Search

পিএমইন্ডিয়াপিএমইন্ডিয়া

সাম্প্রতিক সংবাদ

বিষয়টিকে সরাসরি পিআইবি থেকে নেওয়া হয়েছে

গুজরাটের সবরমতীতে কোচরাব আশ্রমের উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী

গুজরাটের সবরমতীতে কোচরাব আশ্রমের উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী


নয়াদিল্লি, ১২ মার্চ, ২০২৪ 

প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী সবরমতী আশ্রম সফর করেন ও কোচরাব আশ্রমের উদ্বোধন করেন। তিনি আজ সেখানে গান্ধী আশ্রম মেমোরিয়াল মাস্টারপ্ল্যানেরও সূচনা করেছেন। প্রধানমন্ত্রী গান্ধী মূর্তিতে পুষ্পার্ঘ্য নিবেদন করেন ও হৃদয়কুঞ্জ ঘুরে দেখেন। তিনি সেখানে এখানে একটি প্রদর্শনীও প্রত্যক্ষ করেন, রোপণ করেন গাছের চারা। 

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সবরমতী আশ্রম সর্বদাই এক বিশেষ শক্তির উৎস ও অন্যতম এক প্রাণবন্ত কেন্দ্র। এখান থেকে আমরা বাপুর প্রদর্শিত পথে চলার অনুপ্রেরণা পাই। তিনি বলেন, “সবরমতী আশ্রম বাপুর অহিংসা, দেশ সেবা ও মানবসেবার মূল্যবোধকে জাগ্রত রেখেছে। প্রধানমন্ত্রী গান্ধীজীর সময়ের কথা স্মরণ করেন। তিনি বলেন, সবরমতী আশ্রমে আসার আগে এই কোচরাব আশ্রমে থাকতেন বাপু। তিনি সংস্কার করা কোচরাব আশ্রমটি জাতির উদ্দেশে উৎসর্গ করেন। প্রধানমন্ত্রী পূজ্য মহাত্মা গান্ধীকে শ্রদ্ধা জানান ও বিশেষ উল্লেখযোগ্য এবং অনুপ্রেরণা সৃষ্টিকারী প্রকল্পের উদ্বোধন হওয়ায় জনগণকে অভিনন্দিত করেন।

১২ মার্চ দিনটির কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই দিনেই বাপু ডান্ডি অভিযানের সূচনা করেছিলেন এবং ভারতের স্বাধীনতার ইতিহাসে সেই দিন স্বর্ণাক্ষরে লিখিত রয়েছে। স্বাধীন ভারতে নতুন যুগের সূচনায় ঐতিহাসিক এই দিন এক অন্যতম সাক্ষী বলেও মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী। সবরমতী আশ্রমে ১২ মার্চ থেকেই দেশে আজাদি কা অমৃত মহোৎসবের সূচনা হয়েছিল বলে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশমাতৃকার প্রতি যাঁরা আত্মোৎসর্গ করেছেন, তাঁদের স্মরণ করার ক্ষেত্রে এই কর্মসূচি বিশেষ ভূমিকা পালন করেছে। তিনি বলেন, “অমৃত মহোৎসব ভারতের জন্য অমৃতকালে প্রবেশের পথ তৈরি করে দিয়েছে”। তিনি বলেন, মহাত্মা গান্ধীর চিন্তাভাবনা ও নীতির প্রভাবে অমৃত মহোৎসব পরিচালিত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আজাদি কা অমৃতকাল অনুষ্ঠানে ৩ কোটিরও বেশি মানুষ ৫টি প্রতিজ্ঞা বা প্রণ গ্রহণ করেছে”। তিনি বলেন, ২ লক্ষ অমৃত বাটিকা এবং ২ কোটিরও বেশি গাছের চারা রোপণ করা হয়েছে। জল সংরক্ষণের জন্য ৭০ হাজারেরও বেশি অমৃত সরোবর তৈরি করা হয়েছে। দেশাত্মবোধের জন্য বিশেষ ভূমিকা পালন করেছে ‘হর ঘর তিরঙ্গা অভিযান’। ‘মেরি মাটি মেরা দেশ’ অভিযানেও দেশের নাগরিকরা স্বাধীনতা সংগ্রামীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। শ্রী মোদী বলেন, অমৃতকালে ২ লক্ষেরও বেশি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন হয়েছে। সবরমতী আশ্রম বিকশিত ভারত প্রতিশ্রুতি পালনে অন্যতম তীর্থ ক্ষেত্র হয়ে উঠেছে। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “যে দেশ তার নিজের ঐতিহ্য রক্ষা করতে পারে না, সেই দেশ তার ভবিষ্যতকেও হারিয়ে ফেলে। বাপুর সবরমতী আশ্রম শুধুমাত্র দেশের নয়, সমগ্র মানবতার ঐতিহ্য”। দীর্ঘদিন ধরে উপেক্ষিত থাকা বহু মূল্যবান ঐতিহ্যের কথা শ্রী মোদী স্মরণ করে বলেন, ১২০ একর জমি থেকে কমে আশ্রমের এলাকা বর্তমানে ৫ একরে পৌঁছেছে। ৬৩টি ভবনের মধ্যে মাত্র ৩৬টি ভবন রয়েছে। এর মধ্যে ৩টি দর্শনার্থীদের জন্য। প্রধানমন্ত্রী জোর দিয়ে বলেন, আশ্রমটি সংরক্ষিত রাখা ১৪০ কোটি ভারতবাসীর দায়িত্ব।

