Search

পিএমইন্ডিয়াপিএমইন্ডিয়া

সাম্প্রতিক সংবাদ

বিষয়টিকে সরাসরি পিআইবি থেকে নেওয়া হয়েছে

সিএলইএ – কমনওয়েলথ অ্যাটর্নি অ্যান্ড সলিসিটর্স জেনারেল সম্মেলনের উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী

সিএলইএ – কমনওয়েলথ অ্যাটর্নি অ্যান্ড সলিসিটর্স জেনারেল সম্মেলনের উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী


নয়াদিল্লি, ৩ ফেব্রুয়ারি,২০২৪

 

আজ নয়াদিল্লির বিজ্ঞান ভবনে কমনওয়েলথ লিগাল এডুকেশন অ্যাসোসিয়েশন (সিএলইএ) – কমনওয়েলথ অ্যাটর্নিজ অ্যান্ড সলিসিটর্স জেনারেল কনফারেন্স (সিএএসজিসি), ২০২৪-এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী। 

এই উপলক্ষে সমাবেশে ভাষণদানকালে তিনি বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আগত অতিথি ও বিশিষ্টজনদের ভারতে স্বাগত জানিয়ে ‘ইনক্রেডিবল ইন্ডিয়া’ সম্পর্কে অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ের আহ্বান জানান। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আফ্রিকা থেকেও অনেক বন্ধু এই সমাবেশে যোগ দিয়েছেন। আফ্রিকান ইউনিয়নের সঙ্গে ভারতের রয়েছে এক বিশেষ সম্পর্ক। ভারতের জি-২০ সভাপতিত্বকালে আফ্রিকান ইউনিয়ন এই গোষ্ঠীর এক বিশেষ অংশ হয়ে ওঠায় আফ্রিকার জনসাধারণের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণের কাজ অনেকটাই সহজ হয়ে যাবে বলে মনে করা হচ্ছে। 

প্রধানমন্ত্রী জানান যে মাত্র কয়েকদিন আগেই ভারতের শীর্ষ আদালতের ৭৫তম বর্ষ পূর্তি উদযাপন অনুষ্ঠানে তিনি উপস্থিত থাকার সুযোগ লাভ করেছিলেন। আবার, গত সেপ্টেম্বর মাসে এই বিজ্ঞান ভবনেই আয়োজিত আন্তর্জাতিক আইনজীবীদের সম্মেলনেও যোগ দিয়েছিলেন তিনি। এই ধরনের সম্মেলন পারস্পরিক আলাপ-আলোচনা ও মতবিনিময়ের এক বিশেষ পরিসর গড়ে তোলে। ফলে, দেশ-বিদেশের বিচার ব্যবস্থা সম্পর্কে একটি সম্যক ও সুচিন্তিত ধারণা সংশ্লিষ্ট সকলের মধ্যে গড়ে উঠতে পারে। সুবিচার যাতে মানুষের কাছে দ্রুততার সঙ্গে এবং আরও ভালোভাবে পৌঁছে দেওয়া যায়, সেই সুযোগ আমরা লাভ করি এই ধরনের সম্মেলন ও অনুষ্ঠান থেকে। 

শ্রী মোদী বলেন, ভারতীয় চিন্তাদর্শে বিচার তথা বিচার ব্যবস্থার এক বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। প্রাচীন ভারতের চিন্তাবিদরা বলতেন, “ন্যায় মূলং স্বরাজ্যং স্যাৎ” – এর অর্থ, স্বাধীন এবং স্বশাসিত শাসন ব্যবস্থার ভিত্তিই হল বিচার তথা সুবিচার। কারণ, বিচার ব্যবস্থা ছাড়া যেকোনো জাতিই অস্তিত্বহীন হয়ে পড়ে। 

‘সুবিচার পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে আন্তঃসীমান্ত এলাকাগুলির বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ’ –  সম্মেলনের এই মূল বিষয়টি সম্পর্কে মত ব্যক্ত করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমান বিশ্ব দ্রুত পরিবর্তনশীল। সেই কারণে খুব প্রাসঙ্গিকভাবে এই বিষয়টি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ বলে তিনি মনে করেন। অনেক সময়েই সুবিচার নিশ্চিত করার জন্য একটি দেশ অন্য দেশগুলির সঙ্গে মতবিনিময় করে থাকে। কারণ, এইভাবে যদি পরস্পরের সঙ্গে আলোচনা ও মতবিনিময় করা যায়, তাহলে একে অন্যের বিচার ব্যবস্থাকে আরও ভালোভাবে জানতে ও বুঝতে পারা যায়। কারণ, পরস্পরকে ভালোভাবে বোঝার মধ্যেই নিহিত রয়েছে আরও ভালোরকম নিশ্চয়তা, যা আমাদের দ্রুততার সঙ্গে সুবিচারের সুযোগ মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে সাহায্য করে। এই দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করলে আলাপ-আলোচনার এই ধরনের মঞ্চগুলি যথেষ্ট তাৎপর্যময়। 

