন্যপ্রাণ সার্কিটের মধ্যে পান্না জাতীয় উদ্যানকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।  

গত বছর পান্না ব্যাঘ্র প্রকল্পে প্রায় ২ লক্ষ ৫০ হাজার পর্যটক এসেছিলেন। পান্না ব্যাঘ্র প্রকল্পের বন্যপ্রাণীদের কথা বিবেচনা করে নদী সংযোগ প্রকল্পের একটি খাল যথাযথ ভাবে কাটা হচ্ছে বলে আমাকে জানানো হয়েছে, যা খুবই ভালো উদ্যোগ।  

বন্ধুগণ,

পর্যটন শিল্পের প্রসারের জন্য গৃহীত এই উদ্যোগগুলি স্থানীয় অর্থনীতির ওপর উল্লেখযোগ্য প্রভাব বিস্তার করবে। এলাকায় উৎপাদিত বিভিন্ন পণ্য পর্যটকরা কিনবেন। পাশাপাশি তাঁরা অটো এবং ট্যাক্সি করে হোটেল, ধাবা, হোমস্টে এবং গেস্টহাউসে যাবেন। কৃষকদের উৎপাদিত দুধ, দই, ফলমূল এবং তরিতরকারি ভালো দামে বিক্রি হবে। 

বন্ধুগণ, 

গত দুই দশকে বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে মধ্যপ্রদেশ উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে। আগামীদিনে এই রাজ্য অর্থনীতির বিচারে দেশের প্রথম সারির রাজ্যগুলির তালিকায় স্থান পাবে। মধ্যপ্রদেশকে উন্নত রাজ্য হিসেবে গড়ে তোলার মাধ্যমে উন্নত ভারত গড়ে তোলার লক্ষ্যে আমরা এগিয়ে যাবো। বুন্দেলখন্ড এই পরিবর্তনের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করবে।  
 
ডাবল ইঞ্জিন সরকার নির্দিষ্ট লক্ষ্য পূরণে সব ধরনের সহযোগিতা করবে, এই আশ্বাস আমি দিচ্ছি। আরও একবার সকলকে আমি শুভেচ্ছা জানাই। 

আজকের এই অনুষ্ঠান প্রকৃত অর্থেই বিপুল এক আয়োজন। এর তাৎপর্য আমি বুঝতে পারছি। এই অনুষ্ঠানে যে বিপুল জনসমাগম হয়েছে, বিশেষত মা এবং বোনেরা প্রচুর সংখ্যায় এখানে উপস্থিত হয়েছেন, এর মধ্য দিয়ে জলের গুরুত্ব কতটা তা সহজেই বোঝা যাচ্ছে। জলই জীবন। এই অঞ্চলে আমরা যে কাজগুলি করছি, তার জন্য আপনাদের আশীর্বাদ আমাদের অনুপ্রাণিত করে। আসুন আমরা সকলে মিলে ভবিষ্যতেও এই কাজের ধারা অব্যাহত রাখার অঙ্গীকার করি। আমার সঙ্গে বলুন :

ভারত মাতা কি জয়!

ভারত মাতা কি জয়!

ভারত মাতা কি জয়!

(প্রধানমন্ত্রী মূল ভাষণটি হিন্দিতে দিয়েছেন) 

 
PG/CB/AS