প্রধানমন্ত্রী আশ্রমের ৫৫ একর জমি ফিরে পেতে আশ্রমবাসীদের সহযোগিতার কথা স্বীকার করেন। আশ্রমের ভবনগুলিকে নিজ নিজ অবস্থায় সংরক্ষণ করার জন্য বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।

এ ধরনের ঐতিহ্যবাহী স্থানগুলি ঔপনিবেশিক মানসিকতা ও সদিচ্ছার অভাবে দীর্ঘদিন ধরে উপেক্ষিত ছিল বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী। এ প্রসঙ্গে তিনি কাশী বিশ্বনাথ ধামের কথা উল্লেখ করেন। যেখানে জনগণের সহযোগিতায় পুণ্যার্থীদের জন্য বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা তৈরি করতে ১২ একর জমি পাওয়া গেছে। এখানে বর্তমানে সংস্কার হওয়া কাশী বিশ্বনাথ ধামে ১২ কোটিরও বেশি তীর্থযাত্রী ভ্রমণ করেছেন বলেও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। একইভাবে, অযোধ্যায় শ্রীরাম জন্মভূমি সম্প্রসারণের জন্য পাওয়া গেছে ২০০ একর জমি। এখানে বিগত ৫০ দিনে ১ কোটিরও বেশি তীর্থযাত্রী সফর করেছেন। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ঐতিহ্য কিভাবে সংরক্ষণ করতে হয়, তা সমগ্র দেশকে দেখিয়েছে গুজরাট। সর্দার প্যাটেলের নেতৃত্বে সোমনাথ পুনরুজ্জীবনের মতো ঐতিহাসিক ঘটনার কথাও উল্লেখ করেন তিনি। এছাড়াও, আহমেদাবাদ বিশ্বের ঐতিহ্যবাহী শহরগুলির তক্‌মা পাওয়ার কথাও উল্লেখ করেন তিনি। 

ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের সঙ্গে সম্পর্ক যুক্ত ঐতিহ্যগুলি সংস্কারে যে উন্নয়নমূলক প্রচার চলছে, সেকথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী রাজপথকে কর্তব্যপথে রূপান্তরিত করার ও সেখানে নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসুর মূর্তি স্থাপনের উদাহরণ দেন। তিনি পঞ্চতীর্থের আওতায় বি আর আম্বেদকর সম্পর্কিত বিভিন্ন জায়গার উন্নয়ন একতা নগরে ‘স্ট্যাচ্যু অফ ইউনিটি’র মূর্তি স্থাপনের কথাও উল্লেখ করেন। প্রধানমন্ত্রী জোর দিয়ে বলেন, সবরমতী আশ্রমের সংস্কার এই লক্ষ্যে এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। 

