Search

পিএমইন্ডিয়াপিএমইন্ডিয়া

সাম্প্রতিক সংবাদ

বিষয়টিকে সরাসরি পিআইবি থেকে নেওয়া হয়েছে

প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদীর রাষ্ট্রীয় ভুটান সফরকালে দ্বিপাক্ষিক যৌথ বিবৃতি


নয়াদিল্লি, ২২ মার্চ, ২০২৪

বহু শতাব্দী ধরেই ভারত ও ভুটানের মধ্যে এক নিবিড় বন্ধুত্ব ও সহযোগিতার সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। পারস্পরিক আস্থা, বিশ্বাস এবং বোঝাপড়ার বাতাবরণের মধ্য দিয়ে দুটি দেশের মধ্যে এই অটুট বন্ধন আজ সময়োত্তীর্ণ। ভারত ও ভুটানের মধ্যে সাংস্কৃতিক যোগাযোগ এবং সাধারণ ভৌগোলিক অবস্থান এই মৈত্রী বন্ধনকে দৃঢ়তর করে তুলেছে। আবার, এক শক্তিশালী অর্থনৈতিক তথা আর্থিক সম্পর্ক এই মৈত্রী সম্পর্কের এক অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হয়ে উঠেছে। দুটি দেশের মৈত্রী সম্পর্কের মূলে রয়েছে দু’দেশের জনসাধারণের বন্ধুত্বের মানসিকতা। প্রতিবেশীসুলভ সম্পর্ককে যে এক বিশেষ তথা ব্যতিক্রমী মাত্রা ও উচ্চতায় নিয়ে যাওয়া সম্ভব, তার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্তই হল ভারত ও ভুটানের মধ্যে এই নিবিড় পারস্পরিক সম্পর্ক। 

দুটি দেশের সাধারণ মূল্যবোধ এবং মিলিত সাংস্কৃতিক তথা আধ্যাত্মিক ঐতিহ্যের পরম্পরায় অংশীদারিত্বের সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। ভুটানের পাশেই রয়েছে ভারত এবং ভারতের সঙ্গেই রয়েছে ভুটান – এই আঞ্চলিক বাস্তবতাকে কোনোভাবেই অস্বীকার করা যায় না। ভুটানের ড্রুক গিয়ালপো পরম্পরা এবং ভারতের রাজনৈতিক নেতৃত্বের উদ্যোগে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে।

পারস্পরিক নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়ে দুটি দেশ যেভাবে সহযোগিতার প্রসার ঘটিয়েছে, তা যথেষ্ট সন্তোষজনক। দু’দেশের স্বার্থ সুরক্ষিত রাখতে সহযোগিতা ও সমন্বয়ের দায়িত্ব দুটি দেশই পালন করে যাবে। 

ভারত ও ভুটানের মধ্যে যে বিশেষ সম্পর্কের বন্ধন গড়ে উঠেছে তার প্রেক্ষিতে দু’দেশের অংশীদারিত্বের বন্ধনকে রূপান্তরমুখী করে তোলারও চেষ্টা করা হবে। রেল, সড়ক, আকাশ এবং জলপথে ব্যবহারিক সংযোগ কাঠামোর প্রসার, আন্তঃসীমান্ত এলাকায় বাণিজ্য পরিকাঠামোর সম্প্রসারণ তথা পণ্য ও পরিষেবার সুষ্ঠু পরিস্থিতি এবং অর্থনৈতিক তথা ডিজিটাল ক্ষেত্রে সংযোগ ও যোগাযোগের মাত্রাও আরও উন্নীত করা হবে। 