শ্রী মোদী বলেন, দেশের বিচার ব্যবস্থায় অনেকগুলি ক্ষেত্রকে সঙ্গে নিয়ে আমাদের কাজ করতে হয়। সুতরাং, দুটি পৃথক পৃথক ক্ষেত্রের মধ্যে ভালোরকম বোঝাপড়া না থাকলে আইন ও বিচার ব্যবস্থা কখনই সফল হয়ে উঠতে পারে না। শুধু তাই নয়, অনুসন্ধান, তদন্ত এবং সুবিচার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে পারস্পরিক সহযোগিতার মাত্রাকেও আমাদের আরও উন্নত করে তুলতে হবে। এমনকি, পরস্পরের কাজকর্মের সুনির্দিষ্ট সীমারেখার প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকেও পারস্পরিক সহযোগিতা সম্ভব বলেই আমরা মনে করি। সকলে মিলিতভাবে কাজ করার মধ্যেই সুবিচার পাওয়ার সম্ভাবনা উজ্জ্বল হয়ে ওঠে এবং তাতে বিচার ব্যবস্থা কখনই বিলম্বিত হয় না। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সাম্প্রতিককালে অপরাধের গতি-প্রকৃতি এবং পরিসর ও পরিধির দ্রুত পরিবর্তন ঘটেছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও অঞ্চল জুড়ে গড়ে উঠেছে অপরাধীদের এক বিরাট নেটওয়ার্ক। অপরাধমূলক কাজকর্ম চালিয়ে যাওয়ার জন্য অর্থের যোগান এবং অত্যাধুনিক প্রযুক্তির আশ্রয় গ্রহণ আমাদের কাছে আরও একটি বিশেষ চ্যালেঞ্জ। কারণ, বিশ্বের কোনো একটি অঞ্চলের অর্থনৈতিক অপরাধ অন্যান্য অঞ্চলের অপরাধমূলক কাজকর্মে সহায়ক হয়ে উঠতে পারে। বর্তমানে ক্রিপ্টো-কারেন্সির রমরমা এবং সাইবার হুমকি নতুন নতুন সমস্যার উদ্ভব ঘটিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে বিংশ শতকের দৃষ্টিভঙ্গী নিয়ে একুশ শতকের চ্যালেঞ্জগুলির মোকাবিলা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। তাই, এই ধরনের চ্যালেঞ্জগুলির মোকাবিলায় যা প্রয়োজন তা হল, চিন্তা ও কল্পনার পরিধি ও পরিসরকে বাড়িয়ে তোলার পাশাপাশি, সংস্কার প্রচেষ্টার কাজে উদ্যোগ গ্রহণ করা। এমন এক আধুনিক আইন ব্যবস্থা আমাদের গড়ে তুলতে হবে যাতে নিশ্চিতভাবে সুবিচার সকলের কাছে পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হয়। এই সার্বিক ব্যবস্থাকে করে তুলতে হবে নমনীয় অথচ গ্রহণযোগ্য। 

প্রসঙ্গত, বিচার ব্যবস্থাকে নাগরিক-কেন্দ্রিক বা নাগরিকমুখী করে তোলার ওপরও বিশেষ জোর দেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, সহজ বিচার ব্যবস্থা হল সুবিচারের এক স্তম্ভবিশেষ। এই বিশেষ ক্ষেত্রটিতে ভারত এমন অনেককিছু বিষয়ে শিক্ষালাভ করেছে, যা অন্যান্যদের সঙ্গে বিনিময় করে নেওয়া যেতে পারে। প্রসঙ্গত, ভারতে ইতিমধ্যেই চালু লোক-আদালত এবং সান্ধ্য আদালতের দৃষ্টান্ত তুলে ধরেন তিনি। এই ব্যবস্থায় সুবিচারের পাশাপাশি অর্থ ও সময়ের যে বিশেষ সাশ্রয় ঘটানো সম্ভব, সেকথাও তিনি তুলে ধরেন তাঁর আজকের বক্তব্যে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সুবিচার নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে আইনগত বিষয়ে জ্ঞান ও শিক্ষা হল এক বিশেষ হাতিয়ার। কারণ, তা মানুষের আবেগের সঙ্গে যুক্ত করে পেশাগত দক্ষতা ও যোগ্যতাকে। প্রাসঙ্গিকভাবে আরও একটি বিষয়ও বর্তমানকালে প্রাধান্য লাভ করেছে। তা হল, আইন ও বিচার ব্যবস্থার বিভিন্ন ক্ষেত্রে মহিলাদের আরও ভালোভাবে কিভাবে যুক্ত করা যায় সে সম্পর্কে চিন্তাভাবনা। এই লক্ষ্য পূরণের প্রথম পদক্ষেপই হল শিক্ষাজগতের প্রতিটি ক্ষেত্রকে অন্তর্ভুক্তিমূলক করে তোলা। আইন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে মহিলা শিক্ষার্থীদের যোগদান তাঁদের আইনকে পেশা হিসেবে বেছে নেওয়ার কাজে উৎসাহিত করতে পারে। এর সুবাদে মহিলা আইনজীবীদের সংখ্যাও উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাওয়ার উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। 