আগামী দিনে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের যে প্রতিনিধিরা এই সবরমতী আশ্রমে আসবেন, তারা চক্র থেকে শক্তি ও অনুপ্রেরণা পাবেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বাপু পরাধীনতার সময় দেশ যে যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে যাচ্ছিল, তা থেকে মুক্ত হওয়ার আশা ও বিশ্বাস জাগ্রত করেছিলেন”। বাপুর দূরদৃষ্টি ভারতের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের স্বচ্ছ দিশা তৈরি করে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার দেশের দরিদ্র শ্রেণির উন্নয়নকে প্রধান্য দিচ্ছে। আত্মনির্ভর ভারত প্রচারাভিযানের মাধ্যমে মহাত্মা গান্ধীর স্বদেশী ও আত্মনির্ভরতার চিন্তাভাবনা জনগণের মধ্যে জাগ্রত করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী জৈব কৃষির কথা উল্লেখ করে বলেন, গুজরাটে ৯ লক্ষ কৃষক পরিবার জৈব কৃষি কাজকে গ্রহণ করেছেন এবং এর ফলে ৩ লক্ষ মেট্রিক টন ইউরিয়া সার ব্যবহার হ্রাস পেয়েছে। প্রধানমন্ত্রী জোর দিয়ে বলেন, খাদি পণ্যের ব্যবহার বর্তমানে বেড়েছে। এর ফলে, গ্রামীণ এলাকার দরিদ্রদের জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আসছে। আত্মনির্ভর প্রচারাভিযানের মাধ্যমে তা সম্ভব হয়েছে।

গ্রামগুলির ক্ষমতায়ন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গ্রাম স্বরাজ নিয়ে বাপুর চিন্তাভাবনা এখন বাস্তবায়িত হচ্ছে। মহিলাদের ক্রমবর্ধমান ভূমিকার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলির মাধ্যমে ১ কোটি লাখপতি দিদি তৈরি হয়েছে। মহিলারা এখন ড্রোন পাইলট হচ্ছেন। এই পরিবর্তন মজবুত ভারতের উজ্জ্বল উদাহরণ এবং সুসংহত ভারতের প্রতিচ্ছবি”।

প্রধানমন্ত্রী সরকারের চেষ্টায় বিগত ১০ বছরে দেশের ২৫ কোটি জনগণ যে দারিদ্র-মুক্ত হয়েছেন, সেই প্রসঙ্গও উত্থাপন করেন। মহাকাশ ক্ষেত্রে ভারতের সাম্প্রতিক সাফল্যের কথা উল্লেখ করে শ্রী মোদী বলেন, “বর্তমানে ভারত যখন উন্নয়নের আকাঙ্ক্ষা নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে চলেছে, তখন মহাত্মা গান্ধীর চিন্তাভাবনা আমাদের বিশেষভাবে অনুপ্রেরণা যোগায়। তাই, সবরমতী আশ্রম এবং কোচরাব আশ্রমের সংস্কার কেবলমাত্র কোনও ঐতিহাসিক স্থানের উন্নয়ন নয়, এটি বিকশিত ভারতের জন্য আমাদের অনুপ্রাণিত করে এবং এই বিশ্বাসকে মজবুত করে”। উন্নত দেশ গঠনের যাত্রা পথে বাপুর চিন্তাভাবনা আমাদের পথ দেখিয়ে যাবে বলে আস্থা প্রকাশ করেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী গুজরাট সরকার এবং আহমেদাবাদ পুর সংস্থাকে আহমেদাবাদ শহর নিয়ে একটি প্রতিযোগিতার আয়োজন করতে ও প্রতিদিন অন্তত ১ হাজার স্কুল পড়ুয়া যেন সবরমতী আশ্রমে সময় কাটাতে পারে, সেই ব্যবস্থা করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, “এর ফলে, অতিরিক্ত কোনও বরাদ্দ ছাড়াই আমরা এই মুহূর্তগুলো উপভোগ করতে পারবো”। পরিশেষে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নতুন এই চিন্তাভাবনা দেশের উন্নয়ন যাত্রাকে মজবুত করবে বলেই তাঁর বিশ্বাস। 

গুজরাটের রাজ্যপাল শ্রী আচার্য দেবব্রত, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী শ্রী ভুপেন্দ্র প্যাটেল সহ অন্যরা এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। 

PG/PM/SB