ভুটানের প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার সূচনা ১৯৬১ সালে। সেই সময়কাল থেকেই ভুটানের সঙ্গে ভারতের উন্নয়ন সম্পর্কিত অংশীদারিত্বের বন্ধন দু’দেশের জনসাধারণের মধ্যে ক্ষমতায়নের প্রসার ঘটিয়েছে। ভারত ও ভুটানের দ্বৈত কর্মপ্রচেষ্টার বিভিন্ন ক্ষেত্র ও অঞ্চলে গড়ে উঠেছে এক গভীর ও নিবিড় সম্পর্কের বাতাবরণ। ‘সবকা সাথ, সবকা বিকাশ, সবকা বিশ্বাস’ – উন্নয়নের এই মন্ত্রকে সম্বল করে ভারত ভুটানের সঙ্গে উন্নয়নের এক গভীর প্রেক্ষিত ও প্রেক্ষাপট প্রস্তুত করেছে। ভুটানের সার্বিক জাতীয় সুখ ও সমৃদ্ধি – এই দর্শন অনুসরণ করে চলতে ভারত বিশ্বাসী। তাই, জনসাধারণের দাবি ও চাহিদার অগ্রাধিকারের ক্ষেত্রগুলি বিবেচনা করে এবং ভুটান সরকারের দৃষ্টিভঙ্গীকে মান্যতা দিয়ে ভারত উন্নয়ন সম্পর্কের প্রসার ঘটাতে বিশেষভাবে আগ্রহী। 

দুটি দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্ক কতটা গভীর তার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্তই হল শক্তি তথা জ্বালানি ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতার প্রসার। দু’দেশের পারস্পরিক কল্যাণের স্বার্থেই এই অগ্রগতি সম্ভব হয়েছে। জলবিদ্যুৎ, সৌরশক্তি এবং গ্রিন হাইড্রোজেন ক্ষেত্রে সহযোগিতার মাত্রা বৃদ্ধিতে দুটি দেশই অঙ্গীকারবদ্ধ। শুধু তাই নয়, ভারত ও ভুটানের যৌথ উদ্যোগে নতুন নতুন প্রকল্পও গড়ে উঠতে চলেছে। দুটি দেশের প্রযুক্তিগত উদ্যোগ, বলিষ্ঠ বাণিজ্যিক সম্ভাবনা এবং দক্ষ মেধাশক্তিকে কাজে লাগিয়ে সংশ্লিষ্ট অঞ্চলে শক্তি তথা জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব। এই লক্ষ্যকে সামনে রেখে শক্তি তথা জ্বালানি ক্ষেত্রে ভারত-ভুটান সহযোগিতা সম্পর্কিত দৃষ্টিভঙ্গীকে সার্বিকভাবে স্বাগত। 

ভারত ও ভুটান ইতিমধ্যেই ডিজিটাল তথা প্রযুক্তিগত রূপান্তর প্রচেষ্টায় সামিল হয়েছে। দ্রুত অর্থনৈতিক অগ্রগতির স্বার্থে দুটি দেশের মধ্যে প্রযুক্তির মেলবন্ধন ঘটেছে। এই পথ অনুসরণ করে দু’দেশের নাগরিকদের কল্যাণের বিষয়টিকেও নিশ্চিত করা হচ্ছে। মহাকাশ প্রযুক্তি, ডিজিটাল সরকারি পরিকাঠামো, স্টার্ট-আপ, কৃত্রিম মেধাশক্তি, বিশুদ্ধ জ্বালানি, স্টেম গবেষণা ও শিক্ষা এবং ডিজিটাল পদ্ধতিতে দক্ষতা বিকাশের উদ্যোগকে আমরা আরও গভীরে নিয়ে যেতে আগ্রহী। 

ভারত ও ভুটান – দুটি দেশই বাণিজ্য ও বিনিয়োগ প্রচেষ্টাকে আরও জোরদার করে তুলতে আগ্রহী। বিশেষত, ভুটানরাজের দৃষ্টিভঙ্গী অনুসরণ করে গেলেফু বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চল গড়ে তুলতে বেসরকারি ক্ষেত্রেও আমাদের সহযোগিতার সম্পর্ককে আরও নিবিড় করে তোলা হবে। কারণ, এই বিশেষ অঞ্চল গঠনের মধ্য দিয়ে সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রগুলিতে অর্থনৈতিক যোগাযোগকে নিরন্তর করে তোলা সম্ভব। এর সুবাদে একদিকে যেমন অর্থনৈতিক অংশীদারিত্বের সম্পর্ক ক্রমশ অটুট হয়ে উঠবে, অন্যদিকে তেমনই ভারত ও ভুটানের সাধারণ মানুষের মধ্যে নিবিড়তর মেলবন্ধন নিশ্চিত হবে। 