প্রধানমন্ত্রী তাঁর আজকের ভাষণে তরুণ আইনজীবীদের পেশাগত দক্ষতা, জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ের আগ্রহের বিষয়গুলিও তুলে ধরেন। তিনি বলেন, সতত পরিবর্তনশীল বিশ্বজগতে প্রযুক্তিকে সঙ্গে নিয়েই আইনগত শিক্ষার প্রসার ঘটানো প্রয়োজন। অপরাধ জগতের সর্বশেষ হালহকিকৎ, তদন্ত ও অনুসন্ধান এবং সাক্ষ্য সম্পর্কে জ্ঞান নিঃসন্দেহে আইনজীবীদের কাজে অনেকটাই সহায়ক হয়ে উঠতে পারে বলে তিনি মনে করেন। 

গত কয়েক বছরে ভারতের আইন ব্যবস্থায় যে সংস্কারমূলক বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে তারও একটি সার্বিক চিত্র প্রধানমন্ত্রী তুলে ধরেন তাঁর আজকের বক্তব্যে। তিনি বলেন, ঔপনিবেশিক শাসনকাল থেকে ভারতে এমন কিছু আইন পরম্পরাগতভাবে চলে আসছিল, যা এই যুগে এক কথায় অচল। তাই সেগুলিকে বাতিল বলে ঘোষণা করা হয়েছে। তিনটি মাত্র নতুন আইনগত পদক্ষেপের সাহায্যে শতাব্দী প্রাচীন বহু ঔপনিবেশিক অপরাধ আইনকে বাতিল করা হয়েছে। কারণ, অতীতে মানুষকে শাস্তি দেওয়ার ওপরই যেন আইন ব্যবস্থার বিশেষ ঝোঁক ছিল। কিন্তু ভারতে নতুন উদ্যোগ গ্রহণের ফলে জোর দেওয়া হচ্ছে সুবিচার নিশ্চিত করে তোলার ওপর। তাই, দেশের বিচার ব্যবস্থা সম্পর্কে নাগরিকদের মনে এখন কোনো ভয় বা ভীতি কাজ করে না। কারণ, তাঁরা জানেন যে সুবিচারের লক্ষ্যেই চালু হয়েছে বর্তমান আইন ও বিচার ব্যবস্থা।

প্রযুক্তিরও এক্ষেত্রে এক বিশেষ ইতিবাচক ভূমিকা রয়েছে বলে মত প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, সার্বিক বিচার ব্যবস্থায় প্রযুক্তির ভূমিকা বর্তমানে অনস্বীকার্য। ড্রোন প্রযুক্তির আশ্রয় গ্রহণ করে ভারত জমিজমা সংক্রান্ত বিভিন্ন বিবাদের নিষ্পত্তি ঘটিয়েছে। গ্রামীণ জনসাধারণ এখন খুব সহজেই স্বচ্ছ ও সুস্পষ্ট সম্পত্তির কাগজপত্র হাতে পাচ্ছেন। ফলে, আইন ও বিচারগত বিবাদ-বিতর্কের মাত্রা যেমন হ্রাস পেয়েছে, অযথা মামলার হয়রানির হাত থেকেও মানুষ দ্রুত মুক্তি পেয়েছেন। ডিজিটাল ব্যবস্থায় দেশের অনেক আদালতেই বর্তমানে অনলাইনে বিচার প্রক্রিয়া চালিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। ফলে, দূরদুরান্তের মানুষ সশরীরে আদালতে হাজিরা না দিয়েও বিচার প্রক্রিয়ার সুযোগ গ্রহণ করতে পারছেন। বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে আমাদের এই শিক্ষা ও অভিজ্ঞতা বিনিময়ের সুযোগ লাভ করে আমরা যথেষ্ট আনন্দিত ও উপকৃত। 

পরিশেষে, সুবিচার নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে যে সমস্ত চ্যালেঞ্জ বা সমস্যা রয়েছে, তা দূর করার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, মিলিত মূল্যবোধ এই কাজে এগিয়ে যেতে আমাদের সাহায্য করবে। সুবিচারের প্রতি আমাদের হতে হবে আবেগবদ্ধ। আমাদের এই শক্তি ও মানসিকতাকে আরও বাড়িয়ে তুলতে আজকের এই সম্মেলন বিশেষ সাহায্য করবে বলে মনে করেন শ্রী নরেন্দ্র মোদী। 

PG/SKD/DM