এই প্রসঙ্গে একটি বিষয় বিশেষ উল্লেখের দাবি রাখে। তা হল, ভারত ও ভুটানের জনসাধারণের মধ্যে এক চমৎকার সম্পর্ক ইতিমধ্যেই গড়ে উঠেছে যা কিনা, আমাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ভিত্তি প্রস্তুত করে দিয়েছে। পঠনপাঠন ও গবেষণার সঙ্গে যুক্ত শিক্ষক ও ছাত্রছাত্রী, পর্যটক, তরুণ ও যুব সমাজ এবং ক্রীড়া ব্যক্তিত্বদের মধ্যে সফর বিনিময় কর্মসূচি দু’দেশের জনসাধারণের এই নিবিড় সম্পর্কে এক বিশেষ মাত্রা যোগ করবে। এর পাশাপাশি আমাদের পারস্পরিক আধ্যাত্মিক ও সাংস্কৃতিক মৈত্রী সম্পর্ককে আমরা অটুট ও অব্যাহত রাখার জন্য যথাসাধ্য প্রয়াস চালিয়ে যাব। দু’দেশের জনসাধারণই একে অপরের দেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের স্থানগুলি যাতে দর্শন করতে পারেন, তার সুযোগ সম্প্রসারণের লক্ষ্যেও আমরা বদ্ধপরিকর।

শিক্ষা, দক্ষতা বিকাশ, শিল্পোদ্যোগ প্রচেষ্টা, প্রযুক্তি, ক্রীড়া এবং সৃজনশীল তথা সাংস্কৃতিক শিল্পের প্রসারের মধ্য দিয়ে যুব সমাজের বিকাশকে ত্বরান্বিত করে তুলতে দুটি দেশই বিশেষভাবে আগ্রহী। কারণ আমরা মনে করি যে এর মধ্য দিয়ে বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রগুলিতে দ্বিপাক্ষিক অংশীদারিত্বের সম্পর্ক আরও নিবিড় ও গতিশীল হয়ে উঠতে পারে। এক উন্নততর ভবিষ্যতের লক্ষ্যে দু’দেশের তরুণ ও যুব সমাজের স্বপ্ন ও আশা-আকাঙ্ক্ষাকে মান্যতা দেওয়ার লক্ষ্যে আমরা সর্বদাই সংবেদনশীলতার মনোভাব পোষণ করি। 

ভারত ইতিহাসের এক নতুন অধ্যায়ে প্রবেশ করেছে। দ্রুত আর্থ-সামাজিক অগ্রগতি ও প্রযুক্তিগত উন্নয়ন হল এই অধ্যায়ের দুটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য। সেইসঙ্গে, আগামী ২০৪৭ সালের মধ্যে এক উন্নত ভারত গঠনের লক্ষ্যে ইতিমধ্যেই আমাদের যাত্রা শুরু হয়েছে। অন্যদিকে, ভুটানের রয়েছে আগামী ২০৩৪ সালের মধ্যে উচ্চ আয় ও উপার্জন-বিশিষ্ট একটি জাতিতে রূপান্তরিত হওয়ার স্বপ্ন ও দৃষ্টিভঙ্গী। এই পরিস্থিতিতে ঐ দেশ এখন অর্থনৈতিক বিকাশের এক নতুন যাত্রাপথে প্রবেশ করতে চলেছে। দু’দেশের উন্নয়ন, অগ্রগতি ও সমৃদ্ধির লক্ষ্যে ভারত ও ভুটান – এই দুটি দেশ বরাবরই পারস্পরিক মৈত্রী ও অংশীদারিত্বের সম্পর্ক বজায় রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। 

PG/SKD